দেখা হবে। পর্ব-৬(ক)।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৭/২০০৮ - ৩:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫

পর্ব-৬(ক)

পর্ব-৬(ক)

সন্ধ্যেবেলা হঠাত্ জামিল আর লিলি এসে হাজির।
এই সময়টাতে গোটা বাড়িটাই খুব চুপচাপ থাকে। মাহফুজ সাহেব মসজিদে যান মাগরেবের নামাজ পড়তে। নামাজের পর তিনি আরো ঘন্টা খানেক সময় মসজিদেই কাটান ইমাম সাহেবের সাথে কোরান-হাদিস আলোচনা করে। তারপর এষার নামাজ পড়ে একবারে ন'টার সময় বাড়ী ফেরেন।
রেশমা এই সময়টাতে মাহফুজ সাহেবের বেডরুমের স্টিরিওতে গান শোনে এক একা।
মাহফুজ সাহেব একবার বলেছিলেন,"তুই তাহলে তোর ঘরেই নিয়ে যা যন্ত্রটাকে। আমার গান শোনার মতো এত সময় নেই, তুই গান এত পছন্দ করিস যখন, তখন তোর কাছেই থাকুক।"

রেশমা বিরক্ত হয়ে বলেছিল,"ড্যাড, তুমি সব সময় আমার পছন্দের জিনিসগুলোকে বারোটা বাজাতে চাও কেন বলতো? আমি তোমার ঘরে এসে গান শুনি, এটা যদি তোমার অপছন্দের ব্যপার হয়, তাহলে আমাকে ডেকে সরাসরি বলবে। আমি আর তোমার ঘরে কোনদিন ঢুকবোনা। আমাকে আকারে ইংগিতে কথা বলবেনা, এটা আমার ভারী অসহ্য লাগে। আমি যদি আমার ঘরে বসে গান শুনতে চাইতাম, তাহলে তুমি কিছু বোঝার আগেই আমি স্টিরিওটাকে টেনে আমার ঘরে নিয়ে যেতাম।"

মাহফুজ সাহেব বোকার মতো তাকিয়ে থাকেন রেশমার দিকে। "আমিতো খারাপ কোন কথা বলিনি মা। আমার ঘরে বসে গান শুনতে যদি তোমার ভাল লাগে, তাতে আমার অপছন্দ হবে কেন?"
রেশমা চলে যাচ্ছিল। মাহফুজ সাহেব তাকে পিছন থেকে ডেকে বলেছিলেন,"রেশমা, সবসময় এতো রেগে থাকিস কেন মা? মেয়েদেরকে ঠান্ডা হতে হয়। নরম হতে হয়। আমি জানি তোর মনটা আসলেই খুব নরম, সেটাকে এতো কঠিন আস্তরের মধ্যে ঢেকে রাখিস কেন? আমি নাহয় তোকে চিনি, কিন্তু বাইরের লোকেরা তো তোকে ভুল বুঝবে। কোন কারণে কি তোর মন খারাপ হয়েছে যে আমার সাথে খামাখা এত চেঁচামেঁচি করলি?"

রেশমা সে কথার জবাব দেয়নি। সে কিভাবে বলবে, "ড্যাড, আমি তোমাদের ঘরে যাই, কেননা ওখানে বসে গান শুনলে আমার মার কথা মনে পড়ে।" রেশমা জানে, মায়ের কথা তুললে ড্যাডই তিন দিন মন খারাপ করে ঘরে শুয়ে থাকবে।

আজ সন্ধ্যায়ও রেশমা মেঝেতে বসে চোখ বন্ধ করে গান শুনছিল। "নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে, প্রেমের কি সাধ আছে বলো?" আহা- কি সুন্দর কথাগুলো। রেশমার কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। জামিল আর লিলি আসাতে সে আনন্দে বাগড়া পড়লো।

"কি খবর সিল্কি বেগম? চোখে সর্ষের তেল দিয়ে কাঁদছিস নাকি?" লিলি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে।
"আমি কাঁদবো কেন? এক একা বসে গান শুনছিলাম। তোরা হঠাত্ এদিকে কি মনে করে?"

জামিল আর লিলির প্রেম শুরু হয়েছে একদম ফার্স্ট ইয়ার থেকে। তখনো সবার সাথে সবার ভাল করে পরিচয়টাই হয়নি। কিন্তু ততদিনে এরা দুজন লাইব্রেরীর বারান্দায় মুখোমুখী বসে একে অন্যের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকা আরম্ভ করে দিয়েছে। সবার কাছে বহুদিন এটা একটা রহস্য ছিল, কেননা দুজনেই খুবই সাধারণ প্রকৃতির। চমকে দেবার মতো চেহারা, ঝলসে ওঠার মত মেধা বা মনে রাখবার মত ব্যক্তিত্ব, এর কোনটাই নেই দুজনের।

তবুও এরা একে অন্যকে গভীর ভাবে ভালবেসে গেছে। যেদিন এম এর ফাইনাল রেজাল্ট বার হোল, সেদিন দুজনে ফুলের মালা পরে ক্যাম্পাসে হাজির।

"শুভদিনে বিয়েটা সেরে ফেললাম। আজ সন্ধ্যেবেলা চুংকিং রেস্টুরেন্টে পার্টি। সবাই আসবি। প্লিজ- নো গিফট্‌। শুধু নিজের খাওয়ার পয়সাটা দিলেই হবে। আমাদের পকেটের অবস্থাকেরাসিন। বাসা ভাড়া দিতেই সব পয়সা শেষ।"

সেই সন্ধ্যেবেলা জমজমাট পার্টি হয়েছিল। প্রত্যেকে দামী উপহার নিয়ে এসেছিল। জামিল বেহায়ার মত জিজ্ঞেস করেছিল,"খাবার দামটা দিবি তো? নাকি গিফট হাতে ধরিয়ে কেটে পড়বি?"
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই চেপে ধরলো নব দম্পতিকে।"আজ তোদের প্রেম টেস্ট করা হবে।"
দুজনকে ঘরের দুই কোণে নিয়ে সাদা কাগজ আর কলম হাতে ধরিয়ে দেয়া হোল। একটা প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে সে কাগজে। কিন্তু কেউ যেন অন্যের উত্তরটি না দেখতে পারে। পরে মিলিয়ে দেখা হবে দুজনের উত্তর একই হোল কিনা। প্রশ্নটি ছিল,"তুমি ওকে কেন ভালবাসো?"
জামিল যথেষ্ট ঢং করে কাগজটা ফেরত দিল,"হাতের লেখাটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। তোদের কষ্ট হবে পড়তে।" পরে দেখা গেল সে কিছুই লেখেনি কাগজে। আশ্চর্য্য- লিলির কাগজটাও ছিল ফাঁকা, সেও কিছুই লেখেনি। প্রগাঢ় বিস্ময়ে রেশমার চোখে পানি এসেছিল। এত মিলও হয় মানুষের মধ্যে।

সেদিনের পর আর দেখা হয়নি। শুনেছে ওরা এখন থাকে লালবাগের দিকে। আজ ওদেরকে দেখে প্রথমে বিরক্তি লাগলেও এখন ভাল লাগছে। লিলি একটা হাল্কা নীল রঙ্গের শাড়ী পরেছে, কপালে ছোট্ট লাল টিপ। মুখখানিতে একটু ক্লান্তি লেগে থাকলেও তাকে বেশ ভাল লাগছে দেখতে।

"তোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে লিলি।"
জামিল বললো,"সিল্কি বেগম, বান্ধবীর রূপের প্রশংসা পরে হবে। আগে একগ্লাস ফ্রিজের পানি খাওয়াও দেখি। খুব ঠান্ডা যেন হয়, বহুদিন ঠান্ডা পানি খাইনা।"
"এই শীতকালে তুমি ঠান্ডা পানি খাবে? অন্যকিছু দেই, চা, কফি?"
লিলি বললো, "ওর সাথে বেশি কথা বলতে যেওনা রেশমী। আজেবাজে কথা বলে কান ঝালাপালা করে দেবে।"

রেশমী উঠে কিচেনের দিকে গেল। লিলিও সাথে সাথে এল।
"তুই কেমন আছিস লিলি? সংসার কেমন চলছে?"

(চলবে)

পর্ব-৬(খ) পড়তে এখানে ক্লিক করুন


মন্তব্য

জাহিদ হোসেন এর ছবি

জুবায়ের ভাইয়ের খেলাপী তালিকায় নিজের নাম দেখে অতিশয় শংকিত হয়ে অর্ধ কিস্তি দিলাম। বলা তো যায়না, কোন সময় আবার জমাজমি ক্রোক করার নোটিশ জারী হয়ে যাবে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

হিমু এর ছবি

আপনি দেখি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমলের সাবমেরিনের মতো ভুস করে ভেসে উঠলেন! এতদিন ছিলেন কোথায়?


হাঁটুপানির জলদস্যু

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কি? আমাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমলের সাবমেরিনের সাথে তুলনা করা হচ্ছে? এখানে কি আমার বয়সের প্রতি ইংগিত করা হচ্ছে না?

গত কয়েকমাস শখের মাস্টারী করছিলাম সন্ধ্যেবেলায়। হাতে সময় ছিলোনা একদম।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

এতদিন কোথায় ছিলেন?? চিন্তিত

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি উপরে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

সেখানেতো সব সময়েই থাকি।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।