ঈদ সংখ্যার উপন্যাস : পাঠক-ঠকানোর বার্ষিক পার্বণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: শনি, ২৮/০৬/২০০৮ - ৯:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোনো পত্রিকা যদি পাঁচখানি ‘পূর্ণাঙ্গ’ উপন্যাস ছাপলো, প্রতিযোগী ছাপলো সাতখানি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। তার পরে ‘পূর্ণাঙ্গ’ উপন্যাসের ঢল নামল। এখন সহজেই অনুমেয় এইসব উপন্যাসের পূর্ণাঙ্গতা নামে মাত্র, খুব বেশী হবে তো ৪/৫ ফর্মা। তার পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় আরও ২/৩ ফর্মা বাড়ানো …। ফলে দাঁড়ালো এসব না ছোটগল্প না উপন্যাস। এরা রক্তপায়ী জোঁকের মতো স্ফীতোদর একটা প্রাণী। এতে না আছে ছোটগল্পের সূক্ষ্ম কলা-কৌশল, না আছে উপন্যাসের জীবন বিস্তার, আছে স্ফীতোদর ব্যবসায়িকতা। এ শ্রেণীর দায়িত্বহীন রচনার মতো সহজ কাজ আর নেই।

মনে হতে পারে, ওপরের উদ্ধৃতিটি বাংলাদেশের পত্রিকাগুলিতে উপন্যাস প্রকাশের সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে লেখা । অথচ সত্য এই যে, বাক্যগুলি লেখা হয়েছিলো আজ থেকে ৭২ বছর আগে, ১৯৩৬ সালে। প্রমথনাথ বিশী লিখেছিলেন ‘ছোটগল্পের আত্মহত্যা’ প্রবন্ধে। অথচ কী আশ্চর্য, একটি অক্ষরও অদল-বদল না করে এই কথাগুলি আজও বাংলাদেশের উপন্যাসের বেলায় সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

কলকাতার শারদীয় দেশ-আনন্দবাজারের আদলে বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে বার্ষিক সাহিত্য-সম্ভার নিয়ে উপস্থিত হওয়ার প্রচলন প্রথম করে সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’, যতোদূর মনে পড়ে, আশির দশকের শুরুতে। এর অনেক আগে থেকেই অবশ্য ‘বেগম’-এর ঈদসংখ্যা বেরোতো, সাহিত্যমূল্যের বিচারে তার মান উল্লেখ করার মতো কিছু ছিলো না। ‘বিচিত্রা’-র পর ঈদ সংখ্যা প্রকাশ শুরু করে ‘সচিত্র সন্ধানী’ ও ‘রোববার’। শুরুর দিকে বেশ কিছু উৎকৃষ্ট উপন্যাস পাওয়া গিয়েছিলো এই ঈদ সংখ্যাগুলিতে। এরপর অন্য সাপ্তাহিকগুলি এবং কয়েকটি দৈনিকও ঈদ সংখ্যা প্রকাশ শুরু করে। এখন তো ঈদ সংখ্যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।

মহামারী কথাটা বলা নিতান্ত অনিচ্ছায়। ঈদ সংখ্যার নামে যা পাওয়া যাচ্ছে, পাঠককে যা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে – তারই পরিপ্রেক্ষিতে। ছোটোখাটো পত্রিকাগুলিকে আপাতত সরিয়ে রাখি। বড়ো ও নামী সাপ্তাহিক ও দৈনিকগুলির ঈদ সংখ্যার গড় পৃষ্ঠাসংখ্যা ৫০০। এই পরিসরে গড়ে ১০ থেকে ১২টি উপন্যাস থাকে। আর থাকে ১০-১২টি করে গল্প, স্মৃতিকথা/আত্মজীবনীমূলক রচনা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, একগুচ্ছ করে কবিতা, একটি-দুটি অনুবাদ রচনা, চলচ্চিত্র-ক্রীড়া-নাটক-টিভি-সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ে রচনা, ঈদের ফ্যাশন এবং রান্নার রেসিপি ও মেয়েদের সাজসজ্জা বিষয়ে কয়েক পাতা করে বরাদ্দ।

দেশ-আনন্দবাজারে শারদীয় সংখ্যাগুলি যেখানে মূলত সাহিত্যমুখী, আমাদের ঈদ সংখ্যার চরিত্র কিন্তু পত্রিকার সাধারণ সংখ্যারই বর্ধিত রূপ। ব্যতিক্রম বলতে শুধু উপন্যাস, যা সাধারণ সংখ্যায় থাকে না। ঈদ উপলক্ষে উপন্যাস থাকে বেশুমার। সবগুলি পত্রিকা দেখিনি, তবে গত কয়েক বছরে আমার দেখা ঈদ সংখ্যাগুলির মধ্যে একটিতে উপন্যাসের সর্বোচ্চ সংখ্যা দেখেছি ১৬টি।

কিন্তু উপন্যাস নামে যা পাওয়া হয়, তা আসলে কী বস্তু? একটি ঈদ সংখ্যার মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা যদি ৫০০ ধরে নিই, সেই হিসেবে বিজ্ঞাপনসহ অন্য সবকিছু বাদ দিলেও ১৬টি উপন্যাসের একেকটির জন্যে সোয়া ৩১ পৃষ্ঠা বরাদ্দ করা সম্ভব। কিন্তু শুধু উপন্যাস দিয়ে পত্রিকার পেট ভরে না!

নাসিরউদ্দিন হোজ্জার গল্প মনে পড়ে। হোজ্জা একদিন আধাসের মাংস কিনে এনে বউকে রান্না করতে বলে বাইরে গেছে। বউ রান্না শেষ করেছে, এমন সময় তার বোন বেড়াতে এলে ওই মাংস দিয়েই সে আতিথেয়তা সারে। হোজ্জা খেতে বসে দেখে মাংস নেই। বউ কৈফিয়ত দিয়ে বললো, পাজি বেড়ালটা সব মাংস খেয়ে গেছে। হোজ্জা তৎক্ষণাৎ উঠে বেড়ালটাকে ধরে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখে, ওজন ঠিক আধ সের। হোজ্জার প্রশ্ন, এই যদি বেড়াল হয় তাহলে মাংস কোথায় গেলো? আর এটা যদি মাংস হয়, বেড়ালটা কোথায়?

ঈদ সংখ্যা দেখে আমাদের তখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, এই যদি পত্রিকা হয় তাহলে উপন্যাস কোথায়? আর এগুলি যদি উপন্যাস হবে, পত্রিকা থাকলো কোথায়? এতোসব জিনিস শ’ পাঁচেক পৃষ্ঠার ভেতরে হাঁসফাঁস করতে থাকে এবং সবচেয়ে বেশি ভোগে উপন্যাস। কারণ, চরিত্রগতভাবেই এই জিনিস কিছু বেশি জায়গা দাবি করে। কাহিনীর বিন্যাস ও বিস্তার, চরিত্রসমূহের বিকাশ ইত্যাদি মিলিয়ে বাড়তি পরিসর দরকার হয়।

উপন্যাসের আকার-আকৃতি কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে পুরনো আলোচনায় যাওয়ার দরকার নেই। এ যুগে War and Peace আকারের উপন্যাস লিখিত হওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য। এর বিপরীতে The Old Man and the Sea-এর ক্ষুদ্রায়তনও বহুল আলোচিত। বাংলা ভাষায় রচিত ‘ঘুণপোকা’ কি পূর্ণ উপন্যাস নয়? আসলে একটি উপন্যাসের উপন্যাস হয়ে ওঠা তার আকার-আকৃতির ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে বিষয়বস্তু ও কাহিনী, লেখকের বক্তব্য ও দর্শন এবং রচনাকৌশলের ওপর। তবে এটাও মানতে হবে যে, ছোটোগল্পে ঘটনা ও চরিত্র রচনায় আঁচড় কেটে যাওয়ার সুযোগ থাকে, উপন্যাস তা অনুমোদন করে না। উপন্যাসে বিস্তারের কাজটা আবশ্যিক, পারম্পর্য রক্ষাও। যথাযথ পরিসর উপন্যাসের জন্যে প্রাথমিক শর্ত।

মুশকিল হলো, আমাদের পত্রিকাগুলি এই পরিসর অনুমোদন করতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক অথবা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বোধহীন ও কাণ্ডজ্ঞানরহিত। তাদের লক্ষ্য ‘উপন্যাসের’ সংখ্যা বাড়ানো, উপন্যাস হলো কি না, লেখক লিখে তৃপ্ত হলেন কি না, পাঠককে উপন্যাসের নামে বড়োগল্প বা ছোটোগল্প দিয়ে প্রতারণা করা হলো কি না – এসব তাদের বিবেচ্য বলে মনে করা কঠিন। ম্যাগাজিন আকারের ঈদ সংখ্যায় একটি ‘উপন্যাস’ দেখেছি ৭ পৃষ্ঠায় শেষ! স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। অথচ একটি ছোটোগল্প লিখতেও এই পরিসর প্রয়োজন হতে পারে। রচনার গুণমানের কথা না হয় পরে, কিন্তু উপন্যাসের নামে এটাকে ইয়ার্কি ছাড়া আর কী বলা যায় আমার জানা নেই।

বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা আছে, তাদের প্রভাব সামান্যই। যেহেতু প্রচার ও পাঠক সীমিত। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিজ্ঞাপনদাতারা এসব পত্রিকার বিষয়ে উৎসাহী নয়। ফলে, বহুকাল ধরে আমাদের সাহিত্য মূলত দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য/সাময়িকী পাতাকেন্দ্রিক হয়ে আছে। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে দৈনিক কাগজগুলি তাদের সাময়িকী পাতার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী বলে মনে হয় না, যেনতেন প্রকারে পাতা ভরানোর দায়িত্বটাই তারা পালন করে। সাপ্তাহিক কাগজগুলির অধিকাংশই তাদের নিয়মিত সংখ্যায় সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে না। ধারাবাহিক উপন্যাস দূরের কথা, একটি-দুটি গল্প-কবিতাও তাদের পাতায় জায়গা পায় না। অথচ ঈদ মৌসুমে তাদের সাহিত্যপ্রেম উথলে ওঠে, প্রতিযোগিতা হয় কে কতোগুলি ‘উপন্যাস’ ছাপতে পারে!

এককালে যখন হিন্দুরা মুরগি খেতো না, তখন মুসলমানের মুরগিপ্রেম বলে একটা রসিকতা চালু ছিলো। বলা হতো, মুসলমানরা খুব যত্ন করে মুরগি পোষে, তবে সময় ও সুযোগ বুঝে জবাই করে খেয়েও ফেলে। আমাদের পত্রিকাওয়ালাদের ঈদকেন্দ্রিক সাহিত্যপ্রেমও যে আসলে ঐ মুসলমানের মুরগিপ্রেমের সমতুল্য, তার প্রমাণ ঈদ সংখ্যাগুলির পাতায় পাতায়। প্রয়োজনে ঐ ক্ষুদ্রাকার ‘উপন্যাসের’ হাত-পা-নাক-কান বা লেজ কেটে বরাদ্দ করা নির্দিষ্ট আকারের মধ্যে আঁটাতে হবে। যতোদূর জানি, এইসব কাটছাঁটের বেলায় লেখককে জানানোর সৌজন্যও দেখানো হয় না। ভাবটা এমন যে, লেখা ছেপে পত্রিকাগুলি লেখকদের ধন্য করে দিচ্ছে। অথচ বিষয়টা হওয়া উচিত পারস্পরিক প্রয়োজন ও সম্মানের।

এই কাটছাঁট মামলার আমি নিজে এর ভুক্তভোগী , এবং আমিই একমাত্র নই। শওকত আলী বা সৈয়দ শামসুল হকের মতো লেখকদের বেলায় এটা ঘটে না অবশ্য। তবে আমি নিশ্চিত, তাঁদেরও ‘সাইজ’ মনে রেখেই লিখতে হয়। হুমায়ূন আহমেদ বা ইমদাদুল হক মিলনরা অবশ্য এই সাইজের ‘উপন্যাসের’ মূল প্রবর্তক, সুতরাং তাঁরা নিয়ম চালু রাখেন। আনিসুল হকরাও এই প্রথার ইচ্ছুক অনুগামী। বিপদ হয় অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও নবীন লেখকদের এবং তাঁরাই নির্বিচারে বলির শিকার হয়ে থাকেন।

সর্বগ্রাসী বাণিজ্যমুখীনতার মুখে টিকে থাকতে হলে পত্রিকাগুলিকে নিশ্চয়ই বিক্রি এবং বিজ্ঞাপন নিতে হবে, সেগুলির ওপর নির্ভর করতেও হবে। কিন্তু লাগামছাড়া মুনাফার লোভে পড়ে নামী ও প্রতিষ্ঠিত পত্রিকারাও ঈদ সংখ্যায় ১২-১৪টি করে ‘উপন্যাস’ ছাপার প্রতিযোগিতায় নামলে তা শুধু হতাশার কারণ ঘটায়। আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা শুনেছি। আজকাল ঈদ সংখ্যা উপন্যাসগুলির প্রতি পাতার মাঝখানে ছোটো করে বিজ্ঞাপন থাকে, অনেক পত্রিকায় সেগুলি নাকি বিজ্ঞাপনদাতারা বরাদ্দ করেন লেখকের নাম-পরিচিতি দেখে। অর্থাৎ, এই লেখাগুলিও আসলে স্পনসর করা। কিন্তু স্বল্প-পরিচিত ও নবীন লেখকদের কে স্পনসর করবে?

প্রচলিত ও প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া এই রীতির ফলে বোদ্ধা পাঠকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, ঈদ সংখ্যার ‘উপন্যাস’ পড়ার আগ্রহ তাঁদের অন্তর্হিত হয়েছে অনেক আগেই। আর ‘গল্পের বই’ পড়া আর সব গড় পাঠকদের ধারণা জন্মাচ্ছে, এই বুঝি উপন্যাস! নিশ্চয়ই কারো কারো মনে এই প্রশ্নও উঠবে, তাহলে গল্প কাকে বলে!

উপন্যাসের তাহলে কী হবে? এখন একজন লেখক যদি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখতে চান, লেখাটি তিনি ছাপবেন কোথায়? ঈদ সংখ্যার অবস্থা তো জানাই হলো। কোনো পত্রিকার নিয়মিত সংখ্যায় উপন্যাস লেখার সুযোগ নেই। আমার জানামতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দুটি মাত্র পত্রিকা ধারাবাহিক উপন্যাস ছাপছে। মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ একই সঙ্গে দুটি ধারাবাহিক ছাপে – কে জানে কী কারণে তার একটি আবশ্যিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের লেখকের হয়ে থাকে। আর মাসিক পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাসে কারো আগ্রহ কীভাবে টিকে থাকে আমার জানা নেই। ‘দৈনিক সংবাদ’ হলো দ্বিতীয় পত্রিকাটি যেখানে সাময়িকী পাতায় ধারাবাহিক উপন্যাস ছাপা হচ্ছে। আগেই বলেছি, সাপ্তাহিকগুলি যেখানে তাদের নিয়মিত সংখ্যায় গল্প-কবিতাও ছাপে না, ধারাবাহিক উপন্যাসের আশা তাদের কাছে না করাই যুক্তিসঙ্গত। তাহলে? লেখক যাবেন কোথায়?

লেখার উদ্দেশ্যই হলো তা উদ্দিষ্ট পাঠকের কাছে পৌঁছানো। প্রকাশিত না হলে পাঠকের কাছে তা কী উপায়ে যাবে? প্রতিষ্ঠিত লেখক হলে সরাসরি প্রকাশকের কাছে চলে যেতে পারেন গ্রন্থাকারে বের করার জন্যে, নবীন লেখকের সেই বিলাসিতা নেই। লিখবো, কিন্তু তা কোথাও ছাপার উপায় নেই – তাহলে লেখক তাঁর উপন্যাসটি (পত্রিকার শূন্যস্থান পূরণের ‘উপন্যাস’ নয়) লেখার আগ্রহ কোথা থেকে পাবেন? উত্তর নেই। পত্রিকানির্ভর উপন্যাসের জন্যে কোথাও কোনো আলোর রেখাও নেই।


মন্তব্য

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

জুবায়ের ভাইকে অজস্র ধন্যবাদ এই গুরুত্বপুর্ন পোস্ট এর জন্য
ভাল লেগেছে আর একমত প্রকাশ করছি
সত্যি প্রমথনাথ বিশীর কথা আজও সমকালীন

***************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

একমত না হয়ে উপায় কী!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমি বেশ খোঁজ নিলাম ঈদ সংখ্যা নিয়ে। যা বুঝলাম জনপ্রিয় কিংবা সহসম্পাদকের সাথে চেনাজানা না থাকলে উপন্যাস-গল্প ঈদ সংখ্যায় আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্যাপারটি বেশ হতাশাজনক।

লেখা পাঠাবার উপযুক্ত জায়গার আসলেই অভাব। সেদিক থেকে সচলায়তন একটা ধন্যবাদ পাবে। পত্রিকায় পাঠাবার ঝক্কি নেই। পোস্ট করলেই হয়ে গেলো। পাঠকেরাও সব ডাঁকাবুঁকো। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় কোথাও পাঠাতে পারলে ভালো হতো। বাবা-মা অন্তত্য ছাপার অক্ষরে পড়তে পারতেন।

জুবায়ের ভাইয়ের পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পত্রিকায় লেখা প্রকাশের ব্যাপারে যোগাযোগ ইত্যাদি যা বলেছেন তার মধ্যে সত্যতা প্রচুর আছে। সেটা আলাদা প্রসঙ্গ, এখানে তাই উল্লেখ করিনি।

সচলে লেখা বিষয়েও একমত। তবে এটাও সত্যি যে সাহিত্য-সংক্রান্ত লেখালেখিতে আন্তর্জাল এখনো মুদ্রণ-মাধ্যমের বিকল্প তো নয়ই, সমকক্ষও হয়ে ওঠেনি। বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্যে মুদ্রণ-মাধ্যমের বিকল্প এখনো নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সবজান্তা এর ছবি

এই সমস্যার থেকে মুক্তির উপায় আছে বলে মনে হয় না। সচলের দুর্দান্ত অর্থনীতিবিদ কিংবা সমাজবিজ্ঞানীদের ভীড়েও সাহস করে বলে ফেলি যে, এ নেহায়েতই পুঁজিবাদের দোর্দন্ড প্রতাপ। সবকিছুতেই আমরা মুনাফা খুঁজছি, আর সে কারণেই উপন্যাস ছাপানো বিশেষত নবীন কিংবা অখ্যাত লেখকদের ক্ষেত্রে এক রকম অসম্ভব।

লেখক হিসেবে অন্ত্যজ শ্রেণী হওয়ার কারণে আমি নিজে এখনো এই হতাশাতে ভুগি না, তবে অমিত ভাই এর মত যারা চমৎকার লেখেন, তাঁদের হতাশার জায়গাটা অনুমেয় সহজেই।


অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি সাধারণভাবে নিজেকে আশাবাদী মানুষ বলে মনে করি। কিন্তু এই জায়গায় আসলে সত্যিই আশা করার মতো কিছু চোখে পড়ছে না। তবে সব নৈরাজ্যেরই অবসান একসময় ঘটে। হয়তো এখানেও হবে। কবে, কখন, কীভাবে কে জানে!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঈদ সংখ্যা হাতে নেয়া হয় না লম্বা দিন হয়ে গেছে। মাঝে একবার দেশে গিয়ে ফিরবার সময় কয়েকটা কিনেছিলাম, কিন্তু এখানে এসে আর কেন যেন পড়ার উৎসাহ পাইনি।
প্রতি পাতায় বিজ্ঞাপনের কথাটা নির্মম সত্যি। পাতার নীচে/মাঝখানে বক্স করে করে বিজ্ঞাপন দেয়। উপন্যাসের ওই অংশে হয়তো নায়িকা তার হৃদয়ের ব্যথা বলিতে ব্যাকুল হয়ে কান্নাকাটি করছে, আর তার নীচেই হয়তো গ্রামীণের স্মাইল প্যাকেজের হৃদয়বিদারক বিজ্ঞাপন!
তবে এইসব মেনে নিতে সমস্যা হতো না, যদি উপন্যাসগুলোর মান ঠিক হতো।
জুবায়ের ভাই বলার আগে ব্যপারটা মাথায় আসেনি, কিন্তু এখন সত্যিই ভাবছি, নতুন লেখকদের এই সময়ে জন্মানোটা একরকম বিপদই হয়ে গেছে। আগে বড় বড় পত্রিকাগুলো বটগাছের মতই নতুন লেখকদের আশ্রয় দিতো, এখন সেখানে স্বজন-প্রিয়দের সাম্রাজ্য। সাহিত্য-সাময়িকীর পাতাগুলাও- ধারণা করতে পারি- নতুনদের জন্যে এখনো দুর্গম। তবে কি উপায়?
লিটল ম্যাগাজিন বের করলে নিজের গোঁ বজায় রাখা যায়, কিন্তু এটাও তো সত্যি যে তাতে খুব বেশি মানুষদের কাছে পৌঁছানো যায় না। সংঘবদ্ধ লেখকদের একটাই পত্রিকা- এরকম ধারণা "কণ্ঠস্বর"-এর পরে বাংলাদেশে ভালমতন দেখেছে কি না কে জানে। এখনতো সবাইই নিজের নিজের পত্রিকা বের করে ফেলে।
জুবায়ের ভাইএর মত করে আমারও তাই প্রশ্ন, নতুন যারা লিখছে বা লেখার চেষ্টা করছে এখন, তাদের জায়গা কোথায় হবে, কেমন করে হবে?
দেখি কেউ সদুত্তর দিতে পারে কি না।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

১. দেশ থেকে বয়ে আনা ঈদ সংখ্যাগুলি পড়েননি, তাতে ক্ষতি বোধহয় কিছু হয়নি। বরং অযথা মেজাজ খারাপ করার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছেন সম্ভবত।

২. লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে মুখচেনা বা নিজের কাছের মানুষদের কিছু বেশি প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারটা সবসময়ই ক্রিয়াশীল থাকে - আগে ছিলো, এখনো আছে। যে 'কণ্ঠস্বর'-এর কথা বললেন, সেখানেও কি কমবেশি ছিলো না? একটা গোষ্ঠিবদ্ধতার ব্যাপার ছিলো। কিন্তু তারপরেও সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ মফস্বল শহর থেকে ভালো লেখা পাঠালে তা-ও প্রকাশিত হয়েছে। এখনকার অবস্থা ঠিক জানা নেই, তবে গোষ্ঠীপ্রীতি সম্পর্কে যা শুনতে পাই, তা খুব উৎসাহব্যঞ্জক নয়।

৩. প্রচার-প্রসার না থাকুক লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব একটা সবসময়ই থাকে। কিন্তু এই পোস্টে আমার মূল উদ্বেগের যে বিষয় - উপন্যাস - সেখানে লিটল ম্যাগাজিনের কিছুই করার নেই। পরিসরের কারণেই লিটল ম্যাগাজিন উপন্যাস ধারণ করার আধার হয়নি কখনো, হবেও না।

৪. পত্রিকায় কম পরিচিত ও নবীন লেখকদের গল্প-কবিতা বা প্রবন্ধ প্রকাশ এখনো ততো দুরূহ নয় বলে আমার ধারণা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমি বোধহয় একটু এক্সাইটেড হয়ে প্রসংগের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। দুঃখিত জুবায়ের ভাই।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরে কী আশ্চর্য! দুঃখিত হওয়ার তো কিছু নেই। এগুলিও প্রাসঙ্গিক অবশ্যই। লেখা অতি দীর্ঘ হয়ে যাবে বিবেচনা করে একটা জায়গায় আলোচনা কেন্দ্রীভূত রাখার চেষ্টা করেছি। সংশ্লিষ্ট আর সব বিষয়গুলি সময়-সুযোগমতো আলোচনা হবে। আপনিই সূত্রপাত করতে পারেন, যেহেতু আপনার মাথায় এইসব নিয়ে চিন্তাভাবনা আছে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমিও এই প্রশ্ন নিজের মধ্যে পুষে রেখেছি অনেক দিন ধরে। অনেক লেখাই সচলায়তনে পড়ি যেগুলো মূলধারার (যা কিনা বুড়িগঙ্গার মতই পঁচে গেছে) অনেক প্রকাশনার চেয়ে শতগুণে ভাল। এগুলো বৃহত্তর পাঠকশ্রেণির কাছে পৌঁছে দেবার উপায় কী? সচল প্রকাশনার মত প্রজেক্টগুলোয় স্রেফ স্যাম্পল হিসেবে একেকটি পোস্ট নেওয়া হয়, এবং তা ব্লগের নমুনা হিসেবেই পাঠকদের কাছে গেছে।

"নতুন লেখক তুলে আনা" বা "নতুন লেখকদের পরিচিতি দান" যদি মুখ্য হয়ে থাকে, তাহলে কি সচল প্রকাশনার ধারণাটাকেই একধাপ এগিয়ে নেওয়া যায়? এই বছর খানেকে প্রায় সব বিষয়েই অনেক ভাল লেখা জমেছে এখানে। সেগুলো সংকলিত করে কি কিছু বই বের করা যায়?

একটি বই প্রকাশ করতে ফর্মাপ্রতি কত টাকা খরচ হয়, সেই হিসেবে করে নিজেরা সেই অনুযায়ী পৃষ্ঠপোষক বের করার উপায় আছে। প্রাথমিক অবস্থা নবীন লেখকেরা কেউ মুনাফামুখী নন। অতএব, খুব সহজেই বইগুলোর দাম কিছুটা কমিয়ে রাখা যায়।

'সচলায়তন' এর ব্র্যান্ড নেম'কে কি কাজে লাগানো যায়? করা গেলে পরিচিতিটা সহজ হত।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বই প্রকাশ বোধ করি আজকাল অনেক সহজ হয়ে গেছে প্রযুক্তির সুবিধায়। সে কারণে প্রতি বছর বইমেলায় বিপুল সংখ্যায় নবীন লেখকরা নিজেদের উদ্যোগে ও খরচে বই প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু পরিচিতিবিহীন লেখকদের সে বইগুলির বিক্রি ও প্রচার কতোটা হয় তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

বই প্রকাশনার প্রসঙ্গটি আলাদা। আমার আলোচনার বিষয় কিন্তু সীমাবদ্ধ রেখেছি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখে পত্রিকায় প্রকাশের মধ্যে। সেখানে লেখকের অসহায়তার কথাই বলতে চেয়েছি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বহুকাল ধরে আমাদের সাহিত্য মূলত দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য/সাময়িকী পাতাকেন্দ্রিক হয়ে আছে। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে দৈনিক কাগজগুলি তাদের সাময়িকী পাতার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী বলে মনে হয় না, যেনতেন প্রকারে পাতা ভরানোর দায়িত্বটাই তারা পালন করে।

একেবারে খাঁটি কথা জুবায়ের ভাই। বিশেষ করে বোল্ড করে যে অংশটুকু হাইলাইট করলাম সে অংশটুকু। এর কারণটাও নিশ্চয় জানেন। উকিলের ঘরে কুকিল ডাকানো জটাধারী উঁকুনধারী কেউ সেচ্ছায় কবি নাম নিয়ে যদি কোনো দৈনিকের সাহিত্য পাতার সম্পাদকের টেবিল আলোকিত করে রাখে তাহলে সেই দৈনিকের সাহিত্য বা সাময়িকী পাতা থেকে আমাদের সাহিত্যের প্রতিফলন আর কতোটুকুইবা আশা করা যায়।

এই কর্পোরেট ছাগলদের সাময়িকীর সম্পাদনার টেবিল থেকে কোনোমতে হটাতে পারলে তবেই কেবল বিশেষ সংখ্যায় সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার অর্থবহ প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব, নচেৎ নয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সেটাই একমাত্র সমস্যা নয়। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

চমৎকার হলেও মন খারাপ করা পোস্ট।
যেহেতু আমরা লেখালেখিতেই আনন্দ পাই। আমাদের কাছে বিকল্প কী আর হতে পারে বুঝি না। বিশেষ করে আমি আর কিছু তেমন ভাবতেই পারি না। যদিও মার্চের দিকে পাঁচটি উপন্যাস ঢাকার বিভিন্ন দৈনিক ও একটি পাক্ষিক প্রত্রিকায় পাঠিয়েছি। ছাপা হবে কি না জানি না। তবে যুগান্তর নতুন লিখিয়েদের জন্য একটি ব্যবস্থা রেখেছে। অন্যান্য পত্রিকা যেমন প্রথম আলো, সমকাল পাক্ষিক অন্যদিন এরাও নতুনদের জন্য একটু সুযোগ রেখেছে বলে জানি। এখন যদি কাটাকুটির ব্যাপার বেশি থাকে তাহলে লেখক শুরুতেই পাঠক অপ্রিয় হয়ে পড়বে সন্দেহ নেই।

অনেক অনেক দিন আগেকার কথা।
আনসারদের পত্রিকা প্রতিরোধ। সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাবিব উল্লাহ তার কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে, শওকত আলির উপন্যাস কেটেকুটে ছেপে দিয়েছেন প্রতিরোধে। শওকত আলি বুঝতে পারেননি।

ব্যাপারটি সেদিন তেমন গুরুত্ব দেইনি। কারণ আমার মনে ছিলো যে আমাকে কখনো পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ঝামেলায় পড়তে হবে না। ভেবেছিলাম ছাত্রাবস্থা বলে অন্যান্যদের মত আমিও লিখছি। ছাত্রত্ব ঘুঁচে গেলে লেখলেখির পোকা মাথা থেকে এমনিই বেরিয়ে যাবে। আমি কেন যেন আজও লিখে চলেছি। লেখার পোকাটা মাথায় রয়েই গেল।

ঢাকা কেন্দ্রিক সাহিত্য জগতে পঞ্চপান্ডব বলে খ্যাত রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক এবং আরো কয়েকজন সম্পাদকদের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে নিজেরাই পত্রিকা বের করেছিলেন। কিন্তু আমরা যারা পত্রিকা বের করতে পারবো না (পারলেও পাঠকের কাছে পৌঁছানোর হ্যাপাও কম না।) তাদের জন্য সত্যিই মুশকিল!
সামনে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছি না। তবে ইশতিয়াক রউফের মতামতটি বেশ আশার সঞ্চারী।
যুবায়ের ভাই, আপনি তো সমস্যাগুলো দেখিয়ে দিলেন সত্যি। কিন্তু বিকল্প কিছু নিয়ে কি একেবারেই ভাবছেন না, তাই বা কেমন করে হয়? বিকল্প না থাকলে দেখছি মাথা থেকে লেখালেখির পোকাটাকে বিদায় করতে হতে পারে।
পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনি তো সমস্যাগুলো দেখিয়ে দিলেন সত্যি। কিন্তু বিকল্প কিছু নিয়ে কি একেবারেই ভাবছেন না, তাই বা কেমন করে হয়?

এই প্রশ্নটার উত্তর আমার জানা থাকলে খুশি হতাম।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শেখ জলিল এর ছবি

জুবায়ের ভাই মনের কথা বলেছেন। লেখা ছাপানোর জন্য এখন আর কোথাও ঢু মারি না। আমার ভরসা এখন সচল..

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সচল বা এই ধরনের আন্তর্জালিক মাধ্যমগুলি একটা ভরসা বটে। কিন্তু মুদ্রণ-মাধ্যমের বিকল্প কি? আপনি নিশ্চয়ই চান, আপনার লেখাগুলি বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাক!

একটা ছোটো হিসাব করা যাক। উদাহরণ হিসেবে যদি ধরে নিই, প্রথম আলোর পাঠক সংখ্যা এক লক্ষ এবং এর সাময়িকী পাতা পড়েন এই এক লক্ষের শতকরা ১ ভাগ। সেই হিসেবে যে পাঠক আপনি পাচ্ছেন, আন্তর্জাল কি তার কাছাকাছি যায়? ভবিষ্যতে যাবে (এবং যাবেই), তবে এখনো যায় না বলে ধারণা করাই সঙ্গত।

আর আমার আলোচনার যে প্রসঙ্গ - উপন্যাস - আন্তর্জালে তা পড়ার ধৈর্য বা সময় যে খুব বেশি মানুষের নেই তা-ও প্রমাণিত। মজার কথা, আমার নিজের পোস্ট করা উপন্যাসগুলিতে 'প্রিন্ট করে রেখেছি, পরে পড়বো' জাতীয় মন্তব্য অনেক পেয়েছি। অর্থাৎ মুদ্রিত অবস্থায় পড়ার দিকেই পাঠকের আগ্রহ এখনো বিস্তর।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

একটি প্রয়োজনীয় আলোচনার জন্য জুবায়ের ভাইকে ধন্যবাদ ।

একটা ঈদ সংখ্যায় আনিসুল হকের উপন্যাস (!) পেয়েছিলাম ,
মাত্র ১৩ পৃষ্ঠার !!!!!!!!!

মেজাজটা কেমন খারাপ হয় চিন্তা করেন ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মেজাজ খারাপ হয় বলেই তো এই লেখাটা লিখতে হলো। কিছু হবে না, কারো কিছু এসে যাবে না। শুধু নিজের অনুভূতিটা লিখে রাখা - এই আর কি!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

গৌতম এর ছবি

লেখাটি পত্রিকার সম্পাদকদের ফরোয়ার্ড করে দেওয়া উচিত।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তাহলে তো আমি সম্পাদকদের কালো তালিকাভুক্ত হয় যাবো চিরস্থায়ীভাবে! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

একটি পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলাম বেশ কিছুদিন। তখন ঈদ কিংবা বিশেষ সংখ্যার জন্য বিখ্যাত লেখকদের পাঠানো লেখা সহকারী সম্পাদকের হাত থেকে প্রায় আমার হাতে এসে পড়তো- একটু কেটে ছোট করার, নির্দিষ্ট পাতায় ধরার উপযোগী করার। অনিচ্ছা ও মন খারাপ করা অনুভূতি নিয়ে কাজটা করতাম। ব্যাপারটা খারাপ লাগতো বলে কখনো নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলতাম। আজকে সেইসব লেখকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যাঁরা আপনাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁরা আদৌ হয়তো আপনার মতো করে দংশনটা অনুভব করেন না, কখনো করবেন এমন আশাও করা যায় না। আপনার আন্তরিক স্বীকারোক্তিটা ভালো লাগলো। অভিনন্দন আপনাকে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

সচল ঈদ সংখ্যা
সচল পূজা সংখ্যা
সচল বৈশাখী সংখ্যা
সচল একুশে সংখ্যা
এসবই হতে পারে আগামী দিনের বিকল্প

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

গৌতম এর ছবি

তীব্র প্রতিবাদ এবং তীব্র সহমত। ঈদ সংখ্যা-পূজা সংখ্যার আইডিয়ার সাথে একমত নই। কিন্তু বৈশাখী সংখ্যা-একুশে সংখ্যা-বসন্ত সংখ্যা আইডিয়াগুলোর সাথে একমত, পুরোপরি এবং জোরালোভাবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আজকাল মানুষ জামা-কাপড়ের সাথে এইগুলাও কিনতে চায়।এইজন্যই এই প্রস্তাব।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

গৌতম, আপনার প্রতিবাদের জয়াগাটা অনুমান করতে পারি। ধর্মীয় উপলক্ষটা এড়াতে চান। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার যে, ধর্মের আবরণ থাকলেও ঈদ ও পূজার উৎসবের অংশটা ঠিক কতোটা ধর্মীয় তা বোঝা দরকার। আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ মানুষ এগুলিকে মূলত উৎসবের উপলক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করে। আর সেগুলি জীবনচর্যার ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে যুগ-যুগান্তরের অভ্যাসে। রাতারাতি সেগুলি বাদ দেওয়া বোধহয় সম্ভব নয়। এর বিপরীতে পহেলা বৈশাখ ছাড়া আর বাকি ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলি ঠিক ততো বড়ো করে কি উদযাপিত হয়? হলে নিশ্চয়ই ভালো হয়, কিন্তু এখনো তা বাস্তবতা নয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আহমেদুর রশীদ, আপনার প্রস্তাব কি মুদ্রণ মাধ্যমের জন্যে না আন্তর্জালে, ঠিক বোঝা গেলো না। মনে হয় মুদ্রণের কথাই বলছেন। কিন্তু সেটা সচলের জন্যে কতোটা উপযোগী হয়, বিবেচনা করা দরকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কেন যে মানুষ আমাকে ফলো করে না বুঝি না
তাহলে আর কিছু না হোক শান্তিতে থাকতে এবং ঘুমাতে পারতো বিড়ি টানতে টানতে

আমার জীবনেও কোনো ঈদ সংখ্যা কিংবা পূজা সংখ্যা আমি কিনেছি কিংবা পড়েছি বলে মনে পড়ে না

আ শান্তি ওম শান্তি
হে মানব সমাজ
এসো শান্তির পথে
এসো আমার রাস্তায়

সুমন চৌধুরী এর ছবি
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

@মাহবুব লীলেন, আহ, আপনার মতো বৈষ্ণব হতে পারলে কী ভালোই হতো! চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মাহবুব লীলেনের সাথে আমার আংশিক মিল
আমার জীবনেও কোনো ঈদ সংখ্যা কিংবা পূজা সংখ্যা কিনিনি
কিন্তু মাগনা পাওয়ায় পড়েছি কিছুটা
যেমন জামাতি পত্রিকা নয়া দিগন্ত ছুয়ে দেখা হয় না তেমন
কিন্তু তাদের ঢাউস ঈদ সংখ্যা মাগনা পেয়ে
চোখ বুলিয়ে ত ভিমরি খাবার দশা
যারা জামাতিদের নির্বাচন /রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার আন্দোলন করছে তাদের কারো কারো লেখা দেখলাম সেখানে !

*********************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

কল্যাণ এর ছবি

লেখা আর আলোচনা দুইই দারুণ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।