ইউরোট্রিপঃ যাত্রা শুরুর আগে- ২

গৃহবাসী বাউল এর ছবি
লিখেছেন গৃহবাসী বাউল [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/১০/২০১২ - ২:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগে যেখানে থেমেছিলাম

"এই দিকে এতকিছু হয়ে গেল, কিন্তু আমার ভিসা এখনও এলনা। এরি মধ্যে শুরু হল কানাডা পোষ্ট-এর অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি। আমার তো পুরাই মাথায় হাত। ভিসা আসার সম্ভাবনা যাও ছিল, ধর্মঘট তার পুরাটারেই বোঙ্গা বোঙ্গা করে দিল। আমি প্রতিদিন বাসায় ফিরে মেইলবক্স খুলে দেখি, আর প্রতিদিন হতাশ হই। অইদিকে পায়ে পায়ে এগিয়া আসছে কনফারেন্সের সময়।"

এই অবস্থায় বসে বসে হাত-পা কামড়ানো ছাড়া আর কিছু করার নেই। কানাডা পোস্টে ফোন করলে ওরা জানায় ওদের অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের কথা। আমি আর কি করি? একবার চেষ্টা করলাম ডেট্রয়েটে যোগাযোগ করে ওদেরকে বলতে যে, "তোমরা দয়া করে অন্য কোন পোস্ট অথবা কোন কুরিয়ার সার্ভিসে করে আমার পাসপোর্ট পাঠিয়ে দাও, যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকবো"। কিন্তু ওদের সাথে যোগাযোগ করা আর আনিসুল ভাইয়ের “"মা"”-এর বিজ্ঞাপন বন্ধ করা কাছাকাছি ধরণের অসম্ভব কাজ। তাই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলাম।

ইতোমধ্যে কানাডা থেকে শীত বিদায় নিতে শুরু করেছে। ন্যাড়া গাছগুলিতেও নতুন পাতা আসছে। আমাদের গা থেকে শীতের পোশাকও কমছে ধীরে ধীরে। ঋতু বদল হচ্ছে। বাইরে গেলেই দেখা যায় ছেলেরা সব ভদ্র পোশাক (এই যেমন ফুলপ্যান্ট, টি-শার্ট ইত্যাদি) পড়ে মেয়েদের কুদৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করছে, অন্যদিকে মেয়েরা পাল্লা দিয়ে কে কার চেয়ে ছোট প্যান্ট পড়তে পারে তা নিয়ে ফাইট করছে। এই অবস্থায় ঈমান ধরে রাখাই কষ্টকর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। শক্ত হাতে ঈমান ধরে রেখে আশায় আছি, যে কোনদিন আমার কানাডিয়ান ভিসা চলে আসবে, আর ইউরোপিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করবো।

অবশ্য এর মধ্যে বসে না থেকে খোঁজখবর করতে শুরু করেছি কিভাবে ইউরোপিয়ান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এইসব ব্যাপারে খোঁজখবর করার ক্ষেত্রে আমি আবার চরম আইলসা। একটু যে গুগুল মামুরে জিজ্ঞেস করব, তাও ইচ্ছা করে না। তাই খোঁজ লাগালাম আশেপাশের বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে কেউ ইউরোপ গিয়েছে কিনা কনফারেন্সে। খুঁজেপেতে একজনকে পাওয়া গেল, যে আগে ইটালি হয়ে ফ্রান্স গিয়েছিল। তার কাছ থেকে জানা গেল যে, ইউরোপের ভিসা প্রসেস খুবই সহজ। যে দেশে প্রথম ল্যান্ড করবে, সেই দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে আর একবার নেমে গেলে বিন্দাস ঘুরে বেড়ানো যাবে। এবং প্রায় সব শহরেই ই. ইউ. দেশগুলির কনস্যুলেট থাকে। ওদের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। সব শুনে বললাম, ভেরি গুড, এইটা কোন ব্যাপার না। আগে তো আমার পাসপোর্ট আসুক, তারপর দেখামু কত ডাইলে কত পুরি। কিন্তু হায়, তখনও কি জানি আমার জন্য অপেক্ষা করছে “"উত্তম জাঝা”"।

এইভাবে অপেক্ষা করতে করতে চলে গেল আর একটি মাস। হাতে আছে আর এক মাস। ওইদিকে আমার নাকের ডগায় অ্যালেক্স আর বস প্ল্যান করছে তারা স্পেন গেলে কি করবে, কনফারেন্সের আগে পরে কোথায় কোথায় যাওয়া যায় ইত্যাদি। তারা এগুলি নিয়ে আলোচনা করে, আর রাগে আমার গা জ্বলে যায়। বস হালায় আবার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটা পিত্তি জ্বালানো হাসি দেয় আর মুখে বলে "“পুউর ম্যান"”। আমি দাঁত মুখ খিচে তাদের সব অত্যাচার সহ্য করি। একদিন সকালে অ্যালেক্সের বাচ্চা আমাকে একটা বই দেখিয়ে বলে, “"তুমি কি এই বইটা কিনেছ? স্পেনে কিন্তু পাবলিক ইংরেজি বলে না, তোমাকে অবশ্যই স্প্যানিশ জানতে হবে”"; আমি জিজ্ঞেস করলাম," কি বই?"; বলে, "“পর্যটকদের জন্য সহজ স্প্যানিশ শিক্ষা”"। মুখে বললাম, "“এইটা কিনতে হবে নাকি? জানতাম না তো, জানানোর জন্য ধন্যবাদ"”। মনে মনে বললাম, "“ক্যালাইস না *দির ভাই, কোনও জায়গায় যাইতে তো আর ভিসা লাগে না, তাই মজা টের পাস না। আছোস তো মোজে, তালি দিলেই বাজে"”। তারপর আবার মাঝে মাঝে আমাকে সে স্প্যানিশ শিখাতে চেষ্টা করে। আমি কাষ্ঠং-শুষ্কং মুখ করে ফরসেপের গোড়া দিয়ে কান চুলকাই, এক কান দিয়ে শুনি আর অন্য কান দিয়ে বের করে দেই।

কনফারেন্স ডেটের ২৫ দিন আগে জানা গেল কানাডা পোস্টের ধর্মঘট ছুটেছে। তারা মাল ডেলিভারি দিতে শুরু করেছে। তবে অনেকদিনের মাল জমা হয়ে যাওয়াতে খালাস করতে একটু সময় লাগবে, তাই সবাইকে ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমি মনে মনে বললাম, "“এইবার তোর কাম সারছেরে কালিয়া, বইসা বইসা পাছায় বাজা তালিয়া”"। নিদানের সম্বল হিসেবে বাড়ির কাছের পোষ্ট অফিসে গিয়ে তাদেরকে আমার নাম ঠিকানা দিয়ে জানালাম যে, এই নামে আর ঠিকানায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্ট আসবে, তোমরা কি দয়া করে খুঁজে দেখবে এর কোন পাত্তা পাওয়া যায় কিনা। তারা জানাল তাদের কাছে এইরকম অনুরোধ দিনে কয়েকশ আসছে, সবারই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। এই অবস্থায় তাদের কিছু করার নেই। তারপরও অনুরোধে রাইস মিল গিলে তারা আমার নাম ঠিকানা টুকে রাখল এবং জানাল তারা তাদের চোখ-কান খোলা রাখবে। আমি আশায় বুক বেঁধে চলে আসলাম। তারপর, একদিন যায়, দুইদিন যায়, আমার কাঙ্ক্ষিত চিঠি তো আর আসে না। চিঠি যা আসে তা হলো ক্রেডিট কার্ডের বিল, ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, রেভেন্যু এজেন্সির চিঠি ইত্যাদি হাবিজাবি জিনিস। এইভাবে দিন যাচ্ছে আর আমার চেহারা আমসি থেকে আমসিতর হচ্ছে। এরমধ্যে অ্যালেক্স জানিয়ে দিল তার টিকিট কনফার্ম, সে কনফারেন্সের দশদিন আগেই স্পেন চলে যাবে, কিছুদিন বিভিন্ন শহরে ঘুরাঘুরি করবে, তারপর যাবে কনফারেন্সে। আর বস জানাল সেও সপ্তাহ খানেক আগে যাবে সুইজারল্যান্ড, যেখানে সে তার পোস্ট-ডক করেছে, সেখান থেকে যাবে কনফারেন্সে। আমাকে বলে দিল পোস্টার বানাতে। আমি বিরস মুখে বললাম, আগে তো ভিসা পাই, তারপর পোস্টারের চিন্তা করা যাবে। শুধু শুধু পোস্টার বানিয়ে সময় নষ্ট করার কি দরকার? কনফারেন্সের ঠিক আঠার দিন আগে আমি ল্যাবে কাজ করছি, এমন সময় আমার পাকি (*লার ঘরের *লা, এর কথা আসবে পরের কোন এক পর্বে) রুমমেট জানাল মেইল-বক্সে ডেট্রয়েট থেকে আসা একটি চিঠি দেখা যাচ্ছে। আমি সব কাজ ফেলে রেখে দৌড়ে গেলাম, দেখলাম আমার নামেই এসেছে, মহাকাঙ্ক্ষিত কানা...দা...*কিং...ডিয়ান ভিসা। আহহহহহ শান্তি। সব্যে সাত্তা সুখীতা ভবন্তু।

এইবার ইউরোপিয়ান ভিসার জন্য যুদ্ধ। স্প্যানিশ এমব্যাসির ওয়েবসাইটে দেখা গেল তারা শর্ট স্টে (সর্বোচ্চ তিন মাস), মিডিয়াম স্টে (সর্বোচ্চ ছয় মাস) এবং লং স্টে (ছয় মাসের বেশি) ভিসা দিয়ে থাকে। আমি শর্ট স্টে’র জন্য আবেদন করতে পারব। আমার শহরেই আছে কনস্যুলেট, সো, নো চিন্তা, ডু ফুর্তি বলে ঘুম দিলাম, বাকিটা সকালে দেখা যাবে বলে। যদি জানতাম সকালে কি আছে কপালে তাহলে আর রাতে ঘুমানো লাগতো না। সকালে উঠে ওয়েবসাইট থেকে কনস্যুলেটের ফোন নম্বর নিয়ে ফোন দিলাম ভিসা পেতে আমাকে কি কি কাহিনী করতে হবে জানতে। কি তাজ্জব, ফোন বাজে কিন্তু কেউ ধরে না, এক নাগাড়ে ফোন করতে করতে আমার ফোনের পিছন দিয়ে ধুঁয়া বের হওয়ার অবস্থা হয়ে গেল। কিন্তু কেউ ফোন ধরল না। আবার গেলাম ওয়েবসাইটে, যদি কিছু জানা যায় এই আশায়। বহু খুঁজেপেতে তাদের আন্ডার মেইন্টেনেন্স সাইটের এক কোনায় পেলাম ভিসার আবেদনের সাথে কি লাগবে। লিস্ট দেখে আমার ভিমড়ি খাবার যোগাড়। দুনিয়ার বুকে যা যা আছে তার সবই লাগবে। আমার স্টাডি পারমিট, কানাডিয়ান ভিসা, পাসপোর্ট তো লাগবেই, সাথে লাগবে ভিসা ফি, ইন্সটিটিউটের চিঠি, কনফারেন্সের দাওয়াত পত্র, প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিঙয়ের প্রমাণ, হেলথ ইনস্যুরেন্স, ইউরোপে আর কোথায় কোথায় যাব তার ঠিকানা ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরাই মাথায় হাত কন্ডিশন। সময় আছে আর সতের দিন। ভিসা প্রসেসের সময় ৪ সপ্তাহ। এইবার সত্যি সত্যিই কান দিয়ে ধুঁয়া বের হতে লাগল। দৌড়ে গেলাম ট্রাভেল এজেন্সিতে, টিকেট বুকিং দিলাম (আপাতত কানাডা থেকে স্পেন, রাউন্ড ট্রিপ, অন্য কোথাও যাবার কথা তখনও মাথায় আসেনি), ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স নিলাম (পরে জেনেছিলাম এটা না নিলেও চলত, কারণ, গ্র্যাড স্টুডেন্টরা জি.এস.এ. থেকে যে হেলথ কভারেজ পায় তাতে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলও অন্তর্ভুক্ত)। ভিসা ফি দিলাম, ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠি নিলাম, আরও যা যা লাগে তা যোগাড় করলাম, আর এর মাঝেই কনস্যুলেটে ফোন করা অব্যাহত রাখলাম। কিন্তু তখনও কেউ ফোন ধরছে না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম সরাসরি স্প্যানিশ এমব্যাসিতে ফোন করব, যা আছে কপালে। দিলাম ফোন, এইখানেও একই অবস্থা, কেউ ফোন ধরে না, বলে মেসেজ রাখতে, পরে তারা কলব্যাক করবে। রাখলাম মেসেজ। কিন্তু কেউ তো আর কলব্যাক করে না। আবার ফোন, আবার মেসেজ। এইভাবে চলল পুরা একদিনের গোটা অর্ধেক সময়। মাথা পুরাই আউলা। কি যে করি?

এইবার সিদ্ধান্ত নিলাম ওদের কনস্যুলেটে চলে যাব। গুগল ম্যাপ দেখাল বাসে পঁয়তাল্লিশ মিনিট যাওয়ার পর আবার আধা ঘণ্টা হাঁটলে পাওয়া যাবে ওই ঠিকানার কাছাকাছি কোন জায়গা, কিন্তু সেটাও আসল ঠিকানা থেকে বেশ দূরে। আর বিদেশে যারা থাকেন তারা জানেন বিদেশে ওয়াকিং ডিস্টেন্স মানে কমপক্ষে আধাঘণ্টার হাঁটা। আর ঝুঁকি নিলাম না। এক বন্ধুর হাতে পায়ে ধরে তাকে রাজি করালাম আমাকে একটা রাইড দেয়ার জন্য (যেহেতু আমার গাড়ি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স কোনটাই নেই)। ওই ব্যাটাও মাত্র আগের সপ্তাহে লাইসেন্স পেয়েছে, এখনো হাত পাকেনি। তবুও কি আর করা, জান হাতে নিয়ে দুই বন্ধুতে বের হলাম অনিশ্চয়তার পথে। বহু ঘুরাঘুরি করে পায়ের ঘাম মাথায় তুলে, খুঁজে পেলাম ঠিকানা, বুঝলাম যে, বাসে করে আসলে আজকে বাঁশ নিশ্চিত ছিল। যাই হোক, ঠিকানা পেয়ে সব কষ্ট ভুললেও ঠিকানার খোমা দেখে পাম চলে গেল। এযে দেখি আবাসিক এলাকা। আন্ধার ভাই কানাও বলবে না যে এইটা কোন অফিস হতে পারে। তারপরও বুকে বহু সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে (বুঝলাম যে, নটি আমেরিকা দেখা ঠিক হয়নি, এটা আমার মত সচ্চরিত্রবান মানুষকে ভিতু বানিয়ে দেয়)। কড়া নাড়লাম, ভিতর থেকে কোন আওয়াজ নেই। উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম কাউকে দেখা যায় কিনা, নাহ, কোন সাড়া-শব্দ নেই। কয়েকবার ধাক্কাধাক্কি করার পর ভিতরে কারো নড়াচড়ার আওয়াজ পাওয়া গেল। দরজা খুললেন এক দাদু, জানতে চাইলাম এইটা এই ঠিকানা কিনা, এবং স্প্যানিশ কনস্যুলেট কিনা। উনি জানালেন ঠিকানা ঠিকই আছে, কিন্তু এইটা কনস্যুলেট না। তবে, এই ঠিকানার কাছাকাছি আরেকটা ঠিকানা আছে, যেইটা নতুন হয়েছে, কোনও ম্যাপে আপডেট করা হয়নি। গেলাম ওই ঠিকানায়। ওইখানে আরও এক কাঠি বাড়া। কোনও দাদা-দাদী তো দূরে থাক, কেউই বের হলনা। ফিরে এলাম ল্যাবে। কয়েকঘন্টা সময় নষ্ট। এইবার অ্যালেক্স বুদ্ধি দিল, "‘তুমি দেখ এই শহরে অন্য কোন ই.ইউ’'র দেশের কনস্যুলেট আছে কিনা। তাদেরকে ফোন করে দেখ, হয়ত তারা কিছু বললেও বলতে পারে"। ইচ্ছা করল ওরে ধইরা একটা চুম্মা দেই। কিন্তু বিয়ে করার আগেই নিজের চরিত্রের উপর কালি ফেলার ঝুঁকি না নিয়ে ওয়েবসাইট থেকে দেখলাম এই শহরেই আছে ইটালিয়ান আর ড্যানিশ কনস্যুলেট। ইটালিয়ান কনস্যুলেটে ফোন বাজতেই এক ভদ্রলোক ফোন তুললেন। তিনি জানালেন, এইখানে স্প্যানিশ কনস্যুলেট নেই। তাকে অবস্থা খুলে বললাম। তিনি আমাকে বললেন তার কিছুই করার নেই। তবে তিনি আমাকে স্প্যানিশ এমব্যাসির একটা নম্বর দিলেন। ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে।

ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে ঝিম মেরে বসে রইলাম। ওস্তাদ খোঁজ নিতে এসে দেখলেন আমি মনমরা হয়ে বসে আছি। জিজ্ঞেস করলেন, "“কি ব্যাপার? মাই সান, তোমাকে এইরকম লাগছে কেন?”" আমি ঘটনা বললাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “"নো ওরিস বয়, এইটাই জীবন, এইভাবেই তোমাকে চলতে হবে। তবে তুমি যে চেষ্টা করে যাচ্ছ আমি তাতে খুবই খুশি হয়েছি। তবে এই পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দিও না। তুমি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে। আমি যদি কোনভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবে”"। আর থাকতে পারলাম না, বুক ফেটে কান্না আসল। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। পরের দিন আবার চেষ্টা করলাম স্প্যানিশ এমব্যাসিতে ফোন করতে। এইবার প্রথম রিঙয়েই এক খালা ফোন ধরলেন এবং জানালেন যে, ওয়েবসাইটে যা লেখা আছে সেই নিয়মে এখন আর চলে না। তারা ওয়েবসাইট আপডেট করছে। আমি তাকে আমার অবস্থা বললাম, আর জানালাম যে চোদ্দ দিনের মাথায় আমার কনফারেন্স, এই অবস্থায় সময়মত ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। তিনি বললেন, "অ্যাপ্লিকেশন কর, আমরা দেখছি কি করা যায়"। আমিও সাথে সাথে সব কিছু পাঠিয়ে দিলাম স্প্যানিশ এমব্যাসি, টরোন্টোতে। আর মাত্র চোদ্দ দিন। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে চব্বিশ শ ডলার, যার কিছুই আর ফেরত পাওয়া যাবে না। আপাতত আমার কিছু করার নেই আল্লাহু আল্লাহু করা ছাড়া।

চারদিন পর অ্যালেক্স আমাকে ল্যাবে একা ফেলে চলে গেল। বস চলে গেলেন তার মেয়েকে দেখতে পাশের শহরে। ল্যাবে আমি একা। কিছু জমা কাজ ছিল, সেগুলি শেষ করলাম। পোস্টার বানাবো কিনা তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সারাদিন কাজের নামে কিছুই করি না, ব্লগ পড়ি, ঘুরে ঘুরে এরে ওরে জ্বালাই, একটা খরগোশ আছে ল্যাবে, ওইটারে দেখি। কিছুই ভাল লাগে না অবস্থা। আরও তিন-চারদিন পর বস ল্যাবে এসে জানালেন উনি চলে যাচ্ছেন সুইজারল্যান্ডে, আমি যেহেতু তাকে এখনও পোস্টার দেখাইনি, তাই তিনি আর আমার পোস্টার দেখবেন না। তবে আমার উপর তার ভরসা আছে। তাকে বিদায় দিতে এলিভেটরের সামনে গেলাম। আমার কাঁধে হাত রেখে তিনি বললেন, "“দেখ মাই বয়, আমি জানি তুমি কেন পোস্টার বানাওনি, তোমার জায়গায় আমি হলে আমিও তাই করতাম। সুতরাং, এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমি আশা করি তোমার ভিসা চলে আসবে, তোমার সাথে আমার স্পেনে দেখা হবে। কিন্তু যদি না হয়, তাহলে তুমি আমাকে কথা দাও যে তুমি মন খারাপ করবে না। এইটা একটা কনফারেন্স মাত্র। এর বেশি কিছু না। জীবনে অনেক কনফারেন্স পাবে, যখন তুমি আর যেতেও চাইবে না। তাই একটা চলে গেলে তেমন কিছুই হবে না। মন খারাপ করার কিছু নেই। যদি যেতে না পার, তাহলে অবশ্যই আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি ছুটি নিবে এবং কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসবে। আর তোমার টাকা যা খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত, আমি ফিরে এসে সব দিয়ে দেব। আমাদেরকে গবেষণা করার জন্য টাকা দেয়া হয়, আর কনফারেন্স গবেষণারই একটা ছোট্ট অংশ মাত্র। কিন্তু আমি প্রার্থনা করি, এর কিছুই যেন করা না লাগে, তোমার সাথে যেন আমার স্পেনে দেখা হয়"।“

বস চলে গেলেন। এই প্রথম আমি ল্যাবে একা। এর মাঝে আবার পাশের দুই ল্যাবও নতুন ভবনে চলে গেছে। পুরো ৬তলায় আমি একা। মাঝে মাঝে ভালোই লাগত, আবার মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগত। তখন বাইরে চলে যেতাম, নাহয় এর ওর ল্যাবে ঘুরে বেড়াতাম। এই করতে করতে কাটালাম আরও ছয় দিন। বাকি আছে চার দিন। ভাবলাম এইবার এমব্যাসিতে একটা ফোন করা যাক, তাদের খোঁজ-খবর নেই। আবার সেই খালাম্মা ফোন ধরলেন, এবং জানালেন যে আমার পাসপোর্ট কালের কোন এক চক্রে ঘুরতে ঘুরতে তার হাতে এসেছিল, কিন্তু এখন সেটা কোথায় আছে তা তার জানা নেই। তবে আমি যদি আগামীকাল আবার ফোন করি, তাহলে তিনি হয়ত একটা খোঁজ দি সার্চ করে দেখবেন। আমি বললাম, তথাস্তু। পরদিন আবার ফোন করলাম। খালাম্মা এইবার জানালেন যে, গতকাল আমার ভিসা ইস্যু হয়েছে। আজকে পোস্ট করা হবে এবং আমি যেহেতু সাথে এক্সপ্রেস-পোস্টের রিটার্ন খাম দিয়েছি, সেহেতু আগামী কাল অথবা পরশুদিন পেয়ে যাব। মনে মনে প্রার্থনা করছি, যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে, কারণ তখনও কানাডা পোস্ট তাদের বকেয়া কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই সাম্প্রতিক গুলি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরীতে যাচ্ছে।

আর তো পোস্টারের কাজ ফেলে রাখা যায় না। আবার কিছু কেনাকাটাও করতে হবে। ভাবলাম দিনে বাজার করি, রাতে ফাইট দিয়ে পোস্টারের কাজ সেরে ফেলব। চলে গেলাম বাজারে। টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনলাম। যদি ইউরোপের অন্য কোথাও যাই, সেই চিন্তা করে কিছু গিফট কিনলাম। দিন চলে গেল। রাতে পোস্টারের কাজ করতে বসে পরপর দুইটা পূর্ণদৈর্ঘ্য ইংরেজি ছায়াছবি দেখে ঘুমাতে গেলাম। হাতে আছে দুইদিন, কাজ বাকি আছে টুকিটাকি কেনাকাটা, আর পোস্টার বানানো এবং প্রিন্ট করা। পোস্টার প্রিন্ট করাও একটা বিশাল হুজ্জতের কাজ। যদি ভার্সিটির প্লটার থেকে প্রিন্ট করতে চাই, তাহলে কমসে কম একদিন আগে সেইটা আপ্লোডাইতে হবে। অন্যথায় বাইরে থেকেও প্রিন্ট করা যায়, যারা কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা সময় নিবে। আমাদের দেশেই অনেক সুন্দর ব্যবস্থা ছিল। নীলক্ষেতে গেলেই হত, ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টায় কাজ শেষ। এইখানে হুদাই নকশা। যাই হোক, আধা ঘণ্টা সময় আর একটা এক্সট্রা লার্জ দাবল দাবল (টিম হর্টন্সের চৈনিক সুন্দরীরা এইই বলে) কফি শেষ করে বুঝলাম, আমার আগে পোস্টার বানানো উচিৎ। পোস্টার বানাতে বসব এমন সময় আসলো কেভিন (আমাদের ল্যাব থেকে পিএইচডি করেছে, এখন এইখানেই একটা ভার্সিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, এর কথা পরে আসবে)। আমার সাথে সেটা তার দ্বিতীয় দেখা, হাই-হ্যালো করে জানাল সেও সস্ত্রীক কনফারেন্সে যাচ্ছে এবং আমার কাছাকাছি সময়েই তার ফ্লাইট। কেভিনের কিছু কাজ ছিল ল্যাবে, সেগুলি সেরে সে বিদায় নিলো। আমি একটানা ফাইট দিয়ে পোস্টার বানালাম। বাইরে তাকিয়ে দেখি সূর্য ডুবুডুবু। এখন আর ভার্সিটিতে প্রিন্ট করার সময় নেই, বাইরে থেকে করাতে হবে। পোস্টার আপলোড করে বাসায় ফিরার প্রস্তুতি নিলাম। এখনো জানি না ভিসা পাবো কিনা, মাঝে সময় আছে একদিন।

বাসায় ফিরে দেখলাম ভিসা এসেছে। কিন্তু আমি যেদিনের টিকিট করেছি, ভিসা দিয়েছে তার পরের দিন থেকে। চান্দি এমনিতেই গরম, এর মধ্যে এই কাহিনী দেখে মেজাজটা আবার খিচরে গেল। পরে হিসেব করে দেখলাম, আমি যখন কানাডা থেকে প্লেনে উঠবো, তখনও আমার ভিসা একটিভ হবে না, কিন্তু যখন আমি স্পেনে নামব, তখন থেকে ভিসা শুরু। তার মানে থিওরিটিক্যালি কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। মাথা ঠাণ্ডা হল। যো বোলে সো নিহাল......দিলাম ঘুম। ঘুম থেকে উঠে মনে হল, আরে আমি তো ইউরো কিনি নাই, মাথা আবার গরম হল। দৌড়ে ব্যাংকে গেলাম। ওরা জানাল, আমেরিকান ডলার সাথে সাথেই পাওয়া যায়, কিন্তু ইউরো করতে হলে ওদেরকে ৫দিন সময় দিতে হয়। আমি তো পুরা তাব্দা। এখন উপায়? পরিচিত এক ভাইয়া আর ভাবি অন্য একটা ব্যাংকে চাকরি করেন। ভাইকে ফোন দিলাম। উনি ফোন ধরেন না। ভাবিকে ফোন দিলাম, উনি জানালেন উনি ছুটিতে আছেন। সমস্যা শুনে তিনি বললেন, আমার ব্যাংকেরই অন্য শাখায় খোঁজ নিতে। থাকলেও থাকতে পারে। কাউন্টারে দাঁড়ানো সুন্দরীর (সম্পর্কে আমার ডার্লিং হয়) সামনে গিয়ে আমার ভুবনবিখ্যাত দুনিয়া কালো করা হাসি দিয়ে বললাম সে কথা। সে আমার হাসি দেখে ভয় পেয়েই হোক, অথবা দায়িত্বের জন্যই হোক, নিকটতম শাখায় ফোন করল। সেখান থেকে জানাল তাদের কাছে ইউরো আছে, আমি গিয়ে সংগ্রহ করতে পারব। ভেরি গুড, থেঙ্কিউ, আই অ্যাপ্রিশিয়েট আরও যা যা মুখে আসল সব বলে রওনা দিলাম ইউরো নিতে। কাউন্টারের ওইপাশে থাকাতে আমার ডারলিংরে আর কিছু করলাম না, নাইলে হয়ত পেয়ারছে একটা কামড় দিয়ে দিতাম (আমি আবার চুমা-চাট্টি’র চেয়ে কামড়া-কামড়ি বেশি পছন্দ করি)।

ইউরো নিলাম, ওই পথেই পোস্টারের দোকান, সেখান থেকে পোস্টার নিলাম। এর মধ্যে আবার আমাদের এক ইয়ারমেইটের বাবু হয়েছে, আন্টি এসেছেন এইখানে। চলে যাবেন কয়েকদিনের মধ্যে। তাদের সাথেও দেখা করা দরকার। বাবুর জন্য হাতের কাছের একটা দোকান থেকে জোর করে একটা জিনিস পছন্দ করলাম। সব শেষ করে মনে পড়ল আমার আরও কিছু কেনাকাটা আছে, ক্রেডিট কার্ডে ফোন করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্স্যাকশন খুলতে হবে। মেলা কাজ। আবার দে দৌড়। কুত্তার মত দৌড়িয়ে সব কাজ শেষ করে গেলাম ল্যাবে। পোস্টারের জন্য খাপ, আর কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রিন্ট করে বাসায় যখন ফিরি তখন রাত ১২টা। আমি তখনও জানি না, প্রিন্ট করা কাগজগুলি আমি প্রিন্টার থেকে নিতে ভুলে গেছি, যা আমার মনে পড়বে স্পেনে নামার পর।

এখন বাকি ব্যাগ গোছানো আর স্প্যানিশ শেখা। বসলাম গুগুল মামুর ক্লাসে। দুই চারটা শব্দ বের করে বুঝলাম যে এই জিনিশ শিক্ষা করা আমার কম্ম নহে। তারচেয়ে বহুলব্যবহৃত চোথা-বাজিই উত্তম হবে। চটজলদি কিছু দরকারি শব্দ এবং বাক্য টুকলিফাই করে নিলাম। সবার আগে নিলাম "“আমি স্প্যানিশ বলতে পারি না"”, "“আমি ইংরেজি বলতে পারি”" এই জাতীয় কিছু জীবন রক্ষাকারী বাক্য। ভাষা শিক্ষার ক্লাস শেষ। ঘড়িতে বাজে রাত দুইটা। সকাল দশটায় ফ্লাইট। ঘর থেকে বের হতে হবে ৮ টায়। হাতে মেলা সময়। তাই আস্তে ধীরে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম। এক পর্যায়ে দেখা গেল আমার অবস্থা মিঃ বিনের মত। ছোট ব্যাগ উপচে পড়ছে। কোই বাত নেহি। নিলাম মাঝারি সাইজের একটা, আমার বড়টা আবার আরেকজনকে ধার দিয়েছি, ব্যাগ আমার বাংলাদেশে গিয়েছে। এইবার আমার সবকিছু এই ব্যাগে ঢুকে গেল, রইল বাকি ট্রাইপড। এই জিনিস ছাড়া তো আমি যাব না। ট্রাইপড ঢুকাতে গিয়ে দেখি ট্রাইপড সবচেয়ে ছোট ভাঁজেও ব্যাগের চেয়ে বড়। এ কি মুসিবত। এত রাতে ব্যাগ কোথায় পাই? ধারে কাছে যার কাছ থেকে ব্যাগ ধার করতে পারি সেও ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। দিলাম তারে ফোন। পোলা বয়সে জুনিয়র, তাই মুখে গালিগালাজ করে নাই, নাইলে খবর ছিল। যাই হোক, তার কাছ থেকে বিশাল এক ব্যাগ নিয়ে আবার সব মাঝারি ব্যাগ থেকে বড় ব্যাগে উঠানো হল। এইবার সব রেডি। কিন্তু রুমের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা নেই যেখানে আমি দাঁড়াতে পারি (এর জন্য পরে ভুগতে হয়েছে)। ততক্ষণে বাজে সাতটা। গোসল দিলাম। টিম হর্টন্স থেকে একটা কফি আর এগ স্যান্ডউইচ নিয়ে খাওয়া শেষ করতে করতে রাইড চলে এলো। এয়ারপোর্টে পৌঁছে চেক ইন সহ আরও কাজ শেষ করে উঠে গেলাম প্লেনে বিনা ঝামেলায়। সিটে বসতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ, চোয়াল ঝুলে মাটিতে। এ আমি কি দেখছি?? এও কি সম্ভব??

যাই চা খেয়ে আসি। এত বড় লেখা পড়ে আপনিও নিশ্চয়ই ক্লান্ত।

ওই বুলেট, সবাইরে কাঁচা পাত্তি দিয়া চা দে।

গৃহবাসী বাঊল

grrihobasibaul@gmail.com

আগের পর্ব পড়তে চাইলে এইখানে ইন্দুর দিয়া যাইত্তা ধরেন


মন্তব্য

ব্রুনো এর ছবি

এতো কষ্ট না করে চোখ বন্ধ করে হাঁটা দিতেন। আটলান্তিক সাঁতরানো কোন ব্যাপার না, বিশ্বাস না হলে মু.ই. রে জিগান চোখ টিপি
লেখা উমদা হইছে চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তো পারতাম, কিন্তু ফিরা আসলে আপ্নেরা যে বুদ্ধমুর্তির লগে ছবি চাইতেন ওইটা দিতাম কইথিকা? চিন্তিত

কষ্ট করে পড়ছেন এবং মন্তব্য করছেন। আমি কৃতজ্ঞ থাকলাম। অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বন্দনা এর ছবি

বাব্বাহ আপনি তো ব্যাপক ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছেন দেখা যাচ্ছে। পরের পর্ব আসুক, লেখা ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝামেলাই তো জীবনরে ভাই। তার উপর লোকটা যখন আমি, তখন মনে করেন যে, মাখনের মধ্যেও কাঁটা থাকে।

পরের পর্ব আসবে। পড়ার, মন্তব্য করার এবং প্রশংসা করার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ঝামেলার মাঝে ছিলেন দেখি। মন খারাপ আহারে।
পরের পর্ব জলদি ছাইড়েন মিয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ ভাই, আছিলাম কিঞ্ছিত ঝামেলার মাঝে। কি আর করা? ঝামেলাই জীবন।
ছাড়ুম, একটু দম লইয়া লই।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

যন্ত্রনাও আপনার বর্ণনার গুনে মধুর লাগছে! দেঁতো হাসি হাসলাম অনেক....

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্য দেখে লেখার বেদনাও মধুর হয়ে গেল। দেঁতো হাসি
অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
গৃহবাসী বাঊল

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

আপনার হাতে হাস্যরসের বিস্ফোরণ ঘটার আভাস পাওয়া যাচ্ছে! আলসেমি না করে মাঝে মাঝে পাঠক কে হাসতে সুযোগ দেবেন... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

Smiley throwing bomb

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

ধুর মিয়াঁ, ঘামায়ে ফ্যালাইলেন! চলুক

সাবাস স্পিরিট!

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি ঘামাইছেন? কেমনে বুঝুম? বুদ্ধমুর্তির লগে খাড়াইন্না ঘর্মাক্ত ফটুক কই? চোখ টিপি
অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
গৃহবাসী বাঊল

ফাহিম হাসান এর ছবি

এই পর্বে আপনার পেইনের গল্প শুনে গড়াগড়ি দিয়া হাসি
সামনে ইউএস ভিসা পাওয়া আরো কঠিন হবে মনে হচ্ছে।

যাই হোক, লেখা চলুক। এই পর্বে ছবি দিলেন না - ঠিকাছে। পরের পর্ব ছবি ছাড়া দিলে ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার পেইন কিন্তু জেনেরালাইজ করা যাবে না। আমি বেশিরভাগ পেইনই খাই আমার কর্মদোষে।
ইউএস যাইয়া কি করবা? চিন্তিত

এই পর্বে দেওয়ার মত ছবি ছিল না। পরের পর্বে দেখি। হাতের সামনে পাইলে ছবি দিতেও পারি। পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সবজান্তা এর ছবি

হা হা হা... চরম লাগতেছে এই সিরিজটা। আপনার লেখার হাত চমত্কার ! লিখতে থাকুন, পরের এপিসোডের অপেক্ষায় থাকলাম !

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সবজান্তা। দেঁতো হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

সত্য সত্যই দেহি কেরসির গফ শুরু করলি। যাউজ্ঞা লেখা মজারু হইছে। গুরু গুরু


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

পেট্রলের যেই দাম, কেরসির গফ না কইয়া কোন উপায় আছে?

খাওয়াইবেন কবে কন? নাইলে কিন্তু লেখা বন কইরা দিমু। ইয়ে, মানে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনার তৎকালীন অস্থিরতাটা কিছুটা হলেও হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হইছি। আপনে তো তাও হাতে বেশ কিছুদিন সময় পাইছেন, আমাকে একবার সবশুদ্ধা মোটে সোয়া একদিনে ভিসা করতে হইছে। কিন্তু একেবারে বাংলা সিনেমার স্টাইলে এমন জায়গায় ব্রেক করলেন রে ভাই! আমার ফেভারিট নাইকা অঞ্জু ঘোষরে দেখছিলেন নাকি, তাও আবার আপনের পাশের সিটে! চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অবস্থা তো মনে হয় লেজে গোবরে হইয়া গেছিল। এইগুলি আসলে জীবনের জন্য দরকার আছে। বৈচিত্র্য আনে। পরে স্মৃতি বেগমরে নিয়া সময় কাটান যায়। চাল্লু

আপ্নের নাইকা উঞ্জু ঘুশরে আমি দেখুম? না বস, এখনও এতডা খারাপ হইতারিনাই। আপ্নের জিনিস নিয়া টানাটানি কইরা পরে দেখা যাইব আমার দুইন্যা তো গেছেই, আখেরাত ও গেছে। আপনেই আপ্নের উঞ্জু ঘুশের কোলে উইঠা বইসা থাকেন।
Winking guy

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার সমস্যা যেভাবে একটা থেকে আরেকটায় ধাওয়া করে, পড়ে 'স্প্যাগেত্তি প্রোগ্রামিং'-এর মথা মনে পড়ে গেল খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্ঞানী লোকজন নিয়া এই সমস্যা। খালি জ্ঞানের কথা কয়। মন্তব্য বুঝতেও পড়ালেখা করা লাগে। Confused

মন্তব্য করার জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । কিছু ফিরিজে রাইখা দিয়েন। মার্কিন দেশে নিয়ে যাইয়েন। চোখ টিপি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক পরের পর্বের অপেক্ষায়

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। হাসি

আশা করি পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেব।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

জটিল হয়েছে প্রাণবন্ধু। তুমি তো কানাডা থেকে কানাডার ভিসা পেতে ঝামেলায় পড়েছ, আমি গত মাসে মার্কিনদেশ থেকে কানাডার ভিসা পেতে প্রায় একই রকম ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছি। ফ্লাইটের চারদিন আগে ভিসা পেয়েছিলাম। কানাডার কনসুলেটের সমস্যা হল এরা ফোন ধরেনা, কোন রকম তথ্যও দেয়না। বলে, সব ওয়েবসাইটে আছে। ওয়েব সাইট ধরে ওয়াশিংটন ডিসি তে গিয়ে শুনি ওরা ওই কনসুলেট থেকে কেবল ডিপ্লোমেটিক ভিসা ইস্যু করছে। পরে নিউইয়র্কে কাগজ পত্র আর পাসপোর্ট পাঠিয়ে ভিসা নিতে হয়। তখন ফ্লাইটের বাকি আর দুই সপ্তাহ। আর ওয়েবে লেখা ভিসা প্রসেসিংয়ে ৪ সপ্তাহ লাগতে পারে, তাই যেন ৪ সপ্তাহ সময় হাতে রেখে তবেই এ্যাপ্লাই করা হয়। ওদের ওয়েবসাইটে ওয়াশিংটন ডিসি সংক্রান্ত তথ্য বিভ্রাট থাকায় উইশফুল থিংকিং করলাম- ভিসা প্রসেসিংয়ের সময়েও তথ্য বিভ্রাট থাকতে পারে; ভিসা আগেও পেতে পারি। যাই হোক ভিসা পেয়ে ঘুরেও এসেছি, কিন্তু মহাদেশের অন্যপ্রান্তে থাকায় তোমার সাথে এবারো দেখা হলনা। লেখা চালিয়ে যাও। কোন লেখা যদি পাঠককে তার অজান্তেই হাসাতে বা কাঁদাতে পারে সেই লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করাটা বাহুল্য হয়ে দাঁড়ায়। লেখাটা পড়তে পড়তে খিক খিক করছিলাম একটু পর পরই দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টার কি জিনিস ভাই?
সুদীপ

Sabeka এর ছবি

আপনার সব লেখা আজ পড়লাম । ভাই, আপনি বেশী বেশী লেখা দিয়েন, পলীজ চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।