লজ্জারাও ধুয়ে যায় বৃষ্টির জলে---
…
আমার বেলা গড়ান ক্ষীণস্বর যেন
কিছুকিছু কাহিনীর গায়েপায়ে মাখা;
মেঘলা আকাশ, ভিজেডানা পাখি রোজ...
রোজ দিয়ে যেত নাড়া...
বছর কুড়ি আগে ঘুম ভেঙ্গে স্বপ্ন;
খেলাঘরে হাসিমুখে কেটেছে দিন,
ভেলা নিয়ে চলে যেত কোন বেলাতে...
জলকেলি, শরীরে ঘাসের প্রলেপ;
বিকেলের নেমে আসা শান্ত আঁধার-
স্নেহময় কবিতায় সব যেন ছিল;
পিছু ফিরে কেন যেন চোখদুটো ভিজে,
নীলরঙা ফটোগ্রাফ আজও ছুঁতে চায়,
বাদ সাধে সময়-বাধা;
বনফুলের প্রেমিক ছিলাম। নীল নাকফুলকে রেখে
কখনো সখনো গিয়েছি
হলুদ লাল কমলা ফুলের কাছে,
আবার ফিরে এসেছি।
তুমি আমার প্রাণ, প্রাণবায়ু।
তুমি আমার প্রেম, স্বপ্ন, অমর একুশে। তুমি স্বাধীনতা।
তুমি হাজার বছরের পুরাতন চর্যার ঝাণ্ডা। তুমি অগ্নিবীণা
সোনার তরী, তুমি আমার রূপসী বাংলা।
একটি সরল মুখ
আর একটি জটিল হৃদয়ের মধ্যে
আমি খুঁজেছি জীবন,
পৃথিবীর
সবুজসূত্রগুলো
খুলে দেয়
নিসর্গের দরজা
ক্ষীণ আভাস
বোঝা যায় পথের
বহুকাল পর
বনের পথে ফেলেছি পা
বন গহনা
দিনের জোছনায়
সেজেছে সবুজ পাতা
হাটছি একা
হাটছি একা …
ওরা কী আমার
ভুলে গেছে নাম
বাড়ির ঠিকানা ?
….
গত সহস্রাব্দের কথা।
আমি আমি ছিলাম। তুমি ছিলে তুমি। আর সে ছিল সে।
এরপর সে এলো।
আমি আমি রইলাম না আর। তুমিও রইলে না তুমি।
এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়।
যখন চলে গেল সে,
আমি আবার আমি হয়ে গেলাম। সে হয়ে গেল সে।
কিন্তু তুমি আর তুমি হতে পারলে না।
আমরা যারা বেয়ারিং চাকা চালিয়ে
পাহাড়ের নৈঃশব্দ্য গ্রামে ছুটে যেতাম,
চুড়া থেকে আঁধার নিচে নামার আগেই
পাহাড়দের চুপচাপ ঘুম পাড়িয়ে ফিরতাম
ভেজা-ভেজা রোমাঞ্চ আর হাওয়াই মিঠাই নিয়ে,
অতঃপর যুগযুগ ধরে নীরব কোলাহলের সাথে
মৃত্তিকার পাঁজর উপচে পড়ত সেই রোমাঞ্চ,
জিহ্বা গাঢ় গোলাপি না হওয়ার আগ পর্যন্ত
চলত হাওয়াই মিঠাই উৎসব।
সে-ই আমরাই নিমন্ত্রিত ছিলাম না
মেঘরাজদের রাজকীয় সভায়।
[যাঁরা অকবিতার প্রশ্রয় দেন তাঁদের জন্য।]
…
হাতে আজো রক্ত লেগে আছে
এই হাতে, আঙুলের সমষ্টিতে
আমি তাকে শ্বাস রোধ করে মেরেছি যৌবনে
বেহালা বেচেছি - বোনের কলেজে ভর্তি
বউয়ের বালা বেচেছি - বাসা ভাড়া তিন মাস বাকি
থিয়েটার স্কুলে আর যাইনি - চাকরিটাই দরকারি ছিলো বেশি
এক মধ্যরাতে
চারফর্মার লিটল ম্যাগাজিনটাকেও
গলাটিপে হত্যা করলাম - ‘জলছবি’ তার নাম ছিলো
এসব মৃত্যুর মিছিলের ছায়ায় পেয়েছি পূনর্জন্ম এক
এ জীবন আসন পেতেছে সূর্যশিখরে
পাজামা ভাসিয়ে ঝোল
মনে পড়ে পাজামা ভাসিয়ে ঝোল, ভাঁজ ধ’রে ক্রমাগত
গড়ানো শিশিরের মতো চলে গেছে, মুমিন সাবধান…
আঃ কি স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর নিংড়ানো ঝোলে মেখে
যেতে-যেতে ফিরে চাই, লোল ঝোল ফেলে ফেলে
কেন তুমি আলস্যে এলে না কাছে? নিছক সুদূর
হয়ে থাকলে বাঘা তেঁতুল ; কিন্তু কেন? কেন, তা জানো না?
লালা ঝরানোর জন্য? হবেও বা। স্বাধীনতাপ্রিয়
একটা শহর জেগে উঠে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বলেছিল বিপ্লব চাই অথবা মৃত্যু। তখন আমি স্কুলবয়, ফুলের অসুস্হতা তেমন বুঝতাম না। বাগানভরা প্রজাপতি থোকায় থোকায় ঝুলে থাকত। ন্যাংটা শিশুরা অন্ধ পাখিদের খসে পড়া পালক কানে ঝুলিয়ে বিষণ্ণ বৃষ্টিতে শাওয়ার নিত। শিশুদের দুই হাত দুইদিকে প্রসারন করে মাপা হত মুক্তির পরিধি।