বিষণ্ণ কাজরীর মত কাঁদে
জলগন্ধী হাওয়া,
মধুকূপীর ছায়ামাখা সমাধির শূন্য বুকে
শিশিরের মত ঝরে মহুয়ার ফুল।
যে মৃতের মুখ ছিল আঁকা
কোনো এক বিরহীর নয়নচকোরে,
জীবন ফোয়ারায় ফিকে হয়ে যায়
অশ্মীভূত সেই ছবি।
তবু অনন্ত রাত্রি ঘুমোয়, নির্লিপ্ত
বিস্মৃত সেই প্রিয় মুখ।
ভালবেসে জেনো ওরাও দিয়েছে লাল,
ওরা দিয়েছিল আমাদের ভালবেসে,
গোলাপের চেয়েও অনেক তীব্র লাল,
ওরা দিয়েছিল বুলেটের মুখে হেসে।
গোলাপের রঙ কতটা রক্তে রাঙা?
কতটা জবায় অতটা রক্ত থাকে?
প্রেমিকার চোখে কত ভালবাসা জমা?
কত ভালবাসা ওরা জমা করে রাখে?
আজকেই নাকি চোদ্দ ফেব্রুয়ারী!
চারিদিকে শুধু ভালবাসা নিয়ে খেলা,
স্মৃতিরা আমায় বিব্রত করে রাখে,
খুঁজেছিলে পাদটীকা পেয়ে গেলে পদ্য,
জেনে গেলে ব্যাকরণ- ভুলে ভরা গদ্য,
রীতি সব নীতি মানে নিয়মে তা বন্দি,
আমরা নই বেঁচে থাকে আমাদের সন্ধি...
সমাসের ব্যস নেই তবু জুড়ে বাক্য,
বৃত্তের লাজ নেই তাই খোঁজে ঐক্য,
একতা কি জাতি-হীন মানবতা ভ্রষ্ট?
দাঁড়ি আর পাল্লায় পশু ঘ্রাণ স্পষ্ট...
নষ্ট সে নতজানু দুষ্ট যা প্রকারে,
মিথ্যেরা লুপ্ত তাই বাড়ে আকারে --
ইতিহাসে দায় নেই তবু খোঁজ যুক্তি?
পাহাড়ে উঠে আবার নেমে আসার ঝক্কি নেব না বলে
প্রতি বছর কিছু কিছু লোককে আমার তরফ থেকে পাহাড়ে পাঠিয়ে দিই
সমুদ্র অনেক দূরে বলে
কিছু বন্ধুকে বলি সমুদ্রটা দেখে আসতে
ভালবাসলে বুক ভেঙ্গে যাবে এই ভয়ে পছন্দের মেয়েটিকে বলেছি
আমার শত্রুটাকে ভালবাসতে
জীবন-যাপন কষ্টময় বলে আমি প্রায়ই
অন্যের যাপিত জীবনে নিঃশ্বাস নেই
নিজের কন্ঠ খুঁজে পাইনি বলে হরবোলা হয়ে থাকি
আমি আটক হতে চাই না--তাই পলাতক হয়ে আছি
পেয়েই বুঝেছি-
প্রাপ্তি আড়াল করে চরাচর রক্তে ভেসে যায়
ক্ষমার আড়ালে যেই লজ্জ্বার পরিণত ভয়
তার কোনো আচ্ছাদন নেই!
রাত্রির নৈঃশব্দে যে রকম
গর্ভিনী গাভীর নত চলন-
তাদের ঈষৎ চিনি
ঈষৎ জ্বলনে আমি ঘুমাতে পারিনা!
আমার তন্দ্রায় আমি শিমূল গাছের গুঢ কাঁটা
ছাড়াতে পারিনা।
গুল্মে র-লতার আর বাকলের রহস্য বুঝিনা!
পেয়েছি বলেই আমি বুঝে গেছি
সোনামোড়া কাঁথার কথিত রহস্য
জেনেছি আমার নয়
জেনে গেছি-
আকাশটাকে আরেকটু উঠতে বললাম উঠলো
নদীটাকে আরেকটু নামতে বললাম নামলো
নিখোঁজ আমাকে খুঁজে বের করে
আকাশের সব'কটা বিস্ফোরণ
বুক ভিজিয়ে নিভিয়ে দিলো জীবিত অসুখ -
চেয়েছিও তাই একসময়
এক প্রস্তাবিত নিঁখুত পরিকল্পনায়
মিথ্যে আগুন আর হাসপাতালের করিডোর।
.
..
...
[center]লাশকাটাঘরে পড়ে থাকে মূক লাশ,
মৃত্যুমিছিলে আসে কত পোড়া দেহ,
বুকে জমে থাকে অতল দীর্ঘশ্বাস,
কাঁধে নিয়ে পিতা মাটি চাপা দেয় স্নেহ।
ঘাড়ে চেপে বসে সিন্দাবাদের বুড়ো,
পুরনো শকুন আজো মেলে যায় ডানা,
সাতপুরুষের বিশ্বাস হয় গুড়ো,
রাতের মুখোশে শয়তান দেয় হানা।
আগামীদিনের শিরোনাম আজ ভয়,
বুকে চড়ে বসে, আর চেপে ধরে টুঁটি।
এই লাশস্রোতে কবিতা আমার নয়,
অনেকদিন ধরে সানগ্লাসে লুকাই ভৌতিক দুপুর-
ভয়ে নয় তবুও লুকাই
বুক পকেটে মোচড় খেয়ে রাতবিরাতে চিত্কার করে ইতিহাসের বৈদ্যুতিক তর্জনী
ধাক্কা খায়, রক্ত-কবিতা-কলম- জাতীয় ফুলে সাম্প্রদায়িকতা নেই-
থাকতে পারেনা
হাতের রেখায় যখন তখন চোখ রাঙিয়ে উঠে বুড়িগঙ্গার শুকনো দৃষ্টি, মৌলবাদের ট্রাফিক
চোখ মুছতে মুছতে লুকাই ব-আকৃতির বিপুল হাহাকার
পত্রিকার পাতা খুলে একটা পাখি একটি অক্ষর কোথাও উড়ে না
কেমন আছো, প্রিয়তা? সেলফোন, স্কাইপ, ভাইবার... কতকিছু আছে
তবু কথা নেই বহুদিন, নেই আসা কাছে।
দেশের থেকে হাজারটা ক্রোশ দূরে
ঘর বেঁধেছি সুখের আশায়
বিজন অচীনপূরে।
নিত্য শুধু হাওয়ায় পাতি কান,
পূবের হাওয়া আনলো বুঝি আমার মাটির গান।
গান এ তো নয়! কোথায় গানের সুর?
লক্ষ প্রাণের কান্না আসে
পেরিয়ে সমুদ্দুর!
একাত্তরের শকুনরা ফের খুবলে খাচ্ছে দেশ
মারছে মানুষ, বাড়ছে শুধু কষ্ট অনিঃশেষ।
হায় গো আমার মাতৃভূমি
তোমায় দূরে ফেলে
অসহায় ক্ষোভে কাঁদছে দেখ
তোমার মাটির ছেলে।