নিরল ভোরের কাছে রাত যেতে বাকি --
প্রতিটি রাতের শেষে সন্ধ্যারা জানে নাকি-
প্রহরের সব গান শিশির হৃদয়!
দূরে নই দূরাগত- তবু মনে হয়,
এ-শুধু দ্বন্দ্বের নামে ধুপছায়া দামী --
দোয়াতের চেনা খামে নিখুঁত প্রণামী;
ফেরানো না-ফেরা মুখে যতটা বিষাদ --
তার বেশি নীরবতা -- দূরত্বের সাধ!
একা নয় কেউ যারা তারাও একাকী!
দূরে -- তারপর একা হলে একা থাকি;
মানুষে নৈকট্য মোহ সদালাপী তাই --
আমি হারানের সেই হারানো হাড়ের বাঁশি
যাকে হারিয়েও তুমি ফিরে পেয়েছিলে
পরিত্যাক্ত ঝোপের পাশে - সোনালি রোদ্দুরে
আমি সেই পলাশী-প্রান্তর, পাঠ্য বইয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়
ছেঁড়া পৃষ্ঠায় যার মুখ চিনেছিলে
মাঠের ধূলোয় যাকে তুমি হারিয়েও
ফিরে পেয়েছিলে ফের, স্কুলের টয়লেটে
আমি জানি - তুমি ধ্যানমগ্ন অন্যমনস্ক মাছরাঙা হলেও
আমার প্রতিটি বর্ণের তীর তোমার হৃদপিন্ডের
প্রতিটি ধ্বণিকেই বিদ্ধ করছে
তখন গভীর রাত -
মহাসড়কের সাদা দাগ টানা কালো অন্ধকার পথ;
কুয়াশা কুন্ডলী পাকায়ে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে রেখেছে সারা উত্তর-বঙ্গে;
গাড়ি আর চলছে না।
আমরা কিছুটা পথ যাই, কিছুটা দাঁড়াই, চা-পানি খাই, সিগারেট ফুঁকি
আমরা ভাবতে থাকি, প্রকৃতির এ কী খেলা!
এত শীত, কুয়াশার এ্ত প্রতিরোধ কখনো দেখিনি!
সিগারেটের টুকরো পায়ের তলায় পিষতে পিষতে ভাবি -
বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে এবারের থিম,
সময় কখনো এমন অস্থির হয়ে ওঠে
বাতাসের শীষ বাজে
শীষের শব্দেরা ঘুরপাক খায়
দরজা কপাটে বারান্দায়
আমাদের পোড়াঘরে
ছাইকয়লার অন্ধকারে
সময় কখনো এমন মন্থর হয়ে ওঠে
স্তব্ধ পাতালের গহীন নৈশব্দে
থমকে দাঁড়ানো পদধ্বনি
ফিরে ফিরে পেছনে তাকানো
আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুময় পথে
সকলের সাথে একা একা নিঃসঙ্গ যাত্রায়
মরুঝড় সময়ের আঙুল ধরে
হেঁটে যাই অসীমের অন্ধপথে!
আমি তখন রোজ সকালে কলেজ পড়াই
এমনি এক ঘুমভাঙা সকালে
আকাশের মন খারাপ দেখে আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো
খুব ইচ্ছে হল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শুয়ে থাকতে
মনিটরকে ফোনে জানিয়ে দিলাম, আজ আর ক্লাস হবে না
আজ তোমরা পলাশ নদীর তীরে ঘুরতে যাও
আমিও আসছি। ব্ষ্টিটা ধরে এলে আমিও চলে আসছি
-স্যার, পলাশ নদীটা কোথায়? ৬ নম্বরে যাব না ৩৬ নম্বরে?
আমি বললাম, ৩৬ নম্বরেই যা।
কলঘর থেকে শুনতে পাচ্ছি
কোথায় যেন বেজে চলেছে টেলিফোন
সন্ধ্যার নীরবতার ভেতর
শুধু জলের শব্দ তার সাথে পাল্লা দিয়ে যায়
কে আছে কার প্রতীক্ষায়
যখন ফোন বেজে যায় নিস্তব্দ ঘরে?
জলপতনের দিকে চেয়ে থেকে ভাবি
কে আছে কত দূরে এ প্রতীক্ষা্য,
কতদূর থেকে
চলে আসে জল এই নির্জন স্নানঘরে?
ক্রন্দন থেমে গেলে ফোনের
মোহাম্মদপুরের কানাগলিতে আমাদের রোজকার বসবাস
আমরা লাইন ধরে ইশকুল যাই, কখনো কলেজ
সকাল-বিকাল নিয়ম করে ব্ষ্টিতে ভিজি
অবসরে মেয়েদের উত্যক্ত করতে খারাপ লাগে না
আরো কিছুটা অবসর পেলে মেয়েদের গার্জিয়ানদের
শুক্কুরবার শুক্কুরবার আমরা দল বেঁধে পরীক্ষা দিতে যাই
হল থেকে বেরিয়ে ধরি পলাশীর রুট
সেখান চিড়া খাই, মুড়ি খাই
খাই কলা এবং ছোলা
পকেট গরম থাকলে চিকেন, হালিম এবং বেনসনের ঝোলা
আমাদের সবার মনে গুচ্ছ গুচ্ছ শুধু কালের ছায়া,
কখনো আর দেখা হবে না জেনেও
মনে পড়ে তার চিকন গ্রীবা, সব স্থুলতা মুছে গিয়ে উদ্ভাসিত তাহাদের গান
যুগে যুগে অহেতুক বিবর্তনের ফলা তীক্ষ্মতর হয়েছে আমাদের দিকে চেয়ে
রাত দুটোর ক্লান্ত চোখে যারা আমারি মতন পোড়াচ্ছে ঘুমের ফসল
এতদিন পর তাই তাদের স্মৃতি ব্যথার প্যাঁচা হয়ে ঝুলে থাকে
স্তব্ধতাভরা একেক পুরুষের উদাস রাতে।
কেন যে গল্পের মানুষ বেঁচে থাকে
দূর থেকে দেখা সেই নারীঃ
প্রাচীন দ্রাবিড়ের অবাক বিস্ময় নিয়ে, অবিশুদ্ধ এক গঙ্গার ধারে, যেন কৃষ্ণা... এক দ্রৌপদি,
পুরুষের স্বপ্ন, কামনা, আর লোভ জড়িয়ে পথহারা সে, এক... পদ্মীনী মানবী!
চোখে তার কাঞ্ছঞ্জংঘায়-কুয়াশা... রহস্যময়, অচিন, অদেখা কবিতা,
মুখে তার হিমালয় থেকে ভেসে আসা শৈত্যপ্রবাহের...নিস্তব্ধ, করুন বিষন্নতা।
প্রতিক্ষায় সে থাকে... এক সাঁওতালি পুরুষের জন্য
পোস্টম্যানটিকে কেউ চিঠি লিখে নি কখনও,
কত কত মানুষের হাতে দিয়ে গেছে সে পরম আকাঙ্খিত হলুদ খাম, পোস্টকার্ড;
দূর মরুভূমির রোদের গল্প কিংবা সফেদ বরফের ছবি
অভিমান, স্নেহ, বিরহ, ভালবাসা - ভুল বানানে লেখা অল্প কথার চিঠি।
পোস্টম্যানের বাড়ির কোন ঠিকানা যেন নেই।
ফুল নিয়ে ছুটে আসে যে কাল মেয়েটি রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে
কতদিন লাল গোলাপ আর কদম কিনে নিয়ে গেছে প্রেমিকের দল