নব্য রাজাকারের সাদাকালো চোখে রঙিন দুনিয়া

সাইফ তাহসিন এর ছবি
লিখেছেন সাইফ তাহসিন (তারিখ: সোম, ০৫/১০/২০০৯ - ১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে দৌড়াই নিউজার্সির পানে, মাথায় ঘুরে নানা রকমের চিন্তা ভাবনা। আসলে বাইরে অনেক ঠাণ্ডা থাকায় কাঁচ নামাতে পারি না, অনেক ঠাণ্ডা লাগে, কাজেই ভেতরে থাকে প্রায় সুনসান নীরবতা। এই সময়টা তাই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করি। এখনো অবাক্‌ হই যে আমাদের দেশে এবং বিদেশে উড়ে নরপিশাচদের পতাকা, ঘুরে বেড়ায় তারা ভদ্র মানুষের মুখোশে, আর তারচেয়েও ভয়ংকর হল যে, এরা আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে আমাদের মাঝে। পাল্টে নিচ্ছে নিজেদের প্রকাশভঙ্গী, ভাবটা যেন, তারা আমাদেরই একজন। অথচ প্রথম থেকেই এরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে আমাদের ভাষা, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, এরা চায় আমরা পাকিদের গোলাম হব, আর যদি মাথা নত না করি, আঘাত হানে পঙ্গু করে দেবার জন্যে। জানি না কীভাবে এদের শেষ হবে, কবে এদের শেষ হবে কিংবা আদৌ এদের শেষ হবে কিনা। যখন একা একা এভাবে ভাবি, গা হাত পা অবশ হয়ে আসে, মনে হয়, যদি পেতাম বেটা গো-আ কে গাড়ির সামনে, ধুম করে চাপা দিয়ে চলে যেতাম।আমার আজকের লেখাটা নিতান্তই আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের কিছু অর্থহীন চিন্তাভাবনা। কোন সত্যতা নাই, কোন তথ্য প্রমাণ নাই, পুরোপুরি বানোয়াট। আসুন আমার সাথে কাল্পনিক এক রাজাকারের ভ্রান্ত ধারণা দেখার একটা চেষ্টা করি, হয়ত পারব না দিতে কিছুই, যদি কারো খারাপ লাগে, তার জন্যে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আমার হিসাবে রাজাকারেরা শুধু ২ দলের মানুষ চিনে, নিজের দল, আর বিপক্ষ দল, আর তাদের খোরাক হল ধর্ম নামের ভ্রান্ত ধারণা। ধর্মের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই, অথচ ধর্মের নামে এরা ছুরি চালায়। এরকমই একজন বক ধার্মিকের সাথে পরিচিত হই, ধরেন তার নাম বেলাল। গালে তার এক ছাগলা দাড়ি, চোখে সুরমা, গা থেকে আসে আতরের খোশবু। আসেন তার চিন্তা চোখ দিয়ে একটু দুনিয়াটা দেখি। আবারও বলে নেই, এটা নিতান্তই একটা কাল্পনিক চরিত্র। কারো সাথে কোন মিল পাওয়া গেলে তা একবারেই কাকতালীয়।

বেলাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের আজান শুনে, উঠে চারদিকে তাকায়, মনে পড়ে যায়, সে থাকে ২ কাফেরের সাথে রাজশাহী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের হলে, এত থাকতে কিনা তাকে থাকতে হল ধর্মের নামে বিধর্মী এই দুই মানুষের সাথে, আল্লাহ খোদার নাম নাই, সারাদিন খালি হৈহুল্লা, আমার তার পিছনে তাকে কিনা তারা গালাগালি করে। জীবনে দেখল না সে তাদেরকে একদিনও ঘুম থেকে উঠতে। ফজরের আজানে নাকি তাদের ঘুমের অবসুবিধা হয়। কতবড় কথা। পারলে সে আজকেই এদের রগ কেটে রেখে দিত। যাক, এদের দিয়ে কোন ভবিষ্যত নাই, প্রথম প্রথম সে এদেরকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল, সে জন্যে তাকে তারা কতভাবেই না লাঞ্ছনা গঞ্জনা করল, সহ্য হয় এসব?

সকালে উঠে সে প্রাত্যহিক কাজকর্ম সেরে তৈরি হয়, ক্লাস শুরু হবে ৭টায়, সেখানেও আসবে যতসব ধর্ম সম্বন্ধে উদাসীন লোকজন, এদের মাঝে তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, কীভাবে যে এমন হল, তার দেশ পাকিস্তান কীভাবে যে আলাদা হয়ে গেল, কোথাকার কোন নেতা এসে ডাক দিল, আর সবাই তার সাথে করে মেরে পিটিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে কিনা বানিয়ে দিল বাংলাদেশ, এটা কোন নাম হল? নেতা হবে তো নিজামী বা গোলাম আযমের মত নুরানী মানুষ, আহা কি অসাধারণ না তার ব্যক্তিত্ব, মানুষ জবাই করার সময় ও তার হাত কাঁপে না একটু। কত কাফের যে জবাই দিল আমাদের এই মহান নেতা। আর তার চেহারায় কি রোশনাই, দেখলেই যেন তুর পাহাড়ের জেল্লা দেখা যায়।

ক্লাস শেষে গজ্‌গজ্‌ করতে করতে বের হয়ে আসে বেলাল, বের হয় যেন দম ফিরে পায়, আগামী ২ ঘণ্টা কোন ক্লাস নেই, এই ফাঁকে নতুন ভর্তি হওয়া পুলাপাইন গুলাকে যদি একটু দীনের আলো দেখানো যায়। এই ভাবতে ভাবতে সে ক্যান্টিনে গিয়ে হাজির হয়, দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে গিয়ে হাজির হয় একটা জটলার মাঝে। গিয়ে সালাম দিয়ে কথা শুরু করে সে, বলে, আসেন ভাই, আপনাদের মাঝে কেউ যদি আগ্রহী হন, আমরা একটা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বই বের করতে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে কেউ কাজ করতে পারেন। আমরা পুরান প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করি, তারপর তা একসাথে ছাপাই, আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ, আসেন ভাইয়েরা, আমাদের মত ছাত্র যারা, তাদের পড়াশুনার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন, বিনিময়ে টাকাও পাবেন কিছু। এমন বড় কোন পরিমাণ না, তবে কয়েকদিনের চা নাস্তা তো হবে। আর মনে মনে হাসে, এসব কাজ টাজ সব ভাঁওতা, বেটা, খালি আয় মীটিং এ, মগজ ধোলাইয়ের জন্যে বিগ বস করিম ভাই তো আছেই, এক মাসের মধ্যে দীনের শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে যাবি। কিন্তু রকিব নামের একটা ছেলে ফট করে বলে ফেলে, যা বেলাল, তোর মত ফ্যানাটিক দলে কাজ করবার কোন আগ্রহ এখানে কারো, মিয়া দিনের বেলায় এক বেশ, আর মওকা পাইলেই তোর মাঝের ২ নম্বরী সত্বাটা বাইর হইয়া আসে।

মাথায় যেন আগুন ধরে যায় বেলালের, ব্যাটা কাফের বলে কি? প্রথম দিন থেকেই এই ব্যাটা তাকে নানাভাবে আজেবাজে কথা বলে সবার সামনে যার পর নাই নাজেহাল করে যাচ্ছে, নাহয় ব্যাটা পড়াশুনায় ভালো তাই বলে এভাবে আকথা কুকথা বলে তাকে অপমান করবে? করিম ভাইকে বলতে হবে, এই হারামাজাদাকে সাইজ না করলে আর চলছে না। আজকে রাতেই কথা বলবে। এরপরে সে গিয়ে হাজির হয় তার এক বন্ধুর সাথে, কাছে যেতেই সে সালাম দিয়ে কোলাকুলি করে, তারপর দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে দুজনে ২ চেয়ার নিয়ে বসে। তারপর শুরু হয়, আজকে কে কোথায় কি দেখেছে, একে অপরকে বলতে থাকে, মোটামুটি আধাঘণ্টা খবর বিনিময়ের পর কথা প্রসঙ্গে রাজনীতি চলে আসে, এখনো তারা ভুলতে পারে না, শেষ নির্বাচনে কি হল? এভাবে দেশের মানুষ তাদের অপমান করল, তার যদি ক্ষমতা থাকত, এসব লোকদের একপাশ থেকে ধরে জবাই করে মাংস হিসাবে চীন দেশে পাচার করে দিত। সে শুনেছে, চৈনিকরা নাকি খায়না এমন কিছু নাই। সেবার যমুনা ব্রিজ বানাতে এসে এলাকার সব কুকুর, সাপ, ব্যাঙ খেয়ে সাফ করে ফেলেছিল। তার এই মত প্রকাশ করতে তার বন্ধু তাকে ঠিক করে দেয়, আসলে ওরা চীনা ছিল না, কোরিয়ান ছিল। বেলাল বলে, যে দেশেরই হোক, সবই তো চাঙ্কু, এরা আবার মানুষ নাকি, কেমন পোকার মত, সাদা সাদা, চেপটা চেপটা।

যাক, তারপর তার বন্ধু খবর দেয়, আজকে রাতে কিন্তু করিম ভাইয়ের সাথে মীটিং আছে। তারা একে অপরকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় যে যার পথে। বেলালের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে, সে আবার হাঁটা ধরে, এ ক্লাসটা তার খুব পছন্দ, যিনি ক্লাস নেন, মহান ব্যক্তি, তিনি তাদের দলের সাথে যুক্ত, বহুদিন থেকেই, উড়া খবরে শুনেছে, ছাত্রজীবনে নাকি সে অনেক বড় কর্মী ছিল, এক ছাত্রকে সে নাকি ধীরে ধীরে গিরা ধরে ধরে আলাদা করেছে, কেউ তার টিকিটাও স্পর্শ করতে পারেনি। এখন অবশ্য তাকে দলের স্বার্থেই এসব করতে দেওয়া হয় না, তার একটা সামাজিক স্থান আছে, তার কাজ এখন আরো বড় বড় কাজ করা। বেলালের খুব ইচ্ছা তার মত কাজ করার। যাক, হয়ত সে সুযোগ আসবে কোন একদিন। আগে কি দিন ছিল, কথায় কথায় উনারা রগ কেটে ফেলতেন, এখন আর সে দিন নেই, সবাই নাকি সচেতন হয়ে গেছে, খুব নাকি ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে। এই নিয়ম আর বাধা তার ভালো লাগে না। এসব চিন্তা করতে গিয়ে চোখ চকচক করতে থাকে তার।

স্যারের ক্লাস শেষ হয়ে, আবারো বের হয়ে মনে মনে বলে, আহা কি সুন্দর করেই না কথা বলেন তিনি, কত সুন্দর করেই না বুঝান, কোন দিন যদি তার মত হতে পারেন। আবার ক্যান্টিনে ফিরে আসে সে, পত্রিকা তুলে নেয়। পত্রিকা পড়তে ইচ্ছা করে না আর। সারাদিন ২ বেহায়া বেটি গলায় গলায় ঝগড়া করে, মাইয়া মানুষ, ঘরে থাকবে, সংসার করবে, স্বামীর খেদমত করবে, তা না, তেনাদের কত রকম ত্যানাপ্যাচানি। দেশ গোল্লায় না গেলে যাবে কই? রমযান মাস গেল, সাথে সাথে গেল তাদের মাথার কাপড়। কত্তবড় বদমাইশ, চিন্তা করতে করতে বেলালের মাথাটা গরম হয়ে যায়। ২ নেত্রীর একজন তাও তাদের দলের প্রতি সহানুভূতিশীল, তবে তার মতে, ক্ষমতায় কোনদিন তাদের বড়নেতা যদি আসতে পারেন, ২ বেটিকেই ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। গুপ্ত হত্যা করতে হবে, দেখাতে হবে সবাইকে যে, কোন দুর্ঘটনায় মারা গেছে এরা। অপেক্ষা আর ভালো লাগে না তার।

দুপুরে খেতে তাকে যেতে হবে হলে, যাবার পথে আবার রকিবের সাথে দেখা হয়ে যায়, দেখা হতেই টিটকারি মারে রকিব, সে তাকে দেখিয়ে বলে, দেখ দেখ, ছাগলা দাড়ি যায়। যান বেলাল ভাই, বেশি করে দোহন করেন, দেখেন দীনের আলো বের হয়ে আসতে পারে। না, আর তো পারা যায় না, সেদিন তার রুমমেটের সাথে দেখা করতে এসেছিল রকিব, এসে কত হইচই, তারপর তারা তার লুঙ্গির মাঝে ফুটা করে রেখে গেছে, তার তোষকে পানি ঢেলে রেখে গেছে। রাতে শুতে গিয়ে বেলাল লাফ দিয়ে উঠে এসেছে। পরে যখন সে তার রুমমেটকে ধরেছে, সে স্বীকার করেছে যে, এই কুকাজ রকিবই করেছে। হলে আসতে ১০ মিনিট সময় লাগে, খেয়ে দেয়ে বেলাল রুমে এসে একটা রিপোর্ট তৈরি করে, আজ রাতে বলতে হবে, করিম ভাইকে, কাকে কাকে কিভাবে দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে দলে ভেড়ানো যায়, কার অভাবের টান বেশি, সাহায্যের নাম করে প্রথমে কাছে টানতে হবে, তারপর আস্তে আস্তে মনের ভেতরে জায়গা করে নিতে হবে, তারপর একদিন ঐ ব্যাটা ভোদাই জানবেও না সে তাদের দলের কর্মী হয়ে গেছে। এই সপ্তাহে সে সম্ভাবনাময় কয়েকজন কে খুঁজে পেয়েছে। আর ৩ জন কে দলে ভেড়াতে পারলে সে অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবে। তখন তাকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে, এই সুযোগের জন্যে কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে। এই দোকানদারি আর ভালো লাগে না তার।

তার ক্লাসের সহপাঠিদের মাঝে মেয়ে এবার অনেক বেশি। এ ব্যাপারটা তার খুব গা জ্বালা দেয়, সব কাজ সবার জন্যে না, লেখাপড়া করা কি মেয়েদের কাজ? তারপর আবার পাশ করে অনেকে কিছুই করে না, ঘরে বসে থাকে, ঘরেই যদি বসে থাকবি তো, এখানে আসার কি দরকার ছিল? একটা ভালো বিয়ে করার জন্যে এখানে আসার কি দরকার? এ ব্যাপারটাও বড় নেতার নজরে দেওয়া দরকার। মেয়েগুলা দিন দিন কেমন বেহায়া হয়ে উঠতেছে, কি তাদের বেশভুষা, অবশ্য একটা মেয়েকে তার খুব ভালো লাগে, কি সুন্দর বোরখার আড়ালে মুখ ঢেকে আসে, তাকে দেখলেই বেলালের হৃদয়ে পাখি কুউ কুউ ডাকে, সে পাশ করেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে, এ কথা চিন্তা করতেই সে উত্তেজিত হয়ে যায়, আরো বেশি বেশি দাড়িতে হাত বোলাতে থাকে। আর বেশি না, ৪ বছরেই তার পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এর মাঝে কেউ যাতে কুদৃষ্টি না দেয়, এজন্যে তাকে জানাতে হবে তার মনের কথা। আর সে চায়, বিয়ে করে তার স্ত্রী ঘরকন্না করবে, আর বছর ফিরতেই ফুটফুটে খুদে বেলালের জন্ম দিবে, এসব স্বপ্ন দেখতে দেখতে বেলাল মিয়ার দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।

বিকালের সময়টা বেলাল মসজিদে কাটিয়ে দেয় সাধারণত, কাজেই বিকাল হতেই সে রওনা দেয় সে পথে, যাবার পথে তার কওমি দীনের আরো ৫ জনকে সাথে নিয়ে যায়। আজকে জিকিরে বসে একটু খাস দিলে দোয়া করে বেলাল, যেন আজকে করিম ভাই তার প্রতি একটু সদয় হয়। তারপর সন্ধায় মসজিদ থেকে বের হয়ে বন্ধ গেট টপকিয়ে গ্রেটার রোড হয়ে গিয়ে হাজির হয় বর্ণালি সিনেমা হলের পাশের স্টলে, এখানে সাধারণত তাদের মীটিং হয়। গিয়ে সে দেখে, প্রায় সবাই চলে এসেছে। অপেক্ষায় বসে থাকে বেলাল, তার সময় আসলে সে জানায় এই সপ্তাহে সে কাজ বেশ এগিয়েছে, ৫ জনকে মোটামুটি সে নিশ্চিতভাবে দলে টানতে পারবে। শুনে করিম খুশি হয়ে যায়। ২ জনের বাবা নেই, খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে, সংসারে মা ছাড়া কেউ নেই একজনের, কিছু অর্থদিয়ে সাহায্য করলেই তাকে দলে টানা যাবে, অন্যজনার জন্যে আরেকটু কষ্ট করতে হবে, সে লেখাপড়ায় একটু বেশি দুর্বল, কাজেই পড়াশুনায় সাহায্য করলে কাজ উদ্ধার হবে, তবে এ ব্যাটা ষাড়ের মত তাগড়া, তার মত পেশি তাদের দলে খুব দরকার। এসব শুনে করিম খুব খুশি হয়। করিমের মুখে হাসি দেখে বেলাল বলে উঠে, ভাইমনি, আমার একটা আর্জি ছিল। এই যে রকিব, এই চ্যাংড়া কিন্তু আমাকে খুব নাজেহাল করছে, একে একটু সায়েস্তা না করলেই না। যত্রতত্র যার তার সামনে তাকে অপমান করে। আর সে লীগ করে, আমাদের নামে যা তা বলে বেড়ায়, এই সপ্তাহে ঐ বদমায়েশের জন্যে আমার ৩ টা মানুষ ছুটে গেছে। তাদের এমন কানপড়া দিল যে কি বলব!

এসব শুনে করিম নিজের দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে চিন্তা করে, দেখি, কি করা যায়। তার ব্যাপারে আসলেই কিছু করা দরকার। কিন্তু সামনাসামনি কিছু করা যাবে না। কোনভাবে যেন কেউ জানতে না পারে, আমরা কোনভাবে এসব কাজে জড়িত। তুমি মীটিং শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বেলাল বসে থাকে, ২ টা বন রুটি আর ২ টা কলা ধ্বংস করে বসে বসে, আমার বুদ্ধিতে শান দিতে থাকে। মীটিং শেষে করিম বলে, চল বেলাল, রিকশায় উঠ্, যেতে যেতে বলি। করিম বলে, এভাবে তুমি সবার সামনে এ ধরনের অভিযোগ করবা না না, সবাইকে তো আর বিশ্বাস করা যায় না। তোমারে গহরের সাথে জুটায় দিতাছি। সে এই ব্যাপারে কাবিল, এমন ভাবে কাম সারবে, ডান হাতের কাম বাম হাত ও জানতে পারবে না। এসব শুনে বেলালের চোখ ধ্বক ধ্বক করে জ্বলতে থাকে, আজকে সে হেনস্তা করবে রকিবের। বাইর করতেসি তোর মুক্তমনা চিন্তাভাবনা আর তোর রাজনীতি। উপশহরে এসে একটা বাড়িতে হাজির হয় তারা ২ জনে, একটা বাসার কড়া নাড়ে করিম, এখানে আগে আসে নাই বেলাল। একটা বনমানুষ দরজা খুলে দেয়। এই লোকটাকে তার খুব চেনা চেনা লাগে। তারপর মনে পড়ে, আরে এ তো সেই লক্ষীপুর মোড়ের বাজারের কসাই। কি নিপুণ হাতেই না মাংস কাটে। করিম এসে বুঝিয়ে দেয়, কি করতে হবে।

রাত বাজে সোয়া ১১টা, ১১ টার পরপর মেয়েদের হলের গেট বন্ধ করে দেয়, সারাদিন প্রেমের নামে বেলেল্লাপনা করার পর রকিব বাসায় ফেরে সোয়া ১১টার দিকে, ক্যাম্পাসের গেটের পানির ট্যাংকির পাশ দিয়ে হেটে যায়। এ স্থানটা বেশ নির্জন থাকে এ সময়ে, তারা পানির ট্যাংকির নিচে লুকিয়ে থাকে। এর মাঝে রকিব শিস দিতে দিতে এগিয়ে আসে, কাছে আসতেই বেলাল তাকে ডাকে, রকিব খুব নির্ভীক ছেলে, কোন পরোয়া না করে সাড়া দেয় সে, কাছে এসে বলে, আরে এ যে দেখি আমাদের ছাগলা দাড়ি বেলাল। কি ভাইজান, এইখানে আন্ধারে কি কর? বেলাল বলে উঠে, পিপিলীকার পাংখা গজায় মরিবার তরে, খুব বাড় বেরেছে তোমার। রকিব হাসি মুখেই বলে, আরে মস্করা করি, চেতো কেন? কিন্তু, অন্ধকারে রকিব দেখতে পায় না বেলালের খুদার্ত শার্দুলের চকচকে চোখ। কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে গহর এসে ধরে ফেলে রকিবকে। তারপর পানির ট্যাংকির নিচে প্রায় কোলে করে নিয়ে আসে, রকিবের চিৎকার কেউ শুনতেও পায় না, কেউ থাকলে না পাবে।

গহর রকিবকে পেড়ে ফালে ডানপাশে কাত করে, তারপর হাটু দিয়ে বুকের উপর চেপে বশে, আর বাম হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে, আর বেলাল গরু জবাইয়ের ছুরি হাতে এগিয়ে হাসে, মুখে পিশাচের হাসি, চোখ জোড়া যেন ২টুকরা জ্বলন্ত হীরা। তার এক হুংকার দিয়ে বেলাল ছুরি চালায়, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে, আর বেলাল সেই ফিনকি দেয়া রক্তের সাথে শ্বাসনালী দিয়ে বের হয়ে আসা ফোস ফোস শব্দ শুনে হা হা করে হেসে উঠে, আর বলে, কে হাসছে শেষ হাসি, কাফেরের বাচ্চা কাফের? তারপর রকিবের রক্ত হাতে মাখিয়ে নেয় বেলাল, বুকভরে নেয় সেই রক্তের গন্ধ, কেমন যেন নোনতা মিষ্টি একটা গন্ধে ভরে যায় চারদিক। তারপর ছটফট করতে থাকা রকিবের দেহটা নিষ্প্রান আর স্থির হয়ে যায় এক সময়ে। কিন্তু কসাই গহরের কাজ তো তখনো শেষ হয় নি, সে রকিবের হাত পা আলাদা করে ফেলে কেটে, তারপর বস্তায় ভরে, তারপর সেই দেহটা নিয়ে চিড়িয়াখানায় যায়। তারপর গিয়ে এক টুকরা করে বাঘের খাচায় করে ফেলে দেয়। কেউ যানতেও পারেনি আজ পর্যন্ত রকিবের কি হয়েছিল সে রাতে।


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

গল্পের উদ্দেশ্যটা ভালো, কিন্তু সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখলে বেশ কিছু কাঠামোগত সমস্যা দেখা গেলো গল্পটাতে।

১) "দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে" -- এই কথাটা খুব বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। শিবির সদস্যদের দাড়ি থাকবেই, এটা বাধ্যতামূলক না। আর সাধারণত তারা খুব ছোট করে দাড়ি ছেটে রাখে। কাজেই হাত বোলানোর মতো দাড়ি থাকেনা, আর কথায় কথায় তারা দাড়িতেও হাত বোলাতে থাকে না। আর তারা সুরমা দেয়া, আতর মাখাও হয় কদাচিৎ।

২) বাঘের খাঁচায় কারো দেহ ফেললে তা কারো চোখে পড়বে না কেনো? খুনটা হলো রাত ১১-১৫ এর দিকে, বাঘের খাচায় নিয়ে ফেলতে ফেলতে রাত ১২টা হবে -- বাঘ কি হাড়গোড় সহ ৫/৬ ঘণ্টাতেই সব খেয়ে ফেললো? আর চিড়িয়াখানার বাঘকে প্রতিদিন মাংস দেয়া হয় -- এক রাতে ৪০-৫০ কেজি অতিরিক্ত মাংস সে খেয়ে ফেলবে তা কি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য? এই ক্ষেত্রে কূয়ায় ফেলে দেয়া হয়েছে তা বললে অনেক বিশ্বাসযোগ্য হতো গল্পটা।

৩) রাজাকার চূড়ামণি গো-আ নিজে কখনো রগ কাটে না, গলাও কাটে না। তার কাজটা কলকাঠি নাড়ার। কাজেই বেলাল গো-আর হাতের কাজের নৈপুন্যের কথা ভাবছে, এটাও একটু ভুল হয়ে গেলো।

--

ভুলগুলো বাদ দিলে এটা মোটামুটি ৮০ এর দশকের প্রেক্ষাপটের কাহিনী -- রাজশাহী, চট্টগ্রাম এসব এলাকায় এরকম হয়েছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সাইফ তাহসিন এর ছবি

রাগিব ভাই, একমত আপনার মন্তব্যের সাথে। বানোয়াট গল্প হওয়ায় আসলে বাস্তবতার সীমানা ঠিক রাখতে পারি নি। আর গল্প লিখতে গিয়ে নাটক একটু বেশি করে ফেলেছি। গল্প লেখিনি, তবে বুঝতে পারলাম, আসলে সব কাজ সবার জন্যে না। এর চেয়ে নিজের কথা বলাই ভালো। কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ, আর ভবিষ্যতে আপনার কথাগুলো মনে রাখব, লেখাকে বাস্তবের কাছে রাখার চেষ্টা করব।

আসলে বোঝাতে চেয়েছিলাম, কয়েক খাচায় ভাগ করে ফেলা হয়েছে, তাড়াহুড়ায় ভুলে গেছি, তারপরেও ফাঁক থেকে গেছে, কারন মাংস খেয়ে ফেললেও হাড্ডি থেকে যেত। আবার লাশ দেখানোই যদি উদ্দেশ্য হত, তাহলে শেষ লাইনটা খাটে না।

আর হ্যা গো-আ নিজামীরা কলকাঠি নাড়ে। আসলে খুবই অনভিজ্ঞ হাতে গল্প লেখার দুর্বল প্রচেষ্টা বলতে পারেন এটাকে মন খারাপ

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনিকেত এর ছবি

রীতিমত গা-কাঁটা দেয়া লেখা----

আমি জানি তুমি যা লিখেছ তা এমন স্বকপোলকল্পিত কিছু নয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে, এমন ঘটনা ঘটছে---এবং এমন ঘটনা আরো ঘটার আগেই আমাদের ঘুম ভাঙ্গা দরকার...

আর ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে এইরকমই নাড়া দেয়া লেখার প্রয়োজন

লেখায় তিরিশ লক্ষ তারা----

মাভৈঃ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ বস, অপটু হাতে প্রথম গল্প লেখলাম, বেশ নাটুকেপনাও করলাম, তবে এটাও ঠিক যে এমন প্রচুর হয়েছে অতীতে, আমরা এদের ঝেটিয়ে বিদার না করলে ভবিষ্যতেও হবে। আশা করব আমার এই লোভের বশবর্তী হয়ে গল্প লেখার অপচেষ্টাকে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাফি [অতিথি] এর ছবি

ভ্য়ংকর গল্প। পড়লে গা কাঁটা দেয়। আমার মামা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, তার প্রিয় বন্ধু বিশ্বজিতের কি হাল হয়েছিল তা সমসাময়িক অনেকের জানা থাকার কথা। এসব গল্প এতটাই ভয়ংকর যে অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়না। আম্রিকা এসে ভিনদেশী বন্ধুদের যখন আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি তখন অনেকেই মনে করে আমি বাড়িয়ে বলছি!! মানুষ কত নির্মম হতে পারে, এটা অনেকের ধারনার বাইরে

সাইফ তাহসিন এর ছবি

সাফি ভাই, বিশ্বজিতের ঘটনাটা লেখুন না একদিন, অনেকেই জানেন না, কিন্তু সবারই জানার প্রয়োজন। তাহলে এদেশের মানুষেরা আর ভুল করবে না।

আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বিদেশিদের বলেছি, আর অনুভুতিও আপনার মতনই, কিন্তু যখনই কেউ অবিশ্বাস করেন, সাথে সাথে জেনোসাইডের ওয়েবটা খুলে ভিডিও দেখিয়ে দেই, ছবি দেখিয়ে দেই। একটা ছবির শক্তি অনেক বেশি।

তবে, বিদেশিদের চেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে বলি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের। তাদের জানা উচিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং তাতে কার কি ভুমিকা ছিল। নাহলে দেখা যাব পাকিদের পক্ষ নিয়ে আপনাকেই উলটা দুটো কথা শুনিয়ে দিবে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সিরাত এর ছবি

সাইফ ভাই,

পড়লাম।

এবার একটা কথা কই, কথাটা আল্টেরিয়র কিছু মনে না নিয়ে শুইনেন। শিবির বুঝলাম ব্যাপক বদ। সিরিয়াসলি, শিবিরের অনেক আল্টেরিয়র মোটিভ আছে। এরা ডন অফ ওয়ারের কাওস কাল্টের মত। মানলাম।

ঢাকায় বড় হওয়ায় আমি বেশিরভাগ দাপট দেখসি ছাত্রলীগের। আমাদের বাসার পাশে জোসেফ থাকতো। ছাত্রলীগের ১টা ছেলে আর ১টা মেয়ে ৯৫% এ্যাটেনডেন্স থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএ বন্ধ করে দিসিলো, সেটা বিএনপি আমলে। গতকালের পেপারে দেখেন, প্রথম আলোই ধরেন, ছাত্রলীগ নিয়া কমসে কম তিনটা খবর আছে। একটা রেপ নিয়া। পুলিশ কিছু করতে পারতেসে না ছাত্রলীগ বলে।

আপনার কাছে অনুরোধ ছাত্রলীগকে নিয়েও লেখেন। আমি রাজনীতি নিয়ে জানি-বুঝি একটু কম, তাছাড়া পেইন খাইতে ভাল্লাগে না। আপনি যখন পারেন, লেখেন। লং টার্ম ফোকাস দরকার আছে, শর্ট টার্মও, তাই না? ওই অর্থে বললাম।

আর, আমি বুঝি ছাত্রলীগ হয়তো 'কেবল ক্ষমতার' জন্য করছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে জিনিসটাকে আমার পুরাই লেম এক্সকিউজের মত লাগে।

কিছু মনে নিয়েন না আবার। আপনাকে ক্ষ্যাপাইতে বলি নাই। আমি কট্টর-বিএনপি সমর্থক পরিবারের ছেলে, এরা ছুতা পাইলেই আওয়ামি লীগরে বাপ-মা তুইল্লা গাইল্যায়। তাই একটা ডিসকাউন্ট মেকানিজম তৈরি আছে। তা-ও, মনে হইলো এটা আপনারে কই। আপনে বেশ ওপেন-মাইন্ডেড মানুষ, তাই কওয়ার সাহস পাইলাম।

আমারে কেউ মাইরেন-ধইরেন-বইকেন না। চোখ টিপি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আমারে কেউ মাইরেন-ধইরেন-বইকেন না

নারে ভাই, তুমি যেটা বলেছ, একদম উচিত কথা। কেউই ধোয়া তুলসি পাতা না। আর যার হাতে ক্ষমতা থাকে, তার দাপটও বেশি থাকে। মাইন্ড খাবারো কোন কারন নাই, বরং তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে এই কারনে যে তোমার মতামতটা এসেছে একদম খাটি নিরপেক্ষ হিসাবে। আমি কিন্তু অপেক্ষা করে ছিলাম, কেউ এই টপিকে কিছু বলে নাই। সব দলেরই একাধিক কুলাঙ্গার আছে, সহজ উদাহরন দলের অভি। আসলে আমি সক্রিয়ভাবে কখনো রাজনীতি করি নাই। এই ব্যাপারে বরং মামুন ভাই, নজুদা বা মানিক ভাই আরো ভালো তথ্য দিতে পারবেন। আমার ভান্ডারে শিবিরের কিছু তথ্য ছিল, আর দলের কিছু তথ্য আছে, তাই এগুলা নিয়ে লিখি। তোমার এই সৎ মন্তব্যের জন্যে আবারো ধন্যবাদ.

তবে আরেকটা ব্যাপার হল যে, শিরিবি নিয়ে লেখি কারন তারা এমন একটা লেভেল সেট করেছে এই ৩৮ বছরে যে, লীগ বা দল সেখানে পৌছাতে বহুত দেরী আছে। কিন্তু তাই বলে কারো ভুলকেই প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক না

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাফি [অতিথি] এর ছবি

সিরাত ভাই একমত হতে পারলামনা আপনার সাথে। ছাত্রলীগ জাহান্নামে গেলেও তো ছাত্রশিবির এর কার্যকলাপ হালাল হচ্ছেনা !

"ঢাকায় বড় হওয়ায় আমি বেশিরভাগ দাপট দেখসি ছাত্রলীগের।"

আপনি নিজে কেন আপনার অভিজ্ঞতা লিখছেন না? লেখক ছাত্রশিবির নিয়ে লিখেছেন বলেই তাকে ছাত্রদল/লীগ/মৈত্রী নিয়ে লিখতে হবে? এটাতো কোন তুলনামূলক আলোচনা না! আপনার অভিজ্ঞতা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ সাফি ভাই, শিবির নিয়ে লেখার কারনটা আপনে ঠিকই ধরতে পেরেছেন, আর অন্য সব দল থেকে শিবিরের একটা মৌলিক পার্থক্য হল যে, কোন এক পর্যায়ে গিয়ে তারা দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের পক্ষে, শিবিরের মতলব কিন্তু ভিন্ন।

তবে হ্যা, যারা অন্যান্য দলের ঘটনাবলী জানেন, তাদের আহবান জানাই, দয়া করে লেখুন, তাতে সত্যের প্রতিষ্ঠা হবে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনিন্দ্য এর ছবি

হুম,মানলাম।তবে আমার মনে হয় শিবির কে নিয়ে ৫টা লেখা লিখলে লীগ/দল নিয়ে লেখা উচিত ১টা।কারণ ব্যাখ্যা করার দরকার নেই,নিশ্চয় আপনি বুঝতে পারছেন অনুপাতটা কেন ৫ঃ১ হবে(আরো বেশিও হতে পারে)।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একমত! তবে দলের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে লেখবার ইচ্ছা আছে। সমস্যা হল, অনেকেরই লুঙ্গিতে টান পড়বে কিনা, ঢাকায় ফিরলে আমাকে না আবার পথে পেয়ে ... ... ...

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মামুন হক এর ছবি

রাগিব ভাইয়ের সাথে একমত। লেখায় কিছু গ্যাপ চোখে পড়ল। সেটুকু বাদ্দিলে গায়ে কাঁটা দেয়া লেখা।
সিরাতের সাথেও একমত, শিবির দানবীয়, গোলাম আযমের পায়ুজাত ( সৌজন্যেঃ দ্রোহী) দল এইটা যেমন ধ্রুব সত্য, ছাত্রলীগ বা দল ধোয়া তুলসী পাতা না সেটাও বাস্তব। ওদের আকাম নিয়াও কিছু লেখা যেতে পারে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হো হো হো, বস, জীবনে গফ লেখি নাই, সখ হইসিল একখান নাটুকে গফ লেখার, লেখলাম। কোন পদের হয় নাই, খালি নাটুকেপনা ছাড়া। আর রাগিব ভাইকে আগের বলেছি, ফাঁক গুলা এতো বড় যে কি কমু ইয়ে, মানে... , তবে আবার চেষ্টা করুম হয়ত নিকট ভবিষ্যতে গফ লেখার। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাকে সে কাজে সহায়তা করবে। তারপরেও কষ্ট কইরা পড়সেন, এই লাইগা ধন্যবাদ দিলাম।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রানা [অতিথি] এর ছবি

বাসা থেকে কিছু বন্ধুদের সাথে লম্বা আড্ডা শেষ করে মাত্র অফিসে আসলাম । খুব মন খারাপ । তোমার গল্প পড়ে মন আরও খারাপ হল। দু'টি কারণ। তোমার গল্পটা কাল্পণিক হলেও সত্য, তাই । আর আমার মন খারাপ করা কাহিনিটি জামাত-শিবিরের নয় ।

আমার এক বন্ধু পরিবারকে সিম্পলি পিস্তলের নলের মুখে রেখে তাদের অনেক সম্পত্তি কারো বা কাদের নামে লিখিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘটনাটা ঘটেছে গত সরকারের আমলে । যারা নিয়েছে তারা জামাত-শিবিরের নয় । কোন দলের তা আলোচনা অবান্তর, কারণ এই সরকারের আমলেও তারা আশা করছে না কিছু করা যাবে। যারা করেছে তারা বহুরূপী ।
রাজনীতি বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা । একই পরিবারের ভাই কেউ বিনপি, কেউ আওয়ামীলীগ করে । একজন আরেকজনকে দুঃসময়ে বাচায় । ভাই তো ।

এই আমাদের দেশ ! আমার মনে হচ্ছে শিবির নিয়ে আমাদের আলোচনা দেখে এক শ্রেণীর লোক হাসছে । ভাবছে ভালইতো ব্যস্ত আছি আমরা ।

যাই হোক, আমার বন্ধু বা বন্ধুপরিবার ভাবেনি ধর্ম এজন্য দায়ী । তারা জানে কি চরিত্রের লোক এ কাজে ছিল । কালকেও তার বাসায় দাওয়াত ছিল আমাদের, সেখানে সে "হালাল" আয়োজন করেছে সবার জন্য আর ঠেসে খাইয়েছে।

ঘটনাটি শুনলাম আজকে, অন্যদের কাছ থেকে। অসহ্য লাগছে।

রানা [অতিথি] এর ছবি

নিজের মন্তব্য পড়ে এখন মনে হচ্ছে অনেকের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার নাও হতে পারে, তাই বলছি । আমার উল্লিখিত বন্ধু পরিবারের একমাত্র "দূর্বলতা" বা "দোষ" ছিল তারা হিন্দু।

বারো ঘন্টা পরেও অসহ্য বোধটুকু কমেনি।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপনার বন্ধুর এই ঘটনার কথা জানতে পেরে খুবই লজ্জিত হলাম, অর্থ জায়গা জমির লোভ মানুষকে কিভাবে নীচ আর হিংস্র করে তোলে মন খারাপ

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ তাহসিন এর ছবি

রানা ভাই, রাজনীতির আড়ালে বসে এসব মানুষরূপী পিশাচগুলো কবে যে মারা যাবে কে জানে? সমস্যা হল, ১ টা মারা গেলে ১০ টা টার স্থান দখল কোরে নেয়। যতদিন না এদের মাথার উপর থেকে এই প্রতিরক্ষার ছাতা সরে না যাবে ততদিন এমন ঘটতেই থাকবে। চিন্তা করেন দল বা লীগ ক্ষমতায় থেকে এমন হিংস্র, আর শিবির ক্ষমতায় আসলে তারা কতটা হিংস্র হবে?

তবে, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মানুষ, তা যতদিন না সবাই উপলব্ধি করবে, ততদিন এর থেকে রক্ষা নাই। এমনিতেই জীবনে জটিলতার অভাব নেই, কিন্তু তার উপরে আপনার বন্ধুর মত ভুক্তভোগীদের কথা শুনি, খুব হতাশ লাগে

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনিকেত এর ছবি

চিন্তা করেন দল বা লীগ ক্ষমতায় থেকে এমন হিংস্র, আর শিবির ক্ষমতায় আসলে তারা কতটা হিংস্র হবে?

সেইটা তো তারা গতবারের আমলেই দেখিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু লীগ আসলে পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করবে বা নিজেদের নিরাপদ মনে করবে---সেটাও তো হচ্ছে না।

রানার কথা শুনে তো মনে হল---আমরা সেই আগের আমলেই আছি---শুধু সরকার প্রধানের চেহারা আর ভোল পাল্টেছে---। সংখ্যালঘুরা আগেও বিপন্ন ছিলেন--এখনো বিপন্ন আছেন।

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল চলেশ রিসিলের কথা।

কেউ কি জানেন তার হত্যার কোন বিচার শুরু হয়েছে কি না?

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বেচারা চলেশ, তার হত্যার বিচার হবার প্রশ্নই আসে না, দিনে দুপুরের করা বিডি আর হত্যা কান্ডই ধামাচাপা পড়ল, এতগুলো সামরিক অফিসার হত্যা হয়েও কোন ইনভেস্টিগেশন হইল না, লোক দেখানো ফাইজলামি হইল কয়দিন। আর বেচারা চলেশের পক্ষ নিয়ে তাড়া দিবে কে?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ফাঁক গল্পে একটু আছে ঠিকই- কিন্তু পড়তে গিয়ে ভালোই লেগেছে সাইব্বাই। আপনি তো মূলতঃ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন- এই লেখাটা পড়ে সেরকম লেখাই মনে হয়েছে। ...

গল্পটা বস তৃতীয় অনুচ্ছেদ থেকেই শুরু করতেন, একেবার বেলাল মিঁয়া থেকে...।

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ভালো পর্যবেক্ষন, তবে আরো বিস্তারিত সমালোচনা করলে ভালো হয়। রাগিব ভাই খুব সুন্দর করে কিছু ফাঁক সম্পর্কে বলেছেন, তোমার চোখে এর বাইরে কিছু উদ্ভট লেখে থাকলে বোলো! আর ভুল বোঝার অবকাশ দিতে চাইনি, তাই শুরুতে এই বকর বকর হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ভুতুম এর ছবি

বাংলাদেশের ক্ষমতালোভী রাজনীতির নোংরা চিত্রটা তুলে ধরা দরকার সবার কাছেই।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

সেইটাই বস! সবাই মিলে গনসচেতনতা বাড়াইতে হবে

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো।

গরীব
সাউথ কোরিয়া

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ বস।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

স্বপ্নহারা এর ছবি

বস লেখাটা খুব ভাল লাগল! প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে কিছুটা যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। যে যাই বলুক...শিবির ভাই শিবিরই! ঘৃণা লীগ-দলে যারা খারাপ সবার জন্য...শিবিরের জন্য ডায়রিয়ার পুরীষ!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ বস, আপনার সাথে একমত, তাই ঘুরে ফিরে আবার শিবির নিয়ে লেখা দিলাম।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

হরেকৃষ্ন এর ছবি

কিছুটা আপনার গল্পের অনুকরণে............

***রাজাকার***

আমি এক রাজাকার
বুকে শুধু হাহাকার
কতদিন চাখি নাই রক্ত,

এবারের গরমে
আল্লাহর রহমে
ব্যায়ামে হাত করি শক্ত।

জামাত আর শিবিরে
যে চাহে না ফিরে
সব শালা কাফের আর নালায়েক,

হোক মসজিদ দহলিজ
ইসলাম ওর খারিজ
খুন ক্কবুল হয় বলি লাব্বায়েক।

মুক্তি’রা সব শেষ
দেশে শুধু দরবেশ
সামনে আমাদেরই দিনকাল,

রাম’দা শান দিয়ে
মুখে ভাল কথা কয়ে
বসে আমি ধুর্ত শেয়াল।

ডাক্তার শিক্ষক
ছাত্র নাবালক
কাটিব যে গলা থেকে কল্লা,

মেয়েলোক খলিফার
জুলফু ছিড়িবার
বসে আছি না করে হল্লা।

জয় গিয়েছে, জিন্দাবাদ
বাংলা হবে আল বদরাবাদ
ক্কওমের লফ্জ হবে উদ্দু,

কোরাণ তো বুঝি না
তবু আমি মৌলানা
ফাজেল আর আলেমেরা বুদ্ধু।

কি ভেবে আল্লাহ
ইব্রাহীমে বল্লা
রোধ কর মানুষের হত্যা,

কোরবানির সকালে
হিন্দু গরুর বদলে
কাফেরের রাণে হবে ভত্তা।

মুক্তি'রে দোয়া করি
কেন মোরে দিল ছাড়ি
খুলে গেছে স্বর্ণ দুয়ার,

রগকাটা খুন ফাঁসি
গনিমতের হুর দাসী
আল বদরা বাসী
আমি, সেই রাজাকার।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হরেকৃষ্ন দাদা, অনুরোধ রইল, ছড়াটা প্রথম পাতায় আলাদা পোস্টে দেন। গুরু গুরু
জটিলস্য জটিল বললেও কম হয়ে যায়। অমূল্য আপনার এই ছড়াটি, ধন্যবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সবার পড়া উচিৎ।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

ভয়ংকর! তবে সত্য ঘটনাগুলো এর চেয়েও ভয়ংকর......

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একমত মৃত্তিকা। ট্রুথ ইজ স্ট্রেন্জার দ্যান ফিকশন। মন মেজাজ বেশি খারাপ? নাও ছবি দেখো।

397826_13

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাহবুবুল হক এর ছবি

লেখাটা দেরিতে পড়েছি। মনে হল, যারা গল্পের ফাঁক খুজেছেন তারা ভুলে গেছেন যে গল্প লেখাটা লেখকের উদ্দেশ্য নয় । আর যারা শিবিরের অপকর্মের সাথে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের অপকর্ম জুড়তে চাইছেন তারাও ভুলের স্বর্গে আছেন। প্রথমটি করা হয় ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, জেহাদি জোশ নিয়ে আর দ্বিতীয়টি আমাদের দেশের সার্বিক চিত্র, সেখানে দল-লীগ-ফ্রন্ট-শিবির-ইউনিয়ন বলে কিছু নেই। জীবনে একবার ( সম্ভবত ৭ম বা ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময়) শিবিরকে চাঁদা দিয়েছিলাম কারণ চাঁদার রশিদটা খুব সুস্দর ছিল। সেই আত্মদংশনে আজো ক্ষতবিক্ষত হই। ধন্যবাদ একটি কাল্পনিক সত্য কথার জন্য।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অনিকেত এর ছবি

মনে হল, যারা গল্পের ফাঁক খুজেছেন তারা ভুলে গেছেন যে গল্প লেখাটা লেখকের উদ্দেশ্য নয় । আর যারা শিবিরের অপকর্মের সাথে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের অপকর্ম জুড়তে চাইছেন তারাও ভুলের স্বর্গে আছেন। প্রথমটি করা হয় ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, জেহাদি জোশ নিয়ে আর দ্বিতীয়টি আমাদের দেশের সার্বিক চিত্র, সেখানে দল-লীগ-ফ্রন্ট-শিবির-ইউনিয়ন বলে কিছু নেই।

চলুক

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ একটি কাল্পনিক সত্য কথার জন্য

মাহবুব ভাই, (যদি ভুল নামে ডেকে থাকি জানিয়েন) আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে। লেখাটা লেখনীর গুনে দুর্বল হলেও পরিশ্রম সার্থক হল। আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্যে। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তাদের জন্যে যারা না জেনে বা ভুলে বুঝেও যেন শিবিরের খপ্পরে না পড়ে। চেষ্টা সেদিন থামবে যেদিন দেশ থেকে এই নরপিশাচরা নির্মূল হবে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

আমার বই পড়ার অভ্যাস বহু আগে থেকেই। ১৯৯০ সালের ঘটনা তখন ক্লাস এইটে পড়ি, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরতাম। তখন ঐ মসজিদের এক ছাগ্লা দাড়িয়াল হারামী বই পড়ার লোভ দেখিয়ে আমাকে খিলগাঁও চৌরাস্তার জামাতিদের একটা লাইব্রেরী আছে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। ৩-৪ দিন যাবার পর বুঝেছিলাম এদের উদ্দেশ্য কি। পবিত্র কোরআনের আয়াতকে বজ্জাত গুলো এমন ভাবে উপস্থাপন করে যেনো আল্লাহ অন্য যে কোন ধর্মের লোক বা ধর্ম ঠিক মতো পালন করেনা এমন যে কোন মুসলমানকে হত্যা-জবেহ করার ১০০% অনুমতি জামাতিদের দিয়েছেন।

প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম & জীবনে আর ঐ দিকে যাইনি, যদিও অনেক চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু আমার পরিবারের একটু "উপর লেভেলে" চেনা-জানা থাকার কারনে ওরা আর ঘাটায়নি। কিন্তু আমারি এক কাছের বন্ধু আর ছুটতে পারেনি। ওর পালাতে হয়েছিলো বাংলাদেশের বাইরে & এখনো ঐ বন্ধুটি ফিরে আসেনি (হয়তো আর কোনদিনই আসবেনা)। আমি সেই থেকে আজ পর্যন্ত নামাজ পড়লে ঘরেই পড়ি, মসজিদে যেতে ভয় করে।

সেদিন একটা লেন্স এর ব্যাপারে পল্টন গিয়েছিলাম & দূর্ঘটনা বশতঃ দেখা হয়ে গিয়েছিলো খিলগাঁও এর জামাতিদের এক বড় লিডার (নামটা নয় নাই বললাম) এর সাথে। এই ধামরা বয়সেও ঐ বদমাশটাকে দেখে ভয়ে জমে গিয়েছিলাম। ভাই, এরা মানুষ না, সাক্ষাত পিশাচ।

লেখাটিতে গল্পের কোন বিচার-বিশ্লেষণ করার ইচ্ছা হলোনা, এর মুল বক্তব্যটি আমার জীবনের ছোট্ট এই অভিগ্বতা দিয়েই বুঝে নিলাম। ধন্যবাদ সাইফ ভাই, অশেষ ধন্যবাদ।

----------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অ. ত্রি. ভাই, ধন্যবাদ আপনাকেও কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্যে। একটা অনুরোধ করব আপনার অভিজ্ঞতাগুলো যদি পারেন, শেয়ার করেন একদিন আমাদের সাথে, আর আপনার দুর্ভাগা বন্ধুর কথাও বিস্তারিত লিখতে পারেন যদি তাতে কেউ হুমকি বা ঝুঁকির সম্মুক্ষিন না হন। আপনার এই ভীতিটা কিন্তু আমার মাঝেও কাজ করে, ফ্যানাটিকরা বোধ বুদ্ধিদ্বারা চালিত হয় না, কাজেই একজন সাধারন মানুষ যা করে, এরা তা করে না।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাহবুবুল হক এর ছবি

অনুপমের মত আমারও একই অভিজ্ঞতা । আমিও স্কুল জীবনে নিয়মিত নামায পড়তাম এবং এসএসসির বৎসর তো রীতিমত মসজিদে গিয়ে পড়তাম । ফযরের নামাজও আদায় করতাম মসজিদে। এসএসসির পর কলেজ জীবনেও দীর্ঘদিন এ অভ্যাসটা ছিল। মসজিদে ধর্মীয় নানা বিষয়ে অনেকে আলোচনা করত। কিন্তু আমাদের এলাকার দুই সিনিয়র ভাই যে কৌশলে আমাকে জামাতের পথে টানছেন তা বুঝতে আমার বেশ কদিন লাগলো। আমার একটা অভ্যাস হল, মনের মধ্যে জমা হওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে কিছুতেই স্বস্তি না পাওয়া । যে কারণে নিজের কিছু পঠনপাঠন এবং সাধারণ জ্ঞান নিয়েই তর্কে নেমে যেতাম। সাথে আমার আরেক বন্ধু। আমাদের দুজনের সাথে মসজিদে, পুরোনো ঝুপড়ি ঘরে, নির্মাণাধীন দালানে, মাঠে অনেক তর্ক-বিতর্ক বা বাহাসের ঘটনা এখনো মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে। তারা এসব কথাবার্তায় সাংগঠনিকভাবে কর্মী পাঠাতো। পাড়ার দুই সিনিয়র ভাই একসময় প্রেক্ষাপটের বাইরে চলে গেলেন, বাহাসে আসতে লাগলো তাদের আপ-লাইন। বলা বাহূল্য এগুলো অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে হলেও তাদের প্রস্তুতি ও প্রচ্ছন্ন হুমকি দেখে আমরা দুই বন্ধু ক্রমশ ভয় পাওয়া শুরু করলাম- অনুপমের মত।
যেমন যখনই তারা আমাদের যুক্তির কাছে পরাজিত হত তখনই জিজ্ঞেস করত--- আপনি মুসলমান? আল্লাহ-রসুল মানেন ? কোরান মানেন? নিরুপায় হাঁ বলা ছাড়া আর কোন উপায় তখন থাকতো না। একসময় তারা প্রচার করা শুরু করলো আমরা নাকি নাস্তিক। এবং অবাক ব্যপার হল তারা এলাকার মুরুব্বীদের স্তর পর্যন্ত এ কথা দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে দিল। মাত্র কলেজে পড়ি । মুরুব্বীদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ এখনো আমাদের ওপর আছে। তাই ধীরে ধীরে চুপ মেরে গেলাম। তারপর তো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেই একই নাটকের পুনরাভিনয়। তবে এবার আর আমরা একা নই।রাজনীতির হাতেখড়ির পর বুঝে গিয়েছিলাম, আসল লড়াই হল টিকে থাকার লড়াই। বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে- আত্মপ্রতিষ্ঠ হতে হলে শিবির-জামাতকে নির্মূল করতে হবে। কারণ বিপরীতমুখী দুটো বিষয একইসঙ্গে সত্য হতে পারে না, হয় শিবির-জামাত সত্য নয়তো বাংলাদেশ সত্য।

এখন যেমন শিবিরের কর্মীরা বীরদর্পে না হোক অন্তত প্রকাশ্যে অনেক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে তখন অন্তত ঢা.বিতে ( ৮৭-৯৫) তার ছিঁটেফোঁটাও ছিল না। এখন তারা কৌশল পাল্টেছে। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিচ্ছে তারা যেখানে জিন্স পরিহিত মেয়েরাও অংশ নিচ্ছে। গোলটেবিল বৈঠক করছে ফ্যাশান বা কালচার নিয়ে। মিডিয়াতে কর্মীদের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়ার জন্য শিবির আদর্শের চ্যানেল খুলেছে ( দিগন্ত/ইসলামি টিভি)। সেখানে ধর্মীয় আবরণে সবকিছুই হয়।লক্ষ্য তরুণপ্রজন্মকে আকৃষ্ট করা। তাই তাতে পাশ্চাত্য ঢঙের সব কিছুই থাকে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথাও থাকে, হাল আমলের তাল-বেতাল কিছুই তারা বাদ দেয় না। কারণ শুধু ধর্মের মোড়ক দিয়ে এখন আর চলছে না।

তারা বিভিন্ন স্কলারশিপের নামে নিজেদের কর্মীদের আলাদা সুযোগ করে দিচ্ছে যুগোপোযোগী নানা বিষয়ে দক্ষ হতে। আমি আমার ছেলেকে একটা ও-লেভেল স্কুলে একবছর পড়ানোর পর জানলাম স্কুলটি জামাতিদের । সেখানে অনেক গার্ডিয়ানকে ( বাচ্চার মায়েদের) নিযামি সম্পর্কে প্রশংসা ও শ্রদ্ধাভরে কথা বলতে শুনে আমার সন্দেহ হয়। পরে দেখলাম অফিসের সবাই দৈনিক সংগ্রাম/ নয়া দিগন্তের পাঠক। তাদের সব প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়াল ছাপা হয় মগবাজারে দলীয় অনুগতদের প্রেসে। আমার কষ্টের রোজগার এভাবে দেশদ্রোহীদের পকেটে যাচ্ছে দেথে পরের বছরই স্কুল বদলালাম।

তাই যারা বাংলাদেশকে ভালবাসেন তারা জামাত-শিবিরকে ঘৃণা করুন, অপরকেও ঘৃণা করতে বলুন।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অনেক তথ্যভুল মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল মাহবুব ভাই। ৮৭-৯৫ কথাই লিখুন না, সেই সাথে প্রাথমিক ভাবে শিবির আপনাকে দলে ভেড়ানোর জন্যে কিভাবে কি বলত, সেগুলোও, যাতে করে সবাই সাবধান হতে পারেন। আর বিস্তারিত লেখা দিন, আবারো বলছি, আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগল।

কারণ বিপরীতমুখী দুটো বিষয একইসঙ্গে সত্য হতে পারে না, হয় শিবির-জামাত সত্য নয়তো বাংলাদেশ সত্য।

সবাইকে এই কথাটা বুঝাতে হবে।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

_প্রজাপতি এর ছবি

অনেক তথ্যভুল মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল মাহবুব ভাই।

আপনি বোধহ্য় তথ্যবহুল বোঝাতে চেয়েছিলেন দেঁতো হাসি
-------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

সাইফ তাহসিন এর ছবি

খুবই বাজে রকমের টাইপো ইয়ে, মানে...

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

"বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে- আত্মপ্রতিষ্ঠ হতে হলে শিবির-জামাতকে নির্মূল করতে হবে। কারণ বিপরীতমুখী দুটো বিষয একইসঙ্গে সত্য হতে পারে না, হয় শিবির-জামাত সত্য নয়তো বাংলাদেশ সত্য।" গুরু গুরু

সাইব্বাই, শিবির নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে, খুব তাড়াতাড়ি লেখব আশা রাখি। আর গল্পটা জমসে। উদ্দেশ্যটা ভালভাবেই বোঝা গেসে।

"অকুতোভয় বিপ্লবী"

___________________________________________________________

লড়েই যাব, শেষ শোণিতটুকু বাজি রেখে

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ঐ মিয়া, তাড়াতাড়ি লেখা দাও, কতদিন অপেক্ষা করুম? শিবির কিন্তু বইসা নাই, আমরা যদি লিখতে না থাকি, তারা কিন্তু আগায়া যাবে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।