বুকের মাঝে

সাইফ তাহসিন এর ছবি
লিখেছেন সাইফ তাহসিন (তারিখ: সোম, ১২/০৪/২০১০ - ২:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই ১৯৯৮ সালে, ক্লাস শুরু হয় আগস্ট মাসে, একদিকে বিশ্বকাপ খেলা দেখি সারারাত জেগে, আর দিনের বেলায় ক্লাসে এসে ঝিমাই, ঘুম কেটে গেলে হা করে তাকায় থাকি। মনে হয়, ক্লাসে আমি একমাত্র আবাল, শিক্ষকেরা আইসা কী সব পড়ান, কিছুই বুঝি না, এইদিকে পোলাপাইন মহা আগ্রহে মাথা ঝাকায়, ক্লাস নোট লিখে আর ফটফট কইরা কী সব বলে। দিনে দিনে হতাশ হইতে থাকি, আমি কিনা ছোট বেলা থেকে ডাক্তার হইতে চাই, তাহলে কি আমার এই ইচ্ছায় ভুল ছিল? আর অন্যদের দেখে তো মনে হচ্ছে না যে যা পড়ানো হইতেছে তা কঠিন কিছু, তাহলে আমি কিছু বুঝি না কেন? এভাবে প্রায় একমাস কেটে যায়, আমার হতাশাও দিনে দিনে বাড়তে থাকে। এর মাঝে আমি আবিষ্কার করি, ক্লাসে পড়া ধরলেও আমি কিছুই পারি না, খালি বেকুবের মত হা কইরা দাঁড়ায় থাকি আর বকা শুনি শিক্ষকদের। সমস্যা হইল যে, এদের মাঝে কয়েকজন আবার আমার বাবা-মাকে চিনেন, কাজেই আমার অগ্রগতির খবরাখবর যথাসময়ে পৌঁছে যায় সঠিক স্থানে, কাজেই বাসায় ফিরে আবার জবাবদিহি করতে হয়, কেন আমি দিন দিন ভোদাই থেকে ভোদাইতর হয়ে যাচ্ছি, আর আব্বা বলতে থাকেন, অসুবিধা নাই, না পারলে দেশে কিছু জমিজমা আছে, বলদের বদলে আমাকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।

মিট দ্যা প্যারেন্টস্‌ দেখেননি, এরকম মানুষ পাওয়া বেশ কঠিন, সেসময় আমার অবস্থা ঠিক ছিল বেন স্টিলারের মতই, ঘটনা একের পর এক খারাপের দিকেই মোড় নিতে থাকে। একমাস পড়ানোর পরে সবাই আজান দিয়ে জানালেন, এখন থেকে আইটেম শুরু হবে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা নাকি শেষ হয়ে গেছে, এখন আমরা টার্মিনোলজি জানি, অ-আ-ক-খ জানি, এখন আমাদের প্রকৃত শিক্ষার শুরু হবে, মানবদেহের একটা করে অংশ পড়ানো হবে, আর পরের ক্লাসে সেটার ভাইভা হবে। আমি এমনিতেই পড়া বলতে পারি না, এভাবে দিনে একাধিক ভাইভা হলে কি হবে চিন্তা করে ঢোক গিলতে থাকি, কিন্তু কিছুই গিলে নামাতে পারি না। কি করব বুঝে উঠতে না পেরে আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ভাবে আমার মুখ খোলা যায়, আমি যে কিছুই বলতে পারি না। সে খুব বিজ্ঞের মত মুখ করে বলল, আয়নার সামনে দাড়ায় নিজের সাথে কথা বলতে থাক, তাহলে মুখ খুলে যাবে। আপনারা আবার ভেবে বসবেন না যেন, যে কোন কালে আমার লজ্জা ছিল, পড়া মাথায় থাকা আর জিনিসটা বলা আরেক ব্যাপার। এটা দিনের পর দিন ভাইভা না দিলে বলে বোঝানো একটু কঠিন। অথবা হয়ত আমি আসলেই একটা রাম-ভোদাই।

যাক, সাহস করে আয়নার সামনে দাড়ালাম, কিন্তু কী বলব, নিজের বান্দরের মত চেহারা দেখে নিজেই হেসে খুন, কেমন বান্দরের মত ফুলে থাকা দুই কান দেখে আমি হাহাপগে। এই ফর্মুলা বাদ দিলাম, এদিকে পরের সপ্তাহে যখন পরীক্ষা শুরু হল, আমি দাড়ালাম সাহস করে, আমার শিক্ষিকা প্রশ্ন করে গেলেন, আমি দাড়িয়েই থাকলাম, ফলাফল হল ফেইল। মেডিকেলে পরীক্ষা ফেল করলে বলে 'রি' অর্থাৎ রি-এপিয়ার করতে হবে। এভাবে আমার রি-এর খাতা খুলে ফেললাম এবং একের পর এক রি-খেয়ে যেতে লাগলাম। প্রথম বর্ষে ৩টা বিষয় পড়ানো হয়, এনাটমি, ফিজিওলজি আর বায়োকেমিস্ট্রি। এনাটমিতে শিখানো হয়, কোথায় কে আছে, কে তার পাড়াপড়শি, তাদের সাথে সম্পর্ক কেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি। ফিজিওলজি শিখায় কার কাজ কি আর বায়োকেমিস্ট্রি শিখায় যে কাজগুলো হচ্ছে, সেই পর্দার পেছনে রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো এবং কার রাসায়নিক গঠন কি রকম। এই ঘোড়ার ডিম বুঝতে আমার লেগেছিল ৩ মাস, ততদিনে ঐ ৩ মাসের পড়া তো খিড়কি দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে বহুদূরে। যাক, এভাবে ৩ বিষয়ে গাট্টি গাট্টি ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে এক সময় দৌড়াতে শুরু করলাম, তারপরে কিভাবে যেন জড়তা কাটিয়ে উঠলাম, আমি নিজেও সে ব্যাপারে নিশ্চিত না, আসলে জড়তা কেটেছে এই আনন্দেই আমি আটখানা হয়ে গিয়েছিলাম।

এনাটমিতে শরীরের অংশগুলো ভাগ করা হয় মাথা, হাত, বুক, পেট, পা আর ঘিলু এভাবে। আমাদের শুরু হয়েছিল হাত দিয়ে, এরপরে পেট পড়ানোর পরে বুক শুরু হয়। যখন পেট পড়ানো শুরু হয়, তখন খালি পেটের উপরে দিয়ে টিপে টিপে নিজের সেই অঙ্গটা ধরে বুঝবার চেষ্টা করতাম, আসলেই আছে তো এই অঙ্গটা। এভাবে পড়তে পড়তে আমি আবিষ্কার করলাম যে, আমার পেটের বাম পাশে রিবকেজের ঠিক নিচে কিছু একটা ফুলে আছে, আমি টিপে টিপে নিশ্চিত হয়ে বললাম, এটাতো স্প্লিন বা প্লীহা। আমি যাকেই বলি না কেন, কেউ পাত্তা দেয় না। আম্মাকে বললাম, উনি বললেন, উনারো এরকম হতো, যেটা যখন পড়ানো হতো, উনার মনে হতো সেই রোগটাই উনার হয়েছে। বুঝলাম, মক্কার মানুষ হজ্জ্ব পায়না। এভাবে আরো একমাস কেটে যায়, আমি প্রায় প্রথম বর্ষের শেষ মাথায় চলে এসেছি। প্রায় প্রতি রাতে আমার জ্বর আসে, দিনের বেলায় জ্বর জ্বর ভাব আসে, আর ওজন কেজি পাঁচেক বেড়ে গিয়েছে। রোগশোকে নাকি ওজন কমে, আমার ওজন বেড়ে গিয়েছে দেখি আমি তো পুরাই বেকুব। এভাবে প্রায় ৩ সপ্তাহ চলে যায়, আমার বাবা আমাকে বলেন, কিরে বাসায় এসে কুইচা মুরগীর মত ঝিমাইস কেন? আমার বড় ভাই ঘরেই ছিল, সে বলে উঠে, আমার ৩ সপ্তাহ ধরে জ্বর আসতেছে অথচ কোন চিকিৎসা হচ্ছে না।

পরদিনই আমাকে পাঠানো হয় রক্ত, মুত্র পরীক্ষা করতে আর রঞ্জন রশ্মি দিয়ে আমার বুকের ছবি তুলতে। রক্ত আর মূত্রের রিপোর্ট তখনো আসেনি, এক্স-রে টেকনিশিয়ান আমার ভেজা ফিল্ম নিয়েই বের হয়ে এসে বলে, এটা নিয়ে এখনি স্যারের (আমার বাবার) কাছে যান। আমি বুঝলাম, ঘটনা নিশ্চয় সিরিকাস, বেচারার চেহারা দেখার মত হয়েছে বটে। আমি ফিল্ম হাতে নিয়ে তাকালাম, দেখলাম, ডানপাশে সব ঠিকই আছে, বামপাশে ফুসফুস যেখানে থাকার কথা, সেখানে সাদা। কিন্তু আসল ঘটনা বুঝার মত এলেম তখনো আমার হয়নি। তাই ভালু ছেলের মত ফিল্ম নিয়ে গেলাম বাবার চেম্বারে। তিনি দেখে আরেকজনকে ফোন করলেন, দেখলাম, তার মুখটা খুব মলিন হয়ে গেছে। এদিকে ফোন করে ফাঁকতালে আব্বা আম্মাকে এক রাউন্ড ধোলাই করে ফেললেন, যে ছেলের অবস্থা হালুয়া, কোন খবর রাখো না, এদিকে আম্মাও নিশ্চয় বললেন, নিজে দেখতে পারো না?

যাক, তারা ২ জন এক হলে আমি আম্মাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি? আম্মারও দেখলাম, মুখ কালো, বলল, আমার বুকের বাম পাশে পানি জমেছে, এত বেশি পানি জমেছে যে সেটা আমার ফুসফুসকে ধাক্কা দিয়ে উপরে উঠিয়ে দিয়েছে। আমি তখন বুঝলাম, সেই পানির ওজনেই আমার প্লীহা নিচের দিকে নেমে গিয়েছিল। আমি আরো অবাক হলাম যে, আমার কোন কাশি হয়নি, অথচ এক পাশের ফুসফুস কোন কাজ করছিল না। মেডিসিন বিভাগের এক বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করলেন আব্বা আমাকে নিয়ে, তারপর তিনিও অবাক হলেন আমার কোন কাশি নেই শুনে। আমার পিঠে আঙ্গুল পিটালেন কতক্ষন, তারপর বললেন, বুকের মাঝে তো পুকুর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, পানি বের করতে হবে। ছোটবেলা থেকে চৌবাচ্চার অংক খারাপ পাই, তাই পানি বের করার কথা শুনতেই সেই বিভীষিকায় আক্রান্ত হই আবারও, আমাকে পাঠানো হলো শমরিতায়।

সেখানে যিনি ছিলেন, তিনি দেড় লিটার পানি বের করে দিলেন সুঁই ঢুকিয়ে, তারপর বাসায় চলে আসলাম, হাতে একগাদা ওষুধ। আমার নাকি সম্ভাব্য টিবি হয়েছে, আগে শুনেছি, যার হয়েছে যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা। কিন্তু আম্মা বললেন, সে তো ব্রিটিশ আমলের কথা, এখন চিকিৎসা আছে, তবে আমার নানাও নাকি যক্ষ্মায় মারা গেছেন। আমাকে সর্বমোট ১৬ টা ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হল দিন ভিত্তিতে। প্রথম দিন ওষুধ খেয়ে আর খাবার রুচি কই যে পালিয়ে গেল, তা এখনো মনে করতে পারিনি। আগামী ২৪ ঘন্টায় একবার শুধু আধাবাটি জাউ খেয়েছিলাম, সেটাও গলায় আঙ্গুল দিয়ে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। ওষুধ খেয়ে অরুচি হয়, তা এর আগ পর্যন্ত শুধু কাগজে কলমে শুনেছিলাম, এটা কি জিনিস, সেদিন শিখলাম। এর পরে আব্বা আমার একটা ওষুধ বাদ দিয়ে অন্য আরেকটা ওষুধ দিলেন। ঐ ওষুধটা বন্ধ করতেই আমার রুচি ফিরে এল। ট্যাবলেট এর সংখ্যা ১৬ থেকে কমে ১৫ এ এলো।

এদিকে আবারো থুতু পরীক্ষা করতে দিলাম, সেখানে কিছুই পাওয়া গেল না, রক্ত বা থুতু কোনটার কালচারেও কিছু পাওয়া গেলনা বলে আমার বাবা-মার মুখ দিনে দিনে আরো অন্ধকার হতে লাগল। অর্থাৎ আমার যক্ষ্মা হয়েছে কিনা, তার কোন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এদিকে যিনি আমার বুক থেকে পানি বের করেছিলেন, তিনি নাকি দয়া করে একটু বাতাস ঢুকিয়ে দিয়েছেন, তাই একখন আমার বুকের মাঝে খালি পানি না, আলগা বাতাসও আছে। আর কিছু না পেয়ে আমাকে আবারো শমরিতায় আনা হলো, এবার বুকের ২ বাতার মাঝখান দিয়ে এক টুকরো প্লুরার (ফুসফুসের আবরণী) টুকরা বের করে সেটা পরীক্ষা করবে ডাক্তার। যথাসময়ে আমাকে পেড়ে ফেলা হল টেবিলে, তারপর বুকের বাম পাশে নিপলের নিচে জন্ম নিল ৩য় নিপল। আমার জ্ঞান ছিল, তাই চিমটা দিয়ে আমার প্লুরার টুকরা টেনে ধরে কেটে নেবার পর সেই ডাক্তার বললেন, কাশি দিতে, কাশি দিতেই দেখি ফিন্‌কি দিয়ে পানি বের হতে লাগল। টেস্টটিউবে তিনি পানি সংগ্রহ করলেন, তারপর ৩ হাত লম্বা একটা সেচন নলের মাথা ঢুকিয়ে সেলাই করে দিলেন। পুরা সময়ে আমার বাবা সে ঘরে ছিলেন না, তিনি কিন্তু শল্যচিকিৎসক, কিন্তু আমার মা ছিলেন। কেউ যখন বলেন, নারীরা দুর্বল, তখন ইচ্ছা করে আমার মায়ের একটা পোস্টার নিয়ে ঐ মানুষটার মাথায় একটা বাড়ি দিতে।

এদিকে আমার বর্ষপূর্তির পরীক্ষা, সেটা না দিলে আমাকে প্রথম বর্ষেই আবার থাকতে হবে আরেক বছর। আমার তো মাথা খারাপ হবার যোগাড়। এদিকে হাসপাতালে শুয়ে আছি বিছানায় পিঠ দিয়ে। আমি এমনিতেও বিছানায় পিঠ দিয়ে ঘুমাই না, হয় পাশ ফিরে নয়ত উপুড় হয়ে। অথচ এভাবে ৪ দিন থাকতে হল আমাকে শমরিতায়। উঠে বসতে পারি আর বাকি সময় শুয়ে শুয়ে কাটতে লাগল। আমি যদি আবার প্রথম বর্ষে আটকে থাকে তাহলে আমার প্রজাপতি যদি উড়াল দিয়ে চলে যায়, এরকম কতশত চিন্তা, আমার সব বন্ধুরা আমার বড় ভাই হয়ে যাবে, আমি বসে বসে আঙ্গুল চুষব। এদিকে আমার বাবা-মাও প্রজাপতির কথা জানেন না, তাই সেও হুট করে আমাকে দেখতে আসতে পারছে না, তাই বুদ্ধি করে সে আমাদের ক্লাসের প্রায় সবাইকে নিয়ে এসে হাজির হল এক দুপুরে। এভাবে ৪ দিন পরে আমার নল বের করে নেওয়া হল, এর মাঝে আমার বুক থেকে প্রায় ৪ লিটার পানি আরো লিটার খানেক বাতাস বের করা হয়েছে। এদিকে এত কাটাকুটি করেও টিবি বা অন্যকোন রোগের প্রমাণ না পেয়ে আমাকে টিবির ওষুধ খেতে হল ৬ মাস। আপনারা হয়ত জানেন না, টিবির ওষুধ খেলে শরীরের সকল পানীয় গাড় কমলা রঙ ধারণ করে।

শমরিতা থেকে ছাড়া পেয়ে একদিন পরেই শুরু হল আমাদের বর্ষপূর্তি পরীক্ষা, আর আমি প্রজাপতির পাশে বসে তার খাতা কপি করতে থাকলাম সব পরীক্ষায়। বায়োকেমিস্ট্রি পরীক্ষায় লাগল গ্যাঞ্জাম, আমাকে তুলে নিয়ে এক ম্যাডাম বসিয়ে দিলেন আরেক জায়গায়। ভাগ্যক্রমে পাশে যে বসেছিল, তার হাতের লেখা পড়া যায়, তাই ছাইপাশ লিখে কোনভাবে খাতা ভরিয়ে দিয়ে এসেছিলাম সে যাত্রায়। এমন হবে জানলে আসলেই নকল করার সরঞ্জাম নিয়ে যেতাম। কিভাবে পাস করেছিলাম সেই পরীক্ষা সেটা আজও অবাক বিস্ময়ে ভাবি, আর মাঝে মাঝে নিজেই আঙ্গুল দিয়ে বাড়ি দিয়ে দেখি, আবারো জমলো কিনা কিছু আমার বুকের মাঝে।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

চলুক

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ধন্যবাদ বস, কিন্তু আপনের গান, লেখা কিছুই আসতেছে না, এইটা ভালো লাগতেছে না।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নাশতারান এর ছবি

প্রথমত, গুরু গুরু
নিজেকে পচানোর এমন দুঃসাহসী ক্ষমতার জন্য।

আচ্ছা, এইবার হাসি।

ছোটবেলা থেকে চৌবাচ্চার অংক খারাপ পাই, তাই পানি বের করার কথা শুনতেই সেই বিভীষিকায় আক্রান্ত হই আবারও।

হো হো হো

যথাসময়ে আমাকে পেড়ে ফেলা হল টেবিলে, তারপর বুকের বাম পাশে নিপলের নিচে জন্ম নিল ৩য় নিপল।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আমি প্রজাপতির পাশে বসে তার খাতা কপি করতে থাকলাম সব পরীক্ষায়।

কস্কি মমিন!



টাইপোঃ
খেলাদেখি > খেলা দেখি
স্পিলন ----------> স,প, ল যে কীভাবে জোড়া লাগায় আমি নিজেও জানি না। কেউ জানলে বলেন।
বাব-মাকে > বাবা-মাকে
ঝিমাই > ঝিমাইস
কল্মে > কলমে

কি/কীঃ
কীঃ সে কী ভাবে? (What does he think?)
কিঃ সে কি ভাবে? (Does he think?)

বানানঃ
আগষ্ট > আগস্ট (বিদেশি বানানে ষ হবে না),
ঝাকায় > ঝাঁকায়, ভোদাইওতর > ভোদাইতর, আযান > আজান, দাড়ায় > দাঁড়ায়, ভাইবা > ভাইভা,
পড়শী > পড়শি, অংগ > অঙ্গ, মুত্র > মূত্র, রস্মি > রশ্মি, বিভিষীকা > বিভীষিকা (খুউব খিয়াল কইরা),
ঢুঁকিয়ে > ঢুকিয়ে, যক্ষা > যক্ষ্মা,
বর্ষপুর্তি > বর্ষপূর্তি (বার্ষিক পরীক্ষাকে বর্ষপূর্তি পরীক্ষা কেন বলছেন?)

"ফর্মূলা " বানানের ব্যাপারে আমি সন্দিহান। আমার জানামতে বিদেশি বানানে ঊ-কার হয় না। ইয়ে, মানে...
"বুকের ২ বাতার মাঝখান দিয়ে" মানে বুঝি নাই। মন খারাপ

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হা হা হা, নিজেকে পচাই নাই, যেভাবে ঘটেছিল, সেভাবেই লিখলাম। বাতা মানে রিব। আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ, যাই বানানগুলো ঠিক করে আসি।

আর পড়শি না পড়শী, তিথীডোর আগেরবার বলেছিলেন পাড়াপড়শী হবে হাসি.

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নাশতারান এর ছবি

পুরনো অনেক ঈ-কার এখন ই-কার হয়ে গেছে।
যেমনঃ বাড়ী > বাড়ি, গোলাপী > গোলাপি, পড়শী > পড়শি। বাংলা একাডেমি বানান-অভিধানে "পড়শী" নাই, "পড়শি" আছে। অনর্থক ঈ-কার ছেঁটে ফেলার এই রীতিটা আমার পছন্দ হয়েছে। "পড়শী" ভুল না, তবে "পড়শি" লেখাই ভালো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

থেঙ্কু থেঙ্কু। অভ্রতে লেখা যায়না বলেই মনে হয়। তবে মুর্শেদ ভাইয়ের ফোনেটিকে লিখা যায় স+প+ল = স্প্ল

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নাশতারান এর ছবি

স্প্ল! স্প্ল! স্প্ল!
Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তিথীডোর এর ছবি

ভাইয়া,
আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে বানানগুলো খেয়াল করছেন! চলুক
আপাতত দৌড়ের ওপর আছি,
পরে সময় নিয়ে নীড়পাতায় চোখ রাখবো..
ভাল থাকবেন!

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাইফ তাহসিন এর ছবি

কেউ কষ্ট করে আমার বানান ঠিক করে দিবে, আর আমি বিনিময়ে এটুকু করব না? হে হে হে, তবে আমার শব্দের ভান্ডারই ভুল বানান দিয়ে ভরা, সেগুলা ঠিক করতে হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নাশতারান এর ছবি

একটু রয়েসয়ে, তিথী। পিঠ চাপড়েই দৌড় দিলে চলবে? একটু পড়ে দেখবে না?

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তিথীডোর এর ছবি

[এমনিতেই সচলাসক্তি নিয়ে বিপাকে আছি, আবার লগ ইন করিয়ে ছাড়লে.. মন খারাপ ]

পিঠ চাপড়ানো তো বানানগুলো মনে রাখা এবং নিশ্চিত হবার আগ্রহের ভিত্তিতে, এই পোস্ট রিলেটেড নয়!

নিশ্চয়ই পড়বো, খুঁটিয়ে.. রয়েসয়ে.. সময় জমিয়ে!

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তিথীডোর এর ছবি

পড়লাম..
প্রজাপতি আপু জিন্দাবাদ!
ডাগদর সাহেবের ভাগ্য দেখছি বেজায় ভালো... খাইছে

[এবার দুটো পচা কথা,

১) এখনো কয়েক জায়গায় 'দাড়িয়ে' আছেন!

২) গাড় (মানে গর্ত) > হবে 'গাঢ়' ]

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনি বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজের গ্র্যাড? আমাদের একজন আত্মীয় সেখানে কর্মরত আছেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সাইফ তাহসিন এর ছবি

নাম বলেন বস! ডাক্তার হইলে চেনার কথা, যদি না ২০০৫ এর পরে যোগ দিয়ে থাকেন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কাকুল কায়েশ এর ছবি

হাহাহহা, পুরো কাহিনী পড়ে বেশ মজা পেলাম! হাততালি
কিন্তু একটা প্রশ্ন আসলেই খোঁচাচ্ছে! ওয়ার্ল্ড কাপ তো জুলাইতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, আপনি আগস্ট মাসে কেমনে দেখলেন খেলাগুলা??? কেম্নে কি?

=========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, আমার স্মৃতির হার্ড ডিস্কে ব্যাড সেক্টরের (কপিরাইট ধুগোদা) আনাগোনা দেখা যাইতেছে। আসলে ১২ বছর আগের কথা, দিন তারিখে গণ্ডগোল হয়ে গেছে, ক্লাস সম্ভবত জুলাইয়ে শুরু হয়েছিল। কারণ আবার চেক করলাম, জুলাই'৯৮ এর ১২ তারিখে ফাইনাল হয়েছিল। যা বুঝলাম, বিভীষিকার দিনগুলো অবচেতন মন নিজে থেকেই ওলটপালট করে ফেলতেছে।

তার মানে কি আমিও বুড়া হইয়া যাইতেছি? অ্যাঁ মন খারাপ

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রেনেট এর ছবি

প্রজাপতি ম্যাডাম আপনাকে সাক্ষাত ফেলের হাত থেকে বাঁচালো, আর আপনি কিনা উঠতে বসতে উনার অবাধ্য হন? ছিঃ! দিক্কার!
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ছি রেনেট মিয়া কি কও, আমি তো ভালু ছেলে, আন্ডারস্কোর প্রজাপতির সকল কথা মন দিয়া শুনি, কিন্তু অন্যকানে ছিপি না থাকায় কিছু কিছু কথা অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

_প্রজাপতি এর ছবি

হ্যা আপনার মত ভালু ছেলের দেখা মেলা আসলেই দুষ্কর।
--------------------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

শরতশিশির এর ছবি

তুমি না থাকলে এই ''ভালু ছেলে'' কই যেতো, বলো তো? চোখ টিপি

এরপর কথা না শুনলে থ্রেট দিবা যে, ''হুমমম, সব কিন্তু বলে দেবো''! দেখবা, মানে মানে করে আসলেই ''ভালু ছেলে'' হয়ে যাবে সাইফ। দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

_প্রজাপতি এর ছবি

ভালোই বলেছেন আপু ,ব্যর্থ চেষ্টা করে দেখবো।
আপনার লেখা দেখি না অনেকদিন। দেশে যাচ্ছেন নাকি সামনে ?
-----------------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

প্রথম ৫ প্যারা খুব মজা করেই একটানা পড়ে গেলাম। ৬-এ এসে একটু কেমন-কেমন যেন লাগা শুরু হলো, আর ৭-এর শুরুতে এসে আর পড়তে পারলাম না বাকিটা। (স্যরি, সাইব্বাই)। কাটাকুটি বা অসুখের খবর বা এই ধরনের ব্যাপারস্যাপার আমার ঠিক ভালো লাগে না। কেমন যেন লাগে। আপনি তো ডাক্তার, নিশ্চয়ই বুঝতে পারসেন কী অবস্থা হয়। প্রতিকার জানা থাকলে বলতে পারেন খাইছে

তবে শুরুতে যেমন বলতেসিলেন যে আপনি পড়াশুনায় একেবারেই অমনোযোগী ছিলেন, বা বুঝতেন না তেমন কিছু, তবে আমি তো জানি আপনি ব্যাপক মেধাবী ডাক্তার (আম্রিকাতেও)। এই পরিবর্তন ক্যাম্নে হইলো? "প্রজাপতি"-র সংস্পর্শে? চোখ টিপি

ভাবী আর আপনার প্রেমকাহিনী আলাদা পোস্টে বিস্তারিত জানতে চাই হাসি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

লেখার শিরোনাম "বুকের মাঝে" দেখে ভাবলাম রোমান্টিক বা দেশাত্মবোধক কোনো লিখা - কিন্তু এটা যে বুকের মাঝে টিবির গল্প, পড়ে বেশ ধাক্কা খাইলাম ইয়ে, মানে...

মামুন হক এর ছবি

দারুণ লাগলো সাইফ। কিচ্ছা এখানেই খতম না করে আরও এগিয়ে নিলে পারতে। আরও আসুক এমন লেখা হাসি

ওডিন এর ছবি

দারুণ বস! দারুণ!

ফুসফুসজনিত (!!) অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকদিন অচল ছিলাম। এখন পুরোনো লেখা ব্যাকট্র্যাকিং করতে গিয়ে এইটা দেখলাম। প্রথম তিনটা প্যারায় তো মনে হইলো একদম আমার কথাই লিখে ফেলেছেন ভাইজান!

তো এরপর?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।