আমাদের ভোটবর্মী ঋণ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল্লাহ এ.এম. [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৮/০১/২০১৪ - ৮:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্কুলে আমাদের এক সহপাঠী ছিল, নাম "আবু ওবায়দা মোঃ জাফর ইবনে সোলাইমান" অর্থাৎ- সোলাইমানের পুত্র, ওবায়দার পিতা, মোঃ জাফর। নামে কিছু আসে যায় না, এই সুনিদ্রিষ্ট বংশ পরিচয় সম্বলিত আরবী নামটিও ছিল খামাখা, কারন তার পিতার নামও সোলাইমান ছিল না, পুত্রের তখন কোন প্রশ্নই নাই। সবাই অবশ্য তাকে চাইনিজ জাফর নামে ডাকতো এবং সেটা যথার্থই ছিল, কারন তার চেহারায় মঙ্গোলীয় অবয়ব ছিল স্পষ্ট। আমাদের ছোটবেলায় যখন টেলিভিশনের আগমন ঘটে নি, তখন হরলাল রায়(রথীণ্দ্রনাথ রায়ের বাবা) নামে একজন গায়কের কন্ঠ ভাওয়াইয়া গানকে রেডিওতে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। বড় হয়ে যখন হরলাল রায়কে প্রথম দেখি, অবাক হয়ে লক্ষ করি তিনিও চাইনিজ জাফরের মত মঙ্গোলয়েড চেহারার মানুষ। হরলাল রায় কিংবা জাফরের মত আরো অনেক মানুষ বাংলাদেশ আছে, যাদের চেহারায় নৃতাত্বিক মঙ্গোলীয় ধাঁচটা এখনও বেশ পরিস্কার। বাঙ্গালি জনধারা এবং বাংলা ভাষায় ভোটবর্মী ভাষাভাষী মানুষদের যুগ যুগ ধরে যে সংশ্লেষ, হরলাল রায় বা তথাকথিত চাইনিজ জাফরদের মত অনেকেই বহন করে চলেছেন তাদের সে সকল পূর্ব প্রজন্মের উত্তরাধীকার।

ভোটবর্মী বা টিবেটো-বার্মান ভাষা গোত্র হলো সাইনো-টিবেটো ভাষা পুঞ্জের দুটি প্রধান ধারার একটি। তিব্বতি, বর্মী, পূর্ব ভারতের বোরো ভাষা গুচ্ছ এবং মিয়ানমার ও অন্যান্য অঞ্চলের আরো কিছু ভাষা এই গোত্রের অন্তর্গত। কোচ, মেচ, রাভা, গারো, টোটো, ককবরক, হাজং প্রভৃতি ভাষাভাষী মানুষেরা একসময় বৃহত্তর বোরো ভাষাভাষী জনধারার অন্তর্গত ছিল। একটি প্রধান ধারনা হলো পশ্চিম চীনের একদল মানুষ খর্ষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে প্রথমে তিব্বত এবং পরে সেখান থেকে মিয়ানমার ও পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিস্তার লাভ করে, পূর্ব ভারতে এরাই বোরো ভাষাভাষী মানুষের আদি প্রজন্ম। নৃতাত্বিক বিভাগ অনুযায়ী তারা মঙ্গোলয়েড গোত্রের মানুষ। তবে আরো আগে থেকেই সম্ভবতঃ সেখানে অষ্ট্রিক ও দ্রাবির ভাষাভাষী জাতির মানুষও বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতো। পৌরানিক যুগে সেখানে আর্য্য প্রভাবের প্রমান পাওয়া যায় মহাভারত, রামায়ন এবং অন্যান্য পৌরানিক গ্রন্থাবলীতে। আসামের নৃতাত্বিক এবং ভাষাগত ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করতে গেলে মাথা খারাপ হতে খুব একটা সময় লাগে না। তবুও মোটের উপর বলা যায় টিবেটো-বার্মান গোত্রের বোরো ভাষাভাষী, আর্য গোত্রের অসমীয়া, এবং তাই-অহম গোত্রের তাই-চীনা ভাষাভাষী মানুষেরা সেখানে বহুদিন ধরে একসাথে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে টিবেটো-বার্মান বা ভোট বর্মী গোত্রের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশে নৃতাত্বিক জাতিগঠনে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং তাদের ভাষা বাংলা ও অসমীয়া ভাষা গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিন পর্যন্ত সমগ্র পূর্ব সীমান্ত জুড়ে, এমনকি বাংলাদেশেরও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বৃহত্তর বোরো জাতির অন্তর্গত বিভিন্ন জাতি যেমন- কোচ বা রাজবংশী, মেচ, রাভা, গারো, হাজং, টোটো, ককবরক, ইত্যাদি বহু শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছিল। সময়ের বিবর্তনে সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত এদের অনেকেই বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিতে আত্তীকৃত হয়েছে- কখনো বিচ্ছিন্নভাবে, কখনো সমষ্টিগতভাবে। সমষ্টিগত মিশ্রনের সাম্প্রতিক ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র বিগত কয়েকশ বছরের মধ্যে। অষ্টাদশ শতকে কুচবিহারের রাজার অনুসরনে কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, রংপুর, দিনাজপুরের কোচ বা রাজবংশীরা একযোগে বাঙ্গালীর ধর্ম(ইসলাম কিংবা হিন্দু) গ্রহন করে বাঙ্গালী সমাজে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। সমসাময়িক কালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, বগুড়া, সিলেট এবং চট্টগ্রামেও বহু বোরো ভাষাভাষী মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে বাঙালী সমাজের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। ফলতঃ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে বিভিন্ন বোরো ভাষা এবং তাদের সংস্কৃতির ব্যাপক মিশ্রন ঘটে। আমাদের বাংলা শব্দভান্ডারে তাই বহু শব্দের আদি উৎস কোন একটি ভোটবর্মী ভাষা, তাদের মধ্যে ভোটবর্মী ভাষা গোত্রের বোড়ো, কুকি চীন এবং বর্মী শাখার ভাষাগুলো বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশী প্রভাব রেখেছে। ডঃ অশোক বিশ্বাস এ বিষয়ে অনেকদিন থেকে গবেষনা করছেন, তিনি "বাংলা ভাষায় ভোটবর্মী ভাষার প্রভাব" নামক একটি গবেষনাধর্মী পুস্তক প্রনয়ন করেছেন, যা বাংলা একাডেমী কতৃক প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে পরিচিত কিছু শব্দ উদ্ধৃত করা গেল।

স্থাননামঃ
বর্তমান বাংলাদেশের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে একসময় কোচদের বসবাস ছিল। তাই কোচ শব্দটি বাংলাদেশের কত জায়গার নামের সাথে যে যুক্ত হয়ে আছে তার ইয়ত্তা নাই। যেমন- কুড়িগ্রামের কোচাশ্বর, সিরাজগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জের কুচিয়ামোড়া, নরসিংদীর কোচচর, মাগুরার কুচেমোড়া, চট্টগ্রামের কোচপাড়া, জামালপুরের কোচগড়, কোচনধরা, কিশোরগঞ্জের মালাকোচা, শিমুলকুচি, মেলান্দহের ফুলকোচা, নলিতাবাড়ির নাওকুঁচি, কুচনিপাড়া, উদলাকুচি, রাতকুচি, হালুয়াঘাটের কৈচাপুর, চাঁদপুরের কচুয়া ইত্যাদি। গারো ভাষায় সাং শব্দের অর্থ গ্রাম। এ শব্দটি বাংলা ভাষায় যেমন গ্রামের সমার্থক, তেমনি বহু গ্রামের নামেও সাং শব্দটি যুক্ত যেমন- হালুয়াঘাটের সাংড়া, নেত্রকোনার সুসাং ইত্যাদি। মেচদের নাম থেকেও আছে ময়মনসিংহের মিচকিপাড়া, মেচিডাঙ্গা, ইত্যাদি। চং শব্দটিরও অর্থ কুকি ভাষায় গ্রাম, সুতরাং সুনামগঞ্জের বানিয়াচং, পাগাচং, কুমিল্লার বুড়িচং কিংবা খোয়াচং, আসিচং ইত্যাদি নামগুলোও ভোটবর্মী শব্দ থেকে এসেছে বলে অনুমিত। বিশাল তিস্তা নদী তীরবর্ত্তী নিলফামারীর ডিমলা নামের বোরো অর্থ হলো বড় নদীপারের বাড়ীঘর। প্রাচীন বোরো ভাষায় গাং অর্থ নদী। বাংলাদেশের অনেক স্থানেই নদীকে গাং নামে অভিহিত করা হয়। কোন কোন স্থানের নামেও গাং শব্দটি যুক্ত, যেমন- গাংনী, গাংটি ইত্যাদি। বোরো ভাষায় অঙ্গী শব্দটিও জলা বা নদী অর্থে ব্যবহৃত হয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অঙ্গ বা অঙ্গী শব্দযোগেও রয়েছে অসংখ্য স্থানের নাম, যেমন- রংপুরের তিলঙ্গ, জলাঙ্গী, বুরুঙ্গি, ময়মনসিংহের কারেঙ্গি, মোরঙ্গা, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা ইত্যাদি।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ভোটবর্মী শব্দঃ

রাভা(বোড়ো)
গাঙ, টুটি(গলার টুঁটি), টোপলা, তোতা(পাখী), শাগাই(আত্মীয়), লিচু।

মেচ(বোড়ো)
উদাং(উদাম-দিগম্বর), কুশার(আখ), কপাল, গুয়া(সুপারী), দুয়ার, পাটা/পাটি(পাঁঠা/পাঁঠি), বজ্জাত, গোলা(গোলাঘর), গোহাল(গোয়াল ঘর), কুমরা(কুমড়া), ছালুন, ছৈ(নৌকার ছৈ), জিরাই(বিশ্রাম), মইষ(মহিষ), বরই, হাতা(চামচ), লেবু, শিয়াল, হাঁস।

টোটো(বোড়ো)
কাটারি(ছুরি), গুই(গুইসাপ), বানা(বান, বন্যা), নিশি(রাত্রি), মূলা, হাটি(হাট)।

গারো(বোড়ো)
আইল(জমির), আকাল, আকেটা(আকাটা, শক্তপোক্ত অর্থে), আদতে, আরো, কাঙাল, কাম(কাজ), খাসি(ছাগলের), গারা(রোপন অর্থে), গোটা(সব), গোরিয়াল(ঘরিয়াল),চিনি, ঝোল, থোর(কলার, ধানের), ঢেঁকি, টিপ টিপ, বা(অথবা), মঙ্গা, মাগনা, মাচা, মিতাই(মিঠাই), মিট মিট(মিটি মিটি তারা), মুই(আমি), ল্যাংড়া, লোটা, সং(সাং, গ্রাম অর্থে), শিঙ্গা।

ককবরক(বোড়ো)
খোরা(বাটি), গম(ভালো, চট্টগ্রামে বহুল ব্যবহৃত), গর্দান, চা(চাখা), থেচ(ঠেস), থাপ্পর, খাট(পালঙ্ক), পাষান, বিছা(কোমরের), রা(মুখে যেন রা নেই), নাও(নৌকা), মানা(মান্য করা), লাথি, কুফা(ককবরকে অর্থ- রোগগ্রস্থ হওয়া), লগে(সঙ্গে)।

কোচ(বোড়ো)
আখা(চুলা), আঙ্গরা(কয়লা), আজাইরা, আনধার(আঁধার), কাকৈ(চিরুনী), কাঁখ(কোল), ক্যাচাল, কুত্তা, কুলি, কোদাল, খিড়কি, খুটি(ছোট মাটির পাত্র), খেদানো, খিরা(শসা), খোকসা(ডুমুর), খোয়াড়, গোরে(নিকটে), গাভিন(গর্ভবতী), গোমা(গোখরো), ঘাটা(পথ), ঘুঘু, চিকা, চিল, ছ্যাপ(থুথু), ছেন্দা(ছিদ্র), ছোরানি(চাবি), ছ্যাবলা(ছ্যাবলামি), জাম, জার(ঠান্ডা), টং(ঘর), টাশ(টাশকি খাওয়া), ঠ্যাকান(প্রতিরোধ), ডালি, ঢ্যাঙ্গা, ত্যানা, থ্যাতলা, দুয়ার, দিয়ারি(মাটির প্রদীপ), ধুরমুর, ধলা, নাগর, নাগিয়া(লাগিয়া), পোয়াতি, পুটকি(নিতম্ব), ফারা(চেরা), ফাতরা, বলে(নাকি- তুমি বলে ঢাকায় থাক?), বাথান, বাও(বাতাস), বাটা(বন্টন করা), বিলাই, বোকা, বোঁচা(নাক বোঁচা), বিছন(বীজ), বিহান, বকরী, ভুখ, বগ(বক), ভাতার, ভোদাই, ভূঁই, ময়না, মাগুর, মাহুত, মাং(যোনী), লেঙ্গুর(লেজ), সিথান(শিয়র), সিদোল(শুটকি মাছের তৈরী কাবার), হাউস(শখ), হাল(লাঙ্গল), শকুন।

হাজং(বোড়ো)
এলা(এখন), গড়া(তৈরী করা), চাং(মাচা), চোঙ্গা, ডাঙ্গর, ন্যাংটা, পিন্দা(পরিধান করা)।

চাকমাঃ(কুকি-চিন)
চ্যাট(শিশ্ন), চোঙ্গা, ছা(বাচ্চা), ফতুয়া, ড্যাবরা(বাঁ হাতি), থতমত, থাম(খুটি)।

উল্লিখিত অনেক শব্দই একাধিক বোরো ভাষায় হুবহু কিংবা কিঞ্চিত পরিবর্তিত অবস্থায় বিদ্যমান। এ সকল শব্দবলী বাংলা ভাষায় সামগ্রীকভাবেই ব্যবহৃত হয়, কিন্তু আরো বহু শব্দ বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং পশ্চিম বাংলার কুচবিহার, জলপাইগুড়ি ও অন্যান্য অঞ্চলের আঞ্চলিক বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যে বিষয়ে আমাদের মধ্যে তেমন একটা সচেতনতা নেই। যেমন বৃহত্তর পাবনা এবং সন্নিহিত স্থানে আঞ্চলিকভাবে নদীর খাড়া পার কে বলা হয় "কাছার", হতে পারে যে এটি একটি প্রাচীন কাছারী(বোরো) শব্দ।

বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুরের বহু মানুষের আদি উৎস কোচ বা রাজবংশী নৃ জাতি। সুতরাং সেখানকার কথ্য ভাষায় অনেক কোচ শব্দ এখনও বহুল প্রচলিত যেমন-
অং(রং), আংগা(রাঙা), আতি(রাত্রি), উত্তি(ওখানে), এ্যাকনা(একটা), এত্তি(এখানে), আংশাল(রান্নাঘর), আচা(শুয়াপোকা), কাঁয়(কে), কের্দানী(মস্তানী), কুনঠে(কোথায়), গ্যালগ্যালা(গদগদ), চুয়া(কুয়া), চ্যারা(কেঁচো), ছাওয়া(শিশু), টিকা(নিতম্ব), ডাং(দন্ড, প্রহার), দুরা(কচ্ছপ), নিয়র(শিশির), প্যান্টি(লাঠি), পাছেলা(শেষোক্ত), স্যালা(তখন), সলেয়া(ছোট ইদুর), হোল(অন্ডকোষ), হাউরিয়া(হাভাত), সগারটে(সবার কাছে)।
ক্রিয়াবাচক শব্দ- খাং(খাই), থুচং(রেখেছি), যাং(যাই), পাং(পাই), পেন্দোং(পরিধান), করোং(করি), বান্দোং(বাঁধি), ধরোং(ধরি) ইত্যাদি।

একইভাবে চাকমা, মারমা, আরাকানী এবং বর্মী সংশ্লিষ্টতার কারনে চট্টগ্রাম এবং তৎসন্নিহিত জেলাগুলোতে কথ্য ভাষায় বহু শব্দ বিদ্যমান, আদতে যেগুলো ভোটবর্মী শব্দ যেমন-
গম্(ভাল), চাং(মাচান), লাং(উপপতি), পাং(নৌকার ছৈ) মারী(ভাতৃজায়া), রংমা(ননদ), ডাবা(হুক্কা), ত্তুন, লগে, লাই, এগিন, হিয়ান, আঁর, উগ্যা, আতকা, কডে, গরি, কন্ডে, এন্ডে, ঢাগত,হিঙ্গিরি, শিঙ্গিরি।

কিছু কিছু শব্দ ভোটবর্মী এবং সাঁওতালি দু ধরনের ভাষাতেই বিদ্যমান, মূলগতভাবে সেগুলো কোন ভাষাবর্গের অন্তর্গত, সে বিষয়ে বিশেষ কোন গবেষনা হয় নি। তেমন কয়েকটি শব্দ নিম্নরুপ-

চেংরা/চেংরী, কিরা(শপথ), গাঙ, গাব, ঠ্যাং, বগ, বেটি, লাঙল, নারিকেল, নুনু, জাম্বুরা ইত্যাদি

সমজাতীয় পূর্বতন পোষ্টঃ আমাদের খেরোয়ালী ঋণ


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম... পরে পরুমনি

এই জাতের পোস্ট আরও আসবে মনে হচ্ছে পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

হাততালি
অনেক কিছুই জানা হলো। কোচ সম্প্রদায় কোনটি? এখন কি এই প্রজাতি বাংলাদেশে আছে? একটু বিস্তারিত বলবেন কোচদের সম্পর্কে।

মাসুদ সজীব

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বোরো ভাষাভাষীদের একটি অংশ পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমতলে নেমে এসে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিং, সিলেট এবং তৎসন্নিহিত সমতল ভূমিতে বসবাস শুরু করেছিল, শুরুতে তারাই ছিল কোচ জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর জনৈক হরিয়া মন্ডল আনুমানিক ১৫১৫ সালে কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজবংশের রাজারা ক্রমে ক্রমে হিন্দুত্ব গ্রহন এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ধারন করতে থাকেন এবং নিজেদের রাজবংশী নামীয় ক্ষত্রিয় হিসেবে উপস্থাপিত করেন। সেই থেকে কোচদের সিংহভাগ নিজেদের রাজবংশী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে, সামান্য কিছু অংশ অবশ্য কোচ পরিচয়টিই অক্ষুন্ন রাখেন। আগেই বলেছি, কোচ বা রাজবংশীরা ব্যাপক হারে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত অঞ্চলে তাদের অধিকাংশই বৃটিশ শাসনামলের সময়ে মুসলমান ধর্ম গ্রহন করে বাঙালী সমাজে বিলীন হয়ে গিয়েছেন। যারা মুসলমান হন নি, তাদের কেউ রাজবংশী এবং কেউ কোচ সম্প্রদায় নামে এখনও বাংলাদেশে বসবাস করছেন। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭,৫৫৬ জন রাজবংশী এবং ১৬, ৫৬৭ জন কোচ বসবাস করেন।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক , তথ্যবহুল চমৎকার একটি পোস্ট। ধন্যবাদ আপনাকে

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

এক লহমা এর ছবি

তথ্যসমৃদ্ধ লেখা, মুল্যবান লেখা। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তানিম এহসান এর ছবি

খুবই সুন্দরভাবে গুছিয়ে তথ্যগুলো’কে সন্নিবেশিত করা, চমৎকার লাগলো, শেখা গেল।

সত্যপীর এর ছবি

দারুণ।

আপনে একটা ধাঁধা পোস্ট দেন। মনে করেন পাত্র পাত্রী কথা বলছে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে, সেগুলি আন্ডারলাইন করে পরে কুশ্চেন করেন পাঠকদের, "...কইঞ্চাইন দেখি এই শব্দটা কোচ না হাজং না চাকমা?" চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আইচ্ছা, তাইলে আপনেরে দিয়াই শুরু করি।
কইঞ্চেন দেহি- "ছলো ফ্রিয়ে, ছাদনি রাতে ছাদে বসিয়া ছা খাই" এর মধ্যে ভোটবর্মী শব্দ কোনটি?

সত্যপীর এর ছবি

"চাকমাঃ(কুকি-চিন)
চ্যাট(শিশ্ন), চোঙ্গা, ছা(বাচ্চা), ফতুয়া, ড্যাবরা(বাঁ হাতি), থতমত, থাম(খুটি)।"

ছাদনি রাতে ছাদে বসিয়া বাচ্চা খাইতেছেন কিরকম? আপনে তো ডেঞ্চারাস লোক!

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

না জনাব, মোটেই বাচ্চা খাইতেছি না। এটা হইল উচ্চারন বিভ্রাটের বিরম্বনা। যেমন পাত্রপক্ষের মুরুব্বি কন্যাপক্ষের মুরুব্বিকে মেয়ের রান্নার পারদর্শিতা বিষয়ে জিজ্ঞেস করছেন- হ্যাতের ফাঁক ক্যামন? বেচারা পাত্রপক্ষের মুরুব্বি!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অসম্ভব ভালো পোষ্ট। খুব ভালো লাগলো।
আমি রংপুরের মানুষ বলে বোধহয় সিংহভাগ শব্দ আমার চেনা।
'অং' যে কোচ ভাষা তা আজ জানলাম।

ভালো থাকবেন ভাই।
অনেক শুভকামনা।

----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ!
অং শব্দটি অবশ্য মুলগতভাবে কোচ শব্দ নয়, এটি রং শব্দের অপভ্রংশ। কোচদের একটি প্রবণতা হল "র" কে "অ" উচ্চারন করা, সেই হিসেবে অং, যেরকম আজা(রাজা), আনি(রানী), অক্ত(রক্ত) ইত্যাদি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।