পাকিস্তানে আটকে থাকা বাঙালি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শুক্র, ২০/০৮/২০১০ - ৩:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আটকে থাকা অর্থ ভূগোলে আটকে থাকা কেবল নয়। অনেকে মনের ভিতরেও আটকে আছে পাকিস্তান নামক চরে।

করাচির নাকি ১০ শতাংশ বাঙালি। সংখ্যায় - কেউ বলে ১০ লাখ, কেউ বলে ৩০ লাখ। ১০ লাখের কম কেউ বলে না। ভোটের সময় নেতারা এদের সংখ্যা দেখায়। ভোটের পর আবার এরা বেআইনে যায়। বেলাইনেও যায়।

কেউ গেছে পাকিস্তান সৃষ্টির আগে। তবু উর্দুভাষী মোহাজিরের খাতায় এদের নাম নাই। কেউ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে। ’৭১ এর পর থেকে যাওয়া, আর না যেতে পারা এরা। ’৭১ এর পর সংখ্যাটা ১০,০০০ নেমে এসেছিল। ’৭১ এর ঠিক পরপর এসেছে কেউ। ভেবেছে পাকিস্তানই তাদের ছহী  জায়গা। এদের অনেকে ছিল মুসলিম লিগার। নিজেদেরকে বাংলাদেশে কাঙক্ষিত ভাবতে পারে নাই। তারপর ’৮০ থেকে ’৯০ এর দশকে আবার আসে ভাগ্যান্বেষী শ্রমজীবিরা। প্রতারণা করে এদের নিয়ে ফেলা হয় করাচিতে। আদম ব্যাপারিরা নিয়ে আসে। যে মেয়েদের মধ্যপ্রাচ্যের হারেমে জায়গা হয়না, করাচিতে হয়। আর কুখ্যাত জিয়াউল হক তখনকার সামরিক শাসক, হয়ত ভাবলেন বাঙালি বাড়িয়ে সিন্ধি আর বালুচিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উপর চাপ দেয়া যাবে ভালো। ক্ষমতায় এসে ভুট্টোকন্যা বেনজির সব বুঝে গেলেন। একদিন পুলিশ রিপোর্ট আসলো তার কাছে। এভাবে বাঙালি বাড়লে, এরা আরেকটা মিনি বাংলাদেশ চেয়ে বসবে। [বি রমণ, The Case of More Fences, Asia Times, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৩]। আর এমনিতেও এরা সব মুসলিম লিগ। সুতরাং বেনজিরের নির্দেশ, ক্র্যাক ডাউন। ‘অবৈধ’ বাঙালি সহ্য করা হবে না। কিছু ফেরতও পাঠালেন। খালেজা জিয়ার সঙ্গে এই নিয়ে লেগে গেল। তখনকার পত্রপত্রিকায় আছে। কিন্তু শেষমেশ করাচির বাঙালি করাচিতেই। করাচির হলেও তারা বাঙালি। স্বস্তিতে অস্বস্তিতে।

গোড়াতেই প্রতারিত না হয়ে বাঙালি কেউ পাকিস্তান গেছে এমন তথ্য মিলে নাই। তবে ব্যবসায়ীদের কথা ভিন্ন অবশ্যই। রংপুরের বিশ্বপরিব্রাজক ওসমান গণি - ইনি ’৬০ এর দশকে পায়ে হেঁটে ৮৪টি দেশ ঘুরেছেন - তার দেয়া সাক্ষাৎকারে কিছু জানা যায়:

করাচিতে সোহরাওয়ার্দির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ গণির। বঙ্গবন্ধুই জানান পাকিস্তান সরকারের প্রতারণার শিকার নারী-শিশুসহ কয়েকশ বাঙালির বিষয়ে। সামরিক সরকার বলেছিল কাজ করলে মজুরি পাবে। কিন্তু ৩ মাস খাটিয়ে কিছুই দেয় নাই। শেষে ঠাঁই হয় হায়দ্রাবাদ রেলস্টেশনের কাছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেখানে যান গণি। যা শুনেছিলেন, দেখেন বাঙালির দুর্ভোগ তারও চেয়ে বেশি। স্থানীয় একদল লোক না খেতে পাওয়া ওই বাঙালিদলের মেয়েগুলোকে দেহব্যবসায় ঠেলে দিয়েছে। গণি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে করাচির বাঙালি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলেন। স্বদেশে ফেরত পাঠান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার এই মানুষগুলোকে। চাঁদা দিয়েছিল ঢাকা বুক হাউজ এন্ড পেপার ডিপো, পাবনা শাড়ি ঘর নামের দুই প্রতিষ্ঠান। ২০০ জন জাহাজে করে চট্টগ্রাম ফিরে যায়। কিন্তু ক্ষুধা আর পাশবিক নির্যাতনে মৃত ৩৭ শিশুসহ ৪৩ জনের ফেরা হয়নি আর। [মামুন ইসলাম, ওসমান গণির স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু : নিজের লেখা ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশই অন্তিম ইচ্ছা, বাসস, ১১ নভেম্বর]

পাকিস্তানের পত্রপত্রিকা ঘেঁটে করাচির বস্তিবাসী বাঙালির রাজনীতিটা বুঝতে চাইলাম। দুটি দৃশ্য পাওয়া গেল। একে একে বলা যাক:

২০০৬ এ বাংলাদেশের বিজয় দিবসে সাংবাদিক নকভি যান করাচির বাঙালি কলোনি চিটাগং কলোনিতে। [ আব্বাস নকভি, ‘Falling Back’, Daily Times, ডিসেম্বর ১৬, ২০০৬] একদা চিটাগং কলোনিতে পূর্ব পাকিস্তানে থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে আগত কিংবা এর উল্টো পথগামী বাঙালিরা সাময়িক অবস্থান করতেন। সেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে কিছু অব্যবহৃত বোর্ডিং ভবন। সারি বাঁধা এক রুমের কক্ষ আর কমন বাথরুম। পাশাপাশি অসংখ্য বাঙালির স্থায়ী নিবাসও ছিল এই কলোনিতে। বাঙালি কাপড়ের জন্য একদা প্রসিদ্ধ চিটাগং কলোনি বাজার। আজ সুদিন নেই। বাঙালির প্রাত্যহিক লুঙ্গি-গেঞ্জির দোকান খুঁজলে দুয়েকটা মিলবে। সাংবাদিক নকভি কথা বলেন বাঙালি দর্জি ষাটোর্ধ নুরুল ইসলামের সঙ্গে। নুরুল ইসলামের মতো লোকেরা ১৬ ডিসেম্বর দিনটি নিয়ে এখন আর কথা বলেননা। বলেন পলিটিক্সে আগ্রহ নেই। কিন্তু চাপাচাপিতে বলেন, সেসময় তিনি মুসলিম লিগার ছিলেন থাকতেন চট্টগ্রামে। স্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লিগাদের জায়গা নয় ধারণা করে তিনি চলে আসেন এখানে। এই চিটাগং কলোনিতে। কিন্তু অনুযোগ, পাকিস্তান আজও তাকে গ্রহণ করেনি। ‘এলিয়েন’ বা বহিরাগত ভাবে। (করাচির বাঙালিরা মোটাদাগে মুসলিম লিগ বলে, কোনো কোনো পাকিস্তানি ফোরামের আলোচনা থেকে ধারণা পেয়েছি। সিন্ধু প্রদেশে যেখান থেকে ভুট্টোর পিপিপির উত্থান সেখানে এই সমর্থন ভালো ফল আনবার কথা নয়। আর ভুট্টোপন্থীদের বাঙালি সম্পর্কে মনোভাব অনুমেয়) কলোনিটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর বাঙালি যোগ হয়েছে সত্য। কিন্তু ৫০ কি ৬০ দশক থেকেই এখানে প্রচুর বাঙালি এখানে বসবাসরত। একসময় ১ লাখ ছিল। বর্তমানে [২০০৬] ৭শ। এর মানে এই নয় যে বাকিরা বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। বহু বহু বাঙালি ১৯৯৬ এ বেনজিরের ক্র্যাক ডাউন নীতির পর এখানকার ঘরসম্পত্তি অবাঙালিদের কাছে বিক্রি করে দেন। বাঙালিদের অধিকাংশই এখন আর বৈধ নন। তারা অনেকেই পাকিস্তানের National Aliens Registration Authority না ‘নারা’র কাছ থেকে সনদ নেননি। কারণ সম্ভবত পাকিস্তানে বন্দী অবস্থা থেকে তারা উত্তরণের স্বপ্ন দেখেন। আবার অনেককে সেই সনদ দেয়া হয়নি। কারণ এই নারা বাঙালি হয়রানি করে ঘুষ নেয়ার জন্য কুখ্যাত। বৈধ সনদ সেই ঘুষের পথ বন্ধ করে দেবে মাত্র। নকভির রিপোর্ট পাঠ করে বোঝা যায়, কলোনির নিন্মবিত্ত বাঙালিরা অসহনীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছেন। মানসিকভাবে এই মানুষগুলো বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রলাভে গর্বিত। ক্রিকেটে জিতলে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল হয় বলে জানা যায়। [Karachi’s Bengalis celebrate India’s loss, Daily Times, ১৯ মার্চ, ২০০৭ (বাঁকা অক্ষর আমার) ] বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে তারা ন্যয়সঙ্গত মনে করেন কিনা সেবিষয়ে জানা যায়নি। তবে সুদীর্ঘকাল ধরে (এবং আজও, প্রকারান্তরে) হিংস্র সামরিক শাসনের মধ্য থেকে এদের আসল মনোভাব প্রকাশের ক্ষমতা লোপ পেতেই পারে। এবং নিছক বেঁচে থাকার স্বার্থে হয়ত নিজেদের পাকিস্তানের শাসকদের কাছেই সমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই দ্বন্দ্বের প্রকৃতি, নকভি লিখছেন, শেখ মুজিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই পরিস্কার হয়। দশকের পর দশক বোধশক্তিহীন মানুষগুলো শেখ মুজিবের নাম শুনলে প্রথমে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকে। তারপর স্মিমিত কণ্ঠে বলে অনেকের মনেই শেখ মুজিবের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। তারপর হয়তে খানিকটা ক্ষেপে উঠেই বলে, আপনি কেন আমাকে একজন গাদ্দারের মতো কথা বলতে বাধ্য করছেন। আমি পাকিস্তানি। তার কণ্ঠের খেদগুলো মুদ্রিত অক্ষরে শ্রবণযোগ্য নয় বলেই ধারণা করি। গ্লানি- অপরাধবোধ-অনুশোচনা-হতাশা ? নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

পরের দৃশ্য ২০০৭ এর। ২৩ মার্চ। পাকিস্তান দিবস। ১৯৪০ এর এই দিন ইতিহাসখ্যাত লাহোরপ্রস্তাব উত্থাপন করেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক। যদিও পাকিস্তানের জন্ম লাহোর প্রস্তাব মোতাবেক হয় নাই। সে আলোচনা ভিন্ন। আলোচ্য ২৩ মার্চে দেখা গেল অভুতপূর্ব দৃশ্য। করাচিবাসী মুটে-মজুর-জেলে-গেরস্থালী কামলা বাঙালিরা রাস্তায় নেমে উদযাপন করল এই দিবস। ‘কায়েদ-এ-আজম’ এর স্মৃতিসৌধে ফুল। গলিতে সমাবেশ। সবচেয়ে বড়টা উপকূলের পাড়া কোরাঙ্গিতে। আয়োজক নতুন রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগ শের-এ-বাংলা। নিম্নবিত্ত বাঙালিদের জড়ো করা হয়েছে ৩০,০০০। ভোট ব্যাংক। নেতারা বলেছেন বাঙালিরা গেটোতে থাকেন। ন্যায্য না। চলবে না। [Bengalis Celebrate Pakistan Day with Fervour, Dawn, ২৪ মার্চ, ২০০৭] এতকাল পর বাঙালিকে (বাঙালিই তো) সেই লাহোর প্রস্তাবকে আঁকড়ে পাকিস্তানি হতে হচ্ছে। পরিহাস জানে ইতিহাস।

তারপরও ইতিহাসের খোঁজ পায় কি এরা? খোঁজার সময়ও নাই। নানা ব্যধিতে জর্জরিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে ক্রমশ কমে আসা সম্পদে ভাগ বসাতে চলে অমানুষিক প্রতিযোগিতা।  কামড়াকামড়ি। এর মধ্যে হয়ত অস্ত্র চলে আসে করাচির বিবদমান ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে। এই তো সেদিন একটা নয় বছরের বাচ্চাকে গুলি করে মারল পশতু একটা গ্রুপ। [Man gunned down in Landhi, Daily Times, ১৫ আগস্ট, ২০১০] ফিরতি মারতে গিয়ে হয়ত আরও একটা মরবে। আবার নিজেদের মধ্যেও কাটাকাটি কম নয়। কাটাকাটির গোলমালে আত্মসত্তার রাজনীতি কাটাকুটি খেলে। যৌনদাসের ব্যবসা থেকে রক্ষা পাওয়া (নাকি সে রক্ষা পায় নাই?) শেহের বানু হেপাটাইটিস বি এর আক্রান্ত হয়েও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না। মারা যায়। সাংবাদিকের প্রশ্ন হাসপাতালে কি এমন ভেদনীতি সত্যিই আছে? হাসপাতাল জবাব দেবে কী! তবু একজন, নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় সে, বলে, আমি দেখেছি বাঙালিকে মরতে। ডাক্তার সাহেব তখন ব্যক্তিগত ফোন কলে সাড়া দিচ্ছিল। লোকটা মরলে পরে ডাক্তার বলে ‘আল্লার ইচ্ছা’। আসলে আমাদের মনমাথামগজে এই তথ্য ছেপে দেয়া আছে: ওরা শত্রু, বিশ্বাসঘাতক। [Discrimination Against Bengalis in Karachi, Eurasia Views, এপ্রিল ৮, ২০১০]

লেখাটা অনেক লম্বা হল। শেষ কথাটা বলি এখন। খুব সহজ একটা উপলব্ধি হয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে। একটা স্বাধীন দেশে জন্মানো কতবড় বিষয় পরাধীনতার স্বাদ না পেলে হয়ত সেটা কোনোদিন বোঝা যায় না। অনেক মানুষকে মরে এর প্রমাণ দিতে হচ্ছে। নিয়তই।

------------------------------------------------------------

[১] মোহাজির কওমি মুভমেন্টের চোখে মোহাজিরদের একই বন্ধনে আবদ্ধ করবে উর্দু। মোহাজিরের প্রধান ধারাটার বৈশিষ্ট্য তারা শহুরে, মধ্যবিত্ত ও উর্দুভাষী। [‘Cultural Profile Pakistan: The Mohajirs’, রিসার্চ ডিরেক্টরেট, অটোয়া, কানাডা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২ ]

[২] ‘১৯৭১ এ প্রায় ৩০০০ লোকের একটা জাহাজ পাকিস্তানে এসেছিল। এদের প্রায় সকলের ঠাঁই হয় বস্তিতে’ - হাজি জামাল নামের এক ৭০ বছর বয়সী বাঙালি এই তথ্য দেন সাংবাদিক সাইফ খানকে। [সাইফ খান, Stateless and Desperate: Pakistan Forgotten Bengali’s, Asia Calling, ২৫ অক্টোবর, ২০০৯]

[৩] পাকিস্তানে বাঙালিরা কেমন আছে এই প্রশ্নের জবাব তবু ঢাকায় বসে দেয়া কঠিন। করাচির ফটোগ্রাফার ইয়াসির কাজমিকে কিছু প্রশ্ন লিখে মেইল করলাম। তার সারমর্ম, নিজে মন্তব্য না করে, বলছি। বাঙালি ভাইয়েরা বাংলাদেশে ফিরতে চায় না। কারণ তারা দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানে স্থায়ী। তবে কেউ কেউ যেতে চায়। কারণ এখানে তাদের সমস্যার সমাধান নাই। পাকিস্তান তাদের ভিন্ন চোখে দেখে না। সুশীল সমাজও না। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন জাতিসত্তা নিয়ে নানাবিধ নীতিমালা থাকলেও, এদেরকে বোঝা মনে করা হয় না। কেবল বাঙালি নয়, হিন্দু খ্রিষ্টান সহ যেকোনো চিন্তার মানুষেরাই পাকিস্তানে নিজেদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পালনের ক্ষেত্রে মুক্ত। তারা বৃহত্তর জনতার সাথে মিশে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দপ্তর গমন করে। অনেক শিক্ষিত স্বচ্ছল বাঙালি পরিবার করাচিতে বাস করে। তুমি তো জানো সকল সংস্কৃতিরই ভালো ও খারাপ দিক থাকে। কিন্ত বাঙালিরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহমর্মিতাসম্পন্ন। আমার অনেক বাঙালি বন্ধু আছে। তাদের কারো সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নাই।

অবশ্য সে আমাকে তার তোলা ছবির একটা লিঙ্ক দিয়েছে। সেখানে সে যা লেখেছে সেখান থেকেও কিছু তুলে দেই। সে যা লিখেছে তার ভাবানুবাদ এমন: ‘আমি করাচির দরিদ্রতম এলাকাগুলো ঘুরে দেখেছি। দেখেছি সেখানে নিরপরাধ বাঙালিদের নারা বাহিনীর তৈরি কী জাতের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি দেখেছি নারা বাদেও তারা আরও কতো সংকটের মধ্য দিয়ে যান। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। জীবন এই নিরপরাধ মানুষগুলোর সাথে কী আচরণ করছে তা দেখে আমি স্তম্ভিত। কী মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছে তারা। আমি সব মন খুলে বলে দিতে চাই।

কাজমি আমাকে তার তোলা ছবি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এই জন্য কৃতজ্ঞতা।

ছবি : (c) Syed Yasir Kazmi

সংযোজন

BBC Urdu এর ১৭ নভেম্বর ২০০৩ এর একটি রিপোর্ট google translator এর সাহায্যে অনুবাদ করে নিচের তথ্যগুলো পাওয়া গেল :

সরকারি অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নারা’র মতে করাচির বাঙালির সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ২৫ লাখ বার্মিজ [রোহিঙ্গা] রয়েছে।

রাজনৈতিক সংগঠনের জোট [?] পাকিস্তান মুসলিম অ্যালায়েন্সের দাবি করাচিতে ২ কোটি ২০ লক্ষের বেশি বাঙালি রয়েছে। গোটা পাকিস্তানে এই জনসংখ্যা ৩ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি। কোনো বার্মিজ নেই।

বাঙালিরা ১০৩ টি ছোট-বড় এলাকায় অবস্থান করছে।

উল্লেখ্য স্বয়ংক্রিয় অনুবাদটি একেবারেই বোধগম্য নয়। কোনো পাঠক যদি উর্দু পাঠ করতে সক্ষম হন এবং অনুবাদ করে দিতে ইচ্ছুক হন তবে লেখকে সাথে যোগাযোগ করবেন। উর্দু রিপোর্টটির লিঙ্ক এখানে


মন্তব্য

হাসান মইখল এর ছবি

ব্যাপারটাতে আমার বেশ আগ্রহ ছিলো এবং আছে।আগ্রহের সুত্রপাত পাকিস্তানি এক কলিগের সাথে আলাপের সুত্র ধরে।সে করাচিবাসী এবং তার দাবী করাচিতে ৫লাখের অধিক বাংগালী(মুলত বাংলাদেশি) বসবাসরত।প্রথমে বিশ্বাস করি নাই, পরে নেট ঘেটে ব্যাপারটা সত্য বলে মনে হয়েছে।

তবে সে আরেকটা তথ্য দিয়েছে। যত বাংগালী ৭১ পুর্ব সময়ে গিয়েছে, তার চেয়ে বেশি গেছে ৭১-এর পরের সময়ে বিশেষকরে নব্বুই'য়ের দশকে।আমার কাছে তথ্য প্রমান ছিলোনা, তবুও ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জিত এইটা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, সরাসরি নাকচ করতে পারিনাই। মনে

যাইহোক, ব্যাপারটাতে আলোকপাত করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আপনি আগ্রহ থাকলে ঐ পাকিস্তানির মেইল এড্রেস দিতে পারি।আপনাকে প্রত্যক্ষদর্শনের কিছু বিবরণ সে দিতে পারবে বোধ হয়।

নুসায়ের এর ছবি

’৭১ এর পর সংখ্যাটা ১০,০০০ নেমে এসেছিল।

তারপর ’৮০ থেকে ’৯০ এর দশকে আবার আসে ভাগ্যান্বেষী শ্রমজীবিরা।

মূল রচনাটা পড়ে তো মনে হচ্ছে, বেশিরভাগ '৭১ এর পরেই গেছে।

তবে সে আরেকটা তথ্য দিয়েছে। যত বাংগালী ৭১ পুর্ব সময়ে গিয়েছে, তার চেয়ে বেশি গেছে ৭১-এর পরের সময়ে বিশেষকরে নব্বুই'য়ের দশকে।আমার কাছে তথ্য প্রমান ছিলোনা, তবুও ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জিত এইটা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, সরাসরি নাকচ করতে পারিনাই।

ব্যাপারটাকে অতিরঞ্জিত মনে হলো কেন? একটু আলোকপাত করবেন কি?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

যতক্ষণ সরেজমিন যাচাই করা যাচ্ছে না, ততক্ষণ সন্দেহ করাই যায়। ভারতও প্রায়ই বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী বলে বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে। বিজেপির আমলে বেশি হত এটা। কিছু রাজনৈতিক প্রলেপ তো লাগবেই।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

হাসান মইখল, অনেক ধন্যবাদ। ঠিক তথ্য পাওয়াটা ঝামেলার মনে হয়েছে। কেন ঝামেলার সেটা কিছুটা পোস্টে ব্যখ্যা করা হয়েছে। বৈধ বসবাসের সনদ অনেকরই নেই। কিন্তু যাদের নেই তারা সবাই '৭১ এর আগে গেছে সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

আমার ইমেইল : aninda.rahman[অ্যাট]hotmail[ডট]কম
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

জাহামজেদ এর ছবি

আমার প্রতিবেশি এক পরিবার করাচিতে থাকে। তারা প্রায়ই বাংলাদেশে বেড়াতে আসে। উচ্চবিত্ত হওয়ার কারণে ওদেরকে কখনো সামাজিক ভাবে অবহেলিত মনে হয়নি । ওদের কথা শুনলে মনে হয়, বাঙালিরা পাকিস্তানে পাকিস্তানীদের মতোই সব সুযোগ সুবিধা পায়। কিন্তু আপনি লেখায় দালালদের খপ্পরে পড়ে যারা পাকিস্তানে যায় তাদের কথা এই লেখা পড়ে জানতে পারলাম।

আমি করাচির দরিদ্রতম এলাকাগুলো ঘুরে দেখেছি। দেখেছি সেখানে নিরপরাধ বাঙালিদের নারা বাহিনীর তৈরি কী জাতের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি দেখেছি নারা বাদেও তারা আরও কতো সংকটের মধ্য দিয়ে যান। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। জীবন এই নিরপরাধ মানুষগুলোর সাথে কী আচরণ করছে তা দেখে আমি স্তম্ভিত। কী মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছে তারা। আমি সব মন খুলে বলে দিতে চাই।’

আলোকচিত্রী ইয়াসির কাজমিকে ধন্যবাদ। লেখাটার জন্য আপনাকেও।

.....................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রত্যেক শ্রেণীর বাস্তবতা ভিন্ন। আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি মূল আলোচনাটা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে নির্দিষ্ট রাখতে চেয়েছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

জাহামজেদ এর ছবি

এছাড়া খবরের কাগজে প্রায়ই পড়ি, দালালরা মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অনেক বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে ফেলে চলে আসে। এদের ভাগ্যে কি ঘটে, ওরাও কি পাকিস্তানে থেকে যায়, নাকি পরে দেশে আসতে পারে ?

................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এরা বেশিরভাগই ফিরতে পারে না। এদের দুর্গতিও অসহনীয় পর্যায়ের। নারী ও শিশুরা যৌনদাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়। এমন ঘটনাও আছে যে স্বামী নকল পাসপোর্টে পাকিস্তান পৌছানোয় দেশে ফিরতে পারছে না। আর স্ত্রী অবৈধভাবে পাকিস্তান থেকে যেতে পারে এই মনে করে বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশন ভিসা দিচ্ছে না।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রাহিন হায়দার এর ছবি

একটা স্বাধীন দেশে জন্মানো কতবড় বিষয় পরাধীনতার স্বাদ না পেলে হয়ত সেটা কোনোদিন বোঝা যায় না।

চলুক
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কোনোদিন কি সেইভাবে আমরা বুঝতে চেয়েছি?
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হিমু এর ছবি

এ ধরনের শ্রমসিঞ্চিত লেখা কাউকে লিখতে দেখলে ভালো লাগে, ভরসা পাই, পড়ার পর তৃপ্তিও পাই। তামার তারের আঁটি বাঁধার বয়স হবার আগে এরকম কিছু গোছানো লেখা পড়ার ও লিখে যাবার আশা পোষণ করি।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

হিমু, সময় গেলে সাধন হবে না।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

একটা প্রায় অনুচ্চারিত অধ্যায়।

অনিন্দ্য, চমৎকার।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তাসনীম এর ছবি

চলুক

তথ্যবহুল এই প্রায় ভুলে যাওয়া বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্থানে পাচার হয়ে যাওয়া নারী ও শিশুদের আসল সংখ্যা কত তা জানার চেষ্টা করছিলাম(নেটে), ভয়াবহ কিছু তথ্য পেলাম, খানিকটা অফটপিক হলেও শেয়ার করি:
"About 200,000 women and girls from Bangladesh were trafficked to Pakistan in the last 10
years, continuing at the rate of 200-400 women per month."

সুত্র: trafficking of women and cildren in bangladesh an overview by ICDDR,B Special Publication No. 111,]


অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একদমই অফটপিক নয়।

আপনার উত্থাপিত বিষয়টির ব্যপ্তি এতো বেশি যে এটা নিয়ে পৃথক পোস্টের দরকার বলে মনে হয়েছে। তাই এ বিষয়টা নিয়ে এখানে লিখি নাই। আপনার এই মন্তব্যটা রিমাইন্ডার হয়ে থাকবে। অনেক ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সবজান্তা এর ছবি

আমার জন্য প্রায় অজানা একটা অধ্যায়। লেখাটা যেমনই ভালো লাগলো, তেমনি তার পিছনে আপনার শ্রমের ছাপটুকু দেখেও শ্রদ্ধা জাগলো...


অলমিতি বিস্তারেণ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লেখা, অনিন্দ্য।
এই অধ্যায়টা নিয়ে তেমন জানা ছিল না, কিছুটা ধারণা পেলাম।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল। আসলে, বিষয়টা নিয়ে আমারও তেমন জানা ছিল না।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নুসায়ের এর ছবি

কাউকে এমনটা পরিশ্রমী লেখা লিখতে দেখলে অনুপ্রাণিত হই। অনেক তৃপ্তি নিয়ে পড়লাম। ভালো হইসে।

উচ্চ মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীদের কথাটা তেমনভাবে আসে নাই লেখাটায়। তাদের মানসিকতা কি?

অনেক শিক্ষিত স্বচ্ছল বাঙালি পরিবার করাচিতে বাস করে। তুমি তো জানো সকল সংস্কৃতিরই ভালো ও খারাপ দিক থাকে। কিন্ত বাঙালিরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহমর্মিতাসম্পন্ন।

আসলেই কি তাই?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উচ্চ মধ্যবিত্ত বাঙালি সম্ভবত বাঙালিদের মধ্যে সংখ্যালঘু। তবু এটা আরেক অধ্যায়। লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছিল দেখে স্কিপ করেছি।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সাবিহ ওমর এর ছবি

এখন বুঝলাম কেন পাকিরা বাঙ্গালি দেখলেই উর্দু শোনাতে আসে...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাকিস্তানের নিম্নবিত্ত বাঙালিরা নিজেরা বাংলাতেই কথা বলে। উর্দু না পারায় নানা সমস্যায়ও পড়ে বলে কোথাও পড়েছি। আর ৮০-৯০ এর দশকে যারা গেছে তাদের উর্দু জানার কথাও না। তবে উচ্চবিত্ত বাঙালি উর্দু জানে। অ.ট: করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ রয়েছে ১৯৫৩ সাল থেকে। সেখানে ১ জন শিক্ষক ৪ জন ছাত্র। তবে মজার বিষয় হচ্ছে উর্দু বিভাগের অবস্থাও খুব উন্নত বলে জানা যায় নাই।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাটা আগ্রহ নিয়ে পড়লাম এবং খুব ভালো লাগলো। কাজের সুবাদে অনেক পাকিস্তানী সহকর্মীর সাথে পরিচয় হয়েছে এবং বন্ধুত্বও হয়েছে। এদের অধিকাংশই চিত্রালের লোক কিন্তু সেটলড করাচিতে। তারা অবশ্য বলে যে করাচির নিম্নিবিত্ত শ্রেনী, সে বাংলাদেশী হোক আর পাকিস্তানীই হোক, সবারই অবস্থা কমবেশি একই রকম। বিশেষ করে সোস্যাল প্রোটেকশনের ক্ষেত্রে। তবে করাচিতে বেশ কিছু বাংলাদেশী পরিবার আছে যারা বিরাট মলদার। এই পরিবারগুলো ৭১এর আগের থেকেই সেখানে আছে। ইচ্ছে আছে এবছর একবার করাচি যাবার। হয়তো ভালো করে দেখার সূযোগ পাবো।

রাতঃস্মরণীয়

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

করাচি গেলে অবশ্যই একটা পোস্ট দেবেন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

এনকিদু এর ছবি

এই ব্যাপারে অনেক আগে হাল্কা কিছু কথা শুনেছিলাম, আমাদের এখানে যেমন কিছু "বিহারী" আছে সেরকম ঐ দেশেও নাকি কিছু "বাঙ্গালি" আছে। এর বেশি কিছু জানতাম না। আজকে এক ধাক্কায় অনেক কিছু জানা গেল। অনেক ধন্যবাদ।

একটা স্বাধীন দেশে জন্মানো কতবড় বিষয় পরাধীনতার স্বাদ না পেলে হয়ত সেটা কোনোদিন বোঝা যায় না। অনেক মানুষকে মরে এর প্রমাণ দিতে হচ্ছে। নিয়তই।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ এনকিদু।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রেজওয়ান এর ছবি

লেখাতে পাঁচ তারা - অনেক কিছু জানা হল।

পাকিস্তানে যেসব বাংলাদেশী আছে তারা অনেকেই উদ্বাস্তু শ্রমিক - পেটের টানে বিভিন্ন সময় সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে - এবং সেখানে বাংলাদেশী মানেই চাকর শ্রেণীর লোক এরকম কথা ছোট থেকে শুনে আসলেও তেমন বিশ্বাস করি নি - যতক্ষণ না পর্যন্ত কিছু ঘটনা শুনি।

পাকিস্তান বাংলাদেশীদের কিভাবে দেখে সেটা সম্পর্কে আমার কিছু অভিজ্ঞতা জানাই সকলকে - বোধহয় প্রাসঙ্গিক হবে।

১) আমার প্রাক্তন এমডি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে পাকিস্তানের নামকরা এক স্কুলে পরতেন। তিনি বেশ কিছু জীবন্ত উদাহরণ দিয়েছিলেন কিভাবে বাঙ্গালীদের (গুটিকয়েক ছিল) স্কুলের পাঞ্জাবিরা ভ্যাঙ্গাত নীচু শ্রেণীর বলে।

২) নব্বুইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে গোয়েথে ইন্সটিটিউটে জার্মান ভাষা শেখার সময় পাকিস্তানের ইন্সটিটিউট থেকে একজন ভদ্রমহিলা আসলেন গুটিকয়েক ক্লাস নিতে।

পাকিস্তানের এক নামকরা কলেজের প্রভাষক এই মহিলা বললেন তার দু:খের কথা। তার বাবা হচ্ছে বাঙ্গালী এবং তিনি এই পরিচয়ে প্রীত হলেও পাকিস্তানে এই পরিচয় লুকাতে হয়। বললেন যদি কলেজে চাউর হয়ে যায় যে তিনি বাঙ্গালীর মেয়ে - তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা - মায় শিক্ষক সম্প্রদায় তাকে নীচু চোখে দেখবে। কলেজে টেকা সম্ভব হবে না।

জিজ্ঞেস করলাম কেন এই ঘৃণা বাঙ্গালীদের প্রতি - তিনি বললেন পাকিস্তানী সুধী সমাজে বাঙ্গালীদের গাদ্দার হিসেবে দেখা হয়।

৩) কয়েকমাস আগে চিলিতে গ্লোবাল ভয়েসেস সম্মিলনে পাকিস্তানী ব্লগার সানা সালিম (মেডিকেলে পড়ছে - খুবই উন্মুক্ত মনের মেয়ে) এর সাথে এসেছেন তার বাবা। সেখানে একদিন দল বেধে রাতের খাবার খেতে গিয়ে ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় এবং আলাপ হল। দেখলাম তিনি তার মেয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত। তার ঐশ্বর্যের কথা বর্ণনা করছিলেন (৩০০০ ডলার দিয়ে গাঁটের পয়সায় টিকেট কেটে মেয়ের বডিগার্ড হিসেবে আসার ব্যাপারটি দিয়েই আঁচ করেছিলাম) এবং সাথে সাথে জানালেন বহু বছর ধরে তার কাজের লোক হিসেবে দুজন বাঙ্গালী আছে নোয়াখালীর। জানালেন বাঙ্গালীরা খুবই ভাল কাজের লোক হয়। বলাই বাহুল্য ডিনার টেবিলে অনেক দুরে বসেছিলাম এবং এরপর তাকে এড়িয়ে গেছি।

আমার মনে হয় পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশীদের ক্ষোভ নিয়ে যারা মূল্যায়ন করেন তারা এইসব বিষয়গুলিও বিবেচনা করবেন।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

জিজ্ঞেস করলাম কেন এই ঘৃণা বাঙ্গালীদের প্রতি - তিনি বললেন পাকিস্তানী সুধী সমাজে বাঙ্গালীদের গাদ্দার হিসেবে দেখা হয়।
এর পরেও যখন দেখি বাঙালিরা 'পাকি ভাই'দের দেখলেই গদগদ হয়ে ঊর্দূতে বাতচিত চালায়, তখন রাগে মাথার চান্দি টগবগ করে ফুটতে থাকে।


বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বাঙালির চরিত্রটাই কি ইনক্লুসিভ?

উপরন্তু পাকমনপেয়ারুর সংখ্যা কম নয়। দিন দিন বাড়ছেই।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বিষয় নিয়ে হালকা মত জানতাম তবে পুরোপুরি না। ধন্যবাদ বিষদভাবে তুলে ধরার জন্য। আর বেশি ধন্যবাদ আপনার পরিশ্রমের জন্য।

অনন্ত

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সত্যি কথা হচ্ছে জানতে হবে আরো অনেক কিছুই। যতটুকু পারা যায়। ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

খুব ভালো পোস্ট। অনেক মেহনত করছেন।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মেহনতের মজুরি পাইলাম হাসি
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

প্রিয়তে নিলাম। বিষয়টি একদমই অজ্ঞাত ছিলো। অতএব, বইগুলো সংগ্রহ করে পড়বার আশা রাখি...

পরিশ্রমকে সাধুবাদ।

_________________________________________

সেরিওজা

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উৎসগুলো সবই পত্রপত্রিকার। নেট সার্চ দিলেই পাবে। পড়ার ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আপনাকেও।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নিবিড় এর ছবি

সচরাচর এড়িয়ে যাওয়া বিষয়ে পরিশ্রম সাধ্য লিখা লিখবার জন্য ধন্যবাদ চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগলো। এ বিষয়ে মাঝখানে কিছুদিন কথা হয়েছিল কয়েকজন ভাইয়ের সাথে। পাকিস্তানের এক ছেলের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে শুনেছিলাম।

এখানে ৭১'র পূর্ববর্তী বা ৯০ এর আগে যারা গিয়েছেন তাদের কথা জানতে পারলাম। কিন্তু তাদের বর্তমান প্রজন্ম এব্যাপারে কি অনুভব করে?

তারপর স্মিমিত কণ্ঠে বলে অনেকের মনেই শেখ মুজিবের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। তারপর হয়তে খানিকটা ক্ষেপে উঠেই বলে, আপনি কেন আমাকে একজন গাদ্দারের মতো কথা বলতে বাধ্য করছেন। আমি পাকিস্তানি। তার কণ্ঠের খেদগুলো মুদ্রিত অক্ষরে শ্রবণযোগ্য নয় বলেই ধারণা করি।

তারাও কি এরকম দ্বিধান্বিত???
তাদের মনোভাব কি?তারা কোন জাতিসত্তায় বিশ্বাসী? তারা কি দেশে আসতে চায়?
এসব বিষয় জানার দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

যার নিত্যনৈমেত্তিক পাকি বন্দনায় মেতে ওঠেন তাদের সূত্রসহ এসব তথ্য দেওয়া উচিত। এরপরও কাজ না হলে বুঝতে হবে কোন কালেই কাজ হবার নয়।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাকিস্তানের নিম্নবিত্ত বাঙালিদের দুধরণের মনোভাব রয়েছে বলে পাকিস্তানী ফটোগ্রাফার কাজমি আমাকে জানিয়েছে। একদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখনই ভালো হয় তখনই বাংলাদেশে ফেরার তোড়জোড় করে। অন্যথায় পাকিস্তানেই থাকতে আগ্রহী। অন্যদল, নিজেদের পাকিস্তানি বাঙালি মনে করে। আর কিছু না। তার এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কি না জানি না, তবে এই মতটি নিশ্চয় সে কেবল একা পোষণ করে না।

এখানে ৭১'র পূর্ববর্তী বা ৯০ এর আগে যারা গিয়েছেন তাদের কথা জানতে পারলাম। কিন্তু তাদের বর্তমান প্রজন্ম এব্যাপারে কি অনুভব করে?

আমিও জানতে চাই। আলোচনাটা শুরু হল মাত্র ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আরিফ জেবতিক এর ছবি

একটা অতি চমৎকার লেখা। পরিশ্রমসাধ্য লেখা এবং প্রয়োজনীয় টপিক। আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

লেখা পড়ে যা মনে হচ্ছে, বাঙালিরা নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙালি হলেও পাকিস্তানে নিজ ইচ্ছাতেই আছেন। অনেকেই অপশন হিসেবে পাকিস্তানে থাকাকে পছন্দ করছেন। ৭১ এর পর মুসলিম লীগের রাজাকাররা সেখানে হাজির হয়েছেন পেয়ারা পাকিস্তানের কওমী ভাইদের সঙ্গে সুখে শান্তিতে বাস করতে। সেই সুখ 'নারা' এখন নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখাচ্ছে! গোআ-ই থাকতে পারে নাই, এরা থাকবে কিভাবে?

আমি পাকিস্তান প্রত্যাগত ২ বাঙালির সঙ্গে আলাপ করেছিলাম গতবছর। যা বুঝলাম, ৮০'র দশকের শ্রমজীবি মানুষ যারা গেছেন, তাঁদেরও প্রায় বেশির ভাগই আর ফিরতে চান না। তাঁদের কাছে বাংলাদেশের যে দরিদ্র গ্রাম থেকে তাঁরা গেছেন এ তুলনায় করাচির ঝকঝকে শহরে জীবন সংগ্রাম চালানো অধিকতর সহজ।

যার যার সিদ্ধান্ত, তার তার।

-
এখন প্রশ্ন হলো, মুসলিমলীগেরা গেল, জামাতিরা কম গেল কেন? এরা যাইতে চাইলে একটা জাহাজ ভরে করাচি বন্দরে নামিয়ে দেয়া হোক। জাহাজের ভাড়া লাগলে আমরা সবাই মিলে চান্দা দিতে পারি।
সেখানে গিয়ে তারা কায়েদে আজমের কব্বরে ফুল-আগরবাতি-গোলাপজল ছিটাক।

জাহামজেদ এর ছবি

এখন প্রশ্ন হলো, মুসলিমলীগেরা গেল, জামাতিরা কম গেল কেন? এরা যাইতে চাইলে একটা জাহাজ ভরে করাচি বন্দরে নামিয়ে দেয়া হোক। জাহাজের ভাড়া লাগলে আমরা সবাই মিলে চান্দা দিতে পারি।
সেখানে গিয়ে তারা কায়েদে আজমের কব্বরে ফুল-আগরবাতি-গোলাপজল ছিটাক।

কারণ, তারা হয়তো এটা জানতো, পাকিস্তানে গিয়ে তারা বাংলাদেশের মতো ধর্ম ব্যবসার পসরা সাজাতে পারতো না। ওখানে যে তাদের থেকে আরো অনেক বড় বড় পীর ওলামারা আছেন!

.......................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আরিফ ভাই, যার যার সিদ্ধান্ত তার তার। একথা সত্য। কিন্তু দালালদের খপ্পড়ে পড়ে যারা যাচ্ছে, সেই মানুষগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন হওয়ার কথা। পাচার হওয়া মানুষের রাজনীতির সূত্রগুলো হয়ত আলাদা।

আর জামাতিদের অ্যাসাইনমেন্ট তো ভিন্ন। আবার এইখানে এজেন্সি খুলে ব্যবসা করলেই তো লাভ। আক্ষরিক অর্থেই তো এরা ব্যবসা করছে।

আমার এই লেখাটা তাদের জন্যও যারা পাকিস্তানকে একটা আইডিয়ালিস্টিক প্রমিজড ল্যান্ড ভাবে।

পাকিস্তান থিওরিটাকালি মুসলমানের জায়গা। আর মুসলমানী এথনিসিটি নির্ভর না। সুতরাং এই সংকট বা সমস্যা যাই বলেন না কেন, তা পাকিস্তানের ধারণটাই যে অসাড় সেই কথাই পুনর্ব্যক্ত করে মাত্র।

মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল। এ বিষয়ে আরো নাড়াচাড়ার প্রয়োজন আছে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হাসান মইখল এর ছবি

@নুসায়ের, অনুমান করছি পাকিস্তানি কিংবা ভারতীয়দের সাথে আপনার ইন্টার‌্যাকশনের অভিজ্ঞতা কম।দেশ-রাষ্ট্র নিয়ে কথা বললেই তারা আকারে-প্রকারে-ইংগিতে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, বাংলাদেশের তুলনায় তাহারা কত্ত কত্ত উন্নত!

এক ভারতীয়, এমনিতে অনেক ভদ্র, একদিন আলাপচারিতায় বলে বসলো ভারতে দেড়কোটি অবৈধ বাংলাদেশি থাকে এবং নিছক ঠাট্টা নয়,এইটা সে মনেপ্রাণে বিশ্বাসও করে।

আলোচ্য পাকিস্তানি আমার দেখা সবচে গ্রহনযোগ্য পাকিও হলে সে ঐ মজ্জাগত অহংবোধ থেকে মুক্ত নয়।৯০'এর পর বেশি সংখ্যাক বাংলাদেশি গিয়েছে এইটা বলার পিছনে অনুচচারিত বাক্য "পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক উন্নত [কারন অনুন্নত দেশের মানুষরাই উন্নত দেশে যায়]" এইটা উহ্য ছিলো।

তাই অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে কারন যেহেতু চউখ আছে, তাদের(পাকিস্তান-ভারত) অবস্থা কেমন কিছুটা হলেও ধারণা আছে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

যদিও নুসায়েরকে লিখেছেন, তারপরও আমি একটু বলি।

ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীদের (এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত/কর্পোরেট/পদস্থ আমলা/মিলিটারি/ব্যবসায়ী/রাজনীতিবিদরাই গণ্য, নিম্নবর্গের মানুষ নয়) এই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সের কথা আপনি যথার্থই বলেছেন। আপনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় রয়েছে এসব।

কিন্তু কেবল উন্নত বিবেচনা করেই মানুষজন পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছে একথা সম্ভবত সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ, অনেককে স্রেফ মিথ্যা আশা দিয়েই পাকিস্তানে নিয়ে ফেলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পথে স্টপ ওভার হিসেবেও পাকিস্তানকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা কোনো সময়ই তুলনীয় ছিল কি? অবশ্য তাতে প্রতারিত দিনমজুরদের কীই বা আসে যায়।

অবৈধ অভিবাসীর প্রসঙ্গ তুলে ভারত বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ দিয়েছে, এমন ঘটনা ঘটেছে। এবং সেক্ষেত্রে পরিসংখ্যানে ম্যানিপুলেশন করা হয়েই থাকতে পারে।

পুনশ্চ : মন্তব্যকারী নূসায়ের আপনাকে আপনারই বক্তব্যের ওপর আরেকটু আলোচনা করার কথা বলেছেন মাত্র। এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে কি নেই, সে-প্রসঙ্গ তোলার খুব একটা দরকার ছিল না বলেই মনে করি।

আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।

___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাহে আলম খান এর ছবি

অনিন্দ্য রহমান লিখেছেন:
আরিফ ভাই, যার যার সিদ্ধান্ত তার তার। একথা সত্য। কিন্তু দালালদের খপ্পড়ে পড়ে যারা যাচ্ছে, সেই মানুষগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন হওয়ার কথা। পাচার হওয়া মানুষের রাজনীতির সূত্রগুলো হয়ত আলাদা।

যারা সেখানে বাঙালিদের ঘরে জন্ম নিয়েছে? তারা কি দোষ করলো? তারা নিজেরা কোন সিদ্ধান্তই নেইনি। তারা কেন সেই হিটলারের ইহুদী মারা ক্যাম্পের পরিবেশে রয়েছে।

অনিন্দ্য আপনার লেখা পড়ে এই বিষয়ে ব্যাপক কৌতুহল হলো। আরও পড়তে গুগল করে ২০১০ এর মে মাসের একটি নিবন্ধ (http://bit.ly/9ic6tt) পেলাম। সেটিতে, কিছু আজব কথা জানলাম।

মুজাফফর আলি নামে এক বাংলাদেশী ৬৬ সালে জীবিকার সন্ধানে করাচী গিয়ে আর আসতে পারেন নাই, আজ পর্যন্ত অবৈধ হিসাবে রয়েছেন। ধরা পরার ভয়ে ''জেলে বস্তি'' থেকে বের হন না।

পাকিস্তানের ১১৬ টি স্থানে প্রায় দুই লক্ষ বাংলা ভাষী রয়েছেন।

৯/১১ এর পর NARA বাংলাদেশী সেল করছে, আর জাতীয় নিরপত্তার নামে বাঙালিদের ধরে প্যাঁদানি দেওয়ার পারমিশন দিয়েছে। অথচ, অরিজিনাল পাকি বংশোদ্ভূত লোকজন টুইট টাওয়ার হামলা করেছিলো।

জেলে বস্তির আরেক অধিবাসী আজমলকে, পুলিশ কতবার ধরছে সে জানেনা। পুলিশের ডিউটি অবৈধ অভিবাসী ধরে NARA কে জানানো। সেটি না করে, পুলিশ এদের পয়সাকড়ি লুটে নেয়, না পেলে আত্মীয় স্বজন হতে ঘুষ আদায় করে। আর এই শয়তানীর কথা, উচ্চপদস্থ স্বীকারও করছেন।

চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী, ৮০'র দশকে পাকিস্তান চলে যাওয়া (কেন গিয়েছিল, কে জানে) দীন মোহাম্মদ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এলিয়েন ছিল। তার লাশ বাংলাদেশ এমব্যেসী নেয় নাই। ব্যাটা মরার আগে ও পরে এলিয়েন থেকে গেলো। আর এক্স ফাইলসের মোল্ডার এলিয়েন খুঁজে পায়না।

ওদের সবচে' বড় মৎস্যজীবী দের ট্রেড উইনিয়ন "পাকিস্তান ফিশার ফক ফোরাম'' এ কোন বাঙালির চান্স নাই। অথচ বেশিরভাগ বাঙালিই নাকি মৎস্যজীবী। বাঙালিদের যেকোন সময় কাজ হতে বের করে দেওয়া যায়। ওরা আমাদের গার্মেন্টস কর্মীদের মতো প্রতিবাদ করতে পারেনা।

কিছু কিছু বাঙালি বছরের পর বছর মেকশিফট ঘরে জীবনযাপন করছে। কারণ, তারা এলিয়েন - পাকা ঘর বানানোর অনুমতি নেই। ইয়াসির কাজমির ছবিতে দেখলাম, একজন কাপড়ের (ওইটা তাবু মনে হয়নি) বানানো ঘরেই, টেলিভিশন দেখে।

খারাপ লাগলো জেনে যে, শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও সামসুদ্দীন নামে এক যুবককে পুলিশ অ্যারেস্ট করে। হারামীর বাচ্চারা এখনো আমাদের ভাষার উপর এখনও হামলা করে। অথচ ওর বাপেরা আমাদের ভাষা আন্দোলনের পরের বছর করাচী ইউনিভার্সিটিতে বাংলা বিভাগ খুলেছিল, আজো নাকি চলে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মাহে আলম খান, খুব দরকারি একটা কাজ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এই উদাহরণগুলায় অনেককিছু স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। আমি নিউজলাইনের আর্টিকেলের কিছু ছবি এখানে লিংক করে দিলাম শুধু।

auto

auto

auto

___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হাসান মইখল এর ছবি

স্বীকার করছি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রসংগটা তোলা ঠিক হয়নি।সবজায়গাতেই কেমন জানি খোঁচা দেওয়ার একটা বদভ্যাস গড়ে ওঠেছে।

তবে আপনি যেমন স্টপওভার হিসেবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশির কথা বলেছেন কিন্তু আমার আলোচ্য পাকিস্তানি সহকর্মি কিন্তু স্টপ-ওভারে আটকে পড়া ব্যাপারটা উল্লেখও করে নাই।তার বক্তব্যের সারমর্ম ছিলো পাকিস্তানে ভাগ্য গড়ার জন্যই নব্বুই দশকের পরেই সবচে বেশি বাংলাদেশি করাচি'তে গেছে। যেমন গ্রাম থেকে মানুষ ঢাকা শহরে আসে।

এই জন্যই ব্যাপারটা অতিরঞ্জিত এবং তাদের একধরনের সিউডো-প্রাইডনেস এর বহিঃপ্রকাশ মনে হয়েছে।কারন পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ভিসা, প্লেন ভাড়া এইসব মিলিয়ে যথেষ্ট খরচাদি আছে।এবং যারা য়্যাতো টাকা খরচ করতে পারে, তারা নিশ্চয় মধ্যপ্রাচ্য কিংবা মালয়েশিয়ার পরিবর্তে ভাগ্য গড়ার জন্য করাচিতে যাবেনা।

যদিও এইটার সত্যতা যাচাই করার উপায় আমার হাতে নাই।

নুসায়ের এর ছবি

অনুমান করছি পাকিস্তানি কিংবা ভারতীয়দের সাথে আপনার ইন্টার‌্যাকশনের অভিজ্ঞতা কম।দেশ-রাষ্ট্র নিয়ে কথা বললেই তারা আকারে-প্রকারে-ইংগিতে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, বাংলাদেশের তুলনায় তাহারা কত্ত কত্ত উন্নত!

ভাই, পাকিস্তানি কিংবা ভারতীয়দের অহংবোধের কথা জানতে হলে তাদের সাথে কথা বলা লাগে না, একটু চোখকান খোলা রেখে পত্রিকা-টিভি দেখলেই সেটা বোঝা যায়।

তাই অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে কারন যেহেতু চউখ আছে, তাদের(পাকিস্তান-ভারত) অবস্থা কেমন কিছুটা হলেও ধারণা আছে।

আমি জানতাম ভারতের অর্থনৈতিক (সামাজিক বা সকল নাগরিকের জীবনযাত্রার মানের কথা বলছি না) অবস্থা ভাল। পাকিস্তান আর ভারতকে একই কাঠি দিয়ে মাপ দেয়াটা উচিত হচ্ছে না। আজকের বিশ্বে দেশ দু'টির মধ্যে বিস্তর ফারাক।

এই পোস্ট মোতাবেক পাকিস্তানে থাকে ১১ মিলিয়ন বাঙ্গালী!!! তায় আবার সরকারী হিসাবে।

কি বলবো? অতিরঞ্জিত নাকি অবিশ্বাস্য? এটা রাজনৈতিকভাবে ম্যানিপুলাটেড তথ্য হতেই পারে। কিন্তু এর ১০ ভাগ ও যদি আপনি সত্য ধরেন তাহলেও সংখ্যাটা ১১ লাখ। সেটাও কিন্তু কম না।

১১ লাখ নাগরিক সেই '৭১ এর সময় থেকে পাকিস্তানে "আটকে" আছে, পাকিস্তান তাদের খেদাতে চায়, আর আমাদের পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে কোনো শব্দ নাই, এটা মেনে নেওয়াটা কষ্টকর!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আপনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত নাই। আপনার অভিজ্ঞতা পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর (ও সুবিধাভোগী শ্রেণীর) মনোভাব বুঝতে খুবই সাহায্য করবে। আবারও ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রানা মেহের এর ছবি

অনিন্দ্য
এরকম একটা বিষয়ে লেখা খুব সহজ কাজ নয়। আপনি খুব সহজে করেছেন।
অনেক ধন্যবাদ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ রানা মেহের।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রায় অজানা, অনালোচিত একটা বিষয়। লেখাটা না পড়লে বুঝতে পারতাম না এই বিষয়টিতে আমার কৌতুহলের মাত্রা এত তীব্র ছিল।

শেষ লাইনটির সাথে কঠিন সহমত!
গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয়ে আলো ফেলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

একটা তথ্য দেই, করাচির উপকূলবর্তী কিয়ামারি টাউনের বড়ো বাঙালি কলোনির নাম 'মাচ্ছার কলোনি'। মাচ্ছার মানে মশা। এখানে মানুষ থাকে না। মশা থাকে।

মাচ্ছার কলোনির ছবি:

Living Rooms

ফটোগ্রাফারের লিঙ্ক

আরেকটা ছবি, এখানে কলোনির বাচ্চারা নাগরদোলায় চড়ছে :

auto

সবশেষে কলোনিটার টপ ভিউ :

auto

মাচ্ছার কলোনি সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার লিঙ্ক এখানে

___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ অনিন্দ্য!

আমাদের মোহাম্মদপুরের বিহারী আর এই বাঙালীগুলোর মধ্যে কি অদ্ভুত মিল!! দুই দলই খেসারত দিচ্ছে একটা অমানবিক অবাস্তব রাষ্ট্রের উপর বিশ্বাস রাখতে গিয়ে। অপ্রিয় সত্য হলো, ভুল পছন্দকে ইতিহাস কখনোই ক্ষমা করে না।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হাসান মইখল এর ছবি

আমি জানতাম ভারতের অর্থনৈতিক (সামাজিক বা সকল নাগরিকের জীবনযাত্রার মানের কথা বলছি না) অবস্থা ভাল। পাকিস্তান আর ভারতকে একই কাঠি দিয়ে মাপ দেয়াটা উচিত হচ্ছে না। আজকের বিশ্বে দেশ দু'টির মধ্যে বিস্তর ফারাক।

ভারত কিংবা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থান কাঠি দিয়ে মাপিনাই শুধু বলতে চেয়েছি বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের নাগরিকদের মনোভাব(গরীব, হতশ্রী, রোগা-পাতলা)
একইরকম।

তবে প্রসংগটা যখন উঠেছে, তাই একটু বলিঃ ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক বড় হলেও মাথাপিছুর আয়ের দিক থেকে সে নিতান্তই গরীব একটা দেশ।প্রবাসী শ্রমিকরা সাধারনত নিজের দেশ থেকে বেশি মাথাপিছুর আয়ের দেশে যায়।উদাহরণঃ মালয়েশিয়া, দুবাই, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির অর্থনীতির চেয়ে ভারতের টোটাল ইকোনমি অনেক বড় তবু এইসব দেশে ভারত থেকে শ্রমিক যায়, কারন ঐসব দেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে বেশি।

আর পাকিস্তানের অর্থনীতি ভারতের চেয়ে অনেক ছোট হলে মাথাপিছু আয়ে কাছাকাছি।দু'দেশেরই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি তবে এতো বেশি না যে বাংলাদেশ থেকে
হাজারে হাজারে মানুষ সেখানে যাবে কাজের সন্ধানে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশিদের গড় আয় ভালো।সুতরাং লাখে লাখে বাংলাদেশি কাজের সন্ধানে ভারতে যাচ্ছে এইটা গ্রহনযোগ্য নয়।

আপনার দেয়া লিংকটা উর্দুতে; কিছুই বুঝি নাই।তবে বিবিসি উর্দু বিভাগ ১১ মিলিয়ন বাংলাদেশি পরিসংখ্যান দিলেও সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ ভাগ হবে সেটাও যাচাই না করে মানতে রাজি নই।

এই শতকরা ১০ ভাগের হিসাবে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫ লাখ কারন যেহেতু তাদের দাবী দেড়কোটি বাংলাদেশি সেখানে বসবাস করে।

আসামে বসবাসরত প্রায় সব মুসলিম নাকি বাংলাদেশ থেকে আগত, এমন দাবীও শুনেছি।

আবার মায়ানমার বলে তাদের দেশে বসবাসরত রোহিংগারা নাকি বাংলাদেশ থেকে আগত।

বাংলাদেশিদের সংখ্যা কত, এইটা নিয়ে আদমশুমারি করা জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই লেখাটা আগে চোখে পড়েনি কেন? তখন কি দেশে ছিলাম না, নাকি অসুস্থ ছিলাম!

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যাবার কয়েকটি ধারা আমি দেখেছি। প্রথম ধারাটি হচ্ছে বাংলাদেশী উর্দুভাষী পরিবার, যারা আসলে এক কালে উত্তর ভারত থেকে এসেছিল। এরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের সহযোগী হয়নি। ফলে ১৬ই ডিসেম্বরের পর এদেরকে জেনেভা ক্যাম্পে যেতে হয়নি। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে পিপিপি সরকার যখন করাচীর বাইরে বিরান এলাকায় মুহাজিরদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছিল তখন এদের কেউ কেউ পাকিস্তানে জমিজমা ও সরকারী সুবিধা পাবার লোভে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। তবে সেখানকার কেউ কেউ আবার পুনর্বাসন এলাকার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছিল। উল্লেখ্য, পুনর্বাসন এলাকায় পানীয় জল, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষায়তন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বললেই চলে।

দ্বিতীয় ধারাটি হচ্ছে দুই পাশে দুই সামরিক শাসক জিয়া'র আমলে। তখন আদম পাচারকারীরা মধ্যপ্রাচ্যের কথা বলে বা অন্য প্রলোভন দেখিয়ে পাকিস্তানে শ্রমিক পাচার করেছে। এইসব শ্রমিকদের কেউই তারা যে পরিমাণ টাকা আদম ব্যাপারীদের দিয়েছিল সেই পরিমাণ টাকা আয় করতে পারেনি। ফলে তাদের কেউ কেউ পাকিস্তানে থেকে যেতে বাধ্য হয়। বাকিরা সব হারিয়ে দেশে ফেরত আসে। এই ধারা আরো অনেক বছর চলেছে।

তৃতীয় ধারাটি হচ্ছে পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের আমলে। তখন পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসার সুবিধার্থে কেউ কেউ পাকিস্তানে থাকতে শুরু করে। এদের সাথে যোগ দেয় বাংলাদেশ থেকে পলাতক অপরাধীরা বা যাদের নামে বহুবিধ মামলা/হুলিয়া আছে।

চতুর্থ ধারাটি হচ্ছে রাজনৈতিক ধারা। এর শুরু আফগানিস্থানে সোভিয়েত অনুপ্রবেশের পর থেকে। আফগান মুজাহিদদের সাথে যোগ দেয়া বা পরবর্তী কালে তালিবানদের সাথে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে কিছু হুজুগে মানুষ পাকিস্তানে গিয়েছিল। এদের সাথে বড় সংখ্যক রাজনৈতিক অপরাধীরাও গিয়েছিল ট্রেনিং নেবার উদ্দেশ্যে। এই ধারার যারা মারা পড়েনি তাদের সবাই বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

একটা স্বাধীন দেশে জন্মানো কতবড় বিষয় পরাধীনতার স্বাদ না পেলে হয়ত সেটা কোনোদিন বোঝা যায় না। অনেক মানুষকে মরে এর প্রমাণ দিতে হচ্ছে।

চলুক [ মন খারাপ ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।