চোখের বদলে চোখ: দৃষ্টান্ত না বর্বরতা?

আনিস মাহমুদ এর ছবি
লিখেছেন আনিস মাহমুদ (তারিখ: শনি, ০৭/০২/২০০৯ - ১২:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এর প্রথম আলোয় একটি খবর নজরে পড়ল। আকারে ছোট্ট এই খবর গুরুত্বের দিক থেকে বিশাল মনে হল আমার কাছে। খবরটি হুবহু তুলে দিচ্ছি:

চোখের বদলে চোখ

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মজিদ নামে এক ইরানি যুবক এক তরুণীকে এসিড ছুঁড়ে তার দুই চোখ নষ্ট ও তার চেহারা বিকৃত করে দিয়েছিল। চার বছর আগের এই ঘটনায় ইরানের তেহরানে একটি ফৌজদারি আদালত গত বছরের নভেম্বর মাসে ১০ ফোঁটা করে সালফিউরিক এসিড ঢেলে মজিদের দুই চোখ অন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দেন। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে মজিদ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট গত সোমবার আপিল খারিজ করে দিয়ে আগের আদেশ বহাল রাখেন। (এএফপি)

শুরু হোক বিতর্ক এটা নিয়ে।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে এইটা বর্বরতাই ... কিন্তু খবরটা, বিশেষ করে মজিদের অপরাধের বিবরণ প্রথমবার পড়ে যেটা মাথায় এসেছে সেটাই অকপটে বলি ... আমার প্রথম ফিলিংসটা ছিল "উচিত শিক্ষা হইছে" ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

আনিস মাহমুদ এর ছবি

আমারও তাই হয়েছিল।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

Seemi এর ছবি

Uchit sikha ebong uchit sasti duitai hoise.. amar to mone hoe aro kothin sasti howa dorkar chilo.. erokom borborar porichoy manush hoe jakhan keu dae, tar o seta soman vabe prappo hoe..

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমার মতে... দুটোই।
কিন্তু দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য এই বর্বরতার প্রয়োজন আছে।
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

আনিস মাহমুদ এর ছবি

"পাপীরে দিতে শাস্তি, প্রভু, পাপেরে ডেকে এনেছি..." (রবীন্দ্রনাথ)

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

দ্রোহী এর ছবি

একটু বর্বর হলেও ঠিকাছে বলেই মনে হয়।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ঠিকই তো আছে... মেয়েটা তো আর দ্বিতীয় সুযোগ পাচ্ছেনা... ছেলেটা কেন পাবে?

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাল্যবান এর ছবি

আমার মতে, দুটোর কোনোটাই নয়। কারণ, এই অ্যসিডসন্ত্রাস কোন একটি রোগের বিকার মাত্র। কাজেই রোগবিকার নিয়ে উত্তেজিত হয়ে দিস্তে দিস্তে কাগজ খরচ করার চাইতে বরং রোগটির উপশমের দিকে মনোযোগ দিলেই মনে হয় সবার জন্য মঙ্গল।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বর্বর দৃষ্টান্ত।

স্পর্শ এর ছবি

ফাঁসি দেওয়ার চেয়ে এই শাস্তি বেশি কার্যকর মনে হচ্ছে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দৃশা এর ছবি

এই দৃষ্টান্তে ভুল দেখি না। আর কোন হারামী এমন কাজ করার আগে অন্তত ডরাইব।
মইরা গেলে তো সে যন্ত্রনার হাত থেইকা বাঁইচাই গেল... জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় মেয়েটা কি নরকযন্ত্রনা ভোগ করতেছে এই বদমায়েশের সেটা টের পাওয়া দরকার।
-------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

শামীম এর ছবি

এই শাস্তির পরেও বদমায়েশটা সেটা পুরাপুরি টের পাবে না ... ... ... কারণ একজন ছেলে আর একজন মেয়ে ভিন্ন সামাজিক অবস্থানে থেকে ভিন্নতর প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দৃশা এর ছবি

তার খানিকটাও যদি টের পাই তাই সই। অন্ততপক্ষে সমগোত্রীয় ইতরগুলার মনে এই ভয়টা তো ঢুকবে যে কুকাম করে আমি পার পাবো না যদি আইনটা আসলেই কার্যকর হয়।
অত্যাচার যেই করুক হোক মেয়ে কিংবা ছেলে।
------------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

নদী এর ছবি

আমরা মানুষকে যে অন্যায়ের শাস্তি দেই বেশীর ভাগ সময়ই তা প্রশ্নের ঊর্ধে নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একই অন্যায়ের জন্য ভিন্ন দেশে ভিন্ন শাস্তি । চরম বলে কিছু নেই। অন্যায়ের অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার কিন্তু তার মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আন্তন চেখভ এর "bet" গল্পটি এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে। গল্পে লেখক মৃত্যুদন্ড ও যাবতজ্জীবন কারাদন্ড শাস্তির মধ্যে শ্রেয়তর দিকে আলোকপাত করেছেন।

যে অন্যায় করেছে তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করার জায়গা থাকলে সেই দুর্মর দ্বারাও সমাজের উপকার হতে পারে। "Ancient Mariner" গল্পটি (মূলত কবিতা এটি) মনে করা যেতে পারে। উদাহরণটি হয়তো কাব্যিক হয়ে গেল।

আমাদের সমাজে অন্যায়কারীকে আমরা শাস্তি বেশীই দিতে চাই; এর কারণ হয়তো
১ সমাজে বৈষম্য বেশী, কিন্তু যাদের এক্ষেত্রে কাজ করার কথা তারাই অন্যায়ে লিপ্ত
২ যারা আইন করছেন তারাই ভংগ করছেন বেশী । কিন্তু মানুষের কিছুই করার নেই, তাই
তার ক্ষোভটার মাত্রা কম নয়।

আর যে উদাহরণটা দেওয়া হয়েছে তা আরবের পূর্ব বা বর্তমান কালচার বলেই মনে হয় (যদিও ইরান আরব দেশ নয়)। বিচারটি আপাতদৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য মনে হলেও, এটি এক ধরণের বর্বরতা। এর থেকে যাবতজ্জীবন কারাদন্ড শ্রেয়তর। আমি জানি অনেকেই এর বিরোধিতা করবেন কারণ অভিযোগ রয়েছে যে আমাদের রাষ্ট্রপতিও এ ব্যাপারে আইন ভংগ করেছিলেন। আমরা মনের মধ্যে এই ধারণা পোষণ করছি যে, আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান অসৎ হবেন; যাবতজ্জীবন কারাদন্ড হলে তিনি তা কমিয়ে দিতে পারেন রাজনৈতিক কারণে, কাজেই মৃত্যুদন্ডই শ্রেষ্ঠ পন্থা! বড়ই দুর্ভাগা জাতি আমরা।

নদী

দময়ন্তী এর ছবি

এটা বর্বরতা ৷ কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারিনা ৷ ঐ মনুষ্যেতর জীবটির সাথে তার মত করেই ব্যবহার করা আমাকেও ওর সাথে একই পংক্তিতে বসায় ৷
--------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এনকিদু এর ছবি

দুইটাই বর্বরতা । তবে মনে হয় দরকার ছিল...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বিচার জিনিসটা একটু ঝামেলার। খুনের বদলে খুন, চোখের বদলে চোখ, রক্তের বদলে রক্ত - ইকুয়েশনটা এত স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড হলে 'ক্ষমা' নামক জিনিসটার অস্তিত্ব থাকতো না। ক্ষমা না থাকলে - যেহেতু প্রত্যেক মানুষই কমবেশি অপরাধ করে - বদলাবদলি বিচারের চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যেত।

ক্ষমার ক্ষেত্রে আবার কিছু জিনিস বিবেচনায় আনা উচিত। যেমন, কেউ যদি কোনো ব্যক্তির সাথে অন্যায় করে এবং অন্যায়ের পরে অনুতপ্ত হয় তথা সেই অন্যায় রিপিট হওয়ার সম্ভবনা না থাকে, সেক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার ব্যক্তিটি ক্ষমা করে দেওয়াটাই সম্ভবত বেস্ট অপশন। কিন্তু ক্ষমাটা যেখানে দুর্বলতা নির্দেশ করে এবং ক্ষমা পেলে অন্যায়ের রিপিটিশনের সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে ক্ষমার প্রশ্ন আসে না। সামষ্টিক অন্যায়ের ক্ষেত্রে আবার কোনো ব্যক্তি ক্ষমা করার অধিকার রাখেন না।

এসিড ছোঁড়া জিনিসটা ভয়ঙ্কর অপরাধ। কিন্তু এর সাথে ব্যক্তির অপরাধ প্রবণতার চাইতে অন্য অনুঘটকই সম্ভবত বেশি কাজ করে। ঠান্ডা মাথায় প্রতিবেশীর মুখে এসিড ছুঁড়ে মারা আর বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কোনো মেয়ের মুখে এসিড ছুঁড়ে মারার মোটিভেশনে পার্থক্য আছে।

শাস্তিটা ঠিক না বেঠিক হলো, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। তবে বিকল্প অপশন অবশ্যই আছে। আরেকটা ভুল ধারণা আছে আমাদের মধ্যে, তা হলো 'দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি'র সংজ্ঞা। জনসমক্ষে মুন্ডুচ্ছেদের মত ব্যাপারগুলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আরব বিশ্বে কেউ আকাম-কুকাম করতো না। একইভাবে একজন লোক ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে চাল চুরি করলেই তার হাত কেটে ফেলা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্যে পড়ে না। আমার কাছে ওরকম শাস্তি শুধুমাত্র প্রফেশনাল অপরাধীদের জন্যই বরাদ্দ করা উচিত।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

স্পর্শ এর ছবি

খিদার তাড়নায় চাল চুরি করা এক জিনিশ আর 'ভালবাসার' (?) তাড়নায় এসিড ছুড়ে মারা অন্য জিনিশ।

"দৃষ্টান্ত মূলক" এর চেয়ে কখনো কখনো "শক্ত হাতে দমন" ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়। আর 'বর্বরতা' আপেক্ষিক(!)।

এসিড মারাটা খুনের চেয়েও অনেক বড় অপরাধ।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

কঠিন প্রশ্ন!

তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, এক্ষেত্রে যেহেতু ভিকটিমের চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়েছে, কাজেই এসব পাপের শাস্তি খুব কঠোর হওয়া উচিত।
বলাইদা যেটা বললেন, যে জনসন্মুখে মুন্ডুচ্ছেদের প্রসঙ্গ, সেরকম জনসমক্ষে হবার কোন দরকার নেই, তবে ভয়াবহ শাস্তি দিয়ে সে মেসেজটা অন্ততঃ এরকম মানসিকতার বাকীদের কাছে পৌঁছানো উচিত।

আর, এই লোককে শুধু এসিডের শাস্তি দিয়ে মুক্ত করে দেয়াটাও সমীচিন না বলেই মনে করি। একইসাথে, এগুলার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়া উচিত।

(আমি মনে হয় জাজ হইলে অনেক খাইস্টা জাজ হইতাম)
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হিমু এর ছবি

আমি জাজ হলে মৃত্যুদন্ড দিতাম, ঐ লোকের সম্পত্তি ক্রোক করে বিক্রি করে মেয়েটার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিতাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ঠিক ঠিক ... ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটাতেও আমি আছি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

guest_writer এর ছবি

ঐ লোকের সম্পত্তি ক্রোক করে বিক্রি করে মেয়েটার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিতাম।
ক্ষতিপূরণ কি আসলে হতো? হাঁটুপানির জলদস্যু !

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

আমার নেটিভ জেলায় পুচকেবেলার এক নেকস্ট-ডোর-নেইবার নেটিভ ছিলেন দুদু কাকা, যাকে অবশ্য হিরণ আপার আব্বা ব'লেই বেশি রেফার করতাম আমরা। বহুদিন দেখা-সাক্ষাত ছিল না, বয়সে-একটু-বড় হিরণ-আপার সঙ্গে হঠাত্ মাঝখানে বারদুয়েক মার্কেটে টার্কেটে দেখা হয়ে যাওয়া ছাড়া। গত পরশু বাড়িতে ছোটবোনের কাছে হঠাত্ শুনলাম হিরণ আপার আব্বা মারা গ্যাছেন ক'দিন আগেই। মৃত্যু মূলত স্বাভাবিক ব'লে সে-খবরে তেমন একটা বিষ্ময়-জিজ্ঞাসা-চিহ্ন ভাসেনি আমার চোখে। কিন্তু বোন নিজে থেকেই ঘটনার বৃত্তান্তে যা যোগ করলো- তা মোটামুটি এইরকম-
দুদু কাকা'র বাসায় এখন থাকে তার এক সোমত্ত ভাগ্নি। তাকে বিয়ে করার জন্য বাড়াবাড়ি উন্মত্ত হয়েছিল এক পাড়ার-ছেলে। দুদু কাকা সেই বিয়ের প্রস্তাব তো নাকচ করেইছিলেন, নিবৃত্ত করতে না-পেরে কিছুদিন পরে জেদের চোটে ছেলের চাকরিও খেয়ে ফেলেছেন তদ্বির-বাজি ক'রে! তো, সেই পাড়ার-ছেলেই বা থামবে কেন? রিট্যালিয়েশন তো ইন্সটিঙ্কটিভ! গভীর রাতে সে দুদু কাকা'র বাড়িতে ঢোকে অ্যাসিড হাতে, সেই "সুন্দরীর মুখ ঝলসে" দিতে। দুদু কাকা টের পেয়েছিলেন তরল আজরাইল ঢুকে গ্যাছে তার ঘর গ'লে, জেগে উঠে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেন আজরাইলের মানব-মূর্তি বা সারথির সাথে। এক পর্যায়ে অ্যাসিড ছিটকে ছুটকে পড়ে দুদু কাকা'র সারাগায়ের এখানে ওখানে। হাসপাতালে তিনদিন পুড়তে পুড়তে অবশেষে চিরতরে বাঁচলেন আর-পোড়ার হাত থেকে।
এখানেও প্রপোর্শন সেন্সের একরকম অভাবই দেখা যায় দু'দিক থেকেই। এই প্রপোর্শন আদায় করাই যেখানে আইনের মূল সাধনা ছিল বুঝি-বা, যেই প্রপোর্শন থেকেই আদতে এসেছিল বুঝি-বা ন্যায়বিচার'র প্রাকৃতিক হিসেবের গ্রহণযোগ্যতাও। আইনের সেই আদি হিসেবের মধ্যেই এই যে রিট্যালিয়েশন-কে শ্রেফ হয়তো ইন্সটিঙ্কট থেকেই আবিষ্কার ক'রে কাজে লাগানো হয়েছিল, যা থেকে আরেকটু তত্ত্বে গুছিয়ে সেটারই আরেকটা ডেরাইভেটিভ হিসেবে পাওয়া গ্যালো ডেটারেন্ট (নিবৃত্তিমূলক) থিওরি অব পানিশমেন্ট-ও। যে, হাত দিয়ে চুরি করলে মানা করলেও আবার চুরি করে, তো হাতই কেটে ফ্যালো যেন আর না চুরি করতে পারে!

হুজুগে-বাঙালি গণপিটুনি দেখলে খুব দুঃখের সাথে আমার দু'টো জিনিস মনে হয় তত্ক্ষণাত্-
যদি বলা যেতো যাকে মারতে মারতে মেরে ফেলতে চাও মুহূর্তের হিড়িকে, তাকে তোমাদের মধ্যে সে-ই প্রথম আঘাতটি করবে, যে কি না এই 'জনতা'র [হায় রে মব!] মধ্যে সবচেয়ে নিষ্পাপ, তবে সেটার প্রেক্ষিতে ব্যাপারটা কতোটুকুই না বদলে যেতে পারতো!
আর, যে এভাবে অন্য একজনকে শাস্তি দিচ্ছে, তার এই হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টারও শাস্তি যদি পরে এমনই শত শত মানুষের এলোপাথাড়ি আঘাতে মৃত্যু নির্ধারিত হবে জানা যেতো, তবেই বা ক্যামন হতো?!
এমন আমারও মনে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, যে - বিশেষ ক'রে ঠাণ্ডা-মাথার পরিকল্পিত অপরাধের ক্ষেত্রে - অনুপাতে সমান পেইন ইনফ্লিক্ট না করলে তো সত্যিই সেই কালপ্রিটের মোটেই বোঝা হয় না সেই অপরাধের এফেক্ট-ও কতোটা খারাপ হয়েছিল! অ্যাসিড নিক্ষেপে সারাজীবনের জন্য কাউকে পুড়িয়ে দেয়ার শাস্তি যদি তাকেও অ্যাসিডে না পুড়িয়ে কেবল ১৪ বছরের কারাভোগ হয়, কোথায় যেন একটু হাস্যকরও লাগে ব্যাপারটা।
একইভাবে এটাও সত্য, যে এমন সিভিল ('সভ্য' অর্থে, দেওয়ানি অর্থে নয়) পর্যায়ের ক্রিমিনাল (ফৌজদারি অর্থেই) শাস্তি বা তার অনেক দৃষ্টান্তও যেমন অপরাধের হার নাটকীয়ভাবে কমাতে কখনই পারেনি কোথাও, তেমন ওইরকম আদি "আই ফর অ্যান আই, টুথ ফর আ টুথ" হিসেব এত বছর চলার পরেও কিন্তু ইরানে এই কালেও কেউ এমন অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটায়, যথেষ্ট ঠাণ্ডা মাথায়।
যেখানে কি না ওই যুদ্ধ-খেলায়-প্রতিদিন-অসভ্য-হওয়া রাষ্ট্রগুলোও সেই 'সিভিল' হওয়ার প্রতিযোগিতায় শামিল হ'তে পৃথিবী থেকে খুনের-বদলা-খুন ক্যাপিটাল পানিশমেন্টেরই অবলুপ্তির জন্য কথা বলে, ক্যাম্পেইন চালায়, সেখানে একটা জায়গায় গিয়ে খুবই ধ্বন্ধ্ব লেগে যায় 'শিক্ষিত' 'সভ্য'মনেও, যে কোনটা ভালো/ঠিক কিংবা অন্তত অপেক্ষাকৃত ভালো/ঠিক।
আইন পড়ার সময়ই ছয় বছর এইসব ধান্ধা মনের ভেতর অনেক পাক খাইছে, অনেক আউলাইছিলাম নিজে নিজেও, আর এখনও পরশুর আগেরদিনও যখন বাড়ি যাওয়ার পথে বাসের ধাক্কায় মগজ-বেরিয়ে-যাওয়া-থেত্লানো-মাথা নিয়ে মাঝরাস্তায় প'ড়ে-থাকা একটি লাশ দেখলাম 'মানুষে'র [ আমার নিজের তো মনে হয়- কোনোদিন অসাবধানেও আমার মাধ্যমে একটি মনুষ্যপ্রাণের মৃত্যু ঘটলে, সঙ্গে সঙ্গে আত্নযাতনায় গিয়ে আত্নহত্যা ক'রে ফেলবো আমি! অথচ মুরগি তো জবাই করি, জবাই-ক'রে-মারা প্রাণী তো খাই সারাদিন! জানি না! ধান্ধা লাগে খালি মন খারাপ ], তখনও খালি মনের মধ্যে ঘুরপাকই খাই, 'বিবেক-বুদ্ধি'ও ঘোলই পাকিয়ে যায় শুধু। তাই, আনিস ভাই, আপনি যখন ২০০৯ সালে এমন 'বর্বরতা' কিংবা 'দৃষ্টান্ত' কিংবা বর্বরতার দৃষ্টান্ত (?)'র দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তখনও বলতে গিয়ে হয়তো বলতে পারি না কিছুই, খালি আউলাইতে পারি ... মন খারাপ

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

দিগন্ত এর ছবি

সাধারণভাবে আমি কড়া সাজা দেবার বিরোধী, কারণ আমাদের বিচারব্যবস্থা ফুলপ্রুফ নয়। এখানে এই ছেলেটা হয়ত সত্যিই দোষটা করেছে কিন্তু ৫টায় একটা ঘটনা অন্তত এরকম ঘটবে যেখানে ছেলেটা এই কাজ করেনি অথচ তার ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে। এবার ভেবে দেখুন, নিরপরাধের ওপরেও একই শাস্তি ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনিশ্চিত এর ছবি

চোখের বদলে চোখ নেওয়াটা বর্বরতা বলেই আমি মনে করি। তাহলে প্রশ্ন আসে, এর বিচার কী হবে?

অনেক ভেবেচিন্তেও উত্তর পাচ্ছি না। কিন্তু ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিত যাতে আর কেউ এমন অপরাধ না করতে পারে। সেটা যে খুব সহজ হবে তা নয়, কিন্তু চোখের বদলে চোখ নিয়ে কোনো সুরাহা হতে পারে না।

বিচারব্যবস্থা এখনও শুধু অপরাধের বিচার করতেই ব্যস্ত, অপরাধী যাতে না জন্মায়, সেদিকে আমাদের নজর বোধহয় একটু কম।

তাই বলে আমি ওই ব্যক্তির শাস্তির বিরোধী নই; কিন্তু সেটা এমন হতে হবে যাতে তার বিচার হয়, এই বিচার সে চিরদিন মনে রাখে, পাশাপাশি পূর্বে কৃত অপরাধ মোচনে কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

স্পর্শ এর ছবি

এইটা একটা 'অনিশ্চিত' মন্তব্য! হাসি
বিচার কী হবে সেইটা হচ্ছে প্রশ্ন!

আপনি নমনীয় হলে বলতে পারতেন যে ঐ ব্যক্তি কে "সাইকো থেরাপী" টাইপ কিছু দেওয়া হোক। বিচার ব্যবস্থা যদি এটা নিশ্চিত করতে চায় "যেন আর কেউ অপরাধ না করে" তাহলে তাদের উপর "দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি" দেওয়ার ভার পড়ে!! ব্যাপার টা ঘুরে ফিরে সেই চোখের বদলে চোখ।

আর যদি এই দায় বিচার বিভাগ ছেড়ে অন্য কোন প্রতিষ্টঠানের উপর পড়ে তাহলে সেটা এক ধরণের 'ইউটোপিয়া'র আশা হয়ে যায়। তাই আমার মতে সেই ইউটোপিয়ায় পৌছানোর আগে এইটা ঠিক আছে! অন্তত এই এসিড কেসে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।