রক্তচোষা

আনিস মাহমুদ এর ছবি
লিখেছেন আনিস মাহমুদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০১/২০০৯ - ৩:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল গিয়েছিলাম বাংলালিংকে একটা সিম কিনতে। কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার পরিচিত হওয়ায় তার রুমে বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে কানেকশন কেনার সুবিধা পাওয়া গেল। তাকে বললাম, "ভাই, একটা ভাল নাম্বার দেন।" বেশ কয়েকটা নাম্বার তিনি আনালেন। তার মধ্যে কয়েকটা নাম্বার খুবই চমত্কার। আমি একটা নাম্বার পছন্দ করলে তিনি বললেন, "এটার জন্য এক হাজার টাকা বেশি দিতে হবে।" আমি বললাম, "কেন?" উত্তরে জানলাম এবং প্যাকেট উল্টে দেখলাম একটা স্টিকার সাঁটা আছে 'গোল্ডেন নাম্বার'। আমি বললাম, "এই নাম্বারে তো আর কোনো ভ্যাল্যু অ্যাডিশন নেই। আর এই নাম্বারটার পেছনে বাংলালিংকের কোনো অবদান বা কৃতিত্ব নেই... ক্রম অনুযায়ী এমনিতেই তো এই নাম্বারগুলো এসেছে। এগুলোর জন্য বাড়তি টাকা কেন দিতে হবে?" আমার বন্ধু জানালেন, এই নাম্বারটিই যদি আমি নিতে চাই এবং বাড়তি টাকা দিতে অস্বীকার করি, তাহলে এই এক হাজার টাকা তাঁর পকেট থেকে যাবে। নিরুপায় হয়ে বাড়তি এক হাজার টাকা দিয়ে পছন্দের নাম্বারটি আমি নিলাম।

মানুষের পকেট থেকে টাকা বার করে নেবার কত রকম ফন্দি যে এই কোম্পানিগুলো জানে!

শত-শত কোটি টাকা এরা খরচ করছে বিজ্ঞাপনের পেছনে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্র-পত্রিকা, বিলবোর্ড... কোথায় নেই এদের দৌরাত্ম্য? কান পাতা যায় না, তাকানো যায় না এদের অসভ্য চিত্কার আর আস্ফালনের দিকে। এর উদ্দেশ্য কিন্তু প্রচার নয়, বরং পেশী প্রদর্শন। অথচ বিজ্ঞাপনের বাজেট কমিয়ে এরা কিন্তু সহজেই পারে কলরেট কমাতে।


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"এর উদ্দেশ্য কিন্তু প্রচার নয়, বরং পেশী প্রদর্শন " -- একেবারে মনের কথা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কীর্তিনাশা এর ছবি

কলরেট এরা বাটে না পড়লে কমাতো না। ইদানিং গুজব শুনছি এরা নাকি সব একজোট বাধছে। তারপর সবাই মিলে আবার কলরেট বাড়াবে। তাদের নাকি ইদানিং ব্যাবসা নেই। গ্রামীন তো প্রতিদিন কর্মচারী ছাঁটাই করে শুনছি।

সব গুলা হারামির একশেষ।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আনিস ভাই, বিজ্ঞাপন খরচ কমিয়ে দিলে যে আমাদের মতো বিজ্ঞাপন অফিসে চাকুরেদের যে না খেয়ে থাকতে হবে। চোখ টিপি

আনিস মাহমুদ এর ছবি

শুধু এদের ওপরে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর যে নির্ভরতা দেখি, সেটা তো খুব স্বাস্থ্যকর মনে হয় না, পান্থ। এরা না থাকলে ইন্ডাস্ট্রির আকার ছোট হবে বটে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি থেকে অসুস্থ অস্থিরতা দূর হবে, ফিরে আসবে স্থিতি।

বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি শুধু নয়, চাকরির বাজারেও এদের ক্ষতিকর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। সদ্য-পাশ-করে-বেরুনো ছেলেমেয়েদেরকে বিশাল বেতনে চাকরি দিয়েছে এরা একসময়। অন্যান্য ছোট কিন্তু ভাল কোম্পানিতে কাজ করার লোক পাওয়া যায়নি। আর এখন বেশি বেতনের সেই এক্সিকিউটিভরাই ছাঁটাই হয়ে যাবার পর অর্ধেক বেতনের চাকরিও পাচ্ছে না। দুঃখজনক!

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হু, সব এজেন্সিই চায় একটি টেলিকম একাউন্ট। এটা অনেকটা আমাদের বিজ্ঞাপনী সেক্টরে স্ট্যাটাস ইস্যুই। শুধু যে বিজ্ঞাপন এজেন্সি তা কিন্তু নয়। সেদিন একটি পত্রিকা অফিসে গেছিলাম। সেখানকার মিডিয়া ম্যানেজারের সাথে অনেকক্ষণ খোশ গল্প হলো। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, যদি টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো একমাস তাকে বিজ্ঞাপন না দেয়, তাহলে সে মাসে তার অফিসের সাংবাদিকদের বেতন হবে না। এ রকম নির্ভরতার পরিণাম মোটেই শুভ নয়।
আর চাকরির ব্যাপারে যা বললেন, তা একদম সত্যি কথা। গ্রামীনফোনের সাম্প্রতিক ঘটনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য করা যায়। আবার কারো কারো কাছে শুনি অনেক বেশি টাকায় এমপ্লয়ি হায়ার করে ওয়ারিদ এখন মাস শেষে নাকি স্যালারিই দিতে পারে না। তবে ওয়ারিদে কর্মরতরাই ভালো বলতে পারবেন এ ব্যাপারে।
আর আনিস ভাই, আমি আমার মন্তব্য খানিকটা ফান করেই বলেছিলাম। মোটেই সিরিয়াস মুডে নয়। দেঁতো হাসি

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: আমি আমার মন্তব্য খানিকটা ফান করেই বলেছিলাম। মোটেই সিরিয়াস মুডে নয়।

কোনোটাতেই সমস্যা নেই।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ভাগ্যিস.....গোল্ডেন নাম্বার রিসিভ করলে আলাদা কোন চার্জ এখনো বোধ করি কেউ বসায়নি।

---------------------------------------------------------

আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

আনিস মাহমুদ এর ছবি

এদের থামাতে না পারলে বেশি দেরিও কিন্তু নেই।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

গৌতম এর ছবি

শিরোনামের সাথে একমত হতে পারলাম না। এরা শুধু রক্তচোষা নয়, পুরোপুরি রক্তমাংসহাড্ডিচোষা।

সমস্যা হলো, পুঁজিবাদ আজকে এমন জায়গায় পৌঁছেছে রক্ত চোষার জন্য মানুষের কাছে জোঁকের আসতে হয় না, বরং মানুষই এখন জোঁকের কাছে যায়। গিয়ে রক্ত খাইয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। এই যেমন আমি, কতোদিন ধরে ভাবছি গ্রামীণ ফেলে দিয়ে টেলিটক নিবো, কিন্তু ওই ভাবাটুকুই সার।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: শিরোনামের সাথে একমত হতে পারলাম না। এরা শুধু রক্তচোষা নয়, পুরোপুরি রক্তমাংসহাড্ডিচোষা।

সহমত।

উদ্ধৃতি: পুঁজিবাদ আজকে এমন জায়গায় পৌঁছেছে রক্ত চোষার জন্য মানুষের কাছে জোঁকের আসতে হয় না, বরং মানুষই এখন জোঁকের কাছে যায়। গিয়ে রক্ত খাইয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।

একটা সময়ে মার্কেটিং-এর উদ্দেশ্য ছিল ভোক্তার চাহিদা নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা। এখন মার্কেটিং-এর প্রধানতম উদ্দেশ্য হল ভোক্তার মধ্যে নতুন নতুন চাহিদা তৈরি করা আর তার মধ্যে ধারণা বদ্ধমূল করে দেয়া যে, এই পণ্য বা সেবা ছাড়া তার বেঁচে থাকাই উচিত নয়। এই রক্তমাংসহাড্ডিচোষা (শুধু ফোন কোম্পানি নয়) জোঁকগুলো এভাবেই মানুষ টানে।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ওখানেও?

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

মুস্তাফিজ এর ছবি

আনিস ভাই অন্য প্রসঙ্গে বলি
ক্রেওক্রাডাংয়ের লেখা কই?

...........................
Every Picture Tells a Story

আনিস মাহমুদ এর ছবি

জবাব নাই।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সর্বনাশ । আপনারে তো ফোন করা যাবে না আনিস ভাই । আবার না গোল্ডেন বিল উঠে যায় । হাসি

আনিস মাহমুদ এর ছবি

এগুলা হইল পচা অজুহাত। গোল্ডেন বিল উঠলে আমি দিমু। আপনে ফোন কইরেন। অসুবিধা নাই।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

দৃশা এর ছবি

উদ্ধৃতি
শুধু এদের ওপরে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর যে নির্ভরতা দেখি, সেটা তো খুব স্বাস্থ্যকর মনে হয় না, পান্থ। এরা না থাকলে ইন্ডাস্ট্রির আকার ছোট হবে বটে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি থেকে অসুস্থ অস্থিরতা দূর হবে, ফিরে আসবে স্থিতি।

এই মন্তব্য পইড়া যার পর নাই খুশি হইলাম একমত হইতে পাইরা। দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

আনিস মাহমুদ এর ছবি

আপনি খুশি জেনে আমিও খুশি।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মোবাইল কোম্পানি পলিটিক্সে বহু ক্যাচাল আছে। কিছু লোককে উচ্চ স্যালারি দিয়া বাকি অনেককেই এরা কনজ্যুমার বানাতে পেরেছে। ওই উচ্চ-স্যালারীর দোহাই দিয়া কোটি কোটি লোকের পকেট কেটে সিংহভাগ টাকাই ফোন কোম্পানির (বিদেশী) পকেটে গেছে। উপরে উপরে দেখা যায়, কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। অরিজিনাল কেস, দেশের আর্থিক ক্ষতি। অবশ্য পুরোটাই অবশ্য ক্ষতির জন্য নয়। মোবাইল কম্যুনিকেশনও একটা পণ্য, যেটাকে আবার প্রোডাক্টিভ খাতেও ব্যয় করা যায়। সমস্যা হলো, আমাদের কনজ্যুমাররা প্রোডাক্টিভ খাতে এটাকে কমই ব্যয় করেন বা আমাদের যতোটুকু দরকার এই পণ্যের সাপলাই তারচেয়ে অনেক বেশি।

যতো দিন যাবে, সমস্যা বাড়বে। নতুন নতুন প্যাকেজ দিয়ে, নতুন নতুন সার্ভিস ইনোভেট করে যতোদিন চালাতে পারে, তারপরেই সবকিছুতে টান পড়বে। উচ্চ স্যালারিওয়ালারাও ভোক্তা হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হবেন, কোম্পানির সাইজও ছোট হবে বা পাততাড়ি গুটাবে।

তবে পাততাড়ি গুটানোর আগে এভাবে ইনোভেটিভ উপায়ে পকেট কাটতেই থাকবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনিস মাহমুদ এর ছবি

খুবই ভাল বিশ্লেষণ। মন্তব্যে তারা দেবার নিয়ম থাকলে পাঁচতারা দিতাম।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

রণদীপম বসু এর ছবি

এটাকেই কি 'বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস' বলে..!

আরেকটা বিষয়। মোবাইল কোম্পানিগুলোর প্রকৃত এসএমএস রেট কতো, কেউ কি জানেন ? সেদিন ডাচ-বাংলা ব্যাংকে গেলাম গ্রাহক অ্যাকাউণ্টে আমানত ডেবিট বা ক্রেডিট হলে সংশ্লিষ্ট মোবাইলে অটো মেসেজ পাওয়ার সুবিধা যোগ করতে। আমার এক ছোট ভাই বলেছিল যে এই সুবিধাটা মূলত অনলাইন ব্যাংকিং-এর কমন গ্রাহক-সেবার অংশ। আমার জানা ছিল না। যাক্, ব্যাংকে গিয়ে বলতেই তারা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস-এ স্বাক্ষর-তথ্যাদি রাখলো। এবং এই সেবাটা যে মোটেও ফ্রি নয় এটাও জানালো। কিন্তু এসএমএসপ্রতি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কর্তনের হিসাব শুনে চমকে উঠলাম ! ৮ টাকা ! ছাপানো ফরমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, গ্রামীণ ফোন ৫ টাকা আর ব্যাংক ৩ টাকা। এটা কি সেবা ? না কি চিপায় ফেলে সাইজ করা.. !
প্রযুক্তির গলিঘুচি চিনি না আমি। অভিজ্ঞ কেউ কি বলবেন, গ্রামীণ ফোনের প্রকৃত এসএমএস রেট কতো এবং সেটা বাড়তে বাড়তে কোন্ প্রেক্ষিতে গিয়ে ৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায় ? সাথে আবার ব্যাংক কিন্তু সেবার বিনিময়ে ৩ টাকা করে নিয়ে নিচ্ছে !

[এ মুহূর্তে এই বিষয়ে একটা অণুগল্পের থিম মাথায় এসেছে। দেখি লিখা যায় কিনা !]

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনিস মাহমুদ এর ছবি

কাহিনী নতুন কিছু না। মন খারাপ না কইরা আমি যেমুন হাজার টাকা বেশি দিয়া একটা 'ভাল' নম্বর নিলাম, আপনিও নিলেন মেসেজ-প্রতি আট ট্যাকা দিয়া একটা 'সেবা'।

তবে এসএমএস ব্যাংকিং-এর এই তামশাটা জানা ছিল না। আপনের উপর দিয়া জাইনা নিলাম। আর ওইদিকে যাইতেছি না। এর চেয়ে এটিএম-এ গিয়া ব্যালান্স চেক করাই ভাল।

আর গল্পডা লেইখা ফালান দেরি না কইরা।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমার আশা আপনারা ভাল আছেন। কিন্তু আশা করলেই তো আর সব হয় না। তা আপনাদের মন্তব্যগুলো দেখেই বুঝতে পারছি। আসল কথা হলো আমরা বাঙালীরা জাতি হিসেবে বড্ড পরশ্রীকাতর। নিজে যেমনই থাকি না কেন, অন্য যেন আমার চেয়ে ভাল না থাকতে পারে - এটাই হচ্ছে আমাদের বাঙালীদের অন্যতম প্রধান চাওয়া। আর ঠিক এই কারনেই আমার ভাল থাকাটা কেবলই আমার নিজের অবস্থানের উপর নির্ভর করে না। আমার পুরোপুরি ভাল থাকা নির্ভর করে আমার চেয়ে অন্য সবার খারাপ থাকার উপর। এত কপকচানি না কচাইয়া কইতে পারি, অন্যের ভাল আমরা বাঙালীরা একদমই সহ্য করতে পারি না। এতই যখন মোবাইল সেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নাখোশ হয়ে থাকেন তবে ছেড়ে দিন না মোবাইল ব্যবহার করা।
নিজের স্বার্থ আর নিজের পাওনা আদায়ের বেলায় দুনিয়ার সর্বোত্কৃষ্ট প্রাপ্তির সাথে মিলিয়ে দেখতে চাইবেন আর দেবার বেলায় দরজা জানালা বন্ধ করে থাকতে চাইবেন তাহলে এটা কি খুব ন্যায় সঙ্গত হলো, একবার ভাবেন তারপর বলেন। আপনাদের সকলের সদয় অবগতির জন্য বলছি, আমরা এই দেশে মোবাইল সেবা গ্রহণ করছি তাবত্ দুনিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন বিনিময় মূল্যে। পারলে এই জানালায় বড় বড় বুলি ছোঁড়া ক্ষানিকের তরে বিরতি দিয়ে অন্যসব জানালায় উঁকি দিয়ে দেখে আসেন আর মেলাবার চেষ্টা করেন কি দিয়ে কি পাচ্ছেন।
বাংলাদেশের বাজার বিবেচনায় বিশ্বের আর সব দেশগুলোর তুলনায় এইখানে কলরেট কম রাখাটাই স্বাভাবিক। তাই আপনারা কম মূল্যে কথা বলতে পারছেন এর জন্য আপনাদের পানি সদৃশ রক্ত চোষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোন মতেই প্রশংসার দাবী রাখে না। আমি তার জন্য কোন প্রকার কৃতিত্বও দিতে বলছি না। কিন্তু একবার একটু চিন্তা করতে বলবো এই কারনে যে, টেলিকম্যুনিকেশনের জন্য যত ধরনের যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রয় করতে হয় তা কিন্তু বিশ্ব বাজারের উন্নত অংশ থেকেই এবং আন্তর্জাতিক মূ্ল্যেই। এখন বলুন, আন্তর্জাতিক মানের দাম দিয়ে কাঁচামাল কিনে এনে তা দিয়ে উত্পাদিত পণ্য দেশীয় দামে বিক্রি করার ধকল প্রতিষ্ঠানগুলো কি করে সামাল দিচ্ছে, ভেবেছেন কখনও? সেটা আপনাদের ভাবনার বিষয়ও নয়। তাই আপনাদের এই অপারগতা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ছে না। কিন্তু এইটাতো ভাবতে পারেন, মোবাইল কম্যুনিকেশন আমজনতার সাধ্যের মধ্যে আসার আগে আর পরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পার্থক্য নিয়ে - যেখানে ইতিবাচক বিষয়বস্তুই বেশি হবে। (বিস্তরিত বলার প্রয়োজন বোধ করছি না)।
বিদেশীদের এই দেশে বিনিয়োগ করতে বলবেন, আর তাদের কে লাভ নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখলে ঈর্ষান্বিত হবেন, নানা ধরনের কটাক্ষাপূর্ণ উক্তি করবেন - একটু ডবল্ স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে না!
আপনাদের দৃষ্টিক্ষমতার সীমাবদ্ধতার দরুণ আপনারা কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি নিয়োগকৃত/কর্মরত গুটি কয়েক সুবিধাভোগী (আপনাদের ভাষায়) মানুষগুলোর ভাগ্যোন্নয়নই দেখলেন, এইটা দেখলেন না এই সেবার সাথে আরো কতভাবে কত লাখ লাখ মানুষ নিজের ভাগ্যকে জড়িয়ে রেখেছেন, আয়ের একটা পথ করেছেন, ভালোভাবে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন পেয়েছেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি নিজেই যদি প্রকৃত প্রস্তাবে লাভবান না হতেন তা'হলে তত্ক্ষণাত মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন। যেহেতু এখন পর্যন্ত লাভ হচ্ছে তাই ব্যবহার করা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও কেন গাল দিচ্ছেন? কারন আপনি যে পরিমাণ ভালো আছেন তার চেয়ে হয়তো মোবাইল সেবা প্রদানকারী ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো ভাল আছে। তাই তাদের এই ভাল থাকা আপনার চোখে সইছে না।
সুতরাং, এই সব ফাঁকা বুলি ছোঁড়া বাদ দিয়ে বাস্তবতা অনুধাবনে মনোনিবেশ করুন আর যৌক্তিক হয়ে উঠনু মননে মানসে।
শুভ কামনা রইল।
(বি.দ্র. বানান আর বাক্য গঠনে ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর চোখে পড়বেন আশা করি)
বিনীত
-পাঠক

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ধন্যবাদ আমার ছোট্ট একটা পোস্টে এতবড় একটা মন্তব্য করায়।

কিন্তু আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না, কী কারণে আপনার মনে হল যে এই পোস্টের পাঠক ও অন্য মন্তব্যকারীরা মোবাইল ফোন প্রযুক্তির বা মোবাইল সেবাদানকারী (আসলে সেবা-বিক্রয়কারী, এবং সেটাই যথার্থ) প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপক্ষে? যেকোনো প্রযুক্তিরই ভাল ব্যবহার ও খারাপ ব্যবহার আছে। কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, এটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর... প্রযুক্তির উপর নয়।

সহজ বিষয়টি কেন যে ভাই আপনি জটিল করে দেখলেন আর এতগুলো কথা বাঁকা করে বললেন, সেটা বোধগম্য হল না। আর আমাদের রক্ত কেনই বা আপনার কাছে পানি মনে হল, সেটাও বুঝলাম না। যা বুঝলাম তা হল আপনি খুবই রেগে গেছেন আর অন্যের প্রতি অথবা অন্যমতের প্রতি আপনার শ্রদ্ধার অভাবটা করুণার যোগ্য।

এই কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনের পেছনে যে পরিমাণ পয়সা খরচ করে, তা দেখে তো মনে হয় না যে, বিশ্বের উন্নত অংশ থেকে আন্তর্জাতিক মূল্যে সরঞ্জামাদি কেনার পরও তাদের মুনাফা করতে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে।

আপনাকে দুটো বই পড়তে অনুরোধ করব: Fortune at the Bottom of the Pyramid (C K Prahlad) আর No Brands (Naomi Klein)। প্রথম বইটি থেকে বোঝা যাবে কেন এই কোম্পানিগুলো (শুধু ফোন কোম্পানি নয়) তাদের পণ্য এবং/অথবা সেবা আমজনতার কাছে নিয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় বইটিতে আমরা দেখব পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র কী।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

হিমু এর ছবি

আপনার কথাবার্তা পড়ে মনে হলো, মোবাইল সেবাদাতারা আমাদের উন্নতির জন্যে নিজেদের পাছার চামড়া বিসর্জন দিচ্ছে। লাভ না দেখলে কি তারা পড়ে থাকতো? তারা লাভ করছে, করে এসেছে, ভবিষ্যতেও করবে। তারা কোন জিনিস কী দামে এনে বেচে খাচ্ছে, সেটা দেখার দায় ভোক্তার নয়।

নামহীন বর্ণচোরা রূঢ় মন্তব্য সচলে সাধারণত প্রকাশ পায় না। তবুও ভিন্নমতের সংকুলানের খাতিরে মাঝে মাঝে দুয়েকটা প্রকাশিত হয়। আপনি যদি রূঢ়তা প্রকাশ করেই একটু আরাম বোধ করতে চান, তাহলে অভব্য ঝাড়িঝুড়ি দেয়ার আগে আবার ভাবুন।

মডারেটরদের মনোযোগ কামনা করছি এ ব্যাপারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভাই বিনীত পাঠক,
আপনার বিশদ লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে বেশ ভালো করেই তর্কে মেতে ওঠা যায়, আপাততঃ সেদিকে যাচ্ছি না। চলেন পয়েন্টে থাকি।

আন্তর্জাতিক মূল্যে কাঁচামাল কিনে লোকাল দামে বিক্রি করছে বলেই (যদিও বাকীরা অন্যান্য দেশে তাই করা হয় বলে জানি) কি একটা নাম্বার যাতে মোবাইল অপারেটরের কোনই কেরামতি নাই, তার জন্য ভোক্তাকে কেনো 'অতিরিক্ত' ফাও ফাও টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা কোন ধরণের সেবা দান! খুব সম্ভবতঃ এই পোস্টের লেখক সেই দিকটাতেই আলো ফেলতে চেয়েছেন।

ভাই টেকা কি বলদের পেছন দিয়া আসে? যেইখানে বাজারের দিকে খেয়াল রেখে মহামতি বৈদেশিক অপারেটরেরা কলরেট বিশ্বের সবচেয়ে কমে রাখে (এইটা নিয়ে আপনারে কমপক্ষে দশ পাতার একটা লেকচার দেয়া যাবে!) তারা কেনো হঠাৎ সেই মহত্ব ছেড়ে চামারত্বে রূপ নেয়, এইটা একটু ভাইবা দেইখেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

বস, এইটার কাউন্টার যুক্তিও কিন্তু দেয়া যায় ... যেই নাম্বারের আলাদা কোন উপযোগ নাই সেটা এক হাজার টাকা বেশি দিয়ে কেনার যুক্তি কি? নিছক শখ?
এমন কিন্তু না যে অন্য সিম ছিল না; তাও শুধু এই সীমটারই দাম বেশি কারণ সীমটায় কোন কেরামতি না থাক্লেও মানুষ কিনতে চায় ...আর চাহিদা বেশি থাকলে যে দাম বাড়ে সেটা তো মনে হয় ইকোনমিকসের বেসিক সুত্র, তাই না?

টেকা যাহেতু বলদের পেছন দিয়ে আসেনা সেহেতু এই সীম কেনার দরকারটা কি আমারে বলেন হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ফরিদ এর ছবি

হিম্মত থাকলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক কইরা দেখেন, আর কাম না করলে ই-বেতে গিয়ে গোল্ডেন নম্বর, প্ল্যাটিনাম নম্বর দিয়া সার্চ দ্যান।

http://shop.ebay.co.uk/items/__golden-number_W0QQQ5ftrkparmsZ72Q253A1300Q257C66Q253A2Q257C65Q253A12Q257C39Q253A1QQ_dmptZUKQ5fMobileQ5fHomeQ5fPhonesQ5fSimQ5fCardsQ5fCVQQ_trksidZp3286Q2ec0Q2em14QQ_sopZ16QQ_scZ1

টাসকি খাইবেন। যেই পাগলামি দামে এই দ্যাশে বিক্রি হয় এইগুলা।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

টাসকি খাইছি। দেঁতো হাসি

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

রায়হান আবীর এর ছবি

আমি ওয়ারিদের একদম প্রথম দিককার কাষ্টমার। রক্ত চোষার এই বুদ্ধিটি ওয়ারিদের প্রথম থেকেই ছিল- ওরা নং যেগুলো বাজারে ছেড়েছিল- সব প্যাথিটিক।

এখন গোল্ডেন, প্লাটিনাম বিক্রি করছে, ১ হাজার, ২ হাজার টাকা দিয়ে। কয়েকদিন আগে আমার কাজিন একটা কিনলো দুই হাজার দিয়ে।

=============================

আনিস মাহমুদ এর ছবি

বোঝেন তাইলে।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

রাগিব এর ছবি

রণদীপমদা উপরে যে প্রশ্ন করেছেন, অর্থাৎ এসএমএস এর রেইটের ব্যাপারে, সেইটা নিয়ে ইন্টারেস্টিং তথ্য পড়লাম। নিবন্ধটা মার্কিন কোনো এক নামজাদা পত্রিকায় ছাপা। আমেরিকাতেও মোবাইল কোম্পানি গুলার দৌরাত্ম্য মারাত্মক। বাংলাদেশের চাইতে অনেক বাজে সিস্টেম এখানে, প্রিপেইডে প্রচন্ড খরচ, আর পোস্ট পেইডেও মাসে দুইটা ফোনের ফ্যামিলি প্যাকেজের জন্য দেয়া লাগে মোট ৭২ ডলার করে, তাতে ৭০০ মিনিট কথা বলা যায়। আর এসএমএস প্রতি ১৫ সেন্ট (বাংলাদেশী ১০ টাকা!!)।

নিবন্ধটাতে দেখার চেষ্টা করেছিলো, এসএমএসের আসল cost কতটুকু। আগেই কিছুটা জানতাম, এসএমএস হলো পুরাপুরি free একটা জিনিষ। জিএসএম প্রযুক্তির মোবাইলে ট্রাবলশুটিং এর জন্য এইটা রাখা হয়েছিলো, এটা দিয়ে যে ব্যবসা করা যাবে শুরুতে সেই চিন্তা মাথায় ছিলো না। এসএমএস পাঠানো হয় কন্ট্রোল মেসেজের ঘাড়ে করে, যার জন্য মোবাইল কোম্পানিকে অতিরিক্ত কোনো ব্যান্ডউইডথ খরচ করা লাগে না। আমি যোগাযোগ প্রকৌশলী নই, যারা এই লাইনের, তারাই বিস্তারিত বলতে পারবেন। তবে এসএমএস প্রযুক্তির পিছনে মোবাইল কোম্পানিগুলোর লাভ ১০০%, তাই দাম ২ টাকাই রাখুক বা ৮ টাকা বা ১৫ সেন্ট রাখুক, এই ব্যাটাদের ষোল আনাই লাভ।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

আনিস মাহমুদ এর ছবি

কস্কী মমিন!

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

রাগিব এর ছবি

নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট। (রেজিস্ট্রেশন করতে বললে এখানে দেখুন)

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

রণদীপম বসু এর ছবি

রাগিব ভাই, নরমালি এ দেশে গ্রামীণের এসএমএস রেট, আমি যেটা জানি, সর্বোচ্চ ২টাকা করে। আমার বিস্ময়টা ছিল, তাহলে ব্যাংকিং সেবায় গিয়ে এই ২টাকা ৫টাকা হয়ে গেলো কেন ? এখানে অতিরিক্ত কোন প্রাযুক্তিক বিষয় রয়েছে কি না!
আর এজন্যেই মনে হলো, এটা কি সেবা ? না কি চিপায় ফালাইয়া চুইষ্যা খাওয়া.!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আনিস ভাই, হাজার টাকা বেশি দিয়ে "ভালো" নাম্বার নেয়াটা জরুরী ছিল কি?
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ভাই রে, আমার নিজের দরকার ছিল না... কিন্তু ঘরে আমার একটু শান্তির দরকার ছিল, যেইটার কাছে হাজার টাকা কিছুই না।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

মুজিব মেহদী এর ছবি

সেদিন আপনি কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন, স্বামীরা আসলে স্ত্রীদের ভয় পায় না, ভয় পায় অশান্তিকে। সেটারই ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখছি!
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার আক্রোশটা ঠিকাছে কিন্তু ইস্যুটা ঠিক নেই বলে আমার মত। সারা পৃথিবীর সব জায়গায় "হাতের কাছের পার্কি লট" কিংবা "মনে রাখার মত নাম্বার" এর একটা বেশী ভ্যালু থাকবেই। তবে এরা যে রক্তচোষা সেটা ভুল না। কয়েকটা মোবাইল কোম্পানী একজোট হয়ে লুটেপুটে নিচ্ছে আমাদের।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পাঠক অতিথি লিখেছেন:
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমার আশা আপনারা ভাল আছেন। কিন্তু আশা করলেই তো আর সব হয় না। তা আপনাদের মন্তব্যগুলো দেখেই বুঝতে পারছি। আসল কথা হলো আমরা বাঙালীরা জাতি হিসেবে বড্ড পরশ্রীকাতর। নিজে যেমনই থাকি না ............সুতরাং, এই সব ফাঁকা বুলি ছোঁড়া বাদ দিয়ে বাস্তবতা অনুধাবনে মনোনিবেশ করুন আর যৌক্তিক হয়ে উঠনু মননে মানসে।
শুভ কামনা রইল।
(বি.দ্র. বানান আর বাক্য গঠনে ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর চোখে পড়বেন আশা করি)
বিনীত
-পাঠক

পাঠক ভাই,

আপনার মন্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মন্তব্যটির বাড়তি চর্বি (উষ্মা, অনুযোগ, দৃষ্টিক্ষমতার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার আলোকপাত ইত্যাদি) বাদ দিলে যে বক্তব্য থাকে, তা আসলে অনেকেরই বক্তব্য। এবং আপাতদৃষ্টিতে এই বক্তব্যকে যুক্তিযুক্ত মনে হওয়াও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বক্তব্যগুলোতে যুক্তির ফাঁক আছে, প্রকৃত 'বাস্তবতা' কিংবা লাভ-ক্ষতির হিসাব অনেকটাই অন্যরকম। কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করি।

১। সর্বনিম্ন বিনিময় মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা: এ কথার ভিত্তি কি বুঝতে পারলাম না। বাংলাদেশের কলরেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশি হবো। আমার এখানের (জার্মানি) কলরেট কন্ট্রাক্ট টাইপের ওপর নির্ভর করে। যারা সর্বক্ষণ কথা বলে, তাদের জন্য ফ্ল্যাটরেট অপশন ভালো, ২০ ইউরোর (১৮০০ টাকা) মতো পার মান্থ। এই ১৮০০ টাকার মধ্যে মোবাইল ফোনের সেটের দামও ইনক্লুডেড, যা ২ বছরে কেটে নেয়া হয়। সুতরাং এখানে সর্বক্ষণ কথা বলা একজন মানুষেরও মোবাইল ফোনের বিল ৮/৯০০ টাকার বেশি হচ্ছে না। ওভারঅল লিভিং কস্টের তুলনায় এই পরিমাণটা একেবারেই যৎসামান্য। বাংলাদেশে কি এরচেয়েও শস্তা সার্ভিস দেয় তারা?

এই পয়েন্টে আমার অবশ্য শস্তা-দামী হিসাবের দরকারও নেই। মেইন প্রশ্ন হলো, মোবাইল কোম্পানীগুলো যেহেতু দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়, সেহেতু তারা লাভ না হলে সার্ভিস দিবে না, এটা সোজা হিসাব। তাতে তাদের যন্ত্রপাতি যতোই দামী হোক না কেন আর কলরেট যতো কমই হোক না কেন, লাভ তাদের হবেই। এখন বাংলাদেশে তারা যে বাণিজ্যিক সুবিধা পাচ্ছে, তা হলো এর বিশাল ইউজার বেইজ। সুতরাং পার ইউনিট কস্ট কম রেখেও বিপুল পরিমাণ মুনাফা করা যায় - এতটুকু মিনিমাম বিজনেস সেন্স মোবাইল কোম্পানিগুলোর আছে। এখানে পুরোটাই বিজনেস, তারা বিজনেস করছেন, মুনাফা করছেন, আমাদের পাছার কাপড় সামলানোর জন্য কলরেট কমিয়ে মহাপুরুষত্ব দেখাচ্ছেন না।

২। দিন না মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে: আসলে এই ফর্মূলায় সবকিছু চলে না। এরকমভাবে চললে কেউ ওপেনে মাদকদ্রব্যও বিক্রি করতে পারে, প্রস্টিটিউশনও করতে পারে এবং যুক্তি (?) দিতে পারে, আমার বেচার দরকার বেচবো, তুমি ভালো না লাগলে কিনো না। এখানে যেটা বিবেচনার বিষয়, তা হলো পণ্যটা ব্যবহার করে আমি কি উপযোগিতা পাচ্ছি আর তার পিছনে কি ব্যয় করছি - এই দুইয়ের সমীকরণ। এই দিক বিচারে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার হয় বলেই মনে হয়। আমার পরিচিত মানুষদের এক এক জনেরই দেখা যায় কয়েকটা করে সিম,কয়েকটা করে নাম্বার।নিম্ন আয়ের মানুষদেরও চাউল কেনার টাকা না থাকলে কি হবে, মোবাইল ঠিকই আছে। মোবাইল ফোনের এরকম ব্যবহার কতোটা প্রোডাক্টিভ খাতে ব্যয় হয় আর কতোটা বিলাস বা পুরোপুরো 'এমনি এমনি' ব্যয় হয়, তা চিন্তার ভার আপনার ওপরই ছেড়ে দিলাম। এভাবে একটা পণ্যের ভোক্তা হলে, বিশেষ করে,পণ্যটার সিংহভাগ কনজাম্পশন যেখানে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান কোনো খাতে ব্যয় হয় না, সেখানে এটা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গুই করতে পারে, সামগ্রিক যোগফল সুখকর হয় না।

৩। বিদেশী বিনিয়োগ: বিদেশী বিনিয়োগ মানেই উন্নয়নের স্বপ্নময় সুখকর অনুভূতি নয় ভাইয়া। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীও এই উপমহাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে এসেছিলো। হাসি

বিদেশি বিনিয়োগ কোন ক্ষেত্রে আমাদেরকে লাভবান করতে পারে? সহজ হিসাব, যখন সেই বিনিয়োগ থেকে বিনিয়োগকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি আমরা নিজেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবো। যেমন, আমি বিদেশী সাহায্য নিয়ে একটা প্রোডাক্ত উৎপন্য করলাম, যা অন্য দেশে রপ্তানি করে টাকা আসলো। সে টাকার একটা ভাগ বিনিয়োগকারী কোম্পানীটি পেলো, একটা ভাগ দেশের অর্থনীতিতে যোগ হলো।

এখন মোবাইল ফোন পণ্যের হিসাবটা লক্ষ্য করি। মোবাইল ফোনের ভোক্তা কিন্তু ১০০% আমরা নিজেরাই। সুতরাং বিদেশী বিনিয়োগে উৎপাদিত এই প্রোডাক্টটি সরাসরি রপ্তানি করা যাচ্ছে না। পুরো টাকাটাই আমাদের পকেট থেকে যাচ্ছে। এটাকে লাভজনক করতে হলে যা দরকার, তা হলো এই কম্যুনিকেশন ফ্যাসিলিটি ইউজ করে অন্যান্য খাতে উৎপাদন বেগবান করা। সেই প্রোডাক্ট বেঁচে আমরা আমাদের রিটার্নটা পাবো। বাংলাদেশে পণ্য হিসেবে মোবাইল যেভাবে ব্যবহৃত হয়, তাতে উৎপাদনশীল খাতে কতোটা যায় আর কতোটা রাত জেগে ডিজুস আলাপে অপচয় হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৪। কর্মসংস্থান: মোবাইল কোম্পানীগুলোতে সরাসরি কর্মরত লোকদের বাইরেও যে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, এই বিষয়টা আলোকপাত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু উপরের ৩ নাম্বার পয়েন্ট থেকেই বোঝা যায়, এই লোকগুলোর কর্মসংস্থানের জন্যও আমাদের পকেট থেকেই টাকা যাচ্ছে, বাইরে থেকে আসছে না। কারণ, এদের সার্ভিসও আমরাই কিনছি। সুতরাং গ্রামীণ ফোনে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার আর গলির মোড়ে কার্ড বিক্রি করা দোকানদার, দুজনেরই অর্থ সাপলাই আসছে আমাদের কাছ থেকেই। এদের কারো সার্ভিসই আমরা বাইরে বিক্রি করি না। সুতরাং এদের ভালোভাবে বাঁচার পেছনে অবদান আমাদেরই। এখন সেই সমীকরণ, যার জন্য আপনি আমাকে ট্যাগ দিতে পারবেন 'মানুষের ভালো দেখতে পারি না' বলে। হাসি একজন তারেক জিয়া যখন টাকা চুরি করে, তখন তার ঢেউটা এসে লাগে কাঁচাবাজারে, আমার মত সাধারণ মানুষের পেটে এসে লাথিটা পড়ে। মোবাইল সেক্টরে কাজ করা মানুষগুলো তারেক জিয়া নন, তারা সৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু তাদের 'ভালো থাকা'র ঢেউটা এসে পড়ে তাদের প্রতিবেশির গায়ে। কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বাংলাদেশের কত % লোক মোবাইল সেক্টরে কাজ করে? ১%, ২%? বাকি ৯৯/৯৮% কে ওই ১/২% এর 'ভালো থাকা'র খরচ যোগাতে হয়। এটা 'বাঙালি অন্যের ভালো দেখতে পারে না' ফর্মূলায় ফেলে কোনো লাভ নেই। আমার প্রতিবেশী ভালো থাকুন; কিন্তু আমার পকেট কেটে নয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জিজ্ঞাসু এর ছবি

অছ্যুৎ বলাইয়ের সাথে একমত সবকটি পয়েন্টে। চলুক

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

১। সর্বনিম্ন বিনিময় মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা: এ কথার ভিত্তি কি বুঝতে পারলাম না। বাংলাদেশের কলরেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশি হবো। আমার এখানের (জার্মানি) কলরেট কন্ট্রাক্ট টাইপের ওপর নির্ভর করে। যারা সর্বক্ষণ কথা বলে, তাদের জন্য ফ্ল্যাটরেট অপশন ভালো, ২০ ইউরোর (১৮০০ টাকা) মতো পার মান্থ। এই ১৮০০ টাকার মধ্যে মোবাইল ফোনের সেটের দামও ইনক্লুডেড, যা ২ বছরে কেটে নেয়া হয়। সুতরাং এখানে সর্বক্ষণ কথা বলা একজন মানুষেরও মোবাইল ফোনের বিল ৮/৯০০ টাকার বেশি হচ্ছে না। ওভারঅল লিভিং কস্টের তুলনায় এই পরিমাণটা একেবারেই যৎসামান্য। বাংলাদেশে কি এরচেয়েও শস্তা সার্ভিস দেয় তারা?

ইউরোপের কথা জানিনা, কিন্তু কানাডায় (এবং আমি যদ্দূর জানি ইউএসএও) মোবাইল মারাত্মক ব্যয়বহুল ... সবচে সস্তা যেটা সেটা মনে হয় পচিশ ডলারের প্ল্যান, কিন্তু কাহিণি আছে ... এর সাথে যোগ হবে কানেকশন চার্জ, মাসে আট-দশ ডলার ... এসএমএস সার্ভিস রাখতে চাইলে মাসে আরো আট-দশ ডলার ... ফাইজলামির এখানেই শেষ না, কলার আইডি সার্ভিস রাখতে চাইলে [মানে কল আসলে নাম্বার দেখতে দিবে, বাংলাদেশে এইটা ছাড়া কোন মোবাইল হয় না] আরো আট-দশ ডলার ... সবকিছুর উপরে সরকারি ট্যাক্স ... শেষ্মেষ সেই পচিশ ডলারে প্ল্যান গিয়ে দাঁড়ায় পঞ্চাশ-পঞ্চান্নতে ... তাও আবার কনট্রাক্ট নিতে হয় দুই-তিন বছরের ...

বাংলাদেশে মনে হয় কলরেট এখন মিনিটে এক টাকারো কম ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ধুসর গোধূলি এর ছবি
কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

রাগিব ভাইরে জিগান আমেরিকার কি অবস্থা দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

হিমু এর ছবি

কানাডার লোকসংখ্যাই জুলাই ২০০৮ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩৩,২১২,৬৯৬। কিংকু চৌধুরিকে গোণায় ধরলো কি না বুঝতে পারলাম না হাসি । নেট ঘেঁটে দেখলাম ওখানে দুই কোটি দশ লাখের বেশি ইউজার আছে। বেল মোবিলিটি, রজারস ওয়্যারলেস, টেলাস মোবিলিটি আর এমটিএসের মার্কেট শেয়ার ৩১%, ৩৭%, ২৮% আর ২%। মানে অনেকটা বাংলাদেশের মতোই অবস্থা, যদিও গ্রামীণ বোধহয় প্রায় ষাট শতাংশ মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে। আর এইখানে গেলে কানাডায় মানুষের করপরবর্তী গড় আয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

যার বাৎসরিক আয় বছরে কুড়ি হাজার থেকে সত্তর হাজার ডলারের মতো, সে বছরে ছয়সাতশো ডলার বিল দিতে পারে, গায়ে লাগবে না। বাংলাদেশে যাদের আয় মাসে কুড়ি হাজার টাকা, তাদেরও মোটামুটি মাসে এমনই ছয়সাতশো টাকা বিল আসে। কাজেই দুই দেশের তুলনায় তো মনে হয় ঠিকাছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

শুধু ২ টা পয়েন্ট যোগ করি,

  • মোবাইল কোম্পানীগুলি বাংলাদেশ থেকেই টাকা লোন নিয়ে, মোটামুটিভাবে তাদের ক্যাপিটাল ফর্ম করে ব্যবসা করে। লাভের টাকা পুরোটাই যায় বিদেশে। যদি বুঝতাম তারা বিদেশ থেকে বিনিয়োগের টাকা নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণভাবে, তবুও বুঝতাম বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে। সর্বশেষ আগত মোবাইল কোম্পানীটি এভাবেই কয়েকটি ব্যাংকের থেকে সম্মিলিতভাবে কর্পোরেট লোন নিয়ে ব্যবসা করছে।

  • মোবাইল কোম্পানী সর্বত্র সাধু, তাও কিন্তু না। তারেক জিয়া কিংবা নাসিমের মত লোক ভিওআইপিকে নিয়ে দুর্নীতি করেছে ঠিকই, কিন্তু দুর্নীতির মূল ভাগীদার কিন্তু দেশের মোবাইল কোম্পানীগুলি। দিনের পর দিন শ'য়ে শ'য়ে কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে। এরা এমনকী এ'টাও করেছিলো অনেক বিদেশি মোবাইল কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেছিলো যাতে সেই কোম্পানীগুলি বাংলাদেশের বিটিটিবির চেয়ে মোবাইল কোম্পানীগুলির কলের প্রায়োরিটি বেশি দেয়।

এরা ব্যবসা করতে এসেছে। এরা ব্যবসায়ী - মন্দিরে থাকা দেবতা না।


অলমিতি বিস্তারেণ

দ্রোহী এর ছবি

গোল্ডেন নাম্বার দিয়া কাম কী? ব্যবসায়ীরা সবত্রই রক্তচোষা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ, আম্রিকায় কোন ফারাক নাই।

পাঠক ভাই এত চ্যাতলেন ক্যান?

নিঝুম এর ছবি

নাম্বারটা জানতে মঞ্চায়
--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

রাগিব এর ছবি

আম্রিকাতে সবচেয়ে অসহ্য হলো ইনকামিং বিল। মানে কেউ আমাকে ফোন করলেও সেটার মাশুল আমাকে দিতে হবে। (মনে আছে, আগে সিটিসেলে এইটা ছিলো, টিএন্ডটি নম্বর থেকে ইনকামিং এ গলা কাটতো)। মাসে আমার ৭০০ মিনিট, কিন্তু এর মধ্যে টি-মোবাইল ছাড়া আর কেউ ফোন করলেই সেখান থেকে কাটতে থাকে।

আর এসএমএস!!! ভয়াবহ ... আমি টেক্সট মেসেজিং করিনা (বয়স হয়ে গেছে মন খারাপ ), তাই এসএমএসের প্যাকেজ কিনিনি। মাঝে মাঝে স্প্যাম এসএমএস আসে, সেগুলো আসার কাফ্‌ফারা হিসাবে ১৫ সেন্ট করে কাটে।

তবে, দাম এতো বেশি থাকার কারণ কিন্তু একই, প্রতিযোগিতার অভাব, মুনাফাখোর কোম্পানিগুলোর ভার্চুয়াল কার্টেল, এরকম। আর আমেরিকাতে মোবাইল যোগাযোগ তরঙ্গ বা স্পেক্ট্রামের লাইসেন্স বিক্রি হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে, সেখানে গ্রামীন বা অন্যান্য মোবাইল কোম্পানি তো বাংলাদেশে সেটা পানির দরে কিনে ফেলেছে। কাজেই বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানিরা কোনো দয়া দাক্ষিণ্য করে কম দর রাখেনি, তাদের খরচ কম বলেই তা করেছে। এখনো মনে আছে সিটিসেলের সেই ৬ টাকা মিনিটের সময়টা।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অন্যান্য দেশ থেকে বিভিন্ন সচল আমাকে টেকস্ট মেসেজ পাঠায়। আমি দুঃখে কান্দি। না পারি কইতে, না পারি সইতে। না পারি রিপ্লাই দিতে, না পারি চুপচাপ বসে থাকতে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আনিস ভাই,

সোনালী নম্বর নিলে তো সোনালী পয়সা দিতেই হবে।

আমার এখানে মান্থলি প্যাকেজ কিনলে মাসে কমপক্ষে ৪০ ডলার দিতে হবে। এখানে আবার কল আসলেও কাটে যাইলেও কাটে। আমার দশ ডলারের একটা প্রি-পেইড আছে। শুধু জরুরী কাজের জন্য রাখা (বলা তো যায়না কখন গাড়ি রাস্তার মধ্যে বসে যায়)। মাসে দশ ডলার কাটে। সেই দশ ডলারে আমি পাই ৩০ মিনিট। বোঝেন অবস্থা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

২০০৬ সালে পরিচিত একজনের কাছে শোনা। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িত। এরকম গার্মেন্টস মালিকদের কোনো এক ডিনারে বাংলালিংক গোল্ডেন নম্বরের একটি সীমকার্ড নিলামে তোলে। মূল উদ্দেশ্য হলো চ্যারিটি। কোনো এক দুস্থ/সেবা সংস্থায় ঐ সীমকার্ড বিক্রির টাকা দান করা হবে। শেষ পর্যন্ত নিলামের ডাকডাকিতে সম্ভবতঃ দশ হাজার এক টাকা বা এরকম কোনো দামে বিক্রি হয়েছিলো। শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এখন তো অন্য কিছু ভাবতে হচ্ছে...

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

কংগ্র্যাচুলেশনস বস! বাড়তি টাকা দিয়ে হ'লেও গোল্ডেন নাম্বার পাইছেন ব'লে। পারলে এক সময় একটা কল দিয়েন প্লিজ, দেখমু নে কেমন সেই চড়ামূল্যের সোনালী সংখ্যাটা!
আর, অন্যান্য যে ব্যাপার আসলো লেখায় এবং পাল্টালেখায়, সেইগুলা নিয়ে কী আর বলবো?! :-\মন খারাপ

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

ভাই হিমু:
আমি আপনাদের এই ব্লগ সহ অপরাপর ব্লগগুলোতে কখনই নিয়মিত কেউ নই। বস্তুত, আপনাদের এই ব্লগে সেইদিনই প্রথম এসেছিলাম। সামহোয়্যারইন-এ প্রকাশিত এক পোষ্টে সচলায়তন সম্পর্কে গুটিকয়েক স্তুতি বাক্য পাঠ করেই কৌতুহলবশত চলে আসা। তাই আপনাদের কাছে আমি আর আমার কাছে আপনাদের কেউ কেউ অবশ্যই একদম অপরিচিত; কয়েকজনকে সা.হো.ই এর কল্যাণে আগে থেকেই চিনি। মাঝে সাঝে ওখানে গিয়ে একটু ঢু মারি, তাই তাদের লেখা নজরে আসে। আর আমি যেহেতু আপনাদের এইখানে নিবন্ধিত কোন ব্যবহারকারী নই, তাই অতিথি হয়েই কিছু কথা বলেছি যার কিছু কিছু অংশে শব্দ চয়নে অসাবধানতার ছাপ স্পষ্ট। তাই রূঢ়তার যে দায় দিলেন, তা সজ্ঞানে মেনে নিয়ে ক্ষমা করবার আবেদন নিবেদন করলাম। তবে অছ্যুৎ বলাই ভাইয়ের ভাষায় "বাড়তি চর্বি" যুক্ত কথাগুলো বাদ দিয়ে আমি যে কথাগুলো বলতে চেয়েছি তার মধ্যে প্রবেশ করে আপনি যদি অছ্যুৎ বলাই ভাইয়ের মতো পাল্টা যুক্তি দেবার চেষ্টা করতেন তাহলে মনে হয় আরো ভাল হতো। যাই হোক অছ্যুৎ বলাই ভাইয়ের দেয়া যুক্তিগুলো নিয়েই না হয় কিছু কথা বলবার চেষ্টা করি...

১। মোবাইল সেবাখাতে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক হলো "আরপূ (ARPU = Average Ravenue Per User)" । এই অ্যাভারেজ রেভুন্যিউ পার ইউজার বা আরপু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাংলাদেশের বাজারে আপনার জার্মানীর মতো ১৮০০ টাকায় সীমাহীন ব্যবহারের অফার কার্যকর হবে না। এখানকার মানুষের জন্য প্রতি মিনিট হিসেবে এবং পারলে প্রতি সেকেন্ড হিসেবে বাণিজ্যিক অফার দিতে পারলে ভাল হয়। আর সেই হিসেবে বিটিআরসি'র বেঁধে দেওয়া মিনিট প্রতি সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২ টাকা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আর উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হলো কোন ধরনের ইনকামিং কলে কোন চার্য প্রযোজ্য নয় - যা ইতিমধ্যই অনেকেই বলেছেন।
আপনি যথার্থই বলেছেন মোবাইল সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অর্থাত্ ব্যবসা হচ্ছে তাদের মূখ্যতম (হতে পারে একমাত্র) উদ্দেশ্য। অতএব লাভ ব্যতিরেকে আর কিছু ভাবনার নেই যদি ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয়। যদিও এখন পর্যন্ত গ্রামীণফোন ব্যতিরেকে আর কেউই লাভ দূরে থাক "ব্রেক ইভেন পয়েন্ট" ছুঁতে পর্যন্ত পারেনি।

২। ভাই অছ্যুৎ বলাই মোবাইল ফোন কোন ড্রাগও নয় আবার আমাদের প্রধান খাবারও নয়। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, ড্রাগ এর ব্যবসার মতো এটি কোন অনৈতিক ব্যবসা নয়। সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আইন সিদ্ধভাবেই ব্যবসায়ীরা এই ব্যবসায় প্রতিযোগীতা করছেন। অন্যদিকে এটি আমাদের ভাতও নয় যে না খেলে জীবনধারণ করতে পারবো না। এটি আমাদের জীবনকে সুন্দর করার জন্য, স্বচ্ছন্দ্যময় করার জন্য এবং সর্বোপরি গতিময় করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখন সার্বিকবিচারে কষ্ট বেনেফিট এন্যালাইসিস করে আপনি-ই আপনার জন্য যথার্থ সিদ্ধান্তটি নেবেন, কেউ আপনার উপর চাপিয়ে দেবার অধিকার রাখে না। সেই জায়গাটি থেকে বলেছি, আপনি যদি মনে করেন মোবাইল ব্যবহার আপনার জন্য লাভজনক নয় তাহলে ব্যবহার বন্ধ করে দিন। তারপরও কিছু দায় সরকারের থাকে - রাষ্ট্রের জনসাধারণ কে প্রটেক্ট করার জন্য। তারজন্য তো সরকার ওয়াচ ডগ এবং মুরুব্বী "বিটিআরসি" গঠন করে দিয়েছে। তারাই (বিটিআরসি) কলরেটের সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করে দিচ্ছে, প্রণয়ন করছে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ।
মোবাইল কম্যুনিকেশন বাংলাদেশে চালু হওয়ার পর এবং তার আগের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে আপনিই বলতে পরবেন দেশ উন্নত হয়েছে নাকি পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
৩। বিদেশী বিনিয়োগকে উত্সাহিত না করে উপায় নেই ভাইয়া। আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে হলে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিদেশীদেরকে আকৃষ্ট করতেই হবে। তবে সরকারকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কোন খাতে তারা বিদেশী বিনিয়োগকে উত্সাহ দিবে। সে ভিন্ন প্রসংগ। আসল কথা হলো মোবাইল খাতে যে বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে তাতে আমরা কিভাবে লাভবান হলাম তা একটু ভাসাভাসাভাবে দেখে নেবার চেষ্টা করিঃ
ক) ব্যপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার তা কিন্তু অনেকটাই সফল হতে পারে এই অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়ক খ্যত ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে, কিন্তু এর সুফল দেশময় ছড়িয়ে দেবার মতো অবস্থা কতদিনে হবে তা ভাববার বিষয়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে, সুবিধাবঞ্চিত গ্রামগুলোতে। অথচ, মোবাইল নেটওয়ার্কের কল্যাণে আজ এমন সব গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলোর দোরগোড়ায় ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে যাওয়া সম্ভব যেখানে বিদ্যুত-এর খুঁটি পর্যন্ত পোঁতা হয়নি (এমনকি মামুনের খাম্বাও না)। দেশময় ছড়িয়ে থাকা এই ভৌত কাঠামোকে পরিকল্পিত এবং সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে পারলে আদৌতে দেশেরই মঙ্গল সাধন সম্ভব।
খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। প্রথম যখন এই দেশে নতুন এই প্রযুক্তি আসে তখন টাওয়ার নির্মাণ দূরে থাক টাওয়ার স্থাপন করার বিষয়টিও আমাদের অজানা ছিল। অথচ আজ আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা টাওয়ার নির্মাণ পর্যন্ত করতে পারে। নির্মাণ থেকে শুরু করে স্থাপন করার কাজে আমাদের আর বিদেশী বিশেষজ্ঞের দারস্থ হতে হয় না।
টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় এক বিষয়। প্রচুর ছাত্র/ছাত্রী এই বিষয়ে পড়াশুনে করছে কেবল মাত্র দেশীয় বাজারে এর চাহিদা তৈরী হওয়ায়।
দেশের অভ্যন্তরে সফটওয়্যার শিল্পে এই খাতের অনেক বিশেষায়িত সফটওয়্যার এর ইনেগরেটর তৈরী হয়েছে/হচ্ছে। আশা করতে পারি আগামী দিনে আমরাই পারবো প্রযু্ক্তি জগতের কমপ্লেক্স সব এপ্লিকেশনের উন্নয়ন করতে।
অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জিং কাজের বিশেষায়িত দক্ষ কর্মী তৈরী হয়েছে যাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনামের সাথে কাজ করছেন। মোদ্দা কথা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার জন্য এক্সপোউঝার পাচ্ছে আমাদের মানুষেরা। এই রকম চলতেই থাকবে...
গ) এই খাত থেকে অর্জিত আয় এর সবটাই যে আভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আসছে তা কিন্তু নয়। আমাদের এইখানে প্রচুর কল বিদেশ থেকে আসছে। আর তাছাড়া যারা আমদানী-রপ্তানী ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেক-কেই প্রচুর আন্তর্জাতিক কল করতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উন্নতিতে সেইসব ব্যবসায়ীদের ব্যয় অনেকাংশেই সংকুচিত হয়েছে। ফলে আয় বেড়েছে বা বিশ্ববাজারে কঠিন প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারছে।
ঘ) সরকার এই ধরনের ব্যবসা থেকে প্রচুর রাজস্ব লাভ করছে (প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আয়ের ৪৫ শতাংশ সরকারকে কর হিসেবে দিয়ে থাকে)।
ঙ) প্রযু্ক্তি ব্যবহারে একেবারে প্রান্তিকপর্যায়ের মানুষদেরকেও শিক্ষিত করে তুলেছে এই মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো।
চ) এত বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ দেশের অভ্যন্তর থেকে সেই সময় সম্ভব ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা নিজেরাও সাহসী হয়ে উঠেছি এই ধরনের বিনিয়োগে। এই সাহসের জায়গাটি এনে দিতে অবশ্যই বিদেশী বিনিয়োগ মূখ্য ভূমিকা রেখেছে।
ছ) এই খাত কে ঘিরে আরো কতগুলো সহায়ক/সম্পূরক খাত গড়ে উঠেছে। অনিক টেলিকম এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। শহরে শহরে প্রচুর মোবাইল বিপণী বিতান হয়েছে। পত্রপত্রিকাতে কেবল মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না বরং এর সাথে জড়িত আরসব সহায়ক পসরার বিজ্ঞাপন চলছে দেধারছে।

৪। কর্মসংস্থানের বিষয়টি এখন নিশ্চয়ই বুঝা যাচ্ছে কত ব্যপকভাবে এটি আমাদের জাতীয় জীবনে অবদান রেখেছে।

পরিশেষে আনিস ভাই, আমার প্রথম পোষ্টটিতেই আপনার গোল্ডেন নাম্বার নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একই কথা বলতে চেয়েছিলাম যা এখানে অনেকেই সঠিকভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। ভুলে যাওয়ায় আর সেটি লেখা হয়নি:)। যার যত চাহিদা তার তত দাম। বিয়ের বাজারে সুন্দরী মেয়েদের এত দাম থাকে কেন? উত্তর ঐ একই।

সবার জন্য শুভ কামনা।
ইতি
-পাঠক

হিমু এর ছবি

আমার মনে হয়, জাতীয় জীবনে টেলিযোগাযোগের গুরুত্ব নিয়ে কেউ সন্দিহান নয়। এর উপযোগিতা, উপকারিতা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন না কেউ। আনিস মাহমুদের পোস্টে বিপণনের একটি পন্থার ঔচিত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো। পাশাপাশি তিনি বলতে চেয়েছেন, বিজ্ঞাপনব্যয় হ্রাসকৃত হলে লাভ বজায় রেখে গ্রাহককে কিছুটা ছাড় দেয়া যেতো। যেমনটা হয় ঔষধের বেলায়, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ঔষধের দামের একটা বিশাল অংশই হচ্ছে এর বাজারজাতকরণের খরচ তোলার জন্যে।

প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষরা মোবাইল প্রযুক্তির কারণে উপকৃত হয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই, যদিও তাঁদের হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেবার আগে শিক্ষা পৌঁছাতে হবে, কম্পিউটার পৌঁছাতে হবে (খাম্বাও পৌঁছাতে হবে তার জন্যে) অথবা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারোপযোগী বিপুল মূল্যের মোবাইল সেট পৌঁছাতে হবে, গ্রামের মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপকৃত হবার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে উল্লাস শুরু করার উপায় নেই। আমরা কৃষকের হাতে সময়মতো সার তুলে দিতে পারি না, ন্যায্য মূল্যে জ্বালানি বা বিদ্যুৎ দিতে পারি না সেচের জন্যে, ইন্টারনেট নিয়ে কৃষক কী করবে? আজকে যেমন আপনার বাড়িতে ইউরিয়া আর মিউরিয়েট অব পটাশ বস্তায় ভরে পৌঁছে দিলেও আপনার খুশি হওয়ার কারণ থাকবে না, কৃষকের হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে দিলেও তার আহ্লাদিত হওয়ার কিছু থাকে না।

আর একটি কথা, আমি জানি না আপনি পুরকৌশলী কি না, তবে আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই ল্যাটিস টাওয়ার নির্মাণ কৌশল প্রকৌশলীদের বেশ ভালোমতোই শেখানো হয়, পিজিসিবির টাওয়ারগুলো দেখতে পারেন উদাহরণ হিসেবে। ডেসার একটি বিভাগই রয়েছে টাওয়ার নির্মাণের জন্যে। একটি ল্যাটিস টাওয়ার নির্মাণ করা এমন শক্ত কিছু নয়। শক্ত হচ্ছে স্টীল সংগ্রহ করা, যা আমরা বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বাইরে থেকে কিনে আনি। জানেন নিশ্চয়ই, সম্প্রতি বিটিআরসি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে একই টাওয়ারে একাধিক কোম্পানির অ্যান্টেনা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।

এই বিপুল বিনিয়োগের উপকারিতা নিয়ে আপনার অনেক উদাহরণ সত্য, সরকার রাজস্ব পাচ্ছে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে টেলিকমপ্রকৌশল পড়ার হিড়িক লেগে গেছে বিবিএ ফেলে। কিন্তু পোস্টের বক্তব্যই ছিলো বিপণনকৌশলের একটি দিক নিয়ে, বিনিয়োগের অনুপকারিতা নিয়ে নয়। আপনি আপনার প্রথম ইজ্যাকুলেশনে যেভাবে ভোক্তাদের রক্তকে পানির সাথে তুলনা করেছিলেন, সেদিকে তাকিয়ে বলতে হয়, মিনিটে সাড়ে সাত টাকা করে আমরা বিল দিতাম একসময়, এই পানির মতো রক্তঅলা ভোক্তারাই। টাকার দাম তো কমেছে সময়ের সাথে, এখনকার এক টাকার সাথে তুলনা করলে সেই আমলের সাড়ে সাত টাকার দাম এখন এগারো টাকা ছাড়িয়ে যাবার কথা।

গ্রামীণ ফোন তো এগারো বছর ধরে অপারেট করছে। টেলিকম ব্যবসায় অ্যামরটাইজেশন পিরিয়ড কতোখানি? ব্যবসা শুরুর বছর দুয়েকের মাথায়ই কি কেউ লাভের মুখ দেখতে পারবে নাকি? ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে কি কমপক্ষে সাত থেকে আট বছর লাগার কথা নয়?

আপনি যদি কোন মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হয়ে থাকেন, অনুগ্রহ করে ভোক্তার রক্ত সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিবর্তনের একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। না পারলে, এভাবে প্রকাশ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার পরিশীলিত দ্বিতীয় উত্তরের জন্যে ধন্যবাদ জানবেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুজিব মেহদী এর ছবি

আমাদের নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী তো ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের ঝারিটারি দিতে লেগেছেন। কৌশলটা যে খুব কাজে দিয়েছে তা বাজারে এর সুপ্রভাব দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে। বহুজাতিক ফোনবাণিজ্যওয়ালাদেরও ডেকে এনে কিছু ঝারি দেওয়া দরকার। আমি জানি না, তৃতীয়বিশ্বের বাণিজ্যমন্ত্রীদের এরকম বেনিয়াদেরও ঝারি দেবার মতো মনোবল থাকে কি না?
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।