বিবর্তন-১ : একটি ধারণার সূচনা

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/১১/২০১১ - ৪:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ বিবর্তন তত্বটি সম্পর্কে বিভিন্ন পর্বে ধাপে ধাপে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো, এটি সময়সাধ্য ও পরিশ্রমের কাজ| প্রচুর তথ্য প্রয়োজন এবং সাধারণ বাংলায় প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য| লেখাতে বিজ্ঞানীদের নাম ও কিছু অংশ অবিকৃত রাখার জন্য ইংরেজীতেই দেওয়া হলো, এটি সূচনা মাত্র| বিভিন্ন পর্বে আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে সাধারণ আলোকপাত করার ক্ষুদ্র চেষ্টা করবো| সকল ধরনের আলোচনা-সমালোচনা আন্তরিক ভাবে আহব্বান করছি| নতুন নতুন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করলে খুশি হবো]

[বিবর্তন সম্পর্কিত প্রথম লেখাটির লিঙ্ক]

বিবর্তন একটি বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রথম থেকেই আলোচিত-সমালোচিত| এই মতবাদটি নিয়ে যে বিপুল পরিমান আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে তা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক সমাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সমালোচিত হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও, এটিকে সব থেকে বেশি সমালোচনা ও অবজ্ঞার স্বীকার হতে হয়েছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে| তাই অভিকর্ষ-মহাকর্ষ সংক্রান্ত তত্ত্ব-মতবাদ কিংবা বহুল প্রচলিত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এর মতো বিবর্তনকে সাধারণ সমাজে এখনও মেনে নেওয়া হয়নি কিংবা বলা যায় মেনে নেওয়ার মতো একটি সাধারণ পরিবেশ তৈরী হয়নি| এর পেছনে অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে বিবর্তন সম্পর্কে জানার অনীহা, তত্ত্বটি বোঝার বা উপলব্ধি করার মতো সাধারণ জ্ঞানের অভাব, সাধারণের উপযোগী ব্যাখ্যার অভাব এবং সবার উপরে ধর্মীয় সৃষ্টিতত্বের সাথে এর প্রকাশ্য বিরোধ| তাই ধাপে ধাপে এর অতীত থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রচলিত সামাজিক মতবাদের সাথে এর বিরোধের আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো|

বিবর্তন

প্রথমেই উল্লেখ্য যে, বিবর্তন তত্বের উদ্ভাবক হিসেবে মহান বিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন এর নাম যে পরিমান আলোচিত হয়েছে এবং জীবদ্দশায় তাকে যে পরিমান বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাতে একটি সত্য সবসময় ঢাকা পড়ে যায় আর তা হলো, প্রাণীজগতের বিবর্তনের ধারনাটি অনেক পুরনো এবং এই ধারণার উদ্ভাবক বিজ্ঞানী ডারউইন নন, বরং এই ধারণা তার জন্মের অনেক আগেই পৃথিবীতে আলোচিত হয়েছে| তাই "বিবর্তন"-এটিকে ব্যাখ্যা করার আগে এই ধারণার উদ্ভাবক ও বাহকদের জানার চেষ্টা করবো|

প্রানিজগত যে বিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে, এই ধারনাটি সর্ব প্রথম প্রস্তাব করেন প্রাচীন গ্রীস এর দার্শনিক Empedocles, কিন্তু খুব দ্রুতই এই ধারনাটি পরিত্যাক্ত হয় সে সময়ে| পরবর্তিতে দীর্ঘ সময় পড়ে ১৭০০ শতাব্দীর দিকে তত্কালীন প্রকৃতিবিদেরা অনুধাবন করেন যে, প্রাণীজগতের আপাত দৃষ্টিতে অপরিবর্তনশীল অবস্থা আসলে একটি ভ্রম| বরং এটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল এবং পরিবর্তিত হয়েই আজকের অবস্থায় এসেছে| বিভিন্ন সময়ে ৫ জন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বিবর্তনের মতবাদটি নতুন ভাবে তুলে ধরার এবং যুক্তিসঙ্গত বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে কাজ করেন| তারা হচ্ছেন, ফ্রান্সের Georges Louis de Buffon (১৭০৭-১৭৮৮) এবং Jean-Baptiste de Lamarck (১৭৪৪-১৮২৯), ইংলেন্ড এর Charles Lyell (১৭৯৭-১৮৭৫), Charles Darwin (১৮০৯-১৮৮২) এবং Alfred Russel Wallace (১৮২৩-১৯১৩)| তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ডারউইন এর জন্মের অনেক আগে থেকেই এই ধারণাটির পেছনে কাজ চলেছে| তাহলে শুধুমাত্র বিজ্ঞানী ডারউইন এর বিরুদ্ধাচারণ এতটা প্রকট কেন? কারণ হিসেবে বলা যায়, ডারউইন তার ও তার পূর্ববর্তী সময়ের কাজগুলোকে প্রমানসাপেক্ষ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নথিবদ্ধ করে বিবর্তনের ধারনাটিকে একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক মতবাদ অথবা তত্ত্বতে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছেন|

Buffon ছিলেন সর্বপ্রথম প্রকৃতিবিদ যিনি প্রস্তাব করেন, জীব জগতের বিবর্তন সম্ভব| কিন্তু তিনি তার এই ধারণার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ও প্রমান কিংবা একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে যেতে পারেননি|

Lamarck ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরী| যিনি Buffon এর ধারণা ও কাজটি যেখানে অসম্পূর্ণ ছিলো সেখান থেকে কাজ শুরু করে এগিয়ে নিয়ে যান এবং তিনি জীবজগতের বিবর্তনের একটি ব্যাখ্যা প্রদান করতে সক্ষম হন| তিনি এটিকে সর্বপ্রথম ১৮০১ সালে একটি বই হিসেবে প্রকাশ করেন এবং আরও বিস্তারিত ভাবে আর একটি বই প্রকাশ করেন ১৮০৯ সালে| Lamarck জীবের দৈহিক গঠনের উপর কাজ করেন এবং তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন| (মজার বিষয় হচ্ছে, ১৮০৯ সালেই Darwin এর জন্ম|) তিনি প্রানীদের দৈহিক গঠনের তুলনামূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি ধারণার প্রস্তাব করেন যে, যেসব প্রাণীর (যেমন-কুকুর এবং বিড়াল) দৈহিক গঠনের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান, তাদের পৃথিবীতে অবস্থানগত সময়সীমার মধ্যেও সাদৃশ্য আছে বা তারা প্রায় একই সময়সীমার মধ্যে পৃথিবীতে বিচরণ করে থাকে| তিনি আরও বলেছিলেন যে, দৈহিক ভাবে বৈসাদৃশ্য প্রাণীর (যেমন- ঘোড়া এবং কীট) পৃথিবীতে বিচরণের বা উত্পত্তির সময়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান| এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন যে, যথেষ্ট সময়ের ব্যাবধানে এক ধরনের জীব অন্য ধরনের জীবে বিবর্তিত হতে পারে| তার মতবাদ অনুযায়ী, পৃথিবীতে কোনো প্রাণী সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যায়না, বরং তারা বিবর্তিত হয়ে অন্য ধরনের জীবে পরিণত হয়| কিন্তু পরবর্তিতে তার এই ধারনাটি ভ্রান্ত প্রমানিত হয়, এখন আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি যে, সময়ের সাথে সাথে কোনো একটি বিশেষ প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়| এমন অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং এদের কোনো বংশধরও নেই| তিনি আরও প্রস্তাব করেছিলেন যে, জীব জগতের বিবর্তন কোনো কারণ ছাড়াই ঘটে না, এর পেছনে থাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য| আর এভাবেই ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়ে সর্বোচ্চ সঠিক পর্যায়ে রুপান্তরিত হয়, যেমন- মানুষ| কিন্তু তার এই ধারণাটিও ভ্রান্ত প্রমানিত হয়, এখন আধুনিক বিজ্ঞান মানুষ প্রজাতির বর্তমান পর্যায়কে সর্বোচ্চ সঠিক বলে নির্দিষ্ট করে কখনই একটি কীট এর বিবর্তনের সাথে এর তুলনা করে না| বরং সব প্রজাতির জীবেরই তাদের বিবর্তনের নির্দিষ্ট ধারা ও প্রক্রিয়া রয়েছে| Lamarck গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল এর "Great Chain of Being" এই ধারনাটি যা কিনা St.Thomas Aquinas (১২২৫-১২৭৪) আরও এগিয়ে নিয়ে যান, এর মাধ্যমে কিছুটা অনুপ্রানিত ছিলেন| Lamarck সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী যিনি বিবর্তনকে একটি মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন|

Lyell একজন অঙ্কের প্রফেসর ছিলেন যিনি পরবর্তিতে ভূতত্ত্ববিদ্যার দিকে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তিনি পৃথিবীর বয়স ও প্রানের উত্পত্তির সময়কাল নিয়ে কাজ শুরু করেন| তিনিই প্রথমে প্রাণীর প্র্স্তুরিভূত দেহবশেষ বা ফসিল নিয়ে কাজ করতে যেয়ে ধারণা করেন যে, মাটির নিচে বিভিন্ন স্তরে জমা হওয়া ফসিল এর সাথে এদের বিচরণের সময়সীমার মিল আছে| তিনি ধারণা করেন, যে ফসিল মাটির উপরের দিকে স্তরে অবস্থিত তার থেকে মাটির আরও নিচের দিকের স্তরে অবস্থিত ফসিল এর বয়স বেশি এবং সেই প্রাণীর পৃথিবীতে বিচরণের সময়কালও বেশি পুরনো| এর পিছনে পৃথিবীর ভুস্তরের ধাপে ধাপে পরিবর্তন ও পরিশোধনের প্রভাব রয়েছে বলে বুঝতে পারেন| কিন্তু তার পক্ষে ভূতাত্ত্বিক সময়কাল যাচাই করা সম্ভবপর ছিলোনা প্রযুক্তির অভাবে| ১৯০০ শতাব্দীর দিকে প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভূস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সময়কাল নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া সফল হয়|

Charles Darwin বিবর্তনের ধারণাটির পেছনে প্রমান-তথ্য পর্যবেক্ষণ ও জোগাড় করতে H.M.S. Beagle নামের একটি জাহাজ নিয়ে দক্ষিন আমেরিকার Galapagos দীপপুঞ্জে যাত্রা করেন এবং যথেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করেন| পরবর্তিতে তিনি On the Origin of Species নামের একটি অসাধারণ বই প্রকাশ করেন যা জীবজগত সম্পর্কিত প্রচলিত ধারনাকে পরিবর্তন করে এবং যথেষ্ঠ বিতর্কের জন্ম দেয়| তাই দেখা যাচ্ছে যে, বিবর্তন- এই ধারনাটি Darwin আবিষ্কার করেননি, তার অনেক আগেই এই ধারণার উপরে কাজ হয়েছে| বরং Darwin বংশানুক্রমিক বিবর্তনের ধারণাটির উদ্ভাবক| তিনিই সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন যে, একটি প্রজাতি তার পূর্বপুরুষ থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার পরিবর্তনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়| এই ধারণার সাথে তিনি আর একটি যুগান্তকারী ধারণার উদ্ভাবক, সেটি হচ্ছে "প্রাকৃতিক নির্বচন", এটির একটি সরল ব্যাখ্যা হচ্ছে, জীব তার পারিপার্শিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয় এবং একটি প্রজাতি থেকে শাখা-প্রশাখায় আরও বংশধর বিস্তার লাভ করে| তাই Darwin এর উদ্ভাবন হচ্ছে দুটি- ১. বংশানুক্রমিক বিবর্তন ও ২. প্রাকৃতিক নির্বচন| যার মধ্যে ২য় ধারনাটি অধিকাংশ সময় ভুল ভাবে ব্যাবহৃত এবং অধিকাংশ মানুষ এর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পোষণ করেনা|

Darwin একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির পাখির (Finche) ২টি আলাদা বংশধর পর্যবেক্ষণ করেন| বংশানুক্রমিক বিবর্তন এই পর্যবেক্ষণ থেকে ধারণা করা সম্ভব| তিনি লক্ষ্য করেন, ২টি বংশধরই একটি পূর্বপুরুষ থেকে সময়ের সাথে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়েছে| যাদের একটির আছে কিছুটা পাতলা বা হালকা চষ্ণু, অন্যটার ভারী| তিনি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লক্ষ্য করেন যে, ভারী চষ্ণুর বংশধরটি গাছের শক্ত বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে আর পাতলা চষ্ণুর বংশধরটি গাছের নরম বীজ খেয়ে জীবনধারণ করে| তার মানে সময়ের সাথে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির Finche থেকে খাদ্যাভাসের উপর ভিত্তি করে কিছুটা দৈহিক গঠনের পরিবর্তনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ২টি আলাদা বৈশিষ্ট্যের বংশধর উত্পত্তি হয়েছে| এই বিবর্তনটি প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে| যেখানে নরম বীজ অপ্রতুল সেখানে পাতলা চষ্ণুর Finche এর সংখ্যাও কম এবং সেখানে ভারী চষ্ণুর Finche ভালোভাবে বংশ বিস্তার করেছে| আবার উল্টোটাও দেখা গেছে যেখানে শক্ত বীজ অপ্রতুল| তাই দেখা যাচ্ছে যে, পারিপার্শিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করেই প্রাকৃতিক ভাবে বিবর্তন ঘটে থাকে এবং এই বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে পরিবর্তিত হয়| ঠিক একই ভাবে প্রাণীজগতের অন্যান্য জীবও তাদের বাসস্থানের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে বংশানুক্রমে পরিবর্তিত হয়, তাদের এই দৈহিক পরিবর্তন ধাপে ধাপে ঘটে থাকে যা তাদের পূর্বপুরুষের থেকে প্রাপ্ত|পরবর্তিতে আরও উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হবে|

তাহলে একটি ধারণা পাওয়া গেলো যে, বিবর্তন একটি সুপ্রাচীন ধারণা| আর এর উদ্ভাবক Darwin নন| বিবর্তন বর্তমানে শুধু ধারণা নয়, এটি একটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত তত্ত্ব| তাহলে সরল ভাবে বলতে গেলে, বিবর্তন হচ্ছে জীবজগতের সময়ের সাথে ধাপে ধাপে পরিবর্তন| এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, কোনো প্রজতির শুধুমাত্র একটি প্রাণী বিবর্তিত হয়না, পুরো একটি অংশ বা দল বিবর্তিত হয়| আর তাদের এই বিবর্তন সম্পূর্ণভাবে তাদের পারিপার্শিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল, যা কিনা তাদের জীবন যাপনের ধরণ থেকে শুরু করে তাদের বংশবিস্তার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে| জৈবিক বিবর্তন সামাজিক, অর্থনৈতিক অথবা সাংস্কৃতিক বিবর্তন থেকে আলাদা| জৈবিক বিবর্তনকে কখনই সামাজিক বিবর্তনের সাথে তুলনা করা সঠিক নয়| জীবের জন্ম ও বিবর্তন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যা সময় সাপেক্ষ এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল| তাই একটি প্রজাতির ধাপে ধাপে বংশানুক্রমিক পরিবর্তন অনেকটা সময় জুড়ে থাকে, তাই বিভিন্ন সময়ের বংশধরদের ফসিল থেকেই এদের পরিবর্তনের মধ্যে সেতুবন্ধন করা সম্ভব|

[পরবর্তিতে ধাপে ধাপে বিবর্তন তত্ত্ব ও এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় এবং এর সাথে সামাজিক প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধ আলোচনা করা হবে| ]


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

দারুণ উদ্যোগ!

ইংরেজী শব্দগুলো বাংলায় অনুলিখন করে দিতে পারেন। উচ্চারণ নিয়ে খুবই বেশি দ্বিধা থাকলে ব্রাকেটে ইংরেজী টাও থাকতে পারে। বাংলা লাইনের মধ্যে হঠাৎ ইংরেজী হরফে এসে কেমন ধাক্কা লাগে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ| বাংলায় অনুলিখন করে পরবর্তী পর্বগুলো আরও সরল করার চেষ্টা করবো ... হাসি কিঞ্চিত অসুবিধের জন্য দুঃখিত..

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ন এর ছবি

"বিবর্তন হচ্ছে জীবজগতের সময়ের সাথে ধাপে ধাপে পরিবর্তন" অথার্ত evolution বা transformation, তাহলে natural selection কি? শব্দগুলো খুব গোলমেলে লাগে আশা করি আপনের পরবর্তি লেখা থেকে জানতে পারব।

হিমু এর ছবি

ন্যাচারাল সিলেকশন হচ্ছে বিবর্তনের এনজিন।

সময়ের সাথে ধাপে ধাপে পরিবর্তন বললে বিবর্তনের পুরো চেহারাটা পরিষ্কার হয় না। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন, জীবজগত বহু সংখ্যক ছোটো ছোটো পরিসরে বিভক্ত। এই পরিসরগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকতে পারে, কিংবা বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে। জী্ব এই পরিসরগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিসরে বিচরণ করে। যেসব পরিসরে তার বিচরণ, সেই পরিসরের চলকগুলোর সাথে জীব নিজেকে অভিযোজিত করে। যেমন ধরুন, তাপমাত্রা একটা চলক হতে পারে, বাতাসের বেগ একটা চলক হতে পারে, সুপেয় পানির সহজপ্রাপ্যতা একটা চলক হতে পারে। সময়ের সাথে এই চলকগুলো বদলায়। বিবর্তন হচ্ছে এই পরিসরগত চলকের পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের স্বার্থে জীবের রূপগত ও গুণগত পরিবর্তন।

প্রাকৃতিক নির্বাচন কেন বিবর্তনের এনজিন? ধরা যাক একটি পরিসরে চারটি জীব বাস করে। তারা ঘাস খায়, কিন্তু পাতা খায় না বা খেতে পারে না। এখন যদি ক্রমশ ঐ পরিসরে ঘাসের পরিমাণ কমতে থাকে, তাহলে কী ঘটবে? পুষ্টির খাতিরে ঐ জীবগুলিকে পাতা খাওয়া শুরু করতে হবে। জীব চারটি যদি ঘাসের পাশাপাশি পাতা খাওয়া রপ্ত করতে না পারে, তাহলে তারা প্রকৃতির নিয়মে লুপ্ত হবে। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ক্রমশ যদি চারটি জীবের একটি ঘাসের সাথে পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে, তাহলে সে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। ব্যাপারটি একটি প্রজন্মে ঘটে না, ঘটে বহু বহু প্রজন্মের মধ্য দিয়ে। এই দুর্যোগটাকে যদি প্রকৃতির একটা ফিল্টার হিসেবে ধরা হয়, তাহলে ঐ একটি জীবই সেই ছাঁকনি গলে বেরিয়ে আসতে পারলো। এটাই প্রাকৃতিক নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের চাপে যা ঘটলো, সেটা বিবর্তন।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রথমত লেখককে ধন্যবাদ। প্রয়োজনীয় বিষয়ে লেখার জন্য।

এইবার, অফ টপিক:

পুষ্টির খাতিরে ঐ জীবগুলিকে পাতা খাওয়া শুরু করতে হবে। জীব চারটি যদি ঘাসের পাশাপাশি পাতা খাওয়া রপ্ত করতে না পারে, তাহলে তারা প্রকৃতির নিয়মে লুপ্ত হবে। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ক্রমশ যদি চারটি জীবের একটি ঘাসের সাথে পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে, তাহলে সে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশের অবস্থা দেখে মনে হইতেছে, এই ঘটনা সত্য।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও|

কিন্তু আগেই বলেছি, সামাজিক বিবর্তন এর সাথে জৈবিক বিবর্তনের তুলনা করা যাবেনা| দুটি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস, এই বিষয়েও পরের পর্বগুলোতে আলোচনা থাকবে|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অরফিয়াস এর ছবি

সুন্দর সাবলীল ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ন এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু ভাই

অরফিয়াস এর ছবি

"বিবর্তন"- শুধুমাত্র এই শব্দটিকে সরল বাংলায় ব্যাখ্যা করতে গেলে "বিবর্তন হচ্ছে জীবজগতের সময়ের সাথে ধাপে ধাপে পরিবর্তন" এভাবে বলা যায় কিন্তু বিবর্তন যেহেতু একটি প্রক্রিয়া তাই এটি ঘটতে হলে অবশ্যই একটি অনুঘটক বা চলক এর প্রয়োজন| সেটি হচ্ছে natural selection বা প্রাকৃতিক নির্বাচন| দেখুন লেখাতে উল্লেখ আছে যে, বিবর্তন সম্পূর্ণভাবে জীবের পারিপার্শিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল, তাই পরিবেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে (যেমন-জলবায়ু, বায়ুর গতিপথ, গাছের প্রজাতি এবং সংখ্যা, তৃণের ধরণ, বীজের ধরণ ইত্যাদি) তার সরাসরি প্রভাব পরবে সেখানকার বাসিন্দাদের উপর| এখন এই প্রভাব এর কারণে জীবজগতেও পরিবর্তন আসবে|

যেমন ধরা যাক, "ক" এবং "খ" দুটি প্রজাতি, এদের মধ্যে একজন গাছের নরম ফল খেয়ে বাঁচে, অন্যজন গাছের শক্ত ফল খেয়ে বাঁচে| কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে নরম ফল উত্পাদনকারী গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া শুরু করলো, সেক্ষেত্রে "ক" প্রজাতির দুটি উপায় থাকবে, অন্যত্র চলে যাওয়া যেখানে নরম ফল উত্পাদনকারী গাছের সংখ্যা যথেষ্ট অথবা শক্ত ফল খাওয়ার মাধ্যমে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করা| যেহেতু নরম ফল উত্পাদনকারী গাছের সংখ্যা কমছে ধীরে ধীরে তাই "ক" প্রজাতির প্রানীদের মধ্যে খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়বে| এই প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কিছু সংখ্যক প্রাণী অন্যত্র চলে যাবে এবং নরম ফল খেয়েই জীবন ধারণের চেষ্টা করবে, কিন্তু কিছু সংখ্যক "ক" প্রজাতির প্রাণী পূর্বের জায়গাতেই থেকে যাবে কিন্তু ধীরে ধীরে শক্ত ফল খাওয়া শুরু করবে এবং যত দ্রুত নরম ফল উত্পাদনকারী গাছের বিলুপ্তি হবে তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে সেই থেকে যাওয়া "ক" প্রজাতির প্রানিদেরও তত দ্রুত শক্ত ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে| এভাবে সেই "ক" প্রজাতির একটি নির্দিষ্ট পূর্বপুরুষ থেকে আরেকটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত বংশধর তৈরী হবে "গ"- যারা কিনা তাদের খাদ্যের জন্য শক্ত ফলের উপর নির্ভর করবে| আর খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের জন্য বংশধর "গ" এর দৈহিক পরিবর্তনও সাধিত হবে সময়ের সাথেসাথে| দেখা যাবে যে, পূর্বপুরুষ "ক" এর তুলনায় বংশধর "গ" এর চোয়াল শক্তিশালী হবে যেহেতু তারা শক্ত ফল খেয়ে জীবন ধারণ করছে|

এটাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের বৈশিষ্ট্য| আর এভাবেই প্রজাতি বিবর্তিত হয় পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

পৃথ্বী এর ছবি

জীববিজ্ঞানী ডগলাস ফুতুয়ামার সংজ্ঞা- any consistent difference in fitness among phenotypically different classes of biological entities। সহজ বাংলায়- একাধিক ফেনোটাইপের মধ্যে যদি এক বা একাধিক ফেনোটাইপ জনপুঞ্জে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়, তবে বলা হয়ে থাকে যে সেই ফেনোটাইপগুলোর উপর "প্রাকৃতিক নির্বাচন" "ক্রিয়া" করেছে। "প্রাকৃতিক নির্বাচন" বা natural selection শব্দটার ব্যবহার থেকে মনে হতে পারে যে এটি একধরণের "শক্তি", কিন্তু এটি আসলে ফ্রিকোয়েন্সির পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য নিছক একটা শব্দ ছাড়া কিছু না।

দুই দিনের বৈরাগী এর ছবি

মহৎ উদ্যোগ...... বিবর্তন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবো বলে আশা রইলো।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ... আপনার আশা পূরণ করবার আন্তরিক চেষ্টা থাকবে .. হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তাপস শর্মা এর ছবি

বিস্তারিত ভাবে শুরু করেছেন দেখে খুব ভালো লাগছে। আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ... আপনাদের ভালো লাগাটাই সম্বল ... আগ্রহটা ধরে রাখবেন আশা করি .. হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সুরঞ্জনা এর ছবি

চলুক

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

অরফিয়াস এর ছবি

হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

চলুক সম্ভব হলে বিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে প্রচুর উদাহরণ দিয়েন। উদাহরণ তো সবখানেই , কেবল গুছিয়ে লেখার ব্যাপার।

অরফিয়াস এর ছবি

হাসি উদাহরণ অবশ্যই দিবো, তবে বিবর্তন সম্পর্কে খুটিনাটি ব্যাপারে আসার আগে সমাজের সাথে এর সম্পর্কটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি, তা না হলে হয়তো একটা ফাঁক থেকে যাবে, আর কিছু রিসার্চ পেপার দেখছি লেখাটার জন্য, কিছুটা সময় লাগবে, আপনার ভ্রমন কাহিনী পড়া হয় কিন্তু অনেক সময়ই মন্তব্য করা হয়না, তবে আপনার লেখাগুলো অনুসরন করি সবসময়... একটা কথা আমার আগ্রহ পুরাতত্তে, তাই ওসব জায়গায় গেলে তা নিয়ে লিখতে ভুলবেন না কিন্তু ...হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

গৌতম এর ছবি

বেশ লেখা চলুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

স্বাধীন এর ছবি

বিবর্তন নিয়ে আরো লেখা আসুক। তবে একটি অনুরোধ করবো, এই ধরণের লেখাগুলোতে যতটুকু সম্ভব সুত্র উল্লেখ করা উচিত যেন কোন ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ না থাকে। আপনি নিশ্চয়ই কোন বইয়ের সাহায্য নিয়ে লিখছেন। আর কিছু না হোক, সেই বইয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন। বিবর্তন নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে অনেক লেখা হয়েছে। সেখানে বিবর্তন নিয়ে একটি আর্কাইভও আছে। আপনি সেই আর্কাইভেরও সাহায্য নিতে পারেন এবং রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আর্কাইভ থাকলেও বিবর্তন নিয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় না। তাই আপনার সিরিজও চলতে থাকুক। আপনার আগের লেখাটিও পড়লাম। বেশ চমৎকার এবং গোছানো হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।