চলচ্চিত্র: দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: শনি, ২৬/০৫/২০১২ - ১:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

the-flowers-of-war-poster

নাম: দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার
দৈর্ঘ্য: ১৪৬ মিনিট
বিষয়: নানকিং ম্যাসাকার, ধর্ষণ, চীন-জাপান যুদ্ধ
পরিচালক: ইমও জহাং
দেশ: চীন
ভাষা: চাইনিজ (নানকিং প্রাদেশিক), ইংরেজি

যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে বরাবরই আগ্রহ বেশি, বেশিরভাগ সময় চেষ্টা করি এধরনের প্রেক্ষাপটে তৈরী ভালো চলচ্চিত্রগুলো সংগ্রহে রাখতে। এরকম অনেক ভাষার চলচ্চিত্র সংগ্রহে রাখার একটি সুবিধে হচ্ছে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধকালীন সময়কে যাচাই করা। মানুষের ক্রোধ-ভালোবাসা, জীবন-মৃত্যু এরকম অসংখ্য অনুভূতি ও পরিস্থিতিগুলোকে একই জায়গায় পরস্পরের বিপরীতে রেখে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। মিশ্র অনুভূতির এই জটিল রসায়ন বিশ্লেষণে, একটি ভালো চলচ্চিত্রের থেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম আর কি হতে পারে।

যেকোনো যুদ্ধে নারী এবং শিশু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নারীদের সব থেকে বেশি নির্যাতনও ভোগ করতে হয়। ইতিহাসে এর অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থিত। "মাস রেপ"- ধর্ষণ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মানসিক মারনাস্ত্র। এর নিকৃষ্ট প্রয়োগ বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সব জায়গাতেই লক্ষনীয়। নারীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেই শুধু নয়, এর প্রয়োগ প্রতিপক্ষের মনোবল ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। এরকমই ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হচ্ছে "নানকিং ম্যাসাকার", ইম্পেরিয়াল জাপান কর্তৃক চীনের নানকিং প্রদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও ধর্ষণ পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে ভয়ঙ্কর, যুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উধাহরণ। এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়, যার মধ্যে নারীরা শিকার হয় গণধর্ষণ ও হত্যার। ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন চীনের প্রায় তিন লক্ষ-চার লক্ষ মানুষ এই সময়টিতে জাপানের আগ্রাসী সৈন্যবাহিনীর হাতে নির্যাতনের পরে মৃত্যুবরণ করে। এই ইতিহাস সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা ছিলো, চলচ্চিত্রটি দেখার পরে হতবাক হয়ে রইলাম। পরিচালক অসাধারণ দক্ষতায় মানবিকতার চরম বিপর্যয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ১৪৬ মিনিট সময়টুকুর মধ্যে। এক মুহুর্তের জন্যও পর্দা থেকে চোখ ফেরানো দুষ্কর।

220px-The_Flowers_of_War_english_poster

একগাদা চলচ্চিত্রের মাঝখানে ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো এটি, শুরু করে একটু এগিয়ে এগিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ আটকে গেলো। স্থির করতেই হলো না দেখলেই নয়। ১৯৩৭ সালের চীন-জাপান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে অসংখ্য চরিত্রের মিশেলে ফুটে উঠেছে সেই সময়ের মানুষের নানান অনুভূতিগুলো। প্রিয় অভিনেতা ক্রিস্চিয়ান বেএল দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন আবারও। তার চরিত্রটির উপর ভর করে কাহিনী এগিয়েছে অদ্ভুত একটি গতিতে।
কখনো মানুষের ভালোলাগা-খারাপলাগার অনুভূতিতে চরিত্রগুলো হয়ে গেছে অনেক আপন, কখনো আলাদা আলাদা ভাবে চরিত্রগুলো নিয়ে গেছে এক অদ্ভুত ঘোরলাগা পরিবেশে। মানুষের ভালো-মন্দ দিকগুলো উঠে এসেছে অকৃপণভাবে, একটা সময় দর্শক নিজে থেকেই লক্ষ্য করবে চরিত্রগুলো তাদের অতি সাধারণ খোলস থেকে বের হয়ে একটি অসাধারণ উচ্চতায় নিজেদেরকে নিয়ে গেছে, যেখানে মানুষের ভালো-মন্দ এক হয়ে একটি আলাদা জগৎ তৈরী হয়েছে।

প্রধান পাঁচটি চরিত্র আলাদা করা যায় পুরো সময় থেকে, যাদের গুরুত্ব ছিলো বেশি। প্রথমেই আসে একজন সাধারণ মরটিসিয়ান জন মিলার এর চরিত্রে ক্রিস্চিয়ান বেএল, তার অনবদ্য অভিনয় যেকোনো দর্শকের জন্য আলাদা প্রাপ্তি। আমার মনে হয়েছে তার জীবনের সেরা অভিনয়গুলোর একটি। এর পরে মেজর লি এর চরিত্রে তং দাঅই, দেহপসারিনী যু মো এর চরিত্রে নি নি, ছাত্রী সুজুয়ান এর চরিত্রে জহাং এবং চার্চের সেবক অনাথ জর্জ এর চরিত্রে হুয়াঙ। এরা প্রত্যেকেই তাদের অভিনয়ের জন্য প্রশংসার দাবীদার।

FlowersOfWarPoster

ক্যাথিড্রালের ফাদার এর মৃত্যুতে যুদ্ধকালীন সময়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে নানকিং এ আসে জন মিলার, এখানে দেখা হয় জাপানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে চলা কনভেন্টের দুজন ছাত্রীর সাথে যাদের মধ্যে একজন সুজুয়ান। তারপর ঘটনা এগিয়ে চলে। যুদ্ধকালীন দৃশ্যগুলো দারুন দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধ্বংসস্তুপ এর আড়ালে চলা গেরিলা যুদ্ধ এবং প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলো যথেষ্ট নিঁখুত এবং বিস্তৃত। পোশাক এবং সেট দুটোই উচ্চ-প্রশংসার যোগ্য। একটি ক্যাথিড্রাল এবং কনভেন্ট বিদ্যালয়কে ঘিরেই মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে।

জাপানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে এই কনভেন্টে আশ্রয় নেয় বেশ কিছু ছাত্রী একই সাথে ঘটনাচক্রে সেখানে আশ্রয় নেয় নানকিং প্রদেশের বেশ কয়েকজন দেহপসারিনী। এই কনভেন্টটিতেই আসে জন মিলার। এখানে মূলঘটনাটিকে একটি অদ্ভুত কিন্তু শক্তিশালী দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে সমাজের তথাকথিত অস্পৃশ্য কয়েকজন নারী তাদের বিপরীতে সদ্য কিশোরী কনভেন্ট ছাত্রী, আবার দৃঢ় মনের সেবক জর্জ তার বিপরীতে অর্থলোভী জন মিলার। এই বিপরীত চরিত্রগুলোকে একসাথে একটি জায়গায় আবদ্ধ রেখে যুদ্ধের চরম পরিস্থিতিতে তাদের মানবিক অনুভূতিগুলোকে উত্থান-পতনের মাধ্যমে এক জাদুকরী ছন্দে পরিচালনা করা হয়েছে। শক্তিশালী প্লট, সাধারণ কিন্তু গভীর সংলাপ এবং যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, উপাদানগুলো এক হয়ে পুরো সময়টি দর্শককে বিমোহিত করে রাখবে এটা নিঃশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

চলচ্চিত্রটির ঘন্টাখানেকের সময় জন মিলার যখন সেনাদের ধর্ষণের হাত থেকে ছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য নিজের কাপুরুষোচিত মনোভাবকে ছুড়ে ফেলে চার্চের ফাদারের পোশাকে, নিজের জীবন বাজি রেখে বাইরে এসে কঠিন স্বরে তার মূলচরিত্রে প্রবেশ করে তখন স্বতস্ফুর্ত হাততালি আটকে রাখা সম্ভব নয়। একই ভাবে যখন দেহপসারিনী হিসেবে সমাজে অবহেলিত-ঘৃণিত কয়েকজন নারী তাদের ক্ষুদ্র বৈচিত্রহীন জীবনের বাইরে এসে নিজের জীবন উত্সর্গ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছুপা হয়না, তখন সাধারণ মানবিক গুনাবলীর বাইরে তাদের দেবত্বের আসনে বসানো কম হয় বৈকি। এভাবেই চলচ্চিত্রটি মানুষের জীবনের অজস্র ক্ষুদ্র অনুভূতি ও পরিস্থিতিগুলো বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেছে অসংখ্য জটিল সমীকরন যার হিসেব মেলানো সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, অতিপ্রাকৃত ঈশ্বর আর মানুষের মাঝে প্রাচীন দন্দ্বের অনবদ্য প্রকাশও এই চলচ্চিত্রটি।

"দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার"- আমার দেখা চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে অন্যতম সেরা, এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। জীবন-মৃত্যু, সৌন্দর্য্য-ধ্বংস, যুদ্ধ-ভালোবাসা এরকম অসংখ্য বিপরীত পরিস্থিতির সংঘর্ষে, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কেউ জয়ী হলো কিনা তা হয়তো প্রকাশ পেলোনা। কিন্তু এই যে দর্শককে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি চুর্ণবিচুর্ণ করে আবার প্রতিটি মুহুর্তে নতুন করে গড়তে বাধ্য করা হলো, এর জন্য সাধারণ প্রশংসা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত অন্যসব চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে আমি "দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার"-কে প্রথম সারিতে রাখবো অবশ্যই।

the-flowers-of-war02

[চলচ্চিত্রের পোস্টারগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]


মন্তব্য

জ.ই মানিক এর ছবি

রিভিউ ভালো পেলাম।
মুভিটা দেখার আগ্রহ জন্মালো পড়ে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ। হ্যাঁ, মুভিটি দেখলে ঠকবেননা এটা বলতে পারি, আসলেই ভালো।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

জ.ই মানিক এর ছবি

দেখে ফেলবো নিশ্চিত, সময় করে।

অরফিয়াস এর ছবি

হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মরুদ্যান এর ছবি

মুভিটা দেখার ইচ্ছা আছে। নানকিংয়ের উপর ২ পর্বের একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম, এক চীনা কলিগ দেখিয়েছিল, ওদের ভাষায় করা, ইংরেজি সাব ছিল।

বিভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে জাপানিরা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

হ্যাঁ, নানকিং এ বিভৎস অত্যাচার চালিয়েছিল জাপানিরা। এই সম্পর্কে দেখলে কিংবা পড়লে আসলেই অবাক লাগে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অমি_বন্যা এর ছবি

মুভিটা দেখা হয়নি। আমিও ওয়ার মুভি অনেক পছন্দ করি। এটা দেখি দেখে ফেলতে হবে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

হ্যাঁ, দেখে ফেলুন। তবে কিছু কিছু অংশে বিভৎসতা আছে, তবে সেটা প্রাসঙ্গিক।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

অরফিয়াস ভাই ভালো রিভিউ। আসলেই সংগহে রাখার মত ছবি। গল্পটা চমত্কার সন্দেহ নেই। প্রতিটি চরিত্র কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে স্বার্থপরতা ছুঁড়ে ফেলে আত্ম-উতসর্গে এগিয়ে আসে। অর্ফিয়াস এর মত আমিও recommend করছি "Flowers of war"।

- জাভেদ হোসেন

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

প্রতিটি চরিত্র কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে স্বার্থপরতা ছুঁড়ে ফেলে আত্ম-উতসর্গে এগিয়ে আসে।

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখে ফেলতে হবে---

জাপানের ইতিহাস অনেক রক্ত ক্ষয়কারীর ইতিহাস ।

কড়িকাঠুরে

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

হ্যাঁ, দেখে ফেলুন, আশা করি ভালো লাগবে। সাম্রাজ্যবাদী জাপানের ইতিহাস আসলেই রক্তক্ষয়ী একটি ইতিহাস।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

ঝাং ইমু'র ফিল্ম বেশ আগ্রহ নিয়ে দখি সেই রেড শরগাম থেকে।
কিন্তু পয়সা/বাজেট বাড়ার সাথে সাথে ঝাং এর ধার কমে গেছে।
এই ফিল্ম টা একেবারেই পয়সা ও টাইম নষ্ট। ভুয়া ফিল্ম!

অরফিয়াস এর ছবি

এই পরিচালকের সব চলচ্চিত্র আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তবে চলচ্চিত্র যতটুকু বুঝি তাতে এটি মাস্টারপিস না হলেও ভুয়া বলতে পারছিনা। সবার আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকাটাই স্বাভাবিক তবে যেভাবে বললেন, পয়সা ও সময় নষ্ট এবং ভুয়া, সেটার সাথে একেবারেই একমত হতে পারছিনা। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে আইএমডিবি রেটিং এর উপর খেয়াল রাখি কারণ দেখেছি এরা মোটামুটি ঠিকঠাক রেটিং দেয়, সেক্ষেত্রেও এটির রেটিং ৭.৫, যা যথেষ্ট ভালো বলেই মনে করি।

আমি চলচ্চিত্র বোদ্ধা নই, কিন্তু বিভিন্ন ভাষার অজস্র চলচ্চিত্র দেখে অন্তত ভালো-খারাপ নির্ণয় করতে খুব একটা অসুবিধে হয়না।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

দুর্দান্ত রিভিউ!

অরফিয়াস এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কীর্তিনাশা এর ছবি

চলুক

দেইখালামু !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

হ দেইখালান। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ব্রুনো এর ছবি

চমৎকার রিভিউ চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নুভান এর ছবি

ছবিটা ডাউনলোডে দিয়েছি, কাহিনী শুনে মনে হচ্ছে ছবিটা গত আড়াই বৎসর আগে মুক্তি পাওয়া 'সিটি অফ লাইফ এন্ড ডেথ - নানজিং! নানজিং!' এর পটভূমিতে তৈরী করা। সময় পেলে ওই ম্যুভিটিও দেখবেন।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

হ্যাঁ, চলচ্চিত্রটি নিয়ে খুঁজতে গিয়ে কোথাও মনে হয় দেখেছিলাম, এর প্রেক্ষাপটে 'সিটি অফ লাইফ এন্ড ডেথ - নানজিং! নানজিং!' এর প্রভাব রয়েছে। তবে আলাদা স্বাদ পাবেন ক্রিস্চিয়ান বেএল এর অভিনয় থেকে, আমার মতে ওর উপস্থিতিই চলচ্চিত্রটির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আশরাফুল কবীর এর ছবি

#আপনাকে ধন্যবাদ অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ছবিটির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

#ভালো থাকুন বাঘের বাচ্চা

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সৌরভ কবীর  এর ছবি

দেখবো বলে তালিকায় যোগ করলাম। পোস্টারগুলিও অনেক সুন্দর। চলচ্চিত্র নিয়ে এধরণের লেখা আরো পড়তে পারলে ভালো লাগবে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

আসলে দেখা হয় অনেক চলচ্চিত্রই, কিন্তু যেটা নিয়ে না লিখলেই নয় সেরকম কিছু নিয়েই খালি লিখতে বসি। আশা করি এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে ভবিষ্যতে। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন দেখলাম সিনেমাটি। দেখে চুপ হয়ে বসে আছি।

সৌরভ কবীর

অরফিয়াস এর ছবি

এই একই অনুভূতি আমারও ছিলো দেখার পরে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জিয়াঙসুর এক বাসিন্দার কাছে শুনেছিলাম ১৯৩৭-১৯৩৮-এ শুধু নানজিঙ নয় পূর্বচীন সাগরের তীর ও নিকটবর্তী ঝেজিয়াঙ, সাঙহাই ও জিয়াঙসু প্রদেশের ছোট-বড় কোন শহরের বাসিন্দারা জাপানী হানাদারদের কর্তৃক গণহত্যার হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাই নানজিঙ হত্যাকাণ্ডের নামে ঐ অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যায় আসলে কতজন নিহত হয়েছিল সেটা জানা খুব কঠিন। তবে সংখ্যাটি কোনভাবেই পাঁচ লাখের কম নয়। মাত্র ছয় মাসে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে অত্যন্ত জঘন্য, কুৎসিত ও নৃশংস কায়দায় হত্যা করা এবং তার সাথে দুই লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করা অকল্পনীয়। এই বীভৎস গণহত্যা আর ধর্ষণের যে দায়সারা গোছের যে বিচার হয়েছে সেটাকে ন্যায়বিচার বলার কোন উপায় নেই। এখানে "তবুও তো বিচার হয়েছে" জাতীয় কোন কথা বলে কারো আত্মতৃপ্তি পাবার কোন অবকাশ নেই।

গণহত্যার সাথে গণধর্ষণ চালানো জাপানী হানাদারদের একটা কমন কায়দা। এটা তারা কোরিয়াতে করেছে, ফিলিপিন্‌সে করেছে, ইন্দোনেশিয়াতে করেছে, ইন্দোচীনে করেছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানীদের দ্বারা সংঘটিত মোট হত্যার সংখ্যা এক কোটি ছয় লাখের মতো, ধর্ষণের সংখ্যার পরিসংখ্যান জানতে পারিনি। এক ক্ষুদ্ধ দক্ষিণ কোরীয়কে বলতে শুনেছিলাম, "জাপানীরা আমাদের উপর যে ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়েছে, আর তারা দুনিয়াব্যাপী যে পাপ করেছে তাতে ঈশ্বর সত্য হলে গোটা জাপান দ্বীপপুঞ্জ একদিন সাগরে তলিয়ে যাবে"।

পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আর তাদের সহযোগীরা নৃশংস গণহত্যা আর গণধর্ষণ করার কায়দাটা জাপানী হানাদারদের সাথে কী দুঃখজনকভাবে মিলে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

তাই খুব আশ্চর্য লাগে এই চীনারা কি করে একাত্তরে পাকিস্তানীদের গনহত্যায় সায় দিয়েছিল।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একদম ঠিক বলেছেন!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অরফিয়াস এর ছবি

চীন এর এই অবস্থানগত ব্যাপারটি নিয়ে আমার এখনো বিস্ময় রয়েছে, হয়তো রাজনৈতিক কারণে অবস্থান ছিলো এরকম। কিন্তু তারপরেও পাকিস্থানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গনহত্যার পরেও এই ধরনের সমর্থন, আসলেই অবাক করার মতো।

তবে চীন কখনই এই অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য চায়নি, কারণ বর্তমানে দেখতে গেলে ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, ভারতের সাহায্য, চীনের অবস্থানের জন্য একটি অনুঘটক বলে মনে হয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবই মানলাম। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা জাপানের সাথে গণচীনের ফারাকটা কোথায় থাকলো? নিজেকে বিশ্বের মেহনতী মানুষের বন্ধু, শোষণ-সাম্রাজ্যবা্দের শত্রু, মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের দুশমন, প্রগতিশীল বলে দাবীর ভিত্তিটা কোথায় থাকলো? মাওলানা ভাসানী আর শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবর্তে সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব, নরঘাতক ইয়াহিয়া আর সাম্রাজ্যবাদের কুত্তা ভুট্টো কোন বিচারে সমর্থন ও সহযোগীতার যোগ্য বলে বিবেচিত হল?

লক্ষ করবেন, আজ পর্যন্ত কোন বই, প্রবন্ধ, রিপোর্টে ১৯৭১-এর ঘটনাবলী নিয়ে চীনা সরকারের নিজস্ব কোন ভাষ্য প্রকাশিত হয়নি। সবাই নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অরফিয়াস এর ছবি

হ্যাঁ, আমি একমত। যেকারণেই হোক, পাকিস্থানকে সমর্থন করা কখনই আদর্শগত ভাবে চীনের সাথে যায়না। কিন্তু তারা এখনো সেই একইভাবে পাকিস্থানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে !!

কিজানি হয়তো কূটনীতিতে আদর্শ এর কোনো স্থান নেই।

মাওলানা ভাসানী আর শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবর্তে সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব, নরঘাতক ইয়াহিয়া আর সাম্রাজ্যবাদের কুত্তা ভুট্টো কোন বিচারে সমর্থন ও সহযোগীতার যোগ্য বলে বিবেচিত হল?

লক্ষ করবেন, আজ পর্যন্ত কোন বই, প্রবন্ধ, রিপোর্টে ১৯৭১-এর ঘটনাবলী নিয়ে চীনা সরকারের নিজস্ব কোন ভাষ্য প্রকাশিত হয়নি। সবাই নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন।

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অরফিয়াস এর ছবি

হ্যাঁ, আপনার সাথে পুরোপুরি একমত। সাম্রাজ্যবাদী জাপানের আগ্রাসন যথেষ্ট রক্তক্ষয়ী ও নৃসংশ ছিলো। এই অঞ্চলের ইতিহাসে জাপানের অত্যাচার যথেষ্ট যদিও সেটি নিয়ে মিডিয়া কভারেজ অতটা নয়। শুধুমাত্র পশ্চিমা মিডিয়াড় কারণে ওই এক "পার্ল হারবার" নিয়েই যা একটু হইচই হয়।

তবে যতটুকু পড়ে দেখলাম, সেধরনের কোনো বিচার হয়নি নানজিং ম্যাসাকার এর জন্য। কোনমতে দায়সারাভাবে একটা রিপোর্ট মনে হয় পেশ করা হয়েছিলো। আর এর মূল হোতাদের একজন প্রিন্স আশিকা পার পেয়ে যায় এ থেকে। আর জাপানের উচ্চ-পদস্থ অনেকেই এই নৃশংসতা অস্বীকার করেছিলো, শুধু তাই নয়, জাপানের সরকারের মতে মাত্র ৪০,০০০-৫০,০০০ ছিলো মৃতের সংখ্যা। আর চীন এতটাই বিধ্বস্ত ছিলো যে, সঠিক প্রতিবেদন ও তদন্ত তারাও প্রকাশ করতে পারেনি, তবে ইতিহাসবিদদের মতে শুধু নানজিং এর মৃতের সংখ্যা ছিলো ৪,০০,০০০ এর মতো। ধর্ষণের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি আজও, তবে ধারণা করা হয় কোনভাবেই ২,০০,০০০ এর কম হবেনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কাজি মামুন এর ছবি

অসাধারণ রিভিউ! মুভিটি দেখতেই হবে! অরফিয়াস ভাইকে অনেক ধন্যবাদ! যুদ্ধের ছবি আমারও খুব পছন্দ! সেভিং প্রাইভেট রায়ান, সিন্ডলারস লিস্ট ইত্যাদি মনে দাগ কেটে আছে!

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

হ্যাঁ, যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো আসলেই মনে দাগ কেটে যায়, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরী যেগুলো।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তাপস শর্মা এর ছবি

চলুক চলুক

দেখার আগ্রহ আছে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ তাপসদা। হাসি

হ্যাঁ, দেখে ফেলো।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আদিল মাহমুদ এর ছবি

ছবিটি এমাসেই দেখলাম। অসাধারন লেগেছে।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

চলুক আমার এক চীনে বন্ধু ছিল সেই শহরের, মাঝে মাঝে বলত সেখানেই জাদুঘরগুলোর কথা।

অরফিয়াস এর ছবি

হ্যাঁ, আমি আসলে মোটামুটি জানতাম নানকিং এর যুদ্ধের ব্যাপারে, কালকে এই ছবিটি দেখার পরে আসলেই অবাক হলাম ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সুমাদ্রী এর ছবি

রিভিউটা পড়েই ছবিটা দেখার প্রতি আগ্রহ জন্মালো, টরেন্ট থেকে নামিয়ে দেখলাম। মুগ্ধ হলাম। যুদ্ধ মানুষকে কত বদলে দেয়। কাপুরুষ হঠাৎ খুঁজে পায় বীরত্ব। আবার সবার পরিচিত ভাল মানুষটিও হয়ে যায় বেঈমান রাজাকার। দুর্দান্ত ভাই ফিল্মটাকে ভুয়া বললেন কেন বুঝতে পারলাম না। ফিল্মের বোদ্ধা নই আমি, তবে সংগীত, অভিনয়,চিত্রনাট্য সবকিছুই খুব নাড়া দিয়ে গেছে এ ছবির।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

হ্যাঁ, আসলেই যুদ্ধ মানুষকে বদলে দেয় চরমভাবে।

ফিল্মের বোদ্ধা নই আমি, তবে সংগীত, অভিনয়,চিত্রনাট্য সবকিছুই খুব নাড়া দিয়ে গেছে এ ছবির।

আমিও সহমত।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারানা_শব্দ এর ছবি

রিভিউ ভালো লাগলো, দেখতে হবে। তবে আমার কাছে আজীবন একটা ছবিই সেরা যুদ্ধের ছবি হিসেবে থাকবে- ইনোসেন্ট ভয়েস। হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অরফিয়াস এর ছবি

ইনোসেন্ট ভয়েস- দেখা হয়নি, আপনি যখন বললেন, একবার দেখতে হবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নুভান এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছবিটা কিছুদিন আগেই দেখেছি। ভালো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অরফিয়াস এর ছবি

নজরুল ভাই, যেদিন রাতে ছবিটা দেখলাম সেদিনই রিভিউটা না লিখে পারলামনা। ছবিটা আসলেই মনে দাগ কেটে গেছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

শফকত  এর ছবি
অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।