প্রজন্মের শুভ শক্তির উপর আস্থা রাখুন

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৯/২০০৯ - ২:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে সচলে একজন অতিথি লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
লেখার শিরোনাম ,"জামাতের হাত কতো লম্বা হতে পারে? হেগো থামানোর কোন উপায় কি নাই আর?"
লেখাটি পড়লে প্রচন্ড হতাশা জাগে , ক্ষোভ জাগে , অসহায় বোধহয়। লেখক জানাচ্ছেন বাংলাদেশে জামাত কোনঠাসা থাকলেও ইংল্যান্ডের মাটিতে তারা শক্ত শেকড় গেড়ে বসেছে। এর কার্যকারন নিয়ে লেখকের বিশ্লেষন খুবই সুন্দর , বন্ধুবান্ধব আর পরিবারের সদস্যদের প্রাচুর্য মহারানীর মাটিতে থাকায় এর অনেকখানিই আমার আগে থেকেই জানা।

সেটা নিয়েই আবোলতাবোল কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১.
আপনারা কি শিবিরের মিছিল দেখেছেন কখনো ? অন্যদল যখন ভিড় করে মিছিল করে তখন শিবির খুব সুন্দর করে সারিবদ্ধ হয়ে মিছিল করে, তাদের মিছিল হয় দীর্ঘ ; দেখলে মনে হয় বিশাল সুশৃংখল মিছিল। আদতে কি তাই ? উহু , শুভংকরের ফাঁকি আছে সেখানে। আসলে কম লোক দিয়ে বড় মিছিল দেখানোর এই গোয়েবলসীয় চিন্তা থেকেই শিবির এরকম মিছিল করে ।

এই কাজটা তারা সবসময় সবজায়গায় করে থাকে। মার্কেটিংয়ের ভাষায় যেটাকে ব্র্যান্ড ভিজিবিলিটি বলে, এই কাজে শিবির খুব দক্ষ। তবে সেই দক্ষতা তারা দেখাচ্ছে গত প্রায় ৩০ বছর ধরেই , তাতে কী এমন লাভ হয়েছে সেটা হিসেব করে দেখার প্রয়োজন আছে।

একারনেই লেখক বলতে পারেন ,

"আমি হলফ করে বলতে পারি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে জামাতের যে প্রভাব তা যে কোন দলের চেয়ে বেশী। "

আসলেই কী ? একজন আদি সিলেটী হিসেবে আমার আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব ইংল্যান্ডের উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিমে ছড়িয়ে আছে। তাদের থেকে যদি স্যাম্পল নেই তাহলে সেখানে জামাতি একটাও দেখি না আমি। হু, সেটা হয়তো স্যাম্পলিংয়ের সমস্যা, অন্যপিঠে হয়তো একজন জামাতি তার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে জামাতি ছাড়া আর কিছু দেখে না।

কিন্তু প্রতিবছর ইংল্যান্ডে যে বৈশাখী মেলা হয় , সেখানের হাজার হাজার লোক? ঐ মেলাকে হারাম ঘোষনা করে ফতোয়া দিতে তো জামাতিরা কম দেয় না , শিবিরের ক্যাডার রহিম আর তার সাঙপাঙরা যে সেখানে প্রতিবছর লিফলেট বিলি করে মেলার বিরোধিতা করে । তো ? ইংল্যান্ডের সবগুলো টিভি চ্যানেল, সবগুলো মসজিদ ,সবগুলো সংগঠন পকেটে পুরেও তো জামাতিরা সেই জনসমাগম ঠেকাতে পারে না দেখলাম। প্রতিবছরই লোক বাড়ছে , তাই নয়কি ?

ইংল্যান্ডে জামাতিদেরকে শক্তিশালী মনে হওয়ার অন্য কারন আছে। আমাদের আগের প্রজন্ম , আমাদের বাবাকাকারা অধিকাংশই সিলেটের বহুল প্রচলিত এলটুএল ( লাঙল টু লন্ডন)। লেখাপড়ার অভাবে , নানা ধরনের হীনমন্যতায় , সরাসরি নিম্নবিত্ত থেকে আসায় তাদের পক্ষে মূল স্রোতধারায় চলে যাওয়া সম্ভব হয়নি, তারা নিজেদের মাঝেই বন্দি হয়ে ছিলেন। এই লোকরা তাদের জীবনে রেস্টুরেন্ট ব্যাবসা থেকে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন, এখন তাদের আখেরাতের হিসাব নিকাশের পালা। শেষ বয়েসে এসে তাই আর বসুন্ধরায় জায়গা না কিনে বেহেশতে জায়গা কেনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। স্কুল কলেজ হাসপাতালে টাকা দিলে যেহেতু বেহেশত বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না তাই তারা মাদ্রাসা ও মসজিদে গন টাকা ঢেলে বেহেশত নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন।
এরা হচ্ছেন সহজ সরল লোক, তারা টিভিতে সুললিত আয়াত শুনে বেহেশতে যাওয়ার আশায় দান করতে থাকেন। এই দানের সাথে জামাতিদের রাজনীতিতে সমর্থন দেয়ার কোন বিষয় আছে কি না সেটা ইংল্যান্ডে বাসকারী সচলরা ভালো বলতে পারবেন , তবে আমার চোখে পড়েনি। (হু, কথা হচ্ছে জামাতিরা এই টাকাগুলো পেয়ে তাদের কুকাজে লাগাচ্ছে, তবে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়ে গেলে এগুলোও আর কতোবছর চালাতে পারবে সেটা আমরাও দেখব আশাকরি।)

এই প্রথম প্রজন্ম প্রায় শেষের দিকে। দ্বিতীয় প্রজন্মের বৃটিশ বাঙালিদের মাঝে শিক্ষা অনেক বেশি , সেখানে জামাতিরা কতোটুকু আসন গেড়ে বসতে পারবে সেটা হয়তো আগামীতে দেখা যাবে তবে সাধারন বিবেচনায় সেই সম্ভাবনা কমের দিকে বলেই আমি মনে করি। আর এখন যারা দেশ থেকে যাচ্ছে সেই তরুনরাও অনেক সচেতন, শিবির ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরের কেউ সেখানে গিয়ে নতুন করে শিবিরের খপ্পরে পড়েছে এমন কেস বোধহয় খুব বেশি হবে না।

আমি অতিথি লেখকের সচেতনতার প্রশংসা করি। তাঁর এই অবস্থানই কিন্তু আমাকে আশাবাদী করে রাখে। জামাতিরা যা শো করছে , সেই শো দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই । আপনি যেরকম ব্লগের পাতায় লিখছেন, রেজওয়ান যেরকম উইকিপিডিয়ায় লড়ছেন , তেমনি আমাদের অগনন মানুষ নিজ নিজ সেক্টরে লড়ছেন। জামাতি শো যতো বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে কিন্তু সচেতনতাও বাড়ছে। টিভি চ্যানেল দখল করে লিল্লাহ ব্যারিস্টার তার ঢুলু চোখে যতোই ফতোয়া ঝাড়ুক , ব্রিটেনের মাটিতে কিন্তু বৈশাখী মেলাও চালু হয়েছে।

পূর্বপুরুষের তৈরী প্রতিরোধ এখনও জারি আছে, তার উত্তরাধিকার বহন করে নেয়ার মতো অগনতি ধমনীও আছে এই প্রজন্মে। এই লড়াই কাজে আসছে, কাজে যে আসছে শেষ প্রমান হয়েছে বাংলাদেশে গত নির্বাচনে ; আমি জানি না লন্ডনে সেটা প্রমান করার কোন উপায় আছে কি না , কিন্তু সেই প্রমানের সময় যদি আসে তাহলে দেখা যাবে এই সব শো আসলেই শুধু টিভির রঙিন সেটেই সীমাবদ্ধ বেশি।

আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্রজন্মেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষবাষ্প মুক্ত হবে আমার স্বদেশ।
দরকার শুধু লড়াইটা জারি রাখা।


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটা। আনেক ধন্য়বাদ।
দরকার শুধু লড়াইটা জারি রাখা।

শিক্ষানবিস এর ছবি

ঠিক, ভয়ের কিছু নেই, তবে সতর্ক থাকতে হবে চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ইদানিং টিভির টক শো গুলি আগ্রহ নিয়া কেউ আর দেখে না
কারন সেখানেএ পরোক্ষ ভাবে তাদের মতামত চাপিয়ে দেবার মানষিকতা
লক্ষ করা গেছে
আপনার উপস্থাপন বেশ ভালো লাগলো

খেয়ালীমন

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

লেখাটা পড়ে মনে আশা জেগে উঠলো।
আমরা পারবোই। আমাদের পারতেই হবে।

মামুন হক এর ছবি

এই জন্যই আরিফ জেবতিক আমার পছন্দের লেখকদের একজন। সহজ সরল কথায় চমৎকার আশা জাগানিয়া লেখা, পড়ে মন ভালো হয়ে গেল, হতাশা বেশ কেটে গেল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আরিফ ভাই।

ফরিদ এর ছবি

অতিথির লেখাটা আমার কাছেও এট্টু বাড়ানো মনে হয়েছিল। লন্ঠনে যারা আছি তারা জানি এরা অনেকটাই যত গর্জে তত বর্ষে না।

তবে লন্ডনের জগাখিচুড়ী এশিয়ান জনগোষ্ঠীর পরবর্তী প্রজন্মের পরিচয় [এখন যারা পুলাপান গালফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিয়া ঘুরে তাগোর পুলাপান হৈলে] দুইটার একটা, হয় তারা বিটিশ আর নাইলে মুস্লিম। স্ট্রিক্ট পূর্বপুরুষের ভৌগলিক পরিচয়ে আটকে থাকার মত বেশী দেখিনা।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার কথা হচ্ছে তাদেরকে বাংলাদেশী বানানোর কোন যৌক্তিকতা তো নেই। বাইবর্ণ বৃটিশ যদি বৃটিশ হয়ে যায় তাহলে তার বাপদাদার জাতীয়তা নিয়ে আমরা চিন্তিত হবো কেন ? সে মুসলিম হিসেবে হয়তো নিজের পরিচয় দেবে কিন্তু সেটা দেবে তার আইডেন্টটিটি হিসেবে , বাংলাদেশ তো তার আইডেন্টিটি নয়।

যদি ভূমিপুত্রের সরাসরি উত্তরাধিকার না হয়ে থাকি তাহলে আমার পূর্বপুরুষ হয়তো কোন পর্তুগীজ জলদস্যু কিংবা আফগান পাঠান কিংবা ভবঘুরে ইয়েমেনীয় হলেও হতে পারে। কিন্তু আমি কি এখন পর্তুগীজদের জন্য মায়াকান্না করি ? করি না। আমার রক্তে বাঙালিত্ব এসে গেছে। মাইগ্রেশনের এমনই নিয়ম।

আমার পরিচিত এক আংকেল ( ফার্স্ট জেনারেশন লন্ডনি) বাংলাদেশের নির্বাচন আর আবাহনী মোহামেডান নিয়ে খুবই উৎসাহী। এই জেনারেশনের অনেকেই নির্বাচনের আগে দেশে চলে আসেন নিজ দলের সমর্থনে কাজ করতে।
কিন্তু সেই আংকেলের ছেলেরা বৃটেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ,তারা বিএনপি আর আওয়ামীলীগের পার্থক্য করতে পারে না , জামাত আর জাতীয় পার্টির তো নামই জানে না। আংকেল যদি পাঁচ বছরে পাঁচবার দেশে আসেন , তাঁরা আসে একবার। কারন তাদের তো পিছুটান নেই । মা বাবা বন্ধুবান্ধব সবই ইংল্যান্ডে। তারা হলিডে করতে ইতালি নয়তো ইজিপ্ট যায়।

তাঁদের ছেলেমেয়েরা আদৌ যদি আসেও তাহলে তাঁরা আসবে ১৫ বছরে একবার। সারাজীবনে হয়তো ২/৩ বার। এর পরের প্রজন্মের কেউ কোনদিনই আসবে না।
এটাই মাইগ্রেশনের নিয়ম। শুধু প্রথম প্রজন্মেরই কষ্ট হয়। তারা পায়ে মাতৃভূমির মাটি মেখে অন্য দেশের জুতো পায়ে ঘুরে বেড়ায়।

অন্যদিকে এই জেনারেশনগুলো সবসময়ই মুসলিম পরিচয় বহন করবে কারন বিশ্বের রাজনীতিতে মুসলিম পরিচয় তাঁর নামের ও জীবনের সাথে মিশে আছে। সে হয়তো শান্তিবাদী হবে , হয়তো টেররিস্ট হবে ; কিন্তু সেটা তখন বৃটেনের সমস্যা, আমার দেশ আর জামাতিদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আরিফ ভাই, আশাবাদী এই পোস্ট ভালো লাগলো। গতকালই কাঁচাবাজার করতে বাঙ্গালী দোকানে গিয়েছিলাম। স্থানীয় বাংলা পেপার নিয়ে বসলাম কিছুক্ষণ। এপিঠ ওপিঠ ১০-১২ পাতা জুড়ে শুধু আপীল। দেশে মসজিদ বানানোর জন্য টাকার আপীল। মাদ্রাসা নির্মানের জন্য আপীল। মক্তবের জন্য আপীল। ৫-৬টা টিভি চ্যানেলে থাকে নিয়মিত ফান্ড-রেইজিং টেলিথনের জন্য আপীল। এই সমস্ত চাঁদার যে দাবী, সবগুলোতেই থাকে ধর্মের প্রবল প্রলেপ। এরকম লাইন দেখলাম প্রতিটি এডে -

For a new wudu room, donate £300
For a set of burkhas, donate £25

টাকাটা আসলে কই যায়, তার বিন্দুমাত্র জবাবদিহিতা নেই। অথচ মাত্র কয়দিন আগেই দেশে এক ব্রিটিশ-ফান্ডেড মাদ্রাসায় প্রচুর অস্ত্র পাওয়া গেছে। এদেশের সরকার তো ঘুমিয়েই বুঁদ। মাল্টিকালচারালিজমের নামে যে কি শুরু হয়েছে, এদের কোন ধারণাই নেই। পরাজয়ের আগে পর্যন্ত যেমন এলটিটিই'র সবচেয়ে বড় টাকার সোর্স ছিল লন্ডনের তামিল সম্প্রদায়। পাকিস্তান আর বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদী পোষার জন্য প্রচুর টাকা যে এখান থেকে যায়, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এদিকের প্রধাণতম মসজিদ - ওয়াইটচ্যাপেলের ঈস্ট লন্ডন মসজিদ - বহু আগে থেকে জামাতীদের কব্জায়। জামাতীরা দেশে যত ঘৃণিত, এখানে ততটাই জাঁকিয়ে বসেছে। এটাই দুঃখ লাগে যে সহজ সরল মানুষদের ধর্মীয় চেতনায় সুরসুরি দিয়ে হারামজাদারা এক গাদা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এখানের সরকার, দেশের সরকার বসে বসে তামাশা দেখছে।

দ্বিতীয় প্রজন্ম সম্পর্কে আপনার বক্তব্যর সাথে একমত। বেশীর ভাগেরই দেশের সাথে যোগাযোগ অনেক হালকা হয়ে গেছে বা একদম নেই। অনেকে ধর্ম-টর্ম মানেন প্রচুর, তবে সেটা ব্যক্তিজীবন পর্যন্ত। সেটাকে রাজনৈতিক মাত্রা দেবার বা জেহাদী জোশে পরিণত করার সাহস বা ইচ্ছাও নেই। কিছু পথভ্রষ্ট পোলাপান পাওয়া যায় অবশ্য - পাকিস্তান বা আফগানে গিয়ে জেহাদ প্র্যাক্টিস করতে চায়। অল্প-শিক্ষিত বা ড্রপআউট বা বেকার কেউ কেউ এইসব দিকে চলে যায়। হালাকা, আরবী 'স্টাডি সেশন', মুসলিম জিম-এ গিয়ে নানান প্রজাতির বন্ধু বানায়। তবে দেশীয় রাজনীতি বা পিতামহের গ্রামে মাদ্রাসা বানানোতে তাদের কোন আগ্রহ নেই বলা যায়।

আর একটা বড় অংশ এখন পুরোপুরিই ব্রিটিশ সমাজের সাথে মিশে গেছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেক মেয়ে (আমার চেনাই ৭-৮ জন বাঙ্গালি হবে) স্থানীয় ইংলিশ ছেলে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে আছে। এতখানি ইন্টিগ্রেশন আবার অনেকের পছন্দ না। তবে আমার মনে হয় এটা অবশ্যম্ভাবী এবং একদিক দিয়ে ভালো জিনিস। শেষমেষ মিশে যাওয়াই শেষ ঠিকানা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ষষ্ঠ পাণ্ডব [অতিথি] এর ছবি

"শেষমেষ মিশে যাওয়াই শেষ ঠিকানা"

এই কষ্টকর সত্যটা প্রবাসীদের খুব কমজনই মনে-প্রাণে মানতে পারেন। "দুহিল দুধু বেন্টে কেমনে সামায়?" - প্রবাসী হওয়াটা মোটামুটি irreversible একটা প্রক্রিয়া।

ফরিদ এর ছবি

বছর তিনেক আগেও আপীলের এই ধুম ছিলনা, আর হাউজিং বুমের মত এইটাও ধাম করে কমে যাবে। ২০১১ সালে এই আপীলের সাইজ এখনকার পীকের অদ্দেকে নেমে যাবার কথা। কয়েকটা মসজিদের কথা জানি চার হাজার পাউন্ড জমা দিয়ে আপীল করতে গিয়ে দুহাজার নিয়ে ফেরত এসেছে হাসি বেলতলায় আর কয়বার যাবে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

তবে দেশীয় রাজনীতি বা পিতামহের গ্রামে মাদ্রাসা বানানোতে তাদের কোন আগ্রহ নেই বলা যায়।

আমার কথা এই পয়েন্টেই। ইস্টলন্ডনের মসজিদ দিয়ে বিচার করে জামাতি প্রভাব সারা লন্ডনে অনেক বেশি হয়ে গেছে এটা আমি মানতে রাজী নই।
একজন জামাতি সর্বসময় জামাতি, সে ফুলটাইমার; কিন্তু একজন সাধারন আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জাপা-বাম সমর্থক ফুলটাইমার নয়। একারনে জামাতিদেরকে চোখে পড়ে , অন্যদেরকে চোখে পড়ে না। কিন্তু এর মানে " হেগো থামানির আর কোন উপায় নাই " ধরনের বিপর্যয় বোধহয় সেটা নয়।
সেকেন্ড জেনারেশনে তাদের বেইল আছে বলে মনে হয় না।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

একমত। দ্বিতীয় প্রজন্মের কেউ যদি ইসলামিস্ট হয়, তাদের চিন্তা-ভাবনা জুড়ে থাকে 'গ্লোবাল জিহাদ'। তাদের আদর্শ হয় তারিক রামাদান বা শেখ ইউসুফ কারাদাউয়ি-র মত লোক। বাংলাদেশের জামাত-শিবির কি জিনিস বা আজম-মতি কে বা কাহারা - এটা জানে না, বা জানতেও চায় না। (একইভাবে ৫২ বা ৭১ সম্পর্কেও তারা মোটামুটি উদাসীন।) মোটের উপর দেশীদের ভেতর জামাত-শিবিরের প্রভাব প্রথম প্রজন্মেই সীমাবদ্ধ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ধ্রুব হাসান এর ছবি

গৌতম এর ছবি

শিক্ষানবিসের মতো করেই বলি- হয়তো ভয়ের কারণ নেই; কিন্তু সজাগ থাকা দরকার। আমাদের অজানিতে যেন কিছু করে না ফেলে- সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। আমাদের উদাসীনতা যেন তাদেরকে সুবিধা এনে না দেয়।

আশাবাদী পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

হাসিব এর ছবি

দ্বিতীয় প্রজন্মের বৃটিশ বাঙালিদের মাঝে শিক্ষা অনেক বেশি , সেখানে জামাতিরা কতোটুকু আসন গেড়ে বসতে পারবে সেটা হয়তো আগামীতে দেখা যাবে তবে সাধারন বিবেচনায় সেই সম্ভাবনা কমের দিকে বলেই আমি মনে করি।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একটা বড় জিনিস মানি । কিন্তু সেটা কাউকে শিবির হওয়া থেকে ঠেকাতে পারবে না । আশেপাশে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত ছাগু দেখি প্রতিদিন । তবে তারা সবাই যে শিবিরের খাতায় অফিসিয়ালি নাম লিখিয়েছে সেটা বলতে চাচ্ছি না । শিবিরে যোগ দেয়া লোক ছাড়াও ও "ইসলামি মাইন্ডেড" দল হিসেবে শিবিরের প্রতি সহানুভুতি থাকা লোকজনের কথা বলছি আমি । এরা শুধুমাত্র ইনফরমেশন গ্যাপের কারনে শিবির সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জেনে তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হয় । এই ইনফরমেশন গ্যাপটা তৈরী হয় তাদের পারিবারিক শিক্ষা, কোথায় পড়ছে সেখানকার শিক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে । আমাদের কালে ছোটবেলা থেকেই প্রতি সপ্তাহে একদিন সবাইকে জড়ো করে স্যারেরা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াতেন । এখন পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা কয়টা স্কুলে সেইটা হয় ? (এটা করেও যে উনারা আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বানিয়ে ফেলেছেন সেটার দাবি আমি করছি না । এটা একটা উদাহরন মাত্র । ) তাদের যে বইগুলো পড়ানো হয় সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলন ইত্যাদির ভাগ কতটা ? এসব কিছুই আসলে আমাকে খুব আশাবাদী হতে বাঁধা দেয় । রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাত হয়তো কল্কে পাবে না কিন্তু জামাতি আদর্শ এতো সহজে মুছবে না ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আদর্শ সহজে মুছবে না এই কথার সাথে একমত। এই উপমহাদেশে আমরা রাজনীতি করা শিখেছি দুই ধারায়। বাম রাজনীতি আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, এই দুটোর উন্মেষ প্রায় একই সাথে।
মুসলিমলীগের প্রেতাত্মাই জামাত আর বিএনপির বর্তমান ভোট, এই ডানপন্থী জনগোষ্ঠী সবসময়ই ছিল, এমনকি খন্দকার মোশতাকের মতো আওয়ামীলীগার হিসেবেও ছিল।
সুতরাং সেটা সহজে মুছবে না আমি একমত।

তবে স্পেসিফিকলি জামাতি আদর্শ বলতে বুঝায় স্রেফ ভন্ডামি আর ফ্যানাটিক মানসিকতার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা। সেটা খুব বেশি কল্কে পাবে না বলেই আমার ধারনা।

তীরন্দাজ এর ছবি

আমাদের নিজেদের, স্বাধীনতার স্বপক্ষের, তথা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর পদচারণায় যদি দ্রুত সততা ও দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় না পাওয়া যায়, তাহলে জামাত ও মৌলবাদী শক্তিদের নির্মুল করা প্রায় অসম্ভব বলেই আমার বিশ্বাস। এটা এক দু:খজনক সত্য হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি। একটা কিছু আঁকড়ে ধরে দৈনন্দিন হতাশার স্রোতের মাঝে বাঁচার চেষ্টা করে মানুষ। কিন্তু আমাদের মহান(!) রাজনীতিবিদগন সে হতাশার স্রোত বাড়িয়ে তোলায় বিশেষ পারদর্শী।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার আরেকটা ভয় হচ্ছে ছদ্মবেশি জামাতিদের নিয়ে যারা বিএনপির মাঝে আছে। ২০০১ সালের পর থেকে তাদের প্রভাব বিএনপিতে অনেক বেড়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অলি আহমেদ নয় রাজাকার সাকা চৌধুরী এখন বিএনপির সামনের সারির নেতা।
আওয়ামীলীগ যেভাবে কিছুটা বামদিকে সরেছে ( বাম নেতাদের মন্ত্রী করা এসব আর কি ) বিএনপি যদি এখন রীতিমাফিক ডানদিকে আরো বেশি বেশি সরতে থাকে , তাহলে জামাতিরাই বিএনপি নামে চলে পুরোটা চলে আসবে। ছদ্মবেশি শত্রু বেশি ভয়ংকর।

মূলত পাঠক এর ছবি

আরিফ পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে যা লিখেছেন তাতে সহমত না হয়ে উপায় নেই। তবে তারা প্রথম প্রজন্মকে সরিয়ে দিয়ে জায়গা নেওয়ার আগে মৌলবাদী/ধর্মব্যবসায়ী দুর্বৃত্তেরা ঐ সংগৃহীত অর্থের জোরে বাড়াবাড়ি রকমের শক্তিশালী না হয়ে ওঠে সেটাও খেয়াল রাখা দরকার। সেটাই বোধ হয় আগের লেখায় উল্লিখিত উদ্বেগের মূল কারণ।

হিমু এর ছবি

পোস্টটা পড়ে আমার মনে হলো ভানুর সেই অমর বচন, "অরে ঝুইলা পড়তে ক ... আমি তো আছিইইই!" হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ভানুর এই কৌতুকটা শুনি নাই । উনার লিংক দেন , পইড়া আসি।

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

এমন আশা আরিফের মত আমারও। কিন্তু আশার ঠেলায় ভয় কাটেনা। ইস্ট লন্ডন মসজিদ মোটামুটি জামাত পুনরর্বাসন কেন্দ্র। চট্টগ্রামের তিন খুন মামলার আসামী কিংবা রাবি'র বহিস্কৃতরা টিভি স্টেশনে কাজ করে। চ্যারিটির টাকার উদ্দেশ্য যদি না আটকানো হয় তবে এতিমখানায় অস্্রের স্তুপ বাড়বেই। আর সেটা বাড়বে বাংলাদেশে। তাই সতর্ক থাকা খুব প্রয়োজন।
অনেকদিন পর তোর লেখা পড়লাম।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আশার ঠেলায় ভয় কাটার দরকার নেই। ভয় কাটলেই বরং বিপদ, নিশ্চিন্তে ঘুমোলেই চোর এসে সিঁদ কাটে।
জামাতের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নতুন কিছু তো নয় , ইসলামী ব্যাংক, ইবনেসিনা এসব করাই হয়েছে পুনর্বাসনের জন্য। টিভিচ্যানেলগুলোও তারই ধারাবাহিকতা। কিন্তু যত গর্জে ততো বর্ষে কী?

চ্যারিটির টাকা আটকানোর পদক্ষেপ একটা জরুরী পদক্ষেপ সন্দেহ নেই , এই জিনিষটাকে চ্যালেঞ্জ করার প্রয়োজন পড়েছে ।

আমি বলতে চাচ্ছি জামাতি শো মানেই ইংল্যান্ড জামাতিদের কব্জায়, এমনটা ভাবছি না আমি ।

রেনেসাঁ‌ এর ছবি

ধন্যবাদ আরিফ জেবতিক |সংক্ষেপে খুবই সুন্দর আলোচনা করেছেন। জামাত কখনই এদেশে বা বিদেশে কোথাও বেশী নেই। আগাছা দেখেতে বেশীই মনে হয়।

তবে জামাতের মূল আমরা কখনই উৎপাটন করতে পারব না যতক্ষন এদেশে বিএনপি থাকবে।

রেনেসাঁ

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আরিফ জেবতিক এর ছবি

এনকিদু এর ছবি

দরকার শুধু লড়াইটা জারি রাখা।

ঠিক ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আরিফ ভাই, আপনার সাথে একমত, নতুন জেনারেশনে জামাতের বেইল নাই। আর যারা বাকি আছে, তাদের উপরে নজর রাখলেই চলবে, আর সেই সাথে শিবিরের বিপক্ষে তাদের ইতিহাস ও বর্তমানের ঘটনাবলি এক করে রাখতে হবে, যাতে করে শিবিরের কুপ্রচারনায় কেউ ভ্রান্ত হলে আমরা সেই লেখাগুলো দেখাতে পারি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নন্দিনী [অতিথি] এর ছবি

ভয়টা যেখানে তা হচ্ছে, সবই হচ্ছে 'ধর্মের' নামে । এত এত টাকা যায় কোথায় তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়না, যারা দেয় তারা ভাবে পরকালে বেহেস্তে প্রাপ্তির কিছুটা হিল্লা যদি হয় মসজিদ/মাদ্রাসায় দান করে তবে জামাত টামাত নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর দরকার কি !- তবে এটাও ঠিক, এদের অনেকেই জামায়াতী অথবা ছদ্মবেশী জামায়াতীদের নিয়ে তেমন সচেতন নয় ।

আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি লক্ষ্য করছি, এ দেশে বৈশাখী মেলায় যেমন হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে,তেমনি এরাই আবার মসজিদ/মাদ্রাসায় অকাতরে পাউন্ড বিলিয়ে দিতে কার্পন্য করে না । হয়তবা এমন জগাখিচুরী মার্কা অবস্থা হয়েছে এক ধরণের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে - যা একেবারে অস্বাভাবিক নয় ।

এদেশে সিলেটিদের বেশীরভাগেরই এখন তৃতীয় প্রজন্মের কৈশোরকাল আর প্রথম প্রজন্মের জড়াকাল চলছে - প্রথম দলের এখনো দেশের 'মাটির' প্রতি যত টান আছে, জামায়াতীদের প্রতি তত ঘৃণা নেই । কারণ একটাই, 'ধর্ম' এখানে জামায়াতীদের জন্য বড় ধরণের একটা সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে, করছে আর করবেও, অন্তত আরো কিছুকাল ।

নন্দিনী

সাজেদ এর ছবি

জামাত বুঝে তার দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা; তারা আগায় এই বিবেচনা মাথায় রেখেই। প্রতিরোধ না থাকলে উইকিপিডিয়ার মত অনেক জায়গায় এরা সংক্রামিত করবে সুযোগ বুঝে। বাঙ্গালীত্ব বির্বজিত, কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত আমাদের উত্তরসুরীরা অবশ্যই জামাতিদের লোভনীয়, সহজ টার্গেট। বাঙালী চেতনায় সমৃদ্ধ পাবলিক জামাতিদের কাছে এলার্জিসম, তাদের সওদা বেঁচতে এরা উতসাহী না।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

নতুন প্রজন্মের মৌলবাদ বিরোধী একটা বড় উদাহরণ তো আছেই, এবার নির্বাচনে মহাজোটের বিশাল বিজয়ের একটা অন্যতম কারণ ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি...।
তাই জেবতিক ভাইয়ের মত আশাবাদী হই।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।