অবশেষে মঈণ - মিলা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বুধ, ০৭/০৫/২০০৮ - ৮:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাসানের সাথে আজ আবার অনেকদিন পরে জি-টকে কথা হয়। শুরুতেই আমরা দুই দোস্ত মন খারাপ করি এই ভেবে যে, যাযাদি থেকে মি. রেহমান পদত্যাগ করেছে, গতকাল এক লেখায় গুডবাই-বিদায় বলে গেছে।

ব্যাপারটি এমন নয় যে, মি. রেহমানের লেখার আমরা বড় ফ্যান, এমনও নয় যে – দিনের পর দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, তবে এটা নিশ্চিত – হাতের কাছে পেলে শুরুতেই একেবারে শেষ প্যারায় বলা গল্পটা পড়ে ফেলতাম। তারপরে প্রেমলীলা। রেহমানের কাছে আমরা এ জন্য ঋণী; ঐসব গল্প বন্ধুদের আড্ডায় বলে আমরা বাহবা কুড়াতাম।

আমাদের মধ্য কৈশোরে যায়যায়বিদ্যুৎ সংখ্যা এবং আরো পরে ক্যামেরা বা শাড়ী সংখ্যা আমরা অতি গোপনে পড়তাম, একটু বড় হয়ে গেছি ভাবতাম মনে মনে।

দৈনিক হওয়ার আগে মি. রেহমান বলেছিলেন – দৈনিক যাযাদি’র কাজ হবে মানুষকে প্রাপ্তমনষ্ক করা। হ্যাঁ, আমরা প্রাপ্ত মনষ্ক হয়েছি – দেখেছি কীভাবে মেটামরফসিস হয়, রঙ-চঙা শার্ট পড়ে একদা আপোষহীন সম্পাদক কীভাবে ট্রেন্ডি জুলফি নিয়ে লাল গুলাপী হয়। মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, এবার একটি – ম্যুভি ক্লিপ। এরপর খালি ম্যুভি ক্লিপ। পতনের তোড়ে এয়ারপোর্টে বিব্রতকর মুহুর্তগুলো বাংলা ইংরেজী তর্জমায় ছাপা হয়। সেটাও ম্যুভি ক্লিপ হয়ে যায়।

আজ আমি আর হাসান এসব আলাপ করি।
মঈণ-মিলার ফোনালাপ অথবা পরকীয়ার পরিণতি কী হবে সেটা নিয়ে ভাবি। তবে এতোদিনের ফোন বিল কতো এসেছিল, কতোটুকু বিল শোধ করা হয়েছিল সে জল্পনা কল্পনা করি। মি. রেহমান অন্য কোন পত্রিকায় মঈন মিলাকে ডিজুস কানেকশন সেট করে দিবেন বলেও ধারণা করি। কারণ, দেশের পোলাপাইনকে প্রেম পরীক্ষা অথবা জীবন জিজ্ঞাসার গাইড হিসাবে ঐ বিশেষ সংখ্যাগুলোর বিকল্প নেই। (ব্লগে এক মন্তব্যে বিখ্যাত ধুসর গোধুলীও এ ঋণ স্বীকার করেছেন)।

মঈণ-মিলাকে আমরা কতোদিন মিস করবো – আপাততঃ সেটা না জানলেও আজ হাসানের বলা গল্পটা এখানে বলে যাইঃ

“অনেকদিন পরে ফোনালাপের ক্লান্তি পেরিয়ে মঈন-মিলা লাভ রোডের অফিসে দেখা করে। একে অন্যের দিকে তাকায়।
কতোদিন পরে দেখা।
‘চোখ দুটো গেছে ক্ষয়ে গাল দুটো গেছে ঝুলে নিয়মিত অবহেলায়।‘
তবে মিলা অবহেলা করে না, ফৃজ থেকে শ্যাম্পেন নিয়ে এগিয়ে দেয়।
মঈন হাত নাড়ে, বলে – ‘নাহ, ওসব ছেড়ে দিয়েছি’।
মিলা অবাক, ‘কীভাবে’?
‘পাওয়ার অব উইল।‘ মঈণ চোখ উলটে জবাব দেয়।
এবার মিলা বলে, ‘তাহলে চলো – ড্রাইভে যাই। তোমার প্রিয় আশুলিয়া।‘
মঈণ এবারো হতাশ করে, বলে – ‘লং ড্রাইভে যাই না।‘
মিলা জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলো, তোমার মতো ড্রাইভিং পৃয় মানুষ, কীভাবে ছাড়লে?’
মঈণ আগের মতোই বলে – ‘পাওয়ার অব উইল’।
মিলা হতাশ হয়। দেখে পুরনো সে-ই মঈণ আর নেই। ক্যামন যেন বদলে গেছে।
অনেক ভেবে চিন্তে মিলা এদিক ওদিক দেখে। কুক জন নেই। কোণায় লিভিং রূম সাজানো গুছানো। মিলা সেদিকে ইশারা করে - ইংগিতে বলে, ‘লেটস গো’।
মঈণ এবার মাথায় ঝোকায়।
মিলা জিজ্ঞেস করে – ‘সে কী! এটা ছাড়লে কী করে? এটাও পাওয়ার অব উইল?’
মঈণ জুলফিতে আঙুল বুলায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘নাহ, দ্যাটস ফেইল্যুর অব অ্যাবসল্যুট পাওয়ার।‘

-


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

দ্যাটস ফৃকিং ঘুড, ডুড!


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

হাহ হা, পুরা ইয়র্কার হইসে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অয়ন এর ছবি

যদি যদি যদি।

(যাযাদির আইকিউ স্টাইলে কমেন্ট দিলাম। এখন বাইর করেন। খুবই সহজ)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ও আচ্ছা, ঐটা? চোখ টিপি

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পৃয় হায়হায়রাতের কি হলো!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ঝাক্কাস! ... হো হো হো হো হো হো হো হো হো


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শেখ জলিল এর ছবি

দ্যাটস ফেইল্যুর অব অ্যাবসল্যুট পাওয়ার।
..ইটস দি ট্রুথ!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পাইছি। দেঁতো হাসি

ফেরারী ফেরদৌস

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা !
ভালো হয়েছে শিমুল। ধন্যবাদ।
আমরা তখন য়্যুনিভার্সিটির তরুণ, কী টানাটানিটাই না করতাম প্রথম বেরুনো ভিন্নমাত্রিক সাপ্তাহিক 'যায় যায় দিন' নিয়ে !

রণদীপম বসু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সংসারে এক সন্ন্যাসী | সোম, ২০০৮-০৫-০৫ ২২:০৩
‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍শুধু ইমোটিকন দিয়ে মন্তব্য করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍শোধ নিলাম হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ফাটায়া মজায়া ভায়া... ______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হো হো হো

নিঝুম এর ছবি

আব্বার বালিশের নীচে রাখা যযাদি'টা প্রায়ই লুকিয়ে পড়তে হত। "দিনের পর দিন না " নামে একটা পাতা ছিল।আমি এখনো বুঝি না এইটা কি জিনিষ!!! তবে রেহমান সাহেবের লাল গোলাপ দেইখা ভিরমি খাইসিলাম।
যাই হোক, "পাওয়ার অফ উইলে" এই লোকের উপর রাগ করা ছাইড়া দিসি।

লেখা জব্বর হইসে। অনেকদিন পর পর না লেইখা একটু তাড়া তাড়ি নতুন লেখা লেখলে আমরা অনেকেই খুশি হই।পাওয়ার অফ উইল থাকলেই হইলো...এই আর কি...
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা। উইল পাওয়ার।
লিখি তো রেগুলার, পোস্ট না হইলে - কমেন্ট। ঃ)

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যাযাদি মিস করেছি। শিমূল আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে, "গ্রেট মিস" হয়েছে।
সুন্দর লেখা হয়েছে, আপনার ক্ষেত্রে যেটা এ্যাজ ইউজুয়াল।

তানবীরা

থার্ড আই এর ছবি

কৃতজ্ঞতা স্বীকারতো করতেই হবে, এক ভালোবাসা দিবসের কল্যানে কার্ড কোম্পানীর হাজার হাজার কার্ড বিক্রিতে যেমন শফিক রেহমানের অবদান, তেমনি একজন প্রেমিকের লেখক হয়ে উঠার পেছনেও তার অবদান সমান। আবার বেতন ভুক্ত লোক দিয়ে বিশেষ দিবসে নামে বেনামে গল্পকারদের গল্প ছাপানোর অভিযোগও কম নয়। লাল গোলাপ আর মঈন মিলার কথা তো শিমুলই বলে দিয়েছে।
রসময় গুপ্ত কিনতে সাহস হতো না ...তবে প্রেম লীলার ভক্ত ছিলাম একথা বলতে আর লজ্জা কি
--------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

একথা বলতে আর লজ্জা কি

সে আর বলতে...

শামীম হক এর ছবি

অতি উত্তম, অতি জাঝা

তারেক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি পুরা বরবাদ !!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বাদ বাকী সবাইকে ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

আপনে যদি এইরকম শেষেগল্পওয়ালাকলাম নিয়মিত করেন, তাইলে আরেকটা যাযাদি বের হইলেও হইতে পারে। হাসি
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এইরকমগল্প দিয়ে কি আর সেইরকমজিনিশ হবে?

নজমুল আলবাব এর ছবি

মারিলাইছেরে মারিলাইছে। একবারে জ্বালাইল মুমিন টাইপ লেখা। ফাটাইলা বেটা, ফাটাইলা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

স্পিডি গঞ্জালেসের গল্পও দিনের পর দিন থেকে পাই। তবে দিনের পর দিন পুরোটা কখনও পড়া হয় নি। বিশেষ সংখ্যাগুলার একটাই মৌলিক বিশেষত্ব, কোনো গল্পে সেক্স না থাকলে ছাপা হবে না। 'কুরআন শরীফ' নিয়া বিশেষ পর্ব করলে তাতেও সেক্স আসতেই হবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মজারু হয়েছে। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নিঘাত তিথি এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

বিপ্রতীপ এর ছবি

শিমুল ভাই,
এক্কেবারে ফাটাইছেন দেঁতো হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ক্যাডেট কলেজে যখন ছিলাম তখন যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলি আমরা রীতিমত গিলে খেতাম। কিন্তু একবার দূর্ভাগ্যক্রমে ক্লাসে এক ছেলে শাড়ী সংখ্যা পড়তে গিয়ে স্যারের কাছে ধরা খেল আর ক্যাডেটদের হাউসে যায়যায়দিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। লাইব্রেরিতেও আমরা যায়যায়দিন পড়তে পারতাম না। তবে লাইব্রেরিতে গেলে দেখতে পেতাম স্যাররা লাইন ধরে যায়যায়দিন পড়ছে। শাড়ী সংখ্যা... ছাতা সংখ্যা... ভালোবাসা দিবস সংখ্যা। সবগুলো সংখ্যার সব গল্প একই। কী হাস্যকর!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

যাযাদি গিলে খাইলেন, কিন্তু ইনফিনিটি সিরিজে তার কোন ছাপ তো দেখলাম না। অবশ্য আপনার সেন্সর বোর্ড কড়া হইতে পারে; ঞঁ।
চোখ টিপি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমার সেন্সর বোর্ড বিশাল কড়া। এমনিতেই সেন্সরনী আমার লেখা পইড়া গরম চোখে তাকায়। আর একটু বেশি হইলে মাইরা ফেলবে। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আলবাব ভাই, বলাই'দা, জুবায়ের ভাই, নিঘাত তিথি, বিপ্রতীপকেও ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।