বিদায় সৌরভ

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/১১/২০০৮ - ২:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খেলা বা সৌরভ সম্পর্কে ভালবাসা না থাকলে লেখাটা না পড়লেও পারেন হাসি

সৌরভ আর খেলবেনা। কথাটা জানার পর থেকে আমার মনে কেমন একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। অনেক কাল আগে আমি যখন সত্যি সত্যিই ক্রিকেট খেলা নিয়মিত দেখতাম তখন বড় ফ্যান ছিলাম সৌরভের। রাখঢাক না করেই বলে ফেলতে পারি, বাঙালী না হলে হয়ত ওর এত ফ্যান আমি হতাম না। তবে সাধারণ ভেতো বাঙালীদের থেকে সৌরভ আলাদা - এখানেই আমার মনে হয় সৌরভ-প্রীতির শুরু।

বাংলার হয়ে একটা বাচ্চা ছেলে বেশ ভাল খেলছে শুনেছিলাম ১৯৮৯ নাগাদ। তখন সদ্য বছর ষোলোর শচিন খেলতে শুরু করেছে। সৌরভ রঞ্জি (আন্তঃরাজ্য জাতীয় প্রতিযোগিতা) জয়ী বাংলা দলের সদস্য ছিল - সেখান থেকেই প্রথম চিনলাম। আহামরি কিছু খেলত না। ১৯৯২-এর অস্ট্রেলিয়া সফরে সৌরভ কি ভাবে যে নির্বাচিত হয়েছিল জানি না, তবে আমি খুব একটা খুশী হইনি তাতে। তখন রোজ ভোরে উঠে খেলা দেখতাম - ভোর ৪টে থেকে। সৌরভ যেদিন খেলেছিল সেদিন আমি ঘুম থেকে দেরীতে উঠেছিলাম, আমার টিভির সামনে বসার আগেই দল অল-আউট। তাই মন্তব্য করার কিছু ছিল না।

সৌরভের সাথে আবার পরিচিতি অনেককাল পরে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ না জিততে পারায় মরিয়া নির্বাচকেরা কিছু নতুন নাম দলে লেখাতে চাইছিলেন। সিঙ্গাপুরের টুর্নামেন্টে দলে এল রাহুল দ্রাবিড়। আমার এখনও মনে আছে বাড়িতে কেবল কানেকশন ছিল না তখন, তাই একজনের বাড়িতে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগ নিয়েছিলেম। তাদের বাড়ি ভর্তি হয়ে যাওয়ায় শেষমেষ গোয়ালঘরের জানালা দিয়েই খেলা দেখতে হয়েছিল। যাহোক, চারটে ম্যাচে দ্রাবিড়ের সংগ্রহ মাত্র ১৪ রান। দ্রাবিড় অন্ত-প্রাণ মরিয়া গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ (দক্ষিণের নির্বাচক) পূর্বের সম্বরণের সাথে দল বাঁধলেন। তুমি নাও সৌরভকে, আমি নিই দ্রাবিড়কে। দলে এল সৌরভ। খবরটা শুনে প্রথম চমকে গিয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম একটা ম্যাচেও তো খেলতে পাবেনা, গিয়ে আর কি হবে। তবে ততদিনে নিজের মধ্যে বাঙালীয়ানা এসে গেছে, তাই মনে মনে আশা রাখলাম।

কোনো জাদুবলে সৌরভ টেস্ট টিমে আর আমি মুখ ব্যাজার করে ইংরেজী টিউশন পড়তে গেছি। স্যর একটু পর পর খেলার খবর দিচ্ছেন আর আমি হাত কামড়াচ্ছি - কোন অপরাধে আমি সৌরভের সেঞ্চুরী মিস করছি!! ততদিনে আমার খেলা দেখার একটা জায়গা হয়েছে - প্রতিবেশী এক শিখ ভদ্রলোকের বাড়িতে। বাঙালী নন বলে লোকে তাদের সাথে খুব একটা মেশে না - এই আক্ষেপ হয়ত মনে মনে তাদের মধ্যে ছিল। তাই সৌরভকে সমর্থনের বেলায় তারা দরাজ ছিলেন। টরন্টোর প্রথমবছরের ভারত-পাকিস্তান সিরিজটা তবে ততটা জমেনি। সৌরভতো শেষদিকে বাদই পড়ল।

তখন সৌরভ ঠুকঠুক করত। অনেকেই বলত একদিনের ক্রিকেটে অচল। আমিও মনে মনে তাদের দলেই ছিলাম। তবে ওই, বাঙালী বলে যতটা সহানুভূতি আর কি। এমন বেশকিছু ম্যাচ ছিল যেগুলো আমার মনে হত ও আরেকটু মেরে খেললে জিতেই যেত। এমনিতে ৯৭ সালটা আমার কাছে একটা মাইলস্টোন ছিল। উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট আর অনেক ছুটোছুটি, পড়াশোনা। ততদিনে সৌরভ ওপেন করা শুরু করেছে, শচিনের সাথে। ৯৭-এর শেষদিকে আমার খেলা দেখার অভিজ্ঞতায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। হোস্টেলের ভাঙা টিভিতে বসে খেলা দেখতে হয়। প্রতিযোগি একদল ছেলে যারা খেলায় কোনো ইন্টারেস্ট পায়না, খালি টিভিতে স্টার মুভিস দেখতে চায়। সেই হোস্টেলের টিভিতেই রাত জেগে বসে আমার প্রথম সৌরভ আবিষ্কার। টরন্টোয় নামে অলরাউন্ডার থেকে কাজেও বোলিংটা করে দেখানো শুরু। আর শুরু বলে শুধু শুরু নয়, পরপর চারটে ম্যাচে ম্যান-অব-দ্য-ম্যাচ। একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে। ভারত ১৮২ রানে অলআউট হয়ে গেছে। আশা ছেড়ে দিয়েছি। শেষমেষ পাকিস্তান একসময় ২ রানরেট তাড়া করেও হেরে গেল - সৌরভ ১৬/৫(১০)।

ঐ একই হোস্টেলের টিভিতে দেখা আমার একটা স্মরণীয় ম্যাচ। ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনাল। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান এমনিতেই তুলোধোনা করেছে। দুজন সেঞ্চুরী করে ৩১৪ রান তুলে বসে আছে। পরের দিন সেমেস্টারের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। খেলা কি ছাড়া যায় নাকি? তাই দেখতে বসলাম। শচিন মারতে শুরু করল। আউট হয়ে গেলে রবিন সিং। উল্টোদিকে চালিয়ে যাচ্ছে তখনও সৌরভ (১২৪)। শেষে কানিতকারের চারে খেলা শেষ হল। গোটা হোস্টেলে আনন্দোৎসব।

১৯৯৯ এর বিশ্বকাপের সময় অনেকটা ধরেই নিয়েছে সবাই যে সৌরভ ভাল খেলবে। এই বিশ্বকাপ থেকেই অনেকটা সৌরভের ঠুকঠুকে বদনামটা ঘুচতে শুরু করে। দুটো পরপর ম্যাচে ম্যান-অব-দ্য-ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটে-বলে। শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা মনে আছে - বাড়িতেই খেলা দেখেছিলাম। ততদিনে বাড়িতেও কেবল আর ভাল টিভি এসে গেছে। দ্রাবিড় আর সৌরভ যে মারতে পারে তা আগে আমি বিশ্বাসই করতাম না। শেষদিকে তো যা খুশী মারা শুরু করেছিল। তাও সেবার ব্যাটে বলে ভাল পারফরমেন্স ততটা দাগ কাটতে পারে নি। বরং ভারত ভাল না খেলার দুঃখ বেশী করে ছিল। তাও আবার জিম্বাবোয়ের কাছে জেতা ম্যাচ হারার ফলে সেমিতে যেতে পারলনা। ততদিনে সৌরভ সহ-অধিনায়ক। আর পাশে পেয়ে গেছেন একনিষ্ঠ প্রশংসক জিওফ বয়কটকেও।

পরীক্ষামূলকভাবে দলনায়ক করা হল সৌরভকে আবার সেই টরোন্টোতেই। সেই সফরে জেতার পরেই বুঝেছিলাম, আজ হোক বা কাল ও ক্যাপ্টেন হচ্ছেই। নিউজিল্যান্ড দেশে এলে একটা দারুন ইনিংস উপহার দিল, আমি হোস্টেলে বসে ক্লাস বাঙ্ক করে দেখলাম। এই ম্যাচে কেয়ার্ন্সের ইওর্কারে মারা ছক্কাটা আমার দেখা সৌরভের বেস্ট শট। ওই ম্যাচে সৌরভ ওপেন করে শেষ অবধি নট আউট ১৫৩। ফ্লেমিং বেচারা ভেত্তোরিকে বল করাতেই সাহস পেল না গোটা ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়া সফরে দলের ভরাডুবির পরে নেতা সৌরভ দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখে। বেটিং-কেলেঙ্কারীর সিরিজ জিতে দেশের নয়নমণি। তারপরে মিনি বিশ্বকাপের ফাইনাল-সেমিতে সেঞ্চুরী। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরীটা দারুণ ছিল। ১৯৯৯ আর ২০০০এ এর মধ্যে সবথেকে বেশী রান করার শিরোপা সৌরভের মাথায়।

এর পরেই সেই ঘটনা যা সৌরভকে আইকন বানিয়ে দিল। আজও সৌরভ নিয়ে টিভিতে কোনো আলোচনা হলে যা দেখানো হয়। কিন্তু ম্যাচটার গ্ল্যামারের কাছে খেলা জেতার পরে জামা খুলে ঘোরানোর স্পর্ধা কিছুই না। ৩২৫ রান তাড়া করে যে জেতা সম্ভব হতে পারে, দুই তরুণ তুর্কী করে না দেখালে ভাবতেই পারতাম না। ঘরে বসে আয়েস করে খেলাটা দেখেছিলাম। টেনসন কমাতে ঘনঘন জল খাচ্ছিলাম। তবে আশা ছাড়িনি।

২০০৩-এর বিশ্বকাপে সৌরভের তিনটে সেঞ্চুরী থাকলেও আমার মনে দাগ কাটতে পারে নি। তবে ক্যাপ্টেন হিসাবে ফাস্ট বোলার তুলে আনার যে ধারা চালু হয়েছিল, আজও তা ফসল দিচ্ছে। ক্যাপ্টেন হিসাবে বিশ্বকাপটা এতটা কাছে এসেও চলে যাবে- এটা সবার কাছেই দুঃখের। আমারও খুব খারাপ লেগেছিল। তখন আমি কোলকাতায় চাকরি করি। ছোটো কোম্পানী, ১২ জন আছি। সেমি আর ফাইনাল খেলার দিনে অফিসে ছুটি। ফাইনালটা অনেক চেচামেচি করেও জেতানো গেল না।

বিশ্বকাপের শেষে অস্ট্রেলিয়া সফর। প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরীটা অনেকেই এখনও সৌরভের সেরা ইনিংস মনে করেন। আমি মনে করে সৌরভের ক্যাপ্টেন্সির ওটাই সেরা সময়। অস্ট্রেলিয়ার কাছে গোহারা হেরে ফিরবে - এরকমটাই ভাবা হয়েছিল। বরং ভারত টেস্ট সিরিজটা ড্র করল, তাও শেষ টেস্টটা অস্ট্রেলিয়া দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাঁচিয়ে দিল কোনোরকমে।

তারপরে আমার কর্মজীবন ধীরে ধীরে জাকিয়ে বসতে থাকে। আর আমিও ক্রিকেটে উৎসাহ হারাতে থাকি। তবে মনে দাগ কাটা ইনিংস আর নেই। চ্যাপেলের সাথে যখন ঝামেলা হয়, তখন আমার আর অত সৌরভ প্রীতি নেই। মনে হয়েছিল ধুর, এত ঝামেলা না করে এবার অবসর নেবার সময় হয়েছে। দুই অহংকারী এক জায়গায় থাকলে যা হবার, তাই - ২০০৬ সালে সৌরভ বাদ। ২০০৭ সালে আবার প্রত্যাবর্তন, নির্বাচন কমিটিতে বেঙ্গসরকরের কল্যাণে। এর পরেও কিছু ভাল ইনিংস আছে- আছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরী, ইডেনে করা একমাত্র সেঞ্চুরীও। ফিরে আসা সৌরভের মধ্যে প্রতিজ্ঞা ছিল, কিন্তু সেই জোশ আর ছিল না।

আজকাল আমি আর খেলা দেখি না। ২০-২০ বিশ্বকাপ দেখেছি, ভালও লেগেছে। কিন্তু ক্রিকেটের সাথে সেই আত্মীয়তাটা আর নেই। তাও সৌরভের চলে যাবার খবরটা কেমন যেন আমার মনে নাড়া দিয়ে গেল। আমার চারপাশে গাছপালা, পশুপাখি, মানুষজনের মত আমারও বয়স বাড়ছে। অবসরের কথা আমাকেও ভাবতে হবে। সৌরভের অবসর তো অবসর নয়, একটা জেনারেশনের সমাপ্তি। আমার জেনারেশনের সমাপ্তিও হয়ে এল ... বিদায় সৌরভ।

সৌরভের শেষদিনে এক নিউস চ্যানেলের প্রতিবেদন দেখতে পারেন

মজার কমেন্ট (হিন্দি/উর্দু)


মন্তব্য

টিপু কিবরিয়া এর ছবি

সুন্দর লেখা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

শুধুই কি কোলকাতা?

...........................
Every Picture Tells a Story

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখাটার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৌরভ আর খেলবেনা শোনার পর থেকেই খুব মন খারাপ লাগছে। আমি সৌরভের কঠিন ফ্যান। অনেকে ওর উদ্ধত আচরণের সমালোচনা করেন, আমার বরং ভালই লাগতো। মনে হতো, এইরকম একটা গোঁয়ার ছেলের দরকার আছে উপমহাদেশে।

-----------------------------------
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি, আর কেউ জানে না

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

সৌরভকে নিয়ে আমারো একটা পোষ্ট দেবার ইচ্ছে ছিল, ভালো হলো আপনি দিলেন।
থ্রী চিয়ার্স ফর দাদা।

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

নিঘাত তিথি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ চমৎকার স্মৃতি জাগানিয়া এই লেখাটার জন্য।

কিশোরবেলার খেলার ভীষন ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, নানান সব কান্ড করতাম। সেই সব কান্ডর সাথে সৌরভ গাঙ্গুলী আর শচীন টেন্ডুলকারের নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৯৮-এর পর থেকে যেসব ম্যাচের নাম করলেন তার সবগুলোই দেখা হয়েছে, স্মৃতিগুলো পুরো টানটান, আমি যদিও টেন্ডুলকারের ভক্ত বেশি। কিন্তু আমার বাবা বেশি ভক্ত সৌরভের... বাবা খেলা দেখতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে আদর করে সৌরভকে ডাকতো "ভাইস্তা" মানে "ভাতিজা"। আহারে, সৌরভ আর খেলবে না? ছোটবেলায় ক্রিকেট নিয়ে এর বেশি ভাবতাম যে মনে এই আশংকা এলে চমকে উঠতাম, "যেদিন টেন্ডুলকার আর খেলবে না সেদিন ক্রিকেট দেখব ক্যামনে"? সেই দিনটা তো প্রায় চলেই এলো...

দিগন্ত'দার এই শেষ লাইনটা কেমন বুকের ভেতরে এসে লাগলো।

সৌরভের অবসর তো অবসর নয়, একটা জেনারেশনের সমাপ্তি। আমার জেনারেশনের সমাপ্তিও হয়ে এল ...

বিদায় সৌরভ। তার পাওনা হাজার স্যালুটের মাঝে একটা আমার হোক।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

অভিজিৎ এর ছবি

ঐ একই হোস্টেলের টিভিতে দেখা আমার একটা স্মরণীয় ম্যাচ। ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনাল। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান এমনিতেই তুলোধোনা করেছে। দুজন সেঞ্চুরী করে ৩১৪ রান তুলে বসে আছে। পরের দিন সেমেস্টারের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। খেলা কি ছাড়া যায় নাকি? তাই দেখতে বসলাম। শচিন মারতে শুরু করল। আউট হয়ে গেলে রবিন সিং। উল্টোদিকে চালিয়ে যাচ্ছে তখনও সৌরভ (১২৪)। শেষে কানিতকারের চারে খেলা শেষ হল। গোটা হোস্টেলে আনন্দোৎসব।

আমার এখন পর্যন্ত দেখা সেরা ম্যাচ এইটি। মনে অয়াছে - তখন অটবীতে চাকরী করতাম। খেলা উপলক্ষ্যে কারা যেনো অফিসে একেবারে টিভি নিয়ে এসেছিলো। আমি কাম কাইজ বাদ দিয়ে এক্কেবারে টিভির সামনে! ৩১৪ তখন ওয়ানডে ক্রিকেটে হায়েস্ট স্কোর। ওটাকে টপকে যাওয়ার কথা কেউ ভাবতেই পারছিলো না তখন...সৌরভের ১২৪ তো ছিলোই আর শেষ বলে কানিৎকারের বাউন্ডারী ...।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটার জন্য৷
সৌরভের ঔদ্ধত্য আমার খুব ভাল লাগে৷ লিডার হো তো এয়সা৷ সৌরভ আরো একটা জিনিষ করেছে৷ ভারতীয় দলে প্রাদেশিকতার অবাধ চাষাবাদটা ওর আমল থেকেই অনেক কমে আসে৷ সেটাও একটা বিরাট কাজ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দিগন্ত এর ছবি

জামা খোলার ভিডিওটা পেলাম ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

প্রতিভা একটু উদ্ধত না হলে জমে না। সেই কারণেই সৌরভ আমার প্রিয় ক্রিকেটার-ব্যক্তিত্ব। মানসিক দৃঢ়তা কাহাকে বলে এবং উহা কতো প্রকার ও কী কী, অজস্র উজ্জ্বল উদাহরণসহ তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

খুব ভালো লাগলো, দিগন্ত।

পুনশ্চ. এই লেখাটিও দুর্দান্ত লেগেছে আমার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হিমু এর ছবি

ভারতীয় ক্রিকেটে প্রাদেশিকতা নিয়ে একটা লেখা পড়তে পেলে বেশ হতো।

দিগুবাবু দেখছি আমার ব্যাচমেট।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

আপনার ব্যাচমেট বটে হাসি
হ্যাঁ এমনিতে ভারতীয় প্রাদেশিকতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। কিন্তু ব্যাপারটা হল, আপনারা ব্যাপারটা বুঝবেন না মনে হয়। আপনাদের দেশে সবাই বাঙালী, তাই একটু অদ্ভুত ঠেকতে পারে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কিন্তু ব্যাপারটা হল, আপনারা ব্যাপারটা বুঝবেন না মনে হয়। আপনাদের দেশে সবাই বাঙালী, তাই একটু অদ্ভুত ঠেকতে পারে।

- বিষয়টা নিয়ে আগে লিখুন তো! তারপর দেখা যাবে বুঝতে পারি কি পারি না। যদি একান্তই না বুঝতে পারি তখন না হয় আরও ভেঙে বুঝিয়ে বলবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা।
সৌরভ প্রচুর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতো খেলার মাঠে, কখনো বিরক্ত লাগতো, কখনো অসম্ভব ভালো। মাঝে বাদ পড়ায় খুব মন খারাপ হয়েছিলো, পরে আবার ফিরে আসায় খুশিও হয়েছিলাম অনেক।

সৌরভ আমার খুউব প্রিয় ক্রিকেটারদের একজন। ওর ব্যাটিং স্টাইল, বিশেষ করে অফ-ড্রাইভ, ডাউন দা উইকেট- এই শট দুটো খুবই এনজয় করতাম।
দাদা চলে যাওয়ায় খুব খারাপ লেগেছে। আপনার শেষ প্যারাটা পড়ে মনটা খুব বিষন্ন হয়ে গেল।

দিগন্ত এর ছবি

কমেন্ট্রী শোনেন ... আরেকটা ছয় দেখে নিন -


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রেনেট এর ছবি

দাদা বরাবরই আমার প্রিয় ক্রিকেটার (যদিও ভারত দলের সাপোর্টার নই)। তার মত লড়াকু মানুষ খুব কমই দেখেছি। যেভাবে সে কামব্যাক করল, কোন বিশেষণ দিয়েই তা প্রকাশ করা সম্ভব না।
ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের কথা তো কখনও ভোলার নয়।
ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ককে কুর্ণিশ।
দুঃখ একটাই, দাদার ক্যারিয়ার নিয়ে এভাবে টানা হ্যাচড়া করা হল।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ও নেতা ছিলো... ভীষণ একটা নেতা ছিলো।
ক্রিকেট দেখার আকর্ষনটা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবাই যেটাকে "ঔদ্ধত্ত্ব" বলে, সেটার জন্যই সৌরভকে বেশি ভাল লাগতো। গায়ের চামড়া একটু গাঢ় হলেই যে ম্যান্দামারা ভদ্রলোক হতে হবে, এমন কথা নেই। সৌরভের কাছ থেকে এই ব্যাপারটা শেখার আছে।

স্পিনের বিপক্ষে সৌরভের মত কেউ আর আসবে কিনা জানি না। ক্রিকেটের খোঁজ নেই না অনেক দিন হয়। ধুম করে সৌরভের বিদায়ের খবরে মন খারাপ হয়ে গেল খুব।

ঢাকার সেই খেলা মাঠে বসে দেখেছিলাম। দুর্ধর্ষ!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এই মানুষটার কোন তুলনা নাই। লারা যেদিন অবসর নিল সেদিন মনে হইছিল আর জীবনেও ক্রিকেট খেলা দেখুম না। এখন সে কষ্টটা আবার ফিরে আসছে। একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। স্পিনের বিপক্ষে ডাউন দ্য উইকেটের ছয়গুলা সারাজীবন মনে থাকবে।

হে অফ সাইডের ঈশ্বর বিদায়।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

দিগন্ত এর ছবি

মুরলীর বিরুদ্ধে একটা ছয় ... টনটনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১৯৯৮ সালে ঢাকায় স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল যখন চলছে তখন রমজান মাস। ইফতারের সময় সমাগত, খেলাও চরম উত্তেজনায় উঠেছে। সৌরভের সেঞ্চুরি আর রবিন সিং-এর অটল হয়ে টিকে থাকা ভারতকে জয়ের আশা যোগাচ্ছে। এদিকে আবার দিনের আলো মরে আসছে। ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে খেলা আইনসিদ্ধ হবে কিনা সেটা নিয়ে জল্পনা চলছে। (হার্ডকোর পাকি সাপোর্টার পত্রিকাগুলোতে পরের দিন এটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। তারা লিখেছিল আম্পায়ারের উচিত ছিল আলোর স্বল্পতার দরুন খেলা বন্ধ করে দেয়া)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কাপ কি শেষে 'পাকিস্তান' জিতে নিয়ে যাবে! হৃষিকেশ কানিৎকারের বাউন্ডারি সীমানা পেরুতে না পেরুতে মাগরেবের আজান শুরু হয়ে যায় (অর্থাৎ ঐদিনের রোজার সময় শেষ), রোজাদার দর্শকেরা আয়েশ করে পানিতে চুমুক দিয়ে ইফতার শুরু করেন।

২০১২ সালের আইপিএল, খেলোয়ার হিসাবে সৌরভের শেষ সিজন। সৌরভের দল পুণে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার অবস্থান পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। পুণের শেষ খেলা কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে। ১১-তম ওভারের খেলা চলছে। ব্যাট হাতে স্ট্রাইকিং এন্ডে বাঁহাতি সৌরভ আর বল হাতে অপর প্রান্তে বাঁহাতি সাকিব আল হাসান ওভারের চার নাম্বার বল করতে এগিয়ে আসছেন। রাউন্ড দ্য স্টাম্প বল মাঝে একটু পিচ করে ধেয়ে এলো। সৌরভ ব্যাট চালালেন বটে কিন্তু বল ব্যাটে না লেগে লাগলো প্যাডে। আম্পায়ার আঙুল তুললেন -এলবিডব্লিউ! এক বাঙালীর হাতে আরেক বাঙালীর পেশাদার ক্রিকেটে খেলোয়ারী জীবনের অবসান ঘটলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।