দুগ্ধপোষ্য শিশুর অর্থচিন্তা

এনকিদু এর ছবি
লিখেছেন এনকিদু (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৫/২০০৮ - ৩:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিবছর আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর থেকেই নতুন ছেলে-মেয়েদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায় । ভর্তি সঙ্ক্রান্ত বিভিন্ন কাজের ফাঁকে এরা বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারে । কেউ কেউ শুধু আড্ডা মারার জন্যও আসে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাদ পেতে চায় আর কি । ভর্তি সঙ্ক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পছন্দের বিভাগ তথা বিষয় ঠিক করা । সীমিত আসনের কারনে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাস্থান অনুযায়ী অগ্রাধিকার দেয়া হয় বিভাগ বন্টনের ক্ষেত্রে । তবে সাধারনত
নিজের মেধাস্থান থেকে আন্দাজ করা যায় কোন বিভাগে পড়ার সুযোগ হতে পারে, বা কোন বিভাগে একেবারেই না । বলা বাহুল্য, যাদের অবস্থান মেধা তালিকার উপর দিকে তাদের জন্য ব্যাপারটা বেশ সহজ ।

এবছর ভর্তি-পরীক্ষার পর এরকম সময়ে একদিন ক্যাফের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম । শুনি কিছু পোলাপান আলাপ করছে, এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আলাপের বিষয় যথারীতি কোন বিভাগে ভর্তি হবে বা হতে চেষ্টা করবে এসব । একজনকে বলতে শুনলাম, "অমুক বিষয় থেকে পাস করে আজকাল এত টাকা বেতনের চাকরি হচ্ছে, কিন্তু তমুক বিষয়ে মাত্র ওতো টাকা ।" আরেকজন বলে, "হ্যাঁ, আর পাস করে

আমার ধারনা ছিল পাস করার পর চাকরি,বেতন এসব নিয়ে চিন্তা করে শেষ বর্ষের ছাত্ররা । আর প্রথম বর্ষের ছাত্রদের আলোচনার বিষয় বস্তু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের হাল্কা দিক গুলো, মানে ফূর্তিজনক জিনিস গুলো যার স্বাদ আগে পাওয়া হয়নি । অন্তত আমি আর আমার সহপাঠীরা তাই করেছিলাম । বুঝলাম না আজকাল কি ছাত্ররা অনেক বেশি career সচেতন, নাকি আমরাই ভোদাই ছিলাম । জীবনের মহেন্দ্রক্ষনে পৌঁছে যতসব আজগুবি জিনিস নিয়ে মাতামাতি করতাম । একটু অবাক আর একটু দুঃখিত হলাম এই ঘটনায় । একটা ছোট দল দিয়ে তো আর সবাইকে বিচার করা যায় না । এরকম ভেবে সেবার দুঃখভাবটা বিদায় করে দিলাম মন থেকে ।

কিন্তু পরেরদিন আমার কপালে আরো একটু দুঃখ লেখা ছিল । দুপুরে ক্লাস শেষ করে হলে আমার ঘরে এসে বসে আছি । রুমমেটরা কেউ ঘরে নেই, থাকলে হাল্কা গল্প গুজব করা যেত । ভাবলাম কিছুক্ষন ঝিমাব, এমন সময় পরিচিত এক 'ছোট ভাই' হাজির, সাথে করে এনেছে তস্য 'ছোট ভাই' । একে আপাতত আমরা 'ছোটতর ভাই' নাম দিতে পারি ।

জানতে পারলাম ছোটতর ভাই এবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে । মেধাস্থান ভাল হওয়ায় ইচ্ছেমত বিভাগে ভর্তি হবার নিশ্চয়তা রয়েছে । খোঁজ খবর নিয়ে জানতে চায় কোন বিভাগে ব্যাপার-স্যাপার কিরকম । আমার বিভাগ সম্পর্কে কিছু জানতে চায় আমার কাছে । ঝিমানর বিলাসীতা ত্যাগ করতে হবে জেনেও আমি সানন্দে রাজী হলাম, তবে মনে হয় তখন রাজী না হয়ে পরে আসতে বললেই ভাল করতাম ।

ছেলেটা প্রথমে আমাকে যেই প্রশ্নটা করল, তাতেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । তাকে উজবুক বলব নাকি বেয়াদব বলব বুঝে উঠতে পারলাম না । শেষ পর্যন্ত কিছুই বললাম না । তার প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে উল্টা জিজ্ঞেস করলাম আরো কিছু জানতে চায় নাকি ? তার দ্বীতিয় প্রশ্নটাও প্রথমটার মতই ছিল, ফলাফল-মেজাজ খারাপ ভাবটা মনের মধ্যে বসে গেল । আমি দুই প্রশ্নের উত্তর একসাথে দিলাম, "কোনটাতেই খুব একটা বেশি পাওয়া যায় না । সত্যিই যতি বেশি পেতে চাও তাহলে এখানে পড়ে লাভ নাই ।"

পাঠক হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছেন তার প্রশ্ন গুলো । প্রশ্ন দুটি তুলে দিচ্ছি, ঠিক যেভাবে সে জিজ্ঞেস করেছিল,

১. ভাইয়া, {আমার বিভাগের নাম} থেকে পাস করে শুরুতেই কত বেতনের চাকরি পাওয়া যায় ?
২. {আমার বিভাগের নাম} এর চাকরিতে নাকি বেতন {অপর একটি বিভাগের নাম} থেকে বেশি ?

আজকাল ছোট ছোট দুধের বাচ্চারাও দেখি টাকা পয়সা চাকরি বাকরির কথা ভাবে । সবাই কত সচেতন । কেউ আর প্রথম বর্ষে আমাদের মত জিজ্ঞেস করেনা তিতুমীর হলে মজা বেশি নাকি আউল্লায় ? মজা করে নষ্ট করার মত সময় কার ?


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

ভাই এনকিদু, গুরুতর কারণ না থাকলে বড় ভাইকে ধরে বড়তর ভাইদের কাছে হলে গিয়ে বেতনের খোঁজ করে না কেউ। ঐ দুগ্ধপোষ্যের এই অনুসন্ধানের পেছনে গুরুতর কারণ নিশ্চয়ই আছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হুমম ভালো লাগল পড়ে, আমিও ভোদাই দলেই ছিলাম টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতাম না, আমার নিজের ইচ্ছা ছিল সাইকোলোজি পড়া, চ্যান্স ও পেয়েছিলাম। আমি যা পড়েছি তা সম্পূর্ন বাবা মার ইচ্ছায়, অবশ্য এনিয়ে এখন আমার কোনও রিগ্রেট নেই।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ
- এনকিদু

অতিথি লেখক এর ছবি

হু, এনকিদু ভাই ছোটরাই মনেহয় আমাদের থেকে সব কিছুতেই এগিয়ে যাচ্ছে, পড়ালেখার দিক দিয়েও দেখি ওরা আমাদের থেকে সিরিয়াস বেশি।আর কর্মচিন্তা তো আছেই।ভালই বলেছেন।লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

~~~টক্স~~~

শামীম এর ছবি

আমি বাড়ির বড় ছেলে। বাবাকে সবসময় অসুস্থ দেখতাম। কাজেই ফট করে বাবা মারা গেলে আমাকে হয় রিকশা চালাতে হবে অথবা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হালচাষ করতে হবে .... .... এই রকম চিন্তা মাথায় রেখে আলগা ফুর্তির (প্রেম প্রেম ভাব ইত্যাদি) কথা চিন্তাই করতে পারতাম না।

ইনকাম(বৈধভাবে), চাকরীর সুযোগ এসবই ভাবতাম .... অটো নিয়ে পাশ করা পিছানোর চিন্তাও করতাম না। আমারে কেউ আঁতেল ভাবলে আমার কিছুই এসে যেত না ... আমার বাবা মরলে তো আর ওরা এসে আমার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেবে না। মা আর ভাইদের দায়িত্ব আমার কাঁধেই পড়বে। কাজেই মানসিক ভাবে উজবুক বা বেয়াদব হয়েই ছিলাম।

ইশ্ আমার যদি সুগার ড্যাডি থাকতো ... কত ভোদাই হতে পারতাম মন খারাপ
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

শামীম ভাই,
আপনার বিরক্তির উদ্রেক করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । আপনি যেই পরিস্থিতির কথা বললেন, সেরকম বা কাছাকাছি পরতিস্থিতিতে অনেকেই থাকে । আর আমাদের এখানে সুগার ড্যাডি খুব বেশি ছেলেমেয়ের থাকেও না । বেশিরভাগই তো মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়ে । আমার ঘরে আসা ছোটতরভাই নিজেও ওরকম পরিস্থিতিতে থাকলে আমি ভুলেও তাকে নিয়ে ব্লগ লিখার মত ফিঁচলামো করতাম না । তাকে যতখানি পারি সহযোগীতা করার চেষ্টাও করতাম ।

শুরুতে অটো নেয়া, পিএল বাড়ানো এই টাইপ কুবুদ্ধি কারো মাথায় থাকে না । আগের বছরের বড় ভাইদের দেখাদেখি এগুলো শিখে । বড় ভাইয়েরা রাজনীতির পাশাপাশি টাকার প্রতি মোহ আর "পাস করলেই ৩০ হাজার টাকা বেতন" এই জিনিস শিখিয়ে নির্দোষ পোলাপানকে নষ্ট করতে দেখেছি অনেক । শুধু পাশ করলেই তো হবেনা, যেটা শিখতে এসেছি সেটা শিখে বের হতে হবে - এই দরকারি কথাটা খুব কম বড়ভাইকে বলতে শুনেছি ।

বড়ভাইয়েরা সবাই এরকম ক্ষতি করেন তা না । অনেক ভালো বড়ভাইও আছেন । কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ।

- এনকিদু

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

শামীম ভাইয়ের মন্তব্য অনেকের জন্যই খাটে।
আবার সুগার ড্যাডির সন্তানদের মধ্যেও চরম অর্থচিন্তিত কেউ কেউ থাকে। একযুগ আগেই ক্রীড়া সংস্থার করিডোরে দেখেছি, খেলা শিখতে আসা আট-দশ বছরের বাচ্চারা ফুটবল না ক্রিকেট কোনটা খেললে বেশি টাকা হবে এমন হিসেব করত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঐ ছোট বাবুরাই মনে হয় একযুগ পর বড় হয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছে ।

-এনকিদু

রায়হান আবীর এর ছবি

এনকিদু ভাই, টেনশন নিয়েন না।
আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন আমাদেরও আড্ডার অন্যতম বিষয় ছিল কোথায় চাকরি করলে ভালো হবে, এই ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করে কতো টাকা বেতন পাওয়া যায়, কম্পুটারে পড়া ভালো না ইলেক্ট্রিক্যালে পড়া ভালো এইসব আবজাব। কিন্তু ধীরে ধীরে ঐটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেকেন্ড ইয়ার কিংবা এখন থার্ড ইয়ারে কাউরে চাকরি বাকরি নিয়ে ততটা আলোচনা করতে দেখিনা...

এগুলা ফার্স্ট ইয়ারের ফ্যান্টাসি...

---------------------------------

সবজান্তা এর ছবি

যদিও আমি নিজেই প্রথম দিকের সেমিস্টারগুলি বেশ আনন্দ এবং হৈ হুল্লোর করে পার করেছি ( এবং শেষেরগুলিও করছি ), তবুও আমি শামীম ভাই এবং হিমু ভাই এর সাথে সহমত। প্রথমত হয়ত ছেলেটির সত্যিই জানা দরকার ছিল কোন বিষয়ে পড়লে বেশি টাকা কামানো যাবে। সারা জীবন বাবার ঘাড়ের উপর বসে পড়াশোনা করেছি, ধান-চালের কনভার্সন রেট সম্পর্কে কিছুই টের পাইনি। কিন্তু আমার ছাত্রাবস্থায় আমার বাবার কিছু হলে, অবস্থা আমার জন্যও বেশ গুরুচরণ হতে পারতো। তাই এভাবে যদি কেউ ভাবে, তাহলে ব্যাপারটা কিঞ্চিত বুঝতে পারি ; যদিও আমি নিজে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই উড়ন্ত দিন কাটিয়েছি শুরুতে।
বড়ভাইদের কাছে পরামর্শ চাইতে যাওয়ার ব্যাপারে সুফল কুফল দুই ই আছে। আমি এক সময় বেশ আই আর সি (চ্যাটিং ) ফ্রীক ছিলাম। বুয়েটে ভর্তি হয়েই বুয়েটের চ্যাটিং চ্যানেলে জয়েন করলাম। সেখানে যেয়ে সিনিয়র ভাইদের সাথে বিস্তর খাতির হয়েছিল, অনেক মজাও হত। কিন্তু ক্ষতি যেটা হয়েছিল, ওখানে অধিকাংশ বড় ভাইই বলতেন যে, রেজাল্ট সিজিপিএ দিয়ে কিছুই হবে না, চাকরিটাই আসল- আর আমার যা বিষয়, সেটাতে আরাম করে ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি হয়ে যাবে। তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে আমি শুরুর থেকেই এত রিল্যাক্সাড ওয়েতে পড়াশোণা করে সিজিপিএর এমন বারোটা বাজিয়েছি যে, শেষের দিকে এসে এখন হাত পা ছুড়ে কাঁদলেও আর লাভ নেই, শুরুর সহজ সেমিস্টারগুলিকে হেলায় ধ্বংস করেছি স্রোতে গা ভাসিয়ে। তাই মাঝে মাঝে সব বড় ভাই এর উপদেশও যে শুনতে নেই - সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

ওখানে অধিকাংশ বড় ভাইই বলতেন যে, রেজাল্ট সিজিপিএ দিয়ে কিছুই হবে না, চাকরিটাই আসল- আর আমার যা বিষয়, সেটাতে আরাম করে ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি হয়ে যাবে।

এধরনের বাজে কথা যে কত ছেলেমেয়ের ভীষন ক্ষতি করেছে তা বলা লাগে না । এসব 'উপদেশ' এর প্রভাব বহুবিধ । প্রথমত আপনি যেই সমস্যার কথা বললেন, সেটাতো আছেই । তার পর আছে মারাত্নক অহমিকার একটা ব্যপার । আমার নিজের ব্যাচে প্রায় সব ভাল ছাত্ররাই তথাকথিত সেরা বিভাগে ভর্তি হয়ে গেল । একমাস যেতে না যেতেই দেখি তারা বাকিদের সাথে আগের মত করে মেলামেশা করে না । অচ্ছুতের থেকে গা বাঁচিয়ে চলার মত আর কি । নিজেরা নিজেরা জটলা করে থাকে । আমরা যারা অ-সেরা বিষয়ে পড়েছি, তাদের সাথে আড্ডায় খুব একটা বসে না । স্কুল কলেজে পাশা পাশি বসা বন্ধু এরকম করলে কেমন লাগে বলেন দেখি ।

সেরা বিভাগের একদল ছাত্রতো আবার এককাঠি বেশি পাকা । তারা মুখের উপরেই অন্যদেরকে বলে দেয়, "তোদের ডিপার্টমেন্টে তো এসব কিছু শেখায় না ।" বুঝেন মজা । এসবই ঐ "পাশ করলে ৩০ হাজার" এর যাদু ।

আমার এই ব্লগের মাধ্যমে বলতে চেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হওয়া ১৮ বা ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের কানে "৩০ হাজার" এর মন্ত্র দেয়াটা উচিত না বলেই আমি মনে করি । এই বয়সে কান্ডজ্ঞান অনেক কম থাকে । যার ফলাফল এসব অহংকারী আচরন ।

- এনকিদু

স্পর্শ এর ছবি

এনকিদু যে বিষয় টা বলতে চেয়েছে সেটা আমিও খেয়াল করেছি। হিমু ভাই আর শামীম ভাই এর সাথে এক মত যে অনেকের ই হৈহুল্লোড় এর বিলাসিতার সুযোগ থাকেনা। আমার নিজেরো ছিলনা। কিন্তু এনকিদু মনে হয় যেই বিষয়টা বলতে চায়নি।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি। বুয়েটে অনেক সুগার ড্যাডির ছেলে মেয়েরাও পড়তে আসে ঠিক। এবং মজার ব্যপার হল তারাও কিছু পছন্দ করার আগেই টাকা গুনে!! এই ব্যপার টা কিন্তু বিত্তশালী পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি।

এনকিদু যেহেতু বলেছে যে সেই 'ছোট ভাই' আর 'ছোটতর ভাই' তার পরিচিত আমার মনে হয় তাদের যদি আসলেই শামীম ভাই বা আমার মত অবস্থা হত তাহলে এনকিদু সেটা জানতো।

আমার নিজের বুয়েট লাইফ কেটেছে মাসে আড়াই অথবা তিন হাজার টাকার টীউশনি করে। আমিও বাবার বড় ছেলে। কিন্তু কৈ? সাবজেক্ট চুজ করার সময় টাকার ব্যপার টা তো এক মুহুর্তের জন্যাও মাথায় আসেনি। আমার প্যাশন ছিল যে সাবজেক্টে সেটাতেই চোখ বুজে চয়েস দিয়েছি।

আগের দিন একটা সুন্দর কথা শুনলাম "মানি ইজ নট দ্য রুট অভ অল ইভিল, ইট ইজ দ্য লাভ অভ মানি। লাভ!!"
টাকা আমাদের সবারই দরকার। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যদি শুধু টাকার কথা চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করে তার কাছ থেকে আমরা কি আশা করবো!! বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু পয়সা বা সম্পদ অর্জনের ট্রেনিং সেন্টার না। বিশ্ববিদ্যালয় হল সেই প্রতিষ্ঠান যা এমন কিছু মানুষ তৈরি করবে যে মানুষ গুলো নিজেরাই একেকটা সম্পদ।

আমি এখনো অনেক জুনিয়রের কাছ থেকে টাকা পয়সা সঙ্ক্রান্ত প্রশ্ন শুনি। আপনারা যারা বুয়েটে বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তারা সবাই জানেন যে যেকোন সাবজেক্টই প্যাশন নিয়ে পড়লে ভাল করা সম্ভব। অনেক জুনিয়রের প্যরারেন্টস দেরও ঝগরা করতে শুনি কোন সাবজেক্টের ডিমান্ড বেশি সেইটা নিয়ে!! বলাই বাহুল্য এখানে ডিমান্ট মানে টাকা।

নতুন রা প্রশ্ন করবে এ আই, ইলেকট্রনিক্স, নতুন টেকনোলজী, বড় ভাইরা কে কি করেছে কেমন করছে এসব নিয়ে। গবেষণা প্রচেষ্টা নিয়ে। আমাদের এনকিদু একজন সফল গবেষক। তার একাধিক আন্তর্জাতিক মানের গবেষনা পত্র আছে। আমার দুর্ভাগ্য আমি যখন বুয়েটে যাই তখন এরকম কোন বড় ভাই এর সাথে পরিচয় হয়নি। বড় ভাই দের কাছে নিজের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে বড় ভাই রাও তখন বলত আরে এই সাবজেক্ট নিয়েছো! এইটা তো আর এখন টপ সাবজেক্ট না! এইটা নিসো ক্যান?? চাকরি নাই!!! অ্যাঁ

অবশ্য নতুন নতুন ঢাকায় এসে তখন হলের বড়ো ভাই দের সাথে কথা বলতেও ভয় করতো। তাই হয়ত ভালো কোন বড় ভাই এর গাইডেন্স পাইনি।

আর টাকা কিন্তু এমনিতেই চলে আসে। অন্তত বুয়েটে যে সাবজেক্টেই পড়েন না কেন। খুব দরকার হলে টিউশনি কোচিং বা পার্ট টাইম জব। অনেক ধরনের সুবিধাই অন্তত বুয়েটের ছেলেদের আছে।

-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের এনকিদু একজন ... ... ... আছে।

এইভাবে হাটে হাঁড়ি না ভাঙলেও পারতেন । যাউক গা, ভেঙেই তো দিলেন, এখন আর কি । ইয়ে, মানে...

আমি কিছুক্ষন আগেই শামীম ভাইয়ের এবং সবজান্তার মন্তব্যের একটি করে জবাব লিখেছি, কিন্তু তার পরেও কিছু জিনিষ বিস্তারিত বলা হয়নি । আপনি সেগুলোও বিস্তারিত বলে দিলেন । ধন্যবাদ আপনাকে ।

বড় ভাই দের কাছে নিজের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে বড় ভাই রাও তখন বলত আরে এই সাবজেক্ট নিয়েছো! এইটা তো আর এখন টপ সাবজেক্ট না! এইটা নিসো ক্যান?? চাকরি নাই!!!

আসলে এই "টপ সাবজেক্ট" , "পাস করলেই ৩০ হাজার", " অমুক সাবজেক্টের চাকরি নাই" এই ধরনের কথাগুলো শুনতে খুবি কুৎসিৎ লাগে । ছোটদের একটা জিনিষ যত্ন করে বুঝিয়ে/শিখিয়ে দেয়া উচিৎ, ডিগ্রি দেখে চাকরি দিবে না । যোগ্যতা দেখে দিবে । অমুক বিষয়ে পড়লেই যে পাস করে ৩০ হাজার হবে এটা ভুল ধারনা । তথাকথিত অনেক সেরা বিষয়ের অনেক সেরা ছাত্ররাও দীর্ঘদিন বেকার বসে থাকে যোগ্যতার অভাবের কারনে ।

- এনকিদু

স্বপ্নাহত এর ছবি

আমার ক্যারিয়ার চিন্তা এখনো মাথায় ঠিকঠাক ঢোকেনাই। বাইর হওনের যদিও বেশি বাকি নাই...

তাইলে মনে হয় এখনো ভোদাই ই আসি... কি কন??

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

ওরে মা ! এই খানে তো দেখি সব বুয়েট স্টুডেন্ট।
কির্তীনাশা

শামীম এর ছবি

আগের মন্তব্যটা একটু বেশি ঝাঁঝালো হয়ে যাওয়াতে আন্তরিক দূঃখ প্রকাশ করছি।

কঠিন সময় পার করেছি সেই সময়টাতে। তাই হয়তো আমার মন্তব্যও একটু বেশি মেজাজ খারাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। মাঝ রাতে মায়ের হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখেন সমস্ত বিপদে পাথরের মত কঠিন মায়ের মুখ শুকিয়ে চুণ আর বলছে "বাবা আয়তো একটু তোর বাপের হাত-পা গুলো মালিশ করে দে .. প্রেশার খুব বেশি উঠেছে" - কেমন লাগে?
----------

এছাড়া সিনিয়র কোন বড়ভাইকে এই ধরণের প্রশ্ন করলে তাঁর মেজাজ খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক ... ... কারণ উত্তরে হয়তো বলতে হবে যে নিজের বিষয়টাতে ভাল বেতনের চাকরী হয় না ... কিংবা হয়ত পড়া শেষে অনিশ্চয়তার কথা মনে পড়েও মেজাজ খারাপ বা হতাশ লাগে।

আজকের বাজারে যেই চাকরীর চাহিদা বেশি আজ থেকে ৪/৫ বছর পরেও যে সেটার অবস্থা রমরমা থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। ঐ বিষয়ের চাকরির ক্ষেত্র সম্পৃক্ত হয়ে গেলে নতুনদের চাকরী পেতে কষ্ট হবে সেটা একটা বাস্তবতা। অনেক সিনিয়রদের কাছে শুনেছি ... তাঁদের সময়ে ৩য় বর্ষে থাকতেই হলে নিয়োগপত্র এসে যেত ... অর্থাৎ কাজ আছে লোক নাই -- তাই পাশ করার আগেই চাকরী।
---------

যে কোন বিষয়েই ভাল চাকরী হবে যদি সেটার শীর্ষে উঠা যায়। আর নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে কোন বিষয়েই অবস্থান ধরে রাখা যায় না।
---------

বাস্তবতা এই যে - আমরা ডিগ্রী পাওয়া এবং তারপর ভাল উপার্জনের আশায় লেখাপড়া করি। শুধু জ্ঞানলাভের আশায় বা আনন্দের জন্য পড়া- এমন কারণে খুবই নগন্য সংখ্যক মানুষ লেখাপড়া করেন। ..... ..... সুতরাং আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামা উচিত।

------
আমার এখানের সিনিয়র ছাত্ররা এসে প্রশ্ন করে স্যার কোন বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হলে ভাল হয় .... কিংবা কোন বিষয়ে মেজর করলে ভাল হয় .. ইত্যাদি। আমি বলি ... তোমার টার্গেট কী? কোথায় স্থায়ী নিবাস গড়তে চাও? সেটার একটা লক্ষ্য ঠিক করা থাকলে ব্যাপারটা সহজ হয়। যেখানে স্থায়ীভাবে থাকার ইচ্ছা ইন্টারনেটে সেখানকার চাকরীর সাইটে ঢুকে দেখ ওখানে কোন ধরণের চাকরীর বিজ্ঞাপন বেশি। কিংবা স্থানীয় খবর পড়ে পরবর্তীতে কোন ধরণের চাকরীর বাজার হতে পারে এমন আভাস পাওয়া যায় সেটা বের কর। খোঁজ খবর নাও ... তারপর তোমার বিষয় নির্বাচন কর।

বুয়েটে ভর্তির পরে সুযোগ সীমিত থাকলেও পরবর্তী সুযোগগুলোতে আমি নিজেও এই ধরণের পদ্ধতিতে নিজের বিষয় বেছে নিয়েছিলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আগের মন্তব্যটা একটু বেশি ঝাঁঝালো হয়ে যাওয়াতে আন্তরিক দূঃখ প্রকাশ করছি।

আরে ধুর, কি যে বলেন শামীম ভাই । আপনার মন্তব্য ছাড়া আলোচনাটা এতদূর আসতে পারত না ।

- এনকিদু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ফার্স্ট ইয়ার কেটে যায় টিএসসিরই বারান্দায় টাইপ দিন ফুরাইছে। যারা এইসব বলে তাগোরে দুগ্ধপোষ্য শিশু বলাতে আমার আপত্তি আছে।
আর আমার কেন জানি এইটা খারাপ লাগে না। আমরা দেইখা আসছি সবাইরে এইমলেস পড়াশোনা করতে। মেট্রিক পাশ করে... ইন্টার পাশ দেয়... তারপর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়... সে বড় হয়া কি হবে বা কি করবে তা ভাবনা খুব একটা কাজ করতো না... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইছে তাতেই যথেস্ট। আর যারা ভাবতো তাদের চিন্তাও এখনকার চেয়ে খুব উন্নত ছিলো না। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওনের জন্য লাখে লাখে পোলাপান যে শহীদ হয়া গেছিলো তারা কেউ নোবল প্রফেশন ডাক্তারির জন্য না... এই প্র্যাকটিসে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানো যায় বইলাই। তখন টাকার কথাটা সরাসরি বলতো না... এখন বলে। তফাৎ এট্টুকই। কেউ কখনই ভোদাই ছিলো না... এখনও নাই।
আর এদের এই ভাবনার পিছনে বড় কারন তাদেরে ছোটবেলা থেকা গড়াই হইছে এইভাবে। এবং তারা স্পষ্টতই জানে যে আগামী পৃথিবী স্রেফ টাকারই পৃথিবী। পৃথিবীর সবকিছুর মূল্য নির্ধারন হয়া গেছে... প্রেম ভালোবাসা থেকে সেবা পর্যন্ত... সেইযুগে এই ভাবনা অবান্তর হয় না।
আপনে হয়তো টাকার অঙ্কবিচারে বুয়েটে ভর্তি হন নাই... কিন্তু মনের মধ্যে এইটা তো জানা ছিলো যে বুয়েট পাশ দিলেই নিশ্চিত জীবন? ঘটনায় কতটুকু তফাৎ?

তবে আমি বোধহয় আদতেই ভোদাই ছিলাম। আমাদের সময়ে আমি এবং আমরা কয়েকজন বন্ধু থিয়েটার আর লেখালেখি ছাড়া আর কিছু করবো না বইলা ঘোষনা দিলাম। এবং তজ্জন্য কোনও বিশ্ববিদয়ালয়ে পড়াটারে গুরুত্ব বিবেচনা করি নাই। সার্টিফিকেটও না। আমরা বেশ কয়জন এইচএসসির পরে লেখাপড়া ছাড়ান দিলাম নাটকের টানে যখন বাংলাদেশে কেবল বিটিভি ভরসা। স্যাটেলাইট চ্যানেল তো দূর প্যাকেজই শুরু হয় নাই।
আমি এখনো এইচএসসি পাশই (এই সার্টিফিকেট চাইলেও দেখাইতে পারুম না... কসম আমার জীবনের কোনও সার্টিফিকেটই নাই)। এই নিয়াই আমি বেক্সিমকো এবং স্কয়ারের মতো দুইটা প্রতিষ্ঠানের বেতন খাইছি। মাঝের দুইমাস আমি দুই অফিসেরই বেতন খাইছি কেউ ছাড়ে না বইলা।
আর এখন আমি এই লইয়াই বউ বাচ্চা নিয়া সুখে এবং স্বচ্ছলে দিন গুজরান করি। স্রেফ ঘরে বইসা বইসা নাটক লেইখা আমি যে টাকা কামাই কোনও প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি কইরাও লোকে এত কামাইতারে না। সত্য...

আজকা কি জানি হইছে... কথা আর থামতেছে না... যাইগা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই,

আপনি যেই উদাহরনটা দিলেন, এটা হল একটা কাজ / বিদ্যার প্রতি ভালবাসার উদাহরন । ভাল লেখালেখি করতে পারাটাও একটা বিদ্যা, তাই না । আপনি কাজটাকে আগে ভালবেসেছেন, তাতে সঠিকভাবে আত্ননিয়োগ করেছেন । টাকা নিজেই আপনার কাছে হেঁটে এসেছে ।

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওনের জন্য লাখে লাখে পোলাপান যে শহীদ হয়া গেছিলো তারা কেউ নোবল প্রফেশন ডাক্তারির জন্য না... এই প্র্যাকটিসে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানো যায় বইলাই।

টাকার চিন্তা করে পড়তে আসলে তো শহীদ হতেই হবে । কেউ কেউ মানসিক ভাবে অসুস্থহও হয়ে যায় । মেডিকেল বা ভার্সিটির গল্প বেশি জানি না, আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর পোলাপান আছে এই "পাস করলে বেশি টাকা পাব" মনে করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছে । "ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই" মনে করে আসেনি । যেহেতু এদের মূল চালিকা শক্তিটা কাজ / বিদ্যাটির প্রতি ভালবাসা নয়, এক সময় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে । ভাল শিখতেও পারেনা, ফলাফলও ভাল হয় না । হতাশ হয়ে যায় । বিমর্ষ হয়ে ঘুরে বেড়ায় আর নতুন আসা ছাত্রদের কে ঐসব "চাকরি নাই" টাইপের মন্ত্র শোনায় । চাকরি যদি নাই থাকে, সে নিজে কেন এই চুলায় এসে ঢুকতে গেল ? আমার নিজের ভর্তির সময় এক বড়ভাইয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল । আমি ততদিনে ভর্তি হয়ে গেছি । আমি কোন বিষয়ে পড়ছি শুনে তিনি একটু নাক সিঁটকে বলেন,"ভাল ছাত্ররা তো আজকাল এগুলাতে পড়ে না, আজকাল অমুক সাবজেক্ট ছাড়া চাকরি-বাকরি নাই ।" আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কিসে পড়েন ? ধারনা ছিল উনি মনে হয় অমুক সাবজেক্টের তাই ওকালতি করছেন । দেখা গেল তিনিও আমার বিভাগেরই ছাত্র । আমি বললাম, "তাহলে আপনি কেন এই বিষয় নিলেন ?" ওনার উত্তর হল "তখন এইটাই টপ সাবজেক্ট ছিল" ।

এই হল এদের চালিকা শক্তি । টপ সাবজেক্ট । যদি বেশ্যাবৃত্তি কোনদিন টপ সাবজেক্ট হয় তারা সেই বিষয়ে পড়ার জন্য শহীদ হবে সবাই ।

সবারই বোঝা উচিত "আমাকে দিয়ে কোন কাজটা হবে" । বা অন্য ভাবে বলা যায়, "আমি কোন কাজটা করার সুযোগ পেলে আনন্দিত হব" । আপনি থিয়েটার আর লেখালেখি ভালবাসতেন । আপনি সময় থাকতেই বুঝে ফেলেছেন " আমারে দিয়া এইটা হইবো " ( আপনার মত করে বললাম আরকি ) । তাই আপনি এদিকেই আত্মনিয়োগ করেছেন, সঠিক ভাবে । ফলাফল আপনি নিজেই জানালেন ।

সচেতন হওয়া অবশ্যই দরকার, খুবই দরকার । কিন্তু আধা সচেতন হয়ে লাভ নেই, তাহলে শুধু শহীদ হওয়াই হবে, যুদ্ধ জেতার কথা বাদ । টাকা-পয়সা, প্রসপেক্ট এসব হল সচেতনতার একটা অংশ । একটা কাজ করতে গেলে তার পুরষ্কারটা কি জানা যায় এখানে । কিন্তু করতে না পারলে শাস্তিটা কি সেটাও জেনে রাখা উচিত । reward-punishment system এর মত । বিশ্ববিদ্যালয়ে টপ সাবজেক্ট মনে করে একটা বিষয়ে ঢুকলাম, তারপর দেখি এটা আমার ভাল লাগে না । পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াই । লেখাপড়া কিছু বুঝি না, বুঝতেও ইচ্ছা করে না । নিজেও হতাশ অন্যদেরকেও হতাশ করি । আর চারটি শিক্ষাবর্ষ শেষে একগাদা সরকারি টাকা নষ্ট করে বের হলাম একটা আকামের ঢেঁকি হয়ে এটা তো কোন ভাল কথা না ।

আমি এই বিষয়ে পড়তে এসেছি মানেই অন্য একজনের পড়ার সুযোগ নষ্ট করেছি । এমনও তো হতে পারত, ঐ ছাত্র বা ছাত্রীটি সুযোগ পেলে এই বিষয়ে অনেক বড় এক্সপার্ট হয়ে উঠত । আমি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আসন নষ্ট করলাম, সে হলে আসনটা অলংকৃত করত । তার হয়তো শামীম ভাইয়ের মত অবস্থা ছিল, তার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত এই ভর্তিটা ।

এদেরকে বলতে ইচ্ছা করে,
"আঠার উনিশ বছড়ের ইঁচড়ে পাকা পোলাপান বড়দের মত চাকরি আর টাকার হিসাব করতে পার, বড়দের মত এরকম দায়িত্ববোধের পরিচয় তো কেউ দাও না । সব হিসাব না বুঝে শুধু টাকার হিসাব করলে ঐ টাকা গুলো যে পেছন দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বের হবে এটা কি বুঝ ?"

-এনকিদু

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটমুখে একটা বড় কথা বলি-
সাইন্সের সাব্জেক্টের ছাত্রদের আমার টাকার পিশাচ মনে হয়। ওরা ডাক্তারি পড়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, সাইন্সের অন্য অনেক সাব্জেক্টে অনেকরকম পড়াশোনার অপশন তাদের আছে। তবু সবশেষে একখান এম.বি.এ তাদের করা চাইই চাই। কেন??? প্রশ্নের উত্তর যদি 'আগ্রহ' হতো তা হলে কোন কথা ছিলো না। কিন্তু, বেশিরভাগের কাছেই এম বি এ একটা এডিশনাল সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই না।
আমি নিজের কথা বলি, ক্লাস এইটে পড়ার সময় বড়ভাইয়ার বেশ কিছু বই ঘাঁটাঘাটি করে আমার মার্কেটিং বিষয়টার উপর ব্যপক আগ্রহ জন্মায়। নাইনে আমার সমগোত্রিয় ছাত্ররা আমার বিভাগ নির্বাচন নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। কাছের একজনতো পাগল ঠাউরে দূরে সরিয়ে দিলো। কয়েকজনতো বেশ উপদেশ দিয়েছিল- সাইন্সে ঢোক, পরে মনে চাইলে সময়মতো 'ব্যবসায় শিক্ষা' বিভাগে ঢুকে যাস, অপশনতো খোলাই আছে। কিন্তু শুধু অপশন বেছে কী পড়াশোনা করা যায়?
সেইথেকে আজো আমি 'ব্যবসায় শিক্ষা' বিভাগেই পড়াশোনা করছি এবং এই বিভাগের তামাম বিষয় নিয়া ধারণা নিলেও 'বাজারজাতকরণ' (মার্কেটিং) এর উপর আমার আগ্রহের বিন্দু কখনোই সরেনি। এই বিষয়ে পড়াশোনার ব্যপারটা আমার জন্য 'প্যাশন' কোন সমকালিন চাকরির বাজারের ফ্যাশন না।
আমার কাছে বাংলাদেশের এম্পয়ারদেরকেও অদ্ভুত মনে হয়। ইদানিং বেশিরভাগ চাকরির বিজ্ঞাপনে একটা কমন কথা শোভা পাচ্ছে, 'এম বি এ নিডেড'। মজার ব্যপার হচ্ছে, একজন এম বি এ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তার কোর্স কম্পলিট করেন। এম বি এ কোর্সে থাকে মোট ২০ টি সাব্জেক্ট। এর মধ্য মাত্র চারটা মেজরের সাব্জেক্ট!!! এখন বুঝুন গেরো, একজন ছাত্র- যে কিনা গত আট বছর ধরে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে একটু একটু করে নিজের বুদ্ধি এবং বিদ্যার চর্চা করছে (এস এস সি ২ বছর, এইচ এস সি দুই বছর, বি বি এ ৪ বছর) তাকে কী সহজেইনা টপকে গেলো সেই নব্যশিক্ষার্থী যার নামের পিছনে এম বি এ ডিগ্রিটা আছে।
বি বি এ এবং এম বি এর আর একটা মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট না করলেই নয়; একজন বি বি এ র ছাত্র অনেক সময় পান পড়াশোনা, গ্রুপ ডিসকাশন, নোট ফলোআপ, রিপোর্ট তৈরী করা, নেট ঘাঁটা এবং অন্য অনেক আজাইরা কাজ কইরা বেড়ানোর যেহেতু তার টিউশনি বা পার্ট টাইম কাজ ছাড়া কোন কাজ নাই (অনেকের তো দুইটার কোনটাই নাই)। অন্যদিকে, এম বি এ কোর্সের ছাত্ররা কোন না কোন ফার্মে জয়েন করে তারপর এম বি এ করেন রাভে। তাদের সময় অনেক সীমিত, সুযোগও। তারপরও আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যাক্তিরা ক্যান যে এম বি এর এতো ফ্যান বুঝলাম না।
সেদিন আমার এক স্যার আমার চোখের সামনে একটা এম বি এ প্রোগ্রামের এসাইন্মেন্ট খুলে দেখিয়ে বললেন- 'এম বি এর ছাত্রগুলো যে কী হচ্ছে দিনকে দিন! ইন্টারনেট থেকে কপি করা একটা রিপোর্ট প্রিন্ট করে জমা দিয়েছে কিন্তু ওরা অরিজিনাল রাইটারের নাম মুছতে পর্যন্ত ভুলে গেছে।'

মনজুর এলাহী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।