না বলা কথা (পর্ব-১)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৬/০৩/২০০৮ - ১১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছেলেবেলাটা কেটেছে বড্ড অবহেলায়। না, বাবা-মা'র নয়, নিজের প্রতি নিজের অবহেলায়। এ নিয়ে অবশ্য এখন খুব বেশি হা হুতাশ নেই আমার মনে। কিভাবে কিভাবে যেন নির্লিপ্ততা রপ্ত করে ফেলেছি, বাড়াবাড়ি রকম। কেই কিছু বললে বা কিছু করলেও তা খুব বেশি নাড়ায় না, ভাবায় না। সাধারণত আমার চারপাশের মানুষজন যে জিনিসগুলোতে খুব আহত হয়, যেগুলো নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে বেড়ায়, তার অধিকাংশই (অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে) আমার কাছে নির্বিষ আস্ফালন মনে হয়! না, এর মানে এই না যে আমি অনুভূতিশূন্য এক বায়োবট। বরং অনুভূতির প্রতিটা স্তরই আমার ভেতরে আছে। খুব সুখে খুশি হতে পারি, দুঃখ পেলে কাঁদতেও পারি, তেমনি পারি রাগতে, এমনকি হাসতে অথবা গুমোটা ধরে থাকাও কোন কঠিন ব্যাপার নয় আমার জন্য। তাহলে তো এটা প্রমাণ করে আমিও আর দশজনের মতই। তবে হ্যাঁ, অনুভূতির প্রাবল্য মাঝে মাঝেই বেশ মার খেয়ে যায় আর দশজনের তুলনায়। আমি পারি না কোন জমাট আড্ডায় চেনা/অচেনা/রাস্তায় দেখা মেয়ে মানুষের পোশাক ছাড়া কাঁটাছেড়া করতে, মেজাজ খারাপ করে পারিনা হাজারটা গালির তুবড়ি ছোটাতে, ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেম ভুলতে সিগারেটের ধোঁয়া গিলে দেবদাস মার্কা দাড়ি রেখে শোক ভুলতে অথবা দুদিন পরেই আরেকটা প্রেমের পিছনে ছুটতে! এই ঘাটতি গুলো আজীবন রয়ে যাবে আমার ভেতর! না, এসব না পারার দুঃখ আমাকে খুব একটা আলোড়িত করে না, তবে একটা কষ্ট অনেকদিন ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছি কেন আমি অন্য অনেকের মত হতে পারলাম না! কেউ যে কারো মত নয়, বরং সবাই সবার নিজের মত, এটা আমার অজানা নয়। তারপরও কিছু সাধারণ মাপকাঠি থাকে যেগুলো দিয়ে আমরা অন্য মানুষদের বিচার করে থাকি। হাসতে জানলেই যেমন সুখী হওয়া যায় না, তেমনি হাউমাউ করে কাঁদলেই কষ্টকাতরতা প্রকাশ পায় না। অনুভূতিটা তাহলে কি? এটা কি শুধুই আমাদের তাৎক্ষণিক মানসিক বহিঃপ্রকাশ? আমার তা মনে হয় না, আমার মনে হয় এটা আমাদের একজন থেকে আরেকজনকে আলাদা করে চিহ্নিত করার একটা প্রয়াস মাত্র, নাকি বলা উচিত্ অপপ্রয়াস! মাঝে মাঝে নানানভাবে নাড়া দেয় আমাদের হৃদয়, তারপর আবার ফিরে যায় তার নিজ বাসস্থানে, মনের গভীর অতলে, যেখানে না স্পর্শ করে কোন সূর্যের আলো, না ডাকে কোন পাখির ঝাঁক!

শাকিল বলত, এখনো বলে, "তোমার ভেতর মিয়া খুব বেশি ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স, কেন যে এমনে চিন্তা কর বুঝি না"। আসলে আমি নিজেও কি খুব বেশি বুঝি? আর তারচেয়েও বড় কথা, এটা কি আসলেই কোন ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স? একটা মানুষ যখন তার কষ্টগুলোর ব্যবচ্ছেদ করতে বসে, তখন কি আর সে মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক থাকে নাকি অসতর্কতার কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করে বসে পুরোপুরি!

বড় বেশি কষ্ট লাগে ছেলেবেলার দিনগুলো এত তাড়াতাড়ি (!) ফুরিয়ে যাওয়ায়। ইচ্ছে করে কোন এক পাগলা বিজ্ঞানী কে ধরে একটা টাইম মেশিন বানিয়ে ফিরে যাই সেই দিনগুলোতে। একবার গেলে অবশ্য ফিরতাম না আর কোনদিনই, থেকে যেতাম ওইভাবে অনন্তকাল। অসম্ভব, না? ধুর, নিকুচি করি পদার্থবিদ্যার। ইচ্ছেগুলো একবার পাখনা মেলে উড়াল দিলে কার সাধ্য তা আটকায়! ছোটবেলার টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে। কিন্ডারগার্টেনের দিনগুলো, কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যাওয়া, তারপর প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হওয়া, দুই বছরের বড় বোনের হাত ধরে একসাথে স্কুলে যাওয়া, স্কুল মাঠে গোল্লাছুট, বদন, নিছক দৌড়াদৌড়ি এমনকি ইচিং বিচিং খেলার কথাও মনে পড়ে। অবশ্য আরো পরিষ্কার মনে পড়ে স্কুলে যাওয়ার পথে আপুর "আমরা বাঙ্গালী, বাঙলা মোদের গর্ব" গান শুনে রাগ করা। না, আমি দেশবিরোধী কেউ নই, কোনকালে ছিলামও না। কে জানে, রাস্তায় গান গাওয়াটাই হয়ত পছন্দ ছিল না আমার ওই সময়, যদিও খুব জোরে গাইত না ও, তারপরও কেন যেন আমাকে রাগানোর জন্যই ও ইচ্ছে করেই গাইত শুধু এই গানটাই। আরেকটা কথা বলে রাখা ভাল, ক্লাস-টু তে পড়তাম তখন, তাই দেশপ্রেমিক বা দেশদ্রোহী কোনটাই ছিলাম না তখন। হাহাহা। পুরোন স্মৃতি নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছে আছে। তাই আজ আর কথা বাড়াব না এই প্রসঙ্গে।

আসলে ব্যাপারটা কি, মানুষ যতই তার আবেগকে বশ মানানোর চেষ্টা করুক না কেন, অথবা লাগাম পড়াক না কেন, তারপরও সে তো মানুষই, সতর্কতার ফাঁকফোকর গলিয়ে সুঁচসদৃশ দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে ঠিকই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত আবেগ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেই কোন এক অজানা রাজ্যে, যেখানে তরল দুঃখের চোরাবালি এড়াতে পারলেও বায়বীয় প্রাণহীন স্বপ্নভঙ্গের আঘাত তাকে এলোমেলো করবেই।

গুছিয়ে লিখতে পারতাম না কোন কালেই, তাই বেশ খাপছাড়া হয়ে গেল লেখাটা। শরীরটাও বেশ টায়ার্ড। সকালে আবার অফিসে দৌড়াতে হবে। শেষ করে দেই আজকের মত।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

উলুম্বুশ

অতিথি লেখকের সব কিছু আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ি। বেশ একটা প্রতিযোগিতা ভাব আছে। কে কার আগে সচল হয়ে সেটার। এই লেখাটা ভাল লাগল মনে হচ্ছে আপনি ভালই ফাইট দিবেন।

স্বপ্নাহত এর ছবি

ব্রাদার, আপনার কিছু কিছু ব্যাপারের সাথে আমার ব্যাপারগুলা পুরাপুরি মিলে যায়।মনে হচ্ছিল আমার কথাই আমার হয়ে আর কেউ লিখে গেল।

লেখা ভাল লাগলো। আপনি তো মনে হয় রনি ভাই।শেষে নিকটা লিখে দিয়েন।তাইলে মডারেটর,পাঠক সবার জন্যই সুবিধা হয়।

ভাল থাকবেন।

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল হয়ে গেছে। মানে, নিক টা দেওয়া হয়নি কাল। ওই যে বলছিলাম, ক্লান্তি লাগছিল খুব! "উলুম্বুশ", "অলৌকিক হাসান", "স্বপ্নাহত", সকল ভাইকেই ধন্যবাদ হাসি
আমাদের সবার জীবনেই কম বেশি এরকম মিল থাকেই। তারপরও ভাল লাগল স্বপ্নাহতের মন্তব্য পড়ে। পথ চলতে আর একা লাগবে না আমার, আশা করি! হাহাহা।

অতন্দ্র প্রহরী

sharmin zohra এর ছবি

The writting style is quite beautiful.but it is incomplete,and has no story.When we read something,hope there will be a story,climex but conclusion is not necessary for short stories.If there is a story in it,would be the great! i hope more writting from the guest writter,cause his writting is really good,though it has no story,we can not understand it.

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নিজেকে নিয়ে লেখা ঠিক আছে। কিন্তু - খুব বেশি 'আমি/আমার' বেমানান মনে হলো ।

অতিথি লেখক এর ছবি

শিমুল ভাই, বেমানান/অসঙ্গতি টা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতে লেখার সময় মাথায় থাকবে এটা। হাসি

অতন্দ্র প্রহরী

সিমি এর ছবি

vaia, it is good writing.
i always like your wriningstyle..but it is too small.
it is your living style & thinking but you did not tell the story... :'(

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।