আমরা যাদের মতো হতে চাই

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/০৩/২০০৮ - ৪:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-নিরিবিলি

সেদিন ১৮ মার্চ,বুধবার সকাল থেকে শ্রাবনী বলছিল প্রেস ক্লাবে একটা সম্মেলন হচ্ছে আমরা যেন ক্লাস শেষ করে ওর সাথে যাই।এসব আমার খুবিই আজাইরা লাগে।তারপর আবার women's day উপলক্ষ্যে কতগুলা যুক্তিহীন কথা শুনতে হবে।
কিন্তু দুইটার মধ্যে ক্লাস শেষ হয়ে গেল আর এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের কথা ফেলা যায় না।তাই শ্রাবনীর কথাও আমরা ফেলতে পারলাম না।শুরু হলো আমাদের যাত্রা মহাখালি থেকে প্রেস ক্লাবের উদ্দেশ্যে। একে ত কাঠফাটা রোদ অন্যদিকে আমাদের সি এন জি চলে কম দাঁড়িয়ে থাকে বেশী।এই করতে করতে আমাদের সারে তিনটা বেজে গেল প্রেসক্লাবে পৌছাতে।

অনেক বিরক্ত ভাব নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখি খুব সুন্দর পোস্টারিং করা রুমে ব্রিফিং
চলছে।পোস্টারগুলা দেখে মনে হলো আমার মতো যারা অনীহা নিয়ে আসবে তারা যেন কিছু হলেও জানতে পারে।"আমরা কতটা হেয় যে আমাদের পেপসির বোতলের সেপ এ তুলনা করা হয়।পেপসি যেমন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খাওয়া যায়,মেয়েরাও তাই।নিছক ভোগের বস্তু।বিজ্ঞাপনের অবদানে নারী কত সম্মানীত!"কথাগুলো বলছিলেন ডাক্তার মীনা।

আমরা মেয়েরা সবসময় বলি মেয়েদের স্বাধীনতার কথা,ক্ষমতার কথা।আর উদাহরণ হিসাবে সব উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোকে টেনে আনি।ওই দেশের মেয়েরা এই সুবিধা পাচ্ছে ওই সুবিধা পাচ্ছে,ওরা অনেক স্বাধীন।কারন ওদের কোন জবাবদিহীতা নেই।পূঁজিবাদী যুক্ত্ররাষ্ট্রে চল্লিশ বছর আগে পাশ করানো আইন থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে।পশ্চিমা দেশগুলোতে শুধুমাত্র দুইটা পেশায় নারীরা পুরুষদের চাইতে বেশী উপার্জন করে একটি মডেলিং অন্যটি পতিতাবৃত্তি।নারী স্বাধীনতার অগ্রপথিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষিত হয় এবং প্রতি ১০০ জন ধর্ষকের মধ্যে একজন ধরা পড়ে(সূত্রঃ দি আগলি ট্রুথ-মাইকেল প্যারেন্টি)।শুধু নারী দেহকে উপজীব্য করে ৫৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে।আর পারিবারিক সহিংসতা তো লাগামহীন।দেখুন উন্নত দেশে নারী কত সম্মানীত!আর আমরা তাদের মতো হতে চাই।

বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের একজন বলছিলেন,"আমাদের দেশে শুধু পরিবারের সম্মানের জন্য অনেক সময় মেয়েরা নির্যাতঅনের কথা চেপে যান।"আসলে আমরা চাইলে ওদের মতো স্বাধীন হতে পারব,ক্ষমতাও হয়ত পাব কিন্তু নির্যাতন নামক নির্মম শব্দটার ব্যবহার বেড়ে যাবে।

আমার জীবনের একটি ঘটনা বলে শেষ করব।TARC এ রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টার করছি।ডর্মে এলিট গ্রুপদের সাথে থাকতে হয়।একদিন ওদের মধ্যে একজন খুব কাঁদছে।ভাবলাম বড়লোকদের কান্নাকাটিও বড়লোকি কোন কারনেই হবে।গুরুত্ব না দিয়ে ডর্ম থেকে বের হয়ে যাই।ওমা বিকালে এসে দেখি মেয়ের সাদা চেহারা নীল হয়ে গেছে।যাই জিজ্ঞাসা করি কোন উত্তর দেয় না শূধু কাঁদে।হঠাৎ একটা কাগজে ইংলিশে কিছু লেখা চোখে পরে "আমি তোর বাবার সাথে আর থাকতে পারলাম না।"ওরা অনেক স্বাধীনচেতা এতটাই যে কেউ কারো জন্য সামান্য ছাড় দিতে রাজি না।

বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে যেখানে কোটি কোটি মানুষের জীবিকার ঠিক নেই,সেখানে ক্ষমতা খুঁজে কি হবে?যেখান থেকে শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে সেখানে কার জন্য স্বাধীনতা
খুঁজবো?


মন্তব্য

স্বপ্নাহত এর ছবি

আপনি যে কথাগুলো লিখেছেন সেগুলো এমন নয় যে আমরা কেউ জানিনা।সবাই জানি,সবাই বুঝি। কিন্তু এর প্রতিকার এর জন্য যে সমষ্টিগত ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন সেটার খোঁজ করতে গেলেই কিছু মেলেনা। সবাই শুধু একটু সমবেদনা আর দু এক ফোঁটা উহ আহ করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করে।

আমিই বা তার ব্যতিক্রম কীসে। মন্তব্যটা করে রেখেই পালিয়ে বাঁচবো।

কিন্তু এতকিছুর পরেও কিছু একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি।একদিন নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে,অবশ্যই কিছু একটা হবে...

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হুম
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে সবাই কারন খুজতে খুজতে সমাধানের কথা
ভুলেই যায়।মেয়েরা কয়দিন চিল্লাচিল্লি করে তারপর আবার আগের মতো।মানুষের খেয়েদেয়ে তো কাজ নেই যে ফালতু বিষয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে?তাই না?
-নিরিবিলি

সবজান্তা এর ছবি

বাসে কিংবা সংসদে সংরক্ষিত সীট , এর মানেই কি নারী স্বাধীনতা ? কিংবা উচ্চ শিক্ষার সুযোগই কি স্বাধীনতা ?

অনেক ছোট ছোট ব্যাপারেই স্বাধীনতা লুকিয়ে আছে, দুঃখের ব্যাপার অনেক নারীরাই সেটা উপলব্ধি করেন না। আর তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্টের ব্যাপার হল, অধিকাংশ পুরুষের একটা মানসিকতা যে, নারীরা আজকাল বেশিই স্বাধীনতা পেয়ে যাচ্ছে, তাদের রাশ টেনে ধরা উচিত।

স্বপ্ন দেখি সে দিনের যেদিন, নারীরা সত্যিকারের স্বাধীন হতে পারবে।
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

সেরকম স্বাধীনতা হয়ত কোনদিনও পাবে না।কারণ দুই দলের মধ্যে সবসময় প্রতিযোগীতার মনোভাব কাজ করে।সহযোগীতার দৃষ্টি কারো নাই।
-নিরিবিলি

রায়হান আবীর এর ছবি

হুম...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | সমাচার | প্রৌঢ় (৩০ বছর বা তর্দুদ্ধ)

তাই পড়লাম না। চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।