মা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৮/০৫/২০০৯ - ১১:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- ক্রিং, ক্রিং, …
- হ্যালো
- হ্যালো,… শাহেদ বলছ?
- জ্বী, কে বলছেন?
- আমি তমালের আম্মা।
স্মৃতি হাতড়ে অতল থেকে তুলে আনলাম নামটিকে। তারপর তাড়াহুড়ো করে বললাম,
- খালাম্মা, স্লামালাইকুম। ভাল আছেন?
- হ্যা বাবা, তুমি কেমন আছ?
- জ্বী, আমি ভাল।
- আসলে… বাবা! শুনলাম তুমি নাকি লন্ডনে যাচ্ছ?
- জ্বী, খালাম্মা। কাল যাচ্ছি।
- তমাল তো থাকে ম্যানচেস্টারে। তুমি কি ওর জন্য কিছু জিনিস নিয়ে যেতে পারবে? বেশি কিছু না, এই একটু খাবার। তুমি ওকে ফোন করে দিও, ও ঠিক এসে নিয়ে যাবে।
মাতৃস্থানীয়া কারও এমন অনুরোধ কোন পাষন্ড ফেলতে পারে? তৎক্ষণাৎ জবাব দিলাম, “জ্বী, খালাম্মা, অবশ্যই”।
- তাহলে তোমার বাসার ঠিকানাটা একটু দেবে?
- সে কি, খালাম্মা! আমি গিয়ে নিয়ে আসব। আপনি সেই ওয়ারীর বাসাতেই আছেন তো?
তমাল ছিল আমার ভার্সিটির বন্ধু। একসাথে কত সময় কাটিয়েছি, কত মিছিল-মিটিং করেছি! সে সময়ের সব স্মৃতি যেন হঠাৎ এসে উঁকি দিয়ে গেল। নিজের অজান্তেই মনটা কখনো কখনো যেন সব বাঁধন ছিঁড়ে কোথায় হারিয়ে যেতে চায়। আমার বন্ধুদের মধ্যে তমালই ছিল অনেকটা ছিঁচকাঁদুনে স্বভাবের। সে জন্যই আমরা সবাই ওকে একটু বুঝে-সমঝে চলতাম। আমি আবার ওকে খুব পছন্দ করতাম। কেমন যেন একটা নিষ্পাপ সারল্য ছিল ওর মাঝে। অথচ আজ ওর নামটা শুনে প্রথমে ঠিক মনেই করতে পারছিলাম না। সে কত বছর হল? বিশ? না বাইশ?
ওর মা ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় ‘আন্টি’। দিনে রাতে যখন তখন তাঁকে বিরক্ত করেছি। কখনো মুখের হাসিটি একটুও ম্লান হয়নি। আজ বহুদিন পর সেই অতি প্রিয় আন্টির ফোন পেয়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। জীবনে ভাল কাজ করার সুযোগ খুব একটা হয়না এখন। এবার একটা খুব সওয়াবের কাজ করতে পারব। মাতৃস্নেহে সিক্ত সযত্নে তৈরি করা কিছু খাবার সুদূর প্রবাসে বসবাসরত সন্তানের কাছে পৌঁছে দেয়ার মত পুণ্য আর কি আছে?
বিকেলে গেলাম ওয়ারীর সেই বহুদিনের পরিচিত বাড়িটিতে। বাড়িটি যেন আগের মতই আছে। আশেপাশের দৃশ্যপটের কিছু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। বেশ কিছুটা ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে এলাকাটা। বাড়ির আশেপাশের গাছগুলো সব উধাও হয়ে গেছে, কোথাও খুঁজে পেলাম না আমার প্রিয় সেই পেয়ারা গাছটিকে। বাড়ির গায়ে শ্যাওলা জমেছে, ঠিক যেন পুরনো জমিদার বাড়ি। জমিদারটা কে ছিল? তমাল? বোধ হয় তাই। আমাদেরকে ঘিরে যে প্রাণ-চাঞ্চল্য সৃষ্টি হত এ বাড়িটিতে, তার দু’একটি আবছা প্রতিধ্বনি কি এখনো শোনা যাবে ভাল করে কান পাতলে? বৃষ্টি হলে মাটি থেকে একরকম গরম ভাপ বের হয়, একরকম সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায়। আজকের দিনটাও স্যাঁতস্যাঁতে, কিন্তু সেই সোঁদা গন্ধটা পেলাম না। গন্ধ কি কখনো ঢাকা পড়ে কালের আবরণে?
আগেও খেয়াল করেছি, অতীতের স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ পেলে এই মনটাকে যেন আর ধরে রাখা যায়না। মৃদু ধাক্কা দিলাম জং ধরা পুরনো গেইটে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে ক্ষীণ প্রতিবাদ তুলে ধীরে ধীরে সরে গেল গেইটটি। সামনে এগিয়ে গিয়ে দু’বার টোকা দিলাম ভারি দরজায়। বেশ কিছুক্ষণ কোন শব্দ নেই। তারপর পদশব্দ পেলাম। দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা। এই কি আমার সেই আন্টি? এত বুড়িয়ে গেছেন তিনি? কোন ভুল করছিনা তো? খানিকটা অনিশ্চিত স্বরে বললাম, ‘আন্টি কেমন আছেন?’ আন্টির চোখে যেন মুহূর্তের জন্য কিসের দ্যুতি খেলে গেল। উচ্ছসিত কন্ঠে বললেন, ‘বাবা শাহেদ, এসো, এসো! কতদিন পর! সেই যে সেবার…’, বুকের ভেতর সযত্নে সাজিয়ে রাখা স্মৃতির পাতাগুলো এক এক করে খুলতে থাকেন আন্টি।
প্রায় আধা ঘন্টা ধরে আমরা গল্প করলাম। কথোপকথনে আমার ভূমিকা ছিল শুধু শোনা আর মাঝে মাঝে ‘হুঁ হাঁ’ করা। মনে হয় এ বাড়িতে কেউ তেমন একটা আসেনা। একটা তের-চৌদ্দ বছরের ছেলেকে দেখলাম উঁকি দিয়ে গেল দু’বার। সে-ই বোধ হয় ফুট-ফরমাইশ খাটে, সাহায্য করে আন্টিকে। এ বয়সে সাধারণত সবাইকে খুব কাছে পাবার, আঁকড়ে ধরে রাখার তীব্র একটা ইচ্ছা জাগে মনে। আন্টি কাকে আঁকড়ে ধরেছেন? কালো ছিপছিপে এই কিশোরটিকে? বোধ হয় তাই। সে যাই হোক, তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে- তিনি তাঁর ছেলের জন্য কত কিছু পাঠাতে চান, কিন্তু সুযোগ পাওয়া যায়না। সেদিন রুনি (তমালের বোন) বলল যে আমি লন্ডন যাচ্ছি। তখনই তিনি ছেলেটিকে বাজারে পাঠিয়ে বুটের ডাল, লইট্যা মাছের শুঁটকি আর কাঁচা আম আনালেন। তিনদিন ধরে বুটের ডালের হালুয়া, শুঁটকি ভর্তা আর আমের আচার বানালেন। হঠাৎ আজ সকালে মনে হল- আমাকে জানানো হয়নি। তাই ফোন করলেন আমাকে। এছাড়া আরও বর্ণনা করলেন- তমাল কত পছন্দ করে এসব, কতদিন যেন মায়ের হাতের তৈরি খাবার খা্ওয়া হয়না তা্র! মৃদু একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে তাঁর। আমি বেশ কল্পনা করতে পারি, মাতৃস্নেহের কাঙাল তমালের ক্লান্ত চেহারাটি। আন্টির হাত ধরে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আন্টি, আমাকেও দিননা এভাবে আচার আর হালুয়া বানিয়ে, আমিও ওই স্নেহের ভাগ চাই’।
শেষে আন্টি আমার হাতে তুলে দিলেন বড় বড় কয়েকটি প্লাস্টিকের বাক্স। সব মিলিয়ে তিন-চার কেজি তো হবেই! এতকিছু নেব কিভাবে? আবার আন্টিকে ‘না’-ও বলতে পারব না। নিয়ে এলাম সেগুলো গাড়িতে। জানালার কাঁচ নামিয়ে তাকালাম আন্টির দিকে। দরজা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছেন,- দৃষ্টি আমারই দিকে, কিন্তু বোধ হয় আমাকে দেখছেন না। হয়তো আমার অবয়বের মধ্যে খুঁজছেন তাঁর ছেলেকে! এ ধরণের দৃশ্য সাধারণত বহুদিন মনে থাকে। অন্তত, কখনো তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনলে এই দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটি মনে পড়তে বাধ্য। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি- তমাল চলে যাচ্ছে, আর আন্টি হাত নাড়ছেন। কখনো হয়তো হাতটা থেমে যাচ্ছে, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আবার তাকাচ্ছেন সেদিকে। তমালও কি তাকিয়েছিল বারবার ফিরে ফিরে? এখনো কি ওর মনে পড়ে ঐ মুহূর্তটির কথা? নাড়া দিয়ে যায় তার মনকে?
আন্টির দিকে তাকিয়ে থেকেই একটু হেসে এক্সিলারেটরে চাপ দিলাম। আন্টির চোখে কোন আলোর খেলা চলল কিনা, ঠিক বুঝতে পারলাম না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, হেডলাইটটা জ্বালিয়ে দিলাম। বাসায় পৌঁছানোর আগেই সিদ্ধান্ত নিলাম, কুছ পরোয়া নেই, পুরো খাবারই নিয়ে যাব। কাপড় চোপড় একটু কমালেই চলবে। হয়তো একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম মা-ছেলের যোগাযোগের মাধ্যম হতে পেরে!
রাতে খুব বেশি কাজ বাকি ছিলনা। সব মোটামুটি গুছিয়ে এনে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সকালবেলা ঘুম ভাঙল এলার্মের শব্দে। হঠাৎ হাসি পেল। একটা সময় ছিল, যখন ঢাকায় ভোর হত পাখির গানে। আর এখন সেগুলো যেন কোথায় মিলিয়ে গেছে। আবির্ভাব হয়েছে অসংখ্য কাকের। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সারা রাস্তায় কেবল একটি কথাই মাথায় রইল- কিভাবে চমকে দেয়া যায় তমালকে। ধরা যাক, আমি ফোন করে ওকে বললাম, আমি ওর জন্য আন্টির নিজের হাতে তৈরি খাবার নিয়ে এসেছি। তখন ও কেবল কাপড় ছেড়ে ঘরের কাপড় পড়েছে। নিশ্চয়ই সে ঐ কাপড় পড়েই রওনা হবে আমার হোটেলের পথে। ‘তাড়াতাড়ি না পৌঁছুলে কিন্তু সব খেয়ে ফেলব’- একথা বলে ওর উৎকন্ঠা আরও বাড়িয়ে দেয়া যাবে। এসব চিন্তা করতে করতেই পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টে। ড্রাইভারকে বাসায় চলে যেতে বলে দিয়ে পা বাড়ালাম সামনের দিকে।
ক্যাপ্টেনের একঘেয়ে কন্ঠস্বর শোনা গেল। না শুনেই বলে দিতে পারি, এখন আমাদের সিটবেল্ট বাঁধতে হবে। প্লেন ল্যান্ড করবে, ছুঁবে লন্ডনের মাটি। এ সময় সাধারণত বাতাসের চাপের মৃদু পরিবর্তন আর হালকা ঝাঁকুনি ছাড়া বিশেষ কিছুই বোঝা যায় না। জানালা দিয়ে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, প্লেন ল্যান্ড করছে।
হোটেল রুমে বসে ফোনের রিসিভারটা তুললাম। অপারেটরের রিনরিনে গলা শোনা গেল। আমি মৃদু স্বরে তমালের ফোন নম্বরটি উচ্চারণ করলাম, তারপর একটু থেমে বললাম ‘প্লিজ’। এটাকে বলে এটিকেট। এগুলো মেনে না চললে গেঁয়ো ভুত মনে করাটা অস্বাভাবিক নয়। দু’বার রিং হবার পরে ফোনে একটা নারীকন্ঠ শুনতে পেলাম। খাঁটি ব্রিটিশ টানে বলল, ‘হ্যালো!’ আমিও যতটা সম্ভব পশ্চিমা উচ্চারণে তমালকে চাইলাম। ‘One second please…’ একটু পরে তমালের কন্ঠ শুনতে পেলাম, ‘হ্যালো!’ এবারও সেই খাঁটি ব্রিটিশ উচ্চারণ। গোল্লায় যাক! খাস বাংলায় বলে উঠলাম, ‘কেমন আছিস?’
সব শুনে তমাল একটু যেন হেসে উঠল। তারপর বলল, ‘মায়েরা অমনি হয়। All old emotions! তোর কি মনে হয় আমি এখন ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন যাব ঐ হালুয়া আর শুটকি আনতে? তুইও যেমন, কী দরকার ছিল ওগুলো বোঝা বয়ে এতদূর নিয়ে আসার? এক কাজ কর, তুই খেয়ে ফেল… আর নইলে ফেলে দে। আচ্ছা, এবার তোর কথা বল, কতদিন আছিস UK তে? একদিন এসে ঢুঁ মেরে যাস…’ হঠাৎ যেন ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলাম আমি। ‘আচ্ছা দেখি’ বলে রিসিভার রেখে দিলাম।
সত্যিই তো! কি বোকাই না আমি! এত টাকার পেট্রোল পুড়িয়ে ও কেন আসবে এ ক’টা খাবার নেয়ার জন্য? আমিই তো বোকার মত এগুলো এতদূর নিয়ে এলাম! কিন্তু নিয়েই যখন এসেছি, কি করব এগুলো এখন? ফেলে দেব? না। আন্টির এত শখ করে তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে পারব না। তাহলে? খেয়ে ফেলব? তাই ভাল। হালুয়ার বাক্সটা খুলে বসলাম। একটা টুকরো মুখে দিতে গিয়েই মনে পড়ল আন্টির সেই দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা। জানতাম, এত সহজে পিছু ছাড়ে না এসব স্মৃতি। অগত্যা বাক্সের মুখ বন্ধ করে রেখে দিলাম। আমার দ্বারা সম্ভব নয় এগুলো ভক্ষণ করা। তার চেয়ে বরং এগুলো ফেরত নিয়ে যাই। আন্টির হাতে ধরিয়ে দেব ওগুলো। রিয়্যালিটির সাথে তাঁরও পরিচয় থাকা দরকার। কতদিন আর ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস করবেন? যে ছেলে একবারের জন্য ‘মা কেমন আছে’- জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না, তাকে নিয়ে স্বপ্নের পর স্বপ্ন সাজানোর কোন মানে আছে?
শেষ পর্যন্ত আর ওগুলো ফেরত দেয়া হয়নি আন্টিকে। ঐ এক হতচ্ছাড়া দৃশ্য বারবার মনে পড়ে যায়। কত আশা করে আমার হাতে ওগুলো পাঠিয়েছিলেন, আমার পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না সত্য কথাটি তাঁকে জানানো। শুধু বলেছিলাম, তমাল আর ওর বউ খুব ভাল আছে। দু’জনই খুব খুশি হয়েছে খাবার পেয়ে। খুব করে তাঁর কথা জিজ্ঞেস করেছে। তবে কথাগুলো বলার সময় একবারের জন্যও আন্টির মুখের দিকে তাকাইনি আমি। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে বেরিয়ে গিয়েছি ঐ বাড়ি থেকে, আর ওমুখো হইনি। আন্টি বোধ হয় বেঁচে আছেন এখনো্, অন্তত তাঁর মৃত্যুসংবাদ এখনো পাইনি। না পেলেই ভাল। আন্টির কথা মনে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওই দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটি।

অনীক_ইকবাল


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

সত্য ঘটনা? কাছে পেলে তমাল হালারে একটা থাবড়া মাইরেন তাহলে।

অতিথি লেখক এর ছবি


হিথ্রো দিয়ে শুটকি পাচার করলেন কিভাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

এখানে তাহলে কাহিনীটা একটু বদলানো দরকার... কি বলেন? শুটকির বদলে কি দেয়া যায়, বলেন তো?

অনীক_ইকবাল

অবসরবিহীন [অতিথি] এর ছবি

আচার হলে মনে হয় নিতে পারবেন।
গল্পটা সুন্দর মর্মস্পর্শী।

-অবসরবিহীন

রেনেট এর ছবি

সত্য ঘটনা হলে দ্রোহী ভাইয়ের মন্তব্য দ্রষ্টব্য।
আর গল্প হলে চমৎকার লেখার হাত আপনার।
ঘটনা যেটাই হোক, সচলে স্বাগতম।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনা সত্য। কিন্তু চরিত্রের নামগুলা কাল্পনিক। ঘটনাটা শুনসি আরেকজনের কাছ থেকে। সুযোগ বুইঝা মাইরা দিলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

অনীক_ইকবাল

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কাঁদিয়ে ফেললেন একদম, হুশশ করে দম বেড়িয়ে গেলো একটা .... আশা করি এটা যেন স্রেফ গল্প হয়!

প্লিজ! আমিন!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যদি বলি এটা গল্প, তাহলেই কি খুশি হবেন? তাহলে তাই ধরে নিন না! কিন্তু এই গল্প লেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম একটা সত্য ঘটনা শুনেই। গল্পটা ওই সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে।

অনীক_ইকবাল

ছায়ালীন [অতিথি] এর ছবি

ভয়ংকর !
আশা করি এটা গল্প ।
আপনার লেখা দারূণ, ঝরঝরে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আশা করি, আমরা কোনদিন এমন হব না।

অনীক_ইকবাল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব দুঃখ লাগলো ঘটনাটা পড়ে।

s-s এর ছবি

ইস্স॥ কষ্ট লাগলো মা'র কথা পড়ে। ছেলেটা কি পরে অনুতাপ করেছিলো বা ক্ষমা চেয়েছিলো?
হ্যাপি মাদারস ডে

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যতদূর জানি, সে পরবর্তীতে আর দেশের সাথে যোগাযোগ রাখেনি। পুরোপুরি ব্রিটিশ বনে গিয়েছিল।

অনীক_ইকবাল

তানবীরা এর ছবি

তমাল পুরোপুরি মরে গেছিলো। তার মৃত্যুতে আন্তরিক শোক প্রকাশ করি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জি.এম.তানিম এর ছবি

.........
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটা।

রানা মেহের এর ছবি

এসব পড়তে ভালো লাগেনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

কাল ছিল বিশ্ব মাতৃ দিবস। গল্পটা শুরু করেছিলাম এই ভেবে যে এই সম্বন্ধেই কিছু লেখা হয়তো হবে। ওই যেমন সবাই লেখে না? Happy Mothers’ Day!! ওই রকম কিছু। তার পর আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম আর আমার নিজের মায়ের কথা মনে হতে লাগলো।

আমি প্রবাসি। মাকে দেখেছি ২ বছর ৩ মাস ১৪ দিন হয়েছে। মায়ের আওয়াজ শুনি, কিন্তু তাঁকে দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না। মা সারা জীবন আমার যত্ন করেছেন, যেমন সব মায়েরাই করেন; আমার ভালর জন্যে ভেবেছেন, যেমন সব মায়েরাই করেন; হয়তো সব মায়েদের চাইতে আমার মা আমাকে বেসি ভালবেসেছেন। কিন্তু আমি মাকে এই বুড়ো বয়সে ছেড়ে দিয়ে এখানে বাড়ি থেকে এতদুর বসে আছি – যেমন (তমাল ছাড়া) কোনো ছেলেই করে না। জীবনে কিছু এমন decision নিয়েছি যার দরুন আমার মা-বাবা কে আজ কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমি নই সেই ছেলে, যার জন্যে মা-বাবা নিজেকে গর্বিত মনে করেন।

গল্পটা পড়ে মনে পরে গেল আমার মায়ের মুখখানি। আমার মা? সবছাইতে সুন্দর মা। দুবছর আগে যখন আমি বাড়ি ছেড়ে আসছি, অটোতে উঠে বসেছি, মা তাকিয়েছিলেন, রাস্তার পাশে। অনেক কিছুই বলেছিলেন। জীবনে প্রথমবার আমি কোথাও যাচ্ছি এবং মা আমার সাথে Airport-এ আসেননি। হয়তো মা রোজ আমার কথা মনে করে কাঁদেন। কিন্তু আমি শুধু একটা কথা ভেবেই খুশি যে এখন মা দূরে আছেন বলে আমার চোখের এই জলবিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছেন না। হয়তো এই আমার সাজা এবং এই তার পরিহাস!

শ্রীতন্ময়

অতিথি লেখক এর ছবি

জানিনা আপনি কেন প্রবাসী হয়েছেন। জানিনা, temporarily, না permanently। মা-বাবা এবং অন্যান্য কাছের মানুষকে ছাড়া প্রবাসে নির্বাসিত জীবন-যাপন করা অবশ্যই বেদনাদায়কই হওয়ার কথা, উভয় পক্ষের জন্যেই। কিন্তু আমার এ লেখা কিন্তু সব প্রবাসী সন্তানের বুকে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস গুলোকে কটাক্ষ করার জন্যে নয়। আমার এ লেখা শুধু ঐসব তমালের জন্যে, যারা বিদেশী বনে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় জম্নদাত্রীর সাথে তার সম্পর্ককেও অস্বীকার করতে চায়। আমরা যারা সেরকম নই, তারা যেন কখনো এরকম না হয়ে যাই।

শ্রীতন্ময়, মাকে ছেড়ে প্রবাসে থাকছেন। কষ্ট পাচ্ছেন, মাও কষ্ট পাচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে প্রবাসী হলেন, সে উদ্দেশ্যটাকে প্রাণপণে সফল করুন। আপনি সফল হয়েছেন জেনে মা নিশ্চয়ই তাঁর দুঃখ ভুলে যাবেন। পুত্র-গরবে গরবিনী হবেন। তাহলেই মায়ের চোখের জলের ঋণ কিছুটি হলেও শোধ হবে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চমৎকার গল্প। সচলে স্বাগতম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।