দিনে দুপুরে চুরি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২০/১১/২০০৯ - ১১:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চারটার সময় হঠাৎ বেল বাজার শব্দে বিছানা থেকে উঠে আসলেন রোকেয়া। এ সময়ে তিনি ঘুমান না কিন্তু বিছানায় একটু শুয়ে থাকেন। দুই বার বেল বাজার আওয়াজে তিনি নিজেই উঠে এলেন। এসময়ে বাড়িতে কেউ আসে না। তিনি বের হতে হতে দেখেন ময়না দরজা খুলছে।
দরজার ঐ প্রান্তে সুন্দরী একটি মহিলা দাঁড়িয়ে। মহিলার পড়নে হাল্কা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ। মাথায় সুন্দর করে ওড়না দিয়ে ঢাকা। মহিলার গায়ের রঙ ফর্সা। রোকেয়া কিছু বলার আগেই মহিলা বলে বসলেন
- খালাম্মা আমি নীলুফার।
রোকেয়া মনে মনে চিন্তা করলেন মেয়েটা কে? তিনি কি মেয়েটা কে বলবেন যে তিনি ওকে চিনতে পারছেন না? কিন্তু মেয়েটা আবার যদি কিছু মনে করে। ওনার দ্বিধা দ্বন্দ দেখে মেয়েটি নিজেই বলল – খালাম্মা আপনি মনে হয় আমাকে চিনতে পারছেন না। আমি আমেরিকাতে থাকি। আমি আপনার ছেলেদের কাছেই আমার বাসা। আপনার বড় বউ, রুমার বাসায়তো আমি অনেকবার গিয়েছি। আপনের দুই ছেলে শাহীন , ফাহিমও তো আমাদের ঐখানে থাকে।
ততক্ষনে মহিলাটি ভেতরে ঢুকে গেছে। ময়নার দিকে তাকিয়ে বলল – “আমাকে একটু পানি খাওনা? আজ এত গরম। পানির পিপাসা পেয়ে গেছে।”
রোকেয়া মেয়েটিকে বসতে বলে বললেন – কিন্তু ওরা তো এখন দেশে নেই।
- “আমি জানি খালা। আপনার ছোট ছেলের বউ জুইও আমাকে চিনে। আমি অব্যশ ওদের বাসায় যাইনি কখনো। রুমাদের পাশেই আরো একটা বাঙ্গালী পরিবার আছে। আমি ওদেরকেও চিনি।”
- কার কথা বলোতো মা? আরিফ – তিনা?
- “জ্বী খালা । ওনাদের বাসার দাওয়াতেই তো আমার রুমার সাথে পরিচয় হল।”
- আমি আসলে এদিকে একটু কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম রুমা অনেকবার বলেছিল আপনাদের সাথে দেখা করে যেতে। আমি ভাবলাম আপনের বাসা এত কাছে একবার দেখা করে যাই। রুমা শুনলে খুশি হবে।”
রোকেয়া বললেন - “ভাল করেছ মা। তুমি শাহীনদের ঐখানে কাকে চিনো?”
- “শাহীন ভাইয়ের প্রতিবেশি, আরিফ ভাই আমার ভাসুর হয়। আমি তার ছোট ভাই এর বউ। আপনি জিজ্ঞেস করলে দেখবেন রুমা চিনবে।”
ইতিমধ্যে মহিলা তার স্বামী, বাচ্চা কথা, রুমা আর জুই যাদের সাথে মিশে তাদের নিয়ে গল্প করতে লাগল। রোকেয়ার মনে হতে লাগল মেয়েটিকে যেন তিনি অনেকদিন ধরে চিনেন।
- তাই যাই হোক খালা আর বলবেন না এখানে এসেছিলাম এ ব্লকের শেষ বাসাটায়। সেখানে গিয়ে শুনি তারা কেউ নাই। তাদের ছেলে ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে জখম হয়েছে। এখন তাই সবাই হাসপাতালে।”
ছিনতাইয়ের গল্প শুনে রোকেয়া জিজ্ঞেস করলেন – “ আহারে ! ওরা কি তোমার আত্নীয় হয়?”
- “জ্বী না খালা। একটু পরিচিত আরকি।”
এমন সময়ে মহিলার সেলফোন বাজতে লাগল।
- হ্যালো... আমিতো শাহীন ভাইয়ের মার বাসায় আসলাম।... খালার সাথে গল্প করি।... না না ডলার ভাঙ্গাতে পারিনি।... এই কয়েকটা টাকার জন্য এখন ব্যাঙ্কে যেতে হবে মনে হয়।... আচ্ছা ঠিক আছ।।
ফোন রেখে মহিলা বললেন – “আমার জামাই ফোন করেছে। আর বলবেন না খালা, কথা ছিল ওনাদের থেকে ডলার ভাঙ্গাব। কালকেই আমি আবার ঢাকার বাইরে চলে যাব। আচ্ছা খালাম্মা আপনি আমাকে ১৫০ ডলার একটু ভাঙ্গিয়ে দেবেন ? খুব উপকার হয়।”
রোকেয়ার এতক্ষন কথা বলে মেয়েটাকে খুব ভাল লেগেছিল। বেচারির একটু উপকার হলে ক্ষতি কি। এই ভেবে তিনি এগার হাজার টাকা বের করে আনলেন।
টাকা দেবার পর মেয়েটা আরও অনেক গল্প করল। তিনিও তার ছেলে, নাতি নাতনির গল্প করলেন। তারপর হঠাৎ আবার নীলুফারের ফোন বেজে উঠল।
- হ্যালো...। আমি এখনও খালার সাথে কথা বলছি।...না না ওরা কেউ নাই।... থাক ডলার ভাঙ্গানো লাগবে না। শাহীন ভাইয়ের আম্মা ভাঙ্গিয়ে দিল। ... আচ্ছা তাহলে আমাকে নিয়ে যাও, আর খালার সাথেও দেখা করে যাও।
ফোন রেখে নীলুফার বলল – খালা আমার জামাই আসবে আপনের সাথে দেখা করতে। আপনি একটু শাড়ীটা পাল্টায় আসেন।
রোকেয়া হেসে বললেন – আরে আমি বুড়ি মানুষ এই কাপড়ই ঠিক আছে।
নীলুফার বলল- না না খালা ! একটা ভাল কিছু পরে আসেন। একটু মাথাটা আচড়ায় আসেন। আমার বরের কাছে ক্যামেরা আছে। আপনার ছবি তুলে নিয়ে যাব। আপনার ছেলেরা দেখলে খুশি হবে।
রোকেয়া নীলুফারের কথাটা ফেলতে পারলেন না। উনি শাড়ী পাল্টাতে ঘরে গেলেন।
ময়নাকে পিছনে দাঁড়ানো দেখে নীলুফার বলল - আমাকে আরেক গ্লাস পানি খাওয়াবে?
ময়না পানি আনতে চলে গেলো। রোকেয়া শাড়ি পাল্টে এসে দেখেন ঘরে নীলুফার নেই। তিনি সবগুলো ঘর এবং বাথরুম খুজে দেখলেন কোথাও মেয়েটির ছায়া পর্যন্ত নেই। এগারো হাজার টাকাও নেই, ডলারও নেই।
পরে শাহীনকে আমেরিকাতে ফোন করে জানা গেল নীলুফার নামে ওদের ঐখানে কেউ থাকেনা এবং এই নামের কাউকে ওরা চিনেনা।

Email:


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সমস্যা তো! এইরকম চিটিং শুরু হইছে নাকি আজকাল?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

এটি কয়েকদিন আগে ঘটেছে আমার এক পরিচিতর বাসায়। যার সাথে ঘটেছিল তিনি বলেছেন ঐ মহিলা তার ছেলের আশে পাশে যারা থাকে এবং যাদের সাথে তার ছেলেরা খুব উঠা বসা করে তাদের অনেকের নাম বলেছিল। এগার হাজার টাকা ওই মহিলাকে দেবার পর মহিলা বারে বারে ব্যাগ খুলে ডালার বের করছি এমন ভাব করে একথা সেকথা বলতে বলতে উনার মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এই গল্পটি আমি আমার আশে পাশের পরিচিতদের বলার পর জানলাম যে এমন ঘটনা আরওএকজনের সাথে হয়েছে। কিন্তু তিনি মহিলাকে কোন টাকা দেননি কারন তার কাছে তখন এত টাকা ছিল না। আমার ধারনা যারা এধরনের বাসায় আসে তারা আগে থেকে ফোন ক্রসকানেকশন করে শোনে। আমার এই লিখাটির আসল উদ্দেশ্য হল সবাই যেন এধরনের প্রতারনার কথা জানতে পারে এবং অন্যকে সাবধান করে।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ভালো লাগলো না। কেমন জানি তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেবার একটা প্রবনতা ছিলো প্রথম থেকেই। আর দরজা খোলার পর হতেই কেনো জেনো পুরোপুরিই বুঝে গিয়াছিলাম কি হতে যাচ্ছে।

আর একটা কথা কাজের মেয়েটিকে পানি আনার কথা বলার মানে হলো কেটে পড়ার জন্য ক্লিয়ার পথ করা, কিন্তু মেয়েটি কোন ডাকা-ডাকি বা হৈচৈ করলোনা !! রোকেয়া এসে নিজে দেখার আগেইতো ময়নার বলার কথা, তাই না???

==========================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

কনফুসিয়াস এর ছবি

এরকম কিছু ঘটনা অনেক আগে রহস্যপত্রিকায় পড়েছিলাম। খুবই সাঙ্ঘাতিক!

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

খুব ব্যস্ততার মাঝে শেষ করে দিলেন, আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে, লেখার নিচে নিক বা নাম দিলেন না, ইমেইল দেখে ধরে নিলাম অহমিকা। আসলে আগে থেকেই বোঝা গেছে, এধরনের ঘটনা বেশ পুরানো। একবার বাংলামটরের বাসায় থাকতে সময় এক ভণ্ড আর্টিস্টের পাল্লায় পড়েছিলাম। ব্যাটা দুপুরে ভাত খাবার প্ল্যান নিয়ে এসেছিল, এক কাপ চা খাইয়ে থাকে বিদায় করেছিলাম দেঁতো হাসি, এমনভাবে পরিচয় দেওয়া শুরু করল যে কি বলব, কিন্তু ১ মিনিটের মাথায় সন্দেহ ঢুকে যায় আমার মাথায়, নাহলে সেদিন ব্যাটা কি করত কে জানে!! সচলে কি এটা আপনার প্রথম লেখা?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যটির জন্য ধ্নন্যবাদ।

একবার বাংলামটরের বাসায় থাকতে সময় এক ভণ্ড আর্টিস্টের পাল্লায় পড়েছিলাম। ব্যাটা দুপুরে ভাত খাবার প্ল্যান নিয়ে এসেছিল, এক কাপ চা খাইয়ে থাকে বিদায় করেছিলাম"
- তবুওতো আপনি ভাগ্যবান ছিলেন যে টাকা নিয়ে পালায়নি বা আপনার কোন ক্ষতি করেনি। শুধু চাইয়ের ওপর দিয়েই গেল।

সচলে এটা আমার দ্বিতীয় লিখা। প্রথম লেখার লিঙ্ক ,
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/26855

নিরা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সাংঘাতিক ঘটনা! এসব নিয়ে আরও অনেক সচেতনতার দরকার আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা কি গল্প নাকি সত্য ঘটনা? ট্যাগে দেখি দুই রকম কথাই লিখেছেন।

ঠিক এই রকম ঘটনা আমার খুবই নিকট এক আত্মীয়ের বাসায় ঘটেছে। এই ধরণের ঘটনায় আমার জিজ্ঞাস্য হচ্ছে প্রতারক দল প্রবাসের এত খুঁটিনাটি খবর পায় কোথা থেকে? এরা এমন সব তথ্য বলে যে খুব কাছের মানুষ ছাড়া যারা এইসব তথ্য জানার কথা না। এতে দেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনেরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আমার মনে হয় আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদেরও সতর্ক হওয়া উচিত তাঁরা কাদের সাথে মিশছেন, কাদের সাথে কথা বলছেন, কী কী তথ্য শেয়ার করছেন এই সমস্ত ব্যাপারে। কিছু আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে বোঝাই যাচ্ছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

প্রিয় অতিথি লেখক, এটা যদি সত্যি ঘটনা হয়, তাহলে তো বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরেছেন! সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। দেখি দেশে আমাদের আত্মীয় পরিজনকে সাবধান করে দিতে হবে।

যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে লেখা নিয়ে দুটো কথা বলি।

১. একটা সত্যি ঘটনা অনেকভাবেই বলা যায়। আপনি গল্প বা অনুগল্পের মাধ্যমে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একটা গল্প লিখতে গেলে আসলে ব্যাপারটা একটু কঠিন হয়ে যায়, কারণ এখানে চরিত্রগুলোকে ঠিকমতো পরিচয় করিয়ে দিতে হয়, চরিত্রগুলো একটু বিকাশ হওয়ার সুযোগ দিতে হয়, একটু রহস্য থাকলে ভালো হয়, গল্পের শুরু থেকে শেষে একটা মসৃণ আর বিশ্বাসযোগ্য ট্রানজিশন দিতে হয়, আর দিতে হয় একটা সুন্দর পরিসমাপ্তি। আপনি হয়তো এগুলোর সবকিছুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হয় তাড়াহুড়ো, না হয় আপনার আসল ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখতে চেষ্টা করা বা ওটার প্রতি সৎ থাকতে চেষ্টা করা, এই দুটোর একটা কারণে কিন্তু লেখাটা একটা জমজমাট গল্প হয়ে ওঠেনি। আপনি যখন গল্প লিখবেন, তখন কিন্তু আপনি "লেখকের স্বাধীনতা" ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আসল কাহিনী একেবারে অক্ষরে অক্ষরে না লিখেও মূলভাবটা ফুটিয়ে তোলা যায়, অনেক চরিত্র না এনে, মূল চরিত্রগুলোর প্রতি বেশি সময় আর মনোযোগ দিয়ে কাহিনীটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়, এতে গল্পটাও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

২. লেখালেখির শুরুতে তাই সহজ আরেকটা উপায় হলো রিপোর্টিং এর ভঙ্গিতে সত্যি কাহিনী বলা। সেক্ষেত্রে আসল ঘটনাটার একটা টানটান বর্ণনা লিখে ফেললেই পাঠকের কাছে সেটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

ও, আরেকটা কথা, লেখার শেষে অবশ্যই নাম লিখবেন।

আরও লিখতে থাকুন।

প্রবাসিনী এর ছবি

এই রকম ঘটনা আমিও আগের বার ঢাকা থেকে শুনে এসেছি।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

সাফি এর ছবি

এরকম ইদানিং বেশ হচ্ছে দেশে কথা বলতে গেলে শোনা যায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।