ক্যামিলয়া এবং আরেকটা ঈদ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৮/১১/২০০৯ - ১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেল। কোন রকমে রেডি হয়ে এক স্লাইস পাউরুটি আর পানি মুখে দিয়ে দিলাম দৌড়। তারপরও লেট, আধা ঘণ্টা লেট। সেমিনার শুরু হয়ে গেছে। অডিটরিয়ামে ঢোকার সময় কাঁধ থেকে ব্যাগ পরে গেল, সবাই এমন ভাবে তাকাল আমার দিকে যেন তাদের ধ্যানে ব্যাঘাত দিলাম। অডিটরিয়ামের এক কোনায় বসে আমার গ্রুপ পার্টনার, ক্যামেলিয়া কার্লসন। তার মুখের ইমপ্রেশন দেখে মনে হল, পারলে আমাকে লবণ ছাড়া কাঁচা চিবিয়ে খায়। এমন হেতুর কারণ আছে, কারণ এর আগের সেমিনারে ও আমি ৪৫ মিনিট লেট ছিলাম।

পাশে বসে 'হাই' বল্লাম। সুন্দরী পার্টনার একটুকরো হাসি ও দিল না, হাই ও বলল না। শুধু একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল 'did u forget, we were chosed for 2day seminar?' রেগে যেতেই পারে, বেচারী আবার প্রজেন্টেশন দিতে শুরু করলে সব এলোমেলো করে ফেলে, আর যদি তাকে হল ভর্তি ছেলেমেয়ের সামনে একা প্রেজেন্টশন করতে দেয়া হয়, আমার ধারণা তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হবে না,টেনশনে বেচারীর মুখ লাল হয়ে আছে । যাই হোক গোমড়া মুখীকে নিয়ে সেমিনারে প্রজেন্টশন দিলাম। ভাল-ভালই সেমিনারে পার করলাম।

সেমিনার শেষে সে বলে তোমার সাথে আমি নাই। বল্লাম ঠিক আছ ,যাও। বলে ঠিক আছে কি, আমি এখনি প্রফেসরের কাছে যাব, তোমার সাথে গ্রুপ ওর্য়াক করব না, তোমার নামে রিপোর্ট করব। বলে কি........বল্লাম দেখ আমাদের গ্রুপের মানে তোমার-আমার কম্বিনেশন খুব ভাল (সে ভাল রিপোর্ট লেখে, আমি তাই নিয়ে একটু চাপাবাজী করি ), আমাদের বোঝাপড়া ভাল, লাস্ট দুটি সেমিনারেও আমরা হাইপাশ পেয়েছি, শুরু করলাম ভুজুং-ভাজুং দেয়া। দশ-পনের মিনিট চাপাবাজীর পর সে বলল পরে জানাবে।

আবারও ক্লাস শুরু। ক্লাস না, সিমুলেশন ল্যাব , ৪ ঘন্টা । দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ৪ টা বেজে গেল। ক্লাস থেকে বেড়িয়ে বল্লাম 'ক্যামেলিয়া, তুমি কি প্রফেসরের সাথে দেখা করবে'। বলে 'তোমাকে প্রমিজ করতে হবে এরপর প্রজেন্টশন থাকলে দেরি করবে না'। আমি বলি অবশ্যই, শুধু মাত্র সকাল ছাড়া, তোমার এই শীতের দেশে এত ভোরে আমি উঠতে পারি না। বলে ঠিক আছে এরপরে আমি তোমাকে কল দিব সকালে। বাংলায় বল্লাম এক কাজ কর আমার রুমে চলে আস তাহলে আর কল দিতে হবে না। বলে কি বল্লা। চাপা দেই, বলি.. তুমি খুবই খুবই ভাল একটা মেয়ে। বলে কি জানেন....বলে, আমি শিউর তুমি অন্য কিছু বলছ। কি বলি এখন....হটাৎ জ্যাকেটের পকেট থেকে মোবাইল বের করে..দেখি ৭ টি মেসেজ.. ৯ টা মিসড কল। তাকে মোবাইলের স্ক্রিন দেখিয়ে বলি আমার জরুরি কল করতে হবে......'হেইডো' (শুভ বিদায়) দিয়ে কেটে পড়ি।

মোবাইল মেসেজ বক্স ওপেন করে দেখি সব একই মেসেজ, ঈদের বার্তা। সারাটা দিন সেমিনার আর ল্যাবের চিপায় পড়ে ঈদের কথা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম। প্রবাসে যা হয়, চলে গেল আরেকটা সাদা কালো ঈদ।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

স্বপ্নদ্রোহ

ankur_ipe@yahoo.com


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

আপনার লেখা কি আগে পড়ছি? মনে করতে পারছি না চিন্তিত তবে আপনার ব্লগর ব্লগরের স্টাইলটা ভাল লাগছে চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই লাইনে একদম নতুন (চোখ টিবির ইমোকটিন)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ক্যামিলিয়ারে ভালা পাইসি ... দেঁতো হাসি

লেখাটা আসলেই চমৎকার লেগেছে। আরো নিয়মিত লিখুন না।

_________________________________________

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও তারে ভালা পাই (চোখ টিবির ইমোকটিন)

অতিথি লেখক এর ছবি

ঈদশুভেচ্ছা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নাম টা-

স্বপ্নদ্রোহ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শিরোনামের "ক্যামিলয়া" মনে হয় ঠিক করা দরকার।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে মেয়েটা তার নামের উচ্চারণ ওভাবে করে।তাই.....

স্বপ্নদ্রোহ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বস, ঠিকি আছে। যার (ঘুমের ব্যাপারে) তাল-লয় ঠিক নাই তার নাম এইরমই হওয়া উচিৎ। সাত সকালে যে না ঘুমায়া সেমিনারে দৌড়ায়, তার ক্যামিলয়া না, মহাপ্রলয় নাম হওয়া দরকার। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী বস, এই শীতে ব্যাপক বিপদে আছি।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিন্তু ভিতরে আবার অন্যভাবে লিখলেন যে চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

পিপি-দা ওর নামের বানান ধরেপ পরেন, তাহলে ক্যামেলিয়া (cameliä)। আর যদি বলেন তোমার নাম কি.........বলবে ক্যামিলয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

পিপি-দা, ওর নামের বানান ধরে পরেন, তাহলে ক্যামেলিয়া (cameliä)। আর যদি বলেন তোমার নাম কি.........বলবে ক্যামিলয়া। আর এডিট করার ক্ষমতা তো নেই নতুন ব্লগার হিসাবে। ভাল থাকুন

স্বপ্নদ্রোহ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ও এবার বুঝতে পেরেছি। একটা হলো বানান আরেকটা বলতে যেমন শোনায়, তেমন। থ্যাংস। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল, কিন্তু আমি সবকিছুই একটু দেরীতে বুঝি তো তাই এত প্রশ্ন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

লেখা ভাল লাগল! বলার ধরনটা চমৎকার হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভাল লাগল জেনে আমারও ভাল লাগল।

স্বপ্নদ্রোহ

ভ্রম এর ছবি

হাহা লেখা খুব ভালো লাগলো। আমারো ঈদের দিন একটা প্রেসেন্টেশান ছিলো। কিভাবে কিভাবে প্রতি বছরই দুই ঈদের দিনই হয় রিপোর্ট নয়তো পরীক্ষা নইলে প্রেসেন্টেশান থাকে... কপাল... দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কপালের নাম গোপাল ।

স্বপ্নদ্রোহ

অতিথি লেখক এর ছবি

হুহঃ... গত দুই ঈদে রিপোর্ট বানাইতে গিয়া ঈদের মজা নষ্ট করসি। এইবার তাই বুদ্ধি কইরা মোবাইলের সিমকার্ড খুইলা রাখসি। তাই এই ঈদটা আগের দুইটার চেয়ে অনেক ভালো গেসে।

মনজুর এলাহী

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম,ভাল বুদ্ধি........তয় রিপোর্ট থেকে মার্কস খুলে না রাখলেই হইল।

স্বপ্নদ্রোহ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।