"আমার উত্তর জানা নেই, আপনাদের আছে?"

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৩/০১/২০১০ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব এক কিলোমিটার হবে। রিকসা ভাড়া ৫/৬টাকা। প্রতিদিনের মত গলির মোড়ে এসে একটা রিকসাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতেই রাজী হয়ে গেল, আমিও ভাড়া ঠিক করে উঠে বসলাম। রিকসাওয়ালার বয়স চেহারা দেখে বুঝা গেল না। তবে আমার ধারনা ৩৫বছরের মত হবে।

যথারীতি রিকসাওয়ালা প্যাডেল চেপে আমাকে অফিসের সামনে নিয়ে এল। আমি রিকসা থেকে নেমে পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে ভাড়া এগিয়ে দিতেই জানতে চাইল আমার একটু সময় হবে কিনা? আমি রিকসাওয়ালার কথায় চমকে গেলাম। তাড়া থাকা সত্বেত দাঁড়িয়ে গেলাম। বললাম- "বলেন কী জানতে চান?" রিকসাওয়ালা আমাকে বলল-"আমার মেঝ ভাই, পলিটেকনিক্যাল কলেজে পড়ে, গতকাল আমার কাছে বই কিনার জন্য বারশত টাকা চেয়েছে, পলিটেকনিক্যালে পড়লে কী এতো টাকার বই লাগে?" আমি তার কথায় একটুও অবাক হলাম না। বুঝতে পারলাম ভবিষ্যতে সুখের জন্য নিজের রক্ত পানি করে ভাইকে শিক্ষিত করার জন্য জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। কিন্তু আমি তার কথার উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেলাম। লেখাপড়া শেষ করেছি আজ সাত বছর। তাছাড়া পলিটেকনিক্যালে কি বই লাগে, আর বইয়ের দাম কত তা আমার কাছে অজানা রহস্য। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সে আমার কাছ থেকে উত্তর আশা করছে। আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলাম-"আপনার ভাই কী প্রায়ই টাকা চায়?" সে আমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল-"মাঝে মাঝে বই কিনার কথা বলে টাকা চায়।"

আমি রিকসাওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে মুখে ভাইকে নিয়ে বিরাট এক স্বপ্ন খেলা করছে। আমার একটা কথায় যেন সে এখনি বারশত টাকা দিয়ে আসবে, তাঁর যত কষ্টই হোক বারশত টাকা সে আজকের মধ্যেই যোগাড় করবে। আমি হ্যা- না কিছু বলতে পারি নাই, শুধু নিজেকে মুক্ত করার জন্য বললাম-"এক কাজ করেন, কলেজতো সামনেই আছে, স্যারের সাথে কথা বলে, টাকা দিয়ে আসেন।" আমি জানি না ঠিক বলেছি না ভুল বলেছি। রিকসাওয়ালা আমার কথায় সন্তুষ্টি হতে পারল কিনা সেটাও বুঝতে পারলাম না, শুধু কাজের দোহাই দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি এটা বুঝতে পারছি। সেই থেকে কাজে মন বসছে না, উত্তরটা আমার জানা ছিল না, আপনারা জানেন কি-"বই কিনতে বারশত টাকা লাগে কিনা?"


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

পলিটেকনিকের কোর্স সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে সব নতুন বই কিনলে হয়তো লাগতে পারে। বাস্তবে তো ঐ কাজ কেউ করে না, সমস্ত বই কারো লাগেও না. জরুরি অংশটুকু ফোটোকপি করে কাজ চালিয়ে দেয়। অন্তত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমরা তেমনটাই করতাম।

খুব কষ্ট পেলাম কেন যেন। কামনা করি, ঐ রিকশাওয়ালার ভাই যেন সত্যিই ঐ বারোশো টাকা দিয়ে বই কেনে।



হাঁটুপানির জলদস্যু বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই আপনার শুভ কামনা যেন সত্যি হয়। আমিও কামনা করি সে যেন বই কিনে। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

আলমগীর এর ছবি

আমার ধারণা ছেলেটা মাদকাসক্ত। (মনে-প্রাণে চাই আমার অনুমান ভুল হোক।)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ধারণা পুরোটাই ভুল হোক। আমার মনে হয় ছেলেটা বই কিনার সাথে অন্যকোন উদ্দেশ্যে টাকা একটু বেশী চাচ্ছে। আমি সারাদিন আজ এই বিষয়টি নিয়েই ভেবেছি, কাজ করতে পারিনি। আল্লাহ যেন রিকসাওয়ালার পরিশ্রমকে সার্থক করে। ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন

তানবীরা এর ছবি

একই কথা।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

বালক এর ছবি

মনটা কেমন হয়ে গেলো লেখাটা পড়ে।
তবে ১২শ টাকা বই কিনতে লাগার কথা না! কারণ তার মাথায় থাকতে হবে তার ভাই রিক্সা চালিয়ে তাঁকে পাড়ালেখা করাচ্ছে।
হিমু ভাইয়ের কথামতো জরুরি অংশটুকু ফোটোকপি করে কাজ চালিয়ে দেয়া যায়। সেটাই তার করা উচিত।
আর আপনের প্রশ্নের উত্তর?
আপনি যে কথা বলেছেন, সেই কথাটি-ই উপযুক্ত মনে হলো আমার কাছে...

*************************************************************************
কথার প্রজাপতি হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘশ্বাসে বেজে উঠছে মাউথঅর্গান। জানালা খোলা সকাল; রোদের ডানায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি! অসংখ্য মেঘ তবু বেঁচে আছে সম্ভাবনার নাভিতে...

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

ফারুক হাসান এর ছবি

বালক যেমন বলেছেন আমারও তাই মনে হচ্ছে :(। বই কিনতে যদি সত্যই বারোশো টাকা লাগে তবু এত টাকা একবারে রিক্সাচালক ভাইয়ের কাছে ছোটভাইটির চাওয়ার কথা নয়, যদি সে বড়ভাইয়ের কষ্টের কথা মাথায় রাখে। শুধুমাত্র মাদকাসক্ত হলেই এমনটা হতে পারে।

মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

চোখের সামনে ভালো জিনিস তো কমই হতে দেখি। ভাইটার মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা তো দেখছি না, বরং আধা শিক্ষিত চতুর বদমাশ হবারই কথা, ইতিহাস যা বলে।
স্বাধীন ভাই, আবার যদি রিকশাঅলার সাথে আপনার দেখা হয়, তার কাছ থেকে ঠিকানা নিন, কাজের ফাঁকে একটু সময় করে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করুন, দেখুন না ভাইটাকে বুঝিয়ে কিছু করা যায় কিনা।
এটা খুব অল্প প্রয়াসের অল্প সময়ের ব্যাপার। ভাইটা যদি বখাটে হয়, তাহলে তো আর আপনার কিছুই করার নেই, স্রেফ রিকশাঅলাকে জানিয়ে দিয়েন সে যেন তার কষ্টের উপার্জন ঐ বাঁদরটার পিছনে নষ্ট না করে।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

মৃদুল ভাই আপনার কথা রাখার চেষ্টা করবো। আপনার সুন্দর পামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আসলে এভাবে শ্রম দিয়ে লাভ নাই। যে টেকনিকেই পড়ুক, যেখানে ভাইকে রিক্সা চালিয়ে পড়ার খরচ চালাতে হচ্ছে, সেখানে বই কেনাটা একটা বিলাসিতা। প্রায় কোনো বই না কিনেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা অসম্ভব নয়। আর কয় দিন পরপর বই কেনার জন্য টাকা চাওয়া সন্দেহজনক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাহবুবুল হক এর ছবি

আমার বাড়ির পাশে এক রিকশাওয়ালার ছেলে জিপিএ ৫ নিয়ে এস.এস.সি পাশ করলে এলাকায় সাড়া পড়ে যায়। ছেলেটি খুব ভদ্র, বিনয়ী এবং পড়ুয়া। তার বোনেরা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে ,এর ওর কাছে হাত পেতে, ভাইয়ের জন্য ঢাকা শহরের দামি শিক্ষা সুযোগের কিছুটা হলেও দিতে পেরেছিল। ছেলেটিকে কলেজে ভর্তি করতে এলাকার কিছু উদ্যমী ছেলে এগিয়ে এল। আমি এবং আমার বন্ধু বান্ধব যথেষ্ট সাহায্য করলাম। পরে দেথা গেল ছেলেটি ভর্তি হয়েছে সিটি কলেজে এবং দামি মোবাইল, সাইকেল, সানগ্লাসসহ নানা বাহারি পোষাক ও ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করে। আমি এইচ.এস.সি-তে সে কি ফলাফল করেছিল জানি না। তবে যারা তাকে কলেজে ভর্তি করার জন্য জনে-জনে হাত পেতেছিল তাদের কাছ থেকে জানা গেল, ছেলেচির চাহিদা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে তারা আর সাহায্য করতে পারবে না বলে দিয়েছে। তাদের আফসোস যে, ছেলেটি যখন সিটি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য গোঁ ধরেছিল তখনই বোঝা উচিত ছিল এ কোন ধাচের। অথচ সেই টাকায় সরকারি কলেজে ১০টা ছেলে অনায়াসে পড়া শেষ করতে পারতো। ছেলেটির জন্য ব্যাচে প্রাইভেট পড়া, কোচিং করা, নতুন নতুন বই কেনা, কয়েক সেট কলেজ ড্রেস বানানো ইত্যাদি ব্যবস্থা করতে গিয়ে তারা হাপিয়ে উঠেছিল। অবশ্য ছেলেটি যে পড়া লেখা ছেড়ে অন্য কিছুতে মন দিয়েছিল তা-ও নয় । আসলে সে তার চারপাশের সুবিধাপ্রাপ্ত ছেলেগুলোর সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেখেছিল এবং তার উচ্চাশা চরিতার্থের জন্য ধৈর্য ধারণ করতে শেখে নি। কারণ তার পড়ালেখার পেছনের হাত পাতার ইতিহাস তাকে স্পর্শতো করেই নি বরং সে তাতে ভয়াবহ রকম অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। ছেলেটি এখনও পড়ছে, অত্যন্ত স্বচ্ছল পরিবারের ছেলের মতই। কারণ হাত পেতে কিভাবে পড়তে হয় তা সে এখন শিখে ফেলেছে।

যে রিকশাওয়ালা তার ভাইয়ের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে হতে পারে সে ছেলেটি আর আমার দেখা ছেলেটি একই অসুখে আক্রান্ত। পেটের ক্ষুধার চেয়ে চোথের ক্ষুধা যখন বড় হয়ে যায় তখন রিকশাওয়ালা ভাইয়ের কথা মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

সাফি এর ছবি

আমার চাচার অফিসের ড্রাইভারের ছেলে ম্যাট্রিক বেশ ভাল ভাবেই পাশ করার পর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয়। লেখাপড়ায় চাচাত ভাইয়ের চেয়ে এক বছরের জুনিয়র হওয়ায় বই এর সমস্যার সমাধান হয়, এবং সাধ্যমত চাচার পরিবার এবং কখনও কখনও আমরাও তাকে সাহায্য করতে থাকি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায়। তাকে সাহায্যের পরিমাণ ও বেড়ে যায়। আমরাও জীবন থেকে পাওয়া এই রুপকথার গল্প সবাইকে গলা ফুলিয়ে বলে বেড়াতে থাকি। কিন্তু তার পড়ুয়া জীবনের শেষ দিকে হঠাৎ শুনি সে বিয়ে করে ফেলেছে। এবং তার পরেই বাবা/মাকে সে অস্বীকার করা শুরু করে। দলছুট ভাইয়ের লেখা পড়ে হঠাৎ কেন যানি সেই ঘটনা মনে পড়ল।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফি ভাই আমি জানি এমন হাজার ঘটনা আমাদের চারপাশে আছে। আমার বাসায় যে বুয়া কাজ করে তার মেয়ে এবার এস, এস, সি পরীক্ষা দেবে। আমি মাঝে মাঝে যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করি। মেয়েটা লেখাপড়ায় ভালো। তার মা তিনটা বাসায় সারাদিন কাজ করে তার লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করে। জানি না এই মেয়েটা বড় হলে মাকে ভুলে যাবে না মনে রাখবে। তবে মেয়েটার মায়ের চোখে মুখে যে স্বপ্ন খেলা করছে সেটা যেন সত্যি হয়। আল্লাহ যেন মেয়েটাকে জ্ঞান দেয় তার মায়ের কষ্ট বোঝার জন্য। সকল আশংকার ভেতরেও দোয়া করি ছেলেটা যেন ভালো হয়, ভাইয়ের স্বপ্ন যেন সফল হয়। আল্লাহ যেন এই পরিবারের স্বপ্ন গুলো সত্যি করে দেয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ধরণের স্বপ্নবাজ ,পরিশ্রমী মানুষদের কথা শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু এরা প্রায় ই আশাহত হয় ....

কষ্টের বিষয় ভাল লাগে না মন খারাপ
মন কেমন যেন করে।

শুভকামনা রইল সেই রিকশাওয়ালা, স্বপ্নবাজ পরিশ্রমী মানুষটার জন্য ।

বোহেমিয়ান

অতিথি লেখক এর ছবি

আলমগীর ভায়ের সাথে একমত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছেলেটার ভাই সন্দিহান, সবাই যারা কমেন্ট করছেন তারাও সন্দিহান, আমার নিজেরো সন্দেহ হচ্ছে সে আসলেই বই কিনবে কিনা। তবে যেই সাবজেক্টই হোক ১২০০ টাকা কিন্তু বই, ফটোকপি অথবা অন্যকোন সাপ্লাইতে কিনতে আসলেই লাগতে পারে।

আমি ছেলেটাকে বেনেফিট অফ ডাউট দিব।

###তাসনীম###

বইখাতা এর ছবি

খারাপ লাগছে ঘটনাটা পড়ে। রিকশাওয়ালা ভাইয়ের কাছে বইয়ের জন্য বারোশো টাকা চাওয়া চরম বিলাসিতা মনে হচ্ছে। বইয়ের প্রয়োজনীয় অংশ ফটোকপি করেই ভালভাবে চালানো যায়। খুবই সম্ভব, তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে ।
বেচারা রিকশাওয়ালা ভাইটার পরিশ্রমের টাকা নষ্ট হচ্ছে হয়তো - মনটা খারাপ হয়ে গেল।

তিথীডোর এর ছবি

দলছুট, আপনাকে অনেকদিন পর দেখছি...
মন খারাপ করিয়ে দিলেন!

--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মৃদুলদার কথাটাই বলতে চাইছিলাম। ছেলেটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। ওর সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন। আর ও যদি কোনো নেতিবাচক পথে পা দিয়ে থাকে, যে পথে তার ভাইয়ের স্বপ্নের প্রতিফলন নেই; তাহলে তাকে সেই পথ থেকেও ফেরানো সম্ভব আমি মনে করি। ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই হবে।

গল্পটা পড়ে বেশ কষ্ট লাগলো। যতোটা না ভাইদ্বয়ের জন্য তার চেয়ে বেশি লাগলো পলিটেকনিকের মতো জায়গায় ছাত্রদের প্রয়োজন মেটাবার মতো বইয়ের যোগান নেই মনে করে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

মৃদুলদা'র আইডিয়া এক্ষেত্রে যথাযথ।

তবে, বই, ফটোকপি... কয়েকদিন পরপর এত লাগার কথা নয়।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

দুর্দান্ত এর ছবি

মাত্র এক কিলোমিটার, ১০০০ টি পদক্ষেপ, ঘুমিয়ে হাঁটলেও ২০ মিনিট।
এই স্বল্প দূরত্বে রিক্সায় চড়েন কেনরে ভাই?
----
লেখাটি ভাল লেগেছে। তবে পড়ে খারাপ লাগলো।

পারলে ছেলেটির খোঁজ করুন, তাকে তার ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে সয়াহতা করুন। যে ছেলে পলিটেকনিকে পড়ে তার আর কোন পিছুটান না থাকলে টিউশানির টাকা থেকেই পড়াশোনার খরচ চলে যাবার কথা।
----
মন্তব্যে সিটি কলেজপড়ুয়ার উদাহরন এর কাছাকাছি অভিগ্গতা থেকে বলছি, শুধু ভিক্ষায় কিছু লাভ হয়না। যে টাকা মেধা বা পরিশ্রমে আসেনি, সেটা আদতে আকামেই ওড়ে। তাই সিটি কলেজপড়ুয়া যেমন দোষী, ঠিক তেমনি যাঁরা টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে তাঁরা দায়িত্বহীন।

অভাব দূরদর্শিতাকে মেরে ফেলে। যার কাছে টাকা আছে সে তার চাইতে অভাবির চাইতে কিছুটা বেশী দূরদর্শি বলেই তার কাছে সেই উদ্বৃত্ব টাকাটি আছে। তাই টাকাওয়ালার উচিত টাকার সাথে সাথে একটু দুরদর্শিতার পাঠ দান করা। অভাবে পড়া ছাত্রদের যারা অল্পবিস্তর সাহায্য করছেন, তাদের বলছি, ধাপে ধাপে প্রয়োজন জেনে সাহায্য করুন, মাসিক বা বার্ষিক ফলের উপর ভিত্তি করে পরের কিস্তি দিন। যাকে সাহায্য করছেন তাকে চেনার চেষ্টা করুন, তার আসল প্রয়োজন গুলো জানুন। আপনার সাহায্য যে তার মাসোহারা নয়, সেটা সবার পক্ষে চট করে বোঝা হয়ে ওঠে না।

নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

মাদকাসক্ত হবে এমনটাতো না ও হতে পারে।যদি ছেলেটি ১৮/১৯ এর হয় আর ও তো কিছু কারন থাকেই!ছেলেরা বাবার পকেট মাঝে মাঝে বিশেষ কারনে মারে বলেই জানি!আপনি যদি কিছু করতে পারেন অবশ্যই করুন*নক্ষ্ত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পরে এসেই আপনার লেখা পড়লাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। একটু কষ্ট করে খোঁজ নিয়ে দেখবেন কি?

----নীল ভূত।

অতিথি লেখক এর ছবি

নীল ভূত ভাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সবার কথা অনুযায়ী দেখা করার যদি রিকসাওয়ালাকে আবার খোঁজে পাই। সবার মন্তব্য পড়ে মনে হলো আমরা সবাই তার চাওয়াটাকে সন্দেহের চোখে দেখছি। আমি মনে প্রাণে চাই আমাদের এই সন্দেহটা যেন ভুল হয়। ছেলেটা যেন সত্যিকারের লেখা পড়ে শিখে ভাইয়ের অবদানের কথা স্বীকার করে, ভাইয়ের কষ্ট স্বার্থক করে। যে স্বপ্ন নিয়ে ভাই কষ্ট করে লেখাপড়ার টাকা যোগাড় করছে, সে স্বপ্ন যেন সত্যি হয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্য গুলির সাথে সহমত পোষণ করি। খুব কষ্ট পেলাম।

তবে আরেকটা প্রেক্ষিতও মনে রাখতে হবে। রিক্সা বিশেষ চড়া হয় না ইদানিং, তবে মাঝে মাঝে ছুটির দিনে ধানমন্ডি ২৭ থেকে ৪ নম্বরে যাওয়া হয়। বছর খানেক থেকে এই জিনিসটা বাড়ছে দেখছি..... রিক্সা ওয়ালাদের একেকটা গল্প থাকে, তারপর সাহায্যের প্রার্থনা...। কিছু কিছু আবেগময় সত্যি ঘটনা (মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিবে, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে চায়)। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন করে দেখেছি... গল্পগুলি ফুলপ্রুফ না। (অবশ্য কিছু কিছু প্যাটার্নও পেয়েছি, বছরের বিশেষ কিছু সময়, দেশের বিশেষ কিছু স্থানের লোক, তবে এসব এখানে বলতে চাচ্ছি না)।

আমি দুঃখিত এমন একটা আবেগময় ব্যাপারে অন্য রকম বাজে ইংগিত করার জন্য, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা শুধু শেয়ার করলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

নৈবাদ ভাই, ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। আমার কাছে কিন্তু রিকসাওয়ালা টাকা পয়সা সাহায্য চায়নি, শুধু জানতে চেয়েছে বারশত টাকা লাগে কিনা। ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং সুন্দর মতামতের জন্য।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। আমাদের সবার মনের আকাশে এক টুকরো সন্দেহের মেঘ জমা হয়েছে, সবার মনের মাঝে আশংকা দানা বেঁধেছে। আমরা কেউ জানি না ছেলেটা আসলেই কেমন। অনেকে আমাকে বলেছেন আবার যদি রিকসাওয়ালার সাথে দেখা হয়, তাহলে যেন ভাইটার সাথে দেখা করি। আমি আপনাদের এই উপদেশ রাখার চেষ্টা করবো। আমাদের সবার মনের ভেতর যে শুভ কামনাটা আছে সেটা যেন সত্যি হয়। যত অশুভ ভাবনা, ধারণা ও অনুমান আছে সে গুলো যেন মিথ্যা হয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে যেন শিক্ষিত মানুষ গড়ে উঠে। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন একজন সত্যিকারে (সার্টিফিকেটে শিক্ষিত না) শিক্ষিত মানুষ গড়ে উঠে। সকল সন্দেহ, অনুমান, আশংকা যেন আমাদের মনে আর না আসে, এই শুভ কামনায় সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আম্রা হয়ত অনেকেই না জেনে মন্তব্য কর্ছি। তবে, যেটাই হোক, কয়দিন পর পর ১২০০/- লাগার কথা না। তারপরও আম্রা আশা রাখি, ঐ ছেলে যে কুপথে না যায়।
আর, স্বপ্ন মানুষের স্বপ্ন সত্যি হোক।

- মুক্ত বয়ান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।