প্রাইমারি স্কুলের দিনগুলিতে প্রেম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৮/২০১০ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি প্রথম প্রেমে পড়ি ক্লাস ফাইভ এ, বলতে গেলে প্রেমে পরার অধিকার অরজন করি। ক্লাস ফোরে থাকতে আমাকে কেউ চিনতো না, ক্লাস টু তে ও চিনার কোন কারণ ছিলনা যদি না আমার রোল নাম্বার ৫ হতো। হেকিম স্যার যখন রোল নাম্বার ১ কে আমি ক্লাস ক্লাস ফাইভ এর পড়া পারবো কিনা জিজ্ঞাসা করছিলেন আমার তখন একটু রাগ হয়েছিল কারণ ক্লাসে হাস্না হেনা ছিল। হাস্না হেনা কে আমি ভালবাসতাম। সে একটু শ্যামলা গোছের ছিল, একটু নাদুস নুদুস কিন্তু তার মধ্যে আমি সেই ছোটবেলাতেই এক আশ্চয কমনীয়তা পেতাম যা আমার ভাগ অঙ্ক করার বিরক্তি ভুলিয়ে দিত। আমার এই গোপন প্রেম আমি প্রকাশ করতে পারিনি কারণ এই কথা জানাজানি হলে বাড়িতে মার একটাও মাটিতে পড়বেনা আর বকা একটাও বাতাসে উড়বেনা। আমি তখন কিভাবে কম বয়সি ছেলে মেয়েরা একে অন্যকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারে সেইসব নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনে করেছিলাম।

আমার উরবর মস্তিস্ক যে কয়টি ভাবনা কে অবতরণ করাতে পেরেছিল তার একটি হচ্ছে নোটিশ বোরড সিস্টেম। প্রতি গ্রামে একটা নোটিশ বোরড থাকবে যাতে একটা নিরদিষ্ট বয়সের ছেলে মেয়েরা তার পছন্দের মানুষের নাম লিখে যেতে পারবে, যার নাম লেখা আছে সে দেখে সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে দিলেই হলো। বড়রা কেন যে এই ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেয়নি সেই জন্য তাদের উপর আমার কিঞ্চিত রাগ ও ছিল। আমাদের গ্রামে তখন প্রেম কে প্রেম বল হতনা, বলা হত 'লাইন করা'। তো লাইন করার জন্য আমি কোন উপায় না পেয়ে আমি আমাদের ক্লাসের সবচে ডেঞ্জারাস ছেলে সারওয়ার কে ধরলাম। সারওয়ার তখন আমাদের হিরো, সে ম্যাচবাক্সে সাপের বাচ্চা নিয়ে ঘুরে, হান্ড্রেড খেলায় ওস্তাদ, দাইড়া (দাড়িয়াবান্ধা) খেলায় তারে ছোয়া যায়না।

সারওয়ার সব শুনে বললো, তাবিজের দাম ৩ টাকা।
'কিয়ের তাবিজ?'
'এই তাবিজ পড়লে ছেড়ি মঙ্গলবার রাইতে ঘর ছাইড়া তগো বাইত আইয়া পড়ব'।
আমি বিরাট বিরক্ত হলাম। বাড়িতে হাস্না হেনা কে এনে আমি কি করব? আমি লাইন করতে চাই, তার সাথে কথা বলতে চাই, বিয়া ত করতে চাইনা। আমি বললাম হাস্নার সাথে লাইন করতে চাই, যাতে আমার প্রতি দুরবল হয় এমন কোন ব্যবস্থা আছে কিনা? সারওয়ার আমার হিম্মত দেখে হতাশ হল, বলল তাইলে অর বান্ধবিরে দিয়া কওয়া, নাম না ভাইঙ্গা। এই প্রস্তাব আমার মনে ধরল, আমি টিফিন পিরিওডে তাসলিমা কে বললাম যে আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে তার বান্ধবি হাস্না কে পছন্দ করে। তাসলিমা সবই বুঝলো এবং আমাকে আশস্ত করলো যে সে তার বান্ধবী কে এই কথা বলবে। আমি তাসলিমার জন্য আনা হেলা গোটা (প্যালা গোটা... হাতের তেলোতে নরম করে খেতে হয়, বিরাট মজা) দিলাম।
তাসলিমা পরদিনই রিপোরট দিল যে হাস্না রাজি না কারণ তার মা বিরাট রাগী জানতে পারলে তার অবস্থা খারাপ করে দিবে তবে তাকে চিঠি দিতে বলেছে সে তারপর দেখবে কি করা যায়।
সেদিন রাতে আমি জীবনের প্রথম প্রেম পত্রটি লেখলাম এবং অবধারিতভাবেই কিছু ছন্দ সহ। "স্মৃতি ছন্দের মালা" তখনকার প্রেমিকদের পাঠ্যবইয়ের মত ছিল। প্রিয় পাঠক, আপনারা জ্ঞানী মানুষ, কত আপনাদের জানাশোনা একটা চরবিত ছন্দ না হয় শুনলেন।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হা হা হা...
মজা লেগেছে...

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তিথীডোর এর ছবি

প্রাইমারিতেই 'পেম'! হো হো হো
আপনি তো ভাই কামেল আদমি!

আপসুস, কিছুই করলাম না জীবনে... মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ইশতিয়াক এর ছবি

ভাইরে প্রাইমারি তে ফেরেম করার অধিকার পাইয়া গেলেন? হিংসা লাগতাসে। তয় একটা কথা।তসলিমা আপা কি হেনা আপাকে ফেরেম পত্র দিয়েছিলো, নাকি নিজেই আপনের ফ্রেমে ফাগল হইয়া..................খাইছেখাইছে:P

ইশতিয়াক এর ছবি

ও তিথী আপা আফনে মনে শোক লইয়েন না। আমি শিওর আফনের কাছে আসা পত্তর গুলো তাসলিমা আফার মতো কেউ মাইরা দিছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাহবুব ভাই ধন্যবাদ।
তিথী আপু, সবই আপনাদের দোয়া।
তাসলিমা কে নিয়া আরেকটু লেকার ইচ্ছা আছে; ইশতিয়াক ভাই। আসলে প্রথম লেখা তো নারভাস হয়ে অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই পোস্ট করে দিয়েছি।

........................
শ্যামল

বাবুবাংলা এর ছবি

গাছের গায়ে বা স্কুলের দেয়ালে “শ্যামল + হাস্না”লেখেন নাই?
এভাবেই তো এককালে লাইনের প্রস্তাব দেয়া হইতো বলে জানতাম।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটাও বিবেচনায় নিছিলাম কিন্তু মিলিটারি মেজাজ রিটায়ারড স্কুল টিচার বাবা এবং বাড়ির রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে বাস্তবে রুপ দেওয়ার সাহস পাই নাই।

ইশতিয়াক এর ছবি

আমি ব্লগ লিখতে গিয়ে একটা প্রবলেম এ পড়তেছি। তাই কোনো পোষ্ট দিতে পারতেছি না। guest_writer হিসেবে লগ ইন করে ব্লগ লিখতে গেলে কোনো ক্যাটেগরি select করটে পারছি না এবং ব্লগ এ তারিখ দেখায় ১৯৭০ । কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না। কেউ মেইল বা এখানে সমাধান দিলে খুশি হব।

ইশতিয়াক

আবু ফয়সাল আহমেদ এর ছবি

ভাল এতদিন পরে এসে সৃতি রোমন্থন! এই কী সেই তসলিমা যার সাথে আপেল ভাইয়ার গভীর প্রেম ছিল?

ফারুক হাসান এর ছবি

দোস্ত, সচলায়তনে স্বাগতম। প্রথম লেখাতেই ফাটায়া ফেলছিস দেখা যায়। কঠঠিন হইছে। হাস্না হেনা এখন কৈ?

লেখার শেষে নিজের নিকটা উল্লেখ করিস এর পর থেকে।

আর অভ্রতে 'রেফ' দিতে হলে rr চাপলে হবে। যেমন - বোর্ড লিখতে হলে b+O+r+r+D

অতিথি লেখক এর ছবি

আবু ফয়সাল আহমেদ লিখেছেন:
ভাল এতদিন পরে এসে সৃতি রোমন্থন! এই কী সেই তসলিমা যার সাথে আপেল ভাইয়ার গভীর প্রেম ছিল?

হা হা হা হা হা হা হা হ। না, এই তাসলিমা সেই তাসলিমা না। আপেলের তাসলিমা আরো সুন্দর ছিল, এই কাহিনির সাইড নায়িকা না ফুল নায়িকা হওয়ার মতো। আর গল্পকে গল্প হিসেবে নিলেই বেশি ভাল, এতটা খেলোয়াড় ছেলে(প্লেবয়) আমি কখনোই ছিলাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ফারুক হাসান লিখেছেন:
দোস্ত, সচলায়তনে স্বাগতম। প্রথম লেখাতেই ফাটায়া ফেলছিস দেখা যায়। কঠঠিন হইছে। হাস্না হেনা এখন কৈ?

লেখার শেষে নিজের নিকটা উল্লেখ করিস এর পর থেকে।

আর অভ্রতে 'রেফ' দিতে হলে rr চাপলে হবে। যেমন - বোর্ড লিখতে হলে b+O+r+r+D

ধন্যবাদ, দোস্ত। আসলে তোকে দেখেই লেখার অনুপ্রেরণা ও সাহসের শুরু।
আর আমি এটা সেভ করতে চাইছিলাম, এইজন্য নিক আর ইমেইল দেই নাই, কিছু পরিবর্তন (রেফ দিতে পারছি...কি মজা) ও করার ছিল। যাই হোক ২য় কিস্তি লেখার চিন্তা আছে।

আয়নামতি [অতিথি] এর ছবি

এমন প্রতিভা নিয়ে কয়খান প্রেম করলেন ভাইয়া শেষ পর্যন্ত? লেখার বাকি অংশ দিয়ে ফেলুন জলদি। মজারু হয়েছে লেখা। যদিও আমি নিজেই অচল তারপরও সচলে আপনাকে স্বাগতম ভাইয়া।

দ্রোহী এর ছবি

হা হা হা ........

দুর্দান্ত স্মৃতিকথা। বানান বিভ্রাটের কথা বাদ দিলে পড়তে দারুণ আরাম লেগেছে। সোজাসুজি পাঁচতারা ঠুকলাম। হাসি

ছোট কালে আমিও প্রচুর প্রেমে পড়তাম। বলতে গেলে প্রতি সপ্তায় একটা করে প্রেমে পড়তাম।


কি মাঝি, ডরাইলা?

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখা শেষ করেন জলদি, নইলে হাস্নার মাকে খবর দিমু...

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়না আপু, ২য় কিস্তি লিখছি। যদিও ডর লাগতেছে।
দ্রোহীদা, বানানের জন্য মাফ দিয়েন। অভ্রতে লেখালেখিটা সড়গড় হয় নাই এখনো, চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি আসলেই কামেল আদমি। ক্লাস ফাইভে প্রেমপত্র!! হা হা হা। লেখা দারুন মজারু হয়েছে।

আমার একটা প্রাইমারী সময়ের কেলেংকারী আছে। যোগ বিয়োগের ব্যাপার। চিরকুটে অমুক+তমুকা লিখে এমন ধরা খেয়েছিলাম হেডস্যারের কাছে.....শেষে ম্যারাথন কানে ধরে উঠবস করে প্রায়শ্চিত্ব......হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ভাই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়-এর অপেক্ষায় থাকলাম।

মূর্তালা রামাত

অতিথি লেখক এর ছবি

সাহসে কুলাচ্ছেনা। বউ অলরেডি জিজ্ঞেস করেছে এইডা সত্য ঘটনা কিনা? হা হা হা। ইচ্ছা আছে।

........................
শ্যামল

ফারুক হাসান এর ছবি

বউরে ড্রাস?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হা হা হা
ব্যাপক মজাদার। 'বউয়ের ডরে থামে না বীর'- এইটা শাস্ত্রের কথা।
আপনার বীরত্ব চালু থাকুক। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসিব এর ছবি

সারাসপ্তা খোজ নাই। এখন একটা পোস্টে প্রেম শব্দটা দেইখাই লোলশ মনির হাজির!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দেঁতো হাসি

আরে লুল্ছিব্বাই, খোঁজ নাই কে কইলো! জলিল-অনন্ত ভাই? আমারে অনুপস্থিত ভাইবা আবার, এগেইন, পুনরায় প্রকাশ্যে লুল্ফেলা শুরু কৈরেন না, জাগামতো ইস্কিন শট চলে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকপে না কলাম! চোখ টিপি

যাউকগা, এই পোস্টে গিয়া কালু(ভিথা)-রানা'র আসন্ন নিকাহ নিয়া কিছু বৈলা আসেন। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসিব এর ছবি

বিয়ের পর লুঙ্গি পরা চলবে না বিষয়ক গিয়ানজামটা ফাস কৈরা দিলাম ঐখানে।

শাব্দিক এর ছবি

বিরাট মজা হইসে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।