সিমের নাম বেদনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২২/০৯/২০১০ - ১২:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমেই পাঠকদের কাছে জানতে চাই, আপনি কি বাংলাদেশের নাগরিক এবং বাংলাদেশে বসবাস করছেন? উত্তর যদি হ্যা হয় তাহলে বলবো, যে কোন সময় গ্রেফতার হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। যেকোন সময় পুলিশ অথবা রব ভাইয়েরা আপনার বাসায় চলে আসবে। আপনি দরজা খুলবেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘আপনার নাম কি অমুক?’ আপনি বলবেন, ‘জ্বি জনাব’।তখন তারা বলবে, ‘আপনার নামে ৩০২ ধারায় মামালা করা হয়েছে এবং আপনার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়েছে’। আপনি বলবেন, ‘কিন্তুক আমি কি করেছি?’ তারা বলবেন, ‘আপনি গতকাল রাতে ধলা-কাল্লু কে জবাই করে হত্যা করেছেন’। আপনি বলবেন, ‘কি বলেন এইসব? আমিতো গতকাল বাসা থেকেই বের হই নাই।’ তারা বলবেন, ‘ধলা-কাল্লুর কল লিস্ট চেক করে আপনি তার সাথে কি কথা বলেছেন, কখন কথা বলেছেন সবকিছু আমরা সিওর হয়েছি। আপনার সিম এই ঘটনার পর থেকে বন্ধ। কিন্তু আমরা মোবাইল কোম্পানী থেকে আপনার সিমের সমস্ত ইনফরমেশন পেয়েছি। আপনার নাম, বাসার ঠিকানা সবকিছু সেখান থেকেই জেনেছি’। আপনি বলবেন, ‘কিন্তু আমার সিম চালু আছে। আর আমার নাম্বার একটাই। আমার কাছে আমার সিমের কাগজপত্রও আছে। দেখবেন?’ তারা বলবেন, ‘খালি বলেন আপনার নাম তমুক কিনা? জন্ম তারিখ তমুক কিনা?’ আপনি বলবেন, ‘জ্বি সেটা ঠিক আছে। কিন্তু…’ আপনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে তারা বলবেন, ‘তাহলেই হয়েছে। আর কিছু বলা লাগবেনা। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। যা বলার কোর্টে বলবেন’।
উপরের ঘটনাটি কল্পনাপ্রসুত হলেও কিছুদিন পরে এটাই ঘটবে। হয়ত বা এই ধরনের ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেও গিয়েছে। কারণ সিমের কাগজ জালিয়াতির ঘটনা বেশ কিছুদিন যাবত আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন কথা হচ্ছে জালিয়াতিটা হয় কিভাবে? জালিয়াতি কিভাবে হয় সেটা জানার আগে আসুন আমরা জেনে নেই যে কিভাবে আমাদের হাতে একটা মোবাইল কোম্পানীর সিম এসে পৌছায়।
. মোবাইল কোম্পানীগুলো বিভিন্ন এলাকায় তাদের পয়েন্ট সেন্টার খোলে। এটা আর কিছুই না। এটা হলো বিভিন্ন জায়গায় তাদের ডিলার নিয়োগ দেয়।
. এই ডিলাররা সিম কিনে এনে আনে। তারা প্রতিটি এলাকার জন্য একজন করে এজেন্ট নিয়োগ করে। প্রতি এজেন্টকে সিম বিক্রি করার জন্য তারা একটি মাসিক টার্গেট দেয়া থাকে।
. এই এজেন্টরা তার এলাকায় যত রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতা আছে তাদের কাছে সিম বিক্রি করে।
. সবশেষে, সাধারণ ক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সিম ক্রয় করেন।

এখন সিম ক্রয় করার সময় ক্রেতাকে নিজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হয়। কিন্তু আমরা অত্যন্ত নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং কর্মঠো জাতি হওয়ায়, সিম কেনার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয়ার নূণ্যতম কষ্টটা করতে রাজি নই। অপরদিকে রিটেইলাররা সিম বিক্রয় করতে মরিয়া। একটি সিম বিক্রয় করলে তাদের ৬৫ টাকার মত লাভ হয়। আর ক্রেতার তথ্যের কাগজ জমা দিলে কোম্পানী থেকে আরও ১০-১৫ টাকার মত পাওয়া যায়। এখন ক্রেতার তথ্যের কাগজ জমা দেয়াটা কোম্পানীগুলো থেকে বাধ্যতামুলক (সরকারের ঠেলা খাওয়ার পরে) করা হয়েছে এবং জমাও দিতে হবে বিক্রয় করার ঠিক ৩ দিনের মধ্যে। এখন ক্রেতারা প্রয়োজনীয় কাগজ জমা না দেয়ায় রিটেইলাররা পড়েছে বিপদে। তাদের বিক্রি কমে গিয়েছে। এই বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এসেছে মোবাইল কোম্পানীর নিয়োগ দেয়া ডিলাররা। ডিলারদের নিয়োগ করা এজেন্টরা এখন বিক্রিত হওয়া সিম নম্বরটা নিয়ে নেয়। তারপর নিজেরাই মনের মাধুরী মিশিয়ে সেইসব সিমের কাগজ তৈরী করে। এজন্য রিটেইলাররা কাগজ জমা দেয়ার জন্য যে ১৫টাকা , সেটা না পেলেও সিম সহজে বিক্রি করতে পারায় প্রতি সিমে ৬৫ টাকা লাভ করেই খুশি থাকে।
এখন এজেন্টারা সিমের কাগজ তৈরী করার জন্য প্রয়োজনীয় ছবি এবং পরিচয়পত্র কোথায় পায়? আমাদের মধ্যে অনেকেই আমরা মত বোকা। আমার মতই তারাও নিজের ছবি এবং পরিচয়পত্রের কপি জমা দিয়ে সিম কিনেছেন। এইসব ছবি এবং পরিচয়পত্রের কপি খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে এজেন্টরা সংগ্রহ করেন। তারপর একই ছবি এবং পরিচয় পত্রের শতশত কপি করান। তারপর একই ছবি ও পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক সিম বিক্রয়ের কাগজ তৈরী করেন। এতে তাদের নিজেদের পকেট থেকে কিছু খরচ হয় এবং প্রতিটি কাগজ জমার বিপরীতে কোম্পানী থেকে প্রদেয় লাভের পরিমান ৯-১০ টাকায় নেমে আসে। তাতেও তারা খুশি। কারণ এই লাভ পুরাটাই তাদের ফাও লাভ।
কাজেই আপনার নামের বিপরীতে যে একাধিক সিম নেই, সেটার কোন গ্যারান্টি নেই। আর আপনার নামে করা সিম যে কোন ধলা-জাহাঙ্গীর বা মোরগ-মিলন ব্যবহার করছেনা সেটারও কোন গ্যারান্টি নেই। কাজেই আসুন , আমরা সবাই জেলে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হই। আর এটাতে আতঙ্কিত বা আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই । কারণ এটা আমাদের জন্য শুদ্ধ হওয়ার একটি বিরাট সুযোগ। আমাদের প্রিয় রক-শিল্পী জেমস বলেছেন, “জেলে গেলে মানুষ শুদ্ধ হয়।”

[ তার ছেড়া কাউয়া ]


মন্তব্য

মর্ম এর ছবি

কোথায় যেন পড়েছিলাম জীবনে একবার হলেও জেল-এ যাবায় অভিজ্ঞতা থাকা উচিত চোখ টিপি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

হুমম
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

হলুদ-মডু এর ছবি

ডুয়াল পোস্টিঙের কারণে আপনার পোস্টটি নীড়পাতা থেকে অপসারিত হলো। ভবিষ্যতে সচলায়তনে পোস্ট করার আগে অনুগ্রহ করে নীতিমালাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ধন্যবাদ।