বানানায়তন- ১১ | সংস্কৃত বানানরীতি বনাম বাংলা বানানরীতি |

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২১/১২/২০১০ - ১০:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“উচ্চারণ যেন ঠিক নদীর বহমান জলের মতো, প্রতি মুহূর্তে তার দিকপরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু বানান থাকে পাথরে খোদাই, তাকে মোছা কঠিন। লিখন ও মুদ্রণ প্রক্রিয়াই বানানের অজরত্ব এনে দেয়। বানানের কোনো পরিবর্তন দেখলেই তাই আমরা গোঁড়া হয়ে পড়ি। আরে এই ফটো তো সেই লোকের (শব্দের) নয়, একে মানি না। কানের ভিতর দিয়া যা মরমে পশে, তার চেয়ে চোখের ভিতর দিয়ে যা মগজে পৌঁছায় তার ওজন বেশি, সে খাঁটিকে ধমক দেয়, তুমি যা-ই হও বানান এমনিই হবে।” –মনোজকুমার দ. গিরিশ

পণ্ডিতদের দেওয়া বিধান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলা ভাষায় দুটি বানানরীতি প্রচলিত। একটি বাংলা বানানরীতি এবং অন্যটি সংস্কৃত বানানরীতি। অর্থাৎ, তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের বানান সংস্কৃত বানানের রীতি অনুযায়ী হবে, আর অ-তৎসম শব্দের বানান বাংলা বানানের রীতি অনুযায়ী হবে। যেমন তৎসম শব্দে ঈ-কার, ষ, ণ আশ্রয়ী হবে; অতৎসম শব্দে ই-কার, শ/স এবং ন আশ্রয়ী হবে। কিন্তু কেন সবক্ষেত্রেই বাংলা বানানের রীতি অনুসরণ করা হবে না? বিশেষত যখন তেমনটি করা হলে বাংলা লেখা ও পড়ার কাজটি অনেকটাই সহজ হয়ে যেত? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও যে তৎসম শব্দের বানানকে বাংলার স্বাভাবিক ধরনে বদলে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন তাও কি অকারণে? তিনি ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন যে বানানের ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে দিলেই সেগুলির তৎসমত্ব আর থাকবে না। কারণ উচ্চারণের দিক থেকে বাংলায় তৎসম শব্দ নেই বললেই চলে। [১]

তবে এ কথাও ঠিক, বাংলা ব্যাকরণ অনেকটাই সংস্কৃতানুসারী, তাই তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত রাখার কথা যে সৎ উদ্দেশেই বলা হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তৎসম শব্দ সাধারণভাবে প্রাচীন, প্রতিষ্ঠিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে পবিত্র শব্দ হিসেবে বিবেচিত। এ কথাও সত্য যে, বাংলা শব্দভাণ্ডার যদি কেবল তৎসম শব্দ নিয়েই গঠিত হতো তাহলে বাংলা বানানে হয়তো এমন বিশৃঙ্খলা দেখা দিতই না। তা তো হয়ইনি, বরং কালে কালে যেন তৎসম শব্দরা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ব্যাকরণ তৈরি করার সময় পণ্ডিতেরা দেখিয়েছেন বাংলা ভাষার প্রায় আশি ভাগ শব্দই তৎসম, অথচ বিচার করতে গেলে এখন শতকরা পঁচিশ ভাগ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। তবু বলতেই হয়, তৎসম শব্দে বাংলা বানানের রীতি অনুসরণ করা হলে বহু চেনা শব্দের বানান অচেনা হয়ে যাবে; বিশেষত সেসব শব্দও, যেগুলির বানান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তদুপরি এতে করে ভাষার ব্যুৎপত্তি (Origin) এবং ভাষাতাত্ত্বিক (Philological) ইতিহাস হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাটিও রয়েছে। আর এ কথাও সত্যি যে, বিশ্বের আর সব ভাষার মতোই বাংলা ভাষায়ও শব্দের বানান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চারণানুগ (phonetic spelling) নয়। কোনো চলমান ও জীবন্ত ভাষার পক্ষেই এমনটি হওয়া সম্ভবও নয়। বাংলা বানানে (সর্বাঙ্গীন) একরূপতা আনয়ন বা (পাইকারি হারে) সরলীকরণের প্রশ্নটি তাই শুনতেই ভালো, আসলে তেমন কাজের কথা নয়। অন্ততপক্ষে তৎসম (সংস্কৃত) শব্দ বাংলা বানানের রীতিতে লেখার পক্ষে পণ্ডিতদের কেউই রাজি হবেন বলে মনে হয় না। চিন্তিত

সে যা-ই হোক, বর্তমানে বাংলা বানানের নিয়মগুলো পর্যালোচনা করলে পণ্ডিতদের দুটি উদ্দেশ্য বা প্রবণতা দৃশ্যমান হয় :

১. বাংলা শব্দভাণ্ডারের বিমিশ্র চরিত্রের সাথে সংগতি রেখে তৎসম শব্দের মূল বানান 'মোটামুটিভাবে' অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা।

২. সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, অর্থতৎসম, দেশি ও মিশ্র শব্দের বানানকে কমবেশি ধ্বনিসংবাদী করা। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে, বাংলা উচ্চারণের শর্ত বজায় রেখে বিদেশি শব্দের মূল উচ্চারণ প্রতিবর্ণীকৃত করা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, wikipedia-র মতে বাংলা ভাষায় বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ পৃথক শব্দ আছে, যার অর্ধেককে ধরা হয় তৎসম (সরাসরি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে), ২১,১০০ তদ্ভব (সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত), এবং বাদ বাকি দেশি ও বিদেশি শব্দ। তবে এ হিসেব অনেকটা “কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই” এ ধরনের একটি বিষয়। কারণ এসব শব্দের বড় একটি অংশ "হয় আলঙ্কারিক শব্দ নয় পরিভাষা"। ফলে বাস্তবে এসব শব্দের প্রয়োগ খুব কমই হয়। আধুনিক সাহিত্যে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয় তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তদ্ভব শব্দ, যখন কিনা তৎসম শব্দ ব্যবহৃত হয় শতকরা পঁচিশ ভাগেরও কম। বাদ বাকি দেশি এবং বিদেশি শব্দ।

বর্ণ দিয়ে যায় সংস্কৃত চেনা :

গোঁফকে বলে তোমার আমার গোঁফ কি কারো কেনা?
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা। –সুকুমার রায়

বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মের গোড়াতেই (১.০১ অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য) বলে দেওয়া হয়েছে- তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এইসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে।

কিন্তু কোনটি তৎসম আর কোনটি অ-তৎসম শব্দ এটা বুঝার কোনো উপায় কি আছে? কারণ উচ্চারণের দিক থেকে তো তৎসম আর অ-তৎসম শব্দে কোনো পার্থক্য নেই! তাহলে বলি, অভিধানে সব শব্দের ব্যুৎপত্তি-নির্দেশই পাওয়া যায়। আরও সুখের কথা এই, কিছু কিছু বর্ণের (স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা যুক্তাক্ষর) উপস্থিতি থেকেই তৎসম শব্দের তৎসমত্ব টের পাওয়া যায়।

স্বরবর্ণ :

ঈ/ী : শুধুমাত্র তৎসম শব্দে বসে। তবে অ-তৎসম শব্দের সাথেও সংস্কৃত ঈয় প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাংলা শব্দ তৈরি হলে সংস্কৃত প্রবণতার জন্য দীর্ঘ-কার দেখা যাবে। যেমন ইউরোপীয়, রোবটীয়, তুঘলকীয়, খ্রিস্টীয়, ইত্যাদি।

কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, পঞ্জি, ধূলি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র প্রভৃতি শব্দ তৎসম। তা সত্ত্বেও এগুলোর বানানে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) ই ঈ উভয় শুদ্ধ হওয়ায় (সরলীকরণের স্বার্থে) এসব বানানে দীর্ঘ-কার বর্জন করা হচ্ছে।

সংস্কৃত বানানরীতি বনাম বাংলা বানানরীতি- ১

তৎসম শব্দ (সংস্কৃতানুসারী)---------অ-তৎসম শব্দ (ধ্বনিসংবাদী)
কর্মচারী----------------------------সরকারি/তরকারি/মাস্টারি
উপকারী/নারী----------------------গাড়ি/দাড়ি/বাড়ি/শাড়ি/হাঁড়ি
অর্থকরী----------------------------ছড়ি//হিজরি/ছুরি/দেরি
আগামী----------------------------আসামি/পাগলামি/রেশমি/পশমি/মামি
সত্যবাদী/বাস্তববাদী---------------ফরিয়াদি/দাদি/দিদি
নান্দী------------------------------বান্দি
জ্ঞানী/বেষ্টনী/দুঃখিনী---------------ধনি/ইরানি/আইনি/
গুণী/রাগিণী-----------------------রানি/নানি/জাপানি/চোরাচালানি
উপকারী--------------------------দরকারি/নজরদারি/কারিগরি
অধিবাসী/দোষী-------------------ফরাসি/মাসি/ধুমসি/ফারসি/নাৎসি
বিরোধী/নিরোধী/চণ্ডী--------------হিন্দি/সিন্ধি/সিধাসিধি
পরজীবী/দেবী--------------------বিবি/দাবি/আরবি
রাজ্ঞী-----------------------------বোমাবাজি/রাজি/বেজি/হাজি/ইংরেজি
দুগ্ধবতী--------------------------কেরামতি/হাতি/জাতি
মাঘী/আবেগী/রাগী----------------ছাগি/দিঘি/পাখি/ফাঁকি
পাপী/শিল্পী-----------------------টুপি/কারচুপি
সব্যসাচী--------------------------চাচি/হাঁচি
ধীমান/ঈশ্বর----------------------ইমান
অঙ্গাঙ্গী---------------------------ফিরিঙ্গি/সিঙ্গি
নীরব----------------------------নিচ/নিচু
চণ্ডালী/কুণ্ডলী--------------------মালি/পাগলি/বাঙালি/সোনালি
অধীর/নীর-----------------------কুমির/আমির
বেশী (বেশ ধারণকারী)----------বেশি (আধিক্য)/খুশি
ভারী (বেশি ভারযুক্ত)-----------ভারি (খুব)

ব্যতিক্রম : ঈদ, ঈগল প্রভৃতি শব্দ অ-তৎসম হলেও ই-এর প্রচলন হয়নি

ঊ/ূ : শুধুমাত্র তৎসম শব্দে বসে। যেমন মূর্ছা, সূর্য, ঊর্ধ্ব, ঊর্মি, ঊনসত্তর, ইত্যাদি।

উর্ণা, উষা প্রভৃতি শব্দ তৎসম। তা সত্ত্বেও এগুলোর বানানে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) ই ঈ উভয় শুদ্ধ হওয়ায় (সরলীকরণের স্বার্থে) এসব বানানে দীর্ঘ-কার বর্জন করা হচ্ছে।

সংস্কৃত বানানরীতি বনাম বাংলা বানানরীতি- ২

তৎসম শব্দ (সংস্কৃতানুসারী)-------অ-তৎসম শব্দ (ধ্বনিসংবাদী)

ভ্রূন/ঊন---------------------------চুন/খুন
ধূম (ধোঁয়া)-----------------------চুম/চুমা/ভুখা
কূট-------------------------------উট
কূপ/মূক--------------------------খুব/স্যুপ
দূরবীন/মূর্খ/সূর্য-------------------কুর্নিশ/উনিশ/উনচল্লিশ
নূপুর-----------------------------দুপুর/কুকুর
মূল------------------------------ভুল
সূরি------------------------------চুরি/বুড়ি/ছুঁড়ি

সংস্কৃত শব্দ বাংলায় আসার পথেই ব্রাত্য বাংলাভাষীর মুখে মুখে তার কুলীন দীর্ঘস্বর হারিয়েছে। কিছু উদাহরণ :

তৎসম শব্দ (সংস্কৃতানুসারী)---------অ-তৎসম শব্দ (ধ্বনিসংবাদী)
ধূলি--------------------------------ধুলা/ধুলো
পূজা-------------------------------পুজো
ভূত--------------------------------ভুতুড়ে
পূর্ব--------------------------------পুব
দূর---------------------------------যদ্দুর/ধুরো
দূর্বা--------------------------------দুবলা
চূড়া--------------------------------চুড়ো
নূতন------------------------------নতুন

ঋ/ঋ-কার :

ঋ [রি] বাংলা ভাষার সপ্তম স্বরবর্ণ। এর উচ্চারণ-স্থান মূর্ধা। ধ্বনিবিজ্ঞান অনুসারে বাংলা ঋ-এর উচ্চারণ (১) শব্দের প্রথমে কোনো বর্ণের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে 'রি' (ঋণ, ঋষি); (২) অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে ঋ-এর উচ্চারণ হয় র-ফলা (হৃদয় = হ্রিদয়, আদৃত = আদ্রিত)।

ঋ-কার [রিকার] ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ঋ স্বরধ্বনির প্রতীকরূপে ব্যবহৃত 'ৃ' এই চিহ্ন।

সংস্কৃত বানানরীতি বনাম বাংলা বানানরীতি- ৩

ঋ বা ঋ-কার শুধুমাত্র তৎসম শব্দে বসে। যেমন ঋতু, ঋজু, ঋদ্ধ, নৃ, কৃত, ধৃত, বৃষ, কৃষ্টি, বৃত্ত, বৃশ্চিক, ঘৃণা, কৃষক, কৃতজ্ঞ, ইত্যাদি। তাই ঋ বা ঋ-কার দেখেই বলে দেওয়া যায় শব্দটি তৎসম।

অনেকে অ-তৎসম শব্দেও ঋ-কার দিয়ে ফেলেন, যা একটি ভুল/অশুদ্ধ প্রয়োগ। কিছু উদাহরণ :

অশুদ্ধ বানান---------------------------শুদ্ধ বানান

অ-তৎসম শব্দ (সংস্কৃতানুসারী)---------ধ্বনিসংবাদী (বাংলা বানানরীতি)
বৃটেন----------------------------------ব্রিটেন
কৃকেট---------------------------------ক্রিকেট
খৃস্টাব্দ, খৃষ্টাব্দ-------------------------খ্রিস্টাব্দ, খ্রিষ্টাব্দ
দৃম দৃম--------------------------------দ্রিম দ্রিম

(চলবে...)

তথ্যসূত্র : [১] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, 'বাংলা ভাষা-পরিচয়' (১৯৬৯), পৃ ৭৪

বিশেষ কৃতজ্ঞতা :
১. বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
২. বাংলাভাষা চর্চা (সুভাষ ভট্টাচার্য)

------------------------------------------------------------------------------------
বানানায়তন- ১০ | কখন কি লিখব, কখন কী লিখব |

বানানায়তন- ৯ | ব-য় শূন্য 'র' বনাম ড-য় শূন্য 'ড়'|
বানানায়তন- ৮ | পাঠ্যবইয়ে বাংলা একাডেমীর বানানরীতি মেনে চলতে হবে |
বানানায়তন- ৭ | বাংলা হরফ বনাম রোমান হরফ—জ বনাম J, Z, G |
বানানায়তন- ৬ | বাংলার তিন 'শ'—দন্ত্য-স, মূর্ধন্য-ষ আর তালব্য-শ|
বানানায়তন- ৫ | দন্ত্য-ন বনাম মূর্ধন্য-ণ |

বানানায়তন- ৪ | 'অনুস্বার' বনাম 'ঙ', সাথে 'এ' বনাম 'অ্যা' |
বানানায়তন-৩ | হ্রস্ব স্বর না দীর্ঘ স্বর |
বানানায়তন- ২ | ও কি এল, ও কি এল না |

বানানায়তন ১ | ই-কার বনাম ঈ-কার |
------------------------------------------------------------------------------------

---------------------------
কুটুমবাড়ি

---------------------------


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। খুবই দরকারী (ঠিক লিখলাম তো?) লেখা।
অফটপিকঃ কোন অনলাইন বাংলা ডিকশনারি জানা আছে? মূলত E2B খুঁজছি। গুগল সার্চ দিয়ে যেগুলো পাই, ওগুলোর ডাটাবেজ খুব ছোট।
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই দরকারী (ঠিক লিখলাম তো?) লেখা।

দরকারী > দরকারি। শব্দটি বাংলায় এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে, অর্থাৎ এটি তৎসম শব্দ নয়। তাই ঈ প্রযোজ্য হবে না এখানে।

পড়া এবং মন্তব্যের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অফটপিক : এটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এর চেয়ে ভালো কোনো E2B ডিকশনারি চোখে পড়েনি এখনও।

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

জরুরী (ঠিক লিখলাম তো???) লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ

---আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

জরুরী > জরুরি। শব্দটি বাংলায় এসেছে আরবি ভাষা থেকে, অর্থাৎ এটিও তৎসম শব্দ নয়! তাই এখানেও ঈ প্রযোজ্য হবে না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ। এটা আগে দেখিনি।
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

লিংকটা কাজে দিবে শুনে ভালো লাগল। শুভেচ্ছা রইল।

কুটুমবাড়ি

মূলত পাঠক এর ছবি

সিরিজ চমৎকার লাগছে, বানান-খুঁতখুঁতে পাঠক হিসেবেও। একটা কথা, এক জায়গায় যেমন লিখেছেন: "ধূলি--------------------------------ধুলা/ধুলো",
অন্যত্র একই ভাবে "সব্যসাচী--------------------------চাচি/হাঁচি" লেখায় একটু ধন্দ লাগতে পারে। ওখানে অন্য কোনো ভাবে লেখা গেলে বোধ হয় ভালো হতো।

সিরিজ দীর্ঘজীবি হোক!

অতিথি লেখক এর ছবি

মূলোদা,
আপনি এই এলেবেলে লেখাগুলি পড়ছেন জেনে খুবই ভালো লাগল। দেঁতো হাসি মাঝে মাঝে আপনাকে অনেকের লেখায় বানান-সংশোধনী দিতে দেখলেও নিজে কখনো প্রত্যাশা করিনি। কারণ আমার লেখা আপনার কাছে পাঠযোগ্য মনে হবে এমন দুরাশা কোনো কালেই ছিল না। তবু যখন আপনাকে পেলামই তখন আমার লেখায় যেকোনো বানান ভুল পেলে ধরিয়ে দেবেন এই দাবি জানিয়ে রাখলাম। "ধূলি--------------------------------ধুলা/ধুলো" এই তালিকাটি একটু আলাদা, কিন্তু শিরোনাম একই থাকায় বোধ হয় ধন্দ লেগেছে। সেজন্য দুঃখিত। আপনার মন্তব্য পড়ে একটা বানান-জিজ্ঞাস্য মাথায় আসল। কোনো ভাবে কি একসাথে লেখা হবে না? আর দীর্ঘজীবি বানানটি বাংলা একাডেমীর অভিধানে দেখছি দীর্ঘজীবী। কোনটি সঠিক? চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"সরলীকরণের স্বার্থে" কথাটা দেখলেই আমার গোলাপ রেহমানের কথা মনে পড়ে। যিনি গৃন (গ্রীন), মেডিকাল (মেডিক্যাল), ফৃ (ফ্রি) এমনসব সরলীকৃত বানানে পত্রিকা বের করতেন। "সরলীকরণের স্বার্থে" কথাটা বেশিরভাগ জায়গায় আমার কাছে ভাষার সৌন্দর্যবিনাশী অহেতুক মনে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

"সরলীকরণের স্বার্থে" কথাটা বেশিরভাগ জায়গায় আমার কাছে ভাষার সৌন্দর্যবিনাশী অহেতুক মনে হয়।

পাণ্ডবদা, আপনার সাথে একমত। অনেকেই যথেচ্ছভাবে না বুঝে-শুনেই সরলীকরণ করে ফেলেন, যা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তবে বাংলা একাডেমী বানানের অনেক নিয়মে কিছুটা সরলীকরণ করেছে, যা হয়তো সময়ের প্রয়োজনে অপরিহার্যই ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী যেসব জায়গায় ই ঈ উভয় শুদ্ধ সেখানে একাডেমী ই দিতে বলেছে, এই তো! আর সমস্ত অ-তৎসম শব্দ বাংলা বানানের রীতিতে লেখার জন্য বলেছে তাও আমাদের ভালোর জন্যই। এতে একরূপতা থাকবে, ভাষা সহজ হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অ-তৎসম শব্দ যেমন গ্রিন, ফ্রি সংস্কৃত বানানরীতি অনুযায়ী কেউ গৃন, ফৃ লিখতে পারবে অথবা তৎসম শব্দ যেমন নৃ, তৃষ্ণা বাংলা বানানরীতি অনুযায়ী কেউ ন্রি, ত্রিষ্ণা লিখতে পারবে। গোলাপ রেহমান যদি তেমনটা করে থাকেন (আমার আবছা আবছা মনে পড়ছে, ছোট ছিলাম তো!) তাহলে গর্হিত কাজ করেছেন। এ ধরনের কাজকে কেবলই "ভাষার সৌন্দর্যবিনাশী" বলাটা ভুল হবে, বরং কেউ জেনে-শুনে করে থাকলে তাকে ভণ্ড বলা ছাড়া গতি দেখছি না। মন খারাপ

পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

কুটুমবাড়ি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যার সাথে একমত। তবে বিদেশী ভাষার শব্দ বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে আমি উচ্চারণানুগ হবার পক্ষপাতী। তাই আমার হিসাবে,

Academy = অ্যাকাডেমী
Green/Tree/Free = গ্রীন/ট্রী/ফ্রী
Fringe/Petition = ফ্রিঞ্জ/পিটিশন
Engineer = এঞ্জিনিয়ার

আমি জানি বাংলা একাডেমি (উনাদের পরামর্শকৃত বানানে লিখলাম) এখানে দ্বিমত পোষন করে - সরলীকরণের স্বার্থে।

অর্থ বিচার করলে "দীর্ঘজীবী" সঠিক হবার কথা না?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

আম্মো উরুশ্চারণ অনুযায়ী ঈ-ঊ দিতে পছন্দ করি হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আম্মো উরুশ্চারণ অনুযায়ী দিরঘি রশ্শু ভালা পাই। তয় শুধু রশ্শি দীর্ঘু নিয়ে ভাবলেই কি চলবে? বাংলায় আরও পাঁচখান মৌলিক স্বরধ্বনি আছে! সেগুলির দীর্ঘ উরুশ্চারণ কীভাবে করবেক? চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

বিদেশী ভাষার শব্দ বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে আমি উচ্চারণানুগ হবার পক্ষপাতী।

পাণ্ডবদা,
আপনার মতোই আমিও উচ্চারণানুগ হবার পক্ষপাতী, কিন্তু তা করতে গিয়ে, ভীষণ ফ্যাসাদে পড়ে গেছি! দেখুন তো একটু উদ্ধার করতে পারেন কি না। দেঁতো হাসি

অ্যাকাডেমী, গ্রীন, ট্রী, ফ্রী শব্দগুলো যতবারই উচ্চারণ করি ততবারই আমার উচ্চারণে আসে অ্যাকাডেমি, গ্রিন, ট্রি, ফ্রি। বানানে দিরঘি লেখা আছে, কিন্তু জিবে আসছে না! কী করব বলুন, দীর্ঘদিনের অভ্যাস।

আর আপনি বিদেশি ভাষা বলতে কি শুধু ইংরেজি ভাষার কথা বলতে চেয়েছেন? নাকি আরবি-ফার্সি-তুর্কি-হিন্দি এসব ভাষার কথাও? এসব ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলায় এসেছে সেগুলিতেও কি দিরঘি লিখব? নাকি রশ্শি? এ ছাড়া চাইনিজ, বার্মিজ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ সহ বিশ্বের বহু ভাষা থেকে আমরা শব্দ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও নেব। এসব ভাষার ক্ষেত্রেই বা কী করণীয়?

তা, কেবল বিদেশী ভাষার শব্দ লেখার ক্ষেত্রে উচ্চারণানুগ হলেই চলবে? আমাদের ভাষায় আরও নানান কিসিমের শব্দ আছে সেগুলির ব্যাপারেও কি কিছু ভেবেছেন? দেখুন উইকি কী বলছে এ ব্যাপারে-

বাংলায় হ্রস্ব এবং দীর্ঘ স্বরের মধ্যে চোখে পড়ার মতো কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। রূপমূল বা শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশ উচ্চারণ করার সময় স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য কখনো কখনো আলাদা হতে পারে, যদিও বানান একই হয়ে থাকে। যেমন, উন্মুক্ত একাক্ষরিক শব্দে (মাত্র একটি সিলেবল দিয়ে তৈরি শব্দ, যার শেষ হয় প্রধান স্বরধ্বনিটি দিয়ে) কিছুটা দীর্ঘ স্বরধ্বনি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাটা ভালো হয়েছে। শুধু চা শব্দটার স্বরধ্বনি একটু দীর্ঘ। কিন্তু চায়ের পরে পদাশ্রিত নির্দেশক টা বসলে তখন হ্রস্ব হয়ে যাচ্ছে। আবার চায়ের সাথে যদি টা (নাস্তা) আসে তাহলে চা এবং টা দুটোর উচ্চারণই দীর্ঘ হবে।

এখন কথা হলো বাংলা বানানে এই দীর্ঘ বা হ্রস্ব উচ্চারণটি কীভাবে নির্দেশ করব? আমাদের তো আর দীর্ঘ আ-কার বা হ্রস্ব আ-কার নেই! তাহলে?

রবী ঠাকুর কী বলছেন দেখেন-

১. বাংলা উচ্চারণে কোনো ওকার দীর্ঘ কোনো ওকার হ্রস্ব; হসন্ত শব্দের পূর্ববর্তী ওকার দীর্ঘ এবং স্বরান্ত শব্দের পূর্ববর্তী ওকার হ্রস্ব। ‘ঘোর’ এবং ‘ঘোড়া’ শব্দের উচ্চারণ-পার্থক্য লক্ষ্য করিলেই ইহা ধরা পড়িবে।

আমাদের তো আর দীর্ঘ ও-কার বা হ্রস্ব ও-কার নেই! তাহলে? এক্ষেত্রেই বা উচ্চারণ-নির্দেশ করব কীভাবে?

২. সংস্কৃতে দীর্ঘস্বরের দীর্ঘতা সর্বত্রই, বাংলায় স্থানবিশেষে। কথায় ঝোঁক দেবার সময় বাংলা স্বরের উচ্চারণ সব জায়গাতেই দীর্ঘ হয়, যেমন : ভা—রি তো পণ্ডিত, কে—বা কার খোঁজ রাখে, আ—জই যাব, হল—ই বা, অবা—ক করলে, হাজা—রো লোক, কী— যে বকো, এক ধা—র থেকে লাগা—ও মার। যুক্তবর্ণের পূর্বে সংস্কৃতে স্বর দীর্ঘ হয়। বাংলায় তা হয় না।

এমনকি আমাদের দীর্ঘ এ-কার বা হ্রস্ব এ-কারও নেই (কে—বা কার খোঁজ রাখে)! এক্ষেত্রেই বা কী করণীয়?

আমি জানি বাংলা একাডেমি (উনাদের পরামর্শকৃত বানানে লিখলাম) এখানে দ্বিমত পোষন করে - সরলীকরণের স্বার্থে।

বাংলা একাডেমীর পরামর্শকৃত বানানে লিখলে লিখতে হবে বাংলা অ্যাকাডেমি। তবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে কিন্তু বানানের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। অন্তত যত দিন না বাংলা একাডেমী তার নাম পরিবর্তন করছে তত দিন আমি বাংলা একাডেমী এই নামটিই লেখার পক্ষপাতী। হাসি

কুটুমবাড়ি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার বলা সমস্যাগুলোর কথা জানি। এর বাইরে দুই-ন, দুই-জ, তিন-শ-এর উচ্চারণ; ঙ আর ং-এর উচ্চারণের মতো এমন অনেক ফ্যাকড়া আছে। বিদেশী ভাষা বলতে বাংলা ছাড়া সব ভাষাকেই বুঝিয়েছি। তবে অনেক ভাষার অনেক শব্দই যে উচ্চারণ অনুসারে বাংলায় লেখা যাবেনা তাও জানি। এর সরল সমাধান সম্ভব না। লেখা আর উচ্চারণের পার্থক্যের সমস্যা কম-বেশি সব ভাষাতেই আছে। সেটা নির্মূল করা যাবে বলেও মনে হয়না। কিছু বইয়ে একসময় আরবীর দীর্ঘ-আ উচ্চারণ বোঝানোর জন্য ডবল আকার ব্যবহার করতেও দেখেছি। এটা ব্যাকরণসম্মত নয়। ঠিকঠাক ও পূর্ণাঙ্গ (সংস্কৃত নির্ভর নয়) বাংলা ব্যাকরণ দরকার। বাংলা বর্ণমালারও সংস্কার দরকার। ভাষা জীবনের সাথে সাথে গতিশীল বলে এখানে নিয়মিত সংস্কারটা দরকারী।

ব্যক্তির নামের ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষায় কিন্তু বানানটা প্রায় নির্ধারিত। আপনাকে কিন্তু John-ই লিখতে হবে। সেখানে Jon, Gon বা Zon লেখার উপায় নেই। ব্যতিক্রম যে নেই তা নেই, তবে সেই ব্যতিক্রমটাকে উদাহরণ ধরে বানানে যা-ইচ্ছা-তাই করার সুযোগ সেখানে দেয়া হয়নি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।

কিছু বইয়ে একসময় আরবীর দীর্ঘ-আ উচ্চারণ বোঝানোর জন্য ডবল আকার ব্যবহার করতেও দেখেছি। এটা ব্যাকরণসম্মত নয়।

ঠিক এ কথাটাই বলতে চাইছি। ঈ-কার ঊ-কার এক অর্থে ডাবল ই-কার উ-কার। তবুও বাংলায় ঈ ঊ বা ঈ-কার ঊ-কার আছে শুধুমাত্র সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণের কারণে, উচ্চারণ বোঝানোর জন্য নয়।

ব্যক্তির নামের ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষায় কিন্তু বানানটা প্রায় নির্ধারিত। আপনাকে কিন্তু John-ই লিখতে হবে। সেখানে Jon, Gon বা Zon লেখার উপায় নেই।

ইংরেজি ভাষায় নামের বানান পর্যন্ত প্রায় নির্ধারিত। আর আমরা বাংলাদেশি নাকি বাংলাদেশী (অর্থাৎ ইকার না ঈকার) তা-ই ঠিক করতে পারছি না। মন খারাপ

আপনার বাকি মন্তব্যের সাথে পূর্ণ সহমত। সংস্কৃত নির্ভর নয় বরং বাংলার নিজস্ব ব্যাকরণ দরকার। একই সাথে বাংলা বর্ণমালারও সংস্কার দরকার। এবং সেটা অচিরেই হোক।

কুটুমবাড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।