বানানায়তন ১ : ই-কার বনাম ঈ-কার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৭/২০১০ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের হাতে একটি প্রমিত বাংলা বানানরীতি আছে। অথচ এত কষ্টের মাতৃভাষায় যে সুখ করে কিছু লিখব বা পড়ব! বানানের দৌরাত্ম্যে সে সুযোগ খুবই কম। সারা বিশ্বেই বানান উচ্চারণ-নির্ভর নয়। ব্যাকরণের ছাপ তাতে থাকবেই থাকবে। কিন্তু বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলা যেন কিছুতেই কমবার নয়।

যা হোক আশার কথা হলো একটি গ্রহণযোগ্য বানানরীতি আমাদের হাতে আছে। বাংলা একাডেমীর বানানরীতিটি ভাষাবৈজ্ঞানিক এবং প্রগতিশীল। এই রীতিটি ভাষার ব্যবহারকে অনেকটা সহজ করেছে। তাই এর থেকে আমরা আর কত দিন মুখ ফিরিয়ে রাখব তা ভাববার সময় এসেছে। আমরা যারা বাংলায় লেখালেখি করছি, তারা যদি সচেতন হই তাহলে ভাষা যেমন শুদ্ধ রূপ ফিরে পাবে, তেমনি গতিশীলও হবে।

বাংলা বানানরীতি নিয়ে বহুবার লেখালেখির আহ্বান জানানো হয়েছে এই সচলায়তনেই। কিন্ত সেভাবে সাড়া মেলেনি কেন যেন। তাই সচলায়তনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চালু করা হলো বানান শিক্ষার নতুন আসর—বানানায়তন। যেহেতু এ আসরের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বানানাধ্যয়ন (বানান বিষয়ে অধ্যয়ন), তাই সকল আলোচনা বানানালাপ (বানান নিয়ে আলাপ)-এ সীমাবদ্ধ থাকবে। শুধুমাত্র প্রকৃত বানানার্থী (বানান শিখতে ইচ্ছুক বিদ্যার্থী)-দের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের বানানাসর (বানান শিক্ষার আসর)।

বিশেষজ্ঞতা সকল ক্ষেত্রেই দুর্লভ। ব্যাকরণে বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুবই কম এ কথা মানতেই হবে। অথচ তাঁদের অনেকেরই অন্য এমন গুণ থাকতে পারে যাতে একোহি দোষো গুণসন্নিপাতের জন্য সাহিত্যব্যবহার থেকে তাঁদের নির্বাসন দেওয়া চলবে না। —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাংলা বানান এখনও বহুলাংশে ব্যাকরণ-অনুসারী। তাহলে আমরা যাঁরা ব্যাকরণে বিশেষজ্ঞ (পড়ুন বিশেষভাবে অজ্ঞ) অর্থাৎ ব্যাকরণাতঙ্কিত, তারা কি বাংলায় লেখালেখি ছেড়ে দিব? না! প্রতিটি বানানাসরে বাংলা বানানের এক-একটি নিয়ম উদ্ঘাটন (পড়ুন বাংলায় লেখালেখির পথে এক-একটি কাঁটা উৎপাটন) করাই হবে বানানায়তনের কাজ।

ব্যবহারের আধিক্য, তদুপরি গুরুত্বের কথা ভেবে সবার আগে বেছে নেওয়া হলো এই সমস্যাটি—ই-কারের হ্রস্ব-দীর্ঘকরণ : কখন কোথায় হবে প্রয়োজন?

প্রথমেই বলে নেই, একদল আছেন যাঁরা বাংলা বানান সহজীকরণের বিপক্ষে। এক্ষেত্রে তাঁরা কোনো নিয়ম বা সূত্র আরোপের বিরোধী। উদাহরণ হিসেবে একজন বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথা স্মরণ করা যাক। তিনি বলেছেন, বানান নিয়ে বিশৃঙ্খলার মূলে রয়েছে আমাদের অনুশীলনের অভাব। চর্চার মাধ্যমেই শুদ্ধ বানান আয়ত্ত করা সম্ভব। তিনি বানানরীতি কঠিন বা জটিল বলে আরোপিতভাবে এর সহজীকরণ অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান বা কমিটি দ্বারা নতুন বানানরীতি প্রণয়নের বিপক্ষে বলে জানিয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বাংলা একাডেমী ‘বাঙালি’, ‘গ্রিক’ ইত্যাদি বানানের ঈ-কার তুলে ই-কার করছে। এতে করে দীর্ঘদিনের বানানরীতির ঐতিহ্যকে অসম্মান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, বলা হয়ে থাকে ঐতিহ্যগত বাংলা বানানরীতি কঠিন বা জটিল। তিনি এ প্রসঙ্গে ইংরেজি ভাষার উদাহরণ এনে বলেছেন, ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য শব্দ আছে যেগুলোর উচ্চারণ এবং বানান ভিন্নরকম, সেখানে তো বানান সহজ করার কথা ওঠেনি! বরং সবাই সেটা আয়ত্ত করছে। বানান ভুল হতে পারে, কিন্তু এজন্য আরোপিতভাবে বানান সহজীকরণ বা পরিবর্তন কাম্য নয়।

জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এই বক্তব্য (আরও অনেকেই আছেন এই মতের অনুসারী) মেনে নিতে হলে হাজার হাজার বাংলা বানান মুখস্থ করা বা অভিধান কোলে নিয়ে বসে থাকা ছাড়া আমাদের মতো নাদানদের পক্ষে বাংলায় লেখা সম্ভব নয়। কী, রাজি আছেন তো সবাই? যাঁরা রাজি আছেন তাঁদের এখানেই নমস্কার জানাই। আপনাদের বানানবিষয়ক কসরত (ভোগান্তি অবশ্য পাঠকের বেশি, লেখকরা তো যা হোক কিছু একটা লিখেই খালাস!) শুভ হোক, এই কামনা করি। আর যাঁরা রাজি নন তাঁরা আগে বাড়ুন।

আরেকদল আছেন যাঁরা সহজীকরণের নামে সর্বত্র ই-কার প্রবর্তনের পক্ষে। এঁদেরকে বড়জোর বলতে পারি মতিচৌ কাণ্ড পড়ে দেখার জন্য। হাস্য এবং চিন্তা—দুটোরই খোরাক পেলেও পেতে পারেন ওখানে।

তাহলে এবার আসুন দেখি বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানরীতি কী বলছে এ ব্যাপারে?

বাংলা ভাষার তৎসম ও অ-তৎসম শব্দের বানানরীতিতে পার্থক্য রয়েছে। তৎসম শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুসারী, যৎসামান্য পরিবর্তন ছাড়া এখানে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এই তৎসম শব্দের বানান নিয়েই যত সমস্যা তৈরি হয় এবং বাংলা বানান অনেকের কাছেই জটিল ও দুরূহ ঠেকে। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফলে বানান সহজ হবে, অথচ ব্যাকরণও আহত হবে না।

নিয়ম ১. ই-কার/ঈ-কার (ি/ী)

ই-কার ব্যবহৃত হবে-

. যেসব তৎসম (বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত) শব্দে ই-কার বা ঈ-কার দুটোই শুদ্ধ এবং প্রচলিত, বানানের সমতাবিধানের লক্ষ্যে সেইসব শব্দে কেবল ই এবং তার-কার চিহ্ন ি ব্যবহৃত হবে।

যেমন : কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিত্কার, ধমনি, পঞ্জি, ধূলি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র ইত্যাদি।

. সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং এদের-কার চিহ্ন ই-কার ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

যেমন : গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, ছড়ি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, নিচ, নিচু, ইমান ইত্যাদি।

. অনুরূপভাবে- আলি বা আবলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন : খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, হেঁয়ালি, রূপালি, সোনালি, দৃশ্যাবলি, গ্রন্থাবলি, সূত্রাবলি ইত্যাদি।

[=ইংরেজি সংখ্যা]ঘ[/]. পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন : ছেলেটি, লোকটি, বইটি।

ঈ-কার (ী) ব্যবহৃত হবে-

. অনেক তৎসম (বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত) শব্দেই শুধুমাত্র ঈ-কার (ী) শুদ্ধ। এসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে, তাই এইসব শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে।

আচ্ছা, তাহলে কোথায় শুধুমাত্র ঈ-কার (ী) শুদ্ধ তা জানব কীভাবে? এর জন্য সহজ কোনো সূত্র কি আছে?

আছে! কখন ঈ-কার ব্যবহৃত হবে তার কিছু সূত্র নিচে উল্লেখ করছি।

. তৎসম শব্দ যদি বিশেষণ হয় তাহলে বানানের অন্তে ঈ-কার হবে। যেমন- উপকারী, জয়ী, আগামী, আইনজীবী, কর্মচারী, যুদ্ধাপরাধী, প্রবাসী, বিদ্যোৎসাহী, বিধর্মী, তপস্বী, প্রতিবাদী, আত্মীয়, অর্ধাঙ্গিনী ইত্যাদি।

খেয়াল রাখতে হবে যে ঈ-কারান্ত বিশেষণবাচক পদের শেষে তা ও ত্ব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষ্য-এ পরিণত হয়। তখন পদ পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে ঈ-কার ই-কার-এ রূপ নিবে। যেমন-

উপকারী+তা= উপকারিতা
সহযোগী+তা= সহযোগিতা
কৃতী+ত্ব= কৃতিত্ব
দায়ী+ত্ব= দায়িত্ব
প্রতিযোগী+তা= প্রতিযোগিতা

. বাংলা ভাষায় যেকোনো ধরনের শব্দ অর্থাৎ তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের শেষে ঈয় প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষণ-এ রূপ নিলে তখনও ঈ-কার হবে। যেমন-

নাটক+ঈয়= নাটকীয়, মানব+ঈয়= মানবীয়,
ধর্ম+ঈয়= ধর্মীয়, রোবট+ঈয়= রোবটীয়,
আচরণ+ঈয়= আচরণীয়, নিন্দন+ঈয়= নিন্দনীয়।

২. কী/কি

‘তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়’ আর ‘তুমি কী জানো সে আমার কত প্রিয়’, এই দুই বাক্যের একটাতে জানা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হচ্ছে আর একটাতে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে জানার প্রকৃতি বা পরিমাণ সম্বন্ধে, এখানে বানানের তফাত না থাকলে ভাবের তফাত নিশ্চিতরূপে আন্দাজ করা যায় না। —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সত্যিই তাই। কোথায় কি লিখব আর কোথায় কী লিখব তা নিয়ে কমবেশি অনেকেই সন্দেহে ভোগেন। তাহলে আসুন জেনে নেই কী/কি-এর ব্যবহার কীভাবে করব।

সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ রূপে স্বতন্ত্র পদ হিসেবে ব্যবহৃত হলে ঈ-কার বসবে। যেমন-

কী পড়? (কোন বইটি পড়)—সর্বনাম
কী খাবে? (কোন খাবারটি খাবে)—সর্বনাম
কী আর বলব? (আর কোন কথাটি বলব)—সর্বনাম
কী জানি? (কোন বিষয়টি জানি)—সর্বনাম
এটা কী বই? (এটা কোন রকমের বা কোন বিষয়ের বই)—সর্বনাম
পরীক্ষায় সাফল্যের উপায় কী? (পরীক্ষায় সাফল্যের কোন কোন উপায় আছে)—সর্বনাম
কী আনন্দ! (কত আনন্দ)—বিশেষণ
কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে? (কেমন বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে)—বিশেষণ
ছবিটা কী রকম লাগল? (ছবিটা কেমন লাগল)—ক্রিয়া-বিশেষণ
কী করে এ কথা বললে! (কেমন করে এ কথা বললে)—ক্রিয়া-বিশেষণ

অব্যয় পদরূপে ব্যবহৃত হলে কি শব্দটি ই-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন-

তুমিও কি যাবে? (প্রশ্নবোধক, উত্তর হবে হ্যাঁ/না বোধক)
সে কি আসলেই আসবে? (সংশয়সূচক, উত্তর হবে হ্যাঁ/না বোধক)
কি বাংলা কি ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী। (বাংলা অথবা ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী)
কি শীত কি গ্রীষ্ম তার সর্দি লেগেই থাকে (শীত কিংবা গ্রীষ্ম তার সর্দি লেগেই থাকে)
বেটা নবাব আর কি! (প্রায় তদ্রূপ অর্থে)
বলতে কি, ভুত আমিও ভয় পাই। (সত্য বলতে হলে)
বল কি! তার এ কাজ? (বিস্ময় প্রকাশক উক্তি)
কত কি দেখব কালে কালে! (বহু কিছু বা নানা কিছু অর্থে)

লক্ষ করুন ওপরের প্রতিটি বাক্যে কি অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দুটো লাইনে কি-এর উত্তর হবে হ্যাঁ অথবা না বোধক। হ্যাঁ এবং নাঅব্যয় পদ। পরের দুটি বাক্যে কি অথবা/কিংবা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। অথবা/কিংবা অব্যয় পদ। বল কি, আর কি, বলতে কি, কত কি—এগুলো সবই অব্যয় পদ।

৩. কি না/ কিনা/কি-না

কি-না : অশুদ্ধ। ব্যবহার করা যাবে না।

কি না : ক. সন্দেহসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : টাকা দেবে কি না জানি না।
খ. বিতর্কসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- আমার লেখায় কোনো ভুল আছে কি না বলো?
গ. প্রশ্নবোধক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : তুমি যাবে কি না?

কিনা : ক. এই কারণে বা যেহেতু অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : জ্বর হয়েছে কিনা তাই আসেনি।
খ. অর্থাৎ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন : হ্রী কিনা লজ্জা।
গ. বাক্যালঙ্কার (বাক্যে যা না থাকলেও অর্থ পরিবর্তন হয় না) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : আর মা কিনা ঘরের ভেতর গিয়ে বসে আছে (এখানে কিনা শব্দটি ছাড়াও বাক্যের অর্থ একই থাকে)।

৪. এমনকি/এমন কী

এমনকি—অধিকন্তু বা আরও অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- এমনকি আমার টাকাও চুরি হয়েছে।

এমন কী—সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ রূপে স্বতন্ত্র পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : এমন কী ক্ষতি হয়েছে তোমার! (তোমার কতখানি ক্ষতি হয়েছে)—এখানে এমন কী একটিই পদ, ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে।

অবশেষে...

ঈ-কার কীভাবে ই-কারে পরিণত হয়-

সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী এই পরিবর্তন হতে পারে। (তাহলে শুধু বাংলা একাডেমীই ঈ-কারকে ই-কারে পরিণত করেনি, হা হা হা!)

যেমন : প্রাণীদের নিয়ে যে জগৎ—প্রাণিজগৎ। সমাসবদ্ধ হওয়ার সময় প্রাণী শব্দের ঈ-কার পরিবর্তিত হয়ে ই-কারে পরিণত হয়েছে।

যেমন : মন্ত্রী+গণ= মন্ত্রিগণ। মন্ত্রী শব্দের সাথে সংস্কৃত গণ বিভক্তি যুক্ত হওয়ায় মন্ত্রী শব্দের ঈ-কার ই-কারে পরিণত হয়েছে।

আবার : মন্ত্রী+রা= মন্ত্রীরা। মন্ত্রী শব্দের সাথে বাংলা রা বিভক্তি যুক্ত হওয়ায় মন্ত্রীরা বানানে কারের পরিবর্তন হয়নি।

তাই, খুব খিয়াল কইরা! লেখার সময় তৎসম শব্দগুলোর ব্যাপারে একটু বাড়তি দৃষ্টি দিলেই হয়ে যাচ্ছে! খুশির কথা এই যে, সংস্কৃত ভাষার মৃত্যু হয়েছে (এহেম... )। ফলে নতুন আর কোনো তৎসম শব্দ যোগ হবে না বাংলা ভাষায়! যেগুলো আছে সেগুলো আয়ত্ত করার জন্য খুব অল্প মেমরি 64 kb হলেই যথেষ্ট।

নিন, হাত-পা খুলে লিখতে থাকুন। প্রথমালুর মতো মুখ ফুলিয়ে বলুন—বাংলাটা আমরা ভালোই জানি।

আপনার পাশেই থাকবে বানানায়তন।

(চলবে...)

কুটুমবাড়ি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। খুব কাজে দেবে।
মধুবন্তী মেঘ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

কুটুমবাড়ি

মুস্তাফিজ এর ছবি

কাজে দিবে। ক্রমান্বয়ে আসতে থাকুক।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, মুস্তাফিজ ভাই।

কুটুমবাড়ি

রাফি এর ছবি

সচলে স্বাগতম। বানানায়তন-০১ দেখে আশান্বিত হলাম...পরের লেখার অপেক্ষায়

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, রাফি ভাই। হাসি

কুটুমবাড়ি

তাসনীম এর ছবি

আমজনতার কাজে আসবে প্রচুর। প্রিয় পোস্টে রাখলাম।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, তাসনীম ভাই। পোস্টে দু-একটি ভুল চোখে পড়ল। ৩ নং নিয়মে একটি জিনিস উল্লেখ করা হয় নাই। কী না--এটিও ভুল।

চমত্কার--হবে চমৎকার। দেঁতো হাসি

আরেকবার পড়লে মনে হয় আরও ভুল বারৈব। ইয়ে, মানে...

কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

'কী' আর 'কি' নিয়ে যে থাম্ব রুলটা জানতাম সেটা হচ্ছে।
যদি প্রশ্নের উত্তর হয় 'হ্যা/না' দিয়ে তাহলে 'কি'
আর যদি উত্তররে অন্য কোনো শব্দ বা কোনো কিছুর কন্টেন্ট বলতে হয় তখন 'কী'।

যেমন,
-তুমি কি খাচ্ছো?
-হ্য।
-তুমি কী খাচ্ছো?
-ভাত।

এখন আসি 'কী না'/'কি না' প্রসংগে
যদি আমি এই কথাটা বলতে চাই?

'কী না কী বলল কিছুই মনে নেই'
'কি না কি বলল কিছুই মনে নেই'

এখানে কিন্তু আমার কাছে 'কী' ভার্সনটা বেটার মনে হচ্ছে। কারণ 'কন্টেন্ট' মনে নেই বক্তার। চিন্তিত


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, স্পর্শদা। কি এবং না দুটি আলাদা শব্দ হলেও একত্রিত হয়ে একটি স্বতন্ত্র পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে। লক্ষ করুন, কি এবং না দুটিই অব্যয় পদ। তাই তারা একত্রিত হয়ে একটি অব্যয় পদ হিসেবে আত্মপ্রকাশে অসুবিধা নেই।

যেহেতু কী সর্বনাম, বিশেষণ বা ক্রিয়া-বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাই এটি কোনোভাবেই অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। কাজেই একক পদ হিসেবে কী না -র ব্যবহার কখনোই শুদ্ধ হবে না।

কী না কী বলল কিছুই মনে নেই

আপনার ধারণা ঠিক। এই লাইনটিই শুদ্ধ। কেন বলছি। এই বাক্যে কন্টেন্ট সম্পর্কে বলা হচ্ছে। ভেঙে দিচ্ছি লাইনটিকে এভাবে-

কোনটি না কোনটি বলল কিছুই মনে নেই।

তার মানে কী দুই বার উল্লেখ করা হলো দুটি আলাদা বিশেষণ পদ হিসেবে। এই আলাদা পদ দুটিকে জোড়া লাগিয়েছে মাঝখানের না শব্দটি যা নিজেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বতন্ত্র অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হাসি

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

কাজেই একক পদ হিসেবে কী না -র ব্যবহার কখনোই শুদ্ধ হবে না।

এই লাইনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া দরকার বোধ হয়। কারণ কী এবং না আলাদা পদ হিসেবে পাশাপাশিও বসতে পারে! যেমন-

আমি তোমার জন্য কী না করেছি!

বলো তো, বাতাসে কী না থাকলে মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব হতো?

প্রথম বাক্যটিতে কী ক্রিয়া-বিশেষণ পদ হিসেবে এবং দ্বিতীয় বাক্যটিতে কী বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর দুই জায়গাতেই কী-এর পরে না বসে গেছে অব্যয় পদ হিসেবে।

সিদ্ধান্ত : কী না শুদ্ধ না অশুদ্ধ হবে তা বাক্য গঠনের ওপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ কী এবং না দুটি আলাদা পদ হিসেবে পাশাপাশি বসলে শুদ্ধ। একক পদ হিসেবে নয়। হাসি

কুটুমবাড়ি

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

চলুক।
-----------
চর্যাপদ

-----------
চর্যাপদ

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, সাঈদ ভাই। হাসি

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

এত খেটেখুটে এত বড় পোস্ট দিলেন একটা, বানানের উপর খুঁটিনাটি নিয়ে, আগে তো ধন্যবাদটা দিয়ে নি, পরে নাহয় ঝগড়া-টগড়া করা যাবেখন... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই, ধন্যবাদটা আর দিলেন কৈ। যাউকগা, আহেন কোমর বাইণ্ধা কাইজ্যায় নাইমা পড়ি। খাইছে

বানান নিয়ে ঝগড়া করা চূড়ান্ত রকমের স্বাস্থ্যকর, দু পক্ষের জন্যই! হাসি

অফটপিক : ঝগড়া তো বুঝলাম, এই টগড়াটা কী জিনিস? অনেক অভিধান ঘাঁইটাও পাইলাম না। চোখ টিপি )

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

খাড়ান, 'স্বাস্থ্যকর' ঝগড়ার জন্য ছোলা-গুড় খাইয়া আসি...

ঝগড়া-টগড়া অভিধানে না পাইলে কি হবে, সংবিধানে ঠিক পাইবেন... আর লাইভ ডেমনস্ট্রেশন দেখতে হলে সংসদে... চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝগড়া স্বাস্থ্যকর ঠিকাছে, কিন্তু হজম হতে হবে তো আগে। একটু গুরুপাচ্য কিনা! ইয়ে... ছোলা-গুড় কি আদৌ হজমশক্তি বাড়ায়? তার চেয়ে ইসুবগুলের ভূষি ভালো হতো না... চোখ টিপি

ঠিক কৈসেন! বাংলাদেশে ওই সংসদ-টংসদেই একটু ঝগড়া-টগড়া হয় বইলা শুনছি। চাল্লু

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, কৌস্তুভ ভাই। আপনি দেয়ার আগে আমিই দিয়ে দিলাম। হাসি

কুটুমবাড়ি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

প্রথম পর্ব দেইক্কাই ডরাইচি ইয়ে, মানে...
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

সাইফ ভাই, ডরায়েন না। এট্টু বল-ভরসা রাইখেন, আমারেও দিয়েন। আমি নিজেও কম ডরাই নাইক্কা। চোখ টিপি

কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

এরকম একটা লেখা লিখতে কতটা পরিশ্রম করতে হয় সেটা বুঝতে পারি। সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। পড়ছি মনযোগ দিয়ে। চলুক চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, স্পর্শদা। শুভেচ্ছা। হাসি

কুটুমবাড়ি

আলমগীর এর ছবি

খুবই জরুরি পোস্ট। পাঁচতারা রইল।


ফুটনোট:
কমিবার (সাধু) -> কমার (চলতি, বাংলাদেশ), কমবার (চলতি, কোলকাতা)
ভাবিবার (সাধু) -> ভাবার (চলতি, বাংলাদেশ), ভাববার (চলতি, কোলকাতা)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, আলমগীর ভাই। সাংঘাতিক আপনার ফুটনোট! মাত্র দুইটা ক্যালকেশিয়ান শব্দ দিসি পোস্টে, তাও ধইরা ফালাইসেন। দেঁতো হাসি

কুটুমবাড়ি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

‘তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়’ আর ‘তুমি কী জানো সে আমার কত প্রিয়’, এই দুই বাক্যের একটাতে জানা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হচ্ছে আর একটাতে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে জানার প্রকৃতি বা পরিমাণ সম্বন্ধে, এখানে বানানের তফাত না থাকলে ভাবের তফাত নিশ্চিতরূপে আন্দাজ করা যায় না।

এইখানে আমার (ঘাড় ত্যাড়ামির জন্যেও হতে পারে) রবি ঠাকুরের কথার সাথে আপত্তি আছে।

আমার মনে হয়- তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়! // তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়? বিরাম চিহ্ন দিয়ে এই বিড়ম্বনা খুব সহজেই অতিক্রম করা যায়। সেক্ষেত্রে কি/কী আমার কাছে রিডান্ডেন্ট মনে হয়।

যা হোক.. একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা।

ইংরেজির বিষয়েও আপত্তি আছে। এই এই কারনে।

আমি অবশ্য ঘাউড়ার মতন "কি"ই লিখব.. মিল্টন যখন পার পাইসিলেন....

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

অতিথি লেখক এর ছবি

বিরাম চিহ্ন দিয়ে এই বিড়ম্বনা খুব সহজেই অতিক্রম করা যায়। সেক্ষেত্রে কি/কী আমার কাছে রিডান্ডেন্ট মনে হয়।

কখনও কখনও বাক্যের শেষে বিরাম চিহ্নের পরিবর্তন করে কি/কী-কে আলাদা করা যায় হয়তো। যদি যায়ও, বাক্যের অর্থ অনুধাবনে পাঠকের ভ্রান্তি বা বিলম্বও কিন্তু ঘটতে পারে। পাঠককে ভুল করার বা হোঁচট খাওয়ার সে অবকাশ দেয়া যায় কি না তা ভেবে দেখার মতোই বিষয় বটে। চিন্তিত

মজার বিষয় হচ্ছে এভাবে সব সময় বিরাম চিহ্ন পরিবর্তন করেও বাক্যের অর্থ পরিষ্কার করা যায় না। যেমন-

এটা কি বই?--জানতে চাওয়া হচ্ছে এটা বই কি না। এখন লাইনটার বিরাম চিহ্ন পাল্টে দিলে কী হয় দেখি-

এটা কি বই!--এই লাইনটির তো দুটি আলাদা অর্থ হতে পারে। যেমন-

১। জানতে চাওয়া হচ্ছে এটা কোন বই?

২। সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে এটা আদৌ বই কি না তা নিয়ে।

পাঠক তাহলে কী বুঝবে এই লাইনটি থেকে? সে তো বিভ্রান্ত হতেই পারে।

অবশ্য আপনি আপনার ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। আমিও আমারটা জানালাম। হাসি

কুটুমবাড়ি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ভুলে গেসিলাম.. পোস্টে পাঁচ তারা!
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। গুরু গুরু

কুটুমবাড়ি

স্বাধীন এর ছবি

সুন্দর পোষ্ট। অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য। প্রিয়তে রেখে দিলাম। আমার খুব কাজে আসবে। সারা জীবনই ব্যাকারণকে ভয় পেয়েছি। সিরিজে নিয়মিত হলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, স্বাধীন ভাই। আমি নিজেও ব্যাকরণাতঙ্কিত থাকি! হাসি

'তবে ভয় পেলেই না ব্যাকরণকে জয় করা যাবে।' ভেবে শুরু করলাম বানানাসর। বানানের নিয়ম-কানুন অনেকটা ব্যাকরণ-অনুসারী। ঠিকাছে। কিন্তু আপনা থেকেই সে ভাষাকে অনুসরণ করে। আমরা যারা ব্যাকরণ জানি না, কিন্তু লিখতে চাই। তাদের কী হবে? সেজন্যই এ ব্যাপারে কিছু বলার তাগাদা ছিল। সবাই যেভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন! এখন তো সিরিজটা চালিয়েই যেতে হবে দেখছি। চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।