লিস্ট

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৮/২০১১ - ৮:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিক কবে আপনার নাম কোনো লিস্টে উঠেছিল বলতে পারেন? খুব সম্ভবত আপনার কোনো নাম হওয়ার আগেই। মানে আপনার জন্মের আগেই। আপনার মা-বাবা থেকে শুরু করে আপনার আত্নীয়-স্বজন হয়ত আপনার নামের লিস্ট করে রেখেছিলেন। হোক না সবগুলো নাম আপনার জোটেনি। তাও আপনার সম্ভাব্য নামের লিস্টতো! গতকাল থেকেই এই ব্যাপারটা আমার মাথার মধ্যে এমনভাবে কাজ করছে যে না লিখেও স্বস্তি পাচ্ছিনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে ওঠার পরপরই লিস্টে নাম উঠে গিয়েছিল। কে কোন রুমে থাকে তার লিস্ট, বলাবাহুল্য ছাত্রনেতাদের বানানো। সময়ে অসময়ে রুম থেকে, ক্লাসে যাওয়ার পথে বা ক্লাস থেকে ফেরার পথে নিয়ে যাওয়া হত মিছিলে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এক রাতের কথা ।থার্ড ইয়ার ফাইনাল এর আর তিনদিন বাকী। পড়ার চাপে পাগল পাগল অবস্থা। এই সময়ে রাতে হলে মিছিলের ডাক এল। সব ছাত্রকে মিছিলে থাকতে হবে। মিছিলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রুমে আরাম করে পড়তে লাগলাম। আর এর মাশুল দিতে হল একটু পরেই। দলের সভাপতি নিজে প্রত্যেক রুমে গিয়ে গিয়ে যারা মিছিলে যায়নি তাদের রুমে তালা লাগিয়ে দিলেন। আমাকেও রুমমেটদের সাথে বের করে দেয়া হল। পুরো ঢাকা শহরে থাকার কোনো যায়গা নেই।যারা হল লাইফ কাটিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই ভালোভাবে বুঝতে পারছেন আমার সেই সময়ের অবস্থা। অবশ্য সেই রাতেই নেতাদেরকে ‘ম্যানেজ’ করে আবার উঠতে পেরেছিলাম। তাও সেই বিভীষিকার কথা আজও মনে পড়ে।

হলে ওঠার প্রায় শুরুর দিকের কথা। রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের লিস্টেও নাম লিখিয়েছি। যেকোন সময়ে রক্ত দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। কিন্তু সেদিনের ব্যাপারটা ছিল একটু আলাদা। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলে কথা। ক্লাস থেকে ফিরে এসে বেশ আয়োজন করে খেলা দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই সময়ে বাঁধনের এক বড়ভাই এসে ধরলেন। আমার গ্রুপ বেশ কমন হওয়ার পরেও তিনি নাকি কাউকে পাচ্ছেননা এই অসময়ে। কে আর শখের খেলা বিসর্জন করে যাবে। আমিও কিছুক্ষন গাইগুই করে চলে গেলাম তাঁর সাথে। চুলোয় যাক আফ্রিদি-টেন্ডুলকার। আমার তখন রক্ত বিসর্জনের নেশা। খুব ভাল লেগেছিল রক্ত দিয়ে আসার পরে।

নিজের নাম হরেক রকম লিস্ট-এ থাকার এই শেষ নয়। আরো আছে। একদিন নামাজের একটু আগেই মসজিদে চলে গিয়েছিলাম। সামনের সারিতে বসে থাকার সময় হাতের কাছেই একটা টালী খাতা থাকায় আনমনে উলটে পালটে দেখছিলাম। হটাত দেখি ছাত্রদের রুম নাম্বার সহ লিস্ট। আমার রুম নম্বরের সাথে নামটাও চোখে পড়ল। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখি এটা হলের তাবলীগী ভাইদের দাওয়াতের লিস্ট।

আমি নিজেও কি লিস্ট করিনি? সেই সময়ে খুব চুপিসারে হলে ছাত্রশিবিরের ছেলেপেলে অনেক বেড়ে যাচ্ছিল। জীবনভর এই ব্যাপারটায় অ্যালার্জি থাকার জন্য খুব সাবধানে লিস্ট করে নিতাম কে কে শিবির করে।চেষ্টা করতাম ওদেরকে চিনে রাখতে আর ওদের থেকে দূরে থাকতে। আমার এক রুমমেট শিবিরের কর্মী হওয়ার সুবাদে ওর কাছ থেকেই জেনে নিতাম । আমার আরেক বামপন্থী রুমমেট ছিল আরো এক কাঠি বেশি সরেস। ও নিজ থেকেই এমনকি নিজে থেকে দাওয়াত নিয়ে শিবিরের অনুষ্ঠানে যেত আর শিবিরের ছেলেদেরকে চিনে রাখত। উদ্দেশ্য কোনোদিন বিপ্লব হলে সব কয়টাকে সাইজ করা।তার সেই সাত মন ঘি না জুটলেও রাঁধা ঠিকই নেচেছে। পরে এদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় দেয়া হয়েছিল নির্বাচনের পরপরই।

পড়াচোর


মন্তব্য

_রিজভী এর ছবি

Uncommon একটা Topic নিয়ে লিখলেন...ভালই লাগলো...যদিও বেশ ছোট লেখা...

রিজভী
http://www.bokolom.com/rizvi/blog.aspx
-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ রিজভী, আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম আরো বেশি সমালোচনা হবার জন্য।

আশালতা এর ছবি

চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ, লেখাটা যদিও আমার নিজেরই পছন্দ হচ্ছে না।

পড়াচোর

স্বপ্নহারা এর ছবি

এইটা কি ভূমিকা দিলেন? হাসি মাত্র শুরু করলাম, সাথে সা্থে শেষ... মন খারাপ

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

guest_writer এর ছবি

আমি দুঃখিত এরকম লেখার জন্য। আসলে সেদিন রাতে ঘুম আসছিল না , ভাবলাম সচলের লোকজনের একটু সময় নষ্ট করি। হাসি

পড়াচোর

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বর্ণনাটা সাবলীল লাগল না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

guest_writer এর ছবি

আমারো না, আর এরকম হবেনা , কথা দিলাম। এরপর সময় নিয়ে লিখব।

ধন্যবাদ , পড়াচোর।

guest_writer এর ছবি

নস্টালজিয়াতে ফেলে দিলেন সকাল বেলায়
আপনাকে তো মাত্র এক রাত তার পর আবার ফিরে এসেছেন আমাকে ৩ বার তার উপ্রে শেষ বার বিছানা বালিল সহ সব ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু হিতে বিপরিত হয়েছে। শেষ বার আর প্রতিবাদ করিনি, উল্টা যে ফেলে দিয়েছে তার সাথে খাতির করে দুই জনই জি আর ই বই নিয়ে বসে গেছি
দুই জনই পরবর্তীতে ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে ইউরপে
ন্যতাদের খ্যতা পুড়ি
আপনার নাম টা পড়া চোর শেষের অংশটা ( চোর) লিখতে কেমন কেমন লাগে

মাহমুদ.জেনেভা

guest_writer এর ছবি

হুম, এখন এসব কথা মনে পড়লে আরো হাসি পায়।

আমার নামটা লিখতে কেমন কেমন লাগে কেন? হাসি

বাই দা ওয়ে, আপনার স্কলারশিপ নিয়ে লেখাটায় কমেন্ট করেছিলাম অনেক পরে। আমার সাথে একসাথে লেখা দিবেন নাকি একটা?

পড়াচোর।

guest_writer এর ছবি

খুব মজার আইডিয়া চলেন এক সাথে লেখা দেই!
কি করতে হবে বলেন
ফেইস বুকে আপনার ঠিকানা কি?
আমাকে নিচের এড্রেস দিয়ে এড করতে পারেন

mahmud.geneva@gmail.com

guest_writer এর ছবি

আপনাকে ইমেইল করেছি। হাসি

পড়াচোর।

guest_writer এর ছবি

চিন্তিত

পড়াচোর

নিটোল(অতিথি) এর ছবি

কতো কতো লিস্টে যে থেকেছি! সে কি আর বলতে? মন খারাপ

guest_writer এর ছবি

চিন্তিত

মৌনকুহর এর ছবি

চলুক
একটু তাড়াহুড়ো করে লিখেছেন বোধ হয়। হঠাৎই শেষ হয়ে গেল!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

guest_writer এর ছবি

হুম ।

পড়াচোর

ফাহিম হাসান এর ছবি

রক্তদানের গল্পটা জেনে ভাল লাগল। আশা করি সেই নেশা এখনো আছে। শুভেচ্ছা।

guest_writer এর ছবি

ভাই, এখন যেভাবে প্রাণটা নিঃশেষ করে দিচ্ছি তাতে রক্তদানের নেশা আর নেই, আশা করি ভবিষ্যতে হবে।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

পড়াচোর।

বন্দনা এর ছবি

আপনার লিখাটা পড়ে আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো, ওর রুমে তাবলীগি ভাইরা আসলে ও সব কথা মনযোগ দিয়ে শুনে যেত। হিদায়াত শেষে যখন উনারা চিল্লায় যাওয়ার কথা বলতো, ও তখন বলতো আমি তো হিন্দু ভাইয়া।ও আসলেই হিন্দু, কিন্তু ওর এমন কাহিনী শুনে আমরা সবাই খুব মজা পেতাম।

guest_writer এর ছবি

হাসি

পড়াচোর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।