অভিযোজন কাহিনী – সুইজারল্যান্ড ২

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি
লিখেছেন ইয়াসির আরাফাত [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৪/২০১২ - ১১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুইজারল্যান্ড বেশ ছোট দেশ, আয়তন মাত্র ১৫,৯৪০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা এখনো কোটি ছাড়ায়নি (৭৯ লক্ষ, উইকিপিডিয়া)। বড়লোকের দেশ বলে আর জমির স্বল্পতার কারণে জায়গার দাম আকাশচুম্বী। তার ওপর সুইস সরকার জমি হাতবদলের ব্যাপারে অ্যালার্জিক, তারা জমির বিক্রয়মুল্যের লাভের অংশের উপরে উচ্চহারে করারোপ করে রেখেছে, ফলে সাধারন জনগন প্রপার্টি কেনাবেচায় খুব একটা উৎসাহী নয়। এত টাকা দিয়ে জমি/বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট না কি

সুইজারল্যান্ড বেশ ছোট দেশ, আয়তন মাত্র ১৫,৯৪০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা এখনো কোটি ছাড়ায়নি (৭৯ লক্ষ, উইকিপিডিয়া)। বড়লোকের দেশ বলে আর জমির স্বল্পতার কারণে জায়গার দাম আকাশচুম্বী। তার ওপর সুইস সরকার জমি হাতবদলের ব্যাপারে অ্যালার্জিক, তারা জমির বিক্রয়মুল্যের লাভের অংশের উপরে উচ্চহারে করারোপ করে রেখেছে, ফলে সাধারন জনগন প্রপার্টি কেনাবেচায় খুব একটা উৎসাহী নয়। এত টাকা দিয়ে জমি/বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট না কিনে তারা ভাড়া বাড়িতে থেকে জীবন উপভোগ করতে চায়। বেশ কয়েক দশক ধরে এটা চলে আসছে, আর তৈরী হয়েছে তীব্র আবাসন সংকটের। যতদুর জানি ফ্রেঞ্চ স্পীকিং পার্টে (জেনেভা, মর্জ, লুজান, ভেভে ইত্যাদি শহর) এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এখন পরিস্থিতি এই, প্রতি মাসেই অনেক লোক বাড়ি খুঁজছে, কিন্তু সবাই পাচ্ছে না, কোন না কোন বিকল্প ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে হচ্ছে একটা অংশকে। জেনেভাকে টপকে লুজান সম্প্রতি শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে, একটা ওয়েবসাইটে দেখলাম বাড়ি খালি থাকার হার এখানে শূন্য দশমিক পাঁচ ছয় শতাংশ।

মাইক্রোসফটের চেয়ে বড় মনোপলি ব্যবসা এখানে বাড়ির মালিকদের (প্রকৃত মালিক নয়, এজেন্সীগুলোর, যারা মালিক আর ভাড়াটিয়ার ভেতর মধ্যস্থতা করে থাকে)। বাড়ি খালি আছে, এই মর্মে বিজ্ঞাপন দেয়া হলে সাধারণত পঁচিশ থেকে ত্রিশ জন সেটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, এই রিয়েলিটি শো তে বিজয়ী হবার জন্য সম্ভাব্য সবধরণের দক্ষতা দেখাতে হয়। এজেন্সীগুলো যেসব ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা করে থাকে তার একটা সম্ভাব্য তালিকা

• চামড়ার রঙ

• হোমড়া চোমড়া কারো সুপারিশ

• এজেন্টের কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সুপারিশ

• পূর্ববর্তী ভাড়াটিয়ার সুপারিশ

• দায়মুক্তির সরকারী ছাড়পত্র (এই মর্মে জানানো যাইতেছে যে অমুক ব্যক্তির কোন খেলাপী ঋণ নাই)

• মাসিক বেতন

• চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান

• থার্ড পার্টি ড্যামেজ ইন্স্যুরেন্স (বাধ্যতামূলক নয়, থাকলে ভালো)

এবং আরো অজানা কি কি যেন। এজেন্সী প্রথমে অ্যাপ্লিকেশন গুলো যাচাই বাছাই করে, তারপর শর্টলিস্টেড ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে থেকে দুই-তিন জনের ভাইভা নেয়। শুনেছি কেউ কেউ নাকি এজেন্টের জন্য কদুটা-লাউটা, মুরগীটা-খসিটা, পুকুরের মাছটা ইত্যাদি উপহার নিয়ে যায়। যে বহুমুখী প্রতিভা সব অ্যাসিড টেস্টে পাশ করে তার ভাগ্যেই জোটে বরমাল্য, থুড়ি, ফ্ল্যাট।

আমি এসবের কিছুই জানতাম না। আমার নিয়োগকর্তা একটি রিলোকেশন কোম্পানীকে এসব দেখবার ভার দিয়ে রেখেছিলেন, তারা আমার সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দেবে, একটা বাসা ভাড়া করে দেবে এবং এই শহরে বাঁচতে হলে কি কি জানতে হবে তার ওপর ছোটখাট প্রশিক্ষণ দেবে। তাদের চার্জ বেশি নয়, মাত্র চার হাজার ইউরো। খুবই সৌভাগ্যের কথা, এটা আমার পকেট থেকে যাবে না, কিন্তু সুইস ট্যাক্স ল’ মোতাবেক আমাকে ১৪% জেনারেল সেলস ট্যাক্স দিতে হবে, এই ই নিয়ম। রিলোকেশন কোম্পানীর একাধারে মালিক কাম জেনারেল ম্যানেজার কাম ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাকে প্রথম সপ্তাহ থেকেই খালি অ্যাপার্টমেন্ট দেখাতে শুরু করলেন, প্রথম তিনটি পছন্দ না হলেও চতুর্থটি বেশ পছন্দ হয়ে গেল, ভাড়া একটু বেশি, কিন্তু স্বীকার করতেই হবে তার জৌলুস আছে। আমি রাজি হয়েও হলাম না, কারন এটি অগাস্ট মাসের এক তারিখ থেকে নিতে হবে, কিন্তু আমি নিজের নামে অ্যাপার্টমেন্ট নিলে কোম্পানী তাদের প্রতিজ্ঞামত প্রথম দুই মাসের (জুলাই-অগাস্ট) ফ্রি অ্যাকোমোডেশন সুবিধা দেবে না। ওটার উদ্দেশ্যই নাকি কর্মচারীকে মেয়াদ ফুরোবার আগে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে দেয়া, আগে পেয়ে গেলে আগেই শেষ। প্রায় দুই হাজার ইউরো বিনা কারণে পকেট থেকে চলে যাবে এটা মেনে নেয়া কষ্ট, কাজেই আমি মেওয়া খাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

সিদ্ধান্ত যে ভুল নেইনি প্রমাণ হয়ে গেল এক সপ্তাহ পরেই, প্রথম মাসের বেতন পেয়ে আমি হতভম্ব। আমি আগেই বলেছিলাম খুব তাড়াহুড়ায় এই কন্ট্রাক্ট সাইন করতে হয়েছে (সে আরেক বিরাট ইতিহাস), এইচআর ম্যানেজারের পাঠানো ট্যাক্স ক্যালকুলেশনে যে বড় ধরণের শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে সেটি ধরতে পারি নি (ভেতো বাঙালি বলেই সম্ভবতঃ), এখন দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসে প্রায় নয়শো ইউরো বেশি ট্যাক্স দিতে হবে আমাকে। তার ওপর দ্বিতীয় দুঃসংবাদ, হেলথ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী পে করবে না, এটা নাকি ব্যক্তিগত খরচ। উল্লেখযোগ্য যে পার্মানেন্ট এমপ্লয়ী হিসেবে অন্যান্য দেশে আমি ফুল মেডিকেল সুবিধা পেয়ে এসেছি, বেছে বেছে এখানেই কেন ব্যতিক্রম হল বুঝতে পারি নি। ভাইভার সময় আমার লাইন ম্যানেজার নিশ্চিত করেছিলেন কোম্পানী মেডিকেল কাভার করবে, পরে জানতে পারি উনি পোল্যান্ডের এমপ্লয়ী বলে সুইজারল্যান্ডের লোকাল এইচআর পলিসি সম্বন্ধে তার ভাল ধারনা ছিল না। ধারনা করলাম সুইসরা আসলে জোচ্চোর, আর নিজের উপর খুব বিরক্ত হয়েছিলাম সব কিছু লিখিতভাবে বুঝে না নেয়ার জন্য। আশা করি এই শিক্ষা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব। পাঠকদের প্রতি সবিনয় উপদেশ, আপনারা কোন চুক্তি করার আগে ভালোমত সব লিখে পড়ে নেবেন, যেন পরে দুর্দশায় না পড়তে হয়।

যাই হোক, অভিযোজনের স্বার্থে আমার পরবর্তী মিশন হয়ে উঠল বারশ-চৌদ্দশ ইউরোর মধ্যে একটা বাসা খুঁজে বের করা। চারটি বাসা পাওয়া গেল, কিন্তু কোনটিই আমাকে বরাদ্দ দেয়া হল না। প্রথমে বুঝতে পারি নি, কিন্তু যখন তৃতীয় জন মুখের অপর বলে দিল গায়ের রঙ কালো বলে আমাকে সে ভাড়া দেবে না, তখন পরিস্কার হয়ে গেল সব। ছি ছি, শেষে কিনা সুশীল সভ্য দেশের এই অবস্থা? আর এদেরই কিনা আমরা দেশের মাটিতে পেলে আনন্দে প্রায় আধমরা হয়ে যাই। আমাদের রাষ্ট্রের হর্তা কর্তা বিধাতা সবই সভ্য দেশের সাদা আদমিরা, তাদের ছাড়া আমাদের চলেই না! কর্তায় কইছে শালার ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই! মনের দুঃখে ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, “before coming to Europe, paint your face white”

এরই মাঝে পুরনো একটা আপ্লিকেশনের জবাব এসেছে যে আমাকে তারা একটি অ্যাপার্টমেন্ট প্রদান করতে আগ্রহী। আমার তখন চরম অবস্থা, সামনে পিছনে না ভেবেই বলে দিলাম আমি রাজি, হোক ভাড়া বেশি, কয়দিন পরে তো ফুটপাতে গিয়ে থাকতে হবে কোন বাসা না পেলে! রাতে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলাম ব্যাপারটা নিয়ে। হঠাৎ এত দয়া পরাবশ হয়ে উঠল কেন কেউ? আমি তো কাউকে ঘুষ দিইনি! পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কানেকশন পরীক্ষা করলাম ইন্টারনেটে। ও! তাহলে এই ব্যাপার! বাসা দেখানোর সময় এজেন্ট বলেছিলো এখানে বাস একটু রেয়ার, তবে পীক আওয়ারে প্রতি আধা ঘন্টায় বাস আসে আর অফ পীকে এক ঘন্টা পর পর। আমি মেনে নিয়েছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত তিনটি বাস, এগারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত দুইটা, দুইটা থেকে চারটার ভেতর নেই, পাঁচটা থেকে আটটার ভেতর আবার তিনটা বাস, এর পরে নেই। শনিবারে বাসের সংখ্যা অর্ধেক আর রবিবারে আলিফ খালি। তাই এই অ্যাপার্টমেন্ট কেউ নিতে রাজি হচ্ছে না বোধহয়। সুইসরা জোচ্চোর, ধারণা আরও দৃঢ় হলো। পরদিন সকালে আমি এজেন্টকে জানালাম আমি বাসা নিতে চাই না, কিন্তু তারা ভয় দেখালো এই বলে যে আমি সম্মতি দিয়ে দিয়েছি, এখন ভাড়া আমাকে নিতেই হবে, নইলে তিন মাসের ভাড়া (কন্ট্রাকচুয়াল নোটিস পিরিয়ড) দিতে হবে। আমার রিলোকেশন এজেন্টের মধ্যস্থতায় রফা হলো যে আমি দুইশ ফ্রাঙ্ক জরিমানা দিয়ে রেহাই পেতে পারি, তবে তারা আমাকে ব্ল্যাকলিস্ট করবে। এই ফি টা তারা নিচ্ছে চুক্তিপত্র তৈরী করার দাম হিসেবে, তাদের জনৈক কর্মীর নাকি চার চারটি কর্মঘন্টা নষ্ট হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। কচু! মরুকগে!!!!!

(চলবে)

ইয়াসির


মন্তব্য

নিশা এর ছবি

উত্তম জাঝা! পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

আনোয়ার এর ছবি

চলুক

ইয়াসির এর ছবি

ধন্যবাদ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ইমা  এর ছবি

পড়া শুরু করেতে না করতেই শেষ হয়ে গেল কেমনে অ্যাঁ
চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

ইয়াসির এর ছবি

ছোট ছোট করে লিখছি, বড় লেখা ভালো লাগে না সচলে এই অভিযোগ প্রায়ই দেখি। তার ওপর পুরোটাই মেজাজ খারাপ করা কাহিনী, সব কথা একেবারে লিখতে গেলে আমার মনে হয় শর্ট সার্কিট হয়ে যাবে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই দৈর্ঘ আমার কাছে বেস্ট। এরকমই থাকুক।

ইমা  এর ছবি

লেখকেরই শর্ট সার্কিট হয়ে গেলে তো আমদের বিপদ। আপনি ছোট ছোট করেই লেখেন। খাইছে আমরা বাকি কাহিনী পড়তে চাই।:D

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি

আপনার সাথে আমার কিছুই মিলছেনা!!
প্রথমে একটা উদাহরন দেই। আমি ২০১০ এ দুইটা পি এইচ ডি অফার পেয়েছিলাম একটা ইউ এস আরেকটা সুইজারল্যান্ড। কলোরাডোর চেয়ে সুইজারল্যান্ডে বেতন সিমপ্লি তিন গুন দেখে ইউ এস না গিয়ে জেনেভা চলে এসেছি! বাড়ি পেতে কিছুটা সমস্যা হলেও হেলথ ইন্সুরেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে দেয়া হয়
তার উপর ট্রান্সপোর্ট ফ্রি!! ইউনিভার্সিটি থেকে সারা বছরেরে একটা কার্ড দেয় মাত্র ২৫ ফ্রাঙ্ক দিয়ে যেটা দিয়ে বাস ট্রাম আর বোটে চড়া যায়। আপনার লেখার কিছু কিছু অংশ আমাকে খুব আহত করেছেঃ

এখন দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসে প্রায় নয়শো ইউরো বেশি ট্যাক্স দিতে হবে আমাকে

এই টাকাটা আপনি কিন্তু ফেরত পাবেন! যে কম্পানিকে আপ্নাই ট্যাক্স দিচ্ছেন তাদের সাথে আলাপ করে নিতে পারেন! এখানে জেনেভা ইউনিতে বুয়েটের এক ভাইয়া ছিলেন উনি আমাকে শিখায়ে দিয়ে গেছেন কি ভাবে টাকাটা নিতে হয়। এমন কি আমি যে টাকাটা আজ পর্যন্ত ট্যাক্স হিসাবে দিয়েছি প্রতি ছয় মাস পর পর ওরা আমাকে একটা রিসিড দেয়!!

ধারনা করলাম সুইসরা আসলে জোচ্চোর

এইটা ঠিক না ভাই! একটা দেশে আসছেন এই রকম বিরুপ ধারনা করলে আপনার দিন গুলা ভাল কাটবেনা তারচেয়ে দুই একজনের সাথে মিশেন দেখবেন ভাল লাগবে এদের একটাই ব্যাপার একটু ইন্ট্রোভার্ট ধরনের কিন্তু আপনি একদিন কথা বলেন দেখবেন তারপর থেকে প্রতিদিন সুন্দর কথা বলবে
আমাকে আমার বন্ধুরা সকালে শুভু সুকাল বলে (শুভ সকাল বলার চেষ্টা করে)

ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, “before coming to Europe, paint your face white”

আপনার বন্ধু লিস্টে নিশ্চয়ই অনেক বিদেশি আছে ওরা আপনাকে ভাল চোখে দেখবেনা!

কিন্তু যখন তৃতীয় জন মুখের অপর বলে দিল গায়ের রঙ কালো বলে আমাকে সে ভাড়া দেবে না, তখন পরিস্কার হয়ে গেল সব। ছি ছি, শেষে কিনা সুশীল সভ্য দেশের এই অবস্থা?

এই রকম আমি কোনদিন শুনিনি আর আপনি চাইলে কিন্ত অভিযোগ জানাতে পারেন। প্রতিটা ক্যন্তনে রেসিজমের জন্য অভিযোগ জানানর অফিস আছে। জেনেভাতে জাতিসঙ্গের অফিস থাকায় সুইস দের চেয়ে বিদেশির সংখ্যা বেশি। আমরা তো ব্রাউন আফ্রিকান অনেক আছে যারা বেশ ভাল জব করছে কই কোনদিন এই রকম শুনিনি আমি।
সবশেষে আপনাকে একটা ছবি দেখাই
ফতুয়া
আমার ল্যেবম্যাট দের জন্য আমি প্রতিবার আসার সময় কিছু বাংলাদেশী কাপড় নিয়ে আসি ওরা মাঝে মাঝে আমার দেয়া ড্রেস গুলা পড়ে ল্যবে আসে আর এই সামারে ২ জন বাংলাদেশ যাচ্ছে ঘুরতে! যাবার কথা ছিল শুধু থাইল্যান্ড আমি বলেছি সুন্দরবন আর কক্সবাজারের কথা।
অবশেষে আপনাকে একটা অনুরোধ, দুই একজনের সাথে মিসতে শুরুর করেন দেখবেন আপনার ধারনা পালটাবে।

ইয়াসির এর ছবি

আপনার সাথে আমার কিছুই মিলছেনা!!

আমি ঠিক এই মন্তব্যটাই আশা করছিলাম। আপনি ভালো একটা পরিবেশ পেয়েছেন এজন্য আপনাকে অভিনন্দন হাসি

আমি ২০১০ এ দুইটা পি এইচ ডি অফার পেয়েছিলাম একটা ইউ এস আরেকটা সুইজারল্যান্ড। কলোরাডোর চেয়ে সুইজারল্যান্ডে বেতন সিমপ্লি তিন গুন দেখে ইউ এস না গিয়ে জেনেভা চলে এসেছি!

খাইছে ইর্ষার ইমো পেলাম না

এই টাকাটা আপনি কিন্তু ফেরত পাবেন!

খুশির খবর হতে পারত, কিন্তু জেনারেল সেলস ট্যাক্স অফেরতযোগ্য। আপনার কাছে যদি আরো বিস্তারিত তথ্য থাকে তাহলে তো খুবই ভালো, নাহয় পরে একসময় নিয়ে নেব।

এদের একটাই ব্যাপার একটু ইন্ট্রোভার্ট ধরনের কিন্তু আপনি একদিন কথা বলেন দেখবেন তারপর থেকে প্রতিদিন সুন্দর কথা বলবে

ভাষা একটা মস্ত বাধা, আমি সময় করে উঠতে পারি নি ফ্রেঞ্চ ক্লাসে ভর্তি হবার, এটা আমার সীমাবদ্ধতা। তবে আমার সুইজারল্যান্ডে এখনো টিকে থাকতে পারার একটাই কারণ, আমার কলিগেরা। এরা এত বন্ধুসুলভ আর এত মিশুক যে বলার নয়। বিশেষ করে সমবয়সী একজন তো প্রায়ই এটা ওটার বাংলা মানে জিজ্ঞেস করে। মজার ব্যাপার হলো এরা বেশিরভাগই অন্য দেশ থেকে এসেছে, আমার সরাসরি কন্ট্যাক্টদের মধ্যে খুব কম সুইস অরিজিনের। কিন্তু তারাও ভালো। গোল বাধাচ্ছে প্রতিবেশীরা। লিখব সেটা নিয়েও।

ইয়াসির এর ছবি

ও হো, আমার প্রিয় টপিকটা প্রতিমন্তব্য থেকে বাদ পড়ে গেছে। রেসিজম। আমি খুবই বিব্রত বোধ করছিলাম আমার রিলোকেশন এজেন্টের সামনে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা নিয়ে কোথাও নালিশ দেয়া যায় না? সে বলল তুমি এটা প্রমাণ করতে পারবে না। এই লোক সরাসরি অস্বীকার করবে, চেপে যাও। সে এও জানিয়েছে, লুজানে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কথা সেটা নয়, অইউরোপিয়ানরা বাসা পাচ্ছে না এমন নয়, কিন্তু অনেক যাচাই বাছাইয়ের পরে, অথবা অনেক দাম দিয়ে। প্রেফারেন্স লিস্টে অনেক নিচের দিকে থাকে তাদের নাম মন খারাপ

অবশেষে আপনাকে একটা অনুরোধ, দুই একজনের সাথে মিসতে শুরুর করেন দেখবেন আপনার ধারনা পালটাবে।

আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

@মাহমুদ ও ইয়াসির ভাই,
সবার সব জায়গায় একই অভিজ্ঞতা হবে, তা ভাবাটা বোধ হয় ঠিক হবে না। আর পৃথিবীর কোন জাতিরই সব লোক একই রকম নয়।

ইয়াসির এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রথম প্রথম কোন দেশে গেলে বাঙালীর একটা সমস্যা হয়-- তারা সব কিছুতেই রেসিজম খোঁজে। এর কারণ সম্ভবত আমরাই সবচেয়ে বড় রেসিস্ট। বলছিনা যে আপনি রেসিজমের মুখোমুখি হননি, তবে কালো বলে বাড়ি ভাড়া দিবেনা এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এসব দেশে (কানাডার কথা আমি জানি) অন্তত প্রকাশ্য রেসিজম গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়। কানাডায় যে যে কারণে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেনা তার মধ্যে একটা হলো গায়ের রং, আরও কিছু আছে যেমন আপনার খাবার দাবারের ধরন।

তবে পড়ছি। লিখতে থাকুন। আমরা আমেরিকা কানাডা নিয়ে এত বেশি ব্লগ পড়ি যে অন্যেরা কেমন থাকে যা জানা হয়না।

ইয়াসির এর ছবি

সম্ভবত আমরাই সবচেয়ে বড় রেসিস্ট

চলুক
আমি এই কথাটায় গলা মেলাতে প্রস্তুত, দেশীদের সাদা প্রীতি আর কালো ভীতি দেখে সেটাই মনে হয়।

কালো বলে বাড়ি ভাড়া দিবেনা এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না

একেবারে মিথ্যেবাদী বলে দিলেন? চিন্তিত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বোঝাতে পারিনি হাসি

মিথ্যেবাদী বলব কেন, অবাক হয়েছি যেন অবিশ্বাস্য। শব্দটা "বিশ্বাস" না লিখে "মানতে পারছি না" বলতে হতো। উপরে আপনার যে মন্তব্য এসেছে সেখান থেকে বুঝতে পারছি এরকম ঘটনা খুবই কমন।

গুরুত্বহীন এর ছবি

"কানাডায় যে যে কারণে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেনা তার মধ্যে একটা হলো গায়ের রং" ভাইয়া এটা ওরা মুখের উপর বলে না, কিন্তু বাসা পেতে কালো/বাদামীদের অনেক ভুগতে হয়, প্রথম যখন বাসা খুজতে বের হয়েছিলাম তখন বেশিরভাগ মেইলেরই উত্তর পেতাম না, শেষে একজন বুদ্ধি দিয়েছিল মেইলে নিজের নাম দিয়োনা। এবং এর পর এক বাসায় দেখতে যাওয়ার পর, এক মহিলা বলেছিল "ও! আই থট ইউ আর কেনেডিয়ান!" টরন্টো/বড় শহর গুলোর কথা জানিনা, কিন্তু ছোট শহরগুলোতে কালার স্কিন ভালো চোখে দেখা হয় না।

আমরা রেসিস্ট না, আমরা গর্ধব, সাদা দেখলেই দেবতা মনে করি।

ইয়াসির এর ছবি

কানাডার ব্যাপারে একটা কথা শুনেছি, সত্যি মিথ্যা আপনারা বলতে পারবেন। বাসে নাকি সাদারা এশিয়ানদের সাথে পারতঃপক্ষে বসতে চায় না কিংবা শ্বেতাঙ্গ বাস ড্রাইভার নিয়মমাফিক অন্যদের গ্রীট করলেও এশিয়ানদের করে না। কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?

গুরুত্বহীন এর ছবি

আমাদের এখানে বাস প্রায় ফাকাই থাকে, বেশিরভাগই নিজেদের গাড়িতে চড়ে। তাই প্রায় কেউই পাশে বসে না।

তবে এবার দেশে যাওয়ার পথে টরন্টো থেকে লন্ডন যাওয়ার সময় পাশে একজন সাদা বসেছিলো, একটু পর উঠে গিয়ে সামনের একটা খালি সিটে চলে গিয়েছিলো। এখন সেটা আরাম করে বসার জন্য নাকি আমার পাশে বসবেনা বলে, এটা ঠিক করে বলা মুশকিল।

স্টুডেন্টদের জন্য আরেকটা সমস্যা, আমাদের পুরো বাসা/অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করা সম্ভব না, কিন্তু কেনেডিয়ানরা বাংগালী/ইন্ডিয়ানের সাথে বাসা শেয়ার করতে চায় না। ওরা অপরিষ্কার/মশলার গন্ধ পাবে এমন মনে করে (এটা অবশ্য খুব ভুলও না)।

rabbani এর ছবি

২ বছর ৮মাস কানাডা (ওয়াটারলু, ওনটেরিও) ছিলাম, এরকম কিছু দেখিনি।

ইয়াসির এর ছবি

বেশ ভালো খবর। বিদেশে স্বদেশীরা ভালো আছে জানলে ভালো লাগে

সত্যপীর এর ছবি

বাসে নাকি সাদারা এশিয়ানদের সাথে পারতঃপক্ষে বসতে চায় না কিংবা শ্বেতাঙ্গ বাস ড্রাইভার নিয়মমাফিক অন্যদের গ্রীট করলেও এশিয়ানদের করে না। কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?

আদৌ বিশ্বাসযোগ্য না। আমি গত ছয় বছর প্রতিদিন ক্যানাডায় বাসে চড়ি, কখনো এমন কিছু হয়নি।

..................................................................
#Banshibir.

ইয়াসির এর ছবি

বাঙালী গুজব ছড়াতে ভালোবাসে, আরেকবার প্রমাণ পেলাম।

পড়েছেন বলে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সত্যপীর এর ছবি

সুইসরা জোচ্চর নয় এবং বাঙালী গুজব ছড়াতে ভালোবাসেনা। আপনি কিছু সুইস দেখেছেন যাদের আচার ব্যবহার জোচ্চরের মতন এবং আপনার পরিচিত কিছু বাঙালী গুজব ছড়িয়েছেন। তাতে করে একটি আস্ত জাত জোচ্চর বা গুজব ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে যায় না।

..................................................................
#Banshibir.

ইয়াসির এর ছবি

মানুষ যখন মন্তব্য করে তখন সাধারণত পরিচিত বলয়ের সূত্র ধরেই করে। পুরো জাতি ধরে গালি দেবার ধৃষ্ঠতা আমার নেই, হবেও না আশা রাখি। তবে আপনার কথা মেনে নিচ্ছি, "কিছু" শব্দটা জুড়ে দিলে সব গোল মিটে যেত। সতর্ক করার জন্য ধন্যবাদ

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
সাই দ এর ছবি

ভাই আমেরিকা ,কানাডার সাথে পশ্চিম ইউরোপ মিলানোটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। ইয়াসির ভাই-এর ভাগ্য সম্ভবত বেশি খারাপ। কিন্তু এটা ঠিক গায়ের চামড়া অনেক বড় ব্যাপার ইউরোপে এখনো। প্রায় ৭ বছর ধরে ইউরোপের কয়েকটা দেশে থাকা হয়েছে। সুইডেন, নরওয়ে , ফিনল্যান্ড ব্যতিক্রম- এছাড়া অন্য দেশগুলোতে বর্ণবাদ অনেকটাই আছে।
তারপরও আমাদের থেকে ওদের আমার কাছে ভাল মানুষ মনে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

লেখা চলুক, পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
তবে সুইসরা জোচ্চের কথাটা খুব অপছন্দ হল, পৃথিবীর সব জাতিতেই ভালো- খারাপ মানুষ আছে, বুঝছি আপান্র সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তাই বলে সবাইকে ঢালাও দোষারোপ করা কি ঠিক?

এমনি আমাদের অভিজ্ঞতা সেখানে খুব ভাল ছিল, তবে এক জায়গায় থাকা আর ঘুরতে যাওয়া আলাদা জিনিস।

ইয়াসির এর ছবি

আসলে কথাটা হতাশা থেকে বলা, এবং সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যমুলক (আমার এইচআর ম্যানেজারেকে উদ্দেশ্য করে)। আমার ওই সময়ের অনুভূতি, বোঝেনই তো! আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি একজন সাধারন সুইস মানুষ হিসেবে যেমনই হোক, লেনদেনে সৎ। উদাহরণ দেই, কিছুদিন আগে ইন্টারলাকেন যাচ্ছিলাম, দেখি পথের পাশে একটি ছোট ছাদওয়ালা মাচায় সবজি প্যাকেট করে রাখা। আমার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, এটা স্থানীয় কৃষকদের, যদি কোন যাত্রীর ইচ্ছা হয় গাড়ি থামিয়ে সবজি তুলে নিতে পারে, বদলে প্যাকেটে উল্লেখ করা দাম রেখে যাবে। আমি এতই অভিভূত ও ঈর্ষাকাতর হয়েছিলাম যে বলার নয়, বাংলাদেশে সম্ভবত কোনদিন এই দৃশ্য দেখা হবে না। আর শহুরে লোকদের কথা যদি বলি, যদি সে কারো পকেট কাটেও নিয়মের মধ্যে থেকে করবে, প্রতারণার আশ্রয় নেবে না।

পড়েছেন বলে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নরাধম এর ছবি

কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, ইউরোপে রেসিজম আছে, সেটা জব ফিল্ডে আরও প্রকট আকার ধারন করে।অনেকক্ষেত্রে ক্রাইটেরিয়া থাকে শুধু ইউরোপিয়ান এবং উল্লেখ না থাকলেও, বেশিরভাগক্ষেত্রে খোজা হয় লোকাল, তারপর ইউরোপিয়ান, না হলে এটলিস্ট শ্বেতাঙ্গ এবং সবশেষে এশিয়ান, আফ্রিকান মন খারাপ

ইয়াসির এর ছবি

যে জায়গার যে নিয়ম, ওরা নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে এই নিয়ম পালন করে থাকে, লেখা থাকুক আর নাই থাকুক। আমাদের দেশে উল্টো, আমরা আগে বিদেশী খুঁজি, না পাওয়া গেলে দেশী

Samad এর ছবি

'' কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, ইউরোপে রেসিজম আছে '' আমারও তাই মনে হই

রোদ এর ছবি

জ্ঞানী হইলাম, প্রথম বারের মতো ব্লগ পড়ে।

বন্দনা এর ছবি

বেশ ভুগেছেন বোঝাই যাচ্ছে, তবে বাসা খুঁজে পাওয়া পৃথিবীর সব জায়গায়ি টাফ জব বোধহয়।

ইয়াসির এর ছবি

বাংলাদেশ আর দক্ষিন আফ্রিকার অভিজ্ঞতা ছিল কেবল, তাই সমস্যা সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না। একটা বাসা খালি আছে, পছন্দ হলেও সেটা নিতে পারব না, এটা একবার দুইবার মেনে নেয়া যায়, বার বার হলে হতাশাজনক। তবে অন্যদের অভিজ্ঞটা গুলো যখন পরে জানতে পেরেছি, বুঝেছি আমি একা নই

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেশ ভালো লেখা। আপনার দুর্ভাগ্যের কথা পড়ে খারাপও লাগলো। আশা করি সমস্যা সব দূর হয়ে যাবে দ্রুত।

যে জিনিসটা ভালো লাগলো না, তা হলো সরলীকরণ। দুয়েকজনের কারণে "সুইসরা জোচ্চোর" ধরনের জোরালো বক্তব্য এভাবে উপস্থাপন করাটা রূঢ় মনে হলো। ভালো-খারাপ সবখানেই আছে। জাপানি অধ্যাপকের টিএসসি থেকে ব্যাগ চুরি যাওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই জানেন। এখন যদি "বাঙালি মানেই চোর" ধরনের বক্তব্য আপনি কোথাও দেখেন, সেটা নিশ্চয়ই খুব সুখকর হবে না। অথবা এটা যে সত্য না, সেটা তো আপনি নিজেও মানবেন। বুঝতে পারছি প্রচণ্ড হতাশা আর ক্ষোভ থেকে ওই কথাটা লিখেছেন, তারপরও ব্লগে যখন লিখছেন, অভিজ্ঞতার কথা আরও অনেক মানুষের সাথে শেয়ার করছেন, নিজের বক্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে আরেকটু সাবধান বা সতর্ক হলেও অপ্রত্যাশিত কিছু এড়ানো যায়।

এর বাইরে আপনার লেখা আসলেই ভালো লাগলো। লিখতে থাকুন। পরের পর্বগুলোও পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করছি। ভালো থাকবেন।

ইয়াসির এর ছবি

আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত, সরলীকরণ ব্যাপারটা ভালো নয়। হয়তো লক্ষ্য করে থাকবে, সুইসরা জোচ্চোর, এটা কিন্তু তাৎক্ষনিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ। নতুন জায়গা, একের পর এক বিপদ আসছে, মাথা ঠিক রাখা মুশকিল। যেহেতু এটা কয়েকটা পর্বে ভাগ করে লিখছি, পরিকল্পনা আছে ভালো অভিজ্ঞতা শেয়ার করারও। ইতিমধ্যেই কয়েকজন পাঠক সরলীকরণের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছেন, ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে আমি কিন্তু আমার বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিমন্তব্যে তুলে দিয়েছি (কিছুটা ওপরে দেখুন)।

লেখা ভালো লেগেছে জেনে সুখী বোধ করছি, একই সাথে উৎসাহিত। আপনিও ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা রইল।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপমার লেখার ভাষা খুব ঝরঝরে।
লেখা ভাল লাগল।

আপনার দুর্ভোগ তাড়াতাড়ি শেষ হোক এই কামনা করি।

ইয়াসির এর ছবি

উদার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

মুস্তাফিজ এর ছবি

১। জুরিখ এয়ারপোর্টের সুইস ইমিগ্রেশন অফিসার আমাদের হোটেল বুকিং এর কাগজ দেখে বলেছিলো বেড়াতে এসেছো তাই বলে এত টাকা দিয়ে হোটেলে থাকবে? এরপর কম টাকায় কিভাবে মোটেল খুঁজতে হয় তার টিপস দিয়ে বলেছিলো এতে একদিনের হোটেলের পয়সায় সাত দিন থাকতে পারবে।
২। কিভাবে বাসের টিকিট করতে হয় বুঝতে না পেরে এক সুইসকে জিজ্ঞেস করলে সে তার কফি শপ থেকে বের হয়ে আমাদের নিয়ে বাস স্টপেজে এসে কিভাবে টিকিট করতে হয় তা হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছিলো।
৩। মোটেলে যাবার পথে ভুল জায়গায় নেমে চারদিকে ফ্রেঞ্চ লেখার ছড়াছড়িতে যখন মাথা ঘুরছিলো সে সময় এক সুইস বালিকা উপযাযক হয়ে আমাদের সমস্যা জানতে চেয়েছিলো, আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর পর সে আমাদের সাথে করে মোটেলে পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে গিয়েছিলো।
৩। জুরিখের একটা মোটেলে কয়েকদিন ছিলাম। মোটেল চালাতো একজন মাত্র সুইস। ঢোকার সময়ই সে আমাদের হাতে রুম আর মেইন গেটের চাবি তুলে দিয়ে তার অফিস রুমের ছোট্ট একটা জানালা দেখিয়ে বলেছিলো যেদিন চলে যাবে সেদিন আমাকে না পেলে এই গর্তে চাবি আর হিসাব মত রুম ভাড়ার টাকা ফেলে যাবে। আর যদি তোমাদের রিসিপ্টের দরকার হয় তাহলে কাগজে ইমেইল ঠিকানা দিয়ে যেও, পাঠিয়ে দিবো।

...........................
Every Picture Tells a Story

ইয়াসির এর ছবি

জুরিখ এয়ারপোর্টের সুইস ইমিগ্রেশন অফিসার আমাদের হোটেল বুকিং এর কাগজ দেখে বলেছিলো বেড়াতে এসেছো তাই বলে এত টাকা দিয়ে হোটেলে থাকবে?

এবার আমি অবাক হবার পালা, দুর্লভ কিছু লোক আছে, যারা উপযাচক হয়ে উপকার করতে ভালোবাসে, তাদেরই একজনকে পেয়েছিলেন। যে কোন দেশেই এদের সংখ্যা সীমিত। খুব ভালো লাগলো।

যেদিন চলে যাবে সেদিন আমাকে না পেলে এই গর্তে চাবি আর হিসাব মত রুম ভাড়ার টাকা ফেলে যাবে

এদের এই বিষয়টাতে আমি বেশ মুগ্ধ, কেউ টাকা মেরে দিতে পারে, এটা ওরা আশা করে না, অন্যদিকে এরা কিন্তু ডোডো পাখিও নয়। সত্যিই অসাধারন।

পড়েছেন বলে অসংখ্য ধন্যবাদ

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম। আমার পোড়কপাল, এশিয়া ছেড়ে বেড়োতেই পারলাম না।
প্লেনে উঠলে দম বন্ধ হয়ে আসে। হাত-পা ঘামতে থাকে। খালি মনে হয়, যন্ত্রটা কখন মাটিতে নামবে!
আপনাদের অনেক জানা। ইর্ষা হয়।

ইয়াসির এর ছবি

পাঁচ ছয়টা ছোট ছোট ফ্লাইট ট্রাই করে দেখতে পারেন চোখ টিপি

অনেক জানার রসিকতাটি ভালো লেগেছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেক জানার রসিকতাটি ভালো লেগেছে

হো হো হো

কর্ণজয় এর ছবি

মানুষের চিরায়ত গল্প... ভাল লাগলো

ইয়াসির এর ছবি

চিরায়তই বটে। ভালো লাগা জানানোর জন্য ধন্যবাদ, অনেক উৎসাহ দেয় এটি। ভালো থাকুন।

চরম উদাস এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার গল্পগুলা খালি ঢালাওভাবে জোচ্চর বলা ছাড়া। প্রতিমন্তব্যেও দেখলাম আপনি সবার কথা মেনে নিয়ে তালগাছ একটু হলেও ধরে রেখেছেন খাইছে
আমার ব্যক্তিগত ধারণা অবশ্য আমরা মানুষের সাথে চট করে মিশতে পারিনা। আমাদের জড়তা অনেকসময় অবন্ধুবৎসল মনে হয় অনেকের কাছে। আমাদের সবার মনে হয় তারেক অণুর কাছ থেকে শিখা উচিত কিভাবে ভিনদেশী মানুষকে কাছে টানা যায়। এই ছোকরা দুনিয়ার আগারে পাগারে ঘুরে মরেছে কিন্তু কোন দেশের মানুষকে খারাপ বলতে শুনলাম না (পাকিস্তান যায় নাই অবশ্য মনে হয়)।

ইয়াসির এর ছবি

তালগাছটা আপনাকে দিলাম

তালগাছটা ছেড়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে, ওজনে বেশ ভারী হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যেই। চারা বোনার আগে এর পর থেকে সতর্ক থাকতে হবে। চিন্তিত

আপনার ব্যক্তিগত ধারণা সঠিক, আমি আসলেই অপরিচিত মানুষের সাথে সহজ হতে সময় নেই, তারেক অণু যদি সময় করতে পারে একটা ক্র্যাশ কোর্স করে নেয়া যেতে পারে। এই লোকের ঘোরাঘুরির প্রাবল্যে আমার প্রায়ই মাথা ঘোরে, কিভাবে সে ম্যানেজ করে আল্লাহ মালুম।

গঠনমুলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

বাউলিয়ানা এর ছবি

ইওরোপের দেশেগুলোর ট্যাক্স নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা শোনা যায়। যেমন, বেলজিয়ামে একরকম তো জার্মানীতে আরেক রকম।
যারা চাকুরী নিয়ে সেখানে যান, তাদের মাস শেষে হাতে নাকি তেমন কিছুই থাকেনা। কাছাকাছি সম্পদশালী এই দেশগুলোর এত ভিন্ন নিয়মকানুন কেন কে জানে!

তানভীর এর ছবি

কিন্তু যখন তৃতীয় জন মুখের অপর বলে দিল গায়ের রঙ কালো বলে আমাকে সে ভাড়া দেবে না, তখন পরিস্কার হয়ে গেল সব

আইনত সে আপনাকে এমন কথা বলতে পারে না। আপনি আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। যদি বলে থাকে সেটা প্রমাণ করাও তেমন জটিল কিছু ছিলো না।

রেসিজম তো আমেরিকায় সিভিল রাইটস মুভমেন্টের আগে বেশ ভালভাবেই ছিল। এখন আইন-কানুন বেশ কঠোর। তবুও রেখে-ঢেকে কিছুটা হ্য়। যেমন- এখানে সাদা এলাকায় বাসা ভাড়া ইচ্ছাকরে বেশি রাখা হয়, যাতে কোন কালো ভাড়া নিতে না পারে। অনেক সময় বিভিন্ন অফিস/ইণ্ডাস্ট্রির লোকেশন বাছাই করা হ্য় সাদা এলাকার আশেপাশে যাতে কালো লোক নিতে না হ্য়। আমার ধারণা ছিলো ইউরোপ এগুলো থেকে মুক্ত, কারণ আমেরিকার মতো তাদের স্লেভারির ইতিহাস নাই।

সাই দ এর ছবি

আপনার ধারণা নরডিক দেশগুলির জন্য হয়ত খাটবে, তবে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য নয়।

সুলতান এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে।

লেখা ও মন্তব্য থেকে অনেক জ্ঞান নিচ্ছি। আশাকরি ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।

ইয়াসির এর ছবি

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ পড়া এবং মন্তব্যের জন্য।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

লিখা ভাল।
তবে, এক-দুজনের জন্য পুরো জাতিকে খারাপ বলা সাজে না।
সব জাতিতেই খারাপ-ভাল লোক আছে। আপনার ভাগ্য কিছুটা খারাপ বোধ হয়, তাই, হয়ত, খারাপ লোকের পাল্লায় বেশি পড়েছেন।
আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।

ইয়াসির এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।