বাংলা ব্যান্ড মিউজিক --- লতিফুল ইসলাম শিবলীঃ একজন নাগরিক কবিয়াল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৬/০৮/২০১২ - ৪:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উৎসর্গঃ যারা মমতা আর ভালোবাসা মিশ্রিত হৃদয়ের শুদ্ধতম আবেগ নিয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলী’র কথামালাগুলো সুরবিন্যাস, যন্ত্রসঙ্গীত ও কণ্ঠের যাদুকরী সম্মোহনে ছড়িয়ে দিয়েছে শহর থেকে গ্রামে . . . আলোক বার্তা নিয়ে প্রতিটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।

সব কিছুরই একটা শুরু থাকে। বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ারও একটা শুরু আছে। যদিও এই ক্ষুদ্র জীবনের অনেকটা সময়ই কাটিয়ে দিয়েছি গান শুনে শুনে। সেই গানগুলোর বেশীর ভাগ অংশ জুড়েই বাংলা ব্যান্ড মিউজিক। প্রায়ই আমি ভাবি, শুরুর সেই সময়টাতে আমিতো রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক, পল্লীগীতি থেকে শুরু করে কলকাতার কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত কিংবা নচিকেতার গানে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়তে পারতাম। ব্যক্তিগতভাবে আমারই প্রজন্মের কতিপয় গানের শ্রোতাদের চিনি যারা ব্যান্ড মিউজিক অতটা পছন্দ করে না, যতটা না আধুনিক গানের ভক্ত। উপরন্তু ক্ষেত্র বিশেষে ব্যান্ড মিউজিক কিংবা ‘ব্যান্ডের গান’ শব্দটা শুনলেই নাক উঁচুতে তোলে।

অপরদিকে, কিছু কিছু মানুষ শ্রোতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মূলত কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত কিংবা নচিকেতা শুনে। এই দলের শ্রোতারা বাংলাকে চেনে কলকাতার গান দিয়ে। এবং সুযোগ পেলেই বাংলাকে বিচার করে কলকাতা দিয়ে। আমার দৃষ্টিতে তারা সবচাইতে দুর্ভাগা (মাইকেল মধুসূধন টাইপ! মাইকেল মধুসূধন দত্ত তবুও সৌভাগ্যবান, অনেক পরে হলেও তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। ফিরে এসেছিলেন, এই বাংলা মায়ের কোলে।)। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন এমনই সমৃদ্ধ যে একজন শ্রোতা সারাজীবনও যদি সেই গানগুলো শোনেন তবুও বিষ্ময়ের ঘোর কাটবে না। এবং মনে হয়না কলকাতার গান নিয়ে তখন গর্ব করার কিছু থাকতে পারে। আমি কলকাতার গান শুনতে বারণ করছি না, বরং বলতে চাইছি আমাদের দেশেও চমৎকার-সব গানে ছেয়ে আছে। আগে নিজেদেরটা বাজিয়ে দেখা উচিত নয় কি? তবে এ আমার সৌভাগ্য, আমি বাংলাকে চিনি বাংলা মাটির গান দিয়ে। কলকাতার কতিপয় খেতাবধারী শিল্পীর গান দিয়ে আমি বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিককে বিচার করার মত দৃষ্টতা দেখানোর কথা কল্পনাও করতে পারিনা, বর্তমান সময়ের 'কেউ কেউ' যাকে স্মার্টনেস ও সঙ্গীতবোদ্ধার বন্ধ্যাত্ব (!) ‘জাহির’ (!!) করার প্রকট বৈশিষ্ট্য (!!!) বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।

বাংলা ব্যান্ড মিউজিক – সঙ্গীতের এমন একটি ধারা যেখানে স্বকীয় ও সতন্ত্র ধাঁচের মৌলিক গানের পাশাপাশি বাউল, আধ্যাত্মিক, গরিমা গানের ধারক হাছন রাজা, লালন সাঁই, শাহ আব্দুল করিম থেকে শুরু করে রবীন্দ্র সঙ্গীত এমনকি নজরুল সঙ্গীতও উঠে আসছে আধুনিক ইনস্ট্রুমেন্ট ও তারুণ্যদীপ্ত যন্ত্রসঙ্গীতের ছত্রছায়ায়। পুরোনোকে ভেঙে দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে সঙ্গীতকে নতুন ভাবে নতুন ধারায় উপস্থাপনের দুরন্ত সাহস একমাত্র ব্যান্ড মিউজিকের কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। আর তাই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে Experimental Music বলতে ব্যান্ড মিউজিককেই বুঝায় হয়ত। খুব সম্ভবত একমাত্র ব্যান্ড মিউজিক-ই সঙ্গীতের নানা শাখাকে এক সূতোই বাধার সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টা চালায়, যা অন্য ধারায় পুরোপুরি অকল্পনীয়। উদাহরণ টেনে বলা যায়, একবার ভেবে দেখুনতো রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীরা এবি-এল.আর.বি-র পিওর রক ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’ গানটি গাইছে হারমোনিয়াম আর তবলার ছত্রছায়ায় একেবারেই ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’-র গতিময়তায় !!! কিংবা জেমসের ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’???

আর তাই, এ আমার সৌভাগ্য, আমি বাংলাদেশের বাংলা ব্যান্ড মিউজিক শুনি এবং এই দেশের গান দিয়েই চিনি এই বিশ্বকে (এও সত্য যে বাংলাদেশে প্রচলিত সঙ্গীত ধারার অধিকাংশই প্রায়ই নিয়মিত শুনি)। এ আমার সৌভাগ্য, শুরুর সেই সময়টাতে এই বাংলারই কতিপয় অদম্য রকস্টার তাদের তারুণ্যদীপ্ত সৃষ্টিশীল মেধায় আমাকে মুগ্ধ করেছিলেন সুরের মাধুর্য্যময়তায়। সময়টা ১৯৯৫, ক্লাস থ্রীতে পড়ি হয়ত। সেই সময়টাতেই আমার মত অজস্র কিশোর মনকে আলোড়িত করে মুগ্ধতার জোয়ারে ভাসাতে সাউন্ডটেকের ব্যানারে প্রকাশিত হয় আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে সর্বাধিক বিক্রিত ও জনপ্রিয় অডিও ক্যাসেটের স্বীকৃতি পায়। (সেই আনন্দময় সময়ের কিছুটা বলেছিলাম বাংলা ব্যান্ড মিউজিক --- দাগ থেকে যায় পোষ্টে)।

গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ শিরোনামে ‘কষ্ট’ অ্যালবামের প্রথম গানটিই সূচনা করে এক নতুন যুগের। সঙ্গীতের কোন সীমানা কিংবা সীমারেখা নেই, তারই স্বাক্ষর রেখে দুর্বোধ্য প্রাচীর ভেঙে পৌছে যায় সর্বস্তরের শ্রোতামহলে। সেই শ্রোতামহলের অজস্র শ্রোতাদের ভিড়ে আমিও একজন। এই একটি মাত্র গানই আমাকে মুগ্ধবিভোরতায় আচ্ছন্ন করেছিল, মোহাবিষ্ট করেছিল ব্যান্ড মিউজিকের সুরধায়ায় যা আজও ভাঙেনি। যদিও ‘কষ্ট’ অ্যালবামের প্রতিটি গানই অসম্ভব শ্রুতিমধুর ও অনন্য, তবুও ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ গানটিই এই অ্যালবামের বাড়তি কাটতি ও জনপ্রিয়তাকে নিশ্চিত ও প্রতিনিধিত্ব করে। এ আমার সৌভাগ্য আমি ‘কষ্ট’ অ্যালবামের জন্মলগ্নে বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছি।

‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি/তাই তোমার কাছে ছুটে আসি’-এই গানটি থেকে যন্ত্রসঙ্গীত ও প্রিয় এবি দ্যা বসের মাধুর্য্যময় কণ্ঠটি আলাদা করে ফেলতে চাই। শুধু তাকাতে চাই লিরিকের দিকেঃ ‘বুকের এক পাশে রেখেছি জলহীন মরুভূমি/ইচ্ছে হলেই যখন তখন অশ্রু ফোঁটা দাও তুমি/তুমি চাইলে আমি দেব অথৈ সাগর পাড়ি/’। লতিফুল ইসলাম শিবলী মানেই অনুভূতিগুলোর এমন সহজ, সরল ও নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এ আমার সৌভাগ্য, লতিফুল ইসলাম শিবলীর কথামালায় বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের অমৃতস্বাদ আস্বাদনের সুযোগ পেয়েছি।

গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী, একের পর এক লিরিক উপহার দিয়ে ৯০-দশকের পুরোটা সময়ই শ্রোতাদের মাতিয়েছেন জনপ্রিয় গানের সুরেলা ঝঙ্কারে। যা লিখেছেন তাতেই যেন ঠাই করে নিয়েছে সবচেয়ে উপযুক্ত সুর ও গায়কীর স্বর্গীয় কোন অনুভূতি। প্রতিটি ইন্সট্রুমেন্টও যেন উচ্ছ্বাসে ভেসেছে নান্দনিক সব কথামালায়। আর তাই, ৯০ দশকের জনপ্রিয় গানগুলোর দিকে তাকালে যে কাউকেই অবাক হতে হবে বিষ্ময়ে! অবনত মস্তকে মেনে নিতে হবে এই নাগরিক কবিয়ালের সৃষ্টিশীলতাকে। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, পার্থ, শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, আজম খান, টিপু, নকিব খান, বিপ্লব, চন্দন, জুয়েল, সুমনা হক, ঝলক থেকে শুরু করে নাম না জানা (আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য!!) অনেক শিল্পীর জন্য লিখেছেন প্রায় ৩০০-র মত গান। এবি-এল.আর.বি এবং জেমস ও ফিলিংসের জনপ্রিয়তার পেছনের এক অনন্য কারিগর। যিনি শব্দমালা গেঁথে গেঁথে তৈরী করেছেন অপার্থিব অনুভূতি। যেই অনুভূতিগুলো অমোঘ আঁধারে ঢাকা কোন অমবস্যার রাতে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনে বাঁধভাঙা জোছনা। এমনকি, দুরন্ত প্রেমিকার মত চাঁদকে জানালার পাশে নিয়ে সারারাত জাগে প্রেমিক মনের অব্যক্ত অনুভূতি।

লতিফুল ইসলাম শিবলী, একাধারে তিনি গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, মডেল, নাট্যকার, অভিনেতা এবং নিঃসন্দেহেই একজন নান্দনিক শিল্পী ও একজন নাগরিক কবিয়াল। দীপ্ত প্রতিভায় লালন করেছেন সৃষ্টিশীল এক একটি ক্ষেত্র। মডেল হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্রে, অসম্ভব জনপ্রিয় নাটক ‘রাজকুমারী’ তারই লেখা ও অভিনীত। মজার ব্যপার হল, এই নাটকটিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে আইয়ুব বাচ্চুর সুরবিন্যাস ও সঙ্গীতায়োজনে ‘রাজকুমারী’ নামে একটি ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম বের হয় সাউন্ডটেকের ব্যানারে। আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া জনপ্রিয় ‘রাজকুমারী’ গানটি আদতে লতিফুল ইসলাম শিবলীরই লেখা। ‘রাজকুমারী’ ছাড়াও আরও কয়েকটি নাটক লিখেছেন সেই অতীত সময়ে।

আইয়ুব বাচ্চু ও জেমসঃ এটা সত্য যে, আইয়ুব বাচ্চু ও জেমসের জনপ্রিয়তার পেছনে এককভাবে যদি কাউকে স্বীকৃতি দেয়া হয় তবে লতিফুল ইসলাম শিবলীর অবস্থান থাকবে অন্য সবার চেয়ে অনেক উপরে। জনপ্রিয় ব্যান্ড এল.আর.বি তাদের ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত প্রোগ্রামে ‘ম্যান অব দ্যা এল.আর.বি’ নির্বাচিত করে লতিফুল ইসলাম শিবলীকে। চলুন দেখে নেয়া যাক, এবি-এল.আর.বি এবং জেমস ও ফিলিংসের পেছনে লতিফুল ইসলাম শিবলীর অবদানগুলো।

জেমস ও ফিলিংসঃ ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’, ‘জেল থেকে বলছি’, ‘জানালা ভরা আকাশ’, ‘প্রিয় আকাশী’, ‘নাটোর স্টেশন’, ‘মধ্যরাতের ডাকপিয়ন’, ‘একজন বিবাগী’, ‘কতটা কষ্টে আছি’, ‘যতটা পথ’, ‘গীটার কাঁদতে জানে’, ‘হেরেমের বন্দিনী’, ‘পালাবে কোথায়’, ‘জোসি প্রেম’, ‘পেশাদার খুনি’, ‘নীলাকাশ যত দূর দেখা যায়’, ‘পূর্ণিমা নৃত্য’, ‘জঙ্গলে ভালোবাসা’, ‘প্রাণের শহর’ থেকে শুরু করে আরও অনেক অনেক গান লিখেছেন জেমস ও ফিলিংসের জন্য। ফিলিংসের ‘নগর বাউল’ অ্যালবামের তিনটি গান, ‘জেল থেকে বলছি’ অ্যালবামের পাঁচটি গান, জেমসের সলো ‘পালাবে কোথায়’ অ্যালবামের ছয়টি গান, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’ অ্যালবামে তিনটি করে গান স্থান পেয়েছে। যেসব গান জেমস ও ফিলিংসকে করে তুলেছে জনপ্রিয়।

এবি-এল.আর.বিঃ ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’, ‘নীল বেদনায়’, ‘আহা! জীবন’, ‘ও আমার প্রেম’, ‘বন্দী জেগে আছে’, ‘মাকে বলিস’, ‘মানুষ বড় একা’, ‘বড় বাবু মাস্টার’, ‘কষ্ট কাকে বলে’, কি যে কষ্ট আমার’, ‘তুমি নও’, ‘খুব সাধারণ জীবন আমার’, ‘চাঁদ মামা’, ‘রাজকুমারী’সহ আরো অনেক অনেক গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী (লিস্টটা বড্ড সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল !!)। এটা মেনে নিতেই হবে, লতিফুল ইসলাম শিবলীকে দিয়ে এবি-এল.আর.বি’র জনপ্রিয়তাকে পরিমাপ করা দৃষ্টতার শামিল। তবে এটাও সত্য যে, গীতিকার হিসেবে এককভাবে একমাত্র লতিফুল ইসলাম শিবলী-ই এবি-এল.আর.বি’কে জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভাসিয়েছে অসংখ্যবার এবং শ্রোতামনে তৈরী করেছে ব্যপক গ্রহণযোগ্যতা।

অন্যদিকে, শুধু এবি-এল.আর.বি কিংবা জেমস-ফিলিংসকে নিয়েই পড়ে থাকেন নি এই নাগরিক কবিয়াল। গান লিখেছেন আরও অনেক শিল্পীর জন্য। (যদিও ধারাবাহিকভাবে গানের লিস্ট তুলে দেয়াটা চূড়ান্ত রকমের বিরক্তিকর একটা কাজ, সেই সাথে পড়াটাও। তবুও অন্তত গুটিকয় গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়)। খালিদের ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, পার্থর ‘বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি/হাজার বর্ষা রাত’, ‘শাফিনের ‘পলাশীর প্রান্তর’, ‘শহর থেকে দূরে’, হামিনের ‘শেষ ঠিকানা’, সুমনা হকের ‘মাঝে কিছু বছর গেলো’, আজম খানের ‘জীবনের শেষ কটা দিন’, চন্দনের ‘তুমি আর কারো নয়’, টিপুর ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু হবো’, ঝলকের ‘দূরে কোথাও’ সহ জানা অজানা অনেক শিল্পীর অনেক অনেক গান।

এছাড়াও তপন চৌধুরী ও শাকিলা জাফরের করা ব্যপক জনপ্রিয় (সুপার-ডুপার হিট) রোমান্টিক ডুয়েট সং ‘তুমি আমার প্রথম সকাল/একাকী বিকেল ক্লান্ত দুপুর বেলা’ গানের গীতিকার এই লতিফুল ইসলাম শিবলী।

বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনঃ লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা এমন শত শত গান বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে নির্দিষ্ট গণ্ডী পেরিয়ে সর্বসাধারণের কাছে ব্যান্ড মিউজিককে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে। শুধু তাই নয়, আমার মত উঠতি শ্রোতাদেরকে সেই দ্বিধাবিভক্তময় সময়ে যখন ‘ব্যান্ডের গান’ শব্দটা শুনলেই মুরুব্বিরা চোখ রাঙিয়ে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকাতো, সেই সময়ে ‘বখে যাওয়া বেয়াদপ খেতাব’ নিয়ে ব্যান্ড মিউজিকের একনিষ্ট ভক্ত শ্রোতা হিসেবে প্রস্তুত করতে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ আমার সৌভাগ্য, লতিফুল ইসলাম শিবলী ও এবি শুরুর সেই সময়টাতে কলকাতা নামক অজস্র জনপ্রিয় গানের দৌরাত্ব্যের হাত থেকে আমাকে সযত্নে রক্ষা করেছেন বাংলাদেশের বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি বিভোরতায় আচ্ছন্ন করে।

এদিকে, বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক আন্দোলন নিয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলন’ নামে একটি বই প্রকাশ পেয়েছে বাংলা একাডেমী থেকে। এই বইটিই বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের উপর লেখা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ একটি বই। অন্যদিকে, জনপ্রিয় গায়ক ও বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত আন্দোলনের আরেক প্রবাদ পুরুষ মাকসুদুল হক লিখেছেন ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’ শিরোনামের আরেকটি বই। যদিও ব্যক্তিগত আলোচনায় খন্ড খন্ড চিত্রে উঠে এসেছে শিল্পীমনের চিন্তা চেতনা ও আমাদের বাংলা ব্যান্ড মিউজিক।

শিল্পী লতিফুল ইসলাম শিবলীঃ ১৯৯৯-সালে সাউন্ডটেকের ব্যানারে প্রকাশ পায় লতিফুল ইসলাম শিবলীর ফার্স্ট অ্যালবাম ‘নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম’। এই অ্যালবাম প্রস্তুতকালে শিবলী একটি ব্যান্ডও গঠন করেন ‘শিবলী দ্যা সোলজার’ নামে। এই অ্যালবামটি দিয়েই প্রথমবারের মত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। যদিও তিনি ফিলিংসের ‘জেল থেকে বলছি’ গানটি সুরারোপের মাধ্যমেই সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পর্যন্ত সেটিই ছিল একমাত্র, এবং ‘নিয়ম ভাঙার নিয়ম’ অ্যালবামটিই মূলত ব্যপক অর্থে সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শিবলীকে প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রথম অ্যালবামের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গন থেকে প্রায় এক যুগ সময় দূরে সরে ছিলেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার ‘কমপ্লিটম্যান’ খ্যাত এই নাগরিক কবিয়াল। তবে আনন্দের সংবাদ, তিনি আবারও ফিরে এসেছেন এই সঙ্গীত, সংস্কৃতি ও সাহিত্য অঙ্গনে। গত বই মেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘তুমি আমার কষ্টগুলো সবুজ করে দাও না’। লতিফুল ইসলাম শিবলীর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি ছিল ‘ইচ্ছে হলে ছুঁতে পারি তোমার অভিমান’। এছাড়াও সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে প্রথমবারের মত চলচ্চিত্রের জন্য কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন এবং নাম রেখেছেন ‘খুব বেশী দূরে নয়’। ‘লতিফুল ইসলাম শিবলীর ভক্তশ্রোতাদের জন্য আরও একটি সুখবর এই যে, সম্প্রতি তিনি শুরু করেছেন নিজের দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ। এবং ইতিমধ্যে কম্পোজ করে ফেলেছেন 'সবুজ শার্ট' শিরোনামের একটি গান। সেই সাথে স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আবারও এবি-এল.আর.বি’র জন্য গান লেখার। হয়ত, আবারও জাদুকরী সম্মোহনে তুলবেন প্রলয় ঝঙ্কার। সজীবতা ফিরে পাবে ব্যান্ড সঙ্গীতের হারানো যৌবন। অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছি সেই প্রলয় ঝংকারের। অপেক্ষায় ছিলাম, অপেক্ষায় থাকব।

* অডিও ক্যাসেট, আমার ঈদ আনন্দ ও একটি হতাশা পোষ্টে সঠিক সময়ে মন্তব্যের প্রতিউত্তর দিতে পারিনি বলে দুঃখিত।

----------------------------
মোখলেছুর রহমান সজল


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

অসাধারন সব গানের গীতিকার। চলুক

লতিফুল ইসলাম শিবলী কেন দীর্ঘ বিরতি দিয়েছিলেন জানা হল না।

..................................................................
#Banshibir.

মোখলেছুর রহমান সজল  এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যপীর।
আমি যতটুকু জানি, উনার বাবা মারা যাওয়ায় হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। চলে যান আমেরিকায়। ধ্যান ধারণায়ও কিছুটা পরিবর্তন আসে। এখন, নিয়মিত সালাত আদায় করেন।

তবে, আগে যেমন আধুনিক ও তারুণ্যদীপ্ত ছিলেন। মননশীলতায় এখনো তেমনই আছেন। বদলান নি একটুও।

babunee এর ছবি

আহা কি সুন্দর চিল সেই সময়্কার গান।
ধন্নবাদ এরকম একটা লেখার জন্ন।

মোখলেছুর রহমান সজল  এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ বাবুনী।
সেই স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা ভুলি কি করে !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।