পাঠশালা বা কামারশালা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৭/০৯/২০১২ - ৮:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ম্যামের হাতে ডাস্টার ছিলো ছুড়ে মেরেছে
উঃ বড্ড লেগেছে।


-লেগেছে ঠিকই। তবে যাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারা হয়েছে সেও সময়মত মাথা নিঁচু করে নিয়েছে। ডাস্টার তাই উড়ে গিয়ে ল্যান্ড করলো পিছনের বেঞ্চে বসা আরেক ছাত্রের কপালে। বেগ বেশি ছিল, তাই ‘উৎক্ষিপ্ত বস্তু’র সূত্র মেনে ডাস্টার নিচে না নেমে সরাসরি কপালে লেগেছে। তাই আরেকটু নীচে লাগলো না, কপালের জখমেই সারা। থ্যাঙ্কস ম্যাম, ভাগ্যিস জোড়ে মেরেছিলেন।
......................................

এগারো বছর স্কুলে পড়ে একটা ধারনা মনে বেশ ভালোভাবে গেঁথে গেছে আমার। সচরাচর ওখানে দুই ধরনের ছাত্রদের শিক্ষাগুরুরা মনে রাখেন। এক. যারা তাঁদের চোখে ‘মোস্ট ব্রিলিয়ান্ট’ আর দুই. যারা তাঁদের চোখে ‘মোস্ট ত্যাঁদড়’।
তবে মাঝামাঝি যে গ্রুপটা, মধ্যবিত্ত, এরাই বোধকরি সবচেয়ে অভাগা। ব্রিলিয়ান্টরা পাশ করার পর স্কুলে গেলে শিক্ষকরা আদর করেন, আদর করেন ত্যাঁদররা তাদের বাল্যকালের গুরুদের সাথে সাক্ষাত করতে গেলেও, সামান্য আদর মাখা টক ঝাল মিষ্টি আচারের স্বাদ জিহবায় এনে বলেন, “ভীষণ ফাজিল ছিলি রে। কত পিটিয়েছি ওই গাছের ডালটা দিয়ে তোদের মানুষ করার জন্য...।” কিন্তু ওই মধ্যবিত্ত গ্রুপটাকে কেউ মনে রাখে না। তাদের না আছে চোখে পড়ার মত ব্রিলিয়ান্স। না আছে ত্যাঁদড়ামি। স্কুলের শেষ পাঁচটা বছর আমি ছিলাম এই মধ্যবিত্তদের দলে। আমার চোখ তাই মধ্যবিত্তদের চোখ।

নাহ, হবে না। এভাবে হবে না। এসব লিখার জন্য তো আমি পিসির সামনে বসিনি। নস্টালজিয়া কখনো মানুষকে বোধকরি কোমল করে ফেলে। অথচ আমি তো কোমল হবার জন্য লিখতে বসিনি। আমার তো কোমল হবার সুযোগ নেই। কারণটা সরাসরি বলে ফেলি, আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ করি না। যেভাবে আমাদের পড়ানো হয় আমি মাঝে মধ্যে তার ক্ষতিটা চিন্তা করে শিউরে উঠি। তাই সিদ্ধান্ত নেই আমাকে লিখবো ওগুলো নিয়েই। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলেই তো সবচেয়ে ভালো হয়। তবে তাই হোক।
..............................

প্রাইমারী আর হাইস্কুল মিলিয়ে চারটা স্কুলে পড়েছি আমি। সবগুলোতেই এমন কিছু শিক্ষাগুরুর দেখা পেয়েছি যারা ক্লাসে ঢুকতেন হাতে একটা বেত নেড়ে। গাছের কঁচি ডাল থেকে শুরু করে বাঘের মত ডোরাকাটা জালিবেত পর্যন্ত কতো কি! তাকালেই মনে হতো ওগুলো বুঝি সপাং সপাং পিঠে নেমে আসার জন্য ওঁত পেতে আছে। বুঝি ছাত্র পিটানোইবা তাঁদের কাজ। শিক্ষক তাঁরা, এমনই শিক্ষক যে ভয়ে প্রশ্ন পর্যন্ত করতে পারতাম না।
পিছন ফিরে তাঁকিয়ে অবাক হই, কি ত্রাস অতিক্রম করে এসেছি শৈশবের আর কৈশরের দিনগুলোতে। এমনকি ক্যান্টনমেন্ট কলেজেও।

একটা গল্প বলি। তার নাম দিলাম ‘অভাগা’। আমার সহপাঠী। সে হিসেবে আমাদের বয়স আট কি নয়।ইংরেজী ক্লাসের আগে প্রতিদিন ওর মুখে জমে থাকা ভয় মনে করতে পারি। মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা ইংরেজী স্যার ক্লাসে এসে প্রতিদিন ওকে নিয়ম করে গম্ভীর কন্ঠে পড়া জিজ্ঞেস করেন। স্রষ্টা হয়ত অভাগার ইংরেজী ভাগ্য একটু কমই দিয়েছিলেন। অথবা স্যারের শীতল দৃষ্টি আর হাতের স্কেলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই হয়ত পড়া গুলিয়ে ফেলতো। যেদিন পড়া ধরাতেন না সেদিন কিজানি বিরবির করে কথা বলতেন অভাগার সাথে। ব্যাপারটা ছিল রুটিনওয়ার্কের মত। এরপর অভাগার ছোট্ট শরীরটাকে নুইয়ে (অনেকটা নামাজে রুকুর মত করে) চেয়ারের নিচে ওর মাথাটাকে ঢুকিয়ে রাখতেন বাকি ক্লাস। তারপর ঐ চেয়ারের উপর আরাম করে বসে ‘ইংলিশ বাই স্টেজেস’ বইয়ের পাতা মেলতেন। একটু উনিশ বিশ হলে কখনো কাঠের স্কেল, কখনো জালিবেত দিয়ে ঐ অবস্থায়ই ওর পশ্চাতদ্দেশে রাগ মেটাতেন। একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন নিয়মিত দেখতো বিশ জোড়া চোখ। হ্যাঁ, দর্শকদের বয়স তখন আট কি নয়।
স্যারের ঐ শিক্ষালয়ে খুব সুনাম। খুব জাঁদরেল আর স্মার্ট স্যার তিনি। অন্য শিক্ষকদের প্রশংসা- “কত্তো ভালো, কত্তো স্ট্রিক্ট উনি।” যেন শারিরীক অত্যাচারই ভালো শিক্ষক হবার মাপকাঠি তাঁদের চোখে। তারাও শিক্ষক বটে।

হাইস্কুলে তখন। ভাগ্যবান ব্যক্তিবিশেষ ছাড়া আর সবারই স্কুলজীবনে বোধ করি এমন শিক্ষাগুরুর দর্শন পাবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেমন তিনি? বেঁটে করে ফর্সা একজন স্যার ছিলেন আমার হাইস্কুলে। ইংরেজী পড়াতেন ইনিও। ইংরেজী পড়াতেন উনি। ঠারে-ঠরে বুঝিয়ে দিতেন একমাত্র উনিই স্মার্ট, ইংরেজী ওয়ালা। যখন তিনি ক্লাসে আসতেন তখন তার আশে পাশের ডানে বামের আরো দুইটা ক্লাসে কবরের নীরবতা নেমে আসতো। আর আমরা, অর্থাৎ যাদের ক্লাসে নিজের অফুরন্ত ভান্ডার থেকে ইংরেজী জ্ঞান দয়া করে বিলি করতে আসতেন উনি সেখানে কারো কারো শরীর কাঁপতো রীতিমতো। শত্রু পীড়নে সিদ্ধহস্ত তিনি একবার এক ছাত্রকে গাছের ডাল দিয়ে মারতে মারতে গলার চামড়া ছিড়ে রক্ত বের করে ফেলেছিলেন। শিক্ষক তিনি। বহাল তবিয়তেই শিক্ষকতা করে গেলেন।
মনে মনে বলি, যদি বাকি দিনগুলো আমার মত ছাত্রদের মনে ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকা আপনাদের শিক্ষকজীবনের স্বার্থকতা হয় তবে আপনারা তা যথার্থই পেরেছেন। ইউ হ্যাভ মেড ইট ‘স্যার’।

আচ্ছা, স্মৃতিটাকে মাঝেমধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাচাই করতে চেষ্টা করছি কি হচ্ছিলো দিনগুলো। কেন হচ্ছিলো। শারীরিক অত্যাচারের মধ্যে নির্মমতর অত্যাচারগুলো কি পুরুষ শিক্ষকদের কাছ থেকে আসে? হয়ত। আমার অভিজ্ঞতা তো তেমনটার পক্ষেই কথা বলে। হয়ত অন্যদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। শিক্ষিকাদের মনে কি তবে আমাদের জন্য সফট কর্ণার থাকে? তাও তো মনে হয়না। শারিরীক শাস্তি দেবার ক্ষেত্রে খুব পিছিয়ে নেই তাঁরাও, পুরুষ কাউন্টারপার্টদের সাথে তাদের কেউ কেউ ভালোই প্রতিদ্বন্দিতা করেন। আর যতটুকু পিছিয়ে আছেন, তা তারা পুষিয়ে দেন তাদের কন্ঠ দিয়ে এ দিকটাতে তারা কেন যেন একটু বেশি পটু। মনটা কি তারা তবে বেশি ভালো পড়তে পারেন! অনেকে মনে হয় বুঝতে পারেন কিভাবে কাজ করে মানসিক নির্যাতনের শিল্পটা। যা ক্ষরণ ঘটে সব ভিতরে ভিতরে। ওটায় বেত বা স্কেল হাতে করে বয়ে নিয়ে আসতে হয়না, চামড়ায় দাগ কাটে না, কেউ দেখতে পায়না, বাচ্চারা মানসিক নির্যাতন কি তা বলতেও পারে না কিন্তু তিলে তিলে ঠিকই খায়। শরীরে আগুন লাগলে ত্বক, মাংস পুড়ে, মনে আঘাতে মন পুড়ে। কিন্তু সহ্য করা যায়না কোনটাই। একটা সহ্য করার সময় অন্যটাকে শ্রেয়তর মনে হয়। কোনটাকে তাহলে পিছিয়ে রাখি? আমাদের ঐতিহ্যবাহী মহিলারা দুজন এক হলে ঘরকন্নার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না, ধর্ম মানে কিন্তু গীবত করার লোভ সামলাতে পারে না। আমি যাদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি তাদের প্রায়ই একই অবস্থা। পরীক্ষার হলে পর্যন্ত দুজন একত্র হলেও ঘরকন্না আর পরনিন্দা। এরমধ্যে এসব তাত্ত্বিক আলোচনা শুনতে শুনতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থা টালমাটাল। অবশ্য খাতা দেখাদেখি করার অপেক্ষায় থাকে যারা তাদের জন্য এমন জুটি তো পোয়াবারো একেবারে। আমি নিজেও যদ্দূর মনে করতে পারি সে সুযোগ নিয়েছি।

আমরা দেখি ক্লাসে মারতে, করিডরে মারতে, খোলা মাঠে সূর্যের নিচে টেনে নিয়ে মারতে, কারো কারো মারধরে আবার সৃজনশীল ধরন আছে। তারা ছাত্রকে দিয়ে ছাত্রকে মারেন। হয়ত দেখাগেলো পড়াশুনায় ভালো কোন ছাত্রের হাতে তুলে দিলেন পিছিয়ে থাকা অমনোযোগীদের শাসনের দায়িত্ব। তাও একই ক্লাসে। ফলাফল হিসেবে কচি মনে যে বিদ্বেষের সৃষ্টি হবার বিপুল সম্ভাবনা থাকে তা তারা দেখবেন কেন! মারধরের এক বিচিত্র আয়োজন। বিচিত্র মজা। আয়োজক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।
‘এই কানে ধরো’, ‘ক্লাসের সামনে গিয়ে নেল্টডাউন হয়ে থাকো’, ‘বারান্দায় গিয়ে কানে ধরে নেল্টডাউন হও’- অপমান করার কত বিচিত্র টেকনিক। কারো ব্যক্তিত্ব, আত্নসম্মানবোধ, শির সোজা করে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ধ্বংস করে দেবার কার্যকর একটা উপায় কুড়িতেই তাকে মুড়িয়ে দেয়া। অবাক হবার তেমন কিছু নেই কারণ আমাদের এখানে বাসর রাতে বেড়াল মারার মত অসুস্থ গল্পগুলো খুব প্রচলিত। কুড়িতেই মুড়িয়ে দেবার এ ব্যাপারটা শিশুদের উপর শ’ শ’ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন আমাদের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে শারিরীক আর মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে। এটা একটা ঐতিহ্য, যার শিকার তাঁরা নিজেরাও। তাঁরা যখন করিডর ধরে হাঁটতেন আমরা তখন সে করিডরে পা ফেলতাম না। অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতাম।

আমার তাঁদেরকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, “ম্যাডাম, স্যার, এমন সম্মানের বৃত্তই কি আপনারা তৈরী করে নিতে চান ছাত্রদের কাছ থেকে? আচ্ছা, আপনারা কি এটাকে আদর্শ শিক্ষকের প্রকাশ ভাবেন? এটা উপভোগ করেন? আপনারা কি আমাদের মতই দম বন্ধ আতঙ্কের মাঝে বড় হয়েছিলেন? সত্যি করে বলুনতো, সে পরিবেশটাই কি আপনাদের কাছে একমাত্র আদর্শ হয়ে মনে গেঁথে গেছে? আচ্ছা, পড়ানোর নামে আপনারা ছেলেবেলার আপনাদের মনে দেহে বয়ে থাকা আতঙ্কগুলোর শোধ তুলছেন নাতো আমাদের উপর? আমাদেরকে আপনাদের অতীতের জ্বালা মেটানোর মাধ্যম মনে করেন না তো!
আচ্ছা, আপানারা কি ‘তারে জামিন পার’ বা ‘মোনালিসা স্মাইল’এর মত সিনেমাগুলো দেখেছিলেন? ওগুলো দেখে কি আপনারা নিজেদের কখনো প্রশ্ন করেছিলেন? মনের মধ্যে কি একটুও হাহাকার করে ওঠেনা, “আমিও তো ওমন শিক্ষক হতে পারতাম। বাচ্চাগুলোর সাথে আমার সম্পর্ক ভয়ে হত না, হতো ভালোবাসার, মমতার।” আচ্ছা, আপনারা কি শিক্ষকতাকে ভালোবাসেন? নাকি ইন্টারভ্যুতে অন্য কোথাও এলাওড না হয়ে ঘুরে ফিরে আমাদের স্কুলে আসেন?”

ফলাফলটা কই?
স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজ। হাজার হোক, দশ বছর মানে পুরো এক দশক কামারশালার ‘পিটিয়ে মানুষ বানানো’র কর্মশালায় ছিলাম। ভাবলাম এই পর্যায়ে এসে বোধকরি সব মানুষের দেখা পাবো। হিউম্যান তো খুব সাধারণ, যাদের পিটাপিটি ভালোমত হয়েছে তারা বোধকরি সুপারম্যান টাইপের কিছুও হয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, সুপারম্যানই তৈরী হয়েছে বটে। তারা এখন সুপার ডুপার ঘটনার জন্ম দেয়। তাই টক অব দা ক্যাম্পাসে খবর পাওয়া যায় আজ কিছু পাশ করা সিনিয়র ওমুক স্যারকে তাঁর এলাকায় থাবড়িয়েছে। ওই এলাকায় তমুক স্যার কলেজ ছেড়েই বাসাও বদলে ফেলেছেন, ছাত্ররা বুঝি এবার ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারকে পেয়ে শোধ তুলবে এই ভেবে।আগে জানতাম শুধু শিক্ষকই ছাত্র পেটান, এখানে এসে জানলাম মাঝেমধ্যে ছাত্ররাও পেটায়। ভার্সিটিতে এসে পরিসর হঠাত করে বড় হল। জানলাম গুরুমারার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। দেখলাম সেই অভিজ্ঞতা জাহির করার মাঝে তারা একটা আনন্দও পায়, বিশাল কৃতিত্বের সাথে তারা সেইসব ঘটনাবহুল দিনগুলোর গল্প করে। কথা বলে জানা গেল কামারশালায় এরাই সবচেয়ে বেশি পিটিয়ে মানুষ করার প্রকৃয়ায় প্রকৃয়াজাত হয়েছে। উন্নতিই বটে।

.......................................

সচেতনভাবেই আমি আমার স্কুলের যে ব্যাপারগুলো পছন্দ করি তা নিয়ে লিখতে বসিনি। পছন্দের অভিজ্ঞতা স্কুল জীবনে নেই তা নয়। সেগুলোর ব্যাপারে বলবো- “ওকে”।
তাইবলে শৈশব কৈশরের স্পর্শকাতর সময়ে যেসব ব্যাধি বছরের পর বছর আমাদের, আমাদের অনুজদের তিলে তিলে রুদ্ধশ্বাস যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে ক্ষমা করার মত মহানুভব আমি হবার কোন কারণ দেখিনা। ওহ ভালো কথা, রবীর দু’টো লাইন মাথায় এসে গেল-

“ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা
হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।“

আমরা শিশুগুলোকে স্কুলে পাঠাই। তারা সেখানে প্রতিদিন এমন মধ্যযূগীয় বর্বরতার শিকার হচ্ছে নাতো? তারা তো আমাদেরকে বলতেও পারে না। ভয়ে ভয়ে নিজের ভিতরেই রেখে দেয় সবকিছু, সব মানসিক শারিরীক নির্যাতন। পাছে বাবা মা না আবার ওদের পড়া না পারার অপরাধ জেনে ফেলে! তখন তো আবার ঘরেও শাস্তি পেতে হবে। আপনার শিশুটাই হয়ত আপনার ঘরেও নিরাপদ বোধ করে না। কই যাবে ওরা?

হাজারটা সমস্যা আমাদের। দুষ্টচক্রের বেড়ে আমরা বন্দি। স্বপ্ন দেখি একটা প্রজন্ম তৈরী হবে যারা এ শিকলটা ছিড়তে পারবে। আর সেটা নতুন প্রজন্মই হোক। সেটা এ কারণেই যে এরা নতুন। জরজর অশীতিপর বৃদ্ধকে আমরা নজরুলের গান শোনাবো আর তিনি সাথে সাথে এত বছরের আগলে রাখা সব সংস্কার কুসংস্কার হেলায় ঝেড়ে ফেলে ধেই ধেই নাচতে শুরু করবেন তেমন আশা আমি ঠিক করতে পারিনা। তারচেয়ে আমি বরং নতুনদের নিয়ে বাজি ধরবো।
আমি আমার শিক্ষকদের অপমানিত হতে দেখতে চাইনা। তারচেয়েও বেশি চাইনা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শাসনের নামে অত্যাচারিত হোক, মানসিক বিকাশ শিক্ষার নামে প্রতিবন্ধীতায় রূপ নিক। নবীণরা ফুলের মত। সামান্য আঁচড়ই স্থায়ী ক্ষত তৈরীর জন্য যথেষ্ঠ। জীবনের ভিত্তি গড়ে নেবার মত মুহুর্তগুলোর এমন অপচয় আর অনাচার দেখার বা সহ্য করার মত বিলাস আমার নেই। দুঃখিতও বলবো না এজন্য। কারণ আমার কথার কাঁটা ঠিক তাদেরকেই আঘাত করবে যারা এ কাঁটার যোগ্য।

(এই লিখাটা যখন শেষ করে আনছি তখন ফেসবুকে একটা খবর পেলাম।

মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে টিভি দেখার দায়ে পাবনা সদর উপজেলায় আতাইকুলা থানার চড়াডাংগী হাফিজিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রকে শাস্তি হিসেবে ২৫৬ বার বেত্রাঘাত করেছেন তারেক শিক্ষক। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানায়, বেত্রাঘাতের এক পর্যায়ে মোফাজ্জল প্রস্রাব করাসহ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর পরেও মাওলানা আবুল হাসান তার শরীরের উপর গুণে গুণে ২৫৬ বার বেত্রাঘাতের রায় কার্যকর করেন।

একে তো মাদ্রাসার ব্যাপারে আমার সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই, আর তাছাড়া মাদ্রাসাকে আমি মধ্যযুগীয় কারাগারের চেয়ে খুব বেশি কিছু বলে মনে করিনা। শুধু উল্লেখ করে রাখলাম, কারণ আমাদের অনেকের চোখে এগুলোও নাকি শিক্ষালয়।)

-আমিনুল করিম মাসুম
স্থাপত্য, শাবিপ্রবি।


মন্তব্য

এক জোনাকি এর ছবি

দারুণ একটা লেখা। খুব খুব ভাল লাগলো।

আমার অভিজ্ঞতা বলে প্রাইমারী ক্লাসের শিক্ষকরাই বেশি রুঢ় হন, শিশুকালে তাঁদের নিষ্ঠুরতা দেখে চমকে গেছি হয়েছে বহুবার। পরবর্তী পর্যায়ে বরং কিছু শিক্ষক পেয়েছি যারা অনেক বেশি শিক্ষকসুলভ ছিলেন। জীবনে একসময় লক্ষ্য ছিল একদম ছোট্ট শিশুদের পড়াব, আদর ভালবাসা দিয়ে বন্ধুর মতো; ঠিক নিজে যেমনটা চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। লক্ষ্যটা পাল্টে গেছে অনেকআগে, কিন্তু ছোট শিশুগুলোর অপমান নির্যাতনের এই সময়টা খুব ভাবায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সচলায়তনে আমার প্রথম কমেন্টকারীকে।
<<জীবনে একসময় লক্ষ্য ছিল একদম ছোট্ট শিশুদের পড়াব, আদর ভালবাসা দিয়ে বন্ধুর মতো>> আমি এখনো মাঝে মধ্যে তেমন স্বপ্নই দেখি।

-আমিনুল করিম মাসুম

MOULIK এর ছবি

Worth Reading.........

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

ভাল লেখা। শিশুদের নিয়ে কাজ করি, যা দেখলাম, শিখলাম তাতে শুধু একটা জিনিস-ই বলতে পারি, কোন স্টপেজ নেই। সিস্টেমটাই সমস্যাজনক, শিক্ষাব্যবস্থা’র ব্যবস্থাগুলোই উল্টোপথে হাঁটছে।

আপনার কাছ থেকে আরো লেখা চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

<<সিস্টেমটাই সমস্যাজনক, শিক্ষাব্যবস্থা’র ব্যবস্থাগুলোই উল্টোপথে হাঁটছে।>>
আমারও তাই মনে হয়। অভিজ্ঞতা থেকে যদ্দূর পারি লিখার ইচ্ছে আছে। সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

-আমিনুল করিম মাসুম

তিথীডোর এর ছবি

সবচেয়ে মেধাবী আর সবচেয়ে সহনশীল মন এবং মানসিকতার লোকজনের আসা উচিত শিক্ষকতায়, বিশেষ করে ইশকুল লেভেলে।

একটা ছোট্ট বাচ্চাকে শারিরীক কোন ত্রুটি নিয়ে কর্দয খোঁচা দিলে তার মনের ওপর যে প্রভাব পড়ে, সেটা বোঝার মতো বোধের পরিচয় অনেক বাংলা/ ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণেই খুঁজে পাইনি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আবছায়া এর ছবি

চলুক কিন্তু এই বেতন কাঠামো নিয়ে আসলেই কি কেউ আসতে চাবে, যার অন্য ভাল সুযোগ আছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আবছায়া ভাই, আমার পরিবারে দুজন প্রাইমারী আর হাইস্কুল লেভেলে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন। সে অভিজ্ঞতায় বলতে পারি এ বেতন কাঠামোটা দিয়ে চলা সহজ নয় মধ্যবিত্তদের জন্য।

আমিনুল করিম মাসুম

অতিথি লেখক এর ছবি

<<সবচেয়ে মেধাবী আর সবচেয়ে সহনশীল মন এবং মানসিকতার লোকজনের আসা উচিত শিক্ষকতায়, বিশেষ করে ইশকুল লেভেলে।>>
সুযোগসুবিধার অভাব, পুরাতন ঐতিহ্য, পেশার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সহ নানা কারণেই মনে হয় তা হয়ে ওঠে না।
হ্যাঁ, কদর্য খোঁচা কোন পর্যায়েই গ্রহণযোগ্য নয় কোনভাবেই। আমরা অবশ্য খোঁচার উপরে বা মারের উপরেই থাকি। ক্ষতি বোঝার সেন্স থাকবে কিভাবে- তাঁরা নিজেরাও যে বাজে পরিবেশে বাজে শিক্ষকতার মাঝে বড় হন। নতুন করে ভাবার সময়।

-আমিনুল করিম মাসুম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কথাটা কে কীভাবে নেবেন জানি না, তবুও বলি। পড়া না পারুক বা ক্লাসে দুষ্টামী করুক বা মারামারি করুক - এর কোন কিছুর জন্যই কোন পর্যায়ের কোন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে (যে বয়সেরই হোক) শারিরীক শাস্তি দেবার অধিকারী হয় না। এ'দেশে শারিরীক শাস্তি দেবার একমাত্র অধিকারী আদালত - তাও আবার অপরাধ প্রমাণ করা ও বিচার করা সাপেক্ষে; এবং সেই শাস্তি কার্যকর করার অধিকারী কেবলমাত্র পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু সেখানেও বেত্রাঘাত, ডাস্টার দিয়ে পেটানো, চপেটাঘাত, চুল উপড়ে ফেলা, কান টানা, হাঁটু গেঁড়ে বা মাথা কুঁজো করে বসিয়ে রাখা, একপায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা, কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, কপালে পয়সা দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে রাখা এমনসব অভিনব-বীভৎস-অমানবিক শাস্তি দেবার বিধান নেই। এ'দেশে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের যে শারিরীক শাস্তি দেয় তা সোজা বাংলায় ফৌজদারী অপরাধ। এই অপরাধের জন্য কিছু মামলা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। নয়তো হাজার বছর ধরে চলে আসা এই কুখ্যাত-পাশবিক ঐতিহ্যটি নির্মূল হবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পান্ডব ভাই।স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি আপনার কথাগুলো। অন্যভাবে নেবার কোন কারণ নেই।
কপালে পয়সা দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে রাখা র শাস্তিটা আজ জানলাম। যে ব্যক্তি এটা প্রচলন করেছে সে অমানবিক ও বীভৎস রকমের ক্রিয়েটিভ। শিক্ষক বললাম না তাকে।

-আমিনুল করিম মাসুম

অতিথি লেখক এর ছবি

শারীরিক শাস্তি শুধু শরীরেই নয়, মনেও আঘাত দেয়, এবং সে আঘাত কোমলমতিদের মনে বেশীই লাগে। আমাদের আদরের শিশুদেরকে কি আমরা কিছু দানবের দয়ার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি? ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভালোবাসা, মমতার বদলে ভয় দিয়ে শেখানোর পদ্ধতি নিতান্তই পাশবিক, প্রাগৈতিহাসিক এবং অসমর্থনযোগ্য।

পাশাপাশি এটাও সত্য যে বর্তমান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকরা আর কোন ক্ষেত্রে সুযোগ না পেয়ে হাতের পাঁচ হিসেবে স্কুলে যোগ দেন (অন্তত ডজনখানেক উদাহরণ আমি নিজে দেখেছি)। বেতন কাঠামো এবং সুযোগ সুবিধার অভাব একটা বড় নিয়ামক এ ক্ষেত্রে। ভালো সুযোগ না দিলে যোগ্য ছেলে/মেয়েরা এ পেশায় আসবে কেন?

আরো একটা কথা উল্লেখ করতে চাই - ভালো ছাত্র মানেই ভালো শিক্ষক কিন্তু নয়। শিক্ষকতা করার জন্য আলাদা গুনাবলীর প্রয়োজন - এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণও একটা জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কিন্তু যাঁদের হাতে এগুলি নির্ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা এ নিয়ে কতখানি ভাবেন? আমার পরিচিত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আছেন তিন চার জন, তাঁদেরকে দেখি প্রমোশন আর ভালো জায়গায় ট্রান্সফার নিয়েই ব্যস্ত - আর উপরির চিন্তা তো
আছেই।
-অয়ন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অয়ন ভাই সত্যি ব্যাপারগুলো গুছিয়ে বলার জন্য।
দেখে ভালো লাগে, আমাদের চারপাশে নতুনরা এ ব্যাপারগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবছে। তবে আমার ধারনা আমরা সবাই কিছু দুষ্টচক্রের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ি প্রায়ই। যেমন ধরুন, আমি ভালো পরিবেশে বড় হলাম না ভালো শিক্ষক পেলাম না। হয়ত দেখা গেল তার ফলশ্রুতিতে আমি ভালো শিক্ষকতা কি তাই জানলাম না, কারণ আমার সে অভিজ্ঞতাই নেই। ফল দাঁড়ালো আমিও বাজে ব্যবহার করছি।

আচ্ছা, এখন ধরলাম আমি জানি ওগুলো বাজে শিক্ষকতা। এটা পড়ানোর নিয়ম না। আমি যদি চাই বাজে ব্যবহার না করতে, এবং ব্যাপারটা যে খারাপ তা যদি অনুভবও করি তারপরও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে আস্তে আস্তে বাজে পরিবেশ থাকতে থাকতে আমারও মন মেজাজ সহজেই বিগড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও আমি দুষ্টচক্রের শিকার হচ্ছি। বেরিয়ে আসা হচ্ছে না। আর দুষ্টচক্রের মধ্যে বন্দি থাকতে আমাদের পরিবেশ, সিনিয়র, ও অন্য শিক্ষকরাও অনুপ্রাণিত করেন।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আমি মোট ছয়টি স্কুলে পড়েছি। স্কুল জীবনের কয়েকটি শাস্তির ঘটনা কখনো ভুলব না।
ক্লাস থ্রিতে সদরঘাট স্কুলে এক ম্যাডাম (নাম মনে নাই) কোন এক কারণে বকা দিতে গিয়ে আমার শারীরিক গড়ন নিয়ে 'গোশতের দলা' বলে গালি দিয়েছিলেন।
ক্লাস ফাইভে পিটিআই স্কুলে নাসরিন ম্যাডাম একবার 'কুমড়াচেঙি' শাস্তি দিয়েছিল, প্রায় এক সপ্তাহ ঠিক মত হাঁটতে পারিনি আর নজরুল স্যার আমার পশ্চাদদেশে সপ্তাহে দু'তিনবার বেত্রাঘাত না করলে মনে হয় শান্তি পেতেন না।
ক্লাস সেভেনে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে জেবুন্নেসা ম্যাডাম টিফিন বেশি খাওয়ায় মেরে আমার চশমা ভেঙে দিয়েছিলেন, পিঠে আঘাতের সরু কালো দাগ এখনো আছে। মন খারাপ

শিক্ষকদের মাঝে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ণ করার প্রবণতাও মারাত্মক।
ছোট বেলায় (আমি তখন হারমেনমেইনারে ক্লাস টুতে পড়ি) এক হুজুর আরবী পড়াতে আসতো। একদিন আমার বড় ভাইকে মেরে মুখ ফাটিয়ে দেয়, আম্মা না আসলে ভাইয়াকে হয়ত উনি আধ-মরা করে ফেলতেন।
আরেক হুজুর আমাকে কোলে বসিয়ে উনার দন্ড দিয়ে চাপ দিতেন। আমি এসব বুঝতাম না (ক্লাস টুতে পড়ি)। দু-তিন দিন এরকম করার পর আম্মাকে বিষয়টি বললে, উনি হুজুরকে আসতে মারা করে দেন। বড় হবার পর আমার সাথে হুজুরটা কি করেছিল বুঝতে পারি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, কুত্তার বাচ্চাটাকে খুঁজে বের করে খোঁজা করে দেই।

স্কুল-কলেজে বিশেষ শিশু-কিশোর নিরাপত্তা সেল গঠন করা যেতে পারে, যাতে ভিক্টিমরা এইসব ব্যাপার শেয়ার করতে পারে, প্রতিকার চাইতে পারে। বিশেষ আইন প্রণয়ন করতে হবে, এর প্রয়োগের দায়িত্ব থাকবে ওই সেলের হাতে।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ 'সবুজ পাহাড়ের রাজা'।
বিশেষ ধন্যবাদ খুলাখুলি বলার জন্য ও নাম প্রকাশ করার জন্য। নামগুলো মনে হয় এরকম প্রকাশ করাই উচিত। আমরা প্রকাশ করিনা তাই তারাও সুযোগ পেয়ে যান চালিয়ে যাবার। প্রকাশ করলে সে সাহস কম করতেন তারা।
আমি পোস্টে যাদের কথা উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে শুধু একজনের নাম মনে আছে। ইডিট করার সময় কিভাবে বাদ দিয়ে দিলাম বা কেন উল্লেখ করলাম না মনে করতে পারছি না। বাকিদের নাম চেষ্টা করেও মনে আসছে না।
যাই হোক, হাইস্কুলে যে স্যারের কথা বললাম, উনি সিলেটের 'নামকরা' ব্লু-বার্ড হাইস্কুলের 'শ্রদ্ধেয়' ইংরেজী শিক্ষক শাহীন স্যার।
বাকিদের নাম মনে করতে পারলে যোগ করে দেবো।

কালামিয়া এর ছবি

উত্তম জাঝা!
সময় উপযোগী লেখা। বানান ও যতি চিহ্নের ব্যবহার আরেকটু ভাল করা যেত।

কালামিয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কালা ভাই। হ্যাঁ, বানান যতি চিহ্নের ব্যাপারগুলোতে বেশ দুর্বলতা আছে। কাজ করতে হবে।

রাগিব এর ছবি

কী আর বলবো, পরশুদিন রেডিওতে NPR শুনিছিলাম, এক অনুষ্ঠানে শুনলাম আমেরিকার ১৯টি অঙ্গরাজ্যে স্কুলে ছাত্রপেটানো রীতিমতো আইনসিদ্ধ!! ছাত্র পেটানোর জন্য ক্রিকেট ব্যাট সাইজের কাঠের তক্তা (paddle) ব্যবহার করা হয়, এক স্কুলে আবার ফাইবারগ্লাসের প্যাডল আছে (যেটা কিছুদিন পর পরই পিটাতে গিয়ে ভেঙে যায় বলে শিক্ষক সগর্বে জানালেন)!!

বাংলাদেশে স্কুলের এই পারভার্ট টিচারদের সম্পর্কে আমার একটা হাইপোথিসিস আছে, সেটা হলো, এরা প্রাইমারি স্কুলের অল্প বেতনের চাকুরিতে আটকে গিয়ে চাপা অবদমিত ক্ষোভে ভুগে, তার শোধ তুলে মেরে। আমার স্কুলের এক নতুন স্যার প্রথম দিন ক্লাসে এসে বলেছিলেন, এসেসসিতে মাত্র ৩ নম্বর কম পেয়ে তিনি ২য় না ৩য় বিভাগ কোনটা জানি পেয়েছিলেন। "আর মাত্র ৩টা নম্বর বেশি পেলেই আর আমাকে এখানে আসতে হতোনা", এটা ছিলো উনার হুবুহু উক্তি। এহেন শিক্ষকেরা পিটানোতে উৎসাহী থাকবে তা বলাই বাহুল্য।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রাগিব ভাই।
আমেরিকার ব্যাপারটা শুনে রীতিমত অবাক হলাম। এমনটা আমার ধারনায় ছিল না।

আসলেই অল্প বেতনের। এমনকি যদ্দূর জানি হাইস্কুলেও। এ আরেক কারণে হয়ত তারা এ পেশাটার গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। পাশাপাশি নিজেদের অতীতের বাজে অভিজ্ঞতা বা সে পুরাতন অভিজ্ঞতাকেই একমাত্র শিক্ষাদানের উপায় বলে মেনে নেয়া, পারিপার্শ্বিক এ ব্যাপারগুলোও মাথায় আসছে।

সিলেটের যে স্কুলটাকে মানে দামে ভালো বলে মেনে নেয়া হয় সেখানেও দেখলাম শিক্ষক আসেন, কিছুদিন পর অভিজ্ঞতা হলে প্রায়ই অন্য কোথাও জব নিয়ে চলে যান। বাস্তবে দেখাগেল তাই শিক্ষকতা একটা নিম্নমানের অপশন।

অনিন্দ্য এর ছবি

আমেরিকার ১৯টি অঙ্গরাজ্যে স্কুলে ছাত্রপেটানো আইনসিদ্ধ হয়ে গেল কি করে? এটা নিয়ে আমেরিকার হাইকোর্ট কি বলে? কেউ মামলা করেন নি? বাংলাদেশে না হয় বেতন কম দেয়া হয়, কিন্তু আমেরিকায় তো তা নয়। সেখানে শিক্ষকেরা পিটানোতে এতো উৎসাহী হলেন কি করে যে একেবারে ক্রিকেট ব্যাট সাইজের কাঠের তক্তা দিয়ে পেটানো হয়?

রাগিব এর ছবি

মানে আমেরিকার ১৯টি অঙ্গরাজ্যে স্কুলের শিক্ষকেরা ছাত্রদের পিটালে সেটা আইনসিদ্ধ শাসনের আওয়তায় পড়ে, আইনে এটাই আছে। বাকিগুলাতেও ছিলো, আস্তে আস্তে বাদ গেছে, কিন্তু এখনো ১৯টাতে ছাত্র মারা জায়েজ এরকম আইন আছে।

বিস্তারিত সাম্প্রতিক এই রিপোর্টে দেখতে পারেন। http://abcnews.go.com/US/spanking-school-19-states-corporal-punishment-legal/story?id=15932135#.UFgadaTKjx4

States That Allow Spanking (Source: Center for Effective Discipline)

Alabama Arizona Arkansas Colorado Florida Georgia Idaho Indiana Kansas Kentucky Louisiana Mississippi Missouri North Carolina Oklahoma South Carolina Tennessee Texas Wyoming

এর মধ্যে ফ্লরিডার কথা এই রিপোর্টে এসেছে। ওখানে বিশেষ করে গ্রাম্য এলাকাগুলাতে মারধোর করে মানুষ করার রীতি চালু। স্কুলে পিটানোর দরকার হলে অনেক সময় প্রিন্সিপাল বাপ-মাকে ফোন করে বলে আপনি পিটাবেন এসে নাকি আমিই পিটাবো। এবং অনেক ক্ষেত্রে নাকি বাপ মা আগ্রহের সাথে স্কুলে এসে পিটিয়ে যায়। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

এর বিরুদ্ধে আইন করতে গেলে দেখা যায়, স্টেইটের সিনেটে নানা মারপ্যাঁচে ঐ আইন আর ভোটের মুখ দেখে না।

ছাত্র পিটানোর কাজে ব্যবহৃত একটি তক্তার নমুনা দেখুন।

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এমন অবস্থা। কিভাবে চলছে এসব জানতে ইচ্ছে হয়। ওসব রাজ্যের মানুষগুলোই বা কেমন। মৌলবাদী কিনা, কতটুকু আধুনিক জানতে হবে।

এর বিরুদ্ধে আইন করতে গেলে দেখা যায়, স্টেইটের সিনেটে নানা মারপ্যাঁচে ঐ আইন আর ভোটের মুখ দেখে না।

সিনেটই বা কেমন!

অতিথি লেখক এর ছবি

নস্টালজিক হয়ে গেলাম। এরকম একাধিক ভয়ংকর পাশবিকতার অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাদের যেতে হয়, তাদের সকলের কম বেশি আছে। কখনো নিজের, কখনো প্রিয় বন্ধু, কখনো বা বেঞ্চে বসা পাশের মেয়েটির সাথে হর হামেশাই এগুলো ঘটতে দেখে আমিও স্কুল পার করেছি। আসলে যে স্মৃতি আমাদের কষ্ট দেয় সেগুলো থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই, তাই অল্প কিছু আনন্দের স্মৃতি ঘেটেই বেশির ভাগ সময় স্কুল জীবনটা স্মরণ করার চেষ্টা করি।

শুধুমাত্র মেধাবিচারে বৈষম্যের মানসিকতা যে আমাদের স্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় কচি মনের মধ্যে প্রথমেই ঢুকিয়ে দেয়া হয় সেটা আমার কাছে সবচেয়ে জঘন্য মনে হয়। সমবয়সী কাউকে যখন দেখতাম ম্যাডামদের প্রিয় হবার লোভে তাদের চামচামী করত, ক্লাস-ক্যাপ্টেনরা এর ওর নাম টুকে রাখত ক্লাস না চলা অবস্থায় কথা বলার অপরাধে আবার সেই লিস্ট দেখে নিয়মিত শাস্তির ব্যবস্থাও ছিলো। এই যে একই বয়সি হয়েও একজনের দ্বারা অন্যদের ডমিনেট করানোর প্রবণতা এবং যাকে দিয়ে এটা করানো হচ্ছে সে নিজেও একজন শিশু, সেদিক থেকে তাকেও বঞ্চিত করা, কারণ সে জানেই না অন্যদের যে বিষয়গুলো সে নজরদারি করছে সেগুলো কোন অপরাধ নয় বরং খুবই স্বাভাবিক শিশুসুলভ আচরণ। তারও অন্যদের সাথে এগুলোই করার কথা, ইঁচড়েপাকামি নয়।

মনে পড়ে এক খবিশ, জাঁদরেল কুলসুম আপাকে নিয়ে আমার বড়বোন - সে আমার থেকে পাঁচ ক্লাস উপরে ছিলো - তার পাঠ্যবই এর কোনো এক কবিতার অনুকরণে (সম্ভবত আসল কবিতাটা নাম 'খেলোয়াড়') একটা কবিতা লিখেছিলো। পরে আমরাও প্রায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে এটা পড়তাম, কারন কুলসুম আপার জাঁদরেলমির শিকার

আমরাও হয়েছিলাম -

"আমাদের ইশকুলে একজন আপা আছে হায়,
ইশকুল যদি কাঁপে মনে করে সেই আপা যায়;
আপার গঠন যেন ছোট খাটো দৈত্য,
শরীরে তার হাড় নেই শুধু আছে গোস্ত;
আপা তার মুখখানি করে রাখে গুম,
চিনতে কি পারোনি তারে, তিনি হলেন আপা কুলসুম"

তবে শুধু স্কুলেই নয় বাচ্চাদের অহেতুক শাসনের মানসিকতা আমাদের দেশের এমনকি এখনকার দিনের বাবা-মাদের মধ্যেও দেখি। তাদের মতে 'বাচ্চাদের না মারলে তারা মানুষ হয়না'! তুচ্ছ কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক বাবা মাকেই তাদের সন্তানদের সাথে যে ব্যবহার করতে দেখি, তা আমার পক্ষেই হজম করা কষ্টকর হয়, তাহলে তা কচি মনের উপর কেমন প্রভাব ফেলে! শিশুদের সূক্ষ অনুভূতিগুলো যা তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে হয়ত অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারত তা কিছু অদক্ষ, অনুভূতিহীন, বেশিবোঝা গোঁয়ারটাইপ শিক্ষক বা অভিভাবকের কারণে কোথায় কখন ঝরে পড়ে হারিয়ে যায়, তার খবর কেউ রাখেনা!

অনেক বড় একটা কমেন্ট হয়ে গেলো। শেষ করি পিংক ফ্লয়েডের অত্যন্ত প্রিয় একটা গান দিয়ে -

http://www.youtube.com/watch?v=YR5ApYxkU-U

........
রংতুলি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রংতুলি। এখানেও একই অবস্থা। অল্প কিছু সুন্দর মুহুর্ত নিয়ে সময় কাটে।

বৈষম্য খবরদারি সহ অন্যান্য যে অপ্রিয় বিষয়গুলো ঠিক শারিরীকভাবে নয় তবে মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে সেগুলো নিয়ে একটা লেখা তৈরীর ইচ্ছে আছে। আপনাদের সুন্দর কমেন্টগুলো থেকে ভালো কিছু ক্লু পেয়ে গেলাম। কাজে লাগবে।

ছড়াটা যে তৈরী হয়েছে তাঁকে বলবেন মারাত্নক হয়েছে হাসি

পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানের ব্যাপারে আপনার সাথে আমার পছন্দ মিলে গেল। অবশ্য না মিলে যাবার ব্যাপারটাই বেশি স্বাভাবিক। এরকম একটা কথা বলা হয়ঃ Either you love Pink Floyd or you don’t understand it । সব ঠিকঠাক থাকলে সামনের পর্বে থাকছে ওটা:
No dark sarcasm in the classroom
Teachers leave them kids alone
Hey! Teachers! Leave them kids alone!

-আমিনুল করিম মাসুম।

গৌতম এর ছবি

একজন ব্যক্তির আরেক ব্যক্তির ওপর হাত তোলার কোনোই অধিকার নেই- তা সম্পর্কটা যা-ই থাকুক। সমস্যা হলো, শিশুকে আমরা আলাদা সত্ত্বা বা ব্যক্তি (person) হিসেবে দেখি না। শিক্ষকদের মাথায় এই বিষয়টি ভালো করে ঢুকিয়ে দেয়া দরকার, তিনি যেমন ব্যক্তি হিসেবে প্রধান শিক্ষককে পেটাতে পারেন না, তেমনি ব্যক্তি হিসেবে শিশুকেও মারতে পারেন না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ গৌতম ভাই। শিশুকে পার্সন হিসেবে দেখা তো দূরের কথা বড়দেরই দেখা হয়না আমাদের এখানে। শিশুও যে একটা মানুষ তা স্বীকার করতে কষ্ট হয় তাঁদের, ওটা একটা পিটানোর জিনিস। তাই লিখলাম কামারশালা। একটা কথা প্রচলিত আছে অনেকের মাঝে-

<<পিটায়া মানুষ করবেন, মাংসগুলা আপনার, বাসায় শুধু হাড়গুলো ফিরত দিলেই চলবে।>> ।

- আমিনুল করিম মাসুম।

নীলম এর ছবি

বাবারে বাবা! আমি যে স্কুলে পড়েছি সেখানে পেটানো নিষিদ্ধ ছিল। এখনতো ভাগ্যবান মনে হচ্ছে নিজেকে। এসব বিভৎসতার স্বীকার বা প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়নি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ঐ স্কুলে ভর্তি হবো তাহলে। হাসি
-আমিনুল করিম মাসুম

guest writer এর ছবি

ছাত্রদেরকে চরম শারীরিক শাস্তি দেবার কথা যদি স্কুল ভেদে তোলা হয় তাহলে প্রথমের দিকেই নাম থাকবে ঢাকার মতিঝিলের
" আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ "
এর নাম। আর সবচেয়ে ভয়াবহ যা তা হল এই স্কুলটিতে যা করা হয় তা সব কিছু করা হয় ধর্মের দোহাই দিয়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভার্সিটিতে আমার একজন ব্যাচমেট আছে। সেও মতিঝিল আইডিয়ালের। তার সাথে কথা বলে তাহলে আরো কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানা যাবে। ভালোই হল। আমার পরবর্তী লেখায় সুবিধা হবে।
ধর্মের দোহায়, ক্লাসেক্লাসে ধর্মের কথা টেনে আনা এগুলো ক্ষেত্রবিশেষে আমারও অভিজ্ঞতা হয়েছে। টিচিং প্রিচিং বান্ডল প্যাকেজ আরকি। প্রিচারদের অপছন্দ করি।

-আমিনুল করিম মাসুম

অরফিয়াস এর ছবি

আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগ করি আপনার সাথে।

তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছিলাম, একদিন পড়াতে পড়াতে অযথাই ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা হাতের ডাস্টারের নিচের কাঠের অংশটি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তখন তেমন কিছু মনে না হলেও, রাতে বাসায় খাবারের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজের মামা-মামী চিকিৎসক থাকায় বেশ দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা স্থির করা হয়েছিল আমার যতদূর মনে আছে, মাথার কোন একটা শিরাতে সামান্য রক্ত জমে গিয়েছিল। পরে চিকিৎসক নিজেই বললেন, মাথার স্পর্শকাতর অংশে একটা কলমের নিবের আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। আমাকে অন্তত ছয় মাসের বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল, বলাই বাহুল্য সেটা সম্ভব হয়নি অসুস্থ অবস্থাতেই পরীক্ষা দিতে হতো বিদ্যালয়ের। মনে আছে, একটু পড়তে বসলেই মাথা ঘুরাত তখন।

এরপরে আরও ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে একটা ভিডিও ইউটিউব এ দেখলাম। নটরডেম কলেজের বাংলার মুখতার স্যার একজন ছাত্রকে ডায়াসের টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে রেখে জুতো দিয়ে পাড়াচ্ছেন। ঘটনাটা উন্নত বিশ্বে ঘটলে হয়তো এর বিরুদ্ধে বেশ ভালো ঝামেলা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ দেখে হয়নি। কারণ আমরা লাঠি-গুতো খেয়েই বড় হয়। আমি নিজেও নটরডেম এ ছিলাম তখনও নিজের ব্যাচের একজন ছাত্রকে জুতো দিয়ে পেটাতে দেখেছি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসবই নির্যাতনের আওতায় পড়ে। এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে শাস্তি হিসেবে অপরাধ প্রমান হলে হয়তো কারাদন্ডও হতে পারে। কিন্তু এটা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তাই মাদ্রাসার ঘটনাগুলো নজরে এলেও নামি-দামি স্কুল-কলেজের প্রায় অধিকাংশ ঘটনা থাকে চোখের আড়ালে। কিন্তু এসব ঘটনা এগুলোতে কম ঘটে না। আমার ছোট বেলাতে খবরের কাগজের একটা ঘটনার কথা মনে আছে যেটাতে সারা দেশে বেশ তোলপাড় হয়েছিল। কোন একটা ক্যাডেট স্কুলে ছাত্ররা যখন মাঠ সমান করার রোলার চালাচ্ছিল তখন একজন অসুস্থ ছাত্র মাটিতে পড়ে যায়, শিক্ষকের নির্দেশে বাকি ছাত্ররা তার উপর দিয়েই রোলার চালিয়ে নেয়। এতে মাথা ফেটে ছেলেটির মগজ বের হয়ে যায় এবং সে মারা যায়। পরবর্তিতে এই ঘটনা বেশ আন্দোলন এর সৃষ্টি করে এবং যতদূর মনে আছে শিক্ষক এর শাস্তি হয়েছিল।

এই ঘটনাগুলো দেখলে এতটুকু বোঝা সম্ভব যে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মানসিকতা কি হতে পারে। প্রায়ই দেখা যায়, ছাত্ররা শিক্ষকদের মারধর করে কিংবা সামনাসামনি গালিগালাজ করে। এর পেছনের কারণ কিন্তু কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বরং বহু বছর ধরে শিক্ষকতার নামে চলে আসা এধরনের অমানবিক আচরণের প্রতি ফ্রাস্টেশন। যেটা সুযোগ পেলে একসাথে বের হয়ে আসে।

এই ঘটনাগুলোর যথাযোগ্য বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত এবং প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিক্ষকতার নামে যে বর্বরতা চালিয়ে যাওয়া হয় তার বিরুদ্ধে আসলেই পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন। নয়তো এধরনের ত্রাসের পরিবেশে বড় হয়ে একটি শিশুর মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। এর প্রভাবও পরবর্তী জীবনে থেকে যায়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অরফিয়াস ভাই। আপনাদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনে বুঝতে পারছি আমি অনেকের তুলনায় বহু ভাগ্যবাণ ছিলাম যে ওতটা বর্বরতা দেখতে হয়নি।
উপরে রাগিব ভাইয়ের কমেন্টগুলো পড়েও অবাক হলাম। ধারনা ছিল না ওমন।

কয়েকদিন আগে কোন একটা লিঙ্কে একটা খবর পড়লাম, স্কুলের স্যার ডাস্টার দিয়ে মেরে ছাত্রের কয়েকটা দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছেন। তো তারপর প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে ছাত্রদের ডেকে বলা হল, তোমরা উনাকে যে শাস্তির কথা বলবে ঐ শিক্ষককে সেরকম শাস্তিই দেয়া হবে। ছাত্ররা আর কি করবে। ছেলে মানুষ, আর তাছাড়া তারা তো আর কথার রাজনীতি, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল বুঝে না। স্বাভাবিক তারা কোন শাস্তি দাবি করেনি। মহানুভবতা দেখিয়ে গেছে। পড়ে মনে হল স্কুল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানে ব্যাপারটা। আর বড় সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে তাঁদের ইনটেনশনও থাকে সেরকম।

আপনি ক্যাডেট কলেজের যে ঘটনার কথা বললেন তা ঘটেছিলো সিলেটে আমি তখন হাইস্কুলে। কিজানি নাম ছিল ছেলেটার। মনে নেই, ইকবাল মাসুম বা শাওন কিছুএকটা মনে হয়। ছাত্রের মগজ শুনেছি স্যারের নির্দেশে বা ওনার মাধ্যমেই ফেলে দেয়া হয়েছিলো পাশের ড্রেনে।

ক্যাডেট সেমিক্যাডেট ক্যান্টনমেন্টে সাইকো কার্যকলাপের উদাহরণ এগুলো। ক্যান্টনমেন্টে পড়ার কারণে কিছু দেখেছি। ক্যাডেটে পড়লে হয়ত আরো দেখতাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা।খুব ভাল লাগলো।ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।