সাম্রাজ্যবাদী বাসনার অদৃশ্য কালিতে অঙ্কিত নাফিসের মুখাবয়ব: একটি পর্যালোচনা (প্রথম অংশ)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৬/১০/২০১২ - ৫:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে হামলা পরিকল্পনার জন্য এফবিআই দ্বারা প্ররোচিত হওয়ার পর গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশী নাগরিক রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে নিয়ে এদেশে আলোচনা-জল্পনা-কল্পনার অভাব নেই। বিভিন্ন মহল নিজস্ব অবস্থান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে অবলোকন ও পর্যালোচনা করার প্রচেষ্টায় তৎপর রয়েছেন। যারা নিজেদেরকে সেকুলার মুক্তমনা বলে প্রকাশ করতে সর্বদা আগ্রহশীল থাকেন তারা এই মুহূর্তে মেতে উঠেছেন ইসলামী মৌলবাদ কতোটা খারাপ জিনিস, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির জন্য কতোটা ভয়াবহ ও বিনাশী ব্যাপার- এটা প্রমাণের জন্য। তাদের ভাষ্যমতে এই ধরনের মৌলবাদী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা হচ্ছে নিতান্তই স্বাধীন অভিব্যক্তি। অথবা সমাজের অভ্যন্তরে পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ইত্যাদি বিরাজমান থাকলে তার অনিবার্য প্রতিফল হিসেবে মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের ভিত্তি সেখানে গড়ে ওঠে। কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়; বরং এটা মোটামুটি সর্বাংশে সত্য ও স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু মুক্তমনাদের বিশ্লেষণে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার ভিত্তি হিসেবে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার এবং সাংস্কৃতিক অন্ধত্বের উল্লেখ থাকলেও এর থেকে আরেকটু পেছনে গিয়ে বিষয়টিকে আরো বিস্তৃতভাবে দেখার সুযোগ কিংবা আগ্রহ কোনোটাই তাদের নেই। পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ এবং কার্য-কারণ সম্পর্কের সূত্রায়নের কোনো প্রয়োজনও নেই। ঘটনার মূল হিসেবে যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে চিহ্নিত করা গেছে তখন তাদের আর কিছু পাওয়ার চাহিদা থাকে না। তাদের মতে, সমাজে, রাষ্ট্রে এবং বৈশ্বিক পরিসরে ধর্মীয় হানাহানি, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে যা কিছু পরিলক্ষিত হয় তার মূলগত এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে ধর্ম। এর পেছনে পর্দার অন্তরালে যে আরো নিগূঢ় অভিসন্ধি কার্যকর থাকতে পারে এটা তারা মনে করেন না।

আবার যারা সমাজে মডারেট মুসলিম বলে পরিচিত তারা সাম্প্রতিক এই ঘটনার সাথে প্রকৃত ইসলামের যে কোনো সম্পর্ক নেই এটা প্রমাণের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ সেকুলার মুক্তমনা কর্তৃক ধর্মীয় বিষয়াদির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশের পাল্টা হিসেবে তারা উপস্থিত হয়েছেন ধর্ম বিশেষত ইসলামের পক্ষের অ্যাডভোকেট হিসেবে। ধর্মগ্রন্থের পাতা উল্টে কোথায় শান্তির কোন বাণী বিধৃত রয়েছে তার রেফারেন্স দিতে গিয়ে তাদের গলদঘর্ম অবস্থা। এই দুপক্ষের তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়াঝাঁটি আর প্রচারণার ডামাডোলে মূল বিষয় এবং এর শেকড়স্থিত কারণসমূহ থেকে দৃষ্টি সরে যায় আমজনতার। বিষয়ের প্রকৃত গুরুত্ব এবং তার তাৎপর্য উপলব্ধির প্রয়াস অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়।

এইসব হৈহল্লা এবং বক্তব্য-মতপ্রকাশের হট্টগোল-পাল্টা হট্টগোলে যে পরিমাণ ধূলিকণা বাতাসে উড়ে বেড়ায় তা আমাদের মতো সাধারণ জনগণের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে রাখার জন্য যথেষ্ট। এর মধ্য থেকে নিজেদেরকে আধুনিক এবং সভ্য মানুষ হিসেবে দাবিদার মধ্যবিত্ত নাগরিকের মনে প্রশ্ন উদিত হয়: নাফিস কেন এরকম করল? সে তো মাদ্রাসায় শিক্ষিত তালেবানপন্থী মানসিকতার কোনো তরুণ নয়। সে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় অধ্যয়ন করত। সেখানে কয়েক সেমিস্টার পড়ার পর এই বছরের গোড়ার দিকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে যায়। ওখানে কিছুদিন পড়াশোনা করার পর আবার স্থানান্তরিত হয়ে ভর্তি হয় নিউ ইয়র্কের আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মপালনকারী হলেও সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রতিহিংসামূলক মনোভাব পোষণ করত এমন কথা ঐ দেশে যারা তার পরিচিত ছিলেন তেমন কেউই বলেন নি। তারা বরং এমন একটা অভিযোগে নাফিসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন।

তাহলে নাফিস এমন করল কেন? এ বিষয়ে নাগরিক ভদ্রলোকদের মনে প্রশ্ন ও আশ্চর্যবোধের অন্ত নেই। মানুষের মনস্তত্ত্ব কোন ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে দৃষ্টি না রেখে ঘটনার উপরি-কাঠামোয় বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে গেলে তা থেকে বিস্ময়ের বোধ সৃষ্টি হতে পারে বৈকি! সুতরাং 'আধুনিক' ও 'শিক্ষিত' হয়েও নাফিস কেন এই কাজ করতে গেল সে প্রশ্ন এখন বিস্ময়াভিভূত প্রশ্নাকারে নাগরিক মধ্যবিত্ত মানসপটে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ বিষয়ে আলোচনার আগে প্রথমে নাফিসকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে ভূমিকা পালনকারী এফবিআই কী বলে সেটা জেনে নেয়া যেতে পারে। জানা যায় যে, নাফিস নিউ ইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনায় হামলা চালানোর ‘ইচ্ছে’ নিয়ে নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এফবিআই নাফিসের মনের এই ইচ্ছের খবর কীভাবে পেল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার মানসিক অবস্থার বিষয়ে অবগত হয়ে তারা নিজেদের একজন আন্ডারকভার এজেন্টকে নাফিসের কাছে পাঠায় গত জুন মাসে। সে বন্ধুবেশে নাফিসের কাছ থেকে তার সুপ্ত ইচ্ছেটির বিষয়ে নিশ্চিত হয়। তখন সে আল-কায়েদা জঙ্গি বলে আরেকজন ব্যক্তির সাথে নাফিসকে পরিচয় করিয়ে দ্যায় তার ইচ্ছেপূরণের সক্রিয় অভিযাত্রী হিসেবে। এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটিও এফবিআইয়ের গুপ্তচর। এভাবে কয়েকজনের সাথে পরিচিত হবার পর নাফিস এ জাতীয় অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সম্পন্নের সক্ষমতা অর্জনের বিষয়ে অবহিত হয় এবং নিজের পরিকল্পনাকে সে অনুযায়ী এগিয়ে নিতে থাকে। এদিকে এই ছদ্ম-জঙ্গিরাই নাফিসকে শিখিয়ে-পড়িয়ে পরিকল্পনা কার্যকরের বিষয়ে সাহায্য করতে থাকে এবং তাকে যানবাহন, বিস্ফোরক সহ প্রয়োজনীয় সব রসদের যোগান দ্যায়। কিন্তু যে বিস্ফোরক তাকে সরবরাহ করা হয় তা ছিল ভূয়া, অকার্যকর। সুতরাং নাফিস তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এবং এমন একটি অবস্থায় পূর্বপরিকল্পনামতো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোটামুটি এটাই হচ্ছে এফবিআইয়ের ভাষ্য।

এখানে গ্রেপ্তার অভিযান যেটি পরিচালনা করা হয় সেটা মূলত সম্পন্ন হয় স্টিং অপারেশন হিসেবে। অর্থাৎ প্রকৃত কোনো সন্ত্রাসীর সম্ভাব্য অভিযান পরিচালনার সংবাদ পেয়ে তাকে গ্রেপ্তারের পরিবর্তে এখানে একজন ‘সন্দেহভাজন’কে সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তুলে নিয়ে তাকে দিয়ে একটি অভিযান পরিচালনার নাটক মঞ্চস্থ করিয়ে তারপর আটক করা হয়। এই পদ্ধতি নিয়ে ইতোমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলে। বলা হচ্ছে নাফিসের অভিপ্রায়ের কথা জানতে পেরে সেখানেই কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাকে এ কাজ থেকে বিরত রেখে যখন সম্মানজনকভাবে বিষয়টির সমাধান করা যেতো তখন সে কাজ না করে কেন এভাবে তাকে সন্ত্রাসী বানিয়ে তারপর গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই সন্ত্রাসবিরোধী নাটকের হৈচৈ তোলা হচ্ছে। বস্তুত এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন ব্যবস্থা অথবা এফবিআইকে দোষারোপের কিছু আছে বলে মনে হয় না। যারা এভাবে পুরো বিষয়টির সমালোচনা করছেন হয় তারা মনে করেন নতুবা সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছেন যে, মার্কিন এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্তদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এখানে মানুষকে ‘হেদায়েত’ করে ‘সৎপথে’ পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়!

এবার আসা যেতে পারে নাফিস একাজ কেন করতে গেল সেই প্রশ্নে। প্রথম কথা, নাফিসের সাথে প্রকৃত কোনো আল-কায়েদা সদস্যের কখনোই যোগাযোগ ছিল না। গ্রেপ্তারকারী এফবিআই সদস্যরাও সেকথাই বলছে। দেশে থাকতেও সে কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সে যে মাদ্রাসা ছাত্র ছিল না এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেছে সেটাও আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু কথা হলো কোনো সক্রিয় সদস্যের সাথে তার কার্যকর যোগাযোগ না থাকলেও সে মনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার অভিপ্রায় ধারণ করত। চাইলেই এফবিআইয়ের লোকজন অথবা অন্য কেউ একজন যুবককে এই পথে পরিচালিত করতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ মানসকাঠামোর এবং তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চিন্তা ও অভিব্যক্তির। সেটা কীভাবে একজন অল্পবয়সী ছেলের ভেতর সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করা দরকার।

বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য, ধ্বংসলীলা, সম্পদ লুণ্ঠন, নির্যাতন ও প্রতারণার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়ারূপে এ জাতীয় মানসিকতার উন্মেষ ঘটতে পারে। সাম্রাজ্যবাদী অর্থব্যবস্থাকে রক্ষা এবং তার মুনাফাকে সংহত রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের জন্য যুদ্ধ অর্থনীতির অস্তিত্ব একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়। পুঁজিবাদ তার বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী রূপ পরিগ্রহ করে। আর সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের অবশ্যম্ভাবী আচরণ হিসেবে সে অন্যান্য রাষ্ট্র, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত নির্ভরশীল (এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য যে নির্ভরশীলতার এই ধারণা একটি ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স- যা সৃষ্টি হয় সেই রাষ্ট্রসমূহের পরিচালন-পদ্ধতি, শিক্ষা ও শাসনব্যবস্থা এবং তাদের অর্থনীতি যে সমস্ত ক্ষমতা-সম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তার ভিত্তিতে। এই ধরনের তথাকথিত নির্ভরশীল রাষ্ট্রও তার এই নির্ভরশীলতা ভেঙে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে যদি সে ঔপনিবেশিকতার সমগ্র কাঠামোটিকে ভেতর-বাহির থেকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করে ফেলতে পারে) রাষ্ট্রসমূহের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং দেশীয়-আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণের ওপর কার্যকর আধিপত্য বিস্তার করে। এই অর্থনীতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার পরিপক্বতার একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে শিল্প পুঁজির পরিবর্তে বণিক পুঁজির স্বার্থের অধীন হয়। অর্থাৎ উৎপাদনশীল পুঁজির চাইতে অনুৎপাদনশীল পুঁজি সেই রাষ্ট্রের অর্থনীতির কাঠামো ও নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে। পুঁজিবাদ তার বিকাশের একেকটি স্তর যতো অতিক্রম করতে থাকে, ততোই সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তার ক্ষমতার বিন্যাস, কাঠামো, উপাদানসমূহ গড়ে উঠতে থাকে এবং সেগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিত করার প্রয়োজনে তার মুনাফার তাগিদ ক্রমশ বেড়েই চলে। সে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য অন্বেষণ করতে থাকে নতুন নতুন ক্ষেত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো সস্তা শ্রমের বাজার। তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যাবহুল ও তুলনামূলক সস্তা শ্রমের যোগান দেয়া রাষ্ট্রগুলোতে সে তার উৎপাদনশীল খাতগুলোকে স্থানান্তরিত করে। এভাবে অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তিত হয়, এক পর্যায়ে কেবল আর্থিক খাতগুলোর প্রাধান্যই সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতিতে বিরাজ করে। সামগ্রিকভাবে উৎপাদনশীল খাত তার স্থান করে নেয় প্রধানত ভার্চুয়াল জগতে। এর অনিবার্য প্রতিফল হিসেবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে দেখা দ্যায় বেকারত্ব, ধূমায়িত অসন্তোষ। ফলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মাথা চাড়া দ্যায় সামাজিক অস্থিতিশীলতা। এই অস্থিতিশীলতাকে মোকাবেলা এবং সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের সর্বভূক মুনাফার চাহিদাকে পূরণের জন্য তাকে আশ্রয় নিতে হয় একটি বিশেষায়িত খাতের: যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক খাত। এই খাতের পেছনে উৎপাদিত পুঁজিকে সমবেত করার উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করতে হয় যুদ্ধ পরিস্থিতির।

এই যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য তার প্রয়োজন হয় একজন দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর। কেননা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো যোগ্য প্রতিপক্ষ খুঁজে না পাওয়া গেলে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে এভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনার আমদানি ঘটানো সম্ভব নয়। শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে এ ধরনের প্রতিপক্ষের অভাব যুক্তরাষ্ট্রের হয় নি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার মিত্ররা সে সময় শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় মার্কিন শাসকগোষ্ঠী জনগণকে কমিউনিজমের জুজু দেখিয়ে বিশ্বের দেশে-দেশে তার অনেক চক্রান্তমূলক তৎপরতাকেই জায়েজ করেছে। নব্বই দশকের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় তেমন কোনো প্রতিপক্ষ আর যুক্তরাষ্ট্রের ছিল না যাকে কেন্দ্র করে সামরিক মহড়া চালানো যায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশের সাথে সামরিক জোট গঠন করে তাদের কাছে বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক প্রজেক্ট ও যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করা যায়। কিন্তু ক্রমাগত বর্ধমান পুঁজির অন্তর্গত চাহিদাকে পূরণের জন্য তার এ ধরনের শত্রু সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন, তা নাহলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং দৃশ্যমান-অদৃশ্য কনসোর্টিয়ামগুলোর কর্ণধারদের নাখোশ হওয়া ঠেকানো যাবে না। সামাল দেয়া যাবে না সর্বগ্রাসী মুনাফার অপ্রতিরোধ্য চাহিদা। সুতরাং গত শতাব্দের শেষ দশকের পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে এ ধরনের সঙ্কটের মুখোমুখি হয়ে তাকে খুঁজে নিতে হয়েছে নতুন প্রতিপক্ষ: ইসলামী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তার পরিচয়।

যেহেতু বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম-প্রধান একটি বিশাল এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সুতরাং এতদঞ্চলে তার স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানকে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একাংশকে দাঁড় করানো তাদের পক্ষে এক ঢিলে একাধিক বিহঙ্গ শিকারের মতো ব্যাপার। প্রথমত, প্রতিপক্ষ তৈরির মাধ্যমে যু্দ্ধাবস্থা বজায় রাখা, যুদ্ধ অর্থনীতির চাহিদাকে অক্ষুণ্ন রাখা; দ্বিতীয়ত, ইসলামী সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের অজুহাতে এই দেশগুলোতে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে কিংবা অন্যপ্রকারে মাথার ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে তাদের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ অধিকার করা, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিনির্ধারণে তাদেরকে প্রভাবিত করা। তৃতীয়ত, নিজের দেশের জনগণকে বিভ্রান্তিতে রেখে তাদের করের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশাল সব অবকাঠামো নির্মাতা ও জ্বালানি উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান, অস্ত্র নির্মাণকারী কোম্পানির স্বার্থের পেছনে সমবেত করা। এই কাজগুলো করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে হয় বিভিন্ন নির্যাতন-নিপীড়নমূলক তৎপরতা। বিদ্যমান রাজতন্ত্রী-সামরিক স্বৈরশাসকদের গোপন ও প্রকাশ্যে নৈতিক সমর্থন প্রদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক চুক্তির শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ রেখে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ হরণ করা- এসবই করতে হয়। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হিসেবেই মুসলিম-প্রধান অঞ্চলে যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে তা সঠিক পথ খুঁজে না পেয়ে বিকারগ্রস্থ পন্থায় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এইসব অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশেই প্রগতিশীল আন্দোলন জোরদার নয়, গণসংগঠনসমূহের তেমন কোনো জনভিত্তি নেই। ধর্মীয় পশ্চাৎপদতা, কূপমণ্ডুকতা, গোঁড়ামি এবং অস্বচ্ছ চিন্তার পরিস্থিতিও সেখানে চক্রান্তমূলকভাবে বজায় রাখা হয়। জনগণের বিক্ষুব্ধ মানসিকতাকে তাই প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে পরিচালনা করা এবং তাদের ক্ষোভকে যথার্থ পাত্রে ধারণ করার মতো যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা এই ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল পথে তার বিস্ফোরণ ঘটায়।

এক্ষেত্রে মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের সাথে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। বিগত কয়েক দশকে সেখানে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও রাজনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং ক্রমশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশ ঘটছে। এই দেশগুলোতেও সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণের অধীনে বহু বছর ধরে দালাল মুৎসুদ্দি শাসকদের দুঃশাসন কায়েম ছিল। কিন্তু তার বিপরীতে প্রতিরোধের সংগ্রামও বজায় ছিল। দেশের সিংহভাগ ক্ষমতা এবং সম্পত্তি যখন মুষ্ঠিমেয় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করত সে সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্পত্তিহীন শ্রেণী থেকে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধির উত্থান ঘটে এবং তারা জনস্বার্থ রক্ষার উপযোগী সংগঠন গড়ে তুলে যথাযথ রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনা করে। বর্তমানে ঐ অঞ্চলের অনেক দেশেই সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার শাসক গোষ্ঠীর কায়েমী স্বার্থ উচ্ছেদ হয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়েছে। অন্যান্য কয়েকটি দেশেও তা হওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনমনে এ বিষয়ক সক্রিয় চিন্তাভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত কারণে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি ভিন্নতর রূপ পরিগ্রহ করেছে। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রয়োজনে শেখ-আমীর-ওমরা-বাদশা আর দুর্নীতিপরায়ণ নির্যাতক সামরিক শাসকদের শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো প্রকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সেখানে সংগঠিত হয়ে উঠতে পারে নি। গত বছরের গোড়া থেকে শুরু হওয়া ‘আরব বসন্তে’র গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখেও একথা বলা যায়।

এটাও সাম্রাজ্যবাদের লীলাখেলার অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্ররা দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান দেখতে চায় না। কেননা সেক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে তাদের নীতি, তৎপরতা ও কার্যকলাপের বিষয়ে জনমনে যে সমস্ত প্রশ্নের উত্থান ঘটবে তার ফলে অনেক রকম জবাবদিহিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। তাই তাদের অভিপ্রায় এ ধরনের পশ্চাৎপদ, প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মীয় গোষ্ঠীই গ্রাহ্য শত্রুপক্ষ হিসেবে বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান থাকুক। ধর্মান্ধ জঙ্গিরা সর্বদা মার্কিন স্বার্থের ওপর আক্রমণ করতে উদ্যত একথা বিশ্ববাসী জানুক। তাহলে সবদিক থেকেই তাদের লাভ।

প্রথমত, ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের মার্কিন-বিরোধী তৎপরতাকে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হিসেবে জনসম্মুখে উপস্থাপন করে নিজেদেরকে এসব কিছুরই সোল এজেন্ট হিসেবে প্রচার করার সুযোগ গ্রহণ করা যায়। দ্বিতীয়ত, এদেরকে দমনের নামে উপযুক্ত সৈন্য সমাবেশ ঘটানো যায়, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের সহযাত্রী হিসেবে দ্বিপক্ষীয় সামরিক চুক্তির মারফত বিভিন্ন দেশে বিক্রি করা সম্ভব হয় প্রভূত পরিমাণ অস্ত্রসস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম। তৃতীয়ত, নিজস্ব প্রয়োজনমাফিক জঙ্গি ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা সৃষ্টি করা যায় এবং এই অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া রাষ্ট্রে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে তার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, অথবা নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে হুমকি-ধমকি আর আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ-বৈদেশিক নীতির ওপর শাসনের ছড়ি ঘোরানো যায়। সম্ভাবনার আকারে কথাগুলো বলা হলেও তা সেই পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই আর, বিগত কয়েক দশকে এই সুযোগগুলোর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার আমরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের নেতৃত্বে অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রের দ্বারা হয়ে আসার বাস্তব বহু উদাহরণ লক্ষ করেছি। (প্রথম অংশ শেষ)

- আবিদুল ইসলাম


মন্তব্য

অরফিয়াস এর ছবি

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে হামলা পরিকল্পনার জন্য এফবিআই দ্বারা প্ররোচিত হওয়ার পর গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশী নাগরিক রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে নিয়ে এদেশে আলোচনা-জল্পনা-কল্পনার অভাব নেই।

পরিকল্পনা করলো নাফিস নিজে, হামলা করার জন্য সঙ্গী-সাথী খুঁজলো সে নিজে, বিস্ফোরক কিনতে গেল নিজে, সব কিছু করলো নিজে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর ছক তার নিজের আর প্ররোচনা এফবিআই এর? সে কি দুধের শিশু যে তাকে ফুঁসলিয়ে এসব করানো হয়েছে?

সমাজের অভ্যন্তরে পশ্চাৎপদ চিন্তাভাবনা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ইত্যাদি বিরাজমান থাকলে তার অনিবার্য প্রতিফল হিসেবে মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের ভিত্তি সেখানে গড়ে ওঠে।কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়; বরং এটা মোটামুটি সর্বাংশে সত্য ও স্বীকৃত বিষয়।

ঠিক কোন জায়গায় এই ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করা সম্ভব?

নাফিস কেন এরকম করল? সে তো মাদ্রাসায় শিক্ষিত তালেবানপন্থী মানসিকতার কোনো তরুণ নয়। সে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় অধ্যয়ন করত। সেখানে কয়েক সেমিস্টার পড়ার পর এই বছরের গোড়ার দিকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে যায়।

প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে কি জঙ্গি মনোভাবাপন্ন হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন?

সুতরাং 'আধুনিক''শিক্ষিত' হয়েও নাফিস কেন এই কাজ করতে গেল সে প্রশ্ন এখন বিস্ময়াভিভূত প্রশ্নাকারে নাগরিক মধ্যবিত্ত মানসপটে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ঠিক কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নাফিস আধুনিক বলে আপনি মনে করেন?

জানা যায় যে, নাফিস নিউ ইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনায় হামলা চালানোর ‘ইচ্ছে’ নিয়ে নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এফবিআই নাফিসের মনের এই ইচ্ছের খবর কীভাবে পেল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার মানসিক অবস্থার বিষয়ে অবগত হয়ে তারা নিজেদের একজন আন্ডারকভার এজেন্টকে নাফিসের কাছে পাঠায় গত জুন মাসে। সে বন্ধুবেশে নাফিসের কাছ থেকে তার সুপ্ত ইচ্ছেটির বিষয়ে নিশ্চিত হয়। তখন সে আল-কায়েদা জঙ্গি বলে আরেকজন ব্যক্তির সাথে নাফিসকে পরিচয় করিয়ে দ্যায় তার ইচ্ছেপূরণের সক্রিয় অভিযাত্রী হিসেবে। এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটিও এফবিআইয়ের গুপ্তচর। এভাবে কয়েকজনের সাথে পরিচিত হবার পর নাফিস এ জাতীয় অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সম্পন্নের সক্ষমতা অর্জনের বিষয়ে অবহিত হয় এবং নিজের পরিকল্পনাকে সে অনুযায়ী এগিয়ে নিতে থাকে। এদিকে এই ছদ্ম-জঙ্গিরাই নাফিসকে শিখিয়ে-পড়িয়ে পরিকল্পনা কার্যকরের বিষয়ে সাহায্য করতে থাকে এবং তাকে যানবাহন, বিস্ফোরক সহ প্রয়োজনীয় সব রসদের যোগান দ্যায়। কিন্তু যে বিস্ফোরক তাকে সরবরাহ করা হয় তা ছিল ভূয়া, অকার্যকর। সুতরাং নাফিস তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এবং এমন একটি অবস্থায় পূর্বপরিকল্পনামতো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোটামুটি এটাই হচ্ছে এফবিআইয়ের ভাষ্য।

আপনার লেখার এই অংশটি লক্ষ্য করুন এবং মোটা দাগে চিহ্নিত অংশগুলো দেখুন।

নাফিস নিজে থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করে এবং সাহায্য করতে পারে এমন মানুষ খুঁজতে থাকে। আর গোয়েন্দা সংস্থা নাফিসের বিস্ফোরক কেনার ইচ্ছার কথা জানতে পারে তার কাছ থেকেই। সুতরাং একটি গোয়ান্দা সংস্থাকে নাফিসের "মানসিক অবস্থা ও পরিকল্পনা" বোঝার জন্য আরও দেরি করতে হবে কেন? আপনি নিজেই একবার উল্লেখ করেছেন, "বন্ধুবেশে নাফিসের কাছ থেকে তার সুপ্ত ইচ্ছেটির বিষয়ে নিশ্চিত হয়।" তাহলে আর কতোটা নিঃশ্চয়তা পেলে আপনি খুশি হতেন?

এইদুটো লাইন দেখুন-

এদিকে এই ছদ্ম-জঙ্গিরাই নাফিসকে শিখিয়ে-পড়িয়ে পরিকল্পনা কার্যকরের বিষয়ে সাহায্য করতে থাকে এবং তাকে যানবাহন, বিস্ফোরক সহ প্রয়োজনীয় সব রসদের যোগান দ্যায়।

আপনি খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন একটি প্রসঙ্গ। এই কাজগুলো করার জন্য নাফিসের অর্থের যোগান কোথা থেকে আসতো? এই বিপুল অর্থের যোগানদাতা কে ছিলো? কিংবা কারা ছিলো? বিস্ফোরক এর পরিমান ছিলো অনেক এবং এই পরিমান বিস্ফোরক এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনার অর্থায়ন কিভাবে হলো?

যেই ব্যক্তি বিস্ফোরক কিনে বোমা বানিয়ে গাড়ি নিয়ে সেই বোমা জায়গামত ফাটাতে যাওয়ার মতো বদ্ধপরিকর তার মতো একটি সন্ত্রাসীকে আটক করার জন্য আর ঠিক কতোটা দেরি এবং প্রমান জোগাড় করলে আপনার কাছে সেটা গ্রহনযোগ্য হতো?

এখানে গ্রেপ্তার অভিযান যেটি পরিচালনা করা হয় সেটা মূলত সম্পন্ন হয় স্টিং অপারেশন হিসেবে। অর্থাৎ প্রকৃত কোনো সন্ত্রাসীর সম্ভাব্য অভিযান পরিচালনার সংবাদ পেয়ে তাকে গ্রেপ্তারের পরিবর্তে এখানে একজন ‘সন্দেহভাজন’কে সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তুলে নিয়ে তাকে দিয়ে একটি অভিযান পরিচালনার নাটক মঞ্চস্থ করিয়ে তারপর আটক করা হয়।

একজন সন্ত্রাসী যদি সত্যিকার সরঞ্জামাদি নিয়ে কোন বিস্ফোরণ ঘটায় তাহলে ঘটনাটি আপনার দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী হামলা। কিন্তু এই সন্ত্রাসীই যদি আসল ডিলার এর কাছে না গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার বানানো ডিলার এর কাছে গিয়ে নকল সরঞ্জাম নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে যেয়ে ব্যর্থ হয় এবং তাতে প্রাণে বেঁচে যায় হাজারো নিরপরাধ মানুষ তাহলে আপনি এই ঘটনার পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার তৎপড়তা না দেখে সাম্রাজ্যবাদের গন্ধ খুঁজে পান? সবাই কি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার মতো? এই নির্দিষ্ট "স্টিং" অপারেশনটির বিরুদ্ধে আপনার যুক্তিটি কোথায়? ঘটনা না ঘটায় নাকি ঘটলে ভালো হতো এই জায়গায়?

নাফিসের সাথে প্রকৃত কোনো আল-কায়েদা সদস্যের কখনোই যোগাযোগ ছিল না। গ্রেপ্তারকারী এফবিআই সদস্যরাও সেকথাই বলছে। দেশে থাকতেও সে কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সে যে মাদ্রাসা ছাত্র ছিল না এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেছে সেটাও আগেই উল্লেখ করেছি।

যতদূর দেখেছি খবরে উল্লেখ ছিলো নাফিসের সাথে আরও পাঁচজন ব্যক্তির যোগাযোগ ছিলো এবং বাংলাদেশের একজন "বড়ভাই" এর যোগাযোগ ছিলো এই ব্যাপারগুলোতে। আপনি কি করে নিঃশ্চিত এরা কেউই আল-কায়েদার নয়?
আপনি বারবার একটা কথা বলে যাচ্ছেন যে, নাফিস মাদ্রাসার ছাত্র না সে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেছে, এটা দিয়ে কি প্রমান করতে চাইছেন? "বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা" করলে সে জঙ্গি হতে পারেনা? কেন আমাদের দেশের "বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়"গুলো কি কোন স্পেশাল কোর্স চালু করেছে এই বিষয়ে? আর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা একজন ব্যক্তির কতটুকু সম্ভাবনা আছে "স্টুডেন্ট ভিসা" নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে "সাইবার ক্রাইম" বিষয়ে অধ্যয়ন করতে যাওয়ার?

লেখার পরের অংশটুকুতে আপনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটাই প্রমান করতে চেয়েছেন যে, সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জন্য এইধরনের ঘটনা তৈরী হয় এবং এর পেছনে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই হাত থাকে।

যেহেতু বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম-প্রধান একটি বিশাল এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সুতরাং এতদঞ্চলে তার স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানকে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একাংশকে দাঁড় করানো তাদের পক্ষে এক ঢিলে একাধিক বিহঙ্গ শিকারের মতো ব্যাপার।

সিরিয়ার শাসকদের গণহত্যায় অস্ত্র আর রসদ যোগান দিচ্ছে ইরান এবং রাশিয়া। ইরান কেন মুসলিম প্রধান দেশ হয়ে আরেক মুসলিম দেশের মুসলিমদের হত্যার জন্য সহায়তা করছে? সৌদি আরবের গেল অর্থবছরে সামরিক অস্ত্র কেনার পেছনে ব্যয় সর্বোচ্চ, তারা সরাসরি ইরানের বিরোধিতা করছে এই বিষয়ে। জর্ডান নিজেও এই যুদ্ধে আক্রান্ত। এরা সবাই মুসলিম প্রধান দেশ, এর পেছনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যে জুজুর কথা আপনি শোনালেন তার পেছনে কি আপনার বিজ্ঞ অনুমানই যথেষ্ঠ? নাকি কোন গ্রহনযোগ্য প্রমানও উপস্থাপন করবেন?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

যে প্রশ্নগুলো করতে চেয়েছিলাম, অধিকাংশই অরফিয়াস করেছে, আপনার উত্তরের অপেক্ষা করছি।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সাম্রাজ্যবাদ নিয়া আলাপের ইচ্ছা নাই আপাতত। কারণ নাফিসের ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদ কোন প্রসঙ্গ না।

পোস্টটা পইড়া মনে হইল ব্যাঙ্কে বোমা মারার এমন ইচ্ছা পোষণ করা যাতে হাতের কাছে সরঞ্জাম পাইলেই বাস্তবায়ন করতে আগাইয়া যাওয়ার ব্যাপারটারে অপরাধ হিসাবে স্বীকার করতে আপনার আপত্তি আছে। সেই সূত্রেই এ্যাত্তো ভ্যাজর ভ্যাজর করলেন।

মাহফুজ খান এর ছবি

সহমত পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

নৈষাদ এর ছবি

আপনার পুরো হাইপোথিসিস নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন আছে, আগে পুরো লেখাটা শেষ করুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু এর ছবি

বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য, ধ্বংসলীলা, সম্পদ লুণ্ঠন, নির্যাতন ও প্রতারণার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়ারূপে এ জাতীয় মানসিকতার উন্মেষ ঘটতে পারে।

আপনি কি বলতে চাইছেন, কাজী নাফিস সারা বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য, ধ্বংসলীলা, সম্পদ লুণ্ঠন, নির্যাতন আর প্রতারণার প্রতিক্রিয়ায় বোমা মেরে ব্যাঙ্ক ওড়াতে গিয়েছিলো? এর পেছনে কোনো ধর্মীয় ফ্যাক্টর ছিলো না?

সত্যপীর এর ছবি

আপনার বক্তব্য অনুসারে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া নাফিস কখনো আল কায়েদার কাউকে চিনত না এবং পরবর্তীতেও কোন আল্ কায়েদা বা অন্যান্য উগ্র জঙ্গী সংগঠনের কারো সাথে দেখা হবার কোন সম্ভাবনাই ছিলনা। এফবিআই আল কায়েদা সেজে অ্যাপ্রোচ না করলে নাফিস উত্তম নাগরিক হিসেবে তসবি জপে জীবন কাটায় দিত।

১) এই ধারণার হেতু কি? ভবিষ্যতে নাফিসের কার সাথে দেখা হবার কিরকম সম্ভাবনা তা আপনি কিভাবে জানেন? ভাইয়ের কি ক্রিস্টাল বল আছে?

২) একজন মানুষ বোমা কিনে গাড়ি চালিয়ে তা একটি ভবনের সামনে রেখে এসেছে, তারপর রুমে গিয়ে ভিডিওতে হামলার কথা স্বীকার করে বোমা ডেটোনেট করার চেষ্টা করেছে। সে মানুষ মারতেই চেয়েছিল। সত্যই বোমা ফাটলে কিরকম পোস্ট দিতেন?

..................................................................
#Banshibir.

কুমার এর ছবি

আসছে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া দুধের শিশু নাফিসের অ্যাপোলোজিস্ট! দুইদিন পরে সবুজ পাসপোর্ট দেইখা "নাফিসের দেশের লোক" কইয়া জামাই আদর করবে।

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

এই ষ্টিং অপারেশন যতদূর জানি নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যাপার ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও, যেমন ঘুষ দূর্নীতির মত বিষয়েও পরিচালনা করা হয়, এবং এই জালে এর আগে অনেক সাদা চামরাও ধরা খেয়েছে। ঘটনা কি সত্য? এ বিষয়ে আমাদের আবুল হোসেন সংক্রান্ত একটা বাণী স্মরনে আসছে, কোন টাকাই যেখানে ছাড় হয় নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কি ভাবে?

সাম্রাজ্যবাদী অর্থব্যবস্থাকে রক্ষা এবং তার মুনাফাকে সংহত রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের জন্য যুদ্ধ অর্থনীতির অস্তিত্ব একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়। পুঁজিবাদ তার বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী রূপ পরিগ্রহ করে।.................... সুতরাং গত শতাব্দের শেষ দশকের পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে এ ধরনের সঙ্কটের মুখোমুখি হয়ে তাকে খুঁজে নিতে হয়েছে নতুন প্রতিপক্ষ: ইসলামী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তার পরিচয়।

এইসব তত্বকথা কোন কেতাবে লেখা আছে জানি না, তবে তত্বের ধরন দেখে মনে হয় বিগত শতাব্দীর বহুল চর্চিত সেই বাতিল মাল। তো যাই হোক- জার্মান, জাপান, ব্রিটেন কি পুঁজিবাদী বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এখনও পৌঁছে নি? তাদেরও সাম্রাজ্যবাদী রুপ পরিগ্রহ করতে আর কতশত বছর লাগবে?

shahriar এর ছবি

জার্মান, জাপান বৃটেন এর সাম্রাজ্যবাদী রূপ এখনো দেখেন নাই!!?? ২য় বিশ্বযুদ্ধ, ন্যাটো, ফকল্যান্ড এই গুলো তে তবে কী পরিগ্রহন হইসে

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

ফকল্যান্ড যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী রুপ পরিগ্রহন? হাঃ হাঃ হাঃ। তাহলে তো কারগিল যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, এমনকি তেল-গ্যাস নিয়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ বিরোধও সাম্রাজ্যবাদী বিরোধ ছাড়া আর কিছু নয়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেন যেভাবে যুদ্ধে জড়িয়েছে, পরে একইভাবে জড়িয়ে্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তার আগে একই ভাবে চীন, কোরীয়া। এ দেশগুলো সম্পর্কে কেতাবের কি ভাষ্য?

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা পূর্ণাঙ্গ হলে ঠিকভঅবে মন্তব্য করা যাবে। তবে প্রথম অংশ পড়ে মনে হলো, লেখক মুক্তমনাদের উপরে কিছু বিরক্ত, কারণটা স্পষ্ট নয়। নাফিসের প্রসঙ্গ পরবর্তী অংশ যেখানে পুঁজি ও এর সাম্রাজ্যবাদী রুপ এ দুই নিয়ে বলেছেন, তা আপাতত একমত। তবে নাফিসের বিষয়টা এতোটা সরলিকরণ করাটা ঠিক হবে না বোধ হয়। এদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ড: শমশের আলীওতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশের একটা বড় অংশের কাছে শ্রদ্ধাভাজন। একজন বিজ্ঞানি এবং আধুনিক(!)। যা হোক প্রসঙ্গ থেকে দূরে যেতে চাই না। নাফিসের বিষয়টা এভাবে দেখার সুযোগ নেই। আল কায়েদা, তালেবান আমেরিকার সৃষ্টি, এটা বলে মূদ্রার এক পিঠ দেখা হয়, অপর পিঠ দেখতে হলে যারা তালেবান বা আল কায়েদা হয় তাদের প্রবণতাও দেখতে হয়। পুঁজির বলি আমি আপনি দুজনেই, আমরাতো আল কায়েদা হচ্ছি না, লিখছি, প্রতিবাদ করছি, না হয় আর আর কথা বলছি। কে হচ্ছে? এ প্রশ্নটা জরুরী। মনে রাখতে হবে, ”সকলেই তালেবান নয়, কেউ কেউ তালেবান“ কেন? জীবন কবি দেখলে আবারও দৌড়ে গিযে ট্রামের নিচে পড়তো। আমার কিছু করার নেই। ক্ষমা করো কবি।

স্বয়ম

হাসান এর ছবি

ইউ পম গানা?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইউ আ bully?

সন্দেশ এর ছবি

প্রথম পাতায় এক লেখকের একাধিক লেখা প্রকাশের রীতি মেনে প্রথম পর্ব প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে, দ্বিতীয় পর্ব প্রথম পাতায় প্রকাশ করা হয়েছে।

ফারাসাত মাহমুদ এর ছবি

দ্বিতীয় পর্ব দেখা যায় না কেন? বলছে এই পৃষ্ঠা দেখার অনুমতি নেই।

অরফিয়াস এর ছবি

সন্দেশ দ্বিতীয় পর্ব তো দেখা যায়না।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শুরুতেই ডুয়াল পোস্টিং ধরা পড়লে মনে হয় পোস্ট গুদামের পরিবর্তে কবরে পাঠানো হয়।

অরফিয়াস এর ছবি

হায় হায় !! পোস্টের লেখক তো প্রথম পর্বেরই প্রশ্নের কোন জবাব দিলোনা। এখন কি হবে? ম্যাঁও

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।