গ্রীক মিথলজি ২৪ (আর্টেমিসের গল্পকথাঃ অরিয়ন)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/১১/২০১৩ - ১:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানব, শক্তিশালী শিকারী ছিলেন অরিয়ন। অরিয়নকে নারীরা যেমন ভালোবাসতো, ঠিক তেমনি তার সুন্দর ব্যবহার এবং মনের জন্য পুরুষরাও ভালোবাসতো। অরিয়নকে নারীরা ভালোবাসতো, যেমন তারা ভালোবাসে তাদের ভাইকে। পুরুষরা ভালোবাসতো, যেমন ভালোবাসে তাদের প্রেমিকাকে। এমনকি দেব-দেবীরাও তাকে লক্ষ্য করেছিলেন, এবং তার সাহচর্য উপভোগ করতেন। কিন্তু এই সৌভাগ্যই তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, ঠেলে দেয় কিংবদন্তীতুল্য নিয়তির দিকে, ঠিক যেভাবে বীরদের পরিণতি ঘটে।

অরিয়ন কে ছিলেন? অরিয়নের জন্ম পরিচয় নিয়ে অনেক কাহিনী গ্রীক মিথলজিতে প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে যেটা সবচেয়ে প্রচলিত, সেটা হচ্ছে এইরুপ- সমুদ্র দেব পসাইডনের এক প্রেমিকা ছিলেন এল্কাইওনে, যিনি ছিলেন টাইটান এটলাসের কন্যা। এই এল্কাইওনে এবং পসাইডনের ভালোবাসায় জন্ম নিয়েছিলেন হাইরিয়াস। একদিন হাইরিয়াসকে দেখতে এসেছিলেন তার বাবা পসাইডন, সাথে ছিলেন দেবরাজ জিউস এবং দেবতা হার্মিস। হাইরিয়াস ছিলেন খুবই ধনী ব্যক্তি, কিন্তু নিঃসন্তান। দেবতাদের কাছে সেদিন হাইরিয়াস সন্তান চাইলেন। দেবতারা একটি উৎসর্গকৃত ষাঁড়ের চামড়াতে মূত্র ত্যাগ করে, সেটি মাটিচাপা দিয়ে রাখলেন। সেইখান থেকেই জন্ম নিলেন অরিয়ন। দেখতে দেখতে দৈর্ঘ্যে দৈত্যের মতোই লম্বা হলেন এবং বাবা পসাইডন দিলেন এক ক্ষমতা- সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে যাবার সক্ষমতা।


অরিয়নের জন্ম রহস্য (দেবতারা একটি উৎসর্গকৃত ষাঁড়ের চামড়াতে মূত্র ত্যাগ করে, সেটি মাটিচাপা দিয়ে রাখলেন। সেইখান থেকেই জন্ম নিলেন অরিয়ন)

একসময় অরিয়ন বিয়ে করতে চাইলেন, কিয়সের রাজা ওইনোপিয়নের কন্যা মেরোপে-কে। কিন্তু রাজা ওইনোপিয়ন বিয়েতে রাজী ছিলেন না। তিনি অরিয়নকে মদ্য পান করিয়ে মাতাল করলেন এবং যখন অরিয়ন ঘুমিয়ে গেলেন, ওইনোপিয়ন অরিয়নকে অন্ধ করে দিলেন। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, অরিয়ন কিয়স দ্বীপে গিয়েছিলেন, সেখানে মাতাল হয়ে এক নারীর শ্লীলতাহানী করেন, এবং সে কারণেই তাকে অন্ধ করে দেওয়া হয়। সে যাই হোক, অন্ধ হবার পর অরিয়ন কিয়স দ্বীপ ত্যাগ করে লেমনস দ্বীপে আসেন, যেখানে দেবতা হেফাস্টাস পথে চলার জন্য অরিয়নের সাথে একজন পরিচারক দেন। অরিয়ন সেই পরিচারকের কাঁধের উপর চড়ে বসেন এবং তাকে আদেশ দিনে সূর্য দেবতা যেদিক দিয়ে উদয় হোন, সেদিকে যেতে। তারা যখন সেই জায়গায় পৌঁছান, সূর্যের রশ্মির জন্য ততদিনে অরিয়ন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।


অন্ধ অরিয়নকে কাঁধে নিয়ে পরিচারক সূর্যোদয়ের পথে যাচ্ছেন (শিল্পী- নিকোলাস পওসসিন, ১৬৫৮ সাল)

এখনো আর্টেমিসের সাথে অরিয়নের পরিচয় হয় নি, তাই না? শিকারী একটাওনের দুর্ভাগ্যের কথা তখন সবজায়গায় ছড়িয়ে গেছে। সবাই বনভূমিতে শিকার করার সময় সাবধানে থাকতো, শুধুমাত্র একজন ছাড়া। আর তিনি হচ্ছেন অরিয়ন। একদিন তিনি বনভূমিতে ঘুরতে ঘুরতে এক ঝোপে সাদা কি যেনো নড়তে দেখলেন। বিরল প্রজাতির সাদা পাখি চিন্তা করে তিনি সাবধানে সেই ঝোপের দিকে এগোলেন। যখন তিনি নিকটে পৌঁছালেন, মনে হলো সাদা কিছু এক ঝাপটা দিয়ে দৌড়াচ্ছে। অরিয়ন দেখলেন, তারা সাদা পাখি নয়, সাদা পোশাকে সাতজন নিম্ফ।
(মিথে আছে, এই সাতজন নিম্ফ হচ্ছেন প্লেয়াডেস, অর্থাৎ টাইটান এটলাস এবং ওসেনিড প্লেওনের সাত কন্যা। এই সাত কন্যারই একজন হচ্ছেন এল্কাইওনে, যার সাথে পসাইডনের মিলনে জন্ম হয়েছিলো হাইরিয়াসের, যিনি অরিয়নের পার্থিব পিতা। সেই হিসেবে এই সাত জন নিম্ফ হচ্ছেন সম্পর্কে অরিয়নের দাদী গোত্রীয়। প্লেয়াডেসদের বিস্তারিত আরেকদিন বলা যাবে।)

সাতজন নিম্ফ দৌড়াতে লাগলেন, পিছনে পিছনে ধাওয়া করতে লাগলেন অরিয়নও। এদের মধ্যে একজনকে যখন প্রায় ধরে ফেললেন, তখন তিনি দেবী আর্টেমিসের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। আর্টেমিস তখন শিকারে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু সেই নিম্ফের প্রার্থনা শুনলেন। তিনি সাতজন নিম্ফকে রুপান্তরিত করলেন সাতটি সাদা ঘুঘু পাখিতে। (পরিবর্তীতে জিউস এদেরকে নক্ষত্রপুঞ্জে স্থান দিয়েছিলেন। )

সাতজন নিম্ফকে রক্ষা করার পর আর্টেমিস নজর দিলেন ধাওয়াকারীর দিকে। তিনি দেখলেন অনিন্দ্য সুন্দর অরিয়নকে। আর্টেমিস মুগ্ধ হয়ে, পরিচয় গোপন করে, অরিয়নকে তার সাথে শিকার করতে আহবান জানালেন। তারা একত্রে একটি হরিন শিকার করলেন, এবং তখনই অরিয়ন বুঝতে পারলেন, তার শিকারের সঙ্গী নারীটি কোনো সাধারণ কেউ নয়, তিনিই কুমারী দেবী আর্টেমিস। শ্রদ্ধাচিত্তে অরিয়ন দেবী থেকে চোখ নামিয়ে ফেললেন।

“আমি তোমার এই শ্রদ্ধাকে ধন্যবাদ জানাই অরিয়ন,” আর্টেমিস বললেন, “কিন্তু আসো আমরা একসাথেই শিকার করি, তুমি এবং আমি!”

অরিয়ন দেবীর দিকে তাকালেন এবং যেনো দেখতে পেলেন তারা দুইজনে একসাথে অনেকদিন শিকার করছেন, মজা করছেন। সেই দৃশ্য কল্পনা করে অরিয়ন হেসে উঠলেন, বললেন, “হ্যাঁ, আমার দেবী! আমরা শিকার করবো একসাথে”।

“তোমার হাসিটা আমার খুব পছন্দ হলো,” বললেন দেবী। এরপর তারা তাদের শিকার করা পশুগুলোকে নিয়ে শহরে গেলেন এবং সেখানে মানুষদের মাঝে এগুলো বিলিয়ে দিলেন।

পুরো গ্রীষ্মকাল অরিয়ন এবং আর্টেমিস একসাথে কাটালেন। তারা একসাথে শিকার করলেন, খেলাধূলা করলেন, দৌড়ে, তীরন্দাজীতে এবং গল্প বলায় একে অপরকে চ্যালেঞ্জ জানালেন। সন্ধ্যার সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে গল্প করতেন। একে অপরকে তাদের জীবনের কথা, তাদের গোপন কথা বলতেন। অরিয়ন তার ভালোবাসার পুরুষ সঙ্গীদের কথা বলতেন এবং আশা করতেন আরো ভালোবাসা পাওয়ার। আর্টেমিস বলতেন তার সঙ্গী নিম্ফদের কথা, বলতেন নিম্ফদের ভালোবাসার কথা। খুব দ্রুতই তারা একে অপরের প্রিয় বন্ধুতে পরিণত হলেন।

একরাতে আর্টেমিস এবং অরিয়ন আগুনের পাশে বসে গল্প করছিলেন। হঠাৎ করে অরিয়ন আর্টেমিসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর্টেমিস, আমার বন্ধু! আমার সৌভাগ্য, তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে। যে ভালোবাসা আমরা একে অপরকে দিয়েছি, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সেটা এবং আমার মনে হয় তোমাকে ভালোভাবে বোঝার জন্য আমিই সেরা মানব”।

“আমাদের বন্ধুত্বটাকে আমিও খুব মূল্য দিই, অরিয়ন,” এই কথা বলে আর্টেমিস অরিয়নকে বন্ধুত্বের আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরলেন। অরিয়ন আগুনের চারপাশে আনন্দে নাচতে লাগলেন, নাচতে লাগলেন আর্টেমিসও। তাদের আনন্দের কল কল ধ্বনিতে যেনো অন্ধকার বনভূমি জেগে উঠলো!

পরের দিন, এপোলো, আর্টেমিসের জময ভাই, সেই বনভূমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি আগুনের গন্ধ শুঁকে এসে দেখলেন আর্টেমিস এবং অরিয়ন গভীর ঘুমে মগ্ন তখনো। মানব সুন্দর অরিয়নকে দেখে এপোলোও অভিভূত হলেন, কিন্তু পরক্ষনেই চিন্তা করলেন আর্টেমিসও নিশ্চয়ই অরিয়নকে দেখে মুগ্ধ এবং হয়তোবা অরিয়নের বাহুডোরে বাঁধা পড়ে আর্টেমিস আর কুমারী নাও থাকতে পারেন। এই চিন্তা করে এপোলো রাগান্বিত হয়ে উঠলেন। কিন্তু তার ক্রোধ গোপন করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে অরিয়ন এবং আর্টেমিসকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে তুললেন। তারা এপোলোকে তাদের মাঝে সাদরে বরণ করে নিলেন।

আর্টেমিস তার ধর্মযাজিকাদের সময় দিতে চলে গেলে, এপোলো এবং অরিয়ন একে অন্যকে জানার, বোঝার সুযোগ পেলেন। এপোলো ছিলেন সূর্যদেব, দেখতে সুদর্শন, জ্ঞানী। অরিয়ন সহজেই তার প্রেমে পড়লেন। এপোলোও যেহেতু অনেক দেবী এবং নারীদের মতো, পুরুষদেরও প্রেমিকা হিসেবে গ্রহন করতেন, তাই সহজেই দুই জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হলো। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা আদিম খেলায় মেতে থাকলেন। পরিশ্রান্ত হয়ে তারা যখন কথা বলছিলেন, অরিয়ন বলে উঠলেন, “আর কিছুক্ষন পরেই আর্টেমিসও আসবেন”। বোনের নাম শুনে ঈর্ষায় আবারো রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এপোলো।

“আমি প্রচন্ডভাবে হতভম্ব যে, তুমি আমার সাথে সময় কাটানোর সময় অন্য কারো নাম নিচ্ছ, যার প্রতি তুমি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছ?” এপোলো ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন।

অরিয়ন হেসে উঠলেন। কোনো কিছু চিন্তা না করেই বলতে লাগলেন, “আমার পক্ষপাতিত্ব? কিন্তু, হে দেবতা। আপনি জানেন, আর্টেমিস কুমারী দেবী। তাকে কোনো পুরুষ মানুষই কখনো পরিপূর্ণভাবে জানতে পারবে না। সে আমার সঙ্গী, সেটা শিকারের সময় এবং বনে। বিছানা বা অন্তগৃহের সঙ্গী নয়। আর তাছাড়া আপনি বুঝতে পেরেছেন, আমি পুরুষে আসক্ত”।

এপোলোও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করতে চাইলেন না। অগ্নিদৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি আমাকে অপমান করছ, হে মরণশীল। আমি কখনই তোমার মতো কোনো পুরুষের প্রেমিক নই। আমি প্রেমিকা হিসেবে সবসময়ই নারীকেই গ্রহন করি। তুমি তো কিছুই নও, এক বালক মাত্র, যার সাথে শুধু খেলা করা যায়!”

ভীত কন্ঠে অরিয়ন বললেন, “না দেবতা, আমি আপনাকে অপমান করছি না। আমি কীভাবে আপনাকে অপমান করি, যেখানে আজ আমরা আনন্দের সাথে সময় উপভোগ করেছি”। এপোলো কোনো উত্তর না দিয়ে ঝড়ের গতিতে চলে গেলেন।

এপোলো চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে আর্টেমিস অরিয়নকে অন্ধকারে ফোঁপাতে দেখলেন। আর্টেমিস অরিয়নকে সান্ত্বনা দিলেন, অরিয়নের কাছ থেকে সব কথা শুনলেন এবং এরপর অরিয়নের ইচ্ছানুযায়ী একাকী থাকতে দিয়ে বনের ভিতরে হারিয়ে গেলেন।

রাতে অরিয়ন এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলেন। তিনি স্বপ্ন দেখলেন, এক বিশাল মাকড়সা বনভূমি ভেদ করে তাকে আক্রমন করছে এবং প্রায়ই হত্যা করে ফেলছে, অথচ তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না! তিনি জানতেন না, এই মাকড়সাকে পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং এপোলো। স্বপ্নের মধ্যেই অরিয়ন মাকড়সাকে আঘাত করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না! মাকড়সা যখন তাকে চূড়ান্ত আঘাত হানবে, তখনই অরিয়নের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

ভোর বেলায় অরিয়নের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, তিনি খুব ঘামছিলেন। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলেন এই ভেবে যে, সেটা ছিলো স্বপ্ন! ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন অরিয়ন, আর্টেমিসকে খুঁজে বের করে স্বপ্নের কথা জানাবেন। কিন্তু ঘরের বাইরে এসে দেখেন, স্বপ্নে দেখা সেই বিশাল আর ভয়ংকর মাকড়সাটি তার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি তীর ধনুক এবং বর্শা দিয়ে আঘাত করলেন, কিন্তু স্বপ্নের মতোই বাস্তবেও কিছু করতে পারলেন না। ভয় পেয়ে সাগরের দিকে পালিয়ে গেলেন অরিয়ন, পিছনে মাকড়সা। অরিয়ন সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, তিনি জানেন কীভাবে সাগরের উপর দিয়ে দৌড়াতে হয়, তার বাবা পসাইডন তাকে শিখিয়েছিলেন।

ইতোমধ্যে, এপোলো আর্টেমিসের সাথে দেখা করেছিলেন। আর্টেমিস রাগান্বিত হয়ে আগের দিনে অরিয়নের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলেন। এপোলো এতে উত্তেজিত না হয়ে শান্তভাবে আর্টেমিসকে জানান, খুব খারাপ এক খবর আছে। তিনি বলেন, ক্যান্ডায়ন নামের এক দুষ্টু লোক দেবী আর্টেমিসের এক ধর্মযাজিকা ওপোসের শ্লীলতাহানি করেছে এবং এখন সাগর পাড়ি দিয়ে দূর দ্বীপে যাচ্ছে এই আশায় যে আর্টেমিস তাকে কোনো শাস্তি দিতে পারবেন না!

দেবী আর্টেমিস এই কথা শুনে এতোই ক্রুদ্ধ হলেন যে, ওপোসকে পর্যন্ত ডেকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে সাগর পাড়ে ছুটে গেলেন। এপোলো পিছু পিছু গেলেন, দূর সমূদ্রে দেখিয়ে দিলেন অরিয়নকে। রাগে উত্তেজিত আর্টেমিস বোঝার চেষ্টাই করলেন না, সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন অরিয়ন। তিনি ক্যান্ডায়ন ভেবেই তীর নিক্ষেপ করলেন এবং দেখলেন সেই তীরে বিদ্ধ হয়ে অরিয়ন সাগরে ডুবে যাচ্ছেন।


আর্টেমিস অরিয়নকে তীরবিদ্ধ করছেন

এপোলো যখনই দেখলেন তার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে, তিনি দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। আর্টেমিস বনে ফিরে এসে এবার ওপোসের কাছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, ওপোসের শ্লীলতাহানি কেউ করেনি! ওপোসের কোনো ক্ষতি হয় নি! আর্টেমিস সবকিছু বুঝতে পারলেন। তিনি দ্রুত সাগর পাড়ে ফিরে গেলেন। সেই তীরবিদ্ধ দেহকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে দেখলেন, এ যে অরিয়ন! তিনি অনেকভাবে চেষ্টা করলেন অরিয়নকে বাঁচাতে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। অরিয়নের আত্মা অরিয়নের শরীরকে ছেড়ে চলে গেলো মৃতদের আত্মার দেশে।


অরিয়নের মৃতদেহের উপর আর্টেমিস (শিল্পী- ড্যানিয়েল সেইটার, ১৬৮৫ সাল)

আর্টেমিস অরিয়নের শরীরকে আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জে স্থান দিলেন, সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন পুরুষ এবং নারীতে সম্পর্ক শুধু প্রেমেরই হতে পারে না, হতে পারে বন্ধুত্বের, হতে পারে স্নেহের, হতে পারে শ্রদ্ধার, কিন্তু সবকিছুই ভালোবাসার। সেই মাকড়সাকেও তিনি হত্যা করলেন, স্থান দিলেন অরিয়নের পাশেই। নক্ষত্রপুঞ্জে যেটাকে আমরা কালপুরুষ হিসেবে চিনি, সেই নক্ষত্রই হচ্ছেন আমাদের অরিয়ন।


কালপুরুষ নক্ষত্র (শিল্পী-জোহানেস হেভেলিয়াস, ১৬৯০ সাল)

এই সিরিজের আগের লেখাগুলোঃ

সৃষ্টিতত্ত্বঃ
পর্ব-১: বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি এবং ইউরেনাসের পতন
পর্ব-২: টাইটান যুগের সূচনা এবং অলিম্পিয়ানদের জন্ম
পর্ব-৩: প্রথম টাইটান যুদ্ধ এবং জিউসের উত্থান
পর্ব-৪: মানবজাতির সৃষ্টি, প্রমিথিউস এবং পান্ডোরা উপাখ্যান
পর্ব-৫: প্রমিথিউসের শাস্তি এবং আইও
পর্ব-৬: আবার যুদ্ধ- জায়ান্ট এবং টাইফোয়িয়াস
পর্ব-৭: ডিওক্যালিয়নের প্লাবন

দেবতাদের গল্পঃ
পর্ব-৮: জিউস, মেটিস এবং এথেনার জন্ম
পর্ব-৯: এথেনার গল্পকথা-প্রথম পর্ব
পর্ব-১০: এথেনার গল্পকথা- দ্বিতীয় (শেষ) পর্ব
পর্ব-১১: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ আফ্রোদিতি, হেফাস্টাস এবং অ্যারিসের ত্রিমুখী প্রেমকাহিনি
পর্ব-১২: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ অ্যাডোনিসের সাথে অমর প্রেমকাহিনী
পর্ব-১৩: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ এনকেসিসের সাথে দূরন্ত প্রেম
পর্ব-২০: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ লেমনসের নারী এবং অন্যান্য
পর্ব-২১: লেটোঃ এপোলো এবং আর্টেমিসের মায়ের কাহিনী
পর্ব-২২: আর্টেমিসের গল্পকথাঃ একটাওনের মন্দভাগ্য
পর্ব-২৩: আর্টেমিসের গল্পকথাঃ এলোয়াডি, আলফিউস ও আরেথুসা এবং ক্যালিষ্টোর কাহিনী

ভালোবাসার গল্পঃ
পর্ব-১৪: পিগম্যালিয়ন এবং গ্যালাতিয়া
পর্ব-১৫: পিরামাস এবং থিসবি
পর্ব-১৬: হিরো এবং লিয়েন্ডার
পর্ব-১৭: বোসিস এবং ফিলোমোন
পর্ব-১৮: কিউপিড এবং সাইকী- প্রথম পর্ব
পর্ব-১৯: কিউপিড এবং সাইকী- শেষ পর্ব

লেখকঃ

এস এম নিয়াজ মাওলা

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট


মন্তব্য

ঈমান নূর এর ছবি

ম্যান ইন ব্ল্যাক মুভিতে অরিয়ন নক্ষত্রের নাম শুনসিলাম, বেশ লাগল হাসি চলুক

-------------------
ঈমান নূর

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন, খুব।

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

-নিয়াজ

এক লহমা এর ছবি

হায় ভালবাসা! ঈর্ষা তোমাকে হত্যা করেছে বারে বারে! লেখায় হাততালি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক তাই!

অনেক অনেক ধন্যবাদ একলহমা ভাইয়া।
ভালো থাকুন, খুব।

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল হাততালি

গান্ধর্বী

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন আছেন আপনি? আপনাকে আমার ব্লগে দেখে খুব ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন, খুব।

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যানন্দ ভাইয়া, খালি চানাচুর খাইলে হবে! ভালো-মন্দ কিছু বলেন!

কেমন আছেন ভাইয়া? ভালো থাকুন, খুব, খুব, খু-উ-ব।

-নিয়াজ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
শাহ্‌জাহান প্রিয়তমা স্ত্রী স্মরণে তাজমহল বানায়
আর্টেমিস অরিয়নকে কালপুরুষ বানিয়ে দেয় ---
আমার না আছে সম্পদ, না আছে ক্ষমতা
তাইতো ভালোবাসার গল্প শুনে শুধুই দীর্ঘশ্বাস মন খারাপ

শুভেচ্ছা, নিরন্তর।
ভালো থাকবেন নিয়াজ।

-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোই লিখেছেন পলাশ ভাইয়া। আমারো আপনার মতোই অবস্থা। তাইতো "আমার না আছে সম্পদ, না আছে ক্ষমতা, তাইতো ভালোবাসার গল্প শুনে শুধুই দীর্ঘশ্বাস"।

ভালো থাকুন ভাইয়া, খুব।

-নিয়াজ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ঈর্ষা ছাড়া কেন যে কোন উপকথার গল্প হয় না! আর সব গল্পগুলোরই করুণ পরিণতি হয় শেষে!!

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, কেমন আছেন?
আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন, খুব।

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় গ্রীক মিথলজির ফ্যান ছিলাম। হাঁসে টানা রথে চড়ে ঘুরার ইচ্ছে হতো তখন।
আপনার পুরো সিরিজটি সময় করে পড়বো ভাবছি।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১১, ২০১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

অপেক্ষায় আছি আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকুন, শব্দ পথিক ভাই।

-নিয়াজ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।