এলেবেলে ছেলেবেলা – ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৭/১১/২০১৩ - ১০:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_0754

- খবরদার, তুলবিনা বোল্লাম। আমি আগে দেখচি কিন্তু।
- বললেই হইলো? আমি আগে দেখচি। যাঃ ভাগ।

স্থানঃ রোদে পোড়া রাস্তা। কালঃ ১৯৯৫ কি ৯৬। বড়জোর ৯৭। পাত্র-পাত্রীঃ আমি আর আমার বন্ধু।

কি বোঝা গেল কিছু? না, তাইতো? শুনুন তাহলে...

তখন ফাইব সিক্স। হঠাৎ নতুন একটা হুজুক উঠল, যেটা ক্রমেই কংক্রামক ব্যাধির চেহারা নিল। পিচবোর্ডের মলাট লাগানো সুদৃশ্য খাতার ভেতরে দেশলাই বক্সের কভার আঠা দিয়ে লাগানো। তার নিচে সংখ্যা লেখা। যখের ধনের মত আগলে রাখতাম সেই খাতা। ইস্কুলে নিয়ে গেলে টেনশনে হাত পা ঘেমে একাকার কান্ড। কেউ যদি টিফিন পিরিওডে... আবার না নিয়ে গেলেও প্রেষ্টিজ পুরো পাংচার। দেখাতে হবে না, কতগুলো জমল। পরীক্ষায় দু নম্বর কম পেলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু দেশলাই কালেকশনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে টপকাতে না পারলে ফ্রাষ্টু খাওয়ার চোটে কেস দফারফা। ডিঙি, শক্তি, বেল... আরো কত ব্র্যান্ডের দেশলাই। না, ভুল বললাম, আমাদেরে সিন্দুকের সম্পত্তি।

IMG_0753

তারই অবশবম্ভাবী পরিণতি রাস্তায় শকুনের নজর। বিশেষত বাজার কিংবা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা। কফ, থুথু, পান-গুটকার পিক – কোন আনহাইজেনিক বাবাজীবনের হিম্মত ছিলো না, আমাদের দেশলাই অন্বেষণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক হাতদিয়ে মুখ রুমালে ঢেকে অন্যহাতটাকে অন্যরকমভাবে কাজে লাগাতে আমাদের জুড়ি ছিল না।

পাড়াতুতো এক দিদির গল্প ধাঁ করে মনে পরে গেল। দিদি কাছের গঞ্জের বাজারে গেছে। এক অচেনা কাকু পকেত থেকে দেশলাই বের করে ফস করে জ্বেলে একাখানা ধরালেন আয়েশ করে।

-কাকু দেশলাইটা দেবেন?
-দেশলাই, মানে...
-আসলে দেশলাই জমাই তো, খাতায় আঠা দিয়ে আটকে রাখি। আপনারটা পেলে দুশো হবে।
সেই দেশলাইখানা দেখে ঈর্ষায় জ্বলেছি।

বাইরে বেড়াতে গেলে, বিশেষত পরীক্ষার পরে বা পুজোর ছুটিতে, বন্ধুরা আগে থেকে অগ্রিম বুকিং করে রাখত। একই দেশলাই একাধিক পাওয়া গেলে সেটা দিয়ে একটা বিনিময়প্রথা গড়ে তুলেছিলাম আমরা। বাকীর খাতাও ছিলো। ধরুন, আপনার কাছে আমি একটা নিলাম, এই মুহূর্তে আমার হাত ফাঁকা; এক্ষেত্রে পরে আপনার দেশলাই শোধ দেওয়ার ব্যাপারে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভিনরাজ্যে গিয়ে আনন্দে দশখানা হয়ে বড়দের চোখ এড়িয়ে রাস্তাঘাটে জমিয়ে কত যে দেশলাই কুড়িয়েছি। কিনেছিও। এমনও হয়েছে, একই দোকান থেকে তিন রকম দেশলাই কিনে দোকানদারের চোখ ছানাবড়া করে দিয়েছি।
আর বন্ধুদের চোখ?

IMG_0752

পুরোনো বাতিল জিনিষ ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ পেলাম, বলা ভালো আবিষ্কার করলাম খাতাটা। নাইনে ওঠার পর থেকে ওটার প্রয়োজন ধীরে ধীরে কমেছে, আরো বড় হওয়ার সাথে সাথে অন্যসব জিনিষের মত, যেগুলো ছাড়া একটা সময় আমাদের মুহূর্তগুলো বড্ড বেরঙীন হত, আমার দেশলাই জমানো খাতাটায় ধুলোর আস্তরণ পুরু হয়েছে আরো। সেই ধুলোর আবরণ ঝেড়ে পুছে দেশলাইগুলোর গায়ে লেগেথাকা কিশোরবেলার মন কেমন করা মম গন্ধটা পেলাম। অনেকদিন পর।
****************************************
# দীপালোক
ই মেলঃ

********************************************************************************************************************************
(চলবে?)


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

আমার ছোটবেলার কিছুই নেই। থাকলে বেশ হতো এটা আমি প্রায়ই ভাবি।

দু'টো পরামর্শ
১। ইমেজ imgur.com-এ হোস্ট করলে তাড়াতাড়ি লোড হয়। ইমেইজ একদম প্রথমে দিতে চাইলে সেটার আকার ছোট করে দেয়া উচিৎ। এটা না করলে হোমপেজ ভচকে যায়।
২। একটানে স্পেস ছাড়া কোন স্পেশাল ক্যারেকটার না ব্যবহার করা ভালো। স্পেস না দিলে লেখার জায়গা ছেড়ে ডানদিকে চলে যায়। এটা দৃষ্টিকটু।

দীপালোক এর ছবি

সুচিন্তিত পরামর্শের জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
imgur এর কথা তো জানতামই না। ফ্লিকারকে তাহলে টাটা বলা যায়

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ছোট বেলায় আমি জমাতাম ডাক টিকেট। বড় হবার পর বহুদিন স্ট্যাম্পবুকটি নিভৃতে পরে ছিলো। কয়েক মাস আগে হঠাৎ মনে হল এরা আমার অমূল্য সম্পদ। ছোট ভাইকে বললাম সেগুলো পোস্ট করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে। এখন সেগুলোর দিকে তাকালে অনেক পুরোন স্মৃতি মনে পড়ে।

দীপালোক এর ছবি

স্ট্যাম্পের নেশাও পেয়েছিল। তবে সুবিধে করতে পারিনি এলাইনে। আত্মীয় স্বজন সব দেশেই, ফরেনের ডাকটিকিট সাঁটা খাম ডাকপিওয়ন বাড়ীতে দিয়ে যাবে এমন ভেবে লাভ নেই। গাদাগুচ্ছের পয়সা খরচ করে স্ট্যাম্প কিনে মন ভরে নি। তারচে রাস্তা থেকে... হাসি

এক লহমা এর ছবি

মনে পড়ে গেল সেই কোন পুরান দিনের স্মৃতি। আমিও জমাতাম দেশলাই বাক্স, এমনি করে। ভাল লাগল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দীপালোক এর ছবি

ছোটবেলা গুলো সব ক্যামন একইরকম।

অমি_বন্যা এর ছবি

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ সবসময় ছুঁয়ে যায়। লেখা চলুক তবে লেখার মাঝে স্পেস আর বানানের দিকটা খেয়াল রাখবেন।

দীপালোক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলেন। দেশলাইগুলোর ছবি দেখতে ইচ্ছে করছে। একটা ছবিব্লগ নামিয়ে দিতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দীপালোক এর ছবি

না, আসলে এ ধরণের ছবিব্লগে ছবিগুলো একঘেয়ে হয়ে যাবার ভয় আছে। তারচে দুএকখানা ছবির পাশে ফাঁকিবাজি কায়দায় দু-চার কথা... হাসি
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- পাশে থাকার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলবে না শুধু দৌড়োবে।
আমার দেশলাই বাক্স জমানোর শখ ছিলো, সঙ্গে সিগ্রেট এর প্যাক।
একটু বড় হয়ে ডাকটিকেট, ভিউকার্ড, পোষ্টার।
এরপর পেপার কাটিং, পত্রিকা ঘুরে অবশেষে বই।
এখন শুধু বইটাই আছে। বাকীসব কালের গর্ভে, ধুসর স্মৃতিতে।

ভালো থাকবেন দীপালোক।
অনেক শুভেচ্ছা।

----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

দীপালোক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল...
আমি অবশ্য ডাকটিকিট, ট্রেন আর বাসের জমাতাম ।
লেখা ভালো লেগেছে, চলুক...

-আরাফ করিম

দীপালোক এর ছবি

আর বাসের টিকিট দিয়ে কন্ডাক্টার কন্ডাক্টার খেলতেন না? হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল...
আমি অবশ্য ডাকটিকিট, ট্রেন আর বাসের জমাতাম ।
লেখা ভালো লেগেছে, চলুক...

-আরাফ করিম

মুদ্রা সংগ্রাহক এর ছবি

ছোটবেলায় ডাকটিকেট জমাতাম। ক্লাস সিক্সে শুরু করলাম কয়েন জমানো। একবার স্কুলে গিয়ে আমার সমস্ত সংগ্রহ হারিয়ে যাওয়ায় ইতি ঘটে কয়েন কালেকশনের। ডাকটিকেট জমানোও বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের গন্ডী পেরুতে পেরুতে। আবার চাকুরীজীবনে ঢুকে শুরু হয়েছে কয়েন, ব্যাংকনোট সংগ্রহ। ডাকটিকেট ও জমছে কিছু কিছু।

দেশলাই জমানো শুরু করে দিতে পারেন আবার ও।

মুদ্রা সংগ্রাহক

দীপালোক এর ছবি

খাতায় এখনো কয়েকপাতা ফাঁকা আছে। চিন্তিত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দীপালোক এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশলাই বক্স এবং ডাকটিকেট দুটোই শুরু করেছিলাম ক্লাস সিক্সে। ডাকটিকেট সংগ্রহে সাফল্য আসে সখ হিসেবে অনেকদিন টিকে ছিলো, কিন্তু দেশলাই বক্স সংগ্রহে ফেল মেরেছিলাম শুরুতেই।

ছেলেবেলার হারানো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। হেপি ডেইজ।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১৮, ২০১৩

দীপালোক এর ছবি

আমিও ভুলেই ছিলাম। যত নষ্টের গোড়া খাতাটা। ওটাই বলল, লেখ ছাইপাশ যা হোক আমায় নিয়ে। হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই শখ কারো থাকতে পারে কল্পনা করাও মুশকিল। একেবারে নতুন কিছু

দীপালোক এর ছবি

হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বাহ্, পড়ে ও দেখে ভাল লগলো। চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।