আবার এলো যে সন্ধ্যা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২২/১২/২০১৩ - ৭:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায় হয়ত এই আপ্তবাক্যেটি মাথায় রেখেই বাবা বানিয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের দোতলা বাড়ি। পূর্বদিকস্থ সেই লম্বা ঝোলা বারান্দায় বসে অরুণোদয় দেখার আগ্রহ কখনো জাগেনি বলে আফসোস করি এখন। কাকডাকা ভোরে ঘুমটাও চেপে বসত পরম আবেগে। অথচ পশ্চিমা বারান্দায় জড়িয়ে আছে আমার হাজারো সুখস্মৃতি। সেখানে দাঁড়িয়ে বহু মন্থর দুপুর পার করেছি ফেরিওয়ালার ডাক শুনে। দুপুরের স্নানের পর পিঁড়ি পেতে রোদ পোহাতে বসতাম সেই বারান্দায়, শুনতে পেতাম রিকশার টুংটাং আর ফেরিওয়ালার হাঁক। পেরিয়ে যেত আলসে ভালোলাগার কিছু বিমুগ্ধ প্রহর, ধরণীর আবর্তনে পশ্চিম আকাশের সীমান্তে একটু একটু করে হেলে পড়ত রোদের ছটা।

দৃষ্টির সীমানায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি আগারগাঁও কলোনির পিছনে ডুবতে থাকা অস্তগামী সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোয় তেজগাঁয়ের পুরানো বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকা হয়ে উঠত বড্ড মায়াময়। চায়ের কাপে আলতো চুমুকে সেই বারান্দায় বসে বিদায় জানাতাম দিনের আলোকে। চাইতাম আরেকটু বেশী সময় সূর্যমামা যেন থেমে থাকে দৃষ্টির পরিসীমায়। রাত্রি নেমে এলেই তো কয়েল জ্বালিয়ে বসতে হবে পড়ার টেবিলে, লোডশেডিঙের হুটকো ঝামেলায় হবে প্রাত্তাহিক ছন্দপতন।

দেশ ছেড়ে প্রবাসে এসে ফেলে আসা অনেক কিছুই নতুন করে যোগার করতে হয়েছে, জীবনধারায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে আরও অনেক নতুনত্বের। বয়সটাও তো বেড়েছে কালের আবর্তনে। ‘কাকডাকা ভোর’ দেখাটা আক্ষরিক অর্থে অসম্ভব হলেও জীবিকার তাগিদে জেগে উঠি প্রত্যুষে। সন্ধ্যে বেলা ঘুরে বেড়াই বনে-বাদারে আর পাহাড়ি জনপদে। একপানে চেয়ে থাকি পশ্চিম আকাশে। নস্টালজিয়া আপ্লুত করে আমায়, একটি বারের জন্য হলেও মরিবার পূর্বে ফিরে যেতে মন চায় আমাদের সাদা বাড়ির সেই পশ্চিমা বারান্দায়।

ফটোক্যামেরা কেনার সামর্থ্য আমাদের ছিলনা। অনেক প্রিয় মুখ আর মুহূর্তের ছবি আঁকা আছে হৃদয়পটে যাতে পড়বে না কোনদিন সময়ের মলিন বলিরেখা। তেমনি সদা সজীব থাকবে হ্যাপি আখন্দের সেই কালজয়ী গান যা শুনতাম ঠিক দীপ নেভার আগে বসে থেকে সেই পশ্চিমা বারান্দায়। শুনি আজও সেই গানের কলি............ সাত সমুদ্র তের নদী দূরে থেকেও গোধূলিলগ্নে হারিয়ে যেতে ভালোবাসি প্রকৃতির মাঝে।


আবার এলো যে সন্ধ্যা
শুধু দুজনে


চলনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে


ঝাউ বনে হাওয়াগুলো খেলছে
সাওতালি মেঘগুলো চলছে


লাল লাল শাড়িগুলো উড়ছে
তাঁর সাথে মন মোর দুলছে


ঐ দূর আকাশের প্রান্তে
সাত রঙা মেঘগুলো খেলছে


এই বুঝি নেমে এলো সন্ধ্যা
ভেবে যায় কি জানি কি মনটা


পাখিগুলো নীড়ে ফিরে চলছে
গানে গানে কি যে কথা বলছে


ভাবি শুধু এখানেই থাকব
ফিরে যেতে মন নাহি চাইছে

মাগরিবের আজানের পরিবর্তে কানে ভেসে আসে গির্জার ঘণ্টাধ্বনি, ঘোর ভাঙ্গে আমার…… খুঁজে ফিরি ঘরে ফেরার ফিরতি পথ।

.........জিপসি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

১, ২ আর ৭ নম্বর ছবি দারুণ লেগেছে! হাততালি

গান্ধর্বী

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

.........জিপসি

মইনুল রাজু এর ছবি

দারুণ সব ছবি। চলুক

ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রাজু ভাই।

.........জিপসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

.........জিপসি

অমি_বন্যা এর ছবি

ছবিগুলো দারুণ , জিপসি। ছবিগুলোর লোকেশান কোথায় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সমুদ্রে সূর্যাস্তের ছবিদুটি উরুগুয়েতে তোলা। বাকিগুলি ইতালির ল্যান্ডস্কেপ।

.........জিপসি

দীনহিন এর ছবি

অসাধারণ!
অসাধারণ গানটিকে অসাধারণ করেই সাজিয়েছেন।
ছবিগুলো কোন দেশের? ২, ৪, ৬ স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়! গানের লিরিকগুলো কানে ভাসতে থাকে, কেমন ভাবালুতা তৈরি করে!
আরো পোস্ট আশা করছি আপনার কাছে।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

দুটি বাদে সব ছবি ইতালির বিভিন্ন এলাকার ল্যান্ডস্কেপ। কাভার ফটো ইজেও হ্রদের (lago di iseo) এক সন্ধ্যা।

.........জিপসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছুই কিন্তু বলা হয়ে গেল স্যার হাসি ……… ধন্যবাদ।

.........জিপসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হা, মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। একটা সময়ে মাঝে-মধ্যে হ্যাপি আখন্দের সাথে দেখা-সাক্ষাত হতো। ও অবশ্য বয়সে আমার ছোটই ছিল। দেখা হলে দু-একটা গান শোনাবার বায়না করতাম।
ছবিগুলো সুন্দর ! চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি সত্যি ভাগ্যবান বাঙালি! গুরু গুরু হ্যাপি আখন্দকে কাছ থেকে দেখেছেন, আপনাকে গান গেয়ে শুনিয়েছে......আহা...... লিখুন না আমাদের জন্য আপনার সেইসব অভিজ্ঞতা।

.........জিপসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন দারুন ক্ল্যাসিক সব ছবি, ২নং ছবিটি অন্যতম সেরা এই পোষ্টের। হাততালি হাততালি

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটি অতীতের এক পোষ্টে জুড়ে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যাবেলা নিয়ে লিখছি বলেই প্রিয় ছবিটি আবার জুড়ে দিলাম। আমার পোষা কুকুর দিয়ানার সাথে গিয়েছিলাম লেদ্রো লেকে।

.........জিপসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সবগুলো ছবিই সুন্দর, আপনার পোষা কুকুরের সাথে আপনার ছবিটা অসাধারণ।

শব্দ পথিক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারও প্রিয় একটি ছবি। হয়ত দিয়ানা-ও একই জবাব দিবে।

.........জিপসি

এক লহমা এর ছবি

অ সা ধা র ণ !
মুগ্ধ!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

লইজ্জা লাগে ধন্যবাদ

.........জিপসি

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

সুন্দর ছবি!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

.........জিপসি

তারেক অণু এর ছবি

লেখার আবেগটা ভাল লেগেছে, কিন্তু ছবিতে এইবার বেশি সমস্যা, শেষেরটা বাদে কোনটাই আপনার সুনাম ধরে রাখতে পারে নাই, বিশেষ করে প্রথম ছবিটা নীড়পাতায় আসার মত না একেবারেই।

চলুক জিপসির ঘোরাঘুরি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কোন সুনাম নাই রে ভাই……… ব্লগ লিখি বাংলাভাষায় একটু আড্ডাবাজি করব বলে। অনেক বছর ধরে জন্মভূমিতে যাইনা, মনটা মাঝে মাঝে হু হু করে! ছাইপাঁশ যাই লিখি মডুগো বদান্যতায় প্রিয় সচলায়তনে একটু আড্ডাবাজির সুযোগ মিলে যায়।

আপনে মডু হইলে আমার আর ভাত নাই বলেই মনে হচ্ছে!!! রেগে টং

ছবির সমস্যা কাটবেনা। লো-বাজেটের ক্যামেরা (Nikon Coolpix L18) গুঁতাইয়া এর থেকে ভাল কিছু সম্ভব না। পয়সা জমানো শুরু করছিলাম ভাল ক্যামেরা কিনব বলে, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ প্রফেশনাল ট্র্যাকিং জুতা কিনে সব খরচ করে ফেলেছি। তারপরও মনে শান্তি যেখানেই যাই একটুকরো বাংলাদেশ আমার সাথে সাথে যায়!

.........জিপসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছবিগুলো দারুণ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ফটোগ্রাফি জানিনা, ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে বের হই…… সুন্দর মুহূর্তকে ধরে রাখার চেষ্টা করি।

.........জিপসি

তিথীডোর এর ছবি

বাহ, ছবির সঙ্গে গানের লাইনগুলো সুন্দর করে মিলিয়েছেন। চলুক

আর আমার চোখে সেরা ছবি ৯। এই বেঞ্চে একা একা বসে একদিন সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ হলে হতো।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- মিলানোর চেষ্টা করেছি আরকি...... হ্যাপির কালজয়ী গানকে যেভাবে যতবারই মিলানোর চেষ্টা করুন না কেন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

.........জিপসি

মনি শামিম এর ছবি

জিপসি, তোমার যে ছবিটি সবচাইতে আকর্ষণীয় বলে মনে হল, মানে কম্পোজিশনের দিক দিয়ে, তাতে অনেক পোস্ট প্রসেসিং হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমার পোস্ট প্রসেসিং ছাড়া ছবিটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। কয়েকটি ছবি আসলেই মন মাতানো। চমৎকার কম্পোজিশন। পরিষ্কার ছবি। তুমি আরও তুলতে থাকো। তোমার ছবি আরও দেখতে চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিব্লগ লেখার যোগ্যতা আমার নেই সেটা ভালই বুঝি। আমার নেশা হল হাইকিং…… একা একা বা কখনো একজন সঙ্গী সাথে নিয়ে। ক্যামেরা কাঁধের ঝোলায় নিয়ে যাই কারন ঘরে এসে ৫ বছরের ছেলেকে কম্পুটারে ছবি দেখাব বলে। স্বপ্ন দেখি একদিন ও হবে আমার ট্র্যাকিং সঙ্গী।

ব্লগপোষ্ট লিখতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি, যা বলব বলে ভাবছি তা ভাষায় লিখতে না পারলে ছবি দিয়ে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করি।
পোষ্ট প্রসেসিং ব্যাপারটা আমিও খুব একটা পছন্দ করিনা। অনেক আগের তোলা কিছু প্রিয় ছবিতে সামান্য ঘষা-মাজা না করলে আবার চলেও না।

নাতালের ছুটিতে কি লিখছেন আমাদের জন্য?

.........জিপসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।