মানবতার হ্যাশট্যাগ; হ্যাশট্যাগের মানবতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৬/০৭/২০১৪ - ৩:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দৃশ্যপট ১ - ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ লোক হত্যা করা হয় । ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ উত্তাল । ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবাই যুদ্ধপরাধের চাইবে এটাই স্বাভাবিক । তখনও অনেককেই বলতে শুনেছি, " আমিও বিচার চাই .. (দীর্ঘ বিরতি) .. কিন্তু, যদি, কেবল যদি, স্বচ্ছতা ইত্যাদি ইত্যাদি .... " ।

দৃশ্যপট ২ - ফেসবুক বিভ্রান্তিমুলক পেইজ থেকে হোক, জামাতের ধামাধরা প্রত্রিকায় ছাপানো ভুয়া খবরের জের ধরে হোক কিংবা নির্বাচন জয়ের আনন্দ উৎযাপনের অছিলাতেই হোক দশকের পর দশক ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষন আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংগ । প্রতি মাসেই হয়, প্রতি বছরই হয় । চারদিকে উহহ, আহহ, ধিক্কার, নিন্দার রোল উঠে । তবে এখানেও ফিরে আসে সেই শব্দগুলো । কিন্তু, যদি, তবে । " অত্যাচার হয়েছে, কিন্তু ওরাও তো উস্কানি দিয়েছে, ইসলামের অপমান করেছে । "

দৃশ্যপট ৩ - লেখালেখির অপরাধে হামলার স্বীকার হয় ব্লগার । জেল জরিমানা হয়ে যায় । খুনও হয়ে যায় এক ব্লগার । "উহহ ... মেরে ফেললো ছেলেটাকে ! আরে ওর ব্লগ পড়ে দেখছিস ? তাই বলে মেরে ফেলাটা কি ঠিক হলো ? আঈন আদালত আছে না ? হুমমম, তাও ঠিক । বিচার হওয়া দরকার কিন্তু নবীর নামে যা আজেবাজে কথা লিখেছে .... " । আবারো ফিরে আসে তারা । তবে, যদি, কিন্তু ।

এমন আরো অনেক দৃশ্যপট টানা যায় । আজ আর নাইবা টানলাম । অযথাই লেখাটা লম্বা হবে ।

গত ২/১ দিনে হ্যাশট্যাগে ভরে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম । গাজার নির্যাতিতদের পাশে দাড়ানোর হ্যাশট্যাগ । মানবতার হ্যাশট্যাগ । মানবতার হ্যাশট্যাগের জোরে মানবতা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে । আমরা সবাই আজ মানবতার অপরুপ নিদর্শন দেখাচ্ছি । 'যদি, কিন্তু, তবে' মুক্ত আনকন্ডিশনাল মানবতা । মানবতার এই বিশাল পর্বতের দিকে আমি অবাক হয়ে চেয়ে রই আর মাথায় কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায় । হামাসের রকেট, চোরাগোপ্তা হামলার টানেল কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলা তো পারলো না মানবতার হ্যাশট্যাগের শেষে যদি, কিন্তু, তবে যোগ করে দিতে । ৩০ লক্ষ বাঙালী, নিহত ব্লগার রাজীব কিংবা ধর্ষিত সংখ্যালঘু কেন তাহলে বারে বারে 'যদি, কিন্তু, তবের' জালে পড়ে যায় ?

=============
দস্যু ঘচাং ফু


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ভাল হয়েছে,চালিয়ে যান!
____________
শরিফুল_93

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ
=======
দস্যু ঘচাং ফু

টিউলিপ এর ছবি

আমি হ্যাশট্যাগের বিরোধী নই, হ্যাশট্যাগ কতটা কাজের, সেটা শাহবাগের সময় ভালোমতই টের পেয়েছি। তেমনি গাজার সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাও ভালো কাজ।

তবে দুঃখ লাগে আসলেই যখন এইরকম কিন্তুবিহীন মানবতা দেশের জন্য দেখি না।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
হ্যাশট্যাগ অবশ্যই শক্তিশালী একটি মাধ্যম। একবিংশ শতাব্দীতে দ্রুত জনমত গড়ে তোলার জন্য হ্যাশট্যাগের মত কার্যকরী উপায় আর খুব বেশী নেই। তবে প্রতিটা হ্যাশট্যাগের চেয়েও বেশী জরুরী হ্যাশট্যাগের পেছনের আদর্শে বিশ্বাস করা । আদর্শ ছাড়া হ্যাশট্যাগ কেবল কয়েকটা অক্ষরই রয়ে যায়।

বাংলাদেশের মানুষ আদর্শের জায়গাটাতেই দুর্বল।

ধুসর জলছবি এর ছবি

আমি হ্যাশ ট্যাগ করেছি গাজার জন্য, জানি তেমন বেশি কিছু হয়ত হবে না কিন্তু তবুও করেছি একেবারে কিছু না করার চেয়ে ভাল মনে করেছি বলে , যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে , সঙ্খালঘুদের উপর হামলার সময় অথবা যে কোন অমানবিক অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছি , করি, করব ।
আমরা সব ব্যাপারেই কেন যেন দল ভাগ করে নিয়েছি, বঙ্গবন্ধুর জন্য কাদলে তাজউদ্দিনের জন্য কাদা যাবে না, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য কাদবে তারা হিন্দুদের
উপর অত্যাচারের সময় চুপ থাকবে , গাজার জন্য কষ্ট পেলে সিরিয়ার, ইরাকের ঘটনা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে হবে আবার সিরিয়ায় বা ইরাকে যা হচ্ছে সেটার জন্য গাজার জন্য কষ্ট পাওয়া যাবে না। এইসব দলাদলি দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে যাচ্ছি। অন্যায় যে করুক যেখানে করুক সেটা অন্যায়। আর নির্বিচারে মানুষ মারা বা অত্যাচার করা অন্যায় এটা বোঝার জন্য কোন দলভুক্ত হওয়ার দরকার নেই , খুব বেশি বিদ্বান অথবা বুদ্ধিমান অথবা ধার্মিক হওয়ারও দরকার নেই। শুধু মানুষ হওয়াই যথেষ্ট আসলে।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ।

========
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

আগের কমেন্টেই বলেছি হ্যাশট্যাগ অবশ্যই শক্তিশালী একটি মাধ্যম । তবে হাসি পায় যখন দেখি হ্যাশট্যাগে মানবতার আবেদনের চেয়ে ফ্যাশনের প্রভাব বেশী । কষ্ট পাই যখন দেখি মানবতার হ্যাশট্যাগ খুব সিলেক্টিভ হয়ে যায় । তাই বলে এটা কখনো বলছি না যে সব কিছুতে হ্যাশট্যাগ করতে না পারলেই কেউ স্বার্থপর বা সিলেক্টিভ । আমার বিশ্বাস হ্যাশট্যাগের এই জোয়ারে সামিল হওয়া অনেকেই জানেনা ইরাকে এই বছরই ১০০০ এর উপরে লোক মারা গেছে । সিরিয়াতে গত সপ্তাহে এক যুদ্ধেই ৭০০ লোক নিহত হয়েছে । এদের দৈনন্দিন জীবনে গাজার ১০০০ নিরপরাধ মানুষের প্রান হারানোর ঘটনার ইমপ্যাক্টটা ঐ হ্যাশট্যাগের কয়েকটা অক্ষরের মতই ছোট । টাইপ করে দেয়া পর্যন্তই ।

========
দস্যু ঘচাং ফু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

শব্দটা সেইরাম হইছে হিমু ভাই । এখন থেকে প্রায়ই ব্যবহার করবো ।

=======
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাশট্যাগ শক্তিশালী মাধ্যম কি না জানি না, আর গাজার জন্য এইসব হ্যাশট্যাগ আদৌ তাঁদের কি কাজে লাগবে তা বুঝি না (হয়ত আমার অজ্ঞতা) কিন্তু এইটা বুঝি এই হ্যাশট্যাগ না দিলে আপনি ক্ষ্যাত বা আপনার মানবতা নাই।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।