'জোছনা ও জননীর গল্প' এবং কিছু ভুল তথ্য

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২০/০৪/২০১৫ - ৩:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[আমি যে আজ সচলে কিছু একটা লিখতে যাচ্ছি এর কোনো দায়-দায়িত্বই আমার না, সকল দায়-দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিবেন আয়নামতি এবং ষষ্ঠ পাণ্ডব। ওনাদের সাথে আমার পরিচয় গুডরিডস সূত্রে এবং কিছুদিন ধরে আমি ওনাদের ঝাড়ির উপরে আছি এবং ওনাদের ঝাড়ি খেয়ে আমার বোধোদয় ঘটায় (কারো কারো মতিভ্রম ও মনে হতে পারে) ব্লগে পোস্ট করছি। এটি একটি বুক রিভিউ। যা আমি গুডরিডসে লিখেছিলাম তার সামান্য পরিবর্তিত ভার্সন।]

বছর খানেক আগে প্রিয় দশটি বই বিষয়ক একটি খেলা ফেসবুকে ছিল এবং এতে অনেকের প্রিয় দশটি বইয়ের তালিকায় আমি 'জোছনা এবং জননীর গল্প'কে দেখেছিলাম। দুঃখজনক ভাবে আমার নিজের পরিচিত অনেকের তালিকায় এ বইটি ছিল। এসব দেখে আমি খুবই শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমি বইটি যখন ২০০৮-২০০৯ সালের দিকে পড়েছিলাম তখন অনেকগুলো পয়েন্টে জানা তথ্যের সাথে অমিল ঘটেছিল। যে ভুল গুলো চোখ পড়েছিল তার সব কিছু মনে না থাকলেও অনেকগুলো ভুল যে পড়ছি সে অনুভূতিটুকু রয়ে গেছে। তাই বই পড়ুয়া গ্রুপে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম যে এমন কোনো রিভিউ আছে কিনা যেখানে সমস্ত ভুলগুলো পাওয়া যাবে। সেখানেই আলোচনার সময় নিজের স্মৃতি হাতরে তিনটা ভুলের কথা বলেছিলাম।

আবার, প্রায়শই আমার গুডরিডস লিস্টে থাকা কেউ না কেউ এটাকে ৫ তারা / ৪ তারা রেট করে বসেন। ভিতরে ভিতরে অস্বস্তি হয়। টোটাল রেটিং আশঙ্কাজনক।

সম্প্রতি আরেকজন বইটাকে পাঁচ তারা রেট করে বসলে বইপড়ুয়া গ্রুপের আলোচনার সময়কার যে তিনটি ভুল মনে পড়েছিল সে তিনটি-ই পোস্ট করবো বলে সিদ্ধান্ত নিই এবং ভাগ্যক্রমে আরেকটি ভুলের কথা মনে পড়ে যায়। সে চারটি ভুল নিয়ে তৈরি এই ভুলের তালিকা। বইটি অনেক আগে পড়ায় এবং পুনরায় পড়ার ইচ্ছা না থাকায় ভুলের তালিকা একেবারেই অসম্পূর্ণ তাই পাবলিক ডোমেইনে পোস্ট করা নিয়ে পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। কিন্তু ষষ্ঠ পাণ্ডব যে ঝাড়ি দিয়েছেন, আর যাই কোথায়।

১/ হুমায়ুন আহমেদ বইটির ভূমিকায় "স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে"র নানা জায়গায় ওনার খটকা আছে বলে উনি উল্লেখ করেন। খটকার উদাহরণ দেবার জন্য একটি এখানে নারী নির্যাতনের একজন সাক্ষদানকারীর দেয়া জবানবন্দীকে উনি প্রশ্ন বিদ্ধ করে বলেছেন –

“যা আমার কাছে একেবারে গ্রহণযোগ্য না তা হলো সাক্ষ্যদানকারী বলেছেন এই সব তরুণীদের বই-খাতা-কলম ছিল। অর্থাৎ স্কুল বা কলেজে যাবার পথে তাদের ধরা হয়েছে। যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হয়েছে সে সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না।”

এটি রাবেয়া খাতুন নামে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এক সুইপারের সাক্ষ্য। সাক্ষ্যটি নানা গবেষক তাদের লেখায় ব্যবহার করেছেন। এর মাঝে আছেন শাহরিয়ার কবির,"একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি" বইতে এই সাক্ষ্য ব্যবহার করেন। এর মাঝে আছেন মুনতাসির মামুন, বইয়ের নাম মনে পড়ছে না। এবং আরও অনেকে।

আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু নিজের যুক্তিকে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীর উপর স্থান দেবার আগে ন্যূনতম গবেষণা করেননি। পাকিস্তানী সরকার রীতিমত হুকুম জারী করে ঢাকায় স্কুল-কলেজ খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছিল। ১ মে থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯ মে থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়। এমন কি ১৫ জুলাই থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ছিল পুলিশ এবং রাজাকারদের টহল। পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য সরকার পক্ষ থেকে এবং অংশ না নেবার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রচারণা করা হয়। এই তথ্য এত বইয়ে আছে যে এটা জানতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক পড়াশুনার দরকার হয় না। বহুল পঠিত জাহানারা ইমামের "একাত্তরের দিনগুলিতে"ই পাওয়া যায়।

২/ বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে "জিয়ে পাকিস্তান" নিয়ে সুশীল গোত্রীয় একটি বিতর্ক উপস্থাপন করেন, যার কোনো উত্তর তিনি নিজে দেন নি। ৭ মার্চের ভাষনে বঙ্গবন্ধু "জিয়ে পাকিস্তান" বলেননি তার প্রমাণ সচলের এই পোস্টটিতেই রয়েছে।

৩/ (এটা আমি নিজেও ধরতে পারিনি।) একদিন মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়ার সাথে দেখা করতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যে অযত্ন তাতে তাঁর হতাশার কথা জানান। কথা প্রসঙ্গে আমাদেরকে বলেছিলেন যে, এক আড্ডাতে হুমায়ূন আহমেদের সাথে ওনার দেখা হয়। উনি হুমায়ূনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পর ওয়্যারলেস মেসেজের উল্লেখ জোছনা ও জননীর গল্পে পাওয়া যায় ["big bird in the cage...others not in the nests..."] এর মধ্যে প্রথম অংশটুকু ["big bird in the cage..."] অনেক সূত্রে পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় অংশটুকুর ["others not in the nests..."] রেফারেন্স কী। তখন হুমায়ূন বলেছিলেন দ্বিতীয় অংশটুকু ওনার তৈরি। কিন্তু ততদিন উক্তিটির দুটো অংশ মিলেমিশে ছড়িয়ে পড়েছে নানা জায়গায়। বাস্তবতার সাথে ফিকশন মিশিয়ে ইতিহাসকে ঘোলাটে করার চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছিলেন মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া। এই ভুল এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এই লাইনটি হুমায়ুন আহমেদ যে পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন, পুরো উপন্যাসটি তৈরির পদ্ধতি মোটামুটি একই।

৪/ বইটির মাঝামাঝি এক জায়গায় মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকেও সুশীলতার সাথে কিছু রেফারেন্স ব্যবহার করে প্রথম ঘোষণা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন বলে যতদূর মনে পরে। কিন্তু উনি এটাকে প্রথম বলে দু-চারটা রেফারেন্স দিতে পারলে আমি বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে দিতে পারবো গাদাখানেক। এই পোস্টটা দেখা যেতে পারে।

গুডরিডস রিভিউটিতে বলেছিলাম আরও ভুলের কথা মনে পড়লে রিভিউ এডিট করে দিবো। কিন্তু অতিথি লেখক হিসেবে সেটা খুব সম্ভবত এখানে করতে পারবো না। তবুও কেউ আরও কোনো তথ্যে অসঙ্গতি জানলে জানাবেন। ধন্যবাদ।

নাবিলা

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

শেহাব এর ছবি

দরকারী লেখা।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

"জোছনা ও জননীর গল্প" কি ইতিহাস বা আত্মজীবনী নাকি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা উপন্যাস? যদিও হুমায়ুন আহমেদ বইয়ে বিভিন্ন রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন তবু এটা উপন্যাসই। এবং দুই একটা তথ্য নিয়ে আপনার খটকা থাকতেই পারে সেই জন্য আশা করতে পারেন না যে সবাই এটা কে ওয়ান স্টার রেটিং দিবে! মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে অল্প কয়েকটা বই পড়েছি তার মধ্যে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে। কিন্তু আমি আশা করিনা যে আমার মত সবার কাছে এটা ভাল লাগবে। হুমায়ুন আহামেদের লেখা হওয়াতে অনেক সুশীল শ্রেনীর এটা নিয়ে চুলকানী থাকতে পারে! আমার কোন চুলকানী নেই!

---------
কাইয়ুম

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কখনোই মনে করি না সবার ওয়ান স্টার দিতে হবে। আমি কাউকে বলিনি আসুন দলে দলে ওয়ান স্টার রেটিং দিই, বলেছি?? দুই একটা তথ্য নিয়ে আমার খটকা থাকলে এবং বিষয়গুলো "স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র", "৭ মার্চের ভাষণ" "স্বাধীনতার ঘোষণার" মত স্পর্শকাতর বিষয় হলে আমি এটিকে নির্দ্বিধায় সর্বনিম্ন রেটিং দিবো। সেটা কট্টর ইতিহাসের বই হোক, উপন্যাস হোক বা হুমায়ুনী কায়দায় রেফারেন্স সহ উপন্যাস হোক। আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অল্প কিছু বই পড়েছেন তার মাঝে এটিই সেরা মনে হয়েছে। আমি আশা করবো আপনি আরও কিছু ভাল বই পড়ুন। অনেক বই পড়ুন। অন্তত ৫০ খানা। তারপর কারো প্রতি আক্রমণাত্মক হবেন। ধন্যবাদ হাসি

নাবিলা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস এটা যেমন ঠিক, মুক্তিযুদ্ধ তেমনি আমাদের সবচেয়ে শক্ত বর্তমানও। উপন্যাস লিখছি সেই দোহাই দিয়ে কাল্পনিক তথ্য ঢুকিয়ে দেয়া যায় না যেটা সত্যকে অস্বীকার করে। উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে কাল্পনিক চরিত্র কাল্পনিক ঘটনা উঠে আসতে পারে আসাই উচিত। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সেই কল্পনা ৭ ই মার্চের ভাষণে 'জিয়ে পাকিস্তান' ঢুকিয়ে দেবে। যেখানে ৭ ই মার্চের ভাষণের কোনো লিখিত বা ভিডিও প্রমাণে এমন কোনো কিছুরই উল্লেখ নেই। উনি শুধু কল্পনার আশ্রয় নিচ্ছেন না, সেই কল্পনা দিয়ে প্রমাণিত দলীলকে অস্বীকার করছেন।

আমাদের অধিকাংশ পাঠক ইতিহাসমূর্খ, মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে লেখা উপন্যাসেও ইতিহাসের চেয়ে গল্প বড় হয়ে ওঠে। ইতিহাসের ভুল তাকে আহত করে না, বা বেশিরভাগ মানুষ জানতেই পারে না। আমি অনেকের কাছে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য জোছনা ও জননীর গল্প পড়তে, আর পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাস জানতে দেয়াল পড়তে। এই যখন আমাদের পাঠকের অবস্থা তখন লেখকের ওপর ইতিহাসের বিশাল দায় বর্তায় বৈ কী!

মুক্তিযুদ্ধ যদি এমন ইতিহাস হত যা আমাদের শুধুই এক সুদূর ইতিহাস যা আমাদের বর্তমানকে প্রভাবিত করে না তাহলেও সেই ইতিহাস নিয়ে বালখিল্য কল্পনার আশ্রয় মেনে নেয়া যেত। যদি আজকে কেউ পাল আমল নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে চায় তাহলে আমি এরকম কল্পনার আশ্রয় মেনে নিতে রাজি আছি। কিন্তু যেখানে সচেতন ভাবে রাজনীতি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেয়ার জন্যে। একদল উন্মুখ হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তখন আমাদের সামান্য বিকৃতিতেও সচেতন হতে হবে। আর এখানকার বিকৃতি তো রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পরে।

এখন আপনি সচেতনভাবে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের দলে নাকি ইতিহাসমূর্খ আই হেইট পলিটিক্সের দলে সেটা বুঝে উঠতে পারলেই বোঝা যাবে কেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকে আপনি 'চুলকানি' নামে অভিহিত করছেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাসুদ সজীব এর ছবি

এ আর নতুন কি! হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করলেই তার অন্ধ ভক্তরা ক্ষেপে উঠে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনা আরেকটু বাড়াতে হবে, সচলেই অনেক রেফারেন্স সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অসাধারণ সব লেখা রয়েছে। সেগুলো পড়ে নিয়েন সময় করে, দেখবেন তখন হুমায়ুন কে আর পীর মানছেন না। হুমায়ুনের দু-কূল রাখা ভন্ডামিতে ভরা লেখায় তখন চুলকানি না শুধু ঘৃনাও জাগবে মনে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ @মাসুদ সজীব ভাই
অবশ্যই পড়ব। তবে লেখকের এই কথা গুলো দেখে কেমন জানি মনে হল-"আবার, প্রায়শই আমার গুডরিডস লিস্টে থাকা কেউ না কেউ এটাকে ৫ তারা / ৪ তারা রেট করে বসেন। ভিতরে ভিতরে অস্বস্তি হয়। টোটাল রেটিং আশঙ্কাজনক।"
তবে এটাও ঠিক আমাদের প্রজন্মের পাঠকদের কাছে জাফর ইকবাল স্যার এবং হুমায়ুন আহমেদ পূজনীয় টাইপের লেখক। তাই ইতিহাস বিষয়ক লেখায় হুমায়ুন আহমেদের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল! কারন আমি এটাকে ইতিহাস বিষয়ক বই মনে নাকরলেও অনেকে এটা থেকে রেফারেন্স দিয়ে থাকে।

লেখক যদি আমার প্রথম মন্তব্যকে আক্রমনাত্মক মনে করে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত!

--------
কাইয়ুম

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ তার অসংখ্য লেখার অসংখ্য জায়গায় স্বাধীনতা, রাজাকার নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন।তিনি নরম মনের মানুষ রাজাকারদের খারাপ চরিত্র আকঁতে পারেন নি, উনার লেখায় সব রাজাকার ওনার মতোই নরম মনের মানুষ ছিলেন, দিল দরিয়া ছিলেন। এখন ৭১ এর প্রকৃত ইতিহাস যে জানবে না, সে যখন হুমায়ুন পড়ে যদি রাজাকারের প্রতি তার একটা সফট কর্ণার তৈরি হলে আপনি কাকে দোষ দিবেন? হুমায়ুন আহমেদের নানা পাকিস্তান পক্ষের লোক ছিলেন, তিনি নিজে হয়তো রাজাকারদের মতো খুনী-ধর্ষনকারী ছিলেন না কিন্তু তৎকালীন বেশিভাগ রাজাকার নিশ্চয় তেমন ছিলেন না, কামু-কাদের-মুজাহিদদের কৃর্তীতো এখন দেখছেন টিভির পাতায়, পত্রিকা আর ব্লগের নানান আলোচনায়। হুমায়ুন আহামেদ তার নানাকে জাষ্টিপাই করতে গিয়ে, তাঁর ব্যাক্তিগত এক সাক্ষাৎকার গ্রন্থে বলেছেন

তিনি (নানা) মারা গেলেন মুক্তিযুদ্ধাদের হাতে। এখন আমরা তাকে ক্ষমা করব কি করব না সেই প্রশ্ন। শেখ মুজিব সাহেব তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি ক্ষমার পক্ষপাতি। ”(ঘরে-বাইরে হুমায়ূন আহমেদ হাজার প্রশ্ন, পৃ.৩১-৩২)

শেখ মুজিব কে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন? মোটেও না। তাহলে এই সরলীকরণ কেন করলেন হুমায়ুন আহমেদ? এইটুকু পড়ে নতুন প্রজন্ম কি শেখ মুজিবুর রহমান কে কি ভুল জানবে না?

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সরলীকরণ, রাজাকারদের অপরাধ লুঘুকরণ, অসম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে অবস্থান, এসব নিয়ে ব্লগ জগতে অনেক লেখালেখি হয়েছে, চাইলেও আমি লম্বা একখান পোষ্ট নামাতে পারি। তাই বলেছিলাম পড়তে হবে, পড়ুন আপনিও জানবেন, বুঝবেন। আবারো আপনার কথার সুর ধরেই বলি তখন আপনারও চুলকানি হবে। ভালোথাকুন।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমত, আমার মনে আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটু পড়াশুনার পর এটা আপনার কেমন লাগা কেটে যাবে বলে আশা করি।

দ্বিতীয়ত, কোনো একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অযত্ন এবং ছেলেখেলায় অস্বস্তি বোধ করাটা খুব স্বাভাবিক।

তৃতীয়ত, আমার যে অনুভূতি সেটা যদি প্রকাশের পূর্ন স্বাধীনতা আমার রয়েছে। তাতে আপনার আপনার ক্যামন বোধ করারও পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। এবং আপনি ক্যামন বোধ করলে আমার লাভ-ক্ষতি বা কর্তব্য কিছু নাই।

নাবিলা

মরুদ্যান এর ছবি

আমি হিটলার রে নিয়া একখান উপন্যাস লেখবাম যেখানে হিটলার আর একজন ইহুদী মহিলার গোপন ভালবাসার কথা থাকবো, আশা করি আপনি পড়বেন। @কাইয়ুম

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

এক লহমা এর ছবি

হ, জমিয়ে রিকঞ্ছিলিয়েছান হপে, কুন চুলকানির কতাই নাই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

পৃথ্বী এর ছবি

অতিথি লেখক হিসেবে মূল পোস্ট সম্পাদনা করতে না পারলেও মন্তব্যের ঘরে জানাতে পারেন। ব্লগের সুবিধা এখানেই যে শুধু মূল লেখা না, লেখার মন্তব্যগুলোও একই দলিলের অংশ হয়ে থাকে।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা আসলেই বড় সুবিধা... হাসি

অফটপিকঃ আমার পোস্টের মাঝের ছবিটা আবার নিচে ছবি শিরোনামে যুক্ত হয়েছে। এটা আর এডিট করতে পারবো না, কিন্তু পরবর্তী সময়ের জন্য জিজ্ঞেস করছি। আপনি কি বলতে পারবেন 'ছবি' শিরোনামে আবারো ছবি না দেয়ার কোনো পদ্ধতি আছে কি?

নাবিলা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপলোড করে ইন্সার্ট করার পর তালিকার ওপর টিক চিহ্নটা তুলে দেবেন। আরেকটা সহজ উপাইয় হলো ইমগুর বা যে কোনো ইমেজ হোস্টিং সাইটে আপ্লোড করে সেখান থেকে এইচটিএমএল কোড কপি করে পেস্ট করবেন

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ হাসি

নাবিলা

সাইদ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

পড়ি পড়ি করেও পড়া হয়নাই। এখন এই জিনিস দেখার পর আর পড়ার ইচ্ছাও নাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

বইটা আপনার টু বি রিড লিস্টে থাকলে আমি অনুরোধ করবো পড়ে ফেলুন। হয়তো তাহলে আরও কিছু মিস-ইনফরমেশন নোট করা সম্ভব হবে। হাসি

নাবিলা

দিগন্ত বাহার এর ছবি

পয়েন্টগুলোর সাথে সাথে বইটি থেকে উদ্ধৃত করলে ভালো হতো, যেমনটা করেছেন প্রথম পয়েন্টে। যা মনে হলো এই লেখাটি তৈরি করার সময় আপনি আলোচ্য অংশগুলিও পড়ে নেননি, যে কারণে ফ্যাক্ট বাদ দিয়ে একাধিকবার সুশীলতার অভিযোগ করতে হলো।

১/ বঙ্গবন্ধু ''জিয়ে পাকিস্তান'' বলেছেন, এই দাবি হুমায়ূন আহমেদও করেননি। যা করেছেন তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে কি'না দেখা যাক।

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষণ প্রসঙ্গেও একই ব্যাপার। জাস্টিস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাহেবের বিখ্যাত গ্রন্থ ''বাংলাদেশের তারিখ'' প্রথম সংস্করণে তিনি উল্লখ করেছেন ভাষণের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন ''জয় বংলা। জিয়ে পাকিস্তান।'' দ্বিতীয় সংস্করণে ''জিয়ে পাকিস্তান'' অংশটি বাদ দিলেন। কবি শামসুর রহমানের লেখা আত্মজীবনী যা দৈনিক জনকন্ঠে ''কালের ধুলোয় লেখা'' শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে তিনি বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ কথা ছিলো ''জিয়ে পাকিস্তান''। আরো অনেকের কছে আমি এ ধরণের কথা শুনেছি, যারা আওয়ামী ভাবধারার মানুষ। সমস্যা হচ্ছে আমি নিজে ৮ এং ৯ মার্চের সমস্ত পত্রিকা খুজে এরকম কোন তথ্য পাইনি। তাহলে একটি ভুল ধারণা কেন প্রবাহিত হচ্ছে?

বঙ্গবন্ধু যদি জিয়ে পাকিস্তান বলে থাকেন তাহলে দোষের কিছু নেই। তিনি যা বলেছেন অবশ্যই ভেবে চিন্তেই বলছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে তার আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। তাকে সময় নিতে হবে। ৭ই মার্চে যুদ্ধ ঘোষণার মতো অবস্থা তার ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ গেটেসবার্গ এড্রেসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এখানে কোনো অস্ষ্টতা থাকা বাঞ্চনীয় না।

২/ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম দিয়েছেন, এই দাবিও হুমায়ূন আহমেদ করেননি। উদ্ধৃতি,

২৭ মার্চ শনিবার রাত আটটায় রেডিওর ঘুরতে ঘুরাতে এই দেশের বেশ কিছু মানষ অদ্ভুত একটা ঘোষণা শুনতে পায়। মেজর জিয়া নামের কেউ একজন নিজেকে রষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা দিয়ে বলেন ''আমি বংলাদেশের স্বধীনতা ঘোষণা করছি''। তিনি সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেন।

লক্ষ্য করুন, ২৭ মার্চ, ২৬ মার্চ নয়।
ফুটনোটে আছে,

কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে পরে নানান বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তিনি মোট ক'বার ঘোষণা করেছেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বংলাদেশের একচ্ছত্র নায়ক এবং তার পক্ষেই বংলাদেশের স্বধীনতা ঘোষণা করা হচ্ছে - এই বিবৃতি কত তারিখ পড়া হলো, ক'বার পড়া হলো? এই নিয়ে বিভ্রান্তি। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের আগেই স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের প্রসঙ্গ বইপত্রে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল হান্নান দুপুর দুইটায় বঙ্গবন্ধুর স্বধীনতার ঘোষণার বাংলা অনুবাদ প্রচার করেন। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ দ্বিতীয়বার পড়া হয়। পাঠ করেন হাটহাজারী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল জনাব আবুল কাশেম সন্দ্বীপ।

রাজনৈতিকভাবে এই বইটি বেশ ব্যালেন্স মেইন্টেইন করার চেষ্টা করেছে বটেই, পড়ে যথেষ্টই বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু আপনার লেখা আরেকটু সময়/যত্ন দাবি করে।

অতিথি লেখক এর ছবি

@দিগন্ত বাহার
সহমত। আমার মনের কথাগুলো বলেছেন। মন্তব্যে উত্তম জাঝা!
--------
কাইয়ুম

অতিথি লেখক এর ছবি

বঙ্গবন্ধু ''জিয়ে পাকিস্তান'' বলেছেন, এই দাবি হুমায়ূন আহমেদও করেননি। যা করেছেন তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে কি'না দেখা যাক।

আমিও দাবি করিনি যে তিনি দাবি করেছেন। উনি ইস্যুটিকে ঘিরে বিতর্ক উস্কে দিয়ে কোনও উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত উনি কোনটা গ্রহণ করেছেন সেটা আর জানাননি। বইটি আমি যখন পড়েছিলাম সে বয়সে আমি উত্তর খুঁজতাম প্রশ্ন নয়। এই এড়িয়ে যাওয়া আমার কাছে ভাল লাগেনি।

তিনি সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেন।

এটা খুবই ব্যালেন্সিং এবং ডিস্টার্বিং একটা লাইন।

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের আগেই স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের প্রসঙ্গ বইপত্রে পাওয়া যাচ্ছে।

টোনটা খেয়াল করুন। কিছুটা তুচ্ছতার টোন এখানে রয়েছে। আমি আসলে এই লাইন দুইটির খারাপ অনুভূতি থেকেই মনে হয় প্রথম শব্দটা ব্যবহার করে বসেছি।

এবং আপনি ঠিক ধরেছেন বইটি আমি লেখাটি তৈরি করার সময় (ইনফর্মাল আলোচনাতে) পুনরায় পড়িনি এবং পড়বার ইচ্ছাও নাই। তবে উল্লেখ্য জায়গাগুলো খুঁজে বের করে দেখে নিয়েছিলাম। কিন্তু ব্লগে পোস্ট করার সময় সেখান থেকেই পেস্ট করি। কিন্তু ব্লগে পোস্ট করার সময় আরও কিছু যত্ন নেয়া উচিত ছিল। সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই এই নিয়ে আপনি আমার এক রিভিউ তে তিনটা লাইক দিলেন হাসি অনেক ধন্যবাদ।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

কি করবো বলেন, যেখানেই এই লেখাটি দেখছি আফসোস হচ্ছে যে আমিও এই বইটা প্রিয় বইয়ের তালিকায় রেখেছিলাম, কিছু না জেনেই।

(আপনার স্মৃতি আর পর্যবেক্ষণের তারিফ না করে পাচ্ছি না, আর আমাকে আমার পড়া যেকোন বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন, হা করে থাকবো)

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার স্মৃতি আসলে কিছুটা বিদঘুটে ধরণের। আবার যন্ত্রণা দায়ক ও। মনে হয়না তারিফের যোগ্য। ভাল লাগলো কিছু, অথবা সাধারণ মনে হলো। ভুলে গিয়ে বসে থাকবো। কিন্তু প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলো মাথায় সব সময় থেকে যায়। হঠাৎ যখন প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলো সলভ হয়ে যায়, তখন মনে পড়ে আমার তো এই প্রশ্নটা আজ থেকে এক যুগ আগে থেকে ছিল!! সেভাবে খারাপ ফিলিংগুলোও থেকে যায়।

নাবিলা

তানভির এর ছবি

"big bird in the cage...others not in the nests...over" রেফারেন্স আপনি ডঃ মেঘনা গুহঠাকুরতার বইতে পাবেন। ডঃ মেঘনা গুহঠাকুরতার যিনি রেফারেন্স তার বই ১৯৭৬ এর, যার ইংরেজি অনুবাদ "Witness to Surrender" ১৯৯৭ সাল থেকে বাজারে পাওয়া যায়।

আপনি নিজে যাচাই না করে, শুধু কানকথার উপর লিখে দিলেন যে, "এই লাইনটি হুমায়ুন আহমেদ যে পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন, পুরো উপন্যাসটি তৈরির পদ্ধতি মোটামুটি একই।" !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

সিদ্দিক সালিকের "Witness to Surrender" বইটি আমার হাতে আছে এবং আমি পুরো উক্তিটাই পেয়েছি। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ নিজে "বানিয়ে লিখেছি" এটা বলেছিলেন সে তথ্যও আমি খুবই সিরিয়াস ধরণের ব্যক্তিত্ত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭২ সালের কাছ থেকে কাজ করা একজন মানুষের কাছ থেকে (নাম সহ-ই উল্লেখ করেছি) পেয়েছিলাম। (জানেন তো ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ রেফারেন্স হিসেব ব্যবহার করা যায়) এবং কান কথার মত নয়। খুবই সিরিয়াস ধরণের এরর সল্ভিং বিষয়ক কথাবার্তার সময়। হয়তো ওনার হয়তো ভুল হতে পারে। আমি সিদ্দিক সালিকের বক্তব্যটি পাবার পর নিজের বক্তব্য উইথড্র করে নিচ্ছি। আমি আমার গুডরিডস রিভিউটি এডিট করে দিচ্ছি। কিন্তু এই পোস্টটি সম্ভব নয় বলে দুঃখিত। তবে হুমায়ন পুরো উপন্যাসটি-ই জানার সাথে অজানাকে মিলিয়েই লিখেছেন এবারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ধন্যবাদ সমালোচনার জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।

নাবিলা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে ফিকশন লেখার সময় তথ্যের ভিত্তিটা মজবুত না হলে সেটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যায়। এই ধরণের বিভ্রান্তি লেখালেখি করা জরুরী। এই লেখাটা খুব দরকার ছিল, কেননা হুমায়ূন আহমেদের দেয়া তথ্যকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করার লোক এদেশে অগণিত।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্বাস করার লোক অগণিত এবং উনি নির্দ্বিধায় সবচেয়ে বেশী মানুষের কাছে পৌঁছতে পারা লেখক। উনি ধীরে ধীরে নিজের মেধার উপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বাড়াতে প্রচণ্ড অযত্ন নিয়ে সব লেখাগুলো লিখতেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মত স্পর্শকাতর ব্যাপারটিতেও একই কাজ করে বসেছেন।

গুডরিডসে একটি রিভিউতে একজন আপ্লুত হয়ে বলেছেন-

ইয়ে, মানে...

নাবিলা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এটা যেমন টেক্সট বই না পড়ে নোট বই বা গাইড পড়ার মতো। হাসি
লেখা চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

নাবিলা

আয়নামতি এর ছবি

প্রথমেই নাবিলা কে সচলে স্বাগতম জানাচ্ছি কোলাকুলি। ভালু লাগলো হে তোমাকে দেখে!
বইটা আমিও যেন পড়েছিলাম। তবে দুঃখজনক ভাবে তেমন কিছু মনে নাই।
রাজাকার প্রসঙ্গে বেশ একটু সহানুভূতিশীল মনোভাব ছিল যেন বইটাতে।
একথা ঠিক একজন হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে লেখনী দিয়ে তাঁর হাজার হাজার ভক্তদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা ছড়িয়ে
দিতে পারতেন সেরকম দ্বায়িত্ব তিনি একদমই পালন করেননি। মধ্যবিত্তের নানান সেন্টিমেন্ট নিয়ে তিনি যতটা সময় ব্যয় করেছেন তার একভাগও বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আগ্রহী(তাঁর ভাষ্য মতে) মানুষটা করেননি। এ কারণে তাঁকে আমার প্রচণ্ড স্বার্থপর মনে হয়। মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি 'দেয়াল' নামে যে উপন্যাসটা লিখলেন সেটাতেও মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্যই
যাচাই বাছাই না করে উপন্যাসে দিয়েছেন বলে বেশ কিছু সমালোচনা পড়ে জেনেছি। 'তুই রাজাকার' বাক্যে যতটা ঘৃণা, যতটা দ্রোহের প্রয়োজন ছিল তিনি সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন তাকে কৌতুককর হিসেবে উপস্হাপন করে। এখন 'আর কেউ তো বলেননি তিনিই বলেছেন' বলে যারা তাঁকে বাহবা দিতে চান দিতে পারেন। কিন্তু এটা খুব সত্যি তিনি একজন শহীদের সন্তান এবং বাংলাদেশের হাজার মানুষের পছন্দের লেখক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য উপস্হাপনের প্রতি সুবিচার করেননি।
মুক্তিযুদ্ধের তথ্যে/ইতিহাসে নানান বিভ্রান্তিকর ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়(এটা নিয়ে একটা লেখা তৈরি করেছি, দেবো দিচ্ছি করে দেয়া হয়নি এখনো) এগুলো যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে(ন) না তাদের জন্য বিষফোঁড়া হবে। বিষয়টা বেশ ভীতির কিন্তু!
----

নাবিলা বইটা আরেকবার কষ্ট করে পড়ে নিলে পোস্টটা সমৃদ্ধ হতো। যুক্তিতর্কের ক্ষেত্রে কংক্রিট উদাহরণ দিয়ে লিখলে
ভালো। এক্ষত্রে তোমার আরেকটু মনোযোগ দাবী করে। মুক্তিযুদ্ধের উপর তোমার বেশ কিছু বইয়ের রিভিউ পড়েছি। সেগুলো এত সমৃদ্ধ মনে হয়েছে বলেই বলছি একথা। সামনে তোমার আরো আরো লেখা পড়বার আশায় থাকলাম।
হাত খুলে লিখে যাও।
---
অ:ট: আমি না ফেবুতে একখানা একাউন্ট খুলেছি দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বাগতমটা সত্যিই উষ্ণ মনে হলো! সবাই যেমন তেড়ে ফুঁড়ে আসছিল! আমি যখন শেষপর্যন্ত সচলে একটা ব্লগ লিখেই ফেললাম, তুমিও তাড়াতাড়ি দিয়ে ফেলো বিভ্রান্তিকর ব্যাপার সম্পর্কিত লেখাটা। আর এই বইটা আবার পড়ার ইচ্ছা নিজেকে দিয়ে কোনোভাবেই করাতে পারি নাই বলেই এতদিন মুখ বুজে সব দেখতাম। কিন্তু হঠাৎ আরও একটা পাঁচতারা দেখে আসলে অস্বস্তি থাকা সত্ত্বেও জেনে শুনেই পুওর ধরণের লেখাটা নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম গুডরিডসে। এম্নি স্পিরিট বাড়তি ছিল, ষষ্ঠ পাণ্ডব বকে দেয়াতে স্পিরিট হাই হয়ে গিয়ে ব্লগে পোস্ট করে বসেছি। তবে আমি রিগ্রেট করছি না। প্রথম দিনই আসলে বুঝে নেয়া ভাল কতটা যত্ন নিতে হবে।

অঃটঃ দাঁড়াও ফেসবুকে খুঁজে দেখি।

নাবিলা

আয়নামতি এর ছবি

হাসি
---------
তোমার খোঁজ করে পেলাম না ফেবুতে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও পাই নি। তবে আমার গুডরিডস প্রোফাইলে ফেবুর লিংক দেয়া আছে।

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে আরো লিখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আশা আছে। তবে অবশ্যই লেখার মত কিছু লিখতে পারলে। হাসি

নাবিলা

এক লহমা এর ছবি

সচলে স্বাগতম। নূতন বছরের শুভেচ্ছা জানবেন। লেখায় ৫ তারা।

বইটি পড়িনি। আপনার রিভিউটি পড়লাম, রিভিউয়ের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য পড়লাম, মন্তব্যের উত্তরে আপনার মন্তব্য পড়লাম। আপনার রিভিউয়ের সাথে দ্বিমত পোষণের কোন কারণ পেলাম না।
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

অঃটঃ - আয়নামতি এবং ষষ্ঠ পাণ্ডবের ঝাড়ি খেয়ে আপনি সচলে প্রবেশ করলেন। লেখার গুরুত্বের চোটে চুপচাপ রইলাম। অন্যথায় হো হো হো করতাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা হাসি

অঃটঃ - আয়নামতি এবং ষষ্ঠ পাণ্ডবের ঝাড়ি খেয়ে আপনি সচলে প্রবেশ করলেন। লেখার গুরুত্বের চোটে চুপচাপ রইলাম। অন্যথায় হো হো হো করতাম।

ইনসাইড ঝোক মনে হচ্ছে। চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

দলিলপত্রের বেশিরভাগ ইন্টারভিউগুলোই বিজয় অর্জিত হবার পর গ্রহণ করা। দলিলপত্রগুলো আমার কাছে এখন একসেসিবল না। তাই সাক্ষ্যগ্রহণের স্পেসিফিক ডেট দিতে পারছি না। তবে ৭২ সালে হবার সম্ভাবনা বেশি। রাবেয়া খাতুন নয় মাস রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভেতরেই ছিলেন। উনি শুধু ২৫ শে মার্চের কথা স্পেসিফিক ভাবে (ওনার নিজের রেপ হওয়া এবং পুলিশ লাইনে গণহত্যা সম্পর্কে) তারিখ নির্ধারণ করে বলেন। বাকিটা উনি নয়মাসের জেনেরিক অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন।

লেখক ৭১ এ ঢাবির হলে অবস্থান করেছেন কিছুদিনের জন্য, তাই ঐ সময়ের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে তার ধারণা কমপক্ষে "ন্যুনতম" ছিল, এমনটা অনুমান করি।

আমি কোথাও এক জায়গায় পড়েছিলাম উনি কিছুদিন হলে ছিলেন। মনে করতে পারি নি। এটা যদি উনি করে থাকেন তাহলে উনি আরও খারাপ কাজ করেছেন। উনি পুরো সাক্ষ্যটাকে 'জাতিগত অতিকথন' বলেছেন নিজে হলে থাকার পরও।

অতিথি লেখক এর ছবি

না না, সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নয়, ঘটনার তারিখ সাক্ষ্যে আছে কিনা, সেটা জানতে চাইছিলাম। হুমায়ুন আহমেদ রাবেয়া খাতুনের সাক্ষ্যের যে অংশে আপত্তি জানিয়েছেন ("বই খাতা...."), সেটা কি ২৫শে মার্চের, না বাকী জেনেরিক অংশের, সেটা জানা গেলেও কিছুটা বোঝা যেত। ধন্যবাদ

-----যান্ত্রিক বাঙালি

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটা উপরের কমেন্টটাতেই বলেছি। উনি শুধু ২৫ শে মার্চের কথা স্পেসিফিক ভাবে (ওনার নিজের রেপ হওয়া এবং পুলিশ লাইনে গণহত্যা সম্পর্কে) তারিখ নির্ধারণ করে বলেন। বাকিটাউনি নয়মাসের মোটের উপর অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন, যেমন মেয়েদের সাথে কী কী ধরণের নির্যাতন করা হতো, আর্মিরা ক্যামন ধরণের ছিল এসব। সময় নির্ধারণ করে বলেননি।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

এক নম্বর ভুল প্রসঙ্গে, ঐ সাক্ষ্যটি কি মে মাসের আগের না পরের?

মে/জুলাইয়ে শিক্ষাঙ্গন খোলার আদেশ দেয় পাক সরকার, এর আগে হলে লেখকের সন্দেহের কারণ অনুমান করা যায়। আর যতদূর জানি, লেখক ৭১ এ ঢাবির হলে অবস্থান করেছেন কিছুদিনের জন্য, তাই ঐ সময়ের শিক্ষআঙ্গন নিয়ে তার ধারণা কমপক্ষে "ন্যুনতম" ছিল, এমনটা অনুমান করি।

---যান্ত্রিক বাঙালি

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত। আপনার এই কমেন্টের জবাব কিভাবে যেন উপরে চলে গেছে। :/

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম লেখাটাই অনেক সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ হাসি । পড়ি পড়ি করে বইটা এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি, পড়ব কিনা আর ভাবছি।

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে পারেন। আরও ভুল খুঁজে বের করতে। তবে ন্যারেটিভ ও ভাল না যতদূর মনে পড়ে।

নাবিলা

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

বেশ করে কষে প্রস্তুতি নিয়ে হাতখুলে লিখতে থাকুন। লোকজন তেড়েফুড়ে আসলেও সমস্যা নেই। এভাবেই আস্তে আস্তে হয়ে যাবে। সচলায়তনে স্বাগতম।
চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আসলে লোকজন তেড়েফুঁড়ে এলে আমারও যে খুব একটা সমস্যা তা নয়। হাসি

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

:

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নাবিলা, সচলায়তনে স্বাগতম হাসি

এই বইটি পড়িনি, ইচ্ছে করেই পড়িনি। তাই বই আর তথ্য বিভ্রাট ইত্যাদি নিয়ে আপাতত কিছু না বলি। আপনাকে ধন্যবাদ, আরো পড়ুন, আরো লিখুন।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই। হাসি

নাবিলা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলে স্বাগতম! আমার অনুরোধ রাখার জন্য হলেও যে লিখেছেন তার জন্য ধন্যবাদ।

১। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার, ক্লাস/পরীক্ষা নেবার প্রচেষ্টার কথা সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের নিজের স্মৃতিচারণগুলোতে পাওয়া যাবে। তাছাড়া ১৯৭১ সালে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং এখনো বয়সোজনিত কারণে বা টেকাটুকাজনিত কারণে সব সত্য বিস্মৃত হননি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেও সত্যটা জানা যাবে।

রাবেয়া খাতুনের বর্ণনা পুরোটা পড়ার জন্য কলিজা লাগে। আমি যতবার পড়তে যাই, কেবলই আটকে যাই।

২। জয় বাংলার পরে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' / 'পাকিস্তান পায়েন্দাবাদ' / 'জয় পাকিস্তান' / 'জিয়ে পাকিস্তান' ইত্যাদি বলার মিথ্যাচারটির শুরু আশির দশকে জামায়াতের মুখপাত্র 'দৈনিক সংগ্রাম'ভিত্তিক কিছু লেখকের। কালক্রমে ফরগেট-ফরগিভ-রিকনসিলিয়েট তত্ত্বে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে সংগ্রাম আর অসংগ্রাম একসাথে মিলেমিশে এক একটা হেবো, খোনকার, হুমায়ূন তৈরি করেছে।

৩। ইতিহাসবিকৃতির জন্য একটা পুরনো টেকনিক হচ্ছে ঐতিহাসিক গল্পের নামে কিছু আপাত নির্দোষ গালগল্প সত্যের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া। কালক্রমে লোকে সেগুলো বিশ্বাস করতে থাকে। ঐ আপাত নির্দোষ গালগল্পগুলোর মধ্যে প্রায়ই ভয়াবহ মিথ্যাচারের মিশেল দেয়া থাকে। লোকে সেগুলোও বিশ্বাস করতে শুরু করলে গোয়েবলসের বংশধরদের টেকাটুকা হজমের বিষয়টা হালাল হয়ে যায়।

৪। যারা সত্যটা স্বীকার করতে রাজী না, বা যারা সত্যটা স্বীকার করতে ভয় পায়, বা যারা সত্যটাকে ঠেকাতে আগ্রহী তারাই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা ত্যানা প্যাঁচায় বা নির্জলা মিথ্যাকে মিনমিনিয়ে বলে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি একটা গোপন কথা ফাঁস করে দিই। মেয়েদের কে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহী করতে, পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে শিখাতে আমি রাবেয়া খাতুনের বর্ণনাটা প্রায় মুখস্থের মত করে নিয়েছি। আমি যখন কোনো নবম বা দশম শ্রেণীর বাচ্চাদের এটা বলি এরা পাশের জনকে আঁকড়ে ধরে, চোখে থাকে ভয় আর ঘৃণা, কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। যদিও আমি নিজে মোটামুটি প্রস্তর গোত্রীয় মানুষ, (বুঝতেই পারছেন রাবেয়া খাতুনের বর্ণনাটা প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছি) তবুও প্রত্যেকবার বলার পর গায়ে-হাত-পায় কাঁপুনি উঠে যায়। অনেকক্ষন চিন্তাশক্তি রহিত অবস্থায় বসে থাকতে হয়।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ গল্প উপন্যাস লেখার সময় ফ্যাক্টস নিয়ে বেখেয়ালী থাকেন, তার অনুজ জাফর ইকবাল স্যার সেটি দুজনের যৌথ স্মৃতিচারনমুলক লেখা 'একাত্তর ও আমার বাবা ' বইয়ের ভুমিকায় পরিস্কারভাবেই বলেছেন:
"হুমায়ুন আহমেদ অসাধারণ কথাশিল্পী হলেও সে খুবই দুর্বল ইতিহাসবিদ। আমি সবাইকে সতর্ক করে দেই, তার কোনো লেখা থেকে কেউ যেন কখনো কোনো ঐতিহাসিক তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে। আমি লক্ষ্য করেছি কোন এক বিচিত্র কারণে সত্য ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে সে কখনো বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতো না। তার নানা বইয়ের নানা স্মৃতিচারনে অনেক কিছুই আছে, যেখানে সে একটু কষ্ট করে নির্ভুল সঠিক তথ্য দিতে চেষ্টা করে নি। আমি সেটা ভালো করে জানি, কারন আমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে সে এমন চমকপ্রদ কিছু কথা লেখে যা প্রায় অনেক সময়ই অনেক অতিরঞ্জিত। বৈজ্ঞানিক তথ্যও তাকে বলে দেওয়ার পরও শুদ্ধ করার চেষ্টা করে নি। আমার একজন বয়স্ক আমেরিকান বন্ধু বলেছিলেন, 'ডোন্ট রুইন এ‌্যা গুড ষ্টোরি উইথ ফ্যাক্টস' - হুমায়ুন আহমেদ হচ্ছে এই দর্শনের সবচেয়ে বড় অনুসারী। সে ছোটখাটো সত্য দিয়ে কখনও মজার গল্প নষ্ট করে নি।"

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নির্দোষ বানানো গল্প বা অতিকথন যদি গল্পের 'মজা' তৈরি করে তবে সেটির একটি ভালো ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু স্মৃতিচারনমুলক লেখা বা গল্পের পটভুমি যখন ইতিহাসের খুব গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় হয় সেখানে এইসব গল্প বানানো লেখকের কাছে একটা শিল্প মনে হলেও তার পরিনতি ভয়াবহ। জাফর স্যার সে কারনে পুর্বেই সতর্ক করেছেন। আরেকটি কথা, কেউ যেনো না ভেবে বসেন যে জাফর স্যার এই ভুমিকা বা আলোচ্য বইয়ে হুমাউন আহমেদকে আক্রমণ করেছেন। শুধু ইতিহাসের পাঠকের জন্য সতর্ক বার্তা দেওয়ার জন্য এই প্রসঙ্গের অবতারনা করেছেন মাত্র। সঠিক ইতিহাস নির্মানের প্রয়োজনে এমন 'বেখায়েলী' লেখকের বইয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ খুবই প্রয়োজন।

গোরা।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটাই বলতে চাচ্ছিলাম। আমার ধারণা হুমায়ুন আহমেদ নিজেও নিজের সম্পর্কে এই তথ্য জানতেন। কিন্তু রেফারেন্স টেনে সত্য সঠিক বলার চেষ্টা করছেন, আবার অন্য নানা ব্যাপারকে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করেছেন। ব্যাপারটার মাঝে বড় ধরণের হিপোক্রেসি আছে।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

বেখেয়ালী না বলে বলা উচিত যে তিনি কেয়ার করতেন না। এজন্যই ৭০০ পৃষ্ঠার একটা লেখায় রাজাকার থাকে না। মোশতাকের মাথায় জিন্নাহ টুপি হয়ে যায় নেহেরু টুপি। 'ডোন্ট রুইন এ‌্যা গুড ষ্টোরি উইথ ফ্যাক্টস' - তার বেলায় ঠিক খাটে না, কারণ ছোট্ট ছোট্ট কিছু ফ্যাক্ট ঠিক রেখেও ভালো গল্প লেখার ক্ষমতা তার ছিল। একদিকে যেমন বিভিন্ন জিনিস তিনি ভুলভাল ভাবে ইন্টারপ্রিট করেছেন, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিলের (রাবেয়া খাতুনের জবানবন্দী) এক্যুরেসী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
"যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হয়েছে সে সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না।” - লেখার টোন-টা দ্রষ্টব্য।
কিন্তু কথা হচ্ছে যে ভক্তদের কাছে তিনি একজন পীর। তাই ওনার কোনো লেখার সমালোচনা করছেন মানেই হচ্ছে যে আপনি ঠিকমত পড়াশুনা করে আসেন নি।
হালকা অফটপিক - শ্যামল ছায়া নিয়ে আপনার মতামত কি ?
- সো।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

কেন জানি, হুময়ূন আমাকে টানেনি, সেই ছোটবেলাতেও নয়। এই হুময়ূন পীর বহুত মুরিদ পয়দা করে গ্যাছেন, প্রায়ই ম্যাঁ ম্যাঁ করে চিৎকার করে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে ছোটবেলায় ছোটদের কিছু বই আমার অনেক প্রিয় ছিল। নীল হাতী, পিপলী বেগম, তোমাদের জন্য রূপকথা ইত্যাদি। শঙ্খনীল কারাগার বইটাও আমার প্রচণ্ড প্রিয় একটা বই। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলার বইগুলো আর ভাল লাগে নাই।

নাবিলা

অতিথি লেখক এর ছবি

জোছনা ও জননীর গল্প পড়ার সময়টাতে আমার যেটা মনে হয়েছিল তা হলো, হুমায়ুন বরাবরের মতোই বাজার বিষয়টি মাথায় রেখে স্বাধীনতার ঘোষণার মতো বিষয়গুলিকে এড়িয়ে গেছেন। এবং এই এড়িয়ে যাওয়াটা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন স্বভাবজাত আবেগ আর উইটের মেলবন্ধে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তার আবেগ ছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু একই সাথে ছিল দ্বায়িত্বহীনতা। আমার কাছে বিষয়টা যতটা দ্বায়িত্বহীনতা মনে হয়, ঠিক ততটাই আত্মপ্রেম বা নিজের বাজারের প্রেম মনে হয়। অথচ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই লেখকেরই দ্বায়িত্বটা ছিল সবচেয়ে বেশি। কেবল এক্ষেত্রেই নয়, দেশের কোনো বড় ক্রাইসিসে তিনি জোরালো কোনো কথা বলেননি। এমন না যে, তিনি পত্রিকায় কলাম লিখতেন না।

যা হোক সচলে স্বাগতম আপনাকে।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

উনি বাজারকে সন্তুষ্ট করতে চাইলে করুন, আমার খুব যে আপত্তি তা নয়। কিন্তু বাজারকে সন্তুষ্ট করতে চেয়ে একটা বই লিখে যদি এমন দাবি করে বসেন, এইটা উনি যত্ন করে লিখেছেন, রেফারেন্স দিয়ে নিজেকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তাহলেই বিপদ। বিপদ তখন আরও মারাত্মক, বিষয়টা যখন মুক্তিযুদ্ধ।

ধন্যবাদ হাসি

নাবিলা

Habeed এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ নিজেই স্বীকার করেছেন এটা একটা উপন্যাস!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।