নিরীহ মানুষ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৫/২০১৫ - ১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাহিনী-১
আমাদের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় বদরুল খালু সপরিবারে আমাদের নানু বাড়িতে বেড়াতে আসলেই দেখতাম খালা-নানু মহলে হাসির রোল পড়ে গেছে। সবাই বলাবলি করত বিড়াল আসছে, সাবধান! নানুরা অনেক ভাই-বোন ছিল, সবাই একই শহরে খুব কাছাকাছি থাকতো। আমরাও অনেক খালা-মামা আর নানা-নানুর সাথে হাসিঠাট্টা করে বড় হয়েছি। যাইহোক, ছোটকালে ভাবতাম বদরুল খালুকে বেড়াল ডাকা হয় উনার চেহারার কারণে, কিন্তু একটু বড় হওয়ার পরেই আসল কাহিনী ধরতে পারলাম। এক খালা এসে একদিন বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল যে উনার কিন্তু একটু খামচানোর স্বভাব আছে, নিজের পশ্চাৎদেশ বাঁচিয়ে চলো, কিছু হইলে আবার আমাদের দোষ দিয়ো না!

এমনিতে বদরুল খালু খুবই নিরীহ মানুষ। কিন্তু এই ব্যাপারে উনি নিজের পরিবার, অন্যের পরিবার, কাছের আত্মীয়, দুরের আত্মীয়, কাজের লোক, বয়স্ক মানুষ, মেয়ের বয়সের মানুষ কাউকেই বাছবিচার করতেন না। উনার পাশে দিয়ে হেটে গেলে একটু গুঁতা, চিমটি বা খামচি আপনাকে খেতেই হবে, এটাই স্বাভাবিক। পরিবারে উনি জামাই মানুষ, এরপরে আবার দেশের সবচাইতে নাম করা কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের একটিতে প্রধান ছিলেন এবং পরে শুনেছি বেশ উচ্চপদস্থও রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন। তবে চেহারাটা উনার একেবারে মেনী বেড়ালের মতো, এবং স্বভাবটাও যেহেতু বেশ নিরীহ শ্রেণীর (চিমটি, খামচি আর ধাক্কাতে সীমাবদ্ধ) এইজন্য তার এই চরিত্রের কথা জেনেও কেউ বেশি উচ্চবাচ্য করত না। আর আসলে এটা নিয়ে বেশী প্রতিবাদ করতে গেলেই সবাই হাসাহাসি করবে এই ভয়ে আরও কেউ কিছু বলতো না।

কাহিনী-২
ও-লেভেল পরীক্ষার বাকি আর ৪ মাস। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ইংরেজি পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করব। বাকিগুলাতেও করবো, কিন্তু বাকি সবগুলা সাবজেক্টের ভাল ভাল টিচার থাকলেও ইংলিশ টিচারের বড়ই অভাব তখন। অপশন যা আছে একটার থেকে আরেকটা ভয়ঙ্কর। একজন হলেন লালমাটিয়ার নিজাম স্যার যে কিনা খুবই ভাল পড়ায়। আর অন্য দুইজন তেমন ভালো না এবং থাকেনও বেশ দূরে, পুরান ঢাকার দিকে। এখানে বলে রাখি, আমি দশম শ্রেণীতে প্রাইভেটে পরীক্ষা দেই এবং বাবা-মা দুইজনই চাকুরীজীবী ছিলেন দেখে একাই যাতায়াত করতাম বেশিরভাগ সময়। পুরান ঢাকায় আমার একার যাওয়া সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে নিজাম স্যারের যে বদনাম তাতে উনাকে ইংলিশ মিডিয়ামের সবাই এক নামে চিনে। উনার কাছে কেউ পড়তে গেছে শুনলে বাকি সবাই প্রথমেই যে প্রশ্ন করে তা হল – কোলে বসেছিলি? হ্যাঁ না যাই উত্তর দিক আমরা হি হি করতে করতে ধরে নেই যে কোলে বসেছিল। আরেকটা বহুল প্রচলিত কাহিনী উনাকে নিয়ে আছে। উনি নাকি একবার কোন ছাত্রীকে কিছু একটা করার পরে সেই ছাত্রীর বয়ফ্রেন্ড স্যারকে বাসায়ে এসে বেধড়ক পিটিয়েছিল এবং মার খেতে খেতে স্যার নাকি বার বার বলছিলেন আমার বন্দুক কই, আমি শুট করবো, বন্দুক দাও!
যাইহোক ভাবলাম নিজাম স্যারের বাসায় একমাস পড়ে দেখি, অবস্থা বেগতিক দেখলে বিদায় হব। প্রথম দিন ভয়ে ভয়ে গেলাম, দেখি ছোট একটা ঘরে একগাদা বেঞ্চ দেয়া। গাদাগাদি করে একগাদা ছাত্রছাত্রী বসতে হবে। আস্তে আস্তে বুঝে গেলাম স্যারের হাত থেকে বাঁচার উপায় হল শেষ বেঞ্চের মাঝামাঝি বসা। এতদূর উনার আসতে বেশ কষ্ট হয়। ক্লাসে অন্য ছেলেরাও অনেক সাহায্য করত। আমাদের জন্য যেই সিটগুলাতে স্যার সহজে আসতে পারবেনা সেগুলা রেখে দিত। স্যারও ক্লাসে মেয়েদের হাত ধরে এবং ক্লাস শেষে উনার পছন্দমতো কোন মেয়েকে প্রাইভেটে পড়া দেখিয়ে দেবেন বলে বসিয়ে রাখতেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত আমাকে ডাকেন নাই দেখে জীবন ভালই কাটছিলো। ঝামেলা বাধল একদিন। পিকচার রাইটিং দিল ‘soldier and child’ একটি ছবির। আমিও খুশি-মনে 'মেহেরজান' টাইপ একটা গল্প লিখে ফেললাম। আফগানি শিশু আর আমেরিকান সৈন্যর দুখ-ভারি কাহানী। পরের দিন আর যায় কই। স্যার আমাকে ক্লাসে ডেকে বললেন যেন ক্লাস শেষে উনার সাথে দেখা করি। প্রাইভেট ক্লাস না নিলে এবার নাকি ও লেভেল দেয়ার মানেই নেই আমার।
সেদিন প্রাইভেট ক্লাসে স্যার এসে একগাদা হাবি-যাবি কথা বলতে বলতে এক ফাকে আমাকে বলল উনার কোলে উঠে বসতে। তাহলে নাকি উনার কথা বুঝতে সুবিধা হবে, মিন মিন করে আমি বললাম এখানেই ঠিক আছি। একটু পরে নানা কথার ফাকে আরও ২-৩ বার একই কথা বলল। আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। একটু পরে উনি কি বুঝে দরজার কাছে যেয়ে আমাকে ডাকলেন। মনে মনে ভাবছি হয়তো ক্লাস শেষ।
কিসের কি, উনি একের পর এক কথা বলে জেতে লাগলেন। বলতে থাকলেন ভাল রচনা লিখতে হলে নিজেকে সব ধরনের মানসিক এবং সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্ত করতে হবে। এরপরে আর কি যেন বলতে বলতে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি যেন উনার হাত আমার শরীরের যেকোনো একটি অংশের উপরে রাখি। এই ট্র্যাপে পা দেয়ার মতো বলদ ছিলাম না দেখেই কিছু না বোঝার ভান করে ঝিম ধরে দাড়িয়ে থাকলাম। প্রায় দশ মিনিট পর উনি বুঝলেন আমারে দিয়া কিছু হবে না, খেপে যেয়ে বললেন যে খামখা বাবা-মায়ের টাকা নষ্ট করে পরীক্ষা যেন না দেই, খারাপ করবো এবং সবার মান-সম্মান নষ্ট করবো। আমাকে চলে যেতে যখন বললেন, আমি তখন মনে মনে 'মুড়ি খা, মুড়ি খা' বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে এক দৌড়। আহ, বাইরে এসে বুক ভরে দম নিলাম। উনার আশীর্বাদ বা টিউশন ছাড়াই অবশ্য পরীক্ষায় শেষপর্যন্ত এ পেয়েছিলাম।

শেষ কথা
ওপরের কাহিনীর দুইজন দেশের উচ্চপদস্থ কর্মচারী, উচ্চশিক্ষিত, এবং চিহ্নিত যৌন নিপীড়ক। কিন্তু যেহেতু আমরা ধরেই নিয়েছি যে এরা নিরীহ শ্রেণীর যৌন নিপীড়ক তাই আমরা এদের নিয়ে হাসাহাসি করছি। এভাবেই আমরা এদের সাহস দিচ্ছি, যৌন নিপীড়ন করে যাও, কিছুই হবে না। একদিন তাই এদের যখন আর চিমটি দিয়ে বা কোলে বসিয়ে মনের খায়েশ পূরণ হবে না তখন এরাই হয়ত বাসার কাজের মেয়েকে, অফিসের কর্মচারীকে অথবা প্রাইভেট পড়তে আসা ছাত্রীকে রেপ করবে।
আরেকটা জিনিশ খেয়াল করুন, নিরীহ মনে হলেও এরা কিন্তু আসলে বেশ চালাক। এমন কিছু করছে না যাতে তাকে আপনি সরাসরি পুলিশে দিতে পারবেন। যেমন নিজাম স্যার খারাপ কাজগুলো আমাকে করতে বলেছেন, নিজে কিছু করতে আসেন নাই। এখন উনার কথা শুনে কেউ যদি উনার কোলে যেয়ে বসে তাহলে আমার ধারনা সেই মেয়েটি পরেও যদি স্যারের নামে অভিযোগ করে তাহলে দোষ খানিকটা মেয়েটার ঘাড়েও পরবে – তোমাকে বলল আর তুমি করে ফেললা টাইপ প্রশ্ন মেয়েটিকে শুনতে হবে।
আজকে কোথায় যেন পড়লাম মোহাম্মদপুরের একটি নামকরা স্কুলে বেশকিছু যৌন নিপীড়নের কাহিনী ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। স্কুলের নাকি মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের কাছে মানসম্মান জিনিশটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ! পাঁচ সাতটা মেয়ে রেপ হলে ব্যাপার না, মরে গেলেও ব্যাপার না, কিন্তু আমাদের সম্মানটা যেন ঠিক থাকে শেষমেশ। হায়রে দেশের মানুষ,যৌন নিপীড়কদের নিয়ে আমরা হাসি-তামাশা করি, নিপীড়িতদের জামার দৈর্ঘ্য মাপি আর সব সময় খেয়াল রাখি যাতে সম্মান নষ্ট না হয়। এগুলা শুনলে শুধু আমার একটা কথাই বলতে ইচ্ছা করে – লুঙ্গীর খুটা উঠায়ে মাথা ঢাকতে ঢাকতে অন্যদিক যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সেদিকে একটু খেয়াল কইরেন ভাই ও বোনেরা।

ফেরিওয়ালা


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

মেয়েদের উপর ঘটা অন্যায়কে অন্যায় বলে চিহ্নিত করতেও সমজ-সংসারের কত যে দ্বিধা-বাধ!
লেখায় ৫ তারা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপু অসংখ্য ধন্যবাদ লেখায় মন্তব্য করার জন্য। আমি আপনার লেখার অনেক বড় ফ্যান।

মরুদ্যান এর ছবি

হেহে আবার আপু ভাইয়া পেঁজগি লাইগা গেসে! খাইছে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মরুদ্যান এর ছবি

অদ্ভুত!

আপনি এতদিন পর লিখলেন ভাল কথা, তাও সাহস করে শিক্ষকের আসল নাম টা লিখতে পারলেন না!! আপনি তার টা খান না পিন্দেন? আরেকজনের এসে নাম লিখে দিতে হল??

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পরিবারে এক আত্মীয় আছেন আপনার বদরুল খালু টাইপ। তবে উনি আরও নিরীহ-শুধু শ্যালিকাগোত্রীয় ছাড়া শাশুড়িগোত্রীয়দের দিকে ভুলেও তাকান না। শাশুড়িদের কাছে তিনি অতীব ভালো জামাই আর বাকিদের কাছে হারামজাদার বাচ্চা। সেই ছোটবেলা থেকে লোকটার সাথে কথা বলি না, আমার কোনো বোনকেও বলতে দেখি না। এর চেয়ে বেশি প্রতিবাদ কী করে-বুঝতে পারতাম না তখন আর এখন বলাটা নিষ্প্রয়োজন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। সবার পরিবারে বা চেনাজানার মধ্যেই এমন অনেক মানুষ আসলে আছে। আমরা এগুলো জেনেও চুপ করে থাকি দেখেই এরা এত সাহস পায়। আমার মা-খালাদের দেখেছি রাস্তায় ভিড়ের মাঝে কেউ অশালীন আচরন করলে জুতা খুলে পেটাতে। কিন্তু আত্মীয় বা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা কিভাবে করা উচিৎ সেটা আমরা আসলেই বুঝে উঠতে পারিনা।
বিদেশে কর্মস্থলে sexual harassment case গুলো অনেক seriously নেয়। আসা করি আমাদের দেশেও কোন একদিন এমন হবে। কিন্তু যতদিন না হচ্ছে তত দিন আমাদেরকেই আসলে প্রতিবাদ করতে হবে।

ফেরিওয়ালা

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
লেখা ভালো লাগছে।
সচলে স্বাগতম। এই নারী সপ্তাহ সচলের অসাধারণ এর উদ্যোগ ছিল। এর কারণেই অনেক নতুন নতুন লেখক লেখিকারা সাহস করে এগিয়ে এসেছেন। তাদের নিজের জীবনের বা আশেপাশের মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন। এবং নতুন অনেকের লেখার স্টাইল এবং ফ্লো দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মনে হয়েছে তারা যেন না থামে। লিখা চালিয়ে যায় নিয়মিত। আপনাকেও একই কথা বলবো। লিখে যান। নিজের মনের কথাগুলো বলুন, আশেপাশের অসঙ্গতির কথা বলুন। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

উ লা লা ... আপনার কাছে থেকে প্রশংসা পাব আশা করি নাই। আমি আপনার অনেক বড় পাঙ্খা – পিলিয অ্যাড মি!!!

ফেরিওয়ালা

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা!
পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে নিজাম স্যারের পবিত্রতার কথা জানিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারলে
ভালো হতো। হাসি তামাশার আড়ালে কতো মেয়ের চোখের পানি, দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার বিষয়টা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
লেখালেখি জারি থাকুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়নামতি আপু আপনার লেখা অনেক পছন্দ করি। প্রিয় লেখক-লেখিকাদের উৎসাহ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
নিজাম স্যারের পবিত্রতার কথা অনেক অভিভাবকরাই জানতো কিন্তু আমরা ও-লেভেলের শুরুর দিকের ব্যাচ, ভাল ইংলিশ শিক্ষক তখন অনেক কম ছিল। উনার নাম-ডাক ছিল খুব এবং উনি যানতেন যে এগুলো করলেও ছাত্র-ছাত্রীর অভাব হবে না। ক্লাসেও উনি প্রায়ই বলতেন সবকিছু জেনেই তোমরা পড়তে এসেছ আমার কাছে, আর পছন্দ না হলে বিদায় হও, ৫-১০ জন চলে গেলেও আমার উপার্জনের কোন ক্ষতি হবে না।
ফেরিওয়ালা

মেঘলা মানুষ এর ছবি

নিজাম স্যারের পবিত্রতার কথা অনেক অভিভাবকরাই জানতো -----সবকিছু জেনেই তোমরা পড়তে এসেছ আমার কাছে
-এই মানসিকতাটা গড়ে দেবার জন্য আমরাই দায়ী। কেন অভিভাবকের কাছে সন্তানের মানসিক যন্ত্রণার চাইতে তার পরীক্ষার মার্কস বড় হয়ে উঠবে? রেগে টং

লেখা ঝরঝরে, ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা হাসি

তিথীডোর এর ছবি

এক খালা এসে একদিন বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল যে উনার কিন্তু একটু খামচানোর স্বভাব আছে

সিরিয়াসলি! এটা নিয়ে হাস্য রস করার মতো রুচি হতো?
এতগুলো মানুষ, কেউ কোনদিন মুখের ওপর কিছু বলেনি?

উনার কাছে কেউ পড়তে গেছে শুনলে বাকি সবাই প্রথমেই যে প্রশ্ন করে তা হল – কোলে বসেছিলি? হ্যাঁ না যাই উত্তর দিক আমরা হি হি করতে করতে ধরে নেই যে কোলে বসেছিল।

আসলেই হাহাহিহি করতেন? হাসি আসতো?

এরা খাটাশ, এরা যৌন নিপীড়ক, লুচ্চা, বদমাশ, শূকর, হারামজাদা, ইতর, জানোয়ার-- সবই!
কিন্তু আপনার, আপনাদের রি-অ্যাকশনের বর্ণনা শুনে মেজাজ ভচকে গেলো একটু।

আপনাদের পরিবারের নবীনতম কিশোরিটি কিংবা ঐ স্যারের মেয়ে বা নাতনী যেন এসব হেসে উড়িয়ে না দিয়ে জায়গামতো লাথি কষানোর মতো শক্ত মনের হয়, সেই প্রার্থনা করি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

তিথিডোর আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। অতীতে বান্ধবীদের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার বা খালুকে নিয়ে আমার মা-খালাদের হাসিঠাট্টায় আমিও অনেক বিরক্ত বোধ করি। আগে যা হয়েছে তা পালটাতে পারলে অবশ্যই পালটাতাম। কিন্তু যেহেতু সেটা সম্ভব না তাই চেষ্টা করেছি ব্যাপারটা সম্পর্কে এখানে লিখতে। আশা করি এই বাজে ব্যাপারটা রিপিট না হোক, awareness আসুক সবার মাঝে যে এটা হাসিঠাট্টার বিষয় না।
একটু অফটপিক, আমার খালা বয়সে আমার থেকে বেশী বড় ছিল না, হাসতে হাসতে বললেও আসলে আমাদেরকে সতর্ক করাই টার মূল উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া খালুরা বেড়াতে আসলে আমাদেরকে অন্য ঘরে রেখে মা-খালারাই বলে যেতো ঘর থেকে না বের হতে (ব্লগে প্রথম লেখলাম, টেনশন ছিল লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই সংক্ষেপে সমস্যাটা তুলে ধরতে চেয়েছি, অনেক details বাদ পরে গেছে তাই)
আমাদের সমাজে sexual harassment এর মানেই অনেকের কাছে তখনও স্পষ্ট না (অবশ্য এখনও যে সবার কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট তাও না)। স্কুল বা বাবা-মায়ের কাছে থেকে যৌন হয়রানি সম্পর্কে যেই শিক্ষা আমাদের পাওয়ার কথা তা আমরা কোনদিনই পাই না। মায়েরাও আসলে দেখা যায় বিশ বছর বয়স হওয়ার আগেই ২-৩ তা বাচ্চার মা হয়ে গেছেন, নিজেই যৌন নিপীড়নের মানে ঠিক মতো বঝেন না, বাচ্চাদের আর কি শেখাবেন।
ফেরিওয়ালা

সুবোধ অবোধ এর ছবি

হাসাহাসির আড়ালে এই ভদ্রবেশী শয়তানদের নোংরামি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। স্টুডেন্টরা মিলে ওই কুলাঙ্গার শিক্ষক (!) কে জন্মের শিক্ষা দিতে পারতেন।
লেখালেখি চলুক ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। পরীক্ষার আগে আসলে টেনশনে মাথা ঠিক থাকে না, নাহলে সব যেনে কেন ওই চিহ্নিত শয়তানের কাছে পড়তে যাবো।
এদেরকে শিক্ষা দেয়ার উপায় নিয়ে একটা লেখা থাকলে খারাপ হতো না। অনেকের কাজে লাগত।
ফেরিওয়ালা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভয়াবহ অবস্থা। বিশেষ করে তথাকথিত শিক্ষকের কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম। সবাই জানে তারপরেও সে এমনই শিক্ষক তাকে বর্জন তো দূরে থাক তার কাছে ঝাক বেঁধে লোকজন পড়তে যাচ্ছে, বাবা-মারা নিজের মেয়েকে পড়াতে পাঠাচ্ছেন? ধর্ষণ, খুনের মামালারই সুরাহা হয় না, আর এই 'সামান্য' মোলেস্টেশানের ঘটনা আইনের আওতায় আনা তো অসম্ভব ব্যাপার মনে হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, এদের আইনের আওতায় আনা না গেলেও এদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা দরকার। এদের ছবি নাম ঠিকানা প্রকাশ করে দেয়া দরকার।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ত্রিমাত্রিক কবি, অভিভাবকরা অনেকেই এই লোকের কথা জানতো এবং এরপরেও তার কাছে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়তে আসতো। উনি ইংলিশের খুবই জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তবে মেয়েদের অভিভাবকরা জেনেও উনার কাছে পড়তে পাঠাতো কিনা জানিনা। আমি আমার মা কে না জানিয়েই পড়তে যেতাম। আমরা মেয়েরা না পড়তে গেলে উনার ছাত্রের কোনই অভাব হতো না এতাও সত্য। নামটা উনার দেখুন নিচে একজন প্রকাশ করে দিয়েছে। যদি এখনও শিক্ষকতা করে তাহলে ঠিকানা পেতেও সময় লাগবে না। উনার এই কুখ্যাতি থাকার পরেও দেশের বেশ কিছু শীর্ষ স্থানীয় স্কুলে উনি শিক্ষক ছিলেন। এই ব্যাপারটা এখনও মেনে নিতে পারিনা।
ফেরিওয়ালা

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আপনার লেখার হাত ভালো। লেখা সুখপাঠ্য হয়েছে।

তবে লেখা পড়ে কিছুটা মেজাজ খারাপও হয়েছে টু বি ফ্র্যাঙ্ক।

১ - আমার নিজের এক খালু আর দুই মামা এই ধরনের ছিলো, তবে উনাদেরটা অনেকটা এক্সট্রিম লেভেলের। উনাদের পারিবারিকভাবে হেয় করতে পারিনি যদিও, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনাই ভাব দেখিয়েছে দেখে আমরা দুই বড় বোন অন্য সব বাচ্চাদের সাবধান করে দিয়ে তাদের সামলে রাখতাম। আর নিজেও তাদের বেশ ভালো রকমের আঘাত করেছিলাম। এটা আমার জীবনে প্রথম ভায়োলেন্সের ঘটনা। তাই আপনার বিড়াল খালুর কথা শুনে হাসি পেলোনা, আপনার খালা কিভাবে হেসে হেসে এই কথা তার ভাগ্নে-ভাগ্নীকে বলে এটাও মাথায় আসেনাই, আপনারা কেউ উনার হাতে থুতু দ্যান নাই? জায়গামতো লাথি মারেন নাই? কেন?

২ - ক্লাসে ছেলেরা আপনাদের সামলে রাখতো কেন? আপনারা সব মেয়েরা একসাথে হয়ে লোকটাকে শাস্তি দিতে পারেন নাই? সবাই মিলে ছুরি বের করে উনাকে উনার ঈমান্দন্ড হাতে ধরিয়ে দেবার হুমকী দ্যান নাই? সবাই গিয়ে কিভাবে এই লোকের কোলে উঠে বসতো! কি আশ্চর্য! এই লোক যদি সামনে কোনও একদিন তার কোনও ছাত্রীকে রেইপ করে তাহলে তার দায় কিছুটা আপনার উপরে আসেনা?

জানিনা, প্রবল রাগ হলো কাহিনিগুলো পড়ে! :/

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আশ্চর্য হলাম দুটো ঘটনাকেই তখন কেউ সিরিয়াসলি নেয়নি দেখে। আপনি অবশেষে লিখতে পারলেন এখানে, বাকীরা শুধু হেসেই উড়িয়ে দিল? এই কারণেই এই জাতীয় লোকেরা বারবার পার পেয়ে যায়। এরকম খালু আর নিজাম স্যার এই দেশে নিশ্চয়ই ভুরি ভুরি আছে। মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তানিম এহসান এর ছবি

যাদের কথা এখানে লিখলেন তারা যদি এখনো জীবিত থাকে তাহলে প্রাপ্য শাস্তিটা কিভাবে দেয়া যায় সেটা চিন্তা করা যায়?

আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করি, বর্তমান কাজের ক্ষেত্র ’ভায়োলেন্স এগেইন্সট চিলড্রেন’, মূলত কাছাকাছি ক্ষেত্রগুলোতেই কাজ করে এসেছি। নিজের কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলি, যদি পারেন কিভাবে এইসব মানুষরূপী জানোয়ারদের শাস্তি দেয়া যায় (সেই শাস্তি কিরকম হবে সেটা ভাবুন) সেটা চিন্তা করুন দয়া করে। এরাতো তাও প্রকাশ্যে এইসব করতে-ও সাহস পায়, সবচাইতে বড় সমস্যা যারা লুকিয়ে থাকে সুযোগের জন্য, সাহসের অভাবে; একটা শাস্তি, একটা প্রতিবাদ কিন্তু এইসব ঘাপটি মেরে থাকাদের সাবধান করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

লিখতে থাকুন, অর্গল ভাঙুক। মন্তব্যের ঘরে নানারকম মন্তব্য আসবে, ঘাবড়ে যাবেন না। লিখতে থাকুন...

Tonmoy Chakraborty এর ছবি

গোলাম স্যারের কথা বলা হচ্ছে কি নিজাম নামটির আড়ালে? কাহিনীটা পরিচিত মনে হল গোলাম স্যারের নামের সাথে।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে গত আধ ঘণ্টা ধরে হাসছি। স্যার যে কতটা কুখ্যাত ছিল এবং সবাই যে উনাকে একনামে চিনত এটা আসলে অনেককেই বঝাতে কষ্ট হয়। ইংলিশ মিডিয়ামের পোলাপান ব্লগ কম পড়ে ভাবতাম, আপনি আমার ধারনা ভুল প্রমান করলেন।

ফেরিওয়ালা

Tonmoy Chakraborty এর ছবি

আমারও একই ধারনা- এবং আসলেই ইংলিশ মিডিয়ামের মানুষ বাংলা ব্লগে কম ঘুরাফিরা করে .. কিন্তু আমি চরম উদাসের নিয়মিত পাঠক..

সচলে আমার প্রথম কমেন্ট পাবলিশ হোল হাসি গোলাম স্যার একটা জিনিষ! আমার যদিও উনার কাছে পড়ার দুর্ভাগ্য হয় নাই।
ব্লগিং চালান । আপনার লেখা বেশ উপভোগ করার মতই!

রোদেলা এর ছবি

লেখাটি পরে মনে পরল এই ভয়ে ইংলিশ পড়ি নাই।
সবার সামনে লজজা দেবার সময় মনে হয় আমরা ভাবি এদের পরিবার পরিজনদের কথা॥ আপনার বিড়াল খালুর মত একজনের ২৫ তম বিবাহ বারষিকির ছবি ফেসবুকে দেখে ভাবলাম হায় রে মান সমমান হায় রে সমাজ|

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।