রাত্রের রাজা ছিলিমোল্লা বাজাজ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১০/০৯/২০২১ - ১১:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাত্তিরে ইদানীং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি
নিমীলিত লেপ্টপ, বিস্ফারিত চক্ষু ও বিনিদ্র কান লয়ে
ঘন্টা দেড়দুই গুনি মশারির ছিদ্র আর শুনি বিবি ঘুমঘোরে কাকে যেন বকে।

মশা নয়, নয় কুন ফেসবুক-বান্ধবীর পালোয়ান খসমের ভয়
রক্তে খেলা করে আরও গুরুতর বিপন্ন বিস্ময়
ভয় করি রাত্রের রাজা ছিলিমোল্লা বাজাজকে।

দশটার পরই দেখি তামাম অনলাইন যেন উহারই দখলে।
শত শত পেজ হতে তারে ডাকে সাক্ষাৎকারে।
বালক-যুবক-বুড়া কুডি কুডি প্রশ্ন লয়ে তাহার শরণে
বলে স্যার আপনার মতামতটা কন শুনি।

সরাসরি উত্তর কখনও মিলে না।
শুরুতেই উথলে উঠেন স্যার ছিলিমোল্লা বাজাজ
বলেন, আমি প্রশ্নকর্তার সঙ্গে একমত। কিন্তু সে একটি গাধা।
কারণ সে ভুলে গেছে এইট্টিন এইট্টি এইট্টে বতসোহানার কবি ঙ্গেলেঙ্গে এ প্রসঙ্গে
তাহার অন্তিম বইয়ের আটাশি পিষ্ঠায়
মোক্ষম জবাব দিয়া গেছে। কিন্তু তার আগে আমাদের বুঝতে হবে
আক্কাদীয় সভ্যতার শেষ দিকে কি ঘটিয়াছিল। বুঝতে গেলে শিখতে হবে
আক্কাদি সুমেরি গ্রিক। কুথা গিয়া শিখবা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে? না গো না।
উখানে এসব কিছু শিক্ষার সুযুগই নাই। উহা একটি পছাধছা রিয়েল এষ্টেট মাত্র।
পাড়ার এপ্তেদাই মাদ্রাসায় গিয়া হয়ত শিক্ষাদীক্ষা পাইলেও পাইতে পার কিছু
পর্যাপ্ত গ্রিক শিখে আর্কিমিডিসের মত তুমিও হয়ত লেংটা হয়ে রাজপথে পারিবে দৌড়াতে।
কিন্তু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে? কভু না গো না গো। বলে দেন দাতে কিড়মিড়ি।

ফুৎকারে উড়ায়ে দেন রবীন্দ্র ঠাকুরে
বালুচাপা দিয়া দেন আনিসুজ্জামানে
ঘড়ির কাটাও যেন তার দাপে জান হাতে ছুটে গভীর অন্ধকারে একটা দুইটা তিনটা বরাবর
ছিলিমোল্লা বাজাজ অনড়
ইতিহাসে যারা ছিল অট্ট-হট্ট গদ্দিতে নশীন
সবেরে কথার মাড়ে ধুয়ে দিয়ে ইস্ত্রি মেরে করে দেন ক্ষীন হীন দীন
জম্বি চলচ্চিত্রেও এত মৃত বেক্তির মাথা পড়ে না তো কাটা
যেমতি কাটেন হম্বিতম্বি করে ছিলিমোল্লাটা।
ঢাকা-লন্ডন-দোহা-শিয়াটল-মন্টুভিডিও
সব সাক্ষাৎকারে ছিলিমোল্লা বাজাজ বরণীয়
ভোরের মোরগও যেন এলারামে পেচ মেরে জাগে আগেভাগে ঠেকাতে উহারে
কিন্তু নাহি পারে। সাক্ষাৎকারে
প্রশ্ন মরে উত্তরের ভারে।

অবশেষে সুবহে সাদিকে
রাত্রের কাজল যবে হয়ে আসে ফিকে
সাক্ষাৎকারওয়াল্লা ঘুমে পড়ে ঢলে
রাত্রের রাজা ছিলিমোল্লা বাজাজ থেমে যান শেষ কথা বলে---
কিন্ত এইসব কথা বলিয়া কি লাভ? যাই হউক
প্রশ্নকর্তার সঙ্গে আমি একমত।

============================

নামঃ খেলায়েত
পেশাঃ কবি


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

আই ফিল ইউ, খেলায়েত ব্রো। আগে রাত দশটা এগারোটার দিকে দুদণ্ড টিভি দেখতে বসতাম, মাসে পাঁচশো টাকা কেবলভাড়া উসুল করার জন্য। রাত্রের রাজার ডরে সেইটাও বাদ দিছি। ক্রোমকাস্ট সহায়তায় ইউটিউব দেখি অথবা টিভিতে স্ক্রীন কাস্ট করে ফেসবুকিং করি।

হাসিব এর ছবি

ছিলিমোল্লা বাজাজকে নিয়ে কোবিতা ফরাসি শব্দের রেফারেন্স ছাড়াই শেষ হলো!

মন মাঝি এর ছবি

ছিলিমোল্লা বাজাজের মত সবজান্তা সর্ববিদ্যাবিশারদ মহাজ্ঞানী মহাপন্ডিত বিশ্বব্রম্মান্ডে আর ২য়টি নাই, অন্তত বাংলাদেশে তো নাইই!!! উনি আমাদের চলন্ত বিশ্বকোষ, চলন্ত লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, চলন্ত ইউনিভার্সিটি। এই দেশের আর কেউ তার নখেরও যোগ্য না!! তাই তাকে বাংলা উকাডেমির মহা পরিচালক করা হোক, যত বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার সবগুলির উপাচার্য করা হোক, সবগুলির সব ফ্যাকাল্টির সব শিক্ষকের বদলে সর্বপদে শুধু তাকেই নিয়োগ দেয়া হোক। তাকে শিক্ষামন্ত্রী করা হোক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হোক, প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হোক, আইনমন্ত্রী করা হোক, যতরকম মন্ত্রী আছে -- এমনকি প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সব করা হোক!!! উনি ছাড়া আমাদের আর কোনো মন্ত্রী-শিক্ষক-পন্ডিত কিচ্ছু দরকার নাই। তার ভক্তকুলের পক্ষ থেকে এই আমাদের একমাত্র দাবি। আমাদের দাবি মানতে হবে!!! মানতে হবে!!!

****************************************

করবী মালাকার এর ছবি

দারুন।
চিনেছি, চিনেছি তাঁকে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মোল্লা সায়েবের সাথে আবার ডাক্তার নায়ক মহোদয়ের একটা বিষয়ে নিদারুণ মিল, দুজনেই জ্বলন্ত ইনসাঁইকেলপিডায়া কিনা! উভয়ই বেশ কিছু কঠিন কঠিন বইয়ের নাম আর সেসবের কিছু পৃষ্ঠা নম্বর মুখস্থ করে রেখেছেন, কিছু ঘটনার সাল তারিখও মুখস্থ করে রেখেছেন। খেয়াল করলে দেখা যায় তাঁদের বক্তৃতায় সেইসব বই পুস্তক আর সেইসব সাল তারিখগুলো মাঝেমাঝেই ঘুরেফিরে আসে, তা সে শীতকালের বক্তৃতাই হোক কিংবা গ্রীষ্মকালের।

মন মাঝি এর ছবি

সত্যি, নায়ক সায়েবের সাথে মোল্লা সায়েবের আশ্চর্য মিল!! এমনকি দুইজনের সোশাল মিডিয়ার ভক্তদলের মধ্যেও আশ্চর্য মিল!!! হো হো হো

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

দুইজনের সোশাল মিডিয়ার ভক্তদলের মধ্যেও আশ্চর্য মিল!!!

এইটাই আসল মিল! লেজে লেজে গোবরে গোবরে মিলে মিশে একাকার!

তারেক অণু এর ছবি

হা হা হা, মিসির আলীর নানা বইতে এমন ভুল রেফারেন্স বইয়ের কথা দেওয়া থাকতো

রিসালাত বারী এর ছবি

খেলায়েত কবিকে সচলের সদস্যপদ দেয়া হোক গুরু গুরু

হিমু এর ছবি

এইট্টিন এইট্টি এইটে তুমুল সক্রিয় "বতসোহানার কবি ঙ্গেলেঙ্গে" চরিত্রটাকে পছন্দ হয়েছে। কল্পনার চোখে দেখতে পেলাম, কাজ-চালানোর-মতো-প্রবীণ-কিন্তু-জজবার-দিক-থেকে-নবীন কবি ঙ্গেলেঙ্গে গামছায় গিট্টু মেরে আলখাল্লাখানা সামলে চারপাই পেতে বসে দোয়াতে একটু পরপর কলম চোবাচ্ছেন আর ফুরফুরে এলোমেলো বাতাসে দাড়ির আঁচল উড়িয়ে বইয়ের পাতার সাতাশিখানা পৃষ্ঠা বৃথা আলাপে বরবাদ করে অবশেষে অষ্টাশীতিতম পাতায় এসে পিথিমির যাবতীয় তর্ক ঘ্যাঁচাঘ্যাঁচ মীমাংসা করে দিচ্ছেন। যেভাবে all roads lead to Rome, অনেকটা সেভাবেই all disputes end on the 88th page of Ngelenge's opus from 1888.

দেখি, ওঁকে আঁকতে পারি কি না।

কবিতা পাঠক এর ছবি

খেলায়েতদা, আশা করি সুস্থ আছেন। আপনি কি কবি ফরিদা ইয়াসমিন সুমির কবিতা পড়েছেন কখনও? ওঁর কিছু কবিতা পড়ে আপনার কথা মনে পড়ে গেল।

চুম্বন-তৃষ্ণা

চুম্বন-তৃষ্ণা জোটে, ক্ষুধা মেটে না,
আমার যে দুই পেট, পেট ভরে না!
তলপেটে উপুড়-কলস ভরতে চাই না
কুটি কুটি ভেঙেচুরেও শান্তি পাই না।
তৃষ্ণা নিবারণেও ক্ষুধা মেটে না,
আমার যে দুই পেট, পেট ভরে না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।