।। রাষ্ট্রসমুহ যখন ঈশ্বর হয়ে উঠছে ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ০৮/০৪/২০০৯ - ৬:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘটনাক্রম-১:

এলিনা ভেরেলা লোপেজ ।
দক্ষিন আমেরিকার দেশ চিলির এই তরুন চিত্রনির্মাতা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন গতবছর মে মাসের ৭ তারিখে । তার সাথে গ্রেপ্তার হন আরো দুই সহকর্মী । অভিযোগ গুরুতর, ব্যাংক ডাকাতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী হয়ে উঠা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
auto
ঘটনার শুরু আসলে আরো পেছনে । এলিনা গত চারবছর থেকে কাজ করছিলেন তার তথ্যচিত্র ‘নিওএন মাপুচে’ নিয়ে ।
মাপুচে’রা হলো চিলির প্রধান আদিবাসী জনগোষ্ঠী, মুলতঃ বনাঞ্চলে তাদের ঘরবসতি । এই বনকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতে মাপুচে’রা নিগৃহীত হচ্ছে কয়েক দশক থেকে । চিলির সংবিধান অনুযায়ী এই বনভূমির কর্তৃত্ব আদিবাসীদের হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কাঠব্যবসায়ীরা তাদেরকে উচ্ছেদ করে দখল নিচ্ছে বনভূমি । চিলির রাষ্ট্র শক্তি এই দখলদারিত্ব প্রতিরোধের বদলে উন্নয়নের বাহানা তুলে কর্পোরেট কোম্পানীগুলোকে সহায়তা করছে । আদিবাসীরা যখন তাদের ভিটেমাটি ও বন রক্ষার জন্য কোম্পানীগুলো প্রতিরোধ করতে উদ্যত হচ্ছে, রাষ্ট্রশক্তি তখন তার সকল ক্ষমতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রতিরোধকারীদের উপর ।
পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে, পুলিশে কাজ না হলে সেনাবাহিনী দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের ঘরবসতি, গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে অমানবিক, নেতৃস্থানীয়দের নির্যাতনের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে দীর্ঘ দিনের জন্য আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো এইসব খবর চেপে রাখছে ।

কিন্তু এলিনা লোপেজের ঘটনা বিশ্বজুড়ে প্রচার পেয়ে যায় তার বন্ধুদের দ্বারা মুলতঃ ইন্টারনেটের কল্যানে । এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ অনেকগুলো মানবাধিকার সংগঠন চিলি’র সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এলিনার উপর অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করে দ্রুত মুক্তির জন্য ।

এলিনা শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেয়েছেন আগষ্ট মাসে । অনির্ধারিত সময়ের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় সংস্থা সমুহের নজরদারীতে থাকবেন এবং তার চারবছরের গবেষনা ও গৃহীত তথ্যচিত্র সব ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে ।

ঘটনাক্রম-২:
ডাঃ বিনায়ক সেন । ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের,পেশায় চিকিৎসক বিনায়ক সেন দীর্ঘবছর থেকে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন রাজ্যের চিকিৎসাসুবিধা বঞ্চিত আদিবাসীদের সেবায় । একই সাথে তিনি পিপলস্ ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) এর জাতীয় সহ-সভাপতি এবং রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ।
auto
১৪ই মে ২০০৭ এ, ডা. বিনায়ক সেন, গ্রেফতার হন; তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ছত্রিশগড় বিশেষ জন নিরাপত্তা আইন এবং ১৯৬৭ সালের বেআইনী কর্মকান্ড (প্রতিরোধ) আইনের সংশোধিত বিধির অধীনে অভিযোগ দায়ের করা হয়৷

যদি ও আসল সত্য হলো এই, রাষ্ট্রশক্তি কর্তৃক ছত্তিশগড় রাজ্যের আদিবাসীদের উপর যে ধারাবাহিক নিপীড়ন চলছে বিনায়ক তার প্রতিবাদ করতেন এবং যে মাওবাদী গেরিলারা রাষ্ট্র ও কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তিনি তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন ।

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী ছত্রিশগড়ের অভিজাত শ্রেনী ও বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর লুটপাটের সুবিধার্থে রাজ্য কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে মাওবাদীরা (ভারতে নকশালবাদী হিসেবেও পরিচিত) আন্দোলন করে যাচ্ছে গত তিনদশক ধরে । রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এই আন্দোলনকে সবসময়ই প্রতিহত করতে চেয়েছে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে । কিন্তু প্রতিরোধ আন্দোলন ক্রমশঃ সশস্ত্র ও সহিংস হতে হতে ২০০১ সাল থেকে তা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে রুপ নেয় ।
ক্রমবর্ধমান মাওবাদীদের প্রভাব মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রের পরিকল্পনা মতো রাজ্যসরকার সাধারন মানুষদের একাংশের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় । সশস্ত্রবাহিনীর তত্বাবধানে ‘সালওয়া জুদুম’ নামে এই মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হয় ২০০৫ সালে । এভাবে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করা হয়েছে ছত্তিশগড়ে যাতে এই ডামাডোলের মধ্যে কর্পোরেট লুটতরাজ চলতে পারে নির্বিঘ্নে ।

ডাঃ বিনায়ক সেন ও ছত্তিশগড়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মান করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হন আরেক চিত্রনির্মাতা অজয় টিজে । অজয়কে গ্রেপ্তার করা হয় ৪মে ২০০৮ তারিখে এবং যথারীতিই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন ।
auto
৫ আগষ্ট অজয় শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেয়েছেন । কিন্তু নোয়ামচমস্কি, অরুন্ধতী রায়দের আবেদনের পরও, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ জানানো স্বত্বে ও এখনো মুক্তি পাননি ডাঃ বিনায়ক সেন ।







--------------------------------------


অথচ এইসব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় অথবা নয় শুধু চিলি কিংবা ভারতের নিজস্ব বিষয় । এই ঘটনাগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘটে চলছে এশিয়া,আফ্রিকা,দক্ষিন আমেরিকার প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে এমনকি ইউরোপের কোন কোন তুলনামুলক দরিদ্র রাষ্ট্রে ।
যদিও রাষ্ট্রসমুহ স্বাধীন বলে ঘোষিত, গতশতকে পৃথিবী থেকে উপনিবেশবাদ বিদায় নিয়েছে,এমনকি সমাজতন্ত্রের নামে যে সকল দখলদারিত্ব বজায় ছিলো পুর্ব ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলে তার ও সমাপ্তি ঘটেছে । জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত কোন রাষ্ট্রের নাগরিকেরাই অন্ততঃ প্রকাশ্যে আর বহিঃশক্তির অধীনস্থ নয় । তাহলে স্বাধীন রাষ্ট্রসমুহের এই চরিত্র কেনো? স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো তার নাগরিকদের প্রতি এতোটা আক্রমনাত্বক ও নিপীড়নমুলক কেনো? কেনো রাষ্ট্রগুলো ক্রমশঃ আধিপত্যকামী হয়ে উঠছে? নাগরিকদের নিজেদের প্রয়োজনে রাষ্ট্র নামের যে লৌকিক সংগঠনটির সৃষ্টি তা শেষপর্যন্ত কাদের অভীষ্ঠসাধনে নিয়োজিত?

‘পিপলস ইন্টেলেকচুয়াল’ খ্যাত অরুন্ধতী রায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে- আমাদের একটা ক্রমশঃ বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেনী আছে যারা সর্বগ্রাসী ক্ষিধে নিয়ে ডুবে আছে চরম ভোগবাদে । শিল্পবিপ্লবের সময় পাশ্চাত্যের দেশগুলোর তবু ক্ষিধে মেটানোর জন্য অধিকৃত উপনিবেশ ছিলো -যেখান থেকে তারা সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে, দাস বানাবার অফুরান যোগান পেয়েছে । কিন্তু আমাদের জন্য তো নিজেদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া আর নিজেদের মানুষকেই দাস বানানো ক্ষিধে মেটানোর কোন সুযোগ নেই । তাই আমরা নিজেদেরকেই ছিড়েখুড়ে খাওয়া শুরু করেছি । ভোগবাদের ক্ষিধে ক্রমশঃ বাড়ছে,ক্ষি ধে মেটানোর জন্য কেড়ে নেয়া হচ্ছে ক্ষমতাহীনদের চাষের জমি,পানি,প্রাকৃতিক সম্পদ

বস্তুতঃ আমরা তাই দেখি সমগ্র ভূগোল জুড়ে । চিলি তথা আমাজানের জংগল থেকে অবাধে কাঠ চুরির জন্য মাপুচেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করছে কাঠব্যাবসায়ীরা; বিপুল তেলের দখলদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য ইরাক যুদ্ধ সাজিয়েছে ডিক চেনির হেলিবার্টনের মতো কর্পোরেট কোম্পানী; ভারতের ওড়িষ্যা, অন্ধ্র প্রদেশের খনিজ সম্পদ লুটের জন্য আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে ভেডান্ত,টাটার মতো কোম্পানীগুলো; আর আমাদের দেশে গ্যাস ও কয়লার মুক্তলুন্ঠন চালিয়েছে এশিয়া এনার্জি,ইউনিকলের মতো কর্পোরেটরা ।

আর প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি দেশে এই কর্পোরেট লুন্ঠনের পাহারাদার সাজছে সরকারগুলো । উন্নয়ন,জিডিপি বৃদ্ধি এইসবের দোহাই দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ-নদী,বনভূমি,খনি তুলে দেয়া হয়ে হচ্ছে কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর হাতে ।যে সম্পদে সব মানুষের অধিকার সেই সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে মাত্র কজন ক্ষমতাধরের হাতে । ফলে ধনী-দরিদ্রের ভয়ংকর বৈষম্য বাড়ছে, বাড়ছে সামাজিক সংঘাত ।
আর যখনই গনবিরোধী এইসব পদক্ষেপের প্রতিবাদ হচ্ছে রাষ্ট্রশক্তি প্রতিবাদকারী নাগরিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে তার সর্বশক্তি নিয়ে । আইন-শৃংখলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, আদালত ও বিচারব্যবস্থা, গনমাধ্যম- রাষ্ট্রের প্রতিটি অংগ যাদের মুল দায়িত্ব জনগনের সেবা নিশ্চিত করা তারাই চরম নিপীড়ন চালাচ্ছে । ভারতের ছত্তিশগড় কিংবা বাংলাদেশের ফুলবাড়ির গল্প আসলে সেই একই ।

রাষ্ট্রশক্তি শুধু এতেই থেমে থাকছেনা । ইরাকে প্রতিরোধ যুদ্ধ দুর্বল করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের তত্বাবধানে চাগিয়ে তোলা হয়েছে শিয়া-সুন্নী বিভেদ, তেমনি হয়েছে ভারতের ছত্তিশগড়ে- কর্পোরেট লুন্ঠন প্রতিরোধকারী মাওবাদীদের মোকাবেলার জন্য সরকার অস্ত্র তুলে দিয়েছে সাধারন মানুষদের একাংশের হাতে । তালেবান জঙ্গীদের মোকাবেলায় একই কৌশল নির্ধারন করেছেন পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট মিঃ জারদারী । সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হবে তালেবান জঙ্গীদের নির্মুল করার জন্য ।

কর্পোরেট লুন্ঠন প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশে এখনো তেমন তীব্র হয়ে উঠেনি । তীব্র না হওয়ার জন্যই হয়তো রাজনীতিপ্রিয় জনগনকে ব্যস্ত রাখা হয় ধারাবাহিক রাজনৈতিক নাটক দর্শনে । অদূর ভবিষ্যতে কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলন তীব্র হলে তার মোকাবেলার জন্য ছত্তিশগড়ের ‘সালভা জুদম’ এর মতো কোন বাহিনী গড়ে উঠতে পারে যারা কাজ করবে সরকারের স্ট্রাংকিং ফোর্স হিসেবে । কারা হবে তারা? সময়ে সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তবে ইংগিত মেলে । রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা প্রতিটি গনতান্ত্রিক, অগনতান্ত্রিক, সামরিক সরকার একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সংরক্ষন করে আসছে-এই রাষ্ট্রের জন্মযুদ্ধ কালে ও যাদের ভূমিকা ছিলো গনবিরোধী,নৃশংস ।

ভারতের মতো জোরালো গনতান্ত্রিক কাঠামোর রাষ্ট্রই হোক কিংবা বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো সেনাপ্রভাবিত রাষ্ট্রই হোক সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্রমশঃ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছে । রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশীদারিত্ব ক্রমশঃ কমে আসছে । নীতিনির্ধারক নিউক্লিয়াসে ক্রমশঃ ঘনীভূত হচ্ছে সামরিক-বেসামরিক স্টেকহোল্ডাররা, নিজেদের জন্য আর্থিক সুবিধা আদায় ছাড়া যাদের আর কোন নৈতিক বা আদর্শিক দায়বদ্ধতা থাকেনা । ফলে দেখা যায় সারের দাবীতে বিক্ষোভরত কৃষকের বুকে গুলী চালাতে দ্বিধা না করলে ও চিকিৎসকদের খেয়ালখুশী মতো ফি আদায়ে রাষ্ট্রের কোন মাথাব্যাথা নেই । কেন্দ্রে কৃষকের প্রতিনিধিত্বকারী কেউ নেই কিন্তু চিকিৎসকদের জোরালো সংগঠন আছে ।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এ অবস্থার সমালোচনা করে বলেন- রাষ্ট্র কোন কর্পোরেট কোম্পানী নয়, রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারেনা । রাষ্ট্রের সকল নীতি নির্ধারিত হতে পারেনা ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে আর লাভক্ষতির হিসাব মেপে । নাগরিক রাষ্ট্রের চাকরীজীবি নয় যে তার ইচ্ছে অনিচ্ছার উপর নাগরিকের অস্তিত্ব ।

রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু যে নাগরিককে নিপীড়ন এবং নাগরিকদের মধ্যে ভাংগন সৃষ্টি করছে তাই নয়, বন্দী করছে তার স্বাধীন চিন্তা ও বিচার-বিবেচনাবোধ । রাষ্ট্রীয় প্রচার যন্ত্র ও কর্পোরেট মিডিয়া যা দেখাচ্ছে মানুষ তাই দেখছে, যা ভাবাচ্ছে তাই ভাবছে । ব্যক্তি হারাচ্ছে তার নিজস্বতা । কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী আগ্রাসন চালালে ও মিডিয়া একে প্রচার করছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য একান্ত জরুরী বিষয় হিসেবে । ফলে মেইনল্যান্ড ভারতীয়রা তাই বিশ্বাস করছে ।

আমাদের সেনাবাহিনী পুরো একদশক ধরে আগ্রাসন চালিয়েছে পাহাড়ে । সেনা আগ্রাসনে যতো ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে তার সবটুকু ঘটেছে আদিবাসীর ক্ষেত্রে । কিন্তু আমরা মুলধারার মানুষেরা চুপ থেকেছি কারন রাষ্ট্র যন্ত্র তাই চেয়েছে । আমরা ও বিশ্বাস করেছি যে রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা রক্ষার জন্য হয়তো তা জরুরী ছিলো । প্যারাডক্স এই- ১৯৭১ সালে আমরা যে গনহত্যার শিকার হয়েছিলাম তার ক্ষেত্রে ও পাকিস্তান রাষ্ট্র তার অনুগত নাগরিকদের একই ধারনা দিয়েছিলো, সেই নাগরিকরা ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার জন্য এই গনহত্যাকে মেনে নিয়েছিল ।

এইভাবে মানতে মানতে সবধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নির্যাতনকেই জনগন একসময় নিয়তির মতো মেনে নিতে বাধ্য হয় । দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত হওয়া মাত্রই পুলিশী নিরাপত্তায় চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নাগরিকেরা যদিও পরবর্তীতে তাদের অনেকেই আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমানিত হচ্ছেন । কোন যুক্তিতে তাহলে দোষী প্রমানিত হবার আগেই শাস্তিপ্রদান?নির্দোষ প্রমানিত হলে পরে, সেই শাস্তি ফিরিয়ে নেয়ার কি কোন বিধান আছে? অথবা আইন-শৃংখলার বাহিনীর কি আদৌ কোন আইনগত অধিকার আছে অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানের, নাকি তার দায়িত্ব অভিযুক্তকে আদালতে সমর্পণ করা মাত্র? অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নয়, এটা স্বতসিদ্ধ। যুক্তি,প্রমানের সাপেক্ষে অভিযুক্তকে দোষী কিংবা নির্দোষ ঘোষনা করা এবং দোষী হলে তার শাস্তি নির্ধারন করা একমাত্র আদালতের এক্তিয়ার । কিন্তু আদালতের কাজ যখন আইন-শৃংখলা বাহিনী করে ফেলে, আদালত তখনো নিশ্চুপ । কেননা শেষপর্যন্ত দুটোই রাষ্ট্রশক্তির দুই-বাহু মাত্র ।

বিগত জোট সরকার এবং সেনাশাসিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের ‘গনগ্রেপ্তার’ এর মতো অভূতপূর্ব অমানবিক রাষ্ট্রীয় আচরনের শিকার হতে হয়েছে । কেবল মাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচী মোকাবেলা করার জন্য কোন বাছ-ব ইচার না করেই একেকদিনে হাজার হাজার মানুষকে যাকে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,যদি ও এই মানুষগুলোর বেশীর ভাগই রাজনৈতিক কর্মী নয় । রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর হাজার হাজার সাধারন মানুষকে কারাগারে ঠেলে দেয়া । কারাগারের দুঃসহ অভিজ্ঞতা একজন নিরপরাধ মানুষের মনোজগতে সারাজীবনের জন্য কি ভয়ংকর ক্ষতির কারন ঘটায়, রাষ্ট্র তা ভেবে দেখার তোয়াক্কা ও করেনা ।

এসময়ের রাষ্ট্রগুলো একেবারে মৌলিক একটা ধারনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে আর তা হলো-রাষ্ট্রের জন্য নাগরিক নয়, নাগরিকের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র । রাষ্ট্রের ঈশ্বরের মতো সর্বশক্তিমান ও জবাবদিহীহীন হয়ে উঠার কোন সুযোগ নেই ।

ব্যক্তিমানুষ একসময় নিজের প্রয়োজনেই গোত্রভুক্ত হয়েছে, ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে, পরিবার সৃষ্টি করেছে, সমাজবদ্ধ হয়েছে এবং সবশেষে নিজেদের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র নামের লৌকিক সংগঠনটি জন্ম দিয়েছে ।
কিন্তু যখনই গোত্র,ধর্ম,পরিবার কিংবা সমাজের বন্ধন শৃংখল হয়ে উঠেছে, ব্যক্তিমানুষ সেই শৃংখল ছিন্ন করেছে । পরিবার কিংবা গোত্রের সম্মান রক্ষায় কাউকে হত্যা করা আধুনিক মানুষের বিবেক বিরুদ্ধ, চুরির অপরাধে হাত কেটে ফেলার ধর্মীয় বিধান একজন ধার্মিকের কাছে ও আজ আর চর্চার বিষয় নয় ।

মানুষেরই গড়ে তোলা লৌকিক সংগঠন যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে মানুষের তখন এই মিথস্ক্রিয়ার শেষ পরিনতি কি দাঁড়াতে পারে? ভবিষ্যতের মানুষ কি রাষ্ট্রবিহীন বিশ্বের অভিজ্ঞতা লাভ করবে? কিন্তু কাঠামোর শূন্যতা তাহলে পুরন করবে কে?

সহজলভ্য কোন উত্তর নেই । দৃশ্যমান ভবিষ্যতে ব্যক্তিমানুষ ও রাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তনের কোন ইংগিত ও নেই ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই ।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম, পড়তে পড়তে, শেষ প্যারায় এসে জানলাম। কেবলই দীর্ঘশ্বাস!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চমৎকার একটা বিশ্লেষণ। সত্যিকার অর্থেই গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢেলে কোন লাভ নেই। চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই এটা অনুধাবণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করি। আপনি যেমনটা বলেছেন, মানুষকে নিয়ে শেষ কথা বলা যায়না-- ভেঙে গড়া কিংবা বিবর্তনের খেলার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শরীরে নতুনত্বের উদ্ভব ঘটে। তার জন্য ২শ বা ৫শ বছর অপেক্ষা করতে হবে হয়তো।

শেষের কয়টা প্যারায় আপনার অনুভুতিগুলো খুবই ভালো লেগেছে। সেই সাথে জেগেছে চিন্তার খোরাক। ধন্যবাদ।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম, ভাবলাম, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। শুধু মাংসটাই রেঁধে খাই, নয়তো আর সব দিকেই বন্য রয়ে গেছি। একের পর এক ঘটনা সেটাই মনে করিয়ে দেয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন লেখা পড়ে শুধু "খুব ভালো লাগলো" ব'লে সারা যায় না। আর পড়ে যে অনুভূতি জাগে তার কথা লেখাও খুব বেদনাদায়ক।

জাকির জাহামজেদ [অতিথি] এর ছবি

কর্পোরেট লুন্ঠনের বিশাল একটা উদাহরণ আমাদের দেশেও আছে।
গ্রামীণফোন রেলওয়ের অপটিক্যাল লাইন ব্যবহারের জন্য ২০ কোটি টাকা দিয়ে ২০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছে। আর তারা এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলালিংকের কাছে ভাড়া দিচ্ছে বছরে ২০০ কোটি টাকায় !আমাদের সরকার এটা দেখেও না দেখার ভান করছে আর বসে বসে আঙ্গুল চুষছে।

সহজলভ্য কোন উত্তর নেই । দৃশ্যমান ভবিষ্যতে ব্যক্তিমানুষ ও রাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তনের কোন ইংগিত ও নেই ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই ।

সহজলভ্য কোন উত্তর নেই । দৃশ্যমান ভবিষ্যতে ব্যক্তিমানুষ ও রাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তনের কোন ইংগিত ও নেই ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই ।

এইটাই ঠিক ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"অথবা আইন-শৃংখলার বাহিনীর কি আদৌ কোন আইনগত অধিকার আছে অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানের, নাকি তার দায়িত্ব অভিযুক্তকে আদালতে সমর্পণ করা মাত্র? অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নয়, এটা স্বতসিদ্ধ। যুক্তি,প্রমানের সাপেক্ষে অভিযুক্তকে দোষী কিংবা নির্দোষ ঘোষনা করা এবং দোষী হলে তার শাস্তি নির্ধারন করা একমাত্র আদালতের এক্তিয়ার । কিন্তু আদালতের কাজ যখন আইন-শৃংখলা বাহিনী করে ফেলে, আদালত তখনো নিশ্চুপ । কেননা শেষপর্যন্ত দুটোই রাষ্ট্রশক্তির দুই-বাহু মাত্র ।"

এর কাছাকাছি চিন্তার একটা পোস্ট দিয়েছিলাম একবার - "আইনসঙ্গত, না বিবেকসঙ্গত?"। সময় থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।

বর্তমান চেহারার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাটা অবশ্যই প্রশ্ন সাপেক্ষ। বিকল্প মানবিক চেহারার রাষ্ট্র বা সঙ্ঘকাঠামোটি আমাদেরই খুঁজে বার করতে হবে। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম...শেষ লাইনটাতেই "কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই ।" যা ভরসা...

~
(স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – )

তারেক এর ছবি

দারুন বিশ্লেষণ! আসলেই সহজলভ্য কোন উত্তর নেই। এটা ও জানা নাই, পরবর্তী ভূমিকায় আমাদের অংশগ্রহন কিরকম হবে।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সচেতনা এর ছবি

এই লেখাটা পড়ার পর নীচের লিঙ্কটা দিলাম। কিছুই হয়তো হবে না, তবু যদি কারও মনে হয় তাহলে লিঙ্ককে গিয়ে ডঃ বিনায়ক সেনের মুক্তির জন্য যে সত্যাগ্রহ হচ্ছে তাতে অংশ নিন। সামান্য হলেও ছোট করে কোথাও কিছু ঘটতেও পারে। বিনায়ক সেনের মুক্তি চাই অবিলম্বে।

SUPPORT THE RAIPUR SATYAGRAHA FOR THE RELEASE OF DR. BINAYAK SEN

Send a FREE FAX to the Chhattisgarh government to demand:
1. Immediate release of the doctor to the workers DR. BINAYAK SEN
2. End to the state repression of democratic dissent, revocation of the CSPSA
3. Disbanding of SALWA JUDUM, full compensation to all victims
VISIT http://petitions.aidindia.org/binayaksen09/

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঠিক দু বছর আগে। এমনই এক এপ্রিলে, রাস্ট্র ইশ্বর আহমেদ নূরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।

----------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ড. বিনায়ক সেনের মুক্তির আন্দোলনটি অনেকদিন থেকে ধীরে ধীরে বেগ পাচ্ছে। মনে হয় না, তাঁকে মোহাম্মদ আফজাল এর মতো ফাঁসানো সম্ভব হবে। আমরাও এখানে তাঁর মুক্তির পিটিশনে সামিল হতে পারি। তাঁকে নিয়ে এই ওয়েবসাইটে আলোচনা ও দলিল পত্র মিলবে।

মোহাম্মদ আফজালকে অভিযুক্ত করা হয় ২০০১ সালে দিল্লিতে পার্লামেন্ট ভবন আক্রমণের পরিকল্পনাকারী হিসেবে। আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেয়। যদিও ঐ অপরাধের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনো সংস্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু মিডিয়া বিশেষত এনডিটিভি পুলিশ হেফাজতে তাঁর জবানবন্দির ভিডিওটিকেই বারবার প্রচার করে তাঁর ফাঁসির পক্ষে জনমত সংগঠিত করে। আদালতের রায়ে যা বলা হয় তা অনেকটা এরকম, যদিও কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সংস্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও যেহেতু এ ধরনের ষড়যন্ক্রের সরসাসরি প্রমাণ পাওয়া বা থাকা কঠিন।
("As is the case with most of the conspiracies, there is and could be no direct evidence of the agreement amounting to criminal conspiracy.)

অরূন্ধতি রায়, রাম পুণ্যানির মতো ব্যক্তিরা এবং পিপলস্ ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) সহ অনেক বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা তাঁর নিরপেক্ষ বিচার দাবি করে আসছেন। অরুন্ধতি রায় বলেন, Media bending the truth to push Afzal to the gallows-- Bv Arundhati Roy, Hindustan Times, 23 December 2006. |
India's shame -- Bv Arundhati Roy, The Guardian, 15 December 2006. |

যে আইনে তাঁর বিচার হয়েছে, সেই পোটা আইন নাগরিক আপত্তির মুখে বাতিল হলেও আফজালের শাস্তি বাতিল হয়নি। এ ধরনেরই আরেকটি আইন টাডা এখনও বলবৎ আছে। এর রেকর্ডটি শুনুন : টাডায় গ্রেফতার হওয়া ৫ হাজার জনের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত মাত্র ১০০ জন। তাহলে নির্দোষ ৪,৯০০ জনকে ঠিকই দীর্ঘদিন কারাবাসসহ অকথ্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দেখা যায় যে, এই আইনে আটকের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু মুসলিম। (১৫কোটি জনসংখ্যা কীভাবে সংখ্যালঘু হয়, সেটি এক প্রশ্ন বটে)।

রাষ্ট্র আরো শক্তিশালী হবে, এলিট ফোর্স (ড়্যাবের মতো) আরো ছড়াবে। ইরাক ফেরত মার্কিন সৈন্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে মন্দাজনিত বিক্ষোভ ঠেকাতে। বানানো হচ্ছে শ্রমশিবির।

বাংলাদেশে জেএমবি-কে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল মাওবাদী ও কৃষক সংগঠকদের হত্যা ও দমনের কাজে। মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা পর্যন্ত বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে সাহসী ভূমিকার জন্য পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল। বিএনপি তখন সেটা করেছিল কেবল নিজের গরজে নয়, এটাই তাদের কাছে চাওয়া হয়েছিল। এই সরকারও ড়্যাব নিয়ে উচ্চবাচ্য করে এখন তাকে আরো প্রসারিত করার চিন্তা করছে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অনিশ্চিত এর ছবি

রাষ্ট্র সবসময়ই ঈশ্বরের প্রতিনিধি। মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিপীড়ন করে জুলুম করে পদানত করে রাখতে চায়। বিশেষ করে যে রাষ্ট্রের দাঁড়িয়ে থাকে মূল্যবোধহীন অর্থের ওপর, তার নিষ্ঠুরতা সীমাহীন।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

মন খারাপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ বিশ্লেষণ। অসাধারণ লেখা। এসব দেখে, পড়ে, জেনে শুধু কষ্টই লাগে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া করার কীই বা আছে আর।

স্বাধীন [অতিথি] এর ছবি

শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই

মানুষ সব সময়ই ঘুরে দাড়িয়েছে যখন প্রয়োজন হয়েছে, ইতিহাস তাই বলে। শুধু আমরা সঠিক সময়টা জানি না।

আজ যে আমেরিকা এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জয়জয়কার দেখি তার সবই দাড়িয়ে আছে উপমহাদেশ, আফ্রিকা মহাদেশ, রেড ইন্ডিয়ান, অষ্ট্রেলিয়ান আদিবাসী এরকম আরো অজানা মানুষ এবং দেশ এর শোষন এর উপর। আগে সরাসরি উপনিবেশ এর মাধ্যমে শোষন করতো, আর এখন করে বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আই এম এফ এর ঋন এর বোঝা চাপিয়ে। আবার এরাই আমাদের দান করে দানবীর দেশ হিসেবে থাকছে। এদেরই ছোট সংস্করন দেখি তথাকথিত দূর্নীতিবাজদের মাঝে। তারা দূর্নীতির টাকা দিয়ে হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ বানিয়ে সমাজসেবক হয়ে যায়। ভোটে জিতে আবার মহাআনন্দে দূর্নীতি করে।

সোমালিয়ার জেলেরা আজ কিভাবে জলদস্যু তা এখানে ব লেছি। আজ যাদের জংগি বলি তারা কি শুধু ধর্মের কারনেই আজ জংগি? নাকি দারিদ্রতা এবং রাষ্ট্রের বিমাতাসুলভ আচরনের কারনে আজ তাদের কেউ ব্যবহার করছে? গনতন্ত্র বলেন আর সমাজতন্ত্র বলেন সবাই নিজ নিজ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টাই করে শেষে।

আমি মনে করি যেটা দরকার তা হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আর তার জন্য দরকার যোগ্য নেতৃত্ব। যে হ বে মুক্ত চিন্তার আধিকারী, যে হবে গণমানুষের, যার চিন্তা হবে সুদূর প্রসারী। এ রকম মানুষ কি কেবল কল্পনায় সম্ভব? না শুধু ধর্ম গ্রন্থে?

লেখা নিয়ে বলার কিছু নেই। অসাধারণ বিশ্লেষণ। প্রিয়তে রাখতে পারছি না অথিতি বলে। যেদিন নিক পাবো সেদিনই প্রিয়তে রেখে দিব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সহজলভ্য কোন উত্তর নেই । দৃশ্যমান ভবিষ্যতে ব্যক্তিমানুষ ও রাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক অবস্থানের নাটকীয় পরিবর্তনের কোন ইংগিত ও নেই । কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ এমন এক সম্ভাবনাময় প্রানী যার ভূমিকা নিয়ে শেষকথা বলার সুযোগ নেই ।

সহজলভ্য না হোক, করোনাপরবর্তী বিশ্বে নতুন উত্তর (নিদেনপক্ষে নতুন প্রশ্নমালা) মিলবে কি? ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।