কলম চলবে, সে কলমে কালির বদলে রক্ত ভরে হলেও

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: সোম, ৩০/০৩/২০১৫ - ২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অভিজিৎ হত্যার এক মাসের মাথায় ঢাকার রাস্তায় লেখালেখির কারণে আবারো খুন হলেন একজন অনলাইন লেখক। নিহত মোঃ ওয়াশিকুর রহমান বাবু সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসবুকে লেখালেখি করতেন। তিনি সামহয়ারইন ব্লগেও একসময় লিখতেন। হত্যার ধরণ ও কৌশল অভিজিৎ এবং রাজীব হত্যার মতোই। আগে থেকে গতিবিধি নজরে রেখে চাপাতি বা এধরণের ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা। অভিজিৎ হত্যামামলার কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। রাজীব হত্যার চার্জশীট মাত্র কিছুদিন আগে দেয়া হয়েছে। সেই চার্জশিট কবে রায়ের রূপান্তরিত হবে কেউ জানে না। এর মধ্যে খুনিরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা এখন আর রাতের আঁধারের জন্য অপেক্ষা করে না, দিনে দুপুরে জনবহুল এলাকায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার সাহস ওরা পেয়ে গেছে। তিনজন খুনির দুইজন ধরা পড়েছে। দেখা যাক তাদের বিচার কয়দিনে হয়। এবং সেই কয়দিনে লেখালেখির অপরাধে আরো কতোজন চাপাতির নিচে পড়ে।

মোঃ ওয়াশিকুর রহমান বা তার লেখার সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। ওয়াশিকুর (অনলাইন নিক কুচ্ছিত হাঁসের ছানা) কী বিষয় নিয়ে লিখতেন সেটাও আমার অজানা ছিলো কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত। ফেইসবুক ঘেঁটে দেখলাম তিনি নাস্তিক ছিলেন। ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মতামত প্রকাশ করতেন রাখঢাক না করে। বাংলাদেশে চাপাতির কোপের নিচে পড়ার জন্য আর অতিরিক্ত কিছুর প্রয়োজন নেই। অবস্থা এরকম দাঁড়িয়েছে যে কোনপ্রকার খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেয়া যেত ওয়াশিকুর রহমান কেন ও কীভাবে খুন হলেন।

সচলে আমার লেখা এই পোস্টের আগের পোস্টটাও ব্লগার হত্যা নিয়ে ছিলো। পরের পোস্টটা লেখার আগে আর আর কাউকে কি চাপাতির নিচে ঘাড়গর্দান পাততে হবে? উত্তরটা কঠিন। লেখালেখির জায়গাটা বাংলাদেশে অনেক সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। মঢ়ার ও খাড়ার ঘা হিসেবে বাংলাদেশে যেমন ইচ্ছে তেমন লেখালেখির অধিকার নিয়ে কথা বলার লোক বিরল। অভিজিৎ বা রাজীব হত্যার পরও সুশীল সমাজ, এমনকি যারা শোকসভায় হাজিরা দিচ্ছেন তারাও অভিজিৎ বা রাজীবের যেমন খুশি তেমন লেখার অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান না। ইনিয়ে বিনিয়ে ফেইসবুক, টকশোতে বলার চেষ্টা করে খুনির বিচার চাই, কিন্তু ওদের এইসব লেখার দরকার নাই। শোকসভার চাইতে ডিফেন্ডিং অফেন্সটাই এখন সবচাইতে বড় দরকার।

ওয়াশিকুর রহমান বাবুও এই সঙ্কুচিত লেখালেখির পরিবেশ নিয়ে সচেতন ছিলেন। তাঁর ফেইসবুকে একটি নোট পেলাম এই বিষয়ে। পাঠকের জন্য নোটটি এখানে তুলে রাখলাম।

না, আর লিখবোনা যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদ,দেশ, রাজনীতি নিয়ে। এমনিতেও লিখলে কিছুই হয়না শুধু মনের ঝালটা মিটাই। কিন্তু তাতেও নাকি অনুভূতি আহত হয়, দেশের 'শান্তি' বিনষ্ট হয়, উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাই এমন কিছু নিয়ে লিখতে হবে যাতে কারোই সমস্যা না হয়।

আচ্ছা গাছ-পালা নিয়ে লেখা যাক। আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় গাছের পরিমান অনেক কম। বিভিন্ন কারনে নিয়মিত বৃক্ষনিধন তো হচ্ছেই। গত বছর হেফাজৎ-শিবির আন্দোলনের নামে প্রচুর গাছ কেটেছিলো। সম্ভবত মরুভূমি তাদের পছন্দ বলেই গাছের প্রতি ক্ষোভ। তার উপর রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে সুন্দরবনের ঝুঁকি...

... একি, এসব কী লিখছি! না না এ লেখা চলবে না। শান্তি বিনষ্ট হবে, উন্নয়ন ব্যাহত হবে। অন্য কিছু নিয়ে লিখতে হবে...

...হুম শিক্ষা নিয়ে লেখা যায়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। প্রতিবছর পাশের হার বাড়ছে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার কী অবস্থা! ব্যাপক ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। যেনতেন ভাবে পাশ করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মেধা মূল্যায়নের বালাই নেই। দেশে ত্রি স্তরের শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রচলিত...

...দূর, এ নিয়েও লেখা ঠিক হবে না। শতভাগ শিক্ষিত করার মহাপরিকল্পনা যদি ভেস্তে যায়! তার চেয়ে...

...বরং ভ্রমন কাহিনী লিখি। কয়েকবছর আগে সীতাকুন্ডু গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়গুলো দেখা যায়। দেশের আদিবাসীদের উল্লেখযোগ্য অংশই সেখানে বাস করে। যদিও সেটেলার আর সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে তারা বিপর্যস্ত।এছাড়াও অনেক আগে কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সময় বিশাল এলাকা তলিয়ে গিয়েছিলো...

...সর্বনাশ, এসব লিখলে নির্ঘাত রাষ্ট্রদোহী হয়ে যাবো! নিরাপদ কিছু ভাবতে হবে...

...পেয়েছি চলচ্চিত্র। আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই বেহাল। যদিও গুটিকয় মানুষ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তারেক মাসুদ। দুর্ভাগ্য বসত তাঁকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। দেশের একটা শ্রেণী তাঁকে পছন্দ করে না। কারন তার চলচ্চিত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি, জঙ্গিবাদ স্থান পেয়েছিলো। তাঁর পরিচালিত মাটির ময়না 'কান চলচ্চিত্র উৎসবে' পুরস্কৃত হলেও তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার প্রথমে মুক্তি দিতে চায়নি ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে। পরে...

...অসম্ভব! আমার ঘাড়ে ক'টা মাথা যে ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে লিখবো? বরং...

...প্রেম, হ্যাঁ প্রেম-ভালোবাসা সবচেয়ে নিরাপদ বিষয়। কে না আছে জীবনে একবার হলেও প্রেম করে! অনেক ছেলে আছে যারা একের পর এক প্রেম করে। কিন্তু প্রতিবারই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পরই সম্পর্ক ভেঙে দেয়। অনেকে আবার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েদেরই দোষারোপ করা হয়। ওই ছেলেগুলো ঠিকই বিয়ের ক্ষেত্রে অক্ষতযোনির মেয়ে খুঁজে। কিন্তু ওই মেয়েরা পরবর্তীতে খুব কমই স্বাভাবিক জীবন যাপন...

...নাহ; নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা এসব নিয়ে টু শব্দও করা যাবে না। সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে, ছেলে-মেয়েরা সব উচ্ছন্নে যাবে। সমাজ ঠিক থাক আমি...

...নিজেকে নিয়েই কিছু লেখা যাক। আমার জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য সুবিধাবাদিতা, দোদুল্যমানতা, স্বার্থপরতা সবই আমার মধ্যে আছে। তবু ভালো নিম্নবিত্ত বা কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীতে জন্মাইনি। কৃষকরা পায়না ফসলের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিকরা পায় না ন্যায্য মজুরী। সবচেয়ে বৃহত শিল্প খাত গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাও নেই। কখনো ভবন ধ্বস, কখনো আগুন লেগে তারা গণহারে মারা যায়। তারপর লোক দেখানো উদ্ধার তৎপরতা, নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি, ক্ষতিপূরনের ভুয়া আশ্বাস, বিচারের নামে অভিযুক্তকে আড়াল করা এগুলো...

...উফ, আমার দ্বারা আসলেই লেখা সম্ভব না। কী সুন্দর করে তরতর করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমি কিনা বাগড়া দিতে বসেছি! এসব তো লেখে ষড়যন্ত্রকারীরা যারা দেশের শিল্প খাত ধ্বংস করতে চায়, কৃষি উন্নয়ন নশ্চ্যাৎ করতে চায়। বাস্তবতা ছেড়ে নাহয়...

...গল্প লিখি। এক যে ছিলো রাজা। এখন তো আর রাজার যুগ নেই। সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজিত ও নির্মম ভাবে নিহত হয়েছিলেন। অবশ্য মীরজাফর তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করেছিলো অচিরেই। কিন্তু মীরজাফরের চেয়ে শতগুন ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধীরা অনেক বছর এ দেশে শান্তিতে বসবাস করেছে। ক্ষমতার স্বাদও নিয়েছে। বর্তমানে যদিও তাদের বিচার চলছে কিন্তু ধীর গতির ট্রাইব্যুনাল, যে কোন দিন রায়, সরকারের সাথে আঁতাতের অভিযোগ, শাহবাগ আন্দোলন...

...মাথা খারাপ! এসব নিয়ে লিখলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত হবে। স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকারের দোসর তিলক পড়বে!

তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো?

হ্যালো...

আপডেট

ধৃত দুই খুনিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা তথ্য নিয়ে বিডিনিউজ জানাচ্ছে,

‘ব্লগ কি বুঝি না, আর তার লেখাও আমরা দেখিনি। হুজুরের পরামর্শ, সে ইসলামবিরোধী। তাকে হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব। আর সেই ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছি’।

হত্যার পরিকল্পনা রাজীবকে খুনের পরিকল্পনার মতোই। বিডিনিউজ জানাচ্ছে,

রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে আটককৃত জিকরুল্লাহ, আরিফ ও পালিয়ে যাওয়া তাহের তিনজন মিলে ওয়াশিকুরের বাসা রেকি করেন। সোমবার সকালে তিনি বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র তাকে হত্যা করা হবে বলে পরিকল্পনা করেন।

সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা সোমবার সকালে সেখানে অবস্থান গ্রহণ করে। ওয়াশিকুর রহমান বাসা থেকে বের হয়ে সামনের দিকে এগোনো মাত্রই জিকরুল্লাহ ও তাহের চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।


মন্তব্য

মাসুদ সজীব এর ছবি

মানুষটার সাথে আমারও পরিচয় ছিলো না কিন্তু সকাল থেকে তার ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে তার লেখাগুলো পড়ে চমকে উঠেছি বারে বারে। অসম্ভব মুক্তমনা ছিলেন, মৌলবাদ-বিম্পি-জামাত-রাজাকার-অন্ধ আওয়ামিলীগ সবার সমালোচনা করেছেন যুক্তি দিয়ে। মনটা বিষন্নতার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে দিনে দিনে। যে যাই বলুক এই দেশ আর মুক্তমনা মানুষদের জন্যে নিরাপদ নয়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

হাসিব এর ছবি

সবার সমালোচনা করা যায়। শুধু ধর্মের সমালোচনা এই দেশে মানা। বাবুর লাশের ছবি দেখলাম। অবর্ণনীয় ক্রোধে খুনিরা ওর মুখ কুপিয়েছে। শফি হুজুরের প্রোডাক্ট সব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওয়াশিকুর রহমান বাবুর ফেসবুক পেইজটা দেখছিলাম। তাঁরই পোস্টের নিচে একেকজন অভিনন্দন জানাচ্ছেন অন্যদের, হত্যাকাণ্ড সুসম্পন্ন হওয়ার জন্য! মানুষ কতটা নৃশংস আর মানুষ কতটা অসহায়-বারেবারে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

যারা ব্লগে লিখছে, ফেসবুকে নিজের দেয়ালে লিখছে তাদেরকে চিনে নিয়ে তারপর চাপাতির কোপ পড়ে। দিনে দিনে আরো দেখব। পাশের বাড়ির কুদ্দুসের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ? তাহলে আর কি, কোপা ধরে। কারন? সে ব্লগে নবীজীকে নিয়ে কটাক্ষ করছে। বা ইসলাম নিয়ে কটূ কথা বলছে। আর কিছু তো বোঝার দরকার নাই। কিছুদিন পরে আর লেখার দরকার হবে না, কিছু না লিখেই লেখার দায় ঘাড়ে নিয়ে কোপ খেতে হবে। যে কোন উছিলায় ধর্মের শামিয়ায়ানার নীচে এনে কাউকে কোপালে সেটা জায়েজ। লেখালেখির জায়গাটা যে কতটা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে সেটা ইনস্যুরেন্সের দালাল না বুঝুক, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার না জানুক, শেয়ার কারবারী পাত্তা না দিক, কিন্তু যারা লেখালেখি করে, যাদের লেখা লোকে পড়ে, বাহবা দেয়, যাদের দেশের জন্য মন পোড়ে, যারা দেশ পথ হারাবে না বলে গলা সপ্তমে তোলে, তারা কেন এই অন্ধকার সময়ে গর্তে ঢুকে থাকে? কোপ খেয়ে মরার এই অমানিশাটাও একটা ফিল্টার- বুধিবেশ্যাদের চিনে নেবার জন্য !

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ওঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো পড়ে বিমোহিত হলাম। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আপনাকে ধন্যবাদ, বিশদে জানাবার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত কেউ কেউ এই হত্যার সপক্ষে যুক্তি দেখান

হাসিব এর ছবি

এটা কোনভাবেই আশ্চর্যজনক কিছু নয়,

ইয়ামেন এর ছবি

রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান। যতবার কেউ খুন হয় তারপর আমি সব গণমাধ্যমে মানুষের কমেন্ট পড়ি, আর হতাশ হই। ওয়াশিকুর হত্যার পরের কমেন্ট পড়ে আমার উপলব্ধি হল যে কলম চলে লাভটা কি হচ্ছে, যখন দেশের বেশীর ভাগ মানুষ নষ্টকে নিয়েই বিমোহিত?
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই দেশ, মৌলবাদ এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা বা লেখালেখি কমিয়ে দেব ভাবছি। শেষপর্যন্ত পারব না হয়ত জানি, কারন দেশের দুরবস্থা দেখলে কলম না চালিয়ে পারি না। কিন্তু এবারের মত হতাশ আগে হইনি। কি আছে এই দেশের ভবিষ্যতে জানি না।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

হাসিব এর ছবি

কলম যদি থেকে যেত তাহলে মানুষ এই পর্যন্ত আসতো না। কিপ ফাইটিং।

ইয়ামেন এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শ্রদ্ধা

[ মজলুম কমরেড রে দেইখা ডরাইলাম, সচলের নিচেও প্রথম আলো পাঠকগোষ্ঠি দেখতে হবে ভাবি নাই। বাই দ্য ওয়ে, কমরেডগিরি হালাল হইল কবে থিক্যা? ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসিব এর ছবি

কমরেডগিরি হালাল হইছে লাল মাওলানার সময় থিকা। উনি হলেও সেই লোক যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইন্ডিয়ান সরকারের কাছে জমিজিরাত চাহিয়া পত্র লিখিয়াছিলেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মজলুম আর কমরেডের যুগলবন্দী দেইখা আমারও ঠিক ঐ নামটাই মনে আসছিল

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসিব এর ছবি

মজার বিষয় হলো এই লাল মাওলানার ফলোয়ারেরা যেই সরকারের কাছে উনি জমিজিরাত চাহিয়া পত্র লিখিয়াছিলেন সেই সরকারের মুন্ডপাতে অগ্রগামী মুজাহিদ।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ, তার বিবর্তিত অনুসারীরাও চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ইয়ামেন এর ছবি

ঠিকই আছে, মজলুম ভাইজানের কমেন্ট পইড়া মনে হইতাসে উনি লাল মাওলানার মতই কনফিউজড একটা মানুষ।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

হাসিব এর ছবি

উনি আর কক্ষনো এখানে আসবেন না বলে গেছেন মন খারাপ

ইয়ামেন এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

আয়নামতি এর ছবি

শোকসভার চাইতে ডিফেন্ডিং অফেন্সটাই এখন সবচাইতে বড় দরকার।

এ দরকারে স্বশরীরে গলা তোলার মানুষ যতদিন যাবে তত কমে যাক এটাই মৌলোভীদের(৭০টা হুরীর লোভটা ছাড়তে পারবার মত বুকের পাটা তথাকথিত সাচ্চা ঈমানদারের আছে বলে মনে হয় না) বর্তমান প্রকল্প মনে হচ্ছে। খুনের মত জঘন্য অপারাধের শাস্তির নিশ্চয়তা দিতে যে রাষ্ট্র গড়িমসি করে তার কপালে আরো খারাবি আছে। আমাদের আর কী, কোপাকোপি চলুক। আমরা নিয়ম করে ফাঁসি চাই, ধিক্কার জানাই ইত্যাদি শব্দ লিখে যাবো। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্ধকারে মোমবাতি হাতে মৌন মিছিলের একটা সংখ্যা বাড়াবো হয়ত।

হাসিব এর ছবি

একটা হলো গড়িমসি। অনেক সময় এটা পুলিশবাহিনীর সাধারণ অদক্ষতার কারণে হতে পারে। আমি যেটা বিপদ দেখি সেটা হলো এরা কারা, কোত্থেকে তারা তামের মতাদর্শিক ফুয়েল পায় এইসব জেনেও তাদের জমি ঘুষ দিয়ে ঠান্ডা রাখা, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার কোন বিকল্প তৈরি না করা, রাষ্ট্রপ্রধানের একদম প্রচারবিহীন সহানুভুতি প্রদর্শন যাতে করে শান্ত পুকুরে ঢেউ খেলে। তাদের কনফ্রন্ট করতে কেউ রাজি তো নাই, তাদের সাথে ঝামেলাবিহীন সহাবস্থানের সবাই আগ্রহী।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খবরটা জানার পর থেকে খুব হতাশ লাগছে। একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ স্রেফ লেখালেখির জন্য এভাবে মারা যাবে ওই কুৎসিত শ্রেণির মানুষের হাতে! আর তার কোনো বিচার হবে না, কোনো কার্যকর প্রতিবাদ হবে না, লোকে সচেতন হবে না! এসব কেন! এই দেশ নিয়ে হতাশা কাটানো দিনদিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে।

হাসিব এর ছবি

লোকে সচেতন হবে না!

আমার তো মনে হয় লোকজন সচেতন হচ্ছে। তারা সচেতন হয়ে খেয়াল করে খুঁজে নিচ্ছে কে কোথায় কী "অনুভুতিতে দাগা" দিয়ে লিখলো। খুঁজে নিয়ে ঠিকই আছে এইরকম মন নিয়ে শান্তিতে পেট পুরে খেয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুম দিচ্ছে।

স্পর্শ এর ছবি

বস, শিরোনামটা ক্লিসে হয়ে গেছে... 'রক্ত ভরে' কথাটাও কেমন যেন corny


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হাসিব এর ছবি

এটা অফিসে ৫মিনিটের মধ্য বিভ্রান্ত মন নিয়ে লেখা। আমরা যারা ব্লগিংকে ধারণ করি এবং এর পেছনে হাজার হাজার ঘন্টা ব্যয় করি তাদের কাছে এই একজন ব্লগারের খুন কী রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে এটা বোধকরি আপনার ধারণার বাইরে। হেডলাইন ক্লিশে হতে পারে। লেখাও অসম্পুর্ন হতে পারে। সেইসময়টাতে এটাই আমার বেস্ট এফোর্টের রেজাল্ট।

যাই হোক, এইটাই বক্তব্য এই গোটা বিষয়ে আপনার?

স্পর্শ এর ছবি

একই অনুভূতি আমারো। ফিরে ফিরে একই ধরনের পোস্ট লিখতে হচ্ছে। তাই অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করছি।... এ ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ব্লগার কোপানোর ব্যাপারটাই তো ক্লিসে হয়ে যাচ্ছে দিন দিন...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্পর্শ এর ছবি

সরকার শাহবাগকে যেভাবে বাগে এনে ফেলেছিলো, হেফাজতের ব্যাপারে তেমন কৌশলি না হয়ে বরং তোয়াজ করছে। কুপাকুপি তো ক্লিসে হবেই। অল্প কটা নাস্তিক শেষ হবার পর, 'আওয়ামীলীগ মাত্রই কতল করা ওয়াজিব' ফতোয়া চলে আসবে। ইন ফ্যাক্ট এই খবরে তার স্পষ্ট ইংগিত আছে। কওমীলীগ সেজে তখন লাভ হবে না...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নতুন কিছুনা। বইমেলায় একটা বই কিনছিলাম "শরীয়তের দৃষ্টিতে নাস্তিক মুরতাদের শাস্তি" শিরোনামে। বইয়ের ভূমিকা আল্লামা শফী'র লেখা। পুরো বইটাতে শুধুমাত্র "কেন নাস্তিক কোপানো জায়েজ" এই কথার উত্তর বিভিন্ন রেফারেন্স টেনে গোল গোল করে বুঝিয়ে দেয়া আছে, রেফারেন্স ছহীহ। শফী সাহেবকে দোষ দেই না, এট লিস্ট হি ইজ নট আ হিপোক্রাট। তয়, আসে-পাশে মডারেট দেখলে মাঝে মধ্যে মনে হয় এই বইটা দিয়া ঘাড়ে দুই-চারটা কোপ দেই। বইটার বাঁধাই শক্তই আছে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

তাকে চিনতাম না, পড়িনি কখনো। আপনার লেখাতেই প্রথম পড়লাম। কিন্তু খবরটা পাওয়ার পরই মনে হলো আমিইতো, আমরাইতো- প্রতিদিন যারা একটু একটু করে খুন হচ্ছি। তিনি কী লিখতেন তা জানতে আগ্রহী হলেও, তৎপর হইনি কারণ নিজের ভেতরেই জানি যে, তিনি কী লিখতেন।

স্বয়ম

রানা মেহের এর ছবি

ক্লান্ত লাগে হতাশ লাগে।
কিন্তু জানি এই বাবুদের মতো আপনাদের মতো কটা লোক কলম চালায় বলে
এখনো বাংলাদেশ বাংলাদেশই আছে।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

এক লহমা এর ছবি

আপডেট-টা পরিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে মারণযন্ত্র কি মসৃণ দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমি ওয়াশিকুরের কোন লেখা পড়িনি। যারা কোপ দিয়েছে তারাও পড়েনি। তবু তারা হুজুরের নির্দেশে ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছে। কী চমৎকার!! আগে বছরে একজন কোপ খেত, এরপর মাসে একজন, তারপর কি সাপ্তাহিক?

কোন ঘটনা ছাড়া, দলবাজী ছাড়া শুধুমাত্র লেখালেখি পছন্দ না হওয়াতে যদি ঘাড়ের উপর চাপাতির কোপ দেয়াটা ঈমানী দায়িত্বের অংশ হয়ে যায় তখন এদেশে কোন প্রগতিশীল লেখকই নিরাপদ না। কেননা চাপাতিপ্রিয় ঈমানী দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা নিঃসন্দেহে লেখকদের চেয়ে বেশী। হুজুরদের পছন্দসই লেখালেখি করাও সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। সুতরাং সবাইকে কোন না কোন সময় চাপাতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হিমু এর ছবি

এপ্রিল ১৯, ২০১৪ সালের দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে শাহ আহমদ শফী কক্সবাজারে গিয়ে বলছেন, নাস্তিকদের কতল করা ওয়াজিব হয়ে গেছে [সূত্র]।

মার্চ ৩০, ২০১৫ তারিখে ওয়াশিকুর রহমানকে খুন করে ধরা পড়া দুই মাদ্রাসা ছাত্র বলছে, তারা হুজুরের নির্দেশে ঈমানি দায়িত্ব পালন করেছে। এই হুজুর কোন হুজুর? ওয়াশিকুর খুনের মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় এই নাম-না-জানা হুজুরের নাম কি আসবে?

হাসিব এর ছবি

মামলায় শফি বা অন্য কোন হুজুরের নাম নেই এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শফিনগরী কেউই নাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

যে দুজন ধরা পড়েছে তার একজন তো মনে হয় শফি হুজুরের মাদ্রাসার।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

guest_writer এর ছবি

তার পর ধরুন সত্যি সত্যি একদিন বিচার হয়ে গেল!

বিচারে এরকম দু চার জনের ফাঁসি হয়ে গেল!! তাতে লাভটা কি? মাথায় হুজুর পোরা দু চার জন নয়, দু চার হাজার ফাঁসিতে ঝুললেও সিস্টেম বদলাবেনা। এরকম হাজার হাজার তালেবে এলেম আছে, হুজুরের কথায় বিনা প্রশ্নে চাপাতি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

গোটা সিস্টেমটা কৈশিক জালিকা হয়ে ছড়িয়ে আছে সমাজে, রাষ্ট্রে। সেই কৈশিক জালিকা বেয়ে জমা হচ্ছে মৌলবাদী বোমা। মহাবিষ্ফোরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

-চন্দ্রনিবাস

দিগন্ত এর ছবি

সমস্যাটা কতটা গোড়ায় ঢুকে আছে সেটা এখনি বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু লেখকদের ওপর আক্রমণের হার বাড়ছে। গত বছর কয়েকের মধ্যে আসিফ, রাজীব, অভিজিৎদা আর ওয়াশিকুর - চারজনে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ওয়াশিকুরের নাম আমি আগে শুনিনি - অর্থাৎ আক্রমণকারীরা এখন তুলনামূলক অজনপ্রিয় লেখকদের আক্রমণ করতে পিছপা হচ্ছেনা। কলম চালানো দরকার। কিন্তু তার সাথে নিজেরাও সাবধানে থাকা দরকার। খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন ব্লগাররা পিরিওডিকালি টার্গেটেড হতে থাকবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নজমুল আলবাব এর ছবি

কেউ নিরাপদ নয়

robot  এর ছবি

উগ্র নাস্তিক, তারপর মৃদু নাস্তিক, তারপর অমুসলিম, তারপর লিবারেল মুসলিম, তারপর শিয়া, তারপর সুন্নী এ্যান্ড সো অন। মাওলানা শেখ হাসিনা আর আওয়ামী হেফাজত লীগকে এসব কে বোঝাবে। (আল্লাম খালেদা আর জামাতে ইসলামী বিএনপি শাখার কথা বাদই দিলাম) ওনারা আছেন পয়সা বানানো, গুম আর বালির ট্রাক নিয়া। ইরানের ইতিহাস এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে কেমনে কি?

নাশতারান এর ছবি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।