প্ররক্ষা বনাম প্রতিযোগিতা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ০৭/০৫/২০১০ - ৯:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.

"ভারতীয়" সিনেমাকে বাংলাদেশের বাজারে উন্মুক্ত করা নিয়ে সম্প্রতি একচোট কথাবার্তা হয়ে গেছে সব জায়গায়। অচ্ছ্যুৎ বলাই একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, সেখানে কিছু মত এসেছে, প্রথম আলোতে মশিউল আলম একটি আর্টিকেল লিখেছেন, কালের কণ্ঠে কলম ধরেছেন চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। তাঁদের বক্তব্যের সার কাছাকাছি, অনেকটা এমন ... এতদিন ধরে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের ও ভাষার সিনেমাকে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে না দিয়ে যে প্রতিযোগিতাহীন নিরাপদ বাজারের সুযোগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে, তা কোনো কাজে আসেনি। চলচ্চিত্র শিল্পের মান নেমে গেছে। অতএব এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে অন্যান্য দেশের সিনেমাকে বাংলাদেশে বড় পর্দায় দেখার সুযোগ করে দেয়া হোক।

পটভূমিটা আমরা স্পষ্টভাবে দেখলে মতবিনিময়ে সুবিধা হবে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। স্বাধীনতার পরও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে সদ্যস্বাধীন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের স্বার্থে। আমদানি নীতিতে লেখা বাক্যটি মশিউল আলম উদ্ধৃত করেছেন, ‘উপমহাদেশের ভাষায় প্রস্তুতকৃত কোনো ছায়াছবি (সাব-টাইটেলসহ বা সাব-টাইটেল ব্যতীত) আমদানি করা যাইবে না।’ আমরা এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে দেশে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে পারি না। কাণ্ডজ্ঞান যা বলে, এ নিষেধাজ্ঞা না থাকলে আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই আর পাকিস্তানে নির্মিত বাংলা, হিন্দু আর উর্দু চলচ্চিত্রই চলতো, ভাষার কারণে বাকিগুলো মার খেয়ে যেতো (দক্ষিণ ভারতের কিছু গরম সিনেমা হয়তো ব্যতিক্রম হতো)।

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আমদানি নীতি থেকে এই ধারাটি বিলোপের উদ্যোগ নিয়েছিলো। সিনেমাহল মালিকবৃন্দ তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পের যারা মা-বাপ, তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বিরত করেন, এবং নিষেধাজ্ঞাটি জারি থাকে।

দুই.

মশিউল আলম ও হুমায়ূন আহমেদের আর্টিকেল দু'টি থেকে আমরা যা পাই, তা হচ্ছেঃ

১. বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ৩৮ বছর ধরে যথেষ্ঠ প্ররক্ষা দেয়া হয়েছে।

২. কিন্তু এই নিশ্চ্যালেঞ্জ বাজারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিকশিত হয়নি।

৩. চলচ্চিত্রশিল্পের ক্ষয়ের কারণে এর একটি পক্ষ, অর্থাৎ সিনেমা হল মালিকদের জন্যে বাণিজ্যের সুযোগ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।

৪. এই সামগ্রিক ক্ষয়ের কারণ এই নিষেধাজ্ঞাজনিত প্ররক্ষা।

৫. দর্শকরা বড় পর্দায় ভালো ছবি দেখতে চায়।

৬. যখন এ নিষেধাজ্ঞা ছিলো না (১৯৬৫ সালের আগে), তখন দেশে যেসব ছবি নির্মিত হতো, সেগুলোর মান অনেক উন্নত ছিলো।

৭. চলচ্চিত্র শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশ, সিনেমা হল মালিকদের বাণিজ্যের সুযোগবৃদ্ধি এবং দর্শকদের ভালো সিনেমা দেখার সুযোগ সৃষ্টির জন্যে ঐ নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয়া উচিত।

তিন.

পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দু'টি চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র, যথাক্রমে বলিউড ও দক্ষিণ ভারত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বাজারকে বিরাট চ্যালেঞ্জ দিতে পারতো, এ কথা খুবই সত্য। তবে চ্যালেঞ্জ যে তারা একেবারেই দেয়নি, সেটাও বলা যায় না। ভারতীয় চলচ্চিত্র বিকশিত হয়েছে কয়েকটি পর্যায়ে, এবং প্রতিটি পর্যায়ে একটি মন্থর কিন্তু নিশ্চিত ভরবেগ নিয়ে তাদের শিল্প বিস্তৃতি লাভ করেছে। ভারতে সিনেমার দর্শকের সংখ্যা বিপুল, শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও। আমরা এক অর্থে ভারতীয় সিনেমার বাজারে ঢুকে বসেই আছি আশির দশকের শুরু থেকে, যখন ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া করে আমাদের মা-খালারা জিতেন্দ্র-শ্রীদেবী-অমিতাভশোভিত নানা সিনেমা দেখতেন। তফাত খুব সামান্য, বিনোদনের বিনিময়ে টাকাটা যাচ্ছে আমাদের ভিসিডি-ডিভিডিঅলাদের কাছে। আমাদের কারো কাছে কি কোনো পরিসংখ্যান আছে, দেশে এই ডিভিডির বাজার কতটা বড়? আমার মনে হয় না। কিন্তু এ সংখ্যাটি খুব একটা ছোট নয়। হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে বেরোনো কোনো তরুণী যখন তার বান্ধবীর সাথে অনর্গল হিন্দিতে কথা চালিয়ে যেতে পারে, তখন আরো একটি জিনিস বোঝা যায়, আমাদের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢোকার আগেই ভারতীয় সিনেমার প্রভাব ও প্রস্তুতি। পণ্য তার ক্রেতাকে সম্পূর্ণই বশে এনে রেখেছে, এখন ক্রেতা কেবল পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ থেকে পয়সা বার করে হাতবদল করাটা বাকি।

তাই যখন আমরা বলি, চলচ্চিত্রকে আমরা প্ররক্ষা দিয়ে এসেছি, কথাটা জেনেশুনে মিথ্যা বলা হয়। আমরা চলচ্চিত্রকে যথেষ্ঠ পরিমাণ প্ররক্ষা দিতে পারিনি। আমরা একটি মৌন প্রতিযোগিতার মুখে নিঃশব্দে হারতে ঠেলে পাঠিয়েছি আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে, বলা যায় আশির দশক থেকেই। আমাদের দেশে ভারতীয় সিনেমার দর্শকগোষ্ঠী নিরবে, অথচ সবার গোচরেই স্ফীত হয়ে হয়ে বিপুলায়তন হয়েছে, সিনেমাগামী দর্শকের সংখ্যা কমেছে, আমরা কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছি?

কল্পনা করুন, একজন যোদ্ধা সম্মুখ সমরে নেমেছে, তার গায়ে বর্ম, কিন্তু শরীরে যক্ষার জীবাণু, কাশতে কাশতে মুখে গু তুলে মরার দশা তার। আপনি এসে বলছেন, এতোদিন বর্ম পরে থেকেও তুই বিকশিত হতে পারলি না, খানকির পোলা, এখন বর্ম খোল, ন্যাংটা হয়ে যুদ্ধ কর, দেখি প্রতিযোগিতা বাড়লে তুই বিকশিত হতে পারিস কি না। ঠিক একই যুক্তি কি আমরা দিচ্ছি না?

চার

আমরা মশিউল আলম আর হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের আর্টিকেলে যে ফ্যালাসিগুলো এড়িয়ে যাচ্ছি, সেগুলো হচ্ছে কোরিলেশন আর কজালিটির ধাঁধাঁ। এ কথা খুব সত্য, যখন ভারতীয় চলচ্চিত্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রদর্শিত হতো, তখন পূর্ব পাকিস্তানেও মোটের ওপর ভালো সিনেমা বানানো হতো। কিন্তু তা কি কেবল প্রতিযোগিতার ফল? ঐ সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পে যে নবীন নির্মাতারা প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের সাথে বরং চলচ্চিত্রের মানকে আমরা সরাসরি কোরিলেট করতে পারি। ঐ মানুষগুলো যখন সরে গেছেন বা মরে গেছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মানকে নিজেদের সাথে কবরে নিয়ে গেছেন বললে কি খুব ভুল বলা হবে? আমরা দ্বিতীয় জহির রায়হান পাইনি সিনেমায়, পাইনি দ্বিতীয় আলমগীর কবিরকে, পাইনি দ্বিতীয় এহতেশামকে, পাইনি দ্বিতীয় খান আতাউর রহমানকে। একটি প্রজন্ম আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে নিজের হাতে জন্ম দিয়েছে, তারা হারিয়ে যাবার পর তাদের স্থান নেয়ার মতো কেউ আসেনি।

এর সাথে আরো যোগ করুন ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রভাব। আমি হিন্দি ভাষাটি মুখে আর কানে প্রায় ইংরেজির মতোই দক্ষতা নিয়ে জানি, কেবল টিভি দেখে। আমার মতো বৃদ্ধ দামড়ার কথা বাদ দিলাম, যে শিশুটি এখন দিনে চার থেকে আট ঘন্টা টিভিতে হিন্দি ভাষায় "এক্সপোজড", তার কাছে কিন্তু হিন্দিভাষী সিনেমা অপরিচিত কিছু নয়। বরং চলমান বাংলা সিনেমায় নায়িকার আবেগ বা ভিলেনের আক্রোশ তার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়, হিন্দি সিনেমায় নায়কের কোলে নিশ্চিন্ত নায়িকার সঙ্গীত পরিবেশনকে সে বেশি স্বাভাবিক মনে করে, কারণ সে ক্রমাগত এ দেখেই বড় হচ্ছে। আমরা এর প্রতিফলন দেখি আমাদের প্রতিদিনের জীবন আর উদযাপনে। কোনো বড় দাওয়াতে গেলে দেখা যায় সাম্প্রতিক হিন্দি সিনেমা বা সিরিয়ালে দেখানো কোনো একটি ধাঁচের জামা একাধিক তরুণীর (মাঝে মাঝে তার প্রৌঢ়া খালা) গায়ে, বিয়ের অনুষ্ঠানের আচার ক্রমশ হিন্দি সিরিয়ালে দেখানো বিয়ের অনুষ্ঠানের দুর্বল অনুকরণ, ঘনিষ্ঠ ফোনালাপে হিন্দি সংলাপ। গত পনেরো বছর ধরেই মধ্যবিত্তের বিনোদনে যোগ হয়েছে মূলত ভারতীয় টিভি চ্যানেলে উপস্থাপিত অনুষ্ঠান। আমরা নির্বিচারে গলাধকরণ করেছি যে যার রুচিমতো। কিন্তু তারপরও আমরা চোখ বুঁজে বলে যাচ্ছি, আমরা চলচ্চিত্রশিল্পকে প্ররক্ষা দিয়েছি। এটা ইস্পাতের স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সিল্কের লুঙ্গি উল্টিয়ে পাছা বার করে দাঁড়িয়ে থেকে প্ররক্ষা প্ররক্ষা বলে চেঁচানোর সমতুল্য।

এবার আসুন, তাকাই আরেকদিকে। চলচ্চিত্রশিল্পে যে ক্ষয় শুরু হয়েছে, তাকে রোধ করতে কর্তৃপক্ষ কী করেছে? কয়টা "অশ্লীল" ছবি দেখানোর জন্যে এর নির্মাতা, কুশলী আর হলমালিককে শাস্তি পেতে হয়েছে গত ৩৮ বছরে? যোগ্যকে শুধু পুরস্কৃত করলেই চলে না, দুষ্কৃতীকে শাস্তি দিতে হয়। আমরা কি সেটা নিশ্চিত করতে পেরেছি? আমার ধারণা উত্তরটা নেতিবাচক। তারপরও আমরা বলছি, চলচ্চিত্রশিল্পকে আমরা প্ররক্ষা দিয়েছি।

মশিউল আলমের আর্টিকেল থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে সারা দেশে ১৬০০ সিনেমা হল ছিলো, আজ আছে ৬০০। গুগলে গুতা মেরে দেখলাম, ওদিকে এক অন্ধ্র প্রদেশেই ২৭০০ মুভি থিয়েটার আছে। ৭৮ বছর বয়সী তেলুগু সিনেমা যে পরিপক্কতা অর্জন করতে পেরেছে, আমরা ৩৯ বছরে তার ভগ্নাংশও অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এর কারণ কি কেবল "প্রতিযোগিতা"র অভাব, নাকি যত্নের? ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে কী বিপুল অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়, আমরা কি জেনেও না জানার ভান করে বসে আছি? এই যে সিনেমার মান গ্যালো, মান গ্যালো বলে এত চেঁচামেচি চলছে, কেন এত জ্ঞানীগুণী লোকজন থাকতেও ভালো স্ক্রিপ্ট আসছে না সিনেমায়, আসছে না ভালো গান, ভালো নৃত্য পরিচালনা, ভালো শব্দকৌশল, ভালো ল্যাব, ভালো স্টুডিও? আমরাই কি বারবার ভারতে ছুটে যাই না কারিগরি কাজে সাহায্য নিতে? আমাদের এই অমনোযোগই কি আমাদের দেশে চলচ্চিত্রপ্রযুক্তির বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা নয়? তারপরও আমরা পত্রিকায় কানতে কানতে লিখি, আমরা আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে প্ররক্ষা দিয়ে আসছি।

পাঁচ

প্রতিযোগিতা হয় সমানে সমানে। অসমানে অসমানে যা হয়, তাকে বলা যেতে পারে ফিল্টারিং। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর আর্সেনালের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে, কিন্তু বার্সেলোনা আর রহমতগঞ্জের মধ্যে যে ম্যাচ, সেটা রহমতগঞ্জের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার একটা আনুষ্ঠানিক সুযোগ মাত্র। বড় গলা করে বলা যায়, হারজিত ব্যাপার না, প্রতিযোগিতাই বড় কথা, কিন্তু আসল কথা আমরা সবাই জানি, খেলতে নামতে হয় জেতার জন্যেই, হারার জন্যে না।

যারা বলিউডের সিনেমার সাথে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকারদের প্রতিযোগিতার কথা বলেন, তারা তাদের মতলব চেপে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো বাপের ব্যাটাই সিনেমা দিয়ে বলিউডের বিরাট, বিপুল সিনেমাযন্ত্রের মুখোমুখি হতে পারবে না। সেই সাধ্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নাই। কেন নাই, তা নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ এবং সঠিক কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হয়, আসুন নিই, কিন্তু "প্রতিযোগিতা"র মাধ্যমে তার মান বাড়ানোর কথা যদি বলেন, তাহলে একবার তাকান পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রশিল্প আর পাকিস্তানের চলচ্চিত্রশিল্পের দিকে। প্রবল বলিউডের সামনে তারা কুঁকড়ে গেছে। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের পরিণতি তারচেয়ে ভিন্ন হবে না।

বর্তমান পৃথিবীতে চলচ্চিত্রে যেসব যান্ত্রিক কৌশল এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ঔৎকর্ষ্য এসেছে, তার সাথে আমাদের দর্শক কিন্তু সমাক্ষ। আমাদের দর্শক সিনেমার সাম্প্রতিকতম কলাকৌশলের তারিখ করতে শিখে গেছে, যেসব কৌশল বলিউডি সিনেমায় এখন নিতান্ত সাধারণ উপকরণ, কিন্তু আমাদের সাধ্যের বাইরে। এ পরিস্থিতিতে আমরা "প্রতিযোগিতা"র নাম করে তাঁবুর দরজা খুলে দিচ্ছি, ঢুকতে দিচ্ছি সেই প্রবাদের উটকে, যে একসময় আমাদেরই তাঁবুর বাইরে বার করে দিয়ে গোটা তাঁবু দখল করবে।

৬০০ সিনেমা হল মালিকের সাথে ঠিক কয়টি পরিবার সংশ্লিষ্ট? ৬ হাজার? আর চলচ্চিত্রশিল্পে জড়িত কয়টি পরিবার?

হ্যাঁ, ভারতীয় তথা হিন্দি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে ঢুকলে সিনেমাহলগামী হবে বহু লোকে। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিকশিত হবে না। আজ যারা চলচ্চিত্রে কালো টাকা ঢালছে, তারা বরং নতুন সিনেমা হল খুলবে। আজ একজন জেমস হিন্দি সিনেমায় গান গাইতে পেরে নিজেকে কৃতার্থ ভাবছে, কাল হয়তো ওরকম আরো তিনজন জাতে উঠবে বলিউডি সিনেমায় কোনো টুকিটাকি রোল করতে পেরে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি ধারা শুকিয়ে না খেতে পেয়ে মৃত্যুবরণ করবে, আর অন্যটি হবে আমাদের চিবানোর জন্য হাড্ডির মতো, বছরে বা দু'বছরে শোরগোল করার সবেধন নীলমণি। বাকি দেশ গিলবে হিন্দি গাঁড় মারকে চলা নাহি যানা।

ছয়

এক লোক সিনেমা বানিয়েছে সম্প্রতি। তার নাম সম্ভবত আবদুল জলিল, সেটাকে ভদ্রোচিত এম এ জলিল বানিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কেউ নিশ্চিত হতে না পারে ঐ এম আর ঐ এ-র আড়ালে কোন সেই গূঢ় নাম লুকিয়ে আছে। মুরুক্ষু বলে মোহাম্মদ আবদুল জলিল ভেবে বসি। জলিল সাহেবের স্ক্রিন নাম কী, নিশ্চিত নই, কিন্তু ফেসবুকে তিনি অনন্ত নামে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী, নেমেছেন সিনেমা করতে। ছবির কাহিনী হাস্যকর, নায়কের ভূমিকায় তার নড়াচড়া আর সংলাপ ডেলিভারি আরো হাস্যকর, কিন্তু তারপরও বলি, ভাই, আপনি চালিয়ে যান। খোঁজ দ্য সার্চের পর আপনি পাইছি দ্য ফাউন্ড বানান। দেশে থাকলে সবান্ধব দেখতে যাবো আপনার সিনেমা। আপনার সিরিয়াস ডায়লগের উপর খ্যাক করে হেসে দেয়ার জন্যেই যাবো। আমি চাই, আপনার মতো আরো পুঁজিপতি সিনেমায় বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসুক। আমি নিশ্চিত, লাভের আশা দেখলে আপনারা নিজে নায়ক না হয়ে নায়কোচিত কোনো যুবককে ছেড়ে দিবেন নায়কের রোলখানা, স্ক্রিপ্ট লেখাবেন কোনো সত্যিকারের লেখককে দিয়ে, কোনো প্রতিভাবান নবীন পরিচালককে দেখা যাবে ক্যামেরার পাশে, কোনো ঝানু ক্যামেরাম্যান থাকবে ক্যামেরার পেছনে। ঢাকাতেই কোনো আধুনিক ল্যাবে প্রসেসড হয়ে বের হবে ঝকঝকে প্রিন্টে কোনো সিনেমা।

আর, নিজে না পারলে, এইরকম কিছু লোকের জন্যে খোঁজ দ্য সার্চ চালান।


সংযোজন
তিনজন চলচ্চিত্র নির্মাতা পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন এ ব্যাপারে। হলমালিক সমিতিও বক্তব্য দিয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বক্তব্য দিয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বক্তব্যের প্রতিবাদে। সাংবাদিক আনিসুল হক এই উদ্যোগের প্রতিবাদে কিছু কথা বলেছেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত একটি সিনারিওসহ লিখেছেন এর বিরুদ্ধে। ক্যাথরিন মাসুদ তাঁর একটি বক্তৃতায় কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।


মন্তব্য

লীন এর ছবি

একটা কথাই কই, এই লেখাটা পত্রিকায় ছাপানো দরকার।
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

কৌতুহলী এর ছবি

ছোট্ট দুটি পর্যবেক্ষণ:

যখন আপনি বলেন যে বাংলা সিনেমাকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেওয়া হয়নি আর উদাহরণ টানেন হিন্দী ডিভিডির, সেই তুলনাটা কি পুরোপুরি ঠিক হয়? সবদেশেই চলচ্চিত্রমহল, সিনেমাহলে যাওয়াটাকে একটা "স্পেশাল" ব্যাপার করে তৈরী করেছে, সেটার সাথে ড্রয়িংরুমের ডিভিডির অনেক ফারাক। বাংলা সিনেমা সেই ব্যাপারটা তৈরী করতে পারেনি বলেই মনে হয়।

আবার আপনি যখন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা, বলিউডেস সামনে ধুঁকছে, তখনও ধন্দে পড়ে যাই। আজ থেকে ৫/৬ বছর আগে সানন্দা আর আনন্দলোক হাতের কাছে পাওয়ায় নিয়মিতই পড়তাম, তখন পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা (টলিউড বলে বোধহয়)বেশ একটা জাগরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল বলেই মনে হয়েছিল। তাদের বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য নায়ক নায়িকা তৈরী হয়ে গিয়েছিল, আর ঝাঁ চকচকে কিছু ব্যাবসাসফল বাণিজ্যিক ছবিরও একটা ধারা দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। এটার সাথে আপনার পর্যবেক্ষণ মিললনা। অবশ্য গত ৫ বছরের কাহিনী জানি না।

হিমু এর ছবি

বাংলা সিনেমা লোকে হলে গিয়েই দেখতো এক সময়। ইন ফ্যাক্ট, এখনও দেখে। হিন্দি সিনেমা এলেও হলে গিয়েই দেখবে। হিন্দি ডিভিডি আমাদের মধ্যবিত্তকে একটা বিকল্প দিয়েছে, যে বিকল্প হলে মেলে না, মেলে ড্রয়িংরুমের টিভিতে। আপনি আমার স্টেটমেন্ট দ্বিমত পোষণ করলে প্রথমে ভাবুন, আগে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো কারা? আর এখন তারা কোথায় কী দ্যাখে। তারপর দেখুন উত্তর মেলে কি না। ভাবুন, দেশে শেষ কয়বার সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন (বুয়েট অডিটোরিয়ামের কথা বাদ) আর ঘরে কতবার বসে ডিভিডিতে নন-ঢাকাই সিনেমা দেখেছেন। সিনেমায় যাওয়া যে একটা স্পেশাল ব্যাপার, সেটা অস্বীকার করছি না, এই স্পেশাল আকর্ষণ ধরে রাখতে বাংলা সিনেমা ব্যর্থ হয়েছে, সেটাও অস্বীকার করছি না, শুধু বলতে চাইছি, তার কারণ প্রতিযোগিতার অভাব নয়, অন্য কিছু। আর সেই প্রতিযোগিতাও হতে হবে দেশী সিনেমার সাথে দেশী সিনেমার, দুবলা দেশী সিনেমার সাথে প্রবল হিন্দি সিনেমার নয়।

টলিউড হচ্ছে তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি, টালিগঞ্জেরটা হচ্ছে টালিউড। সানন্দা বা আনন্দলোকের মতো কিছু মসৃণ ম্যাগাজিন বাংলাদেশেও বের হয়, এবং সেগুলো পড়লেও মনে হতে পারে আমাদের ঢাকাই ছবি এক প্রচণ্ড ইরেকশন নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। বাস্তবতা ম্যাগাজিনের চেয়ে ভিন্ন। তবে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের হালহকিকত সম্পর্কে আমার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান নেই, হতে পারে আমার কথা ভুল। তবে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অবস্থা সম্পর্কে পরোক্ষ জ্ঞান পেয়েছি আমার পাকি ফ্ল্যাটমেট ও তার দোস্তোদের কাছ থেকে। এরা হিন্দি গান শোনে, হিন্দি গান গায়, হিন্দি সিনেমা দেখে, হিন্দি মুভিজ নিয়ে আলাপ করে। যেহেতু তাদের মধ্যে একজন সিন্ধি, একজন বালুচ পাঠান, দুইজন পাঞ্জাবি আর একজন পেশোয়ারি পাঠান, আমি মনে করি গোটা পাকিস্তানের একটা চিত্রই আমি তাদের কাছ থেকে পেয়েছি।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

দ্রোহী এর ছবি

ঠিকাছে..

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লেখাটার প্রতি লাইনের সাথে সহমত। কোলকাতা ও পাকিস্তানের উদাহরণদুটোর পর আর কোনো দ্বিধা-দ্বিমতের অবকাশ নেই একেবারেই।

বাকি দেশ গিলবে হিন্দি গাঁড় মারকে চলা নাহি যানা।

আমার কাছে হিন্দি একেবারেই দুর্বোধ্য। বাক্যটার বাংলা তর্জমা দেবেন অধমের সুবিধার্থে? মন খারাপ

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

এটা বাদ পড়ে গেসিল।সত্যি সত্যি না বুঝে থাকলে... ভদ্রভাষায় বলি "বিমলাইজ (bimolize) করে চলে যাস নে"

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ লিখেছেন:

বাকি দেশ গিলবে হিন্দি গাঁড় মারকে চলা নাহি যানা।

আমার কাছে হিন্দি একেবারেই দুর্বোধ্য। বাক্যটার বাংলা তর্জমা দেবেন অধমের সুবিধার্থে? মন খারাপ

লন! ঠেলা সামলান! auto

অতিথি লেখক এর ছবি

মশিউল আলম ও হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলি আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হয়েছে যেভাবে সারাদেশে সিনেমাহলগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার কালচার উঠে যাবেই দেশ হতে সিনেমা হল মালিকদের কথা বাদ দিলাম দেশের সিনেমা শিল্পের বিকাশের স্বার্থে সিনেমা হলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দরকার, মনুপুরার মতো দু একটা সিনেমার কথা বাদ দিলেই বেশির ভাগ ছবিই ডিপজল, মিজু আহমেদের খিস্তি খেঁউড় এ ভরা ছবি এগুলা দেখতে পাবলিক নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে হলে যায় না, কাজেই দেশে যদি হিন্দি ছবি আসে তাহলে হলগুলি বন্ধ হয়ে যাবার হাত হতে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে আর মশিউল আলম কিন্তু হলগুলো মোট প্রদর্শন দিবসের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে পারবে এমন শর্তের প্রস্তাব করেছেন। আরেকটা ব্যাপার আপনি আপনার লেখায় বলেছেন যে ভারতের সিনেমার বাজেট বিশাল হয় এর সাথে আমাদের সিনেমা লড়াই করবে কি করে ভারতের সবগুলা ছবিই কিন্তু বিশাল বাজেটের হয় তা কিন্তু নয় সম্প্রতি আমার দেখা অসংখ্য ছবি যেমন আমির খানের তারে জমিন পার, থিরি ইডিয়ট , অথবা শ্যাম বেনেগালের ওয়েলকম টু সজ্জনপুর বা ওয়েল ডান আব্বার কথা বলা যায় যেগুলি লো বাজেটের ছবি কোন বড় তারকা ছাড়াই ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়েছে এধরনের ছবি আমাদের ফারুকী বা তারেক মাসুদের মতো প্রতিভাবান পরিচালকেরাও বানাচ্ছেন কাজেই ভারতের সিনেমা আমাদের দেশে আসলে হয়তো মুনমুন মূয়রির ভাত বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু সুস্থ ধারার সিনেমা শিল্পের খুব একটা ক্ষতি হবে না। আর সম্প্রতিক বাংলা সিনেমা সার্চ নিয়ে খুব উচছ্বসিত হলেন( এ ছবিটা কয়েকশ হিন্দি সিনেমার কপি পেস্ট ছাড়া কিছুই না) ব্যবসায়ীরা বাংলা সিনেমায় বিনিয়োগ নিয়ে আসছে দেখে আশ্বস্ত হলেন কিন্তু এফডিসি নিয়ে একটু খোঁজ খবর নিন সেখানে আজিজ ভাইয়ের মতো কালো টাকার মালিকেরা অলরেডি কব্জা করে রেখেছে বাংলা সিনেমার অধপতনের মূলে কিন্তু এই সব আদার ব্যাপারি এবং কাপর ব্যবসায়ীর হঠাৎ পরিচালক বনে যাওয়া।
হল মালিকেরা কেন হলে দর্শক টানতে হিন্দি ছবির আমদানির জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানাছে তা বুঝতে হলে সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমাগুলার দেখতে হবে নিচে একটা গানের ক্লিপ দিলাম এটা দেখুন আর চিন্তা করুন এ ছবির চেয়ে বাসায় বসে হিন্দি ছবি দেখা হাজারগুন ভালো নয় কি ?

রানা মেহের এর ছবি

প্রিয় অতিথি লেখক

আপনি ডিপজল আর মিজু আহমেদের ছবির কথাই বলছেন কেন?
দেশে কি আর কোন নায়ক প্রযোজক নায়িকা নেই?

আমি একটা ব্যাপার বুঝিনা।
সিনেমা সবসময় কেন 'মনপুরা' মান আর 'ডিপজল-মিজু' মানের মাঝে ঘোরাঘুরি করে? সব সিনেমা মানের সরম উতকর্ষে পৌছায় না।
আর না পৌঁছালেই তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবার দরকার নেই।
এই মন্তব্যে আপনি যে গানের ক্লিপ দিয়েছেন সেই সময়ের আর কোন গানের ক্লিপ নেই যেখানে শাবনুর, পূর্ণিমা, রিয়াজ শাকিল ভালো কোন গানে অভিনয় করেছেন?

অনেক ভালো গান থাকা স্বত্বেও এরকম একটা গান দিয়ে একটা দেশের সিনেমা শিল্পকে পরিচয় করিয়ে দেয়া খুব দুঃখজনক। এরকম প্রচুর গান পাওয়া যাবে বলিউড সিনেমায়। পার্থক্য এটুকুই সেখানে নৃত্যশিল্পীরা হয়তো আরেকটু ফিগার সচেতন হবেন। আমি যদি ভারতীয় সিনেমার বর্ণনা দেবার জন্য শুধু এরকম একটি গান দেই তাতে উড্দেশ্য সিদ্ধি হবে হয়তো, সততা হবেনা।

হলমালিক এবং তাদের পরিবারের প্রতি আপনার মতো আমাদর সবারই সহানুভুতি আছে। কিন্তু হলমালিকদের বাঁচানোর জন্য আমরা সিনেমাশিল্পের সাথে জড়িত বাকি সবাইকে পানিতে ফেলে দিবো? উপমাহাদেশের সিনেমা দেশের হলে ঢুকলে এর থেকে ভালো কিছু হবেনা।

আচ্ছা আপনার কেন মনে হচ্ছে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে উপমহাদেশের সিনেমা আনতে দেয়া?
আমার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই হলমালিকদের কী পরিমান কর পরিশোধ করতে হয়। সরকার সেই করের পরিমান কমাতে পারে। প্রেক্ষাগৃহ নির্মানে উতসাহ দিতে পারে। সবচেয়ে জরুরী, সিনেমার পাইরেসি বন্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে। এসবের কাছ দিয়ে না গিয়ে কেন ভাবছেন বাইরের সিনেমা আনাই একমাত্র সমাধান?

হ্যা। ভারতে কম বাজেটের ছবিও হিট করে। কিন্তু নিশ্চয়ই জানেন সেখানে সিনেমায় গড়পড়তা বাজেট অনেক বেশি। আপনার উল্লেখ করা বাকি সিনেমা দেখিনি। তবে থ্রি ইডিয়টস দেখেছি। এটা কম বাজেটের সিনেমা শুনে অবাকও হয়েছি। আমির খান আর কারিনা কাপুরের পারিশ্রমিকই তো অনেক উঁচু হবার কথা। অবাক তো।

সার্চ নিয়ে ক্ষোভ দেখালেন হিন্দি সিনেমার কপি পেস্টা বলে। ঠিকই বলেছেন। হিন্দি ভাষার যে সিনেমা দেখে আমরা উচ্ছসিত হই তার কতগুলো মৌলিক, বলতে পারবেন? বেশিরভাগই হলিউডের সিনেমার কপি পেস্ট এমনকি গানও। তো তাদের বেলা? অনেকে যুক্তি দেন, ভারত নকল করে। কিন্তু সুন্দর করে। খুব ভালো। বাংলাদেশের সার্চও নকল করুক। সুন্দর করে করলেই হলো। তাই না?

আজিজ ভাই কি সিনেমা পরিচালনা করছেন? শুনিনিতো। আপনি কি পরিচালনা আর প্রযোজনা এক করে ফেলছেন? আশ্বস্ত হোন। সিনেমা শিল্পে কালোটাকার কপিরাইট বাংলাদেশের একার না। বলিউড এ ব্যাপারে অনেক আগেই অনেক দুর এগিয়ে গেছে। দাউদ ইব্রাহিম আরো অনেকেই বলিউড সিনেমায় প্রচুর লগ্নি করেন জানা যায়। তাহলে শুধু আমাদের সিনেমাকেই দোষ দিচ্ছেন কেন?

বাংলা সিনেমাকে এগিয়ে যেতে দিন। ভারতীয় পন্যে এমনিতেই ছেয়ে গেছে বাংলাদেশের বাজার। একে রক্ষা করুন দয়া করে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হিমুর পোস্টে পুর্ণ একমত। এই মন্তব্যেও।

হুমায়ূন সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল আপনার মতো মেধাবী মানুষরাও কেন ধারাবাহিকভাবে ভালো ছবি বানাতে পারলোনা। আপনি চাইলে তো টাকার অভাব হতোনা। দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন/নিয়েছেন?

দুই/একটা ভালো ছবি বানিয়েছেন সেগুলোর জন্য প্রশংসা করি, কিন্তু বাকীগুলো তো বস্তাপঁচা।

কালের কন্ঠে তখন লগিন করা যাচ্ছিল না। তাই এখানে জিজ্ঞেস করলাম।

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

মজার বিষয় অ-বাঙালী প্রডিউসারের ইনভেস্টমেন্ট পশ্চিম-বাংলার সিনেমা ৫ বছরে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে।

দেখুন

http://www.rajshribengali.com/

http://www.youtube.com/watch?v=CxNxz3p9xyc
http://www.youtube.com/watch?v=IzC4KQo0bxg
http://www.youtube.com/watch?v=O3n3Mx9wgeI

এরকম প্রচুর প্রমান ইউটিউবে খুজঁলে পাবেন।

উইকি তে দেখুন ২০০৮ এ তাদের বেশ কিছু কমার্শিয়াল সাকসেস।
http://en.wikipedia.org/wiki/Cinema_of_West_Bengal#2008

দেখুন তদের ইনভেস্টমেন্ট
http://en.wikipedia.org/wiki/Cinema_of_West_Bengal#Budgets

দিগন্ত এর ছবি

পোস্টের মূল বক্তব্যের সাথে একমত। প্রতিযোগিতা হতে হলে সমানে সমানে হতে হয়, প্রতিযোগিতার যুক্তি কিছুতেই খাটে না।

তবে কোলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনো নড়চড় দেখি নি ছোটো থেকেই। তাই হিন্দি ফিল্মের সাথে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা কোলকাতায় ঠিক খাটে নি, পাকিস্তানে বরং ঠিক খাটে। টালিগঞ্জে বরাবরই দুই ধারার বাংলা ছবি ছিল - এক ধারায় আর্ট ফিল্ম তৈরী হয়েছে, এখন যেগুলো ভালই টাকা কামাচ্ছে - এদের প্রতিযোগী ইংরেজী ছবি। আরেক ধারায় কমার্শিয়াল ফিল্ম যারা হিন্দির কাছে কিছুদিন মার খেয়ে এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মূলত খরচা কমিয়ে ও ইনভেস্টমেন্ট বাড়িয়ে। তবে কোলকাতাভিত্তিক বাংলা ছবির সাথে হিন্দি ছবির প্রতিযোগিতা বরাবরই ছিল, তাই এর সাথে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রির তুলনা চলে না। তুলনাটা পাকিস্তানের ইন্ডাস্ট্রির সাথেই বেশী কার্যকর, কারণ ওদেশের সিনেমা একসময় প্রোটেকশন পেয়েছে।

তবে কিভাবে ব্যাপারটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব সেটা নিয়ে কিছু লেখা পড়লে ভাল হত। বাংলা সিনেমা ও সেই ইন্ডাস্ট্রীকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরী। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমি তার কোনো আশা দেখছি না। যদি প্রোটেকশন জারী রাখা হয়, তাহলেও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রী স্লো পয়জনে উঠে যাবে। বাংলাদেশে সিনেমা হল কমছে, কারণ হল-ওয়ালারা লাভ পাচ্ছে না। আর হল-ওয়ালারা লাভ না পেলে টাকা কিন্তু সিনেমা-ইন্ডাস্ট্রীও পাচ্ছে না - হলে সিনেমা চললে তবেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রীর টাকা আসে। প্রোটেকশন চললে বাকি হলগুলোও উঠে যাবে আস্তে আস্তে সাথে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রীও যাবে। শুধু কিছু টেলিফিল্ম থাকবে টেলিভিশনের কল্যাণে।

যাদের বাজার ধরে বাংলা সিনেমা বেচে থাকতে পারত তারা হল প্রবাসী বাঙালী। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত শুনি প্রবাসী বাঙালীরা হিন্দি-উর্দুতে রীতিমত স্বচ্ছন্দ হয়ে হিন্দি সিনেমাকে আপন করে নিয়েছেন।

বাংলাদেশে সিনেমাকে সুরক্ষা দেওয়া হয়নি ঠিক কথা, কিন্তু দেওয়া কি সম্ভব ছিল? ডিভিডি কপি করার টেকনলজি এতটাই সহজ যে সম্ভবও হয়ত ছিল না প্রোটেকশন দেওয়া। এবছরেও, পাকিস্তানে কেবল অপারেটররা কিছুদিনের জন্য আই-পি-এল বয়কট করে আবার তুলে নিল, দর্শকদের চাপে পড়ে।

ভারতে হিন্দির প্রতিযোগী দুরকম - ভোজপুরী আর তামিল সিনেমা। ভোজপুরী সিনেমা কথ্য ভাষায় তৈরী আর অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকজনের জন্য। তাছাড়া, হল-মালিককে ভোজপুরী সিনেমা হলে দেখানোর জন্য হিন্দি সিনেমার কয়েক ভগ্নাংশ টাকা দিতে হয়। অন্যদিকে তামিল (ও তেলুগু) সিনেমা হল সমান্তরাল ইন্ডাস্ট্রী। ইতিহাসে দক্ষিণ ভারত খুব কম সময়েই দিল্লী থেকে সরাসরি শাসিত হয়েছে, তাই এদের সংস্কৃতিতেও উত্তর ভারতের প্রভাব কম। এই কারণে হিন্দি সিনেমা এদের বাজার ধরতে পারে নি। তাছাড়া, এদের প্রবাসী-বাজারও যথেষ্ট শক্তিশালী।

সিনেমা-সহ সংস্কৃতিকে সফট পাওয়ার বলা হয়, এর সাথে লড়াই করে সংস্কৃতিকে বাঁচানো অন্যতম দুরূহ কাজ। চোর কিছু চুরি করে নিয়ে গেলে আপনি গৃহস্থকে তার ক্ষতিটা বোঝাতে পারবেন, কিন্তু শুধু টিভিতে চোখ রেখে নিজের সংস্কৃতির ঘরে যে চুরি হয়ে যায় তা বোঝার গণচেতনা আমাদের মত দেশে এখনও হয়নি। তাই, নিকট ভবিষ্যতেও আমি এই অবস্থার পরিবর্তনের কোনো আশা দেখি না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

Riasat Abir এর ছবি

Sorry, couldn't agree with you.
You showed your logic and they are reasonable also.
But there prevails opposite logic also!
যেমনঃ
যখন সফটওয়্যারের কথাই উঠল, যদি এমন হত বাংলাদেশি সফটওয়্যারকে প্রটেকশন দেওয়ার নামে আমেরিকান/ইন্ডিয়ান সফটওয়্যারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হত তাহলে কি হত ভেবে দেখুন।
খেলাধুলার কথাই ধরুন, সব ধরণের খেলাধুলায় প্রত্যেক দলেই বিদেশি প্লেয়ার কোটা থাকে। তার কারণ তাদের সাথে খেলে নিজের দেশের প্লেয়াররাও শিখতে পারে এবং তাদের সাথে লড়তে পারে। আইপিএল এর কথা ধরুন, আইপিএল এর কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কিন্তু ভারত। অর্থের দিক দিয়ে শুধু নয়; শেন ওয়ার্ণ, ম্যাথু হেডেন এদের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠে এসেছে অনেক তরুন ইন্ডিয়ান প্লেয়ার। শুধু আইপিএল এর কারণে ভারত ক্রিকেট দলের মান আরো উচুঁতে উঠতে পেরেছে।

সত্যি কথা বললে, আমি এ বছর কোন বাংলা সিনেমা দেখিনি ( জানিনা লেখক দেখেছেন কিনা ) কিন্তু একটা হিন্দী সিনেমা দেখেছি - 3 Idiots.

আমার মতে কোন কিছুকেই বেঁধে রাখা উচিৎ নয়। যদিও ইন্ডিয়ান কালচার আমাদের দেশে ভাইরাসের মতন জেঁকে বসছে ( মা আর বোনের হিন্দী সিরিয়াল দেখার জালায় আমি খেলাও দেখতে পারিনা টিভিতে সবসময় মন খারাপ ) আসলে এটা নির্ভর করে কে কিভাবে গ্রহণ করে, বিজ্ঞানের যেমন ভাল খারাপ ২টি দিক একসংগে বিদ্যমান, কিন্তু খারাপের জন্য ভাল দিকটি উপেক্ষা করে তাকে বর্জন করাও প্রতিরক্ষামুলক যুক্তিসংগত, কিন্তু বাস্তবসংগত নয়!

হিমু এর ছবি

সফটওয়্যার নিয়ে আপনার নিষেধাজ্ঞার যুক্তি বেশ প্লজিবল। আমরা বেশ সমস্যায় পড়তাম যদি সফটওয়্যারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। তবে সে নিষেধাজ্ঞা ৩৮ বছর ধরে চালু থাকলে, আমরা লেংচে চলার মতো একটা অপারেটিং সিস্টেম দাঁড় করাতে পারতাম না, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। আর বিনোদনের সাথে সফটওয়্যারকে যদি মিশিয়ে ফেলেন, তাহলে আসুন একটু কষ্ট করে ফার্মাসিউটিক্যালসের কথা ভাবি। এরশাদ বিদেশী ওষুধ আমদানির ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলো (জাফরউল্লাহ সাহেবকে ধন্যবাদ), আজ একটু দেখবেন, ঔষধ শিল্পের দাপটটা কেমন? দেশের চাহিদাই শুধু মেটাচ্ছে না তারা, বিদেশেও রপ্তানি করছে। অথবা তাকান তাঁতশিল্পের দিকে, সেখানে কেমন প্রটেকশন কাজ করে একটু দেখুন। কিংবা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির কথা ধরুন, অথবা কাঁচ, কিংবা ঢেউ টিন ...।

এবার আসুন, প্রটেকশন নেই এমন কিছু শিল্পের দিকে তাকাই। ৩৮ বছর পরও আমাদের দেশে কোনো গাড়ি নির্মাণ কারখানা গড়ে ওঠেনি, উত্তরা আর নিটল মটরস কেবল সংযোজন করে, একজন জাপানি আরেকজন ভারতীয় গাড়ি। আমরা মোটর সাইকেল পর্যন্ত বানাতে পারি না, এমনকি সংযোজন শিল্পও ধ্বংস হয়ে গেছে সংযোজিত মোটর সাইকেল আমদানির ওপর কর কমিয়ে দেয়ায় (আরিফ জেবতিককে জিজ্ঞেস করুন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত)। মোটর বাদ দিয়ে শুধু সাইকেলের কথা ধরেন? সেইটাও পারি না, বছরের পর বছর সীমান্ত পার হয়ে অবাধে চলে আসছে হিরো সাইকেল। আমাদের মধ্যে কিছু লোক মুদি ব্যবসাকে মহান ব্যবসা হিসেবে চালিয়ে আসছে, কেনো আর বেচো, উৎপাদন নাই, কারণ কলকারখানা নাই, এই কারণে আমরা লোকজনকে ধরে ধরে গরুছাগলের মতো মিডলইস্ট রপ্তানি করে দেই।

আপনি আইপিএলের যুক্তি দেয়ার আগে একটু চিন্তা করবেন তো। বিরাট একটা মার্কেট, তাতে সিংহভাগ পুঁজি খাটছে ভারতের, প্রোডাক্ট আর সার্ভিস ভারতের, লাভ তো ভারতের ঘরেই ঢুকবে। ঐখানে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে বাজার বিস্তৃতির জন্যে, তাদের সাথে লড়ে অন্যদের শেখার জন্যে না। ভারতের ক্রিকেটাররা নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটেই প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভেতর দিয়ে আসে, তাদের আমদানি করা বিদেশী খেলোয়াড়ের সাথে লড়াই করে শিখতে হয় না। আর বাংলাদেশে সিনেমার সাথে আইপিএলের তুলনা করে দেখুন, বিরাট মার্কেট, পুঁজি খাটছে বাংলাদেশের, কিন্তু প্রোডাক্ট ভারতের, যেটা বাংলাদেশী প্রোডাক্টকে সরাসরি প্রতিস্থাপিত করছে, ফলে সিনেমা হলের দেশী মালিক আর সিনেমার ভারতীয় মালিক লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশী সিনেমার স্টেকহোল্ডাররা।

আপনি যে রকম উদার ও উদাম হতে আগ্রহী, সেটা বাস্তবসঙ্গত মনে হবার কারণ হচ্ছে আপনার অসচেতনতা। আপনি কি একজন প্রকৌশলী? আসুন, দেশে প্রকৌশলীদের চাকরির বাজার থেকে প্ররক্ষা তুলে নেই। ভারতের রিজিওনাল এনজিনিয়ারিং কলেজ থেকে সদ্য পাশ করে আসা তরুণদের একটা সুযোগ দেই দেশের চাকরির বাজারে। তারপর আপনি যখন হাজারটা সিভি ফেলেও মনমতো বেতনে চাকরি পাবেন না, তখন আপনাকে বলি, আপনার এই হতাশা যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু বাস্তবসম্মত নয়। ব্যাপারটার ভারো খারাপ দুটি দিক একসঙ্গে বিদ্যমান ... (বাকিটা নিজের মন্তব্য থেকে পড়ে নিন)।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

Riasat Abir এর ছবি

হমম লেংচে চলার মতন অপারেটিং সিস্টেম ৩৮ বছরে খুব একটা খারাপ না!
কিন্তু ৩৮ বছরে তার চেয়ে অনেক উন্নত একটা অবসথায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
বিদেশি ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ৩৮ বছরে আরও কিছু বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি দাঁড়িয়ে যেত! (...)
চোরা পথে পণ্য আমদানি হলে সেটাও দমনের দায়িত্ব সরকারের, শুধু হিন্দী সিনেমা আটকালেই বাংলা সিনেমা প্রটেকশন পাবেনা, চোরা পথের চেয়েও ভয়ংকর ভাবে স্যাটেলাইট চ্যানেলে তার আগ্রাসন ঘটছে।
জনৈক অতিথির কমেন্টের সাথে তাই বলে ফেললাম স্যাটেলাইট/ডিশ ও সব বন্ধ করে দেওয়া হোক!
আইপিএল বলতে শুধু আইপিএল নয় গোটা ক্রীড়াবিশ্বেই এই নিয়ম, নিজেদের খেলার মান উন্নত করতেই বাইরের দেশের প্লেয়ারদের সাথে খেলার সুযোগ করে দেয়া (তাতে হয়ত নিজ দেশের কিছু কম প্রতিভাবান খেলার সুযোগ টা পেলনা, এতটুকু মেনে নিয়েই তা চলে) আর যাতে নিজেদের কথা ভেবেই কোটা সিস্টেমটা চালু থাকে যেন নিজেরাও মার না খেয়ে যাই বিশ্বভাবনা করতে যেয়ে।

ক্রীড়া বলুন, বিনোদন বলুন আর যাই বলুন সবি মূলধন উপার্জনের বানিজ্যিক ধারণা যেখানে মেধা দিয়েই তা অর্জিত হয়, প্রটেকশন দিয়ে নয়।

খুব একটা বেশি দিন হয়নি, ভারতের সিনেমা এখন বিশ্ব বাজারেও স্থান করে নিচ্ছে, তাদের সিনেমাতেও স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু যদি হলিউডি সিনেমার থেকে প্রটেকশন তারা নিত তাহলে এই অবসথায় আসতে আরও ৩৮ বছর লাগত..
যেমন আমরা ৩৮ বছর ধরে শাকিব খানকেই সব নায়িকার সাথে নাচতে দেখে যাব..
(খারাপ লাগলেও বলছি আমি বাংলা সিনেমা দেখিনা, বছরে ১-২টা হিন্দী সিনেমা দেখি আমির খানের মতন অভিনেতা থাকলে)

প্রকোশলীর প্রটেকশন তুলে নেওয়ায় আমার আপত্তি নেই, যেমন করে আমরাও প্রটেকশন না থাকায় আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় নিজ যোগ্যতায় স্থান করে নিচ্ছি (সেখানে যদি তাদের জন্য প্রটেকশন থাকত তাহলে আমার আপত্তি ছিল!), আমার আপত্তি সেখানেই যেখানে মামা চাচারা তাদের পছন্দের ক্যান্ডিডেটদের প্রটেকশন দেন মন খারাপ

যাই হোক, আপনি একজন তুখোড় ব্লগার এবং আমিও আপনার একজন পাংখা দেঁতো হাসি
তাই বিতর্কের পথে পা না বাড়িয়ে আপনার জন্য শুভকামনাই বরাদ্দ রইল হাসি

হিমু এর ছবি

অনেক উন্নত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি পাইরেটেড সফটওয়্যারের কল্যাণে। সেটা কতটা আত্মসম্মানজনক, প্রশ্নসাপেক্ষ তো বটেই।

বিদেশি ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ৩৮ বছরে আরও কিছু বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি দাঁড়িয়ে যেত! (...)

কে বলছে আপনারে?

স্যাটেলাইট আর ডিশ চ্যানেলের ওপর কঠোর রেগুলেশন আমিও চাই।

ক্রীড়াবিশ্বে যা চলছে, সেটা সিনেমায় কেন প্রয়োগ করা সম্ভব না, পোস্টে বলেছি। আপনি চাইলে জাতীয় দলে বিদেশী খেলোয়াড় ঢুকিয়ে দল চালানোর জন্য আন্দোলন করতে নামেন।

মেধা দিয়ে সম্পদ অর্জিত হয়, এবং তার বর্ধনের জন্যে দরকার হয় প্ররক্ষা।

খুব একটা বেশি দিন হয়নি, ভারতের সিনেমা এখন বিশ্ব বাজারেও স্থান করে নিচ্ছে, তাদের সিনেমাতেও স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু যদি হলিউডি সিনেমার থেকে প্রটেকশন তারা নিত তাহলে এই অবসথায় আসতে আরও ৩৮ বছর লাগত..

কেমনে বুঝবেন? কোনো তথ্য, উপাত্ত, কেইস আছে আপনার হাতে? নাকি টুপির নিচ থেকে কথা বের করলেন?

আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ধরনের প্রটেকশন নাই বলছেন? ইয়োরোপে আছে। যে কোনো জবের জন্য প্রথমে সেই দেশের নাগরিক, তারপর ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের অধিবাসী, তারপরে আফ্রিকার কয়েকটা দেশের নাগরিক, তারপর বাকি দুনিয়ার ক্যান্ডিডেটদের সুযোগ দেয়া হয়। আর আপনার হয়তো দেশের জব নিয়ে মাথাব্যথা নাই, আমার কিন্তু আছে।

হলে শাকিব খানকে আরো ৩৮ বছর নাচতে দেখতে রাজি আছি, আমির খানকে না।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কানাডায় প্রেফারেন্সের গতিপথ : সিটিজেন > পিআর > ভিসা স্টুডেন্ট। চাকুরীর বিজ্ঞাপনে এটা স্পষ্ট করেই লেখা থাকে। অস্ট্রেলিয়াতেও একই।

নিনামা ডাক্তার এর ছবি

বাংলাদেশী ওষুধ কোম্পানিগুলোর দেশে বিক্রীত ৫০০মিলিগ্রাম ক্যাপসুল/ট্যাবলেটে প্রকৃত ওষুধের পরিমাণ ২৫৫-২৯০মিলিগ্রাম। রপ্তানিকৃত ওষুধে কিন্তু ৫০০মিলিগ্রাম-ই থাকে !!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আসল ঘটনাই তো এইটা!
চুরি, ধাপ্পাবাজি, বাটপারি রোধ করা দরকার আভ্যন্তরীন যেকোনো সমস্যায়। এর জন্য দেশীয় সংস্থাগুলোর মনোযোগই যথেষ্ট। এখন এই ৫০০ এমজি'র জাগায় ৩০০ এমজি রহস্য উদঘাটনে ইন্টারপোলকে ভাড়া করে আনাটা কি যুক্তিসঙ্গত হবে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

বোহেমিয়ান এর ছবি

সবচেয়ে জটিল লাগল ছয়
ফাটাফাটি ।
পুরা মনের কথা ।
আমি দ্যা সার্চ দেখতে গেছিও এই জন্যই!
অনেক গুলা পয়েণ্ট আসছে।

এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি জরুরি ।

_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

রানা মেহের এর ছবি

লেখাটা খুব সত্যি।

যারা প্রতিযোগিতার কথা বলেন তাদের আমি খুব ছোট্ট করে একটা কথা বলি।
বাংলা ধারাবাহিক আর হিন্দি সিরিয়ালগুলো একবার মিলিয়ে দেখুন।

যখন দেশে 'ডিশ' ছিলনা তখন আমরা পেয়েছি এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, সকাল সন্ধ্যা র মতো ধারাবাহিক।আর এক পর্বের নাটকগুলো। কোনটা রেখে কোনটার নাম বলবো? এখন হিন্দি সিরিয়াল দিয়ে আমাদের নাটককে 'প্রতিযোগীতার' মাঝে দিয়ে কয়টা ভালো নাটক পাই বলুনতো?

আর যাও পাই, হিন্দি সিরিয়ালের প্রবল প্রতাপের সাথে লড়াই করে কয়টা নাটক দর্শকের মনযোগ পায়?

উপমাহাদেশের আরো সরাসরি বললে বলিউডের সিনেমা দেশে আসতে দিলে বাংলা সিনেমার অবস্থা হবে আমাদের নাটকের মতো।

আর বাংলা সিনেমার এই অবস্থার পেছনে আমরা মধ্যবিত্তরা কিন্তু কম দা্য়ী নই।
আমাদের নির্মাতাদের টাকা কম। প্রযুক্তি কম। সমাজ এখনো বিশেষ করে একজন 'ভালো' পরিবারের মেয়েকে নায়িকা হিসেবে দেখতে চায়না।
আমরা হিন্দি সিনেমার অহেতুক নাচ আর চটুল গান শুনতে পারি। শুধু বাংলা সিনেমায় পান থেকে চুন খসলেই দাঁড়িয়ে যাই ঢাল তলোয়ার হাতে।
কেন পারিনা আমরা বাংলা সিনেমাকে একটু সুযোগ দিতে?

হিন্দি সিনেমা কিন্তু আজ একদিনে এই অবস্থায় আসেনি। খারাপ ভালো সব অবস্থায় ভারতীয় দর্শকেরা তাদের অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন।

হুমায়ুন আহমেদের লেখা পড়তে গিয়ে হেসে ফেললাম। উনি বলছেন

বাংলাদেশের ছবির জগতে এক ধরনের মনোপলি ব্যবসা চলছে। ইসলাম ধর্মে কিন্তু মনোপলি ব্যবসা নিষিদ্ধ।

শেষ পর্যন্ত তাকেও কি ধর্মের তাবিজ দিতে হবে? এখানে ধুমধাম ধর্ম আসলো কী করে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একটা বড়ো মন্তব্য লেখা শুরু করেছিলাম, মুছে দিলাম। এই লোকগুলা কতো টাকা পেলে এমন সোজাসাপটা হিসাব নিয়ে পত্রিকায় ত্যানা প্যাচায়, এটা ভেবে খুব মেজাজ খারাপ লাগে। সব শালাই দেখা যায় জব্বার!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সরকারের বানিজ্য মন্ত্রীর এই উপমহাদেশীয় সিনেমা প্রীতিটা প্রথম থেকেই সন্দেহের চোখে দেখার মতো।

সত্যিকারই যদি সিনেমার উন্নয়ন চায় সরকার, তাহলে দেশের মধ্যে অনেক কিছুই করার আছে।
একটা ভালো ফিল্ম ইন্সটিটিউট তৈরী করতে পারলাম না আমরা এই স্বাধীন দেশে। আশ্চর্য হওয়ার মতো বটে।

যারা মনে করেন প্রতিযোগিতার অভাবে আমাদের সিনেমা বিকশিত হচ্ছে না তারা অসংখ্য ফ্যাক্টরগুলোর বাকিগুলো ভুলে বসে আছেন।

সিনেমা সেন্সর বোর্ড থেকে বের হওয়ার আগে তার পাইরেটেড সিডি পাওয়া যায় বাজারে ! এই পাইরেসি বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও প্রডিউসাররা কোনো ফল পান নি। সিনেমার ব্যবসায় পুজি খাটিয়ে এই রিস্ক থাকায়ই এখন ডিপজলের সিনেমা চলে। ৫০ লক্ষ টাকায় একটা ইনডোর অশ্লীল সিনেমা বানানো যায়। কিন্তু ভালো গল্প আর ভালো লোকেশনে গেলে সিনেমার খরচ আসবে ১.২০ কোটি। রিলিজের পরের সপ্তাহেই সিনেমা চলে যাবে ভিসিডির দোকানে। তাহলে পুজি খাটাতে আসবে কে ?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি বললেন,"রিলিজের পরের সপ্তাহেই সিনেমা চলে যাবে ভিসিডির দোকানে। তাহলে পুজি খাটাতে আসবে কে ?"
এটা আসলে খুবই খেলো একটা যুক্তি। বাংলা সিনেমার পরিচালক এবং প্রযোজকেরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকবার জন্য এই যুক্তিটি ব্যবহার করে থাকেন। একটি বিষয় লক্ষ্য করুন আজকে হলিউড কিংবা বলিউডে একটা চলচিত্র মুক্তি পাওয়ার এক কি দুই দিনের মাঝে(কোন কোন ক্ষেত্রে মুক্তি পাওয়ার আগেই) এই বাংলাদেশে বসে সেই চলচিত্রটি দেখতে পারছি। ঐ সব জায়াগার চলচিত্র পরিচালক এবং প্রযোজকেরা কিন্তু ,"ম্যায় লুট গ্যায়া বারবাদ হো গ্যায়া" বলে মড়াকান্না জুড়ে দেন না। ওনাদের চলচিত্র ও কিন্তু ঠিকই ব্যবসা করছে।
তার্কিক

হিমু এর ছবি

আপনার প্রতিযুক্তিটা আরো খেলো। হলিউডের বাজারে বাংলাদেশের কয়েক হাজার ডিভিডি দর্শক আঁচড় কাটতে পারবে না। বাংলাদেশের কয়টা লোক ইংরেজি সিনেমা ডিভিডিতে দেখে? সারা দুনিয়ায় কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা এক একটা হলিউডি সিনেমার। আর বলিউডি সিনেমার পাইরেটেড ভার্সনের দর্শকগোষ্ঠী বড় হলেও সেটা ঠেকানোর সরাসরি আইনী প্রক্রিয়া নাই দেখে বলিউডের চলচ্চিত্রকাররা কিছু বলে না, আর ইনফ্যাক্ট, তারা ঠেকাতে চায়ও না। কারণ তার প্রোডাক্টের চাহিদা সে তৈরি করছে এই লসের বিনিময়ে, ঠিক যেভাবে বৃটিশরা যেভাবে রেলগাড়ি আর চায়ের বাজার তৈরি করেছিলো এদেশে। একবার এই দেশে বড় পর্দায় সিনেমা দেখানো শুরু হলে দেখবেন, কীভাবে বিচিতে চাপ দিয়ে হিন্দি সিনমোর পাইরেসি ঠেকানো হয়।

আর দেশী সিনেমার পাইরেটেড ভার্সন বাজারে চলে এলে কীভাবে ক্ষতিটা হয়, চিন্তা করে দেখেন। সিনেমার টিকেটের দাম কতো, সিনেমা হলে যাওয়া আসার খরচ কতো, আর পাড়ার ডিভিডির দোকান থেকে ডিভিডি ভাড়া করার খরচ কতো। দুইটা মনে মনে হিসাব করে তুলনা করেন, তারপর একটু মফস্বলের বাজারে গিয়ে খোঁজ নেন এক একটা সিনেমা ডিভিডির দোকানে কী হারে চলে, তারপর ব্যবসার লস নিয়ে আবার তর্ক করেন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

নাশতারান এর ছবি

আমি ইরানে বড় হয়েছি। রেজা শাহ পাহলভীর পতনের পর খোমেনি ইরানিদের হিজাবে মুড়ে দিয়েছিলেন। নাচগানের মতো বেদআতি কাজকারবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেই পর্দার ঘেরাটোপেই কিন্তু ইরানিদের সাথে বসে আমি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। ইরানে দারুণ সব ছবি হয়। সবাই উৎসাহ নিয়ে সেগুলো হলে গিয়ে দেখেও। তারপরেও বলিউডের চাকভুম চাকভুম সিনেমাগুলো চোরাইপথে গিয়ে হাজির হয় ওদের ড্রয়িংরুমে। প্ররক্ষা দিয়েও সেটা ঠেকানো যায় নি। তাতে ওদের নিজেদের চলচ্চিত্রশিল্পে ভাঙনও ধরেনি। হিন্দি সিনেমার বিস্তার অনেকটা পর্নোগ্রাফির মতো, শিল্পগুণের নিরিখে যার বাণিজ্যিক সাফল্য বিচার করা যায় না। হিন্দি সিনেমার সাথে বর্তমান বাংলা সিনেমার তুলনা পর্নোর সাথে যাত্রাপালার তুলনার মতো। আন্তর্জালের যুগে পর্নোর প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই বলে তাকে সীল-ছাপ্পর মেরে বৈধ করারও মানে নেই কোনো। হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি করলে কী হবে তার একটা ছোট্ট নমুনা স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো। ভারতীয় পণ্যের (তেল-সাবান-কাপড়চোপড়-সিনেমা সব) বাজার বাড়ানো ছাড়া হিন্দি চ্যানেলগুলোর কোনো উপযোগিতা নেই। এই চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিলে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না দেশের। হিন্দি সিরিয়ালখোররা দুফোঁটা চোখের জল ঝরিয়ে বাংলা চ্যানেলে অভ্যস্ত হবেন, ডিশব্যবসায়ীরা অন্য কোনো ব্যবসা ধরবেন। তাতে হিন্দি চলন-বলনের প্রবণতা নিশ্চিতভাবে কমে যাবে। একটা চারার জন্ম-বিকাশ-বিস্তারের জন্য আলো-বাতাস-মাটি-জল-যত্ন সবই চাই। অন্য বৃক্ষের ছায়ায় স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে ফেলে রেখে তার বৃদ্ধি প্রত্যাশা করা যায় না। হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ থাকা যেমন জরুরি, হিন্দি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেওয়াও তেমনই জরুরি। বাণিজ্যিক বিনোদনের এমন উৎকট চল না থাকলে হুমায়ূন আহমেদ হয়তো আমাদেরকে তাঁর সাম্প্রতিক আবজাব খাওয়াতেন না। আমরা হয়তো 'এইসব দিনরাত্রি', 'কোথাও কেউ নেই'-এর মতো কিছু দেখতে পেতাম।

|| শব্দালাপ ||

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অস্পৃশ্যা এর ছবি

এক বন্ধুর লেখা ব্লগের সূত্র ধরে এই নিয়ে অনেক কথা বলেছি, যুক্তি দেখিয়েছি। সেই কথাগুলোই আপনি আরো স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ।

এই কথাটাই কেউ বোঝে না, প্রতিযোগিতা সমানে সমান হয়, কখনই অসমানের মাঝে হয় না।

আবার যখন অনেকে বলেন বাংলাদেশের পরিচালকদের পর্যাপ্ত অর্থ দিলেও তারা সে(হিন্দি)-মানের ছবি করতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়ে যায়, কিন্তু যখন একজন প্রযোজক তার অর্থ(হিন্দি সিনেমার সমতূল্য অথবা কাছাকাছি) লগ্নি করবেন, তখন তারাই বা কেনো "অগা-মগা(যারা অশ্লীল ছবি বানায়)" দের কে তার অর্থের অপচয় করতে দিবেন, ভালো মানের একজন পরিচালকও কি নেই যারা এই অর্থের সঠিক ব্যবহারে পারেন একটা সুন্দর ছবি উপহার দিতে?

পত্রিকায় পড়েছিলাম, ড্রিস্ট্রিবিউটররা "Wanted" নামক একটা গাজাখুরি মার্কা ছবি আনবেন প্রদর্শনের লক্ষ্যে, যারা মনে করেন হিন্দি ছবি দেশের সিনেমার বাজারে প্রতিযোগিতার জোয়ার আনবে, অনুরোধ করব, ছবিটা পুরোটা দেখতে, কিয়দংশ ট্রেলারে দেখেছিলাম, যারা সুস্থতা নিয়ে বড়াই করেন, তারা হয়ত তাদের স্ট্যান্ড পাল্টাতে পারেন। ঝকঝকে প্রিন্টে ভায়োলেন্সে ভরপুর, হাস্যকর কাহিনীনির্ভর সিনেমা যদি দেশের সিনেমার বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য মডেল হয়, তবে আর কিছুই বলার নেই।

যদি লেখক অনুমতি প্রদান করেন তবে ফেসবুকে লেখাটি শেয়ার করতে ইচ্ছুক।

পরিশেষে লেখককে ধন্যবাদ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলি। "খোঁজ- দা সার্চ" সিনেমাটি নিয়ে। কথা সত্য যে দুর্বল কাহিনী, নায়কের সিনাম্যাটিক সংলাপ থ্রো, অল্প বাজেটে অতি আধুনিকতা ফোটাতে গিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করা - এই সকল উপাদান এই ছবিতে আছে। এটাও কিন্তু সত্যি, ছবিতে অন্ততঃ এফডিসির সেই চিরপরিচিত দোতলা বাড়ির ড্রয়িংরুমের সেট আর কক্সবাজারের সাগরসৈকতের গন্ডির বাইরেও কিছু শট নেয়া হয়েছে। আছে হেলিকপ্টার, স্পীডবোটযুক্ত (হোক পুরোনো মডেলের) মারামারির হলিউডি ছবির মারদাঙ্গা দৃশ্যগুলোর দুর্বল চিত্রায়ণ।

আমি নিজে হলে সবান্ধব হলে গিয়েছি মজা লুটতে এবং হাহা স্বরে অট্টহাস্যও করেছি। কিন্তু এটাতো নিশ্চিত, দর্শক এই ছবি গ্রহণ করেছে। হোক সেটা ছবির মূল রস আস্বাদনের জন্যে নয়, কিন্তু প্রযুক্তির দুর্বল অথচ আধুনিকীকরণ কি তাদের আকর্ষণ করেনি ??? দর্শক এখনো হলে যায়, যেতে চায়।

গত আট থেকে দশমাসের ভেতরে 'জাগো', 'থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার', 'নিঝুম অরণ্যে' আর আরেকটা কী যেন চলচিত্র মুক্তি পাবার পর প্রথাগত বাংলা সিনেমা উন্নাসিক আমার অনেক পরিচিতকেই হলমুখী হতে দেখেছি। কয়েক বছর পূর্বেই যেমন হুমায়ুনের দুই বছর গ্যাপে বানানো সিনেমা দেখতেই দর্শক হলে যেতো- এখন তা নয়। হলে দর্শক উপস্থিতির হার পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি...

সুদিন আসছে, আসবে... অচিরেই।

_________________________________________

সেরিওজা

স্পর্শ এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার যুক্তিগুলো। এরকম একটা লেখার অপেক্ষায় ছিলাম। চলুক


সহযোগিতা আর প্রতিযোগিতা দুটোই কিন্তু দরকার বিকাশের জন্য। এবং দুটোর কোনোটাই একে অপরের চেয়ে কম গুরূত্বপূর্ণ নয়। আপনার লেখা থেকেই দেখা যায় ফরমালি উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানি বন্ধ করে আমরা ‘সরাসরি’ প্রতিযোগিতা পাইনি। ওদিকে ডিভিডি/ভিসিডি/ কেবলটিভির দৌরাত্বে সহযোগিতাও পাইনি। আর এখন ডিভিডি-ভিসিডি বন্ধ করলেও ইন্টারনেটের কারণে এই ইনভেশন ঠেকানো সম্ভব হবে না।


হলিউডি/বলিউডি সিনেমাও কিন্তু বের হওয়ার কদিন পরেই টরেন্টে এবং অন্য সব মাধ্যমে পাওয়া যায়। এ থেকে বোঝা যায় হলের ব্যাবসার সাথে ড্রয়ইং রুমের ব্যবসা একেবারে অর্থোগনাল হয়তো না, কিন্তু এদের ইন্টারসেকশন বেশ কমই।


জহির রায়হান এবং অন্য যারা যাবার পরে আর নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়নি এই পয়েন্টেই কিন্তু একটা সূত্র লুকিয়ে আছে। পরিচালক বলেন বা অন্য কোনো মেধাবী মানুষই বলেন, এরা জন্মায় না। সৃষ্টি হয়। পরিবেশ এখানে বড় ব্যাপার। জহির রায়হানরা যে 'প্রতিযোগিতা'/'সহযোগিতা'র পরিবেশ পেয়েছেন সেটা কি এখনকার নবীনরা পাচ্ছে? (এই প্রশ্নের উত্তর জানিনা)


হল গুলোকে টিকিয়ে রাখতে কী করা যেতে পারে? এ বিষয়ে আপনার মত কী? হল সব উঠে গেলে পরিচালকরা হয়তো অন্য জীবিকা বেছে নেবেন। হলমালিকরাও সেখানে দোকানপাট খুলবেন। কিন্তু এই শিল্পটা ‘বিলুপ্ত’ হয়ে যাবে। অনেকটা প্রজাতির বিলুপ্তির মত। যদিও এখন হলমালিক পক্ষ ও পরিচালক পক্ষ দুই দিকে অবস্থান নিয়েছে এই ইস্যুতে, তারপরো আমাদের বুঝতে হবে এদের মধ্যে রিলেশন পারষ্পরিক নির্ভরশীলতার। বিরোধের নয়।


আমাদেরই এক সচল ভাই শুনেছিলাম শুরুতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন পরে প্রকাশনা ব্যবসায় আসেন। ঠিক কী কারণে ওখানে একজন মননশীল মানুষের কর্মের পরিবেশ নেই সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।


আপনি আদার ব্যাপারিদের যেভাবে ইনভেস্টমেন্টের আহবান জানালেন এই ব্যাপারে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। আমার আশঙ্কা এরাই পরিবেশ খারাপ করেছে এতদিন। আরো খারাপ বৈ ভালো কিছু এরা করতে পারবে না। এই জলিল সাহেবের সাথেই কি কোনো ‘মননশীল’ চলচ্চিত্র কর্মীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব?


তাহলে দেখা যাচ্ছে হিন্দি সিনেমাকে ডেকে এনে প্রতিযোগিতার আহবান জানানোও মৃত্যু। আবার যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিলেও ক্রমক্ষয় ছাড়া কিছুই হচ্ছে না (স্টটিস্টিক্স ১৬০০->৬০০)। তাহলে কী করা যেতে পারে? ‘সহযোগিতা’ বলতে আমরা কী বুঝছি? মননশীল চলচ্চিত্র কর্মীরা সরকারের কাছে এক্সাক্টলি কী সহযোগিতা চান?

যে চলচ্চিত্রকর্মীরা বানিজ্যমন্ত্রির এই অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলপ্রসূ প্রতিবাদ জানাতে পেরেছেন। তাদের কাছে আমার দাবি তারা যেন এক্সাক্টলি কী ধরণের সহযোগিতা/প্রতিযোগিতা পেলে তাদের ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হবে সেটা নিয়ে সরকার বাহাদুরের কাছে বিস্তারিত দাবিদাওয়া পেশ করেন।

আর শক্তিশালি সেন্সর বোর্ডের দাবি অনেকে করেন। কিন্তু 'হু উইল পুলিশ দ্য পুলিশ?' সমাধান তাই শুধু এখানেও নয়।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হিমু এর ছবি

২.
বাংলাদেশে ডিভিডির মার্কেটের ওপর কোনো ধরনের স্টাডি না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।

৩.
না। পরিবেশ অবশ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে কতগুলি মুরগির খোঁয়াড়ে একটা শিয়াল ঢুকিয়ে যদি বলা হয় এখন প্রতিযোগিতার পরিবেশ বৃদ্ধি পেলো, তাহলে সেটা ভুল হবে।

৪.
হলগুলো কেন উঠে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনো গবেষণা কি হয়েছে? যেসব সিনেমা হল উঠে গেলো, সেগুলোর কেস স্টাডি করা জরুরি। ঢাকায় সিনেমা হলগুলি যে জমির ওপর তৈরি, তার রিয়েল এস্টেট মূল্য আকাশচুম্বি। ঢাকার জমির দামের অস্বাভাবিক মূল্য একটা বিরাট ফ্যাক্টর হতে পারে। একইভাবে দেখতে হবে, যে সিনেমা হলগুলো উঠে গেছে, সেগুলোর পত্তন হয়েছে কবে, কারা সেখানে বিনিয়োগ করেছে, সেখানে জমির দামে কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে কি না। সিনেমা হল কালো টাকা সাদা করার কাজেও ব্যবহৃত হয়, কালো টাকার উৎসে ব্যাঘাত ঘটলে সিনেমা হল চালিয়ে যাবার প্রয়োজনও ফুরায়। আরো দেখতে হবে সিনেমা হলগুলোর কমান্ড এরিয়া কতখানি। দেশে এক কিলোমিটারের মধ্যে ছয়টা কলেজ থাকে, সেভাবে গড়ে ওঠা সিনেমা হলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে, এটা আন্দাজ করা যায়। আরো দেখতে হবে, দেশের মানুষের সিনেমার চাহিদা বর্তমানের ৬০০ হল মেটাতে পারছে কি না। যদি পারে, ধরে নিতে হবে এরা ফিটেস্ট হিসেবে সারভাইভ করেছে। সিনেমার বিকল্প বিনোদন (অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদি) কী প্রভাব ফেলছে, সেটা দেখতে হবে।

৬.
যার হাতে টাকা আছে, সে-ই তো বিনিয়োগ করবে। স্মাগলারের চেয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে বেশি গুরুত্ব দেবো আমি।

৭.
সহমত। খুব জোরালো দাবি জানাতে হবে। শুধু চলচ্চিত্রকর্মীরাই নয়, নবীন নির্মাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। চলচ্চিত্রকর্মীরা স্ট্যাটাস কো ধরে রাখার চেষ্টা করবে, নবীন নির্মাতারা কিছু নতুন রক্ত ইনজেক্ট করতে পারে সিস্টেমে। পরিবর্তনের প্রস্তাব তাদের কাছ থেকে নিয়ে বহনের দায়িত্ব পালন করতে হবে বর্ষীয়ানদের।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

স্পর্শ এর ছবি


এটা নিয়ে আসলেই গবেষণা দরকার। এই ট্রেন্ডটা আশঙ্কাজনক। তবে 'হল জমি'র রিয়েল এস্টেট ভ্যালুর কারণে হল উঠে গেছে ভাবতে পারছিনা। এটাতো ব্যবসা। এই ব্যবসায় মুনাফা থাকলে আমি আমার আকাশচুম্বি দামের 'হল জমি' বিক্রি করে সেখানে গগনচুম্বি শপিংমল বানিয়ে তার মধ্যে 'সিনপ্লেক্স' টাইপ কিছু করতেই পারতাম। সেটা হচ্ছে না। তার মানে মূল সমস্যা 'সিনেমা বাজারেই', 'জমির বাজারে' না। চিন্তিত
এই ৬০০ স্টেবল নাকি আগামীবছর শেষে ৫৫০ হয়ে যাবে, মানে ট্রেন্ড টা দেখা দরকার। তাহলে এই ৬০০ 'ফিটেস্ট স্টেবল স্টেট' কিনা বোঝা যেত।

যাই হোক, এ বিষয়ে তেমন কিছু না জেনেও এ নিয়ে চিন্তা করতে চাচ্ছি কারণ এই 'চলচ্চিত্র' মিডিয়ার শক্তি অন্য যেকোনো মিডিয়া থেকেই বেশি। দেশে যদি কোনো 'রেনেসা' টাইপ কিছুও হয় সেখানে এই মিডিয়ার শক্তিশালী ভূমিকা লাগবে। একে এভাবে ধুঁকতে দেখলে আশাহত হই।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দিগন্ত এর ছবি

মানুষের হাতে পয়সা বাড়লে জমির দামও বাড়ে (যদি না ক্রেডিট বাবলের কথা ভাবা হয়)। পুরোনো সিনেমা হল ভেঙে নতুন শপিংমল ও মাল্টিপ্লেক্স তৈরী হয়। কিন্তু মানুষের হাতে পয়সা বাড়লেও তারা সিনেমা হলে গিয়ে বেশী পয়সা খরচা করতে চাইছে না, তাই শপিংমল নির্মাতারা পরিকল্পনায় সিনেমা-হলকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন।

আর ৬০০ সংখ্যাটা যে ফিটেস্ট স্টেবল নয়, তা অন্ধ্রের উদাহরণেই বোঝা যায় -

"গুগলে গুতা মেরে দেখলাম, ওদিকে এক অন্ধ্র প্রদেশেই ২৭০০ মুভি থিয়েটার আছে। "

বাংলাদেশে অন্ধ্রের দ্বিগুণ জনসংখ্যা নিয়ে তার এক চতুর্থাংশের কম মুভি থিয়েটার থেকেই বোঝা যায় লোকে প্রকৃতই সিনেমাহলমুখী হচ্ছে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনুপ [অতিথি] এর ছবি

সব কমেন্ট পড়ার পর মন্তব্য নিপ্রয়োজন।

শুধু বলব দেশ সেটেলাইট টিভি ও বন্ধ করে দেওয়া উচিত

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

চলুক
চলুক
চলুক

আমিও প্রতি লাইনের সাথে শতে সহস্রভাগ সহমত। দরকার ছিলো এই পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণটা; কিন্তু সত্যিই মাঝেমধ্যে এটার খুব অভাব অনুভব করি আমিও, যে এখানকার এমন এমন ভিউ বা অ্যানালাইসিস বা প্লেজ-গুলো আরো অনেক জায়গায় পৌঁছা দরকার।

[মামুলি বিষয়ান্তর: অতো কষ্ট ক'রে 'ঔৎকর্ষ্য' লেখা হ'লো কোন্ দরকারে?! 'উৎকর্ষ'ই তো 'উৎকৃষ্ট' বিশেষণটির মূল বিশেষ্য।

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

কাকুল কায়েশ এর ছবি

খুবই সময়োপযোগী একটা পোস্ট। মন্তব্যগুলা সহকারে আলোচনাটা বেশ ভাল লেগেছে! আমিও মনে করি যে, এই পোস্টটা (সাথে মন্তব্যগুলো থেকে কিছু বক্তব্য) পত্রিকাতে ছাপানো যেতে পারে।

যাই হোক, সিনেমাহলে যাওয়ার অভ্যাসের ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন কিছু চিন্তা মাথায় ঘুরছেঃ

যে বিষয়টা ইদানীং শুনতে ভাল লাগে যে, আগের চেয়ে অনেক বেশী সুস্থধারার সিনেমা তৈরি হচ্ছে, এবং ইউনিভার্সিটি-পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্তদের অনেকেই আজকাল সিনেমা হলে যাচ্ছে! সিনেমা হলে যাওয়ার যে অভ্যেসটা শুরু হল - এটাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে! গত বিশ-বাইশ বছর ধরে আমাদের সিনেজগতের এই ক্রমাবনতির একটা কারণ হচ্ছে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অভ্যাসটা আস্তে আস্তে আমাদের জীবন থেকে, বিনোদন থেকে উঠে গিয়েছিল। তাই, আশা করি বর্তমানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই পজিটিভ ট্রেন্ড বুঝতে পেরে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে!

দ্বিতীয়ত আসি, বলিউড সিনেমার ব্যাপারে! বলিউডের সাথে ঢালিউডের শতভাগ প্রতিযোগিতার সম্পূর্নই বিরুদ্ধে আমি! কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে যদি কিছুটা রেস্ট্রিক্টশনসহ হিন্দী সিনেমা দেখানো যায় আমাদের দেশে, তাহলে কেমন হয়? ধরা যাক, বছরে দুইটা মাস হিন্দী সিনেমা দেখানো যেতে পারে কিছু সিলেক্টেড সিনেমাহলে - জুন ও ডিসেম্বর মাসে! বছরের ভাল কিছু হিট-সুপারহিট হিন্দী মুভি আমদানী করে দেখানো যেতে পারে এই দুই মাসে!
দুই বছর চলুক এরকম, ভাল মত মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন করা হউক, দেশীয় সিনেজগতে্র জন্য আশানুরূপ কোন ফল না আসলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হউক!

প্রস্তাবটা হয়ত একটু ফানি মনে হতে পারে (আমার কাছেও একটু ফানি লাগছে বটে), কিন্তু একটা জিনিস তো সত্যি যে, হলে গিয়ে মুভি দেখা আর ডিভিডিতে মুভি দেখার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক!
যার ফলে ওই দুই মাসে অন্ততপক্ষে যেটা ঘটবে - বিনোদনের জন্য আমরা কিছু টাকা ডিভিডি ব্যাবসায়ীদের পকেটে না দিয়ে সিনেমাহল মালিকদেরকে দেব! এতে করে হলমালিকদের ব্যবসাটাও একটু চাঙ্গা হবে, দর্শকদের মধ্যেও সিনেমাহলে গিয়ে মুভি দেখার অভ্যাসটা আরেকটু বাড়বে!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

হিমু এর ছবি

দর্শকদের হলে টানতে হবে দেশী সিনেমা দিয়ে, বিদেশী সিনেমার টীকা দিয়ে নয়। বছরে দুইটা ভালো সিনেমা তো পয়সা ঢাললে দেশেই বানানো সম্ভব, হিন্দি সিনেমা আনতে হবে কেন?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় আপনি বাংলাদেশের এখন যে ধারা সেটাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। যদি অতি বাস্তববাদীও হই তাহলেও বাংলাদেশে বলিউড টাইপ ভালো সিনেমা বানাতে আরো ২০-২৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে আর ততদিনে বাংলাদেশে হয়তো আর কোন সিনেমা হল থাকবে না। হুমায়ুন আহমেদ তার আর্টিকেলে কিন্তু কখনই বলেনি যে হিন্দী সিনেমাই বাংলাদেশে চলবে, উনি বলেছেন যে ১০-১৫% সময় মাসের/বছরে উপমহাদেশের সিনেমা দেখানো যেতে পারে যাতে অন্তত সিনেমা হলগুলো কিছুটা লাভজনক হয়। আর আপনি শেষ কবে বাংলা মূলধারার সিনেমা দেখেছেন আমি জানি না, কিন্তু আমি দুই বছর আগে দেখেছিলাম, সেটা আর যাই হোক সিনেমা বলেনা।

তবে এটা নিদির্ষ্ট করতে হবে যেন এই ১০-১৫% সময়টা না বাড়ে।

পাগল মন

হিমু এর ছবি

পরিবর্তন আনতে চাইলে বাস্তববাদী হলে চলে না, আশাবাদী হতে হয়। বাংলাদেশে সিনেমা হল থাকবে কি থাকবে না, সেটা হিন্দি ছবির উপর নির্ভর করবে? এইটা কি গরুর মাংস পাইছেন?

হুমায়ূন আহমেদ কইছে শালার ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই। বছরে ১০-১৫% এর বেশি দেখানো হলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে কে? কর্তৃপক্ষ? একবার ঢুকতে দিলে সারা বছর ধরে হিন্দি সিনেমা চলবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না। বাংলাদেশে তো পর্নো ছবি দেখানো নিষেধ, কয়টা সিনেমা হলে কর্তৃপক্ষের বাচ্চারা গিয়া সেইটা আটকাইতে পারছে? সেন্সর বোর্ডের কেটে দেয়া ফুটেজ হলে গিয়ে ঠিকই জোড়া লেগে যায়, আর আপনি আসছেন ১৫% এর নিয়ন্ত্রণ লইয়া।

বাংলাদেশের মূলধারার চলচ্চিত্র পচে গেলে সেটার চিকিৎসা করতে হবে (কীভাবে, পরামর্শ দিতে পারেন), কিন্তু হিন্দি টোটকা দিয়ে সেইটা মেরামত করা যাবে না।

আপনার মা অসুস্থ হয়ে গেলে কি একটা হিন্দি মা এনে বছরের ১৫% সময় ধরে তাকে আম্মা আম্মা করবেন? মনে হচ্ছে করবেন। আর হুমায়ূন আহমেদ বললে তো এখনই দৌড় দিয়া গিয়া নিয়াসবেন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

কাকুল কায়েশ এর ছবি

সেটাতো অবশ্যই! এবং সত্যি কথা বলতে দেশে এখন বছরে দুইটা ভাল ছবি নির্মিতও হচ্ছে, যার ফলে নতুন নতুন মুখ হলগামী হচ্ছে! এখন যদি প্রযোজক-পরিচালকদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলে ও কর্তৃপক্ষ থেকে কার্যকরী সহায়তা পাওয়া যায়, দেখা যাবে দু'বছর পর আরো দুটো ভাল মুভি হবে, চার বছর আরো দুটো ভাল মুভি হবে! শম্বুকগতিতে হলেও সিনেজগতে একটা উন্নতির ধারা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস!

এখন এই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি যদি বিদেশীদের সাথে 'আংশিক' একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়, সেটা কি ভাল হবে না খারাপ হবে, সেটার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যই আমার উপরোক্ত প্রস্তাবটি! এই আংশিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নতির ধারাকে একটু গিয়ার-আপ করা যাবে কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যেতে পারে! যদি ফলপ্রসূ না হয়, সাথে সাথে আবার বন্ধ করে দিক!

তবে মূল কথা হচ্ছেঃ আমি তখনই এ জাতীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষাকে সমর্থন দিব, যখন আমি শতভাগ নিশ্চিত হব যে, এগুলো শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে, দেশের সিনেমাজগতের উন্নতির স্বার্থেই করা হচ্ছে!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

হিমু এর ছবি

সম্ভাব্যতা যাচাই করে কী ফল পাবেন, বলি।

১. বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে।
২. হলমালিক আর দর্শকরা বিক্ষোভ করবে আরো সিনেমা আমদানির সুযোগ দেয়ার জন্য।
৩. সরকার খুশিমনে উদাম করে দিবে।
৪. হুড়হুড় করে প্রচুর হিন্দি সিনেমা এসে ঢুকবে।
৫. বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প কোণঠাসা হবে। শুধু অভিনেতারাই ধরা খাবে না, সিনেমাকে কেন্দ্র করে যে সেকেন্ডারি টারশিয়ারি বিজনেস, সেগুলোর বেশিরভাগ ধ্বসে যাবে, পুঁজি চলে যাবে ভারতীয় প্রোডাক্টের মার্কেটিঙের দিকে। নতুন হল নির্মাণ হবে প্রচুর।
৬. "সুস্থ ধারা" "সুস্থ ধারা" করে লাফালাফি আবার কমে আসবে, যখন নিম্নমানের হাফপর্নো হিন্দি সিনেমাগুলি বাংলাদেশের বাজারে সস্তায় ডাম্প করা হবে।
৭. আবার সেই ন্যাংটা ছবি দিয়ে বাজার বোঝাই হবে, তফাত শুধু একটাই, সেটার লাভের গুড় চলে যাবে দেশের বাইরে।
৮. আপনার বাচ্চা আপনাকে বলবে আব্বু আব্বু ম্যায় তুমহারা খুন পি যাউঙ্গা! আপনি এই গল্প হাসিমুখে কলিগদের কাছে করে বেড়াবেন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

কাকুল কায়েশ এর ছবি

হাসি হাসি
হ্যাঁ, এগুলা যথার্থ বলেছেন! হয়ত এই পয়েন্টগুলোর বিপক্ষে থিওরেটিক্যালি কিছু লজিক দেয়া যেতে পারে, কিন্তু আমার মত অতি আশাবাদী লোকও আসলে জানি যে, উপরোক্ত ব্যাপারগুলো কোনমতেই ঠেকানো যাবে না!
ধন্যবাদ পয়েন্টগুলো ধরিয়ে দেবার জন্য! সম্পূর্ন সহমত পোষন করছি!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

Riasat Abir এর ছবি

দ্বিতীয়ত আসি, বলিউড সিনেমার ব্যাপারে! বলিউডের সাথে ঢালিউডের শতভাগ প্রতিযোগিতার সম্পূর্নই বিরুদ্ধে আমি! কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে যদি কিছুটা রেস্ট্রিক্টশনসহ হিন্দী সিনেমা দেখানো যায় আমাদের দেশে, তাহলে কেমন হয়? ধরা যাক, বছরে দুইটা মাস হিন্দী সিনেমা দেখানো যেতে পারে কিছু সিলেক্টেড সিনেমাহলে - জুন ও ডিসেম্বর মাসে! বছরের ভাল কিছু হিট-সুপারহিট হিন্দী মুভি আমদানী করে দেখানো যেতে পারে এই দুই মাসে!
দুই বছর চলুক এরকম, ভাল মত মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন করা হউক, দেশীয় সিনেজগতে্র জন্য আশানুরূপ কোন ফল না আসলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হউক!

প্রস্তাবটা হয়ত একটু ফানি মনে হতে পারে (আমার কাছেও একটু ফানি লাগছে বটে), কিন্তু একটা জিনিস তো সত্যি যে, হলে গিয়ে মুভি দেখা আর ডিভিডিতে মুভি দেখার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক!
যার ফলে ওই দুই মাসে অন্ততপক্ষে যেটা ঘটবে - বিনোদনের জন্য আমরা কিছু টাকা ডিভিডি ব্যাবসায়ীদের পকেটে না দিয়ে সিনেমাহল মালিকদেরকে দেব! এতে করে হলমালিকদের ব্যবসাটাও একটু চাঙ্গা হবে, দর্শকদের মধ্যেও সিনেমাহলে গিয়ে মুভি দেখার অভ্যাসটা আরেকটু বাড়বে!


আপনার সাথে একমত।
সিলেক্টড সুস্থ ধারার ছবি আসলে তা প্রতিযোগিতাকে আরও বাড়াবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

Riasat Abir লিখেছেন:
সিলেক্টড সুস্থ ধারার ছবি আসলে তা প্রতিযোগিতাকে আরও বাড়াবে।
আপনার উল্লিখিত এই সুস্থ ধারাটা দেশীয় চলচ্চিত্রে চালু হলেই তো হয়ে যায়। এদেশের নির্মাতারাই তখন টিকে থাকার তাগিদে 'এক সে বাড়কার এক' সিনেমা বানাতে শুরু করবেন।

আপনার কয়েকটা মন্তব্য পড়ে বুঝলাম, আপনি সমস্যাটা বুঝতেছেন, সমাধানও। কিন্তু প্রয়োগটা করার জন্য নিজের চেয়ে অন্যের উপরেই বেশি নির্ভরশীল আপনি। ঠিক বললাম?

এতোটা আত্মবিশ্বাসহীন হলে চলে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ হলে গিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখতে পেলে খুশি হবেন। কোন এক সার্ক উৎসবে হলে কিছু হিন্দি সিনেমা দেখানো হয়েছিল, তখন আশেপাশের মানুষদের প্রবল উত্তেজনা নিয়ে টিকিট কাটতে দেখেছি। প্রতিটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে হিন্দি গান-নাচ থাকে, ইদানিং মেহদি পরানোর জন্য আরেকদফা হিন্দি নাচ-গান সহযোগে আরেকটি অনুষ্ঠান চালু হয়েছে (বোধহয় সব হিন্দি গান শুধু গায়ে হলুদে কভার করা সম্ভব হচ্ছেনা) এধরণের কয়েকটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মনে হয়েছে হিন্দি সিনেমার কোন শুটিং দেখছি। আর সিরিয়ালয়ের যন্ত্রণা আর ফেসবুকের হিন্দি স্ট্যাটাস তো আছেই। বাংলাদেশের মানুষের যতখানি জ্ঞান হিন্দি সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে, ইন্ডিয়ানরাও এত আপ্টুডেট না। এরপর যদি ঘটা করে দেশের হলগুলোতে এই জিনিস দেখানো শুরু করে, কই যাব!!!

এই অবস্থায় একজন হু. আ. যখন এর পক্ষে লেখেন, তখন আর কী বলার থাকতে পারে!!! যারা একটু "পেটে ক্ষিদা, মুখে লাজ" অবস্থায় ছিলেন, তারা এখন হু. আ. লেখা পড়ে খুশিতে বাকবাকুম।

এখন সরকার পিছিয়ে গেছে, কিছুদিন পরই হয়তো ঠিকই হলগুলোতে হিন্দি সিনেমা দেখানো শুরু হবে, আমরা কিছুই করতে পারব না।
দেশের নীতি নির্ধারণে কিছু না করতে পারি, অন্তত নিজেদের পরিবারের নীতি নির্ধারণটা তো করতে পারি। গায়ে হলুদ বা মেহদির অনুষ্ঠানে হিন্দি নাচ-গান কি খুব জরুরি? হলে সিনেমা দেখাবে কি দেখাবে না তার চেয়েও জরুরি মনে হয় আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে কী করছি। নিজেদের সামাজিক অনুষ্ঠানে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে (মানে প্রতিদিনের চিন্তায়), বন্ধুদের সাথের আড্ডায় যখন এভাবে হিন্দি চলে আসে, সেটা আমার কাছে হলে সিনেমা দেখানোর চেয়েও ভয়ংকর মনে হয়।

পল্লব এর ছবি

কমেন্টটা খুবই ভালো লাগল। যেকোন বিয়েতে গিয়ে যে জিনিসগুলা অসহ্য লাগে, কানের পাশে লাউডস্পিকারে হিন্দি গান বাজানোটা তার মধ্যে বোধ হয় সবচেয়ে খারাপ লাগে। বাংলা গান যাও বাজায়, "নাচে রূপবান কোমর দুলাইয়া" টাইপ, নয়ত হাবিব/হৃদয় খান। উফফফ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

Riasat Abir এর ছবি

থিয়োরিটিকাল কচকচানির সাথে একটু প্র্যাক্টিকাল ফ্যাক্টও যুক্ত হোক, কমেন্টের সাথে সবাই প্রকাশ করুক গেল বছর/এ বছর কে কয়টি বাংলা সিনেমা আর হিন্দী সিনেমা দেখেছেন!

হিমু এর ছবি

আমি দেশে থাকি না, আমার জন্য বাংলা বা হিন্দি সিনেমা দেখার সুযোগ সীমিত। গত আড়াই বছরে বাংলাদেশের সিনেমা দেখেছি একটা, মাটির ময়না, হিন্দি একটা, রং দে বাসন্তী। তবে ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখেছি কয়েকটা, ঋতুপর্ণ আর সত্যজিতের।

আমি নিশ্চিত, দেশী সিনেমার বিপরীতে বেশিরভাগ মানুষই হিন্দি সিনেমা বেশি দেখেছেন। এই ফ্যাক্টটা এটাই প্রমাণ করে, আপনি যদি হিন্দি সিনেমাকে দেশে ঢুকতে দেন, সেটা বিপুল সাড়া পাবে। এবং সেই সাড়ার সাথে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমানে নাই। আপনি যদি বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে বাংলাদেশে কেউ আর চলচ্চিত্র বানাবে না, চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংস হলে হবে, তাহলে ঝেড়ে কেশে সেটাই বলেন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

Riasat Abir এর ছবি


কে বলছে আপনারে?

৩৮ বছরে লেংচে কিছু করার ধারণা আপনার থেকেই নেওয়া।

আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ধরনের প্রটেকশন নাই বলছেন? ইয়োরোপে আছে। যে কোনো জবের জন্য প্রথমে সেই দেশের নাগরিক, তারপর ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের অধিবাসী, তারপরে আফ্রিকার কয়েকটা দেশের নাগরিক, তারপর বাকি দুনিয়ার ক্যান্ডিডেটদের সুযোগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের মানুষও ঠিকই নিজ যোগ্যতায় তাদের মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে।

হলে শাকিব খানকে আরো ৩৮ বছর নাচতে দেখতে রাজি আছি, আমির খানকে না।

দেখুন ভাই ভাল করে :|
শাকিব খানের নাচ দেখতে আমি অন্তত হলে যাচ্ছিনা।

বাংলা ছিঃনেমা যে পথে আগাচ্ছে, দুষ্ট গরুর চেয়ে আমার তাই শুন্য গোয়াল ভাল।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাই, আপনি তো গোয়াল শূন্য রাখছেন না, দাঁমড়া আমদানীর পক্ষেই আপনার মত-- এমনটাই তো বুঝলাম।

Riasat Abir এর ছবি

দাঁমড়া আমদানী করলে আমি কিনছি না।
তা ভাইজান কটা বাংলা সিনেমা দেখলেন আর কটা হিন্দী!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো বাংলা ছবি সুযোগ পেলে দেখি। প্রশ্ন করতে পারেন ছবি না দেখে ভাল না খারাপ তা বুঝি কিভাবে: আসলে ছবি দেখাদেখি খুবই কম হয়, 'ওয়ার্ড অফ মাউথ' থেকে দেখার আগ্রহ জাগলে দেখি।

হিন্দী ছবি দেখার ব্যাপক সুযোগ ছিলো/আছে, তবুও দেখা হয়না। কারণ দেখতে ভালো লাগেনা। আমি মনে করি হিন্দী খুব আগ্রাসী ভাষা। এটা হিন্দী ভাষার গুন হলেও আমি এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখি। সে কারণে আমার সন্তানের মধ্যে এর বীজ বপনে সর্বোচ্চ বাধা প্রদানে সচেষ্ট আছি এবং থাকবো। এটা করি সন্তানকে বাংলা শেখানোর মাধ্যমে। শিশু যেন বাংলার মধ্যেই বেড়ে ওঠে শুধু সে কারণেই মাসে মাসে টাকা দিয়ে হলেও বাংলাদেশী চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছি। এতে করে আমি অনেকটাই সফল হয়েছি বলে দাবী করতে পারি। আমার ৬ বছর বয়েসী বাচ্চা বিদেশে বসেও গড়গড়িয়ে বাংলা বলে। এদেশের জাতীয় সঙ্গীতের বাংলা অনুবাদ এনে দিয়েছি, এবং সেটা সে খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ে। বাংলায় সে লিখতেও পারে।

এতগুলো কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বললাম। এর দ্বারা কেন আমি ভারতীয় ছবি আনার বিপক্ষে তা কিছুটা পরিস্কার হবে। ভারতীয় বাংলা ছবি থাকলেও, আমি শতভাগ নিশ্চিত হিন্দী ছবিই বেশী আমদানী ও প্রদর্শিত হতো।

হিমু এর ছবি

ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি আর সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি কি এক? একটা গ্যারেজে বসে একটা নতুন গুগল কোম্পানি স্টার্ট করতে পারে ল্যারি পেইজ আর সের্গেই ব্রিন, একটা গ্যারেজে একটা ওষুধ কোম্পানি পারলে খুলে দেখাইয়েন। আর আপনাকে তো বললামই, আমরা সাইকেল পর্যন্ত নিজেরা তৈরি করতে পারি নাই প্রোটেকশন না বসানোর জন্য।

খুবই সত্য কথা। কিন্তু অনাবাসী বাংলাদেশীদের জব মার্কেটে জায়গা পাওয়া এক জিনিস, আর দেশের চলচ্চিত্রশিল্পে বিপুল ক্ষমতাধর প্রতিদ্বন্দ্বীকে দাওয়াত দিয়ে ডেকে আনা ভিন্ন জিনিস। এই পার্থক্য আপনি না বুঝলে কাউকে বলেন আপনাকে পোস্টটা পড়ে বুঝিয়ে দিতে। আর না হলে আসেন ফ্যাদাইতে থাকি।

আপনি হলে না গেলে না যাবেন। অন্যরা যাবে। শাকিব খানকে হটিয়ে অন্য দেশী নায়ক হল দখল করবে। কিন্তু আমির খান না।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

Riasat Abir এর ছবি

আনন্দী কল্যাণ লিখেছেন:

দেশের নীতি নির্ধারণে কিছু না করতে পারি, অন্তত নিজেদের পরিবারের নীতি নির্ধারণটা তো করতে পারি। গায়ে হলুদ বা মেহদির অনুষ্ঠানে হিন্দি নাচ-গান কি খুব জরুরি? হলে সিনেমা দেখাবে কি দেখাবে না তার চেয়েও জরুরি মনে হয় আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে কী করছি। নিজেদের সামাজিক অনুষ্ঠানে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে (মানে প্রতিদিনের চিন্তায়), বন্ধুদের সাথের আড্ডায় যখন এভাবে হিন্দি চলে আসে, সেটা আমার কাছে হলে সিনেমা দেখানোর চেয়েও ভয়ংকর মনে হয়।

ভাই, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।

হিমু এর ছবি

আপনি দেখলাম উপরে বলেছেন,

আমার মতে কোন কিছুকেই বেঁধে রাখা উচিৎ নয়। যদিও ইন্ডিয়ান কালচার আমাদের দেশে ভাইরাসের মতন জেঁকে বসছে ( মা আর বোনের হিন্দী সিরিয়াল দেখার জালায় আমি খেলাও দেখতে পারিনা টিভিতে সবসময় মন খারাপ )

একদিকে বলছেন কোনো কিছুই ধরে বেঁধে রাখা উচিত না, আবার তার উল্টো কথাকে "সবচেয়ে বড় কথা" বলছেন। স্ববিরোধী হয়ে গেলো না?

বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রোডাক্টের চাহিদা ভারতে আছে। বিশেষ করে সাবান আর ব্যাটারি। ভারত সরকার সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলেও বিরাট শুল্ক আর অশুল্ক বাধা বসিয়ে রেখেছে, যাতে তাদের ইন্ডাস্ট্রি প্রতিযোগিতার মুখে না পড়ে। সাবানের মতো সামান্য জিনিস নিয়েও তারা সচেতন। আর আপনার মতো উদামপন্থীরা দেশের রুগ্ন সিনেমার চিকিৎসা না করে সেটাকে ফেলে দিয়ে হিন্দি সিনেমা জায়েজ করার কথা বলে।

বাসায় মায়ের অসুখ করলে কি মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন নাকি তাঁকে ডাস্টিবিনে ফেলে ভারত থেকে একটা হিন্দি মা এনে মাথায় তুলে রাখবেন?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

Riasat Abir এর ছবি

একদিকে বলছেন কোনো কিছুই ধরে বেঁধে রাখা উচিত না, আবার তার উল্টো কথাকে "সবচেয়ে বড় কথা" বলছেন। স্ববিরোধী হয়ে গেলো না?

অনেক কিছুই আমাদের করতে মানা নেই, কিন্তু তারপরো আমরা করিনা কারণটা মূল্যবোধ, চিন্তা চেতনা।
সিগারেট খেতে আমার মানা নেই কেউ বেঁধে রাখেনি আমাকে, কিন্তু বড় কথা আমি সেটা খাচ্ছিনা।

হিমু এর ছবি

পরিস্থিতি যদি এমন দাঁড়াতো, যে আপনি সিগারেট খাওয়া শুরু করলে কিছু লোকের জব চলে যাচ্ছে, এক এক প্যাকেটের জন্যে এক একজনের পরিবার সংকটে পড়ছে, আপনি কি তখনও ব্যাপারটাকে সামষ্টিক মূল্যবোধের ভরসায় ছেড়ে দিতেন, নাকি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতেন?

চুরি, খুন, ধর্ষণ করতে আমাদের বাধা আছে আইনে। আপনি আপনার নিজের "মূল্যবোধ" আর "চিন্তা চেতনা"র ভরসায় যদি আজকে বলেন, আইন থেকে এসব বাধা তুলে দেয়া হোক, কারণ আপনি তো চোর না, খুনী না, ধর্ষক না ... সেটা কি লজিক্যাল হবে?

সারা দেশ একজন ইনডিভিজুয়ালের "মূল্যবোধ" আর "চিন্তা চেতনা" দিয়ে চলে না। এ কারণেই কিছু জিনিস কানুনের হরফে লিখে নিষিদ্ধ করতে হয়।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ভাই Riasat Abir,

আমি মনে হয় আমার কথা বোঝাতে পারিনাই। বলতে চাচ্ছি, হলে হিন্দি সিনেমা না দেখিয়েই দেশের যা অবস্থা, যদি দেখানো হয় দেশের নাম হিন্দিদেশ রাখতে হবে।

আর হলে সিনেমা দেখানো হবে কি হবে না, সেই সিদ্ধান্তে আমাদের কোন হাত নেই। সাধ্যমত প্রতিবাদ জানাব, তারপর সরকার ঠিকই তাদের মর্জিমত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আমাদের হাত আছে আমাদের প্রতিদিনের কাজকারবারে, সেখানে কেন সচেতন হই না? হিন্দির প্রতি এত প্রগাঢ় ভালবাসা আমরা দেখিয়েছি দেখেই আজকে সরকার সাহস পাচ্ছে এইসব কথা তোলার।

জানি আমাদের এইসব লাফালাফির কোন মূল্যই নাই, তারপরও লাফালাফি করব, লিখব, মন্তব্য করব, করবই।

আর বেঁধে রাখতে হবেই, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ নিজের ভাল বোঝে না, কাজেই বেঁধে রাখা ছাড়া উপায় নাই। বাংলা সিনেমা আগে আসুক হিন্দি সিনেমার পর্যায়ে, তারপর ভাবা যাবে প্রতিযোগিতার কথা, সমান সমান ছাড়া কিসের প্রতিযোগিতা?

আর হিন্দি সিনেমা দেখা তো খারাপ কিছু না, খারাপ হল যখন আমরা আমাদের জামাকাপড়, গান, কথা, লেখা, প্রেম এসব হিন্দি সিনেমার মত করতে শুরু করি। যেহেতু দেশের মানুষের সংস্কৃতি, ভাষা এসব নিয়ে কোন বোধই কাজ করে না, কি গ্রহণ করতে হয়, আর কি বর্জ়ন করতে হয় এসব বেসিক ব্যাপারের শিক্ষা এখনো সম্পূর্ণ হয়নাই, সেহেতু তাদের বিনোদন নিয়ে সরকারের এত মাথা না ঘামালেও চলবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বলিউড সিনেমা আমদানীর সাপেক্ষে কয়েকটা জিনিস আমার মনে হয়েছে। সেগুলো ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে পারি কি না দেখি।

১) ব্যবসা অথবা বাণিজ্য অথবা সওদাগরী : সেটা হলমালিকদেরই হোক আর বিদেশী খেলোয়াড় আনিয়ে স্বদেশী টিমে খেলানোতেই হোক। এর পেছনে স্বদেশী পক্ষকে তাকতবান করার চেয়ে নিজের পকেটকেই তাকতবান করার উদ্দেশ্যটা মূখ্য। এইটা বুঝতে কি রকেট সাইনটিস্ট হওয়ার প্রয়োজন আছে?

২) প্রতিযোগিতা এন্ড/অর ব্লা ব্লা ব্লা : যারা বলিউডি সিনেমা আমদানী করে একটা জবরদস্ত প্রতিযোগিতার আশায় হাতে পপকর্নের ঠোঙা নিয়ে গ্যালারিতে বসার জায়গা খুঁজছেন, তারা একটু সাবধান হোন। কার সাথে কার, কীসের সাথে কীসের প্রতিযোগিতা দেখতে চাচ্ছেন, বুঝতে পারছেন তো! নাকি গড্ডালিকা প্রবাহে কেবল ভারিক্কি গা টাই ভাসিয়ে দিতে চাইছেন!

প্রতিযোগিতা হোক, অবশ্যই হোক। তবে সেটা বলিউডের সাথে না হয়ে ঢালিউডের সিনেমাগুলোর মধ্যেই হোক না, ক্ষতি তো নেই।

পাড়ার রাস্তায় ক্রিকেট খেলা কোনো দলকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট এন্ড বাউন্সি উইকেটে নামিয়ে প্রতিযোগিতা দেখতে চাইলে তো সমস্যা। আগে পাড়ার দলকে স্থানীয় নানা ডিভিশনে খেলিয়ে হ্যাডম বাড়ান। নাইলে তো মাঠে নামার আগেই ওরস্যালাইনের যোগান দিতে হবে আপনাদেরই! প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবে এই দায়িত্ব পালনে রাজী আছেন তো!

৩) বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট : পোস্টের বর্মপরা যক্ষা রোগীর সন্মুখ সমরে নামার উদাহরণটা মনে ধরেছে। যে চলচ্চিত্র শিল্পের ত্রাণকর্তা সেন্সরবোর্ডেরই কোনো মা-বাপ নেই সেই চলচ্চিত্রকে ঠেলেঠুলে প্রতিযোগিতার ময়দানে নামিয়ে দিয়ে কার কী লাভ হচ্ছে, সেটা অবশ্যই খোঁজ, দ্য সার্চের দাবী রাখে।

যে পোলা হাঁটতেই পারে না ঠিকমতো তারে বেন জনসনের গেঞ্জি পরিয়ে একশ মিটার স্প্রিন্টে খাড়া করায়ে দিলেই সোনা জিতে নিয়ে আসবে? যদি এইটা সম্ভব হয় তাইলে আমিও বলিউডি সিনেমা সরাসরি আমদানীর পক্ষে আছি।

আর যদি মনে করেন, এই একশ মিটার স্প্রিন্টে হামাগুড়ি দেয়া কোনো পোলার সোনা জেতার সম্ভবনা চিন্তা করা পাগলামী, তাইলে যারা বলিউডি সিনেমা এদেশে আনতে চান, তাদেরকেও বলি- একটু আয়নায় তাকান জনাবেরা। আপনারা পাগলের প্রলাপের মতো কিছু বকছেন নাতো!

৪) স্টপ পাইরেসি, স্টপ ছিদ্রান্বেষণ : ডিপজল, গোলাপজল, আদাজল, মিজুরাম, বোকারাম প্রমূখদের সিনেমায় চোখ রাখা যায় না, এইসব লতাপাতার কথাবার্তা বাদ দিয়ে এই সমস্যার কেন্দ্রের দিকে দূরবীন লাগান, তারপর হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফোকাস ঠিক করে দেখুন কী এবং কাকে দেখা যায়!

বড় পর্দায় গিয়ে বিপাসা বসুর যাদু হ্যায় নেশা হ্যায় আর মল্লিকা সেরওয়াতের শরীরে সার্বক্ষণিক চৈত্র মাসের কাঠফাটা গরমের আভাস দেখে দেখে যদি মনে করেন ঢালিউডের চলচ্চিত্র হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে, তাইলে বুঝা যায় আপনের মনোযোগ ঢালিউডের চলচ্চিত্রের 'সেরে ওঠা'র চেয়ে বলিউডি নাচাগানা বড় পর্দাতে দেখাতেই বেশি। এইটা বিপজ্জনক সংকেত। না ভুল বললাম, এইটা সংকেত না। এইটা একটা ডিজাস্টার। এই ডিজাস্টারের কারণেই আমাদের দেশের মানুষ নিজের ভাষা, সংস্কৃতি রেখে ভিন দেশের ভাষা, সংস্কৃতির চর্চা করে যায় চরম অশ্লীল ভাবে, অবলীলায় নিজের ড্রয়িংরুমে।

কিছু মানুষের অভব্য অশ্লীলতার কারণে ড্রয়িং রুমের গণ্ডী পেরিয়ে এখন চলচ্চিত্র শিল্প তথা হলগুলিও বলিউডি আগ্রাসনে নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে হোঁচট খাচ্ছে।

৫) বিকোয়ে যাওয়া মূল্যবোধ : হুমায়ূন আহমেদের মতোন মানুষ যখন এই নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যান, তখন আসলেই বিস্মিত হই, মূল্যবোধের ফেরি করা মানুষের লাইনটা আসলে কতো বড়!

এই বিশাল প্রোফাইলের মানুষগুলোর চেয়ে আমার কাছে অন্তত আবদুল জলিল বা কুদ্দুস বা যে-ই হোক, বেশি পূজনীয়! কারণ সে নিদেনপক্ষে আরেকদেশের সিনেমার নামে কোরামিন ইনজেক্ট করার চেয়ে নিজেই ময়দানে নেমে কিছু করার চেষ্টা করছে।

নিজের সামর্থ্যের ভেতরে কাজ করে যদি সে হাস্যকরও হয়ে পড়ে, তাও আমি তাঁকে স্যালুট করবো। করবো এইজন্য যে একজন হুমায়ূন আহমেদ নিজের মূল্যবোধ বিকিয়ে দিলেও অখ্যাত একজন জলিল অথবা অনন্ত সেই মূল্যবোধের ফেরি করে নি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

-পোস্টের সাথে একেবারে সহমত।
-ভারতীয় ছবি যদি ঢুক্তে দেওয়া হয় তাইলে দেখা যাবে প্রথমে ১০% ছবি আমদানি এরপর ২০% তারপর থেকে ভারতে আর বাংলাদেশ একসাথে ছবি মুক্তি দেওয়া হবে দেখা যাবে।
-এখনতো তাও তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেলের মত মানুষরা একটা দুইটা হইলেও ছবি বানায় এবং যথেষ্ট মানুষ তা হলে দেখতে যায়। কিন্তু ভারতীয় ছবির আমদানি বাধা উঠিয়ে দিলে তারা কি বাংলাদেশে কোনো ছবি মুক্তি দিতে চাবে?
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ভালো ছবি বড় পর্দায় দেখতে কার না ইচ্ছা করে। টাইটানিক বড় পর্দায় দেখে যে মজা ছোট পর্দায় দেখে কি সেই মজা আছে?

কিন্তু ভাবছি সরকার উদ্দেশ্যটা কি? আমাদের মজা দেয়া, হল মালিকদের মজা দেয়া, নাকি অন্য কোন 'মজা' রয়ে গেছে?

হিন্দি সিনেমা চললে দেশীভাইরা ভালো ছবি বানাবে, মানুষ হুড়মুড় করে সেই ছবি দেখতে যাবে, এইটা কল্পনা হিসেবে খুবই সস্তা হয়ে যায়।

আমরা ভারতীয় টিভি চ্যানেল দ্বারা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হয়েই যাচ্ছি। সিনেমা হলও তাদের দান করে দিয়ে কি কফিনে শেষ পেরেকটা টুকে দেয়া হবে?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রত্যাশা করছি এরপর যক্ষা দূর করেই যোদ্ধাকে সম্মুখ সমরে পাঠানো হবে।
চলুক

''চৈত্রী''

তারানা_শব্দ এর ছবি

বাহ!
দারুণ একটা লেখা!
হিমু ভাই এর বেশির ভাগ লেখাই অবশ্য দারুণ!!
হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সবগুলো মন্তব্য পড়ার সময় নেই। তাই নিজের মতামতটাই দিয়ে যাই। পোস্টে পূর্ণ সহমত।

দেশের চলচ্চিত্রে রয়েছে হাজারটা সমস্যা। এগুলো সমাধান না করলে জীবনেও ভালো সিনেমা হবে না দেশে। সমস্যার সমাধান না করে ভারতীয় ছবি আমদানী কোন অর্থে সমাধান তা আমার কোনভাবেই বোধগম্য হয় না। মশিউল আলম আর হুমায়ুন আহমেদরা দেশের সিনেমা অবকাঠামো সম্পর্কে ধারণা রাখেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। তারপরও তাদের কীভাবে এরকম লিখতে পারেন আমি বুঝি না!
যদি না জানে তাহলে এফডিসিতে তাদেরকে একটাবার চক্কর দিয়ে আসতে অনুরোধ করবো। অনুরোধ করবো কাকরাইলে একবার ঢুঁ মারতে।

ভারতীয় ছবি আমদানীর সঙ্গে বাংলাদেশী ছবির প্রতিযোগিতার কোনই সম্পর্ক নাই। এটা স্পষ্টভাবেই একটা ব্যবসায়িক উদ্যোগ। বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই নাই এই প্রস্তাবে।

সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দোহাই যারা দিতেছেন তারা কোন বুদ্ধিতে দিতেছেন তাও আমি বুঝি না। ভারতীয় সিনেমা আমদানী হলেও ঠেকানো যাবে না হল বন্ধ হওয়া।
হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নানাবিধ কারণে। রাজাকার এস এ খালেক তার বিউটি হল বন্ধ করছে ভোটের আগে মুসলমান সাজতে। সিনেমা হল বন্ধ করে মসজিদ বানানোর ঘোষণা দিয়া।
শ্যামলী হল ভাঙছে বহুতল ভবন করার অজুহাতে। খুব ভালো স্পটে এত বড় একটা বাণিজ্যিক ভবন হলে যতো টাকা লাভ হবে তার সিকিভাগও আসবে না সিনেমা হল থেকে, ভারতীয় হলিউডিও সব ছবি চালায়াও সেই বাণিজ্য ধরা যাবে না।

ভারতীয় সিনেমা আমদানী করে যারা দেশের সিনেমা শিল্পকে উদ্ধার করতে চান, তাদেরকে দিক্কার ছাড়া আর কিছুই বলার নাই। এসব ফালতু কথা শুনলেও বিরক্ত লাগে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পল্লব এর ছবি

অফটপিকঃ ভাই, আপনি কই থাকেন? শ্যামলীর আশেপাশে?

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

না, ক্যান?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পল্লব এর ছবি

শ্যামলী হলের কথা বললেন, তাই মনে হল। আমি ঐদিকে থাকতাম।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

বইখাতা এর ছবি

পোস্টের সাথে খুবই সহমত। হিন্দি টিভি চ্যানেলগুলিও বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হয়।

হিমু এর ছবি

দেশের পাঠকরা একটা জরিপে দয়া করে অংশগ্রহণ করুন। ধন্যবাদ।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ধুসর গোধূলি এর ছবি

পাইছি, বহুত খোঁজা-খুঁজি- দ্য সার্চিং করার পর এই পোস্টটা পাইলাম যেখানে আমি এখন আরাম করে মন্তব্য করতে পারুম।

কৈতেয়াছিলাম জলিল ভাইয়ের খোঁজ-দ্য সার্চ নিয়া। বহুত ধৈর্য্য নিয়া, বহুত সাধনা কৈরা, বহুত ত্যাগ তিতিক্ষা আর যথাযথ ভাব গাম্ভীর্য নিয়া অবশেষে আমি শেষ করতে পারছি সার্চ- দ্য খোঁজ। গট-সাই-ডাংক

এইটা একটা লাইফ টাইম এচিভমেন্ট! আমি পুলকিত, এবং পুলের উপর খাড়ায়া আলোকিতভাবে আন্দোলিত। ফারুকীর মতো জলিল ভাইও একটা নয়া সিস্টেমের ডায়ালগ সিনেমাজগতে ইমপোর্ট করলো বৈলা!



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।