হরতালে নস্টালজিয়া

আজকে সকালে বাজার করতে গিয়ে মাথায় হাত। সব্জির সর্বনিম্ন মূল্য ৪০ টাকা কেজি। কোনো একটা সব্জি পেলাম না যেটার কেজি ৪০ টাকার নিচে। গতসপ্তাহেই সর্বনিম্ন কিনেছি ৩০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে প্রতি কেজিতে বাড়ছে ১০ টাকা!

আর ট্রান্সপোর্ট? হরতাল ছাড়াই সে এক ভীষণ ভয়াবহ। মহাখালি থেকে বাংলামোটর, মিটারে আসতে যেখানে ৫০ টাকার বেশি উঠবে না, সেখানে হরতাল ছাড়াই স্কুটার ভাড়া চায় ২৫০ টাকা!

চারদিনের হরতালে এই দাম আরো বাড়বে। সামনে রোজা... কী হবে? জানি না... প্রচণ্ড হতাশ

স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে!

ইউনিভার্সিটি যাব বলে বেরিয়ে যে নাকালটা হতে হল আজ। হরতালের বেসরকারি ছুটিতে সবাই নাকি বাড়ি যাচ্ছে, তাই পাক্কা চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে একটাও রিকশা কি স্কুটার কিছুই পেলাম না। বাসে উঠে দেখি সেখানে সর্বাধিক লোক তোলার বিশ্ব রেকর্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শেষে এক লোক,'ঐ বেটা, তোর দোহাই লাগে, একটা চামুচ নিয়া আয়, আর ওইটা দিয়া আমাগো ঠাইসা ভর' বলে ষাঁড়ের মত চেঁচাতে শুরু করলেন আর সবাই উনাকে সমর্থন দিতে লাগলেন। এর মধ্যে চেপে এল বৃষ্টি, জানালা সব বন্ধ। গরমে, ঘামের গন্ধে দম বেড়িয়ে যাবার যোগাড়। কৃষি মার্কেট থেকে শিশুমেলা যেতে এক ঘণ্টা লাগলো। এই সব করে ভার্সিটি গিয়ে দেখি অফিসে সবাই 'লাঞ্চে গেছি' বলে ডেস্ক থেকে উধাও।

বলার কিছু নাই, নিজের পুরানো একটা লেখার বিজ্ঞাপন করে যাই বরং

আজ যখন বাসে করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরছিলাম, উঠার আগে খুব ইত:স্তত বোধ হচ্ছিল, উঠার পরও তা কমে নি, কোন্ সময় কেউ এইবুঝি আগুন লাগিয়ে দেয়, বের হবার সময় পাবো কি না জানা নাই, জীবন এতটাই ইনসিকিউর্ড হয়ে গেছে আজকাল!!! আর দ্রব্য/সেবার মূল্যে এখন আর আগুন লাগে না, সে নিজেই জ্বলন্তাগ্নি হয়ে গেছে, আমাদের পুড়িয়েই যাচ্ছে.............

হ।

বিদেশ বেকায়দা পজিশনে আছি, ঠিকঠাক মতে টাকা পয়সা পাঠাতে পারছি না । বাবা রিটায়ার্ড করেছেন, বোনটি বিবাহ যোগ্যা, আরেকটি বোন অটিস্টিক চাইল্ড। ঢাকা শহরে এতগুলা মানুষ কিভাবে যে বেঁচে আছে আল্লাহ ই জানেন। দোয়া করবেন আমি যেন এই অবস্থাটা খুব শীঘ্রই কাটিয়ে উঠতে পারি।

খাওয়াদাওয়া এমনিতেই কম করি।
যে দিন আসছে সামনে, পুরোপুরি না খেয়ে থাকতে হবে মনে হচ্ছে।

"দ্রব্যমুল্য" শব্দটা এরপর হরর মুভির সাউন্ডট্র্যাকে থাকবে।

গতকাল বিকেলে বনানী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কাফেলার থেকেও লম্বা লাইন সবগুলো পরিবহনের জন্যে। আমার দুই সহকর্মী আমার থেকে এক ঘন্টা আগে অফিস থেকে বিদায় নিলেও দেখি তারা তখনও বিআরটিসির লাইনে। শুনতে পেলাম আগামী হরতালের কারনে সম্ভাব্য ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের আশংকায় খুবই অল্প সংখ্যক বাস চলছে বিকেল থেকে। অবশেষে শেরপুরের একটা বাসে উত্তরা পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকায় 'ভাও' করলাম। পোঁদ আমার কাল পেকে লাল হয়ে গেছে। পুরোটা রাস্তা ইঞ্জিন কভারে বসে এসেছি, আমি কিছু টের পাইনি কিন্তু টের পেয়েছে আমার পাছা।