সব লাল হো যায়েগা?

কৌস্তুভ এর ছবি
লিখেছেন কৌস্তুভ (তারিখ: রবি, ২৯/০৮/২০১০ - ৩:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সোমবার ছিল হার্ভার্ডের নবীনবরণ উৎসব। আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে, আন্তর্জাতিক গ্রাজুয়েট ছাত্রদের বরণ। গ্রাজুয়েটদের জন্য অনেকগুলি ‘স্কুল’ আছে হার্ভার্ডে, যেমন ‘স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’, ‘স্কুল অফ পাবলিক হেল্‌থ’, ‘মেডিকাল স্কুল’ ইত্যাদি। আমরা পড়ি প্রথমটিতে, যেটি ছাত্রসংখ্যার দিক থেকে এই স্কুলগুলির মধ্যে বৃহত্তম।

এখানে নিয়ম হল, আন্তর্জাতিক ছাত্ররা যখন প্রথম আসে, তখন বর্তমান আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্য থেকে এক এক জনকে তাদের এক এক জনের ‘হোস্ট’ নিয়োগ করা হয়। ওই বড়দাদা-কাম-বন্ধুর মত, তারা এখানকার হালচাল, শহরের হালহকিকত, কোথায় ভাল সব্জিবাজার পাওয়া যায় ইত্যাদি খবরটবর দিয়ে নতুনদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। আর টার্ম শুরুর আগে তাই একটা ডিনারের আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি, এই হোস্ট এবং গেস্টদের মেলাতে। সেই ডিনারেই গেছিলাম সোমবার।

সেখানে আমাদের স্কুলের ডীন একটি সুস্বাগতম বক্তৃতা দিলেন। ‘এমন ইউনি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ ধরনের প্রারম্ভিক খেজুরির পর ভদ্রমহিলা পড়তে শুরু করলেন একগুচ্ছ তথ্য। পরিসংখ্যানের ছাত্র হিসাবে প্রত্যেক বছর ডিনারে আমি সেগুলিরই অপেক্ষায় আগ্রহে বসে থাকি। কি বললেন তিনি, শুনে নিই আগে।

জানালেন, এই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রায় হাজার দেড়েক। এবং, সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং অংশ – তাদের মধ্যে ছাত্রসংখ্যার বিচারে প্রথম দশটি দেশ। তালিকাটি এইরকম–
১. চিন
২. কানাডা
৩. কোরিয়া
৪. সিঙ্গাপুর
৫. ইউকে
৬. তুরষ্ক
৭. জার্মানি
৮. তাইওয়ান
৯. মেক্সিকো
১০. ভারত।

তালিকার প্রথম স্থানে, এবং ছাত্রসংখ্যায় দ্বিতীয়কেও বিশাল ব্যবধানে পিছনে ফেলে, চীন, আর অনেক নিচে, দশম স্থানে ভারত। উপমহাদেশের বাকি দেশগুলির কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম।

গত বছরও এই তালিকাটা খেয়াল করেছিলাম। প্রথম স্থানে যথারীতি চীন, আর ভারত ছিল ষষ্ঠ স্থানে। মাঝে ছিল মেক্সিকো, ইউকে, এমন কি সিঙাপুর বা তাইওয়ানের মত ক্ষুদ্র দেশও। তা গতবারের থেকে প্রতিনিধির সংখ্যায় আরো পতন হয়েছে ভারতের।

তাই ভাবছিলাম, এই অবস্থার কারণ কি? হার্ভার্ডের মত একটা ‘পপুলার’ ইউনিতে যথেষ্ট সংখ্যক ভাল ছাত্র পাঠাতে না পারা ভারতীয় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা হিসাবেই দেখতে হবে। এবং চীনের সাফল্য। যদিও জনসংখ্যায় দুজনেই কাছাকাছি। এইসব নিয়েই লিখে ফেললাম দু’কলম।

(২) –––––––––––––––––––––––––

একটা ডিসক্লেমার। এটা বর্ণবাদী পোস্ট নয়। আরশোলাভোজীদের গুষ্টিতে মার্কিনদেশ ছেয়ে যাচ্ছে ধরনের কোনো হাউকাউ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি জাতিসচেতন, কিন্তু জাতিবিদ্বেষী নই। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন ইউনির বন্ধুরা অনেকে মিলে কোনো পাবে গেলাম (যাই না যদিও)। পূর্ব এশিয়ার লোকেদের যে গড়ে অ্যালকোহল টলারেন্স কম সেটা মোটামুটি জানা। এখন যদি আমার চিনা বন্ধুকে বলি, ভাই, সামলাতে পারবি না, বেশি খাসনে, তাহলে সেটা জাতিসচেতনতা। আর যদি বলি, এই চিঙ্কি, সাদাচামড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাল টানার সাহস কি করে হয় তোর, তাহলে সেটা যত না গালি তার চেয়ে বর্ণবিদ্বেষ।

আরেকটা কথা। আমার ইউনি নিয়ে বেশি কিছু লিখতে চাই না, যাতে কেউ সন্দেহ না করে যে ঘ্যাম নিচ্ছে ছোঁড়া। কিন্তু মনে হল যে ইউনির সীমিত পরিপ্রেক্ষিতের বাইরেও এটা আলোচনা করার একটা ভাল বিষয় হবে। তাই এই পোস্ট।

(৩) –––––––––––––––––––––––––

বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটা উল্লেখযোগ্য তথ্য দেখে নিই।

যদি মোট ছাত্রসংখ্যা ধরা হয়, আন্ডারগ্র্যাড (কলেজ) আর গ্র্যাজুয়েট (ইউনি) মিলিয়ে, তাহলে গত বছর পর্যন্তও ভারত চীনের তুলনায় সামান্য এগিয়ে ছিল আমেরিকায় ছাত্র পাঠানোয় – এক লাখ তিন হাজার বনাম ৯৮ হাজার। এবং গত আট বছর ধরেই ভারত এতে এক নম্বরে।

অবশ্য তার আগের বছর – ২০০৮’এর তুলনায় ভারতীয় ছাত্রসংখ্যা বেড়েছিল ২০০৯’য়ে মাত্র ১ শতাংশ, আর চীনা ছাত্রসংখ্যা বেড়েছিল ২১ শতাংশ।

মজার ব্যাপার, এই সময়ে যদি শুধু গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ধরি, যাদের নিয়ে আমার প্রথম অংশটা, তাহলে ভারতীয় ছাত্র কমেছে ১৬ শতাংশ, আর চীনা ছাত্র বেড়েছে ঠিক ১৬ শতাংশ। কন্ট্রাস্ট!

এই তথ্যগুলি যে রিপোর্টে বেরিয়েছিল, তাদের ২০১০ সংখ্যা এখনও আসে নি। বরং এই বছর সম্পর্কে অন্য কিছু তথ্য দেখি
ভারতীয় গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের অ্যাপ্লিকেশনের হার এই বছরে বেড়েছে বটে, কিন্তু মাত্র ১ শতাংশ। অন্যদিকে চীন আবার বেড়েছে, ২০ শতাংশ। টানা পাঁচ বছর ধরেই নাকি তাদের বৃদ্ধিহার ডবল-ডিজিট।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, তুরষ্ক ইত্যাদি দেশেও এই দুবছরে অ্যাপ্লিকেশনের বৃদ্ধিহার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। তাই হার্ভার্ডের ওই প্রথম দশের তালিকায় ভারতকে টপকে তুরষ্ক উঠে আসতেই পারে।

ওই তালিকায় ভারতের পতনের আরো একটা সম্ভাব্য কারণ – ২০০৯’য়ে আমেরিকায় দশটি বৃহত্তম ইউনিতে আন্তর্জাতিক ছাত্র কমেছে ৬ শতাংশ। কিন্তু ভারতীয় ছাত্র কমেছে ১৭ শতাংশ!

(৪) –––––––––––––––––––––––––

২০০৬’য়ে গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদলে ভারতের অংশ ছিল ৩০ শতাংশ আর চিনের ২০। সেখান থেকে এই কয় বছরে ভারত তার লিড’টি খুইয়েছে।

ভারতীয় ছাত্ররা আমেরিকায় কম যাচ্ছে বলে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজন বেশ আনন্দিত হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এখন আমরা এখানেই উচ্চমানের পড়াশোনা করাতে পারছি বলেই ছাত্ররা আর বিদেশ যাচ্ছে না। কিন্তু সেটাই কি প্রধান কারণ? আরেকটু ভেবে দেখি।

আমেরিকায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট আর গ্র্যাজুয়েট পদ্ধতির একটা প্রধান ফারাক, আন্ডারগ্র্যাডে অর্থসাহায্য প্রায় নেই, ছাত্রদের টিউশন, থাকা-খাওয়া ইত্যাদি বিশাল ব্যয় নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়। তাই তারা রেস্তোঁরা-দোকান ইত্যাদিতে কাজ করে খানিকটা টাকা জোগাড়ের চেষ্টায় থাকে। কিন্তু তাদের বাবা-মার সাহায্য বা নিজেদের লোন লাগেই।

অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েটদের দুটো ভাগ – মাস্টার্স আর পিএইচডি। মাস্টার্সদেরও আন্ডারগ্র্যাডদের মতনই অবস্থা, নিজেদের খরচ নিজেদেরই চালাতে হয়। তবে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেলে ইউনিভার্সিটি থেকে, খানিকটা সুরাহা হয়।
আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিএইচডিতে ভর্তির সময় ডিপার্টমেন্ট চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় ফান্ডিং দেবার কথা। তাই তাদের জীবন অনেকটা আরামের। এমনকি মাস্টার্সে ভর্তি হবার সময় মোটামুটি ডিপার্টমেন্ট কথা দেয়, যে অচিরাৎ তুমি অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাবে কিছু একটা।

অর্থাৎ, কলেজে পড়তে গেলে পুরোটাই নিজের রেস্ত’র জোরে। আর ইউনিতে পড়তে গেলে খানিকটা হলেও ডিপার্টমেন্টের সঙ্গতি থাকতে হবে।

গ্রাজুয়েট ছাত্রসংখ্যায় ২০০৯’য়ে ওই বিশাল পড়তির কারণও এইটাই, যে আর্থিক মন্দার ফলে ইউনিগুলি এত সাহায্য করতে পারছিল না ছাত্রদের। ২০১০’য়েও সেই রেশ চলছে। যেমন ধরুন, আমাদের বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স ডিপার্টমেন্ট ২০০৮’য়ে নিয়েছিল ৬ জন আন্তর্জাতিক ছাত্র। ২০০৯’য়ে মাত্র ২ জন (আরো ২ জন আন্তর্জাতিক ছাত্র তাদের সরকারের টাকায় এসেছে, তাই এক্ষেত্রে ধরছি না), ২০১০’এ ১ জন।
এই সময়ে ডোমেস্টিক ছাত্রসংখ্যায় অত পড়তি হয় নি, কারণ ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউণ্ডেশন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্‌থ ইত্যাদিরা ওবামা সরকারের আমলে অন্তত গবেষণার টাকায় অত কাটছাঁট করে নি।

বড় ইউনিগুলোয়ও দেখেছি, অনেক আমেরিকান ছাত্রই কিন্তু খাজা। কয়েকজন দারুণ ব্রিলিয়ান্ট অবশ্যই আছে, কিন্তু বাকিরা তথৈবচ। একজন গড় আন্তর্জাতিক ছাত্রের তুলনায় দুর্বলতর। ব্যাপারটা আশ্চর্যের নয়। আমেরিকার ছাত্রদের হাতে সুযোগ, অপশন অনেক বেশি। ইউনিরাই তাদের ডাকে, কারণ একটা ছাত্র না দেখাতে পারলে এনএসএফ গ্রান্টটা তারা খরচা করবে কি করে? অন্যদিকে অল্প কয়েকটা ঘরের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।

যেখানে ফান্ডিং অতটা সমস্যা নয়, সেখানে কিন্তু এমনও হয়েছে যে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সংখ্যা আমেরিকান ছাত্রদের সংখ্যার তুলনায় বেশিই। গত বছরে হার্ভার্ড স্ট্যাটিস্টিক্স ডিপার্টমেন্ট নিয়েছিল নয় জন ছাত্র, তাদের মধ্যে ৫ না ছয় জনই চীনের। উপমহাদেশীয় একজনও না।

(৫) –––––––––––––––––––––––––

তাহলে দেখছি, ফান্ডিং পাওয়া যায় এমন সুযোগগুলিতে ভারতীয়রা পিছিয়ে পড়ছে। কেন?

আরো একটা উদাহরণ দিই। আমার বিষয় নিয়ে – পরিসংখ্যান। ভারতে ওই নিয়ে পড়াশোনার ভাল জায়গা একটাই – আইএসআই। অন্যান্য কলেজে যারা স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে পড়ে তাদের বিদেশে আসার হার তেমন ধর্তব্য না। এবার বেশিরভাগ ইউনিরই নিয়ম, একই জায়গা থেকে সাধারণত একজনই নেওয়া হয়, বড়জোর দুজন, কেঁদেকেটে তিন, যদি খুব বড় ব্যাচ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে তাদের। কিন্তু যেহেতু চীনে অন্তত চার-পাঁচটা বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ানো হয়, তাই একই হারে নিলেও তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

আরেকটা ব্যাপার হল গ্রেড ইনফ্লেশন। এটা আমেরিকার ইউনিগুলোতে খুব বেশি। তারা সবাই দেখাতে চায় যে আমাদের ছাত্ররা খুব ভাল, তারা ভাল ভাল জায়গায় চাকরি পাচ্ছে। আর সেটা পেতে গেলে ভাল নম্বর দরকার বইকি। তাই তারা তাদের ছাত্রদের ঢেলে নম্বর দেয়।
যখন আমি টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হই, তখন নিয়ম শুনেছিলাম, যে কেউ একটা প্রশ্ন একেবারে উত্তর না দিলে অন্য কথা, কিন্তু আবজাব কিছু লিখলেও অন্তত দশে পাঁচ দিলেই ভাল, মেরে কেটে তিন। সুযোগ পেলেই নম্বর দেবে, ছোটখাট ভুল নিয়ে একদম খুঁতখুঁত করবে না। করলেই ছাত্ররা খেপে যাবে, তোমাকে বাজে রেটিং দেবে, প্রফেসরের কাছেও কথা তুলতে পারে, তাঁরা নাখোশ হবেন; এমনিতেও বাজে রেটিং পেলে পরের সেমেস্টারে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাবে না।

এ বিষয়ে অ্যাগ্রেসিভনেস আন্ডারগ্র্যাডদের খুব বেশি, কারণ তারা হাজার হাজার ডলার তাদের ভবিষ্যতের পেছনে লগ্নি করেছে এই কলেজে এসে, প্রতিটি পাইপয়সার বিনিময়ে প্রতিটি নম্বর তারা পেতে চায় যাতে সবসেরা চাকরিটা তাদেরই হয়। আধখানা নম্বর কাটতে গেলেও তারা ছেড়ে কথা বলে না, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন।

এই গ্রেড ইনফ্লেশন উপমহাদেশের কলেজগুলোতে প্রায় হয়ই না। সেখানে প্রতিটা নম্বর যেন পরীক্ষকের সম্পত্তি, তোমাকে লড়াই করে আদায় করে নিতে হবে। অনেক কোর্স করেছি আমরা যেখানে হয়ত ৫৫’ই সর্বোচ্চ নম্বর। সেসব ক্ষেত্রে ইউনিতে অ্যাপ্লিকেশনের সময় বুঝিয়ে লিখতে হয়েছে যে কেন আমাদের ৫৫’কে ৯৫’র সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নইলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাত্র ৫৫ পেয়েছি দেখে আমাদের দাম অনেকটাই কমে যাবে তাদের কাছে।
চীনের কলেজগুলিতে, যা শুনেছি, তারা আমেরিকান ইউনিগুলোর চাহিদা সম্পর্কে অনেক বেশি পরিচিত, সেদিক সামলেই তারা কাজ করে। অতএব তাদের অ্যাডভান্টেজ তো হবেই।

(৬) –––––––––––––––––––––––––

আমার মতে, ভারতীয় ছাত্ররা যে আমেরিকায় কম যাচ্ছে, তার অল্প খানিকটাই মোহভঙ্গ, বেশিরভাগটাই হয় অ্যাডমিশন না পাওয়া বা অর্থসাহায্য না পাওয়া। এবং সুযোগসুবিধার দিক থেকে চীন যে খানিকটা এগিয়ে সেটা তো শুনলাম।

ওদের গ্রুমিং পদ্ধতির একটা উদাহরণ দিই। আমাদের যেমন স্কুলের ক্লাস ৩ কি ক্লাস ৫ এ বৃত্তি পরীক্ষা হয়, তেমন একটা পরীক্ষা হয় ওদেশেও। সেখানে যারা অস্বাভাবিক ভালো ফল করে, তাদের আলাদা করে বেছে নিয়ে যাওয়া হয় কিছু বিশেষ স্কুলে। সেখানে তারা সাধারণ স্কুলের পড়াশোনা করে না, আমাদের উচ্চমাধ্যমিকের সময়েই তারা শেষ করে ফেলে কলেজের পাঠক্রম। ১৭-১৮ বছর বয়সে তারা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত। এবং এদের তৈরীও করা হয় অনেকটা বিদেশি ইউনিগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে।

আমাদের ডিপার্টমেন্টেই একজন প্রফেসর আছেন, যিনি এই জিনিয়াস প্রোগ্রামের ফসল। ২১-২২ বছর বয়সেই তাঁর ডক্টরেট পাওয়া হয়ে গেছিল। আর বলতে গেলে মহিলাকে দেখতেও খারাপ না। আর কি চাইতে পারতেন তিনি? তাঁর দাদাও একই করেছেন। এঁদের বাবা তো একটা বই’ই লিখে ফেলেছেন, ‘হাউ টু রেইজ জিনিয়াস চিলড্রেন’ বলে।

কিন্তু এটা সকলের পক্ষে সুখকর হয় না। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কেবল মুখ গুঁজে পড়াশোনাই করে এসেছে, তার বাইরের জীবন সম্বন্ধে কিছু জানে না, সবদিকে ম্যাচিওরিটি আসে নি তাদের, এমন অবস্থায় বিদেশে এসে প্রায়ই তারা দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। নিজের ব্যাচে সবাই অনেক বড়, সমবয়সী কেউ নেই, সমবয়সীরা কলেজে গিয়ে ফুর্তিফার্তা করছে, তখন মোটিভেশন হারিয়ে ফেলে তারা। এই প্রোগ্রাম থেকে আমেরিকায় এসে পিএইচডি শেষ করতে অসুবিধায় পড়েছে, এমন দৃষ্টান্তও কম নেই।

এইবার আমরা একটা বৃহত্তর বিষয়ে ঢুকে পড়লাম – এই বিষয়ে চীন সরকারের বা সমাজের প্রভাব নিয়ে। সেটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অনেকটা আলোচনার দাবি রাখে। পরের পর্বে আসুক তাই।

চীনা বা ভারতীয় সরকারের যে এ বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ আছে, আমেরিকাকে ইমিগ্রান্ট দিয়ে বোঝাই করতে, তার জুজু দেখিয়ে বহু দিন থেকেই আমেরিকার নেতারা জনগণকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। যে সাবধান হও, নইলে কমিউনিস্ট লালচীনের লোকেরা এসে তোমাদের দেশটাকেই কব্জা করে নেবে। সব লাল হো যায়েগা। তা সেই প্রভাব সক্রিয় কি প্রত্যক্ষ, ভাবা যাবে পরের পর্বে, যদি আপনারা চান। আর এর মাঝে পান্ডবদার মত যাঁরা চীন ঘুরে এসেছেন, তাঁদের থেকে প্রত্যক্ষ্যদর্শীর মতামত শুনতে পেলেও ভাল হয়।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখা ভালো লাগসে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল ভাই। লেখা নিয়ে মন্তব্য পেলাম, বিষয়টা নিয়ে মন্তব্য পেলে আরো ভাল লাগত।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

HBS এ উল্লেখ করার মতো বাংলাদেশি স্টুডেন্ট কেনো যায় না/যেতে পারে না, সেটা নিয়ে আমার এলোমেলো ধারণাটা বলি।
আমার পর্যবেক্ষণ বলে, এখনো এখানকার বি-স্কুলের আন্ডারগ্রেড কোর্সগুলো থিয়রী বেইসড। কেইস এনালাইসিস, ক্রিটিক্যাল থিংকিং কম; মুখস্তবিদ্যা এখনো জিন্দা আছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে একটু একটু করে। টপ স্কুলগুলোতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি। বি-স্কুলে জিম্যাট স্কোর যেমন একটা বড় ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের জিম্যাট পরীক্ষার্থীদের এভারেজ স্কোর নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পেলাম না। তবে সম্ভবতঃ ছবিটা খুব উজ্জ্বল নয়। ইন্ডিয়ায় যেরকম জিম্যাট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনে অনেক ফোরাম আছে, বি-স্কুল এডমিশন নিয়ে তথ্য শেয়ারিং আছে, নেটওয়ার্ক আছে, যেটা বাংলাদেশে নেই। শোনা যায়, অনেক স্কলারশীপ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সন্তান, মেয়ে জামাই, চেয়ার মোছা তরুণ চামচা শিক্ষকদের ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। ফলে, তথ্যগত সীমাবদ্ধতার জন্য ভালো স্কুলে পড়ার মানসিক প্রস্তুতিতে একটা ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি ব্যাপার হলো - ভলন্টিয়ার সার্ভিসগুলো। বাংলাদেশে স্টুডেন্টদের মধ্যে এ চর্চা নেই বললেই চলে। অথচ গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তিতে এটাকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয় বলে জানি।

গ্রেড ইনফ্লেশন নিয়ে বাইরের স্কুলগুলো কীভাবে জাজ করে বলতে পারছি না। বাংলাদেশের কর্পোরেট সেক্টরে অন্ততঃ স্কুলের নাম দেখে জিপিএ-তে তাকায়। গত সপ্তায় ঢা/বি-র বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থীতে গ্রেডিং স্কেল পাল্টানোর প্রতিবাদে বেশ ভাংচুর করেছে বলে শুনেছি। এক শিক্ষক বন্ধু জানালো - গ্রেড দিয়ে চাকরী পাওয়া যায় না, এটা তাদেরকে বোঝানো সম্ভব হয়নি।

কৌস্তুভ এর ছবি

এই তো চাই। অনেক ধন্যবাদ শিমুল ভাই।

কি আর বলি। বাঙালীর ব্যবসাদক্ষতা আর কিছু বেঁচে নেই, এ নিয়ে তো প্রফুল্লচন্দ্র রায়ও দুঃখ করে গেছেন।

সজারু এর ছবি

ভালো লাগলো।
________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। আমি তো ভয়ে ভয়ে ছিলাম, চীন নিয়ে লেখায় চৈনিক বালিকাদের ফটুক না দিলে লোকের ভালো লাগবে কি না... চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

নম্বর নিয়ে যা লিখেছেন তা যে কী পরিমান সত্য, আমরা যারা বিদেশে এসে পড়ার চেষ্টা করছি,তাদের চেয়ে ভাল আর কে জানে! কেন যে আমাদের শিক্ষকরাই শুধু এই ব্যাপারটা বোঝেন না। প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো কিন্তু এটা ঠিকই খেয়াল রাখে। এ কারনেই পাব্লিক ভার্সিটিতে পড়তে না পেরে যারা প্রাইভেট ভার্সিটিতে যায় (সবাই নয়) তারাই বিদেশে সহজে পড়ার সুযোগ পায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, নামী, পুরোনো ভার্সিটিগুলো অধিকাংশই সরকারী, যেমন আইআইটি, আইআইএম, আইএসআই, যাদের বিদেশের ইউনিগুলোতে একটা পরিচিতি বা বলা চলে 'ব্র্যান্ড ভ্যালু' তৈরি হয়ে গেছে। অধিকাংশ প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্ররাই কিন্তু সেই সুবিধাটা পায় না।

আমি যেটুকু বুঝতে পারলাম, নম্বর বিষয়ে আপনিও বলছেন যে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো গ্রেড ইনফ্লেশন করে; সম্ভবত ওই প্রতিষ্ঠিত সরকারি ভার্সিটিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে। তলায় দেখছি রাগিব ভাইয়েরও তাই বক্তব্য। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও খানিকটা তাই বলে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই শুধু গ্রেড ইনফ্লেশন করে একটা আইআইএম ডিগ্রির সঙ্গে তাল মেলানো যায় না।

মূলত পাঠক এর ছবি

হার্ভার্ডের এই ঘটনাটা পড়ে মজা পেলাম।

কৌস্তুভ এর ছবি

আন্ডারগ্র্যাডদের জীবন সত্যিই বেশ ইন্টারেস্টিং। আমাদের দেশের অভ্যাসের সঙ্গে অনেকটাই তফাত, তাই মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর লাগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

লালে লাল হয়ে যাওয়াটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। চেং বেং এর চোটে ল্যাবে কাজ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। এরা কি নিয়ে এত বকবক করে তা তো আর বুঝি না , শুনে মনে হয় ঝগড়া করছে, আর আমি ল্যাব এ না কোন একটা চীনে বস্তির মধ্যে বসে আছি।
ভারতীয় ছাত্র কমে যাবার জন্য অন্তত আমার ইউনিতে আমি তাদের পারফর্মেন্সকে দায়ী করব। অন্তত গত ২-৩ বছরে আমার সঙ্গে সঙ্গে যারা এসেছিল, তাদের কে কেবল দেখেছি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে। রিসার্চের কাজে তো লবডঙ্কা বটেই, কোর্স ওয়ার্কেও ফাকি মেরে অন্যার হেল্প নিয়ে পার হয়, শেষ-মেশ প্রফেসরদের কাছে একরকম পায়ে ধরে কোন রকম ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে, আই-টি সেক্টরের বিশাল নেটওয়ার্ক ধরে চাকরি জুটিয়ে নেয়। গণ হারে এই ঘটনার ফলে এবার ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর-ও এবার কোন ভারতীয় কে সুযোগ দেন নি। ফলে চিঙ্কু দিয়ে ভরে গেছে ইঞ্জিনিয়ারিং।
আর বাংলাদেশী ছাত্র? তাদের টা আরেক কাহিনী।

-শিশিরকণা-

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, এদের এই অভ্যাসটা অন্যদের পক্ষে অস্বস্তিকর বটে। এটা নিয়ে পরের পর্বে লেখার ইচ্ছা আছে।

ভারতীয় ছাত্রদের প্রতি আমার আলাদা কোনো মোহ নেই, কিন্তু প্রত্যেকে এতটা ফাঁকিবাজ ছিল শুনে অবাক হচ্ছি।
আপনি কোন ইউনি, কোন ডিপার্টমেন্ট একটু বলবেন কি?
আর বাংলাদেশী ছাত্রদের কাহিনীটা শোনান না...

রাগিব এর ছবি

এর কি অন্য রকম ব্যাখ্যা হতে পারে? যেমন, ভারতে বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর চাকুরির সুবিধার কারণে কেউ এখন আর মাস্টার্স/পিএইচডি করতে বিদেশে না গিয়ে সরাসরি চাকুরিতে ঢুকছে?

নম্বরের ব্যাপারে #৩ এ অতিথি লেখক যা বলেছেন, তার সাথে একমত নই একেবারেই। বাংলাদেশের কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা হলো গ্রেড ইনফ্লেশন। কিন্তু সেই গ্রেড ইনফ্লেশনের জোরেই তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পেছনে ফেলছে ভর্তির ক্ষেত্রে, সেটা সত্যি নয়। প্রাইভেটের যেসব ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার পর্যায়ে দেখেছি, তাদের প্রায় সবাই যথেষ্ট মেধার জোরেই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা পেয়েছে, কোনো রকমের ইনফ্লেশনের জোরে নয়।

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | টুইটার

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

কৌস্তুভ এর ছবি

হতে পারে। সাম্প্রতিক রিসেশনের ধাক্কায় অবশ্য ভারতে চাকরির বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমেরিকার মত অতটা না হলেও।
আইএসআই এর ছাত্রদের, সংখ্যার স্বল্পতার কারণে, চাকরির বাজারে নিয়োগকর্তাদের কাছে আকর্ষণীয় ধরা যেতেই পারে। তাদেরও নিয়োগকর্তারা তেমন আশার বাণী শোনাতে পারে নি, বিদেশগামীদের সংখ্যা বেড়েইছে গত বছর।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সব লালে লাল হয়ে যাওয়ার তত্ত্বটা ঠিকাছে মনে হয়। কোথাও তারা লোক পাঠিয়ে কব্জা করছে, কোথাও সস্তায় বাহারী জিনিসপাতি দিয়ে। বাংলাদেশের বাজার ভরে গেছে চীনা প্রোডাক্টে। এটাও কি লালে লাল হয়ে যাওয়া না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

আম্রিকারও তাই অবস্থা। এমনকি 'আই লাভ আমেরিকা' ধরণের দেশাত্মবোধক পতাকা-স্মারকেরও সব তলায় লেখা 'মেড ইন চায়না'। তাই নিয়ে লোকজন হাসাহাসিও করে।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু ওয়েট করেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন আম্রিকানরা সব জার্সি পড়ে ঘুরছে, তলায় লেখা 'মেড ইন বাংলাদেশ" চোখ টিপি

কুটুমবাড়ি

রাগিব এর ছবি

ওয়ালমার্টের কাপড় চোপড়ের জায়গায় গেলে এখনই প্রায় সব কাপড়ে মেইড ইন বাংলাদেশ দেখা যায়।

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | টুইটার

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

নৈষাদ এর ছবি

ভাল লাগল আপনার বিশ্লেষণ।

পড়াশোনা শেষ করার পর এই আন্তর্জাতিক ছাত্রদের শতকরা কত অংশ যুক্তরাষ্ট্রে কী ধরণের কাজ করে কিংবা কত অংশ তৃতীয় কোন দেশে চলে যায় কিংবা কত অংশ নিজের দেশে ফিরে আসে এর একটা বিশ্লেষণ দেখতে খুব ইচ্ছে হয়।

গ্রেড ইনফ্লেশন উপমহাদেশে হয় কিনা জানিনা, বাংলাদেশে অন্তত পক্ষে হতে দেখেছি। তবে এই গ্রেড ইনফ্লেশন চাকুরী পাবার নিশ্চয়তা দেয় না, উলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

লেখাতে আরো মজার কয়টা বিতর্কের সূত্র আছে। আপনার পরবর্তী পর্বে অপেক্ষায় রইলাম।

কৌস্তুভ এর ছবি

হ্যাঁ, এই তথ্যটা খুব দরকারী। আমি সম্পর্কিত কিছু তথ্য পেয়েছি, পরের পর্বে আসবে।

কথাটা খুব সত্যি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ শেষমেষ তার ছাত্রদের নতুন জায়গায় পারফর্মেন্সেই নির্ধারিত হয়, তাদের ওখানে প্রাপ্ত আগের নম্বরে নয়।

বিতর্কের সূত্রগুলো কি, বলুন না, তাহলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে সুবিধা হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

অক্টোবরে আমার আবার বি শা ল দাওয়াত কুন্মিং, দালি, লিজিয়াং আর সাংগ্রিলাতে, ফিরে আসতে আসতে আমি লাল হয়ে যাবো

...........................
Every Picture Tells a Story

কৌস্তুভ এর ছবি

লাল হয়ে যাবেন? তাহলে সটান আমেরিকাই চলে আসুন না! এখানেই তাহলে আপনার সবচেয়ে বেশি কদর হবে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে।

এই গ্রেড ইনফ্লেশন উপমহাদেশের কলেজগুলোতে প্রায় হয়ই না। সেখানে প্রতিটা নম্বর যেন পরীক্ষকের সম্পত্তি, তোমাকে লড়াই করে আদায় করে নিতে হবে।

কথাটা মনে ধরলো।

১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কেবল মুখ গুঁজে পড়াশোনাই করে এসেছে, তার বাইরের জীবন সম্বন্ধে কিছু জানে না, সবদিকে ম্যাচিওরিটি আসে নি তাদের, এমন অবস্থায় বিদেশে এসে প্রায়ই তারা দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে।

এই বিষয়ে আগে কোথাও একটা লেখা পড়েছিলাম। অতিরিক্ত মেধাবীদের ক্ষেত্রে অনেক কারণেই মানুষ হিসেবে অন্যান্য সমস্ত সামাজিক কর্মকান্ডে খুবই পিছিয়ে থাকার অনুপাতটা বেশ বড়ই...

_________________________________________

সেরিওজা

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ সুহান ভাই।

একেই এরা অতিরিক্ত মেধাবী, সমাজের আর পাঁচজনের থেকে অনেকটা আলাদা, তারপর বলতে গেলে এদের ছোট থেকে আর্টিফিশিয়ালি গ্রো করে হঠাৎ বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা তো হতেই পারে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শেষমেষ আর রক্ষা হইল না। চীন নিয়া সচলে লেখা থাকলেই আমি ডরে থাকি যদি লোকে আমার মতামত চাইয়া বসে! আপনি সব কিছু ঠিক্‌ঠাক্‌ লিখে শেষে আমার মতামত চাইয়া বসলেন!

১. লেখা ভালো লেগেছে, সিরিজ হচ্ছে জেনে আরো ভালো লাগলো।

২. বিশ্লেষণ চমৎকার, কিছু কিছু বিষয়ের সাথে কিঞ্চিত দ্বিমত আছে (যেমন একটা রাগিব বলে দিয়েছেন) - তবে তা ব্যাপার না। এটাতো আপনার মত তাই না।

৩. চীনারা ঘর ছাড়তে শুরু করেছে বহু বহু বছর আগে। বিদ্যা শিক্ষার জন্যও মার্কিন মুলুক তাদের পছন্দ বহু বছর ধরে। আমার এক চীনা সহকর্মীর মেয়ে চঙচিঙের (Chongqing) এক মার্কিনী স্কুলে পড়তো। মার্কিনী ধারার সে স্কুলে গরমের ছুটিতে ছেলে-মেয়েদের আমেরিকার নানা জায়গা ঘুরানো ছাড়া একটা আমেরিকান পরিবারের সাথে চার সপ্তাহ রাখা হতো। স্বাভাবিকভাবে ঐসব স্কুলের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে চাইবে। এবং আমেরিকাতে তাদের adaptability আমাদের চেয়ে ভালো হবে। এবার বলুন তো দেখি এমন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পিছনে কি মার্কিনী মাথা কাজ করেছে নাকি চীনা মাথা?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ পাণ্ডবদা। কিন্তু অনুরাগী-পাঠকদের অত্যাচার কি এত সহজে এড়ানো যায়?

হ্যাঁ, অধিকাংশই আমার মত বা অভিজ্ঞতা, তার অনেকটাই অন্যদের থেকে শুনে বা পড়ে। তবে কি কি নিয়ে দ্বিমত আছে একটু বলুন না।

এই ধরণের মার্কিনী স্কুলগুলির অনেক ছাত্রই আমেরিকা আসে বুঝতে পারছি, কিন্তু আগত মোট ছাত্রসংখ্যার কি তারা একটা বড় অংশ, নাকি নগণ্য?

শেষে গিয়ে আপ্নিও এমন একটা ধাঁধা দিলেন? কইতেপারিনা। আপ্নেই উত্তরটা দেন না।

তাসনীম এর ছবি

যখন আমি টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হই, তখন নিয়ম শুনেছিলাম, যে কেউ একটা প্রশ্ন একেবারে উত্তর না দিলে অন্য কথা, কিন্তু আবজাব কিছু লিখলেও অন্তত দশে পাঁচ দিলেই ভাল, মেরে কেটে তিন। সুযোগ পেলেই নম্বর দেবে, ছোটখাট ভুল নিয়ে একদম খুঁতখুঁত করবে না। করলেই ছাত্ররা খেপে যাবে, তোমাকে বাজে রেটিং দেবে, প্রফেসরের কাছেও কথা তুলতে পারে, তাঁরা নাখোশ হবেন; এমনিতেও বাজে রেটিং পেলে পরের সেমেস্টারে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাবে না।

হুম, নম্বর বেশি দিলে টিএর নামে কেউ অভিযোগ করে না। এই সত্য বোঝার পরে বুদ্ধিমান হয়েছিলাম।

চিনাদের আধিক্য চোখে পড়ার মত এখন। আমি গ্র্যাডস্কুলে ছিলাম ১৪ বছর আগে তখন ভারতীয়ও কিছুটা হলেও বেশি ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে চিনারাই অধিক সংখ্যায় আছে সেটা আমি কোন পরিসংখ্যান ছাড়াই লক্ষ্য করেছি, অফিসের বিভিন্ন টিমে কো-অপ পজিশনগুলোতে চিনাদের সংখাবৃদ্ধিতে। এক ভারতীয় বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম...সে বলল যে মার্কিন ভিসার জটিলতা আছে, গ্রিন কার্ড নাকি এখন মরণোত্তর সম্মাননা, মার্কিন দেশে পড়তি চাকরির বাজার আর ভারতে চাকরির ভালো অবস্থা এইসব নানান কারণেই নাকি ভারতীয় ছাত্ররা কম আসে আমেরিকাতে।

এইগুলো যদি কারণ হয় তবে চিনাদের সেটা এফেক্ট করে না কেন? ভিসা আর গ্রিন কার্ডের জটিলতা চিনাদেরও আছে। চাকরির বাজারতো সবার জন্যই সমান। নাকি ওদের মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন, অর্থ নয়? তবে আরেকটা ব্যাপার, চিনাদের ইংরেজি নিয়ে প্রতিবন্ধকতা কমছে, নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বেশ ভালো ইংরেজি বলে। এটা পনের-বিশ বছর আগের প্রজন্মের জন্য সাংঘাতিক সমস্যার ব্যাপার ছিল এটা। হয়ত বর্তমান প্রজন্ম এই কারণের আরো বেশি মার্কিনমুখি হয়েছে।

অনেক কিছুই বললাম। কিন্তু এই বিষয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন আপনি...গবেষণা করে বের করুন কেন লাল দেশের লোক পুঁজিবাদের অভিমুখী হচ্ছে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

দারুণ বলেছেন।

এইগুলো যদি কারণ হয় তবে চিনাদের সেটা এফেক্ট করে না কেন?

এই প্রশ্ন আমারও। তবে আমেরিকার চীনের প্রতি সহমর্মিতা সম্ভবত ভারতের থেকে বেশী, এবং তারা কমিউনিস্ট দেশ বলে সেটা খানিকটা আশ্চর্যজনক, অন্তত উপর থেকে।

একটা কথা বলতে পারবেন? আপনার যে ভারতীয় বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তিনি নিজের পরিপ্রেক্ষিত থেকেই বলুন বা এক শ্রেণীর ছাত্রের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, তিনি কি পিএইচডি ছাত্রদের কথা বলছিলেন নাকি যারা নিজেদের পয়সায় পড়তে আসে তাদের? দুটো ক্ষেত্রে কিন্তু অবস্থা এবং তদ্‌নির্ভর মোটিভেশন অনেকটাই আলাদা...

হ্যাঁ, ধরে সবাইকে নম্বর দিয়ে দেওয়াই হয়ত সবচেয়ে সহজ সমাধান। কিন্তু টিএ করতে গিয়ে নানারকম অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে, নীতিগত বিষয় নিয়েও দ্বিধায় ভুগতে হয়েছে। এ নিয়ে পরে লিখব একসময়।

তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছি আমি? খাইসে! আমার চৈনিক বান্ধবীরা আড়ি করে দেবে যে তাহলে!

ডাক্তার এর ছবি

ডাক্তাররাও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে কি? প্রাইভেট মেডিকেল এর ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার প্রশ্ন না তুললেও নম্বর এর প্রশ্নটি থাকে। ঢাকা বা সালিমুল্লাহ মেডিকেল এ যারা পড়ে তাদের মেধা নিয়েও আশা করি কার সন্দেহ থাকার কথা নয়। আমি যখন পাশ করি (১০ বছর আগে) তখন আমাদের পাশ নম্বর ছিল৫০%। ৬০% নম্বরকে ভাল ফল ধরা হত। অথছ বাইরের কোন ইউনিতে আবেদনের সর্বনিম্ন নম্বর এটা। এমনকি ভারতের ছাত্রছাত্রীদের নম্বর আমাদের চেয়ে বেশি। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলি এ বিষয়ে খেয়াল রাখে। আমি অবশ্যই বলব এটা ভাল। কারন আপনি একটা জায়গায় ভর্তি হতে পারলেই না আপনার মেধার প্রমাণ রাখবেন, না পারলে আর রাখবেন কিভাবে? এ কারণে পরবর্তীতে পাশ নম্বর এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে এটা ৬০%।
চীনাদের নিয়ে আর কি বলব, আচ্ছা এটা বলুন তো, জাপানিদের কেন এভাবে দেখা যায় না? অরা বিদেশে পড়া বা বিদেশ যাওয়ায় আগ্রহী নয়?

ami এর ছবি

বেশি দিন না ,৩ বছর ধরে জাপান এ থেকে এইটুকু বলতে পারি,জাপানীজ রা খুব বেশি নাক উচুঁ। ওরা আমেরিকা -কানাডা যায়-কিন্তু ইংলিশ শিখতে, আর আনন্দ করতে।

অই পড়াশুনা ওদের ধাতে সয় না। যারা একটু বেশি মাথা ভাল টাইপ,তারা টোকিও ইউনি অথবা ওয়াসেদা দিয়ে চালায়ে দেয়। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল -জাপানীজ রা এমনিতেই ভালো,সমস্যা এক্টাই-আজীবন জাপানীজ এ পড়ে,পরে গিয়ে গবেষনায় ঝামেলা খায়। বলে কিছু বুঝি না। আর খুবই অল্প সংখ্যক মানূষ বিজনেস ডিসিপ্লিন এ আগ্রহ আছে, তারা keio কিংবা নিজের বাড়ির আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে চালায়ে দেয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার জাপানের অভিজ্ঞতা লিখুন না, চীনের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট হবে, পড়তে দারুন লাগবে।

মুজতবা আলি বলেছিলেন, যখন অন্যান্য পথের অভাব থাকে না, আর্থিক অনিশ্চয়তা বড় প্রভাব ফেলে না, তখন মানুষ শুধুশুধু উচ্চশিক্ষার দিকে যেতে চায় না। উনি যতদূর মনে পড়ছে জার্মানীর বিভিন্ন সময়ের ট্রেন্ড থেকে এই সিদ্ধান্তটা করেছিলেন।
হয়ত সে কথাটা জাপানের ক্ষেত্রেও সত্যি। নারায়ণ সান্যাল তাঁর 'জাপান থেকে ফিরে'তে লিখেছিলেন, ওরা একটা মোটা মাইনের চাকরি, একখানা বাসা, গাড়ি ইত্যাদি নিয়েই খুশি থাকে, সেটাই মোটামুটি ওদের লক্ষ্য। ওরা জীবনযাত্রায় আমেরিকাকে অনেকটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করে, তবে সেখানে যাবার জন্য অত উদ্‌গ্রীব না।

ami এর ছবি

কৌস্তুভ দা,

"নারায়ণ সান্যাল তাঁর 'জাপান থেকে ফিরে'তে লিখেছিলেন, ওরা একটা মোটা মাইনের চাকরি, একখানা বাসা, গাড়ি ইত্যাদি নিয়েই খুশি থাকে, সেটাই মোটামুটি ওদের লক্ষ্য। "

কথাটা হাড়ে হাড়ে সত্যি-এখন পর্যন্ত। জাপানীজ দের কাছে জীবন মানে -তিন "O"- Osake,Onna,Okane- মদ,নারী আর অর্থ। তাই এখানে কোনো ইনোভেশন এর চর্চা নাই,আছে কাইযেন -মানে যা আছে শুধু তার উপর ঊন্নয়ন চালায়ে যাও।

আর লক্ষ্য করে দেখবেন-জাপানে স্বজাতি পিএইচডি কম-কারণ একটা ভালো চাকরি পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ,বড় জোর একটা মাস্টার্স। মাস্টার্স করলে বেতন আবার বেশি দিতে হয়,তাই অনেক কোম্পানী মাস্টার্স দের নিতে চায় না। তো দেখা যায় -আই-ঢাই করে পাশ করে সেই একটা চাকরী,তার জন্য আবার বিদেশ যাওয়ার কি দরকার চোখ টিপি

তবে দিন বদলাচ্ছে,জাপানীজ প্রোডাক্ট এর উচ্চ মূল্য কারনে এখন ওদের রপ্তানী আয় ধরা চোখ টিপি ,তাই আউটসোর্সিং এর দিকে আগাচ্ছে,সেখেত্রে চীন,ভারত আর ব্রাজিল এখন পরবর্তী টার্গেট। আর এর জন্য আংরেজী কিংবা চাইনীজ না পারলে চাকরী পাওয়া বেশ মুশকিল । আর তাই এখন আস্তে আস্তে এক্সচেঞ্জ ছাত্র হিসেবে জাপানীজ রা একটু একটু করে ঘর থেকে বের হচ্ছে।

আর ভাই,এটুকু লিখতে লাগছে মাত্র ৪৫ মিনিট,তাই আপাতত কমেন্ট দিয়ে আছে,সুদূর ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি ঃ-)

কৌস্তুভ এর ছবি

নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই... যদি আপনার লেখা পড়ে মনে হয় আমি ডাক্তারদের প্রতি পেশাবিদ্বেষ করছি তাহলে দুঃখিত দেঁতো হাসি

জাপানিদের অন্তত আমাদের ইউনিতে অনেকই দেখা যায়। সংখ্যায় প্রথম দশে না থাকুক, খারাপ না। আসলে ওদের জনসংখ্যা তো চীনের দশ ভাগের এক ভাগ। তাই তুলনামূলক কম তো হবেই। আর তাছাড়া ওদের পরিকাঠামো অনেক উন্নত, বিদেশে যাবার দরকার বা আকর্ষণটা কম হতেই পারে। এই ধরুন না, ইউরোপের অনেক ছাত্রই আমেরিকা যায়, কিন্তু এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসাবে। ওদের ব্যাপারটা এমন, যাই একটু ঘুরে আসি, দেখি ওখানে কেমন হালচাল। আর আমরা তৃতীয় বিশ্বের লোকেরা আমেরিকায় পড়তে যাওয়াকে বিশাল ভাগ্যের মত মনে করি। জাপানিদের মানসিকতা বোধহয় অনেকটা ইউরোপীয়দের মত।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

জ্ঞান অর্জনে প্রয়োজনে চীন দেশে যাওয়ার হাদিসটা তো এখন ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে রে। চীনার দেখছি হাজারে বিজারে আম্রিকা যাচ্ছে।
-
বিষয়টির সঙ্গে অর্থনীতির যোগাযোগটা বোধহয় জড়িত। চীনে এখন যে অর্থনীতির শক্তিশালী উথান, সেখানে ইংরেজী জানা এবং ইংরেজীতে পড়ুয়াদের বিশাল কদর। দশ বিশ বছর আগেও কি চীনারা এই হারেই বিদেশে পড়তে গেছে? পরিসংখ্যান কী বলে?
-
নম্বর নিয়ে কী বলব, ছোটো বেলা থেকেই আমাদের দেশে কঞ্জুসি। টেস্ট পরীক্ষায় বাংলা ১ম পত্রে ৩০ পেয়েছিলাম, ফার্স্টবয়ই একমাত্র পাস করেছিল। ও পেয়েছিল ৩৪! এই নম্বরদাতার নাম সিরাজুল ইসলাম, আমরা ডাকতাম নানী স্যার।
-
লেখা ভালো হইছে। এরকম লেখা পড়তে চাই। সপ্তম পঞ্চতারকটা তাই দিয়ে গেলাম।

কৌস্তুভ এর ছবি

জ্ঞান অর্জনে প্রয়োজনে চীন দেশে যাওয়ার হাদিসটা তো এখন ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে রে। চীনার দেখছি হাজারে বিজারে আম্রিকা যাচ্ছে।

দেঁতো হাসি

যা দেখলাম তাতে তো চীনাদের আমেরিকা যাওয়ার হার হুশ হুশ করে বাড়তেছে। আগের তুলনায় এখন বিদেশযাত্রা সহজতর অবশ্যই, কিন্তু তাদের বৃদ্ধির হার অন্যতম বেশি।
বাইরে যাবার মতই আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গিয়ে থেকে যাওয়া। এই নিয়ে নৈষাদ ভাই একটা দামী প্রশ্ন করেছেন।

তারা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এখন কেউ একটা ভাল টেলিস্কোপ দিলেই ফিজিক্সেরও কিছু ভাল লেখা নামায়ে ফেলি। চোখ টিপি

অনুসন্ধিৎসু     এর ছবি

আমি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশুনা করছি চিনের সাথে এর নৈকট্য থাকার কারণে বলা ইউনিগুলিকে বলা যায় চিনা মহল্লা, কয়েকটা বিষয় চিনাদের ফেভার করে এক ওয়ান চাইল্ড পলিসি হওয়ার কারনে মা বাবারা এক সন্তানের পিছনে পয়সা বিনিয়োগ করতে কার্পণ্য করে না , তাদের পরিশ্রম করার সামর্থ্যও অনেক বলা যায়, সে তুলনায় সাউথ এশীয়ানরা মেধাবী হলেও সব সময় শর্টকাট মারার ধান্ধায় থাকে

আমেরিকার গ্র্যাজুয়েট লেভেল ইস্কলারশিপে লেখাপড়া করবার সুযোগ কেমন ? ( বিশেষ করে পলিটিক্স বা সমাজ বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে) এ নিয়ে যদি পরবর্তীতে কখনও লিখতেন তবে কৃতজ্ঞ থাকব।

কৌস্তুভ এর ছবি

অস্ট্রেলিয়াতেও এই অবস্থা? আচ্ছা বলুন তো, ওখানে উপমহাদেশীয় ছাত্র খুন হওয়া নিয়ে এত ঝামেলা, চীনা ছাত্রদের কি কিছু করে না?

আমেরিকাতে গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়তে আসার পদ্ধতি কি সেটা নিয়ে হয়ত লিখতে পারি, কিন্তু সুযোগ কেমন, ফান্ডিং কেমন দেয় সেটা বিশাল ভাবেই বিষয় নির্ভর। আর আপনি যে লাইনগুলোর কথা বললেন সেগুলোর থেকে আমি বহুদূরে। অন্য কোনো সচল এ বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবেন হয়ত।

অনুসন্ধিৎসু এর ছবি

চিনাদের অস্ট্রেলিয়া অভিবাসনের ইতিহাস অনেক পুরানো প্রথম দিকে তারাও অনেক রেসিজমের স্বীকার হয়েছে তবে কালের পরিক্রমায় তা এখন আর নেই এখন আপাতত এদের টার্গেট ভারতিয় কয়েকদিন পড়ে হয়তো অন্য কোন গ্রুপ তাদের জায়গা করে নিবে। তবে ভারতিয় মিডিয়া যে ভাবে sensational করে জিনিসটা প্রকাশ করে পরিস্থিতি সেরকম খারাপও না

ওডিন এর ছবি

পাঁচ আঙ্গুল! দারুণ সব পয়েন্ট তুলে এনেছেন।

সেখানে প্রতিটা নম্বর যেন পরীক্ষকের সম্পত্তি, তোমাকে লড়াই করে আদায় করে নিতে হবে।

এখানে আন্ডারগ্র্যাড মেডিকেলে এখন ৬০% নম্বরকে পাশ মার্ক হিসেবে ধরা হয়েছে- পোলাপান এখন অন্ততপক্ষে কোথাও অ্যাপ্লাই করতে পারবে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

কৌস্তুভ এর ছবি

নর্সদেবতার পাঁচটি আঙুল যে আমার গালের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে লেখার প্রতি হয়েছে, এতেই দারুণ কৃতজ্ঞ হলাম। দেঁতো হাসি

উপরে এক অতিথি লেখকও দেখলাম মেডিকেলের সম্বন্ধে একই কথা বলেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ পোস্ট! এটাকে শ্যেনদৃষ্টিতে রাখতে হবে,একদিন দরকার হলেও হতে পারে কীনা!!

অদ্রোহ।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধইন্যবাদ। এদিকে আসবার প্ল্যান করতেছেন নাকি?

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই, দারুণ লাগল পড়তে। তা, এটাই কি কচি লেখকের নমুনা? চোখ টিপি

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ কুটুমবাড়ি ভাই। অনেকদিন বাদে আপনারে দেখলাম।

আমি বয়সে কচি, অভিজ্ঞতায় কচি, সচলে লেখালিখিতে কচি, নিজেকে কচিলেখক ছাড়া আর কি বলব?
আমি বরং আশা করেছিলাম, সাইফ সঈদ ভাইয়ের মত অভিজ্ঞ লোকজন, যাঁরা আমেরিকায় অনেকদিন ধরে আছেন, তাঁরা এতদিনের অভিজ্ঞতায় কোনো ট্রেন্ড বা প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছেন কি না তাই নিয়ে কিছু বলবেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ওনাকে দেখছি না। মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন লেখা। আমি গত কালই আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে চীনাদের সব জায়গায় ছড়িয়ে যাওয়া নিয়ে ডিসকাস করছিলাম। কোথায় নেই ওরা। আমার ল্যাবে আমরা ১২জন, তার মধ্যে ৭জন চাইনিজ এবং সবাই স্কলারশীপ নিয়ে পড়ছে। ফ্যাকাল্টিতেও অনেক চাইনিজ টিচার, এমনকি বিভিন্ন এ্যাডমিনিস্ট্রিভ পজিশনেও চীনারা আছে। অনেক সময় দেখা যায়, ওরা ফান্ডিং পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রিফারেন্স পাচ্ছে। ওরা আসলেই সর্বত্র।

আকাশনীলা

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তা আপনাদের ডিসকাসনে এর কারণটারণ কি বুঝলেন একটু বলেন না, আপনাদের অভিমতটাও শুনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

কারন যা বের হলো, তার কিছুটা আমি আমার কমেন্টে দিয়েছি। এডমিনিস্ট্রিভ পোষ্টে এমনকি স্কলারশীপ এর ব্যাপারে যারা শর্টলিষ্ট করে, ডিসিশন নেয় তাদের অনেকে চীনা। তাই জাতিগত একটা প্রিফারেন্স তারা পায়।

আর চীনা স্টুডেন্টদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের কে অনেক ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়, ওদের সরকার এই ব্যাপারে একটা মুখ্য ভুমিকা পালন করে। শুধু চীন না, আমার ইউনিতে মালয়েসিয়ান স্টুডেন্টও অনেক বেশি, আর এটাও ওদের সরকার স্কলারশীপ দিয়ে পাঠাচ্ছে বলে।

আর ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের প্রায় ২০ভাগই তো ওরা। টিউটর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, চীনারা অনেক চেষ্টা করে ভালো করতে এবং বেশির ভাগ পেপারে ওরাই টপ। জামা জুতা কেনা নিয়ে ব্যস্ত চীনা যেমন আছে, অধ্যবসায়ী চীনাদের সংখ্যাটাও কম না।

আকাশনীলা

বাউলিয়ানা এর ছবি

বাহ্‌ দারুন একটা পোষ্ট।

এখানকার ছাত্র/ছাত্রীদের অবস্থা নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম, পোষ্ট করা হয়নি যদিও। আমারটা অবশ্য একটু ভিন্ন পার্স্পেক্টিভে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ বাউলিয়ানা।

আজকে যে লেখাটা পোস্ট করলেন, সেইটার কথাই বলছেন বোধহয়?

বাউলিয়ানা এর ছবি

হ্যা সেটাই।

হাসি

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার লেখা।

কোন এক বিচিত্র কারণে চীনা বালিকারা আমাকে খুব ভালু পায়। তবে আমি ওদের ভালু পাই না দেখে আমাদের ভেতর কোন দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি সাধিত হয় না। হাসি


কি মাঝি, ডরাইলা?

কৌস্তুভ এর ছবি

ধইন্যবাদ মিম্বর সাব।

তা চিনা বালিকারা যখন যখন আপনাকে এত ভালুই পায়, তখন এই চামে আবিয়াতা সচলদের জন্য একটু তদবির করতে পারেন্না? মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।