বগডুলের কিচ্ছা। ০২

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: সোম, ০৮/০২/২০১০ - ১:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বগডুলের মোটেও ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না। তার সারাদিন বস্তার ভেতরে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ক্ষিদের জ্বালায় সে ঘুমাতে পারে না। তার তো মাবাপ কেউ নাই। কে তাকে খাবার দেবে। তাই তাকেই খাবারের জন্য তাকে কামে যেতে হয়

তার কামটাও খুব কষ্টের। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে অনেক উপরে তাকে মাথায় করে ছাদ ঢালাইয়ের সিমেন্ট বালু তুলতে হয়। সূর্য উঠা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত ইট বালু বয়ে তুলে দিলে ঠিকাদার তাকে খাবার দেয়

একদিন ভোরবেলা খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বগডুলের মোটেও ইচ্ছা করছিল না কামে যেতে। তবুও একবার সে জোর করে উঠে বসে বস্তার ভেতর। কিন্তু বস্তা থেকে উঁকি দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখে আবার ধুপ করে শুয়ে পড়ে। কামের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বগডুল আবার উঠে বসে। কিন্তু বস্তা থেকে উঁকি দিতেই আবার তার ঘুমাতে ইচ্ছা করে। সে ধুপ করে শুয়ে পড়ে আবার

এভাবে কয়েবার করে তার খেয়াল হয় কামে না গেলে ঠিকাদার তাকে খাবার দেবে না। সে নিজেকে জাগানোর জন্য নিজের চুল মুঠি করে ধরে একটা ঝাঁকি দেয়- উঠ ব্যাট উঠ। কামে যা কামে যা কামে যা

চুলে ধরে নিজেকে টেনে তুলতেই বগডুল দেখে বস্তার ভেতরে তার পেছন দিকে কী যেন একটা তাকে ধাক্কা দিচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে অবিকল তার মতো আরেকটা বগডুল বসে আছে বস্তার ভেতর। বগডুল ভয় পেয়ে যায়। সে এক লাফে বস্তা থেকে বের হয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু পরে দেখে বস্তা থেকে নকলা বগডুল আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে। বগডুল দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে নকলাকে। নকলা বের হয়ে এদিক সেদিক তাকায়। ঠিক সে যেমন করে বস্তা থেকে বের হয়ে। তারপর কারো সাথে কোনো কথা না বলে নকলা হাঁটতে থাকে যে দালানটার কাজ হচ্ছে সেদিকে। বগডুলও আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে নকলার পেছন পেছন। বগডুল দেখে দালানটার সামনে গিয়ে নকলা সিমেন্ট বালি নেবার গামলা নিয়ে বালি ভরতে থাকে। বগডুল দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। দেখে নকলা সারাদিন একটা কথা না বলেই কাজ করে। খাবারের সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে খাবার নেয়। তারপর খাবারটা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বগডুলের দিকে এগিয়ে আসে। খাবারটা বাড়িয়ে দেয় বগডুলকে। বগডুলের পেটে তখন প্রচণ্ড ক্ষিদে। সে গপাগপ সবগুলো খাবার খেয়ে নেয়। খাবার শেষ করে তাকাতেই দেখে আশেপাশে নকলা নেই। সে নকলাকে খুঁজতে খুঁজতে দালানের সামনে যেতেই ঠিকাদারের সামনে পড়ে যায়। তাকে দেখে ঠিকাদার বলে উঠে- আজকে তোর কামে খুব খুশি আমি। যা বাড়ি যা। কাল সকাল সকাল আসবি

বগডুল বুঝে যায় নকলাকে ঠিকাদারও চিনতে পারেনি। কিন্তু সে গেলো কই?
ভাবতে ভাবতে আর নকলাকে খুঁজতে খুঁজতে বগডুল আবার এসে বস্তায় ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু পরের দিন সকালে উঠে তার খুব দুঃখ হয়। কেন যে নকলাকে যেতে দিলো। নকলা থাকলে তো আজকেও তাকে কামে যেতে হতো না। মনের দুঃখে সে নিজের চুল মুঠি করে একটা টান দেয়। সাথে সাথে দেখে পেছন দিক থেকে তাকে কেউ ধাক্কা দিচেছ। বগডুল ফিরে দেখে নকলা। সে আজ চুপচাপ বসে থাকে। দেখে নকলা আস্তে আস্তে বস্তা থেকে বের হয়ে কামে যাচেচ্ছ। বগডুল কতক্ষণ হা হয়ে বসে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ পেটের ক্ষিদায় তার ঘুম ভাঙে। তার খেয়াল হয় এখন ঠিকাদারের খাবার দেবার সময়। সে দৌড়ে বস্তা থেকে বের হতে গিয়ে দেখে দেখে বস্তার সামনে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নকলা। সে নকলার হাত থেকে খাবার নিয়ে গপাগপ খেয়ে ফেলে। তারপর মুখ তুলতেই দেখে নকলা নেই

মনের দুঃখে বগডুলের আবারও চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হয়। চুল ধরে টান দিতেই দেখে পেছনেই নকলা দাঁড়িয়ে আছে। বগডুল এবার এমনি এমনি নিজের চুলে একটা টান দেয়। সাথে সাথেই নকলা নাই হয়ে যায়। আবারও নকলাকে নাই করে দেবার দুঃখে বগডুল চুলে টান দেয়। দেখে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে নকলা। সে এবার মজা পেয়ে যায়। একবার চুলে টান দেয়- নকলা আসে। আরেকবার টান দেয়Ñ নকলা নাই

খুশিতে বস্তায় ঢুকে এক ঘুম দিয়ে সকালে শুয়ে শুয়ে নিজের চুলে একটা টান দেয় বগডুল। সাথে সাথে নকলা বস্তা থেকে বের হয়ে কামে চলে যায়। বগডুল আবার ঘুমিয়ে পড়ে

তারপর একদিন বগডুল গিয়ে অন্য ঠিকাদারের সাথে নগদ টাকার চুক্তি করে। পরের দিন নকলা গিয়ে সেই ঠিকাদারের কাজ করে বগডুলকে টাকা এনে দেয়। তারপর আরেকদিন িিগয়ে বগডুল আরেক ঠিকাদারের সাথে নাইট ডিউটির চুক্তি করে। এখন নকলা সকালে এক ঠিকাদারের আর রাতে আরেক ঠিকাদারের কাম করে। আর বগডুল বস্তার ভেতরে শুয়ে খালি ঘুমায় আর ঘুমায়
২০১০.০২.০৭ রোববার


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

লীলেন ভাই।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

টাক পড়া বগডুল কি উইগ ধরে টান দিবে দেঁতো হাসি

আপনার এই সিরিজ পড়ে খুব মজা পাচ্ছি লীলেন্দা।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

টাকুদের জন্য চান্দিতে টোকা দেবার নিয়ম

সাবিহ ওমর এর ছবি

নিকেলোডিওনেরস পারম্যান কার্টুনটা দেখসেন? এরকমই ব্যাপার-স্যাপার খাইছে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দেখিনাই
পাইলে দেখবাম

হিমু এর ছবি
শাফক্বাত এর ছবি

আহা আমার চুলগুলা কেন যে নকলা নিয়ে আসেনা!!
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এতো ফ্রয়েডুলীয় সিরিজ হয়ে যাচ্ছে... মজাক পাইতাসি...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

সিরিজে মজাক পাইতাছি দেঁতো হাসি

বগডুল নামটাই ভালা পাইছি ।

বোহেমিয়ান

তারানা_শব্দ এর ছবি

আমার একটা নকলা লাগবো লীলেন ভাই! মন খারাপ( মন খারাপ(

আমার সকালে ক্লাস এ যাইতে ইচ্ছা করে না...আর নাস্তা করতে ইচ্ছা করে না। মন খারাপ
এই যেমন আজ যদি আমার একটা নকলা / তকলা থাকতো তাইলে আজকের ক্লাসটা মিস হইতো না। মন খারাপ

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি নিজেই নকলা খুঁজি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

নকলা ... মন খারাপ

-------------------------
ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলোনা
এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলোনা!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যাপক মজার গল্প। ধন্যবাদ লীলেন ভাই।

=========
কামরুজ্জামান স্বাধীন।

ওডিন এর ছবি

ভালো লাগতেছে। আমার এক বা একাধিক নকলা দরকার, অন্ততপক্ষে বিরক্তিকর বিকেলের ডিউটিগুলা দেওয়ার জন্য।

মানুষের কেনো প্রোটোজোয়ার মত দ্বিবিভাজন হয় না? চিন্তিত নিজেরে গোটাকয়েক ভাগ করে ফেলতে পারতাম।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তিথীডোর এর ছবি

চোখ টিপি

--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

শাফক্বাত এর ছবি

আজকে আমার বড়মেয়ে জাইনাকে বগডুলের দুইটা গল্প শোনানোর পর মহা যন্ত্রণায় পড়লাম। সে আরও শুনতে চায় বগডুলের গল্প। একপর্যায়ে কাঁদতে থাকে। আমি তাকে বলেছি কালকে শোনাবো। চোখ টিপি
প্লীজ আরেকটা গল্প দ্যান!!
(জাইনার প্রশ্ন, যখন বৃষ্টি হয় তখন বগডুলের বস্তা ভিজে যায়না কেনো?) চিন্তিত
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

নতুন ধারার কিস্যা আসতেছে। আরো চাই...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

বগডুল নিয়ে তো একটা নিয়মিত এনিমেশন হতে পারে মনে হচ্ছে। যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। - ছাড়পত্র...

দময়ন্তী এর ছবি

এই মন্তব্যটা যে করছে, সে নকলি৷ আসলিটাকে খুঁজেই পাচ্ছি না কদ্দিন হয়ে গেল৷ মন খারাপ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।