উইকিলিকস: শান্তির জন্য অশান্তি?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১১/২০১০ - ১০:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে এখন উইকিলিকসের কারণে অনেকেই চিনেন। উইকিলিকস দাবী করে যে, এযাবৎ কালে তাবৎ সংবাদপত্র মিলে যতখানি গোপন তথ্য বের করেছে তার চেয়ে বেশী তথ্য উইকিলিকস একাই প্রকাশ করেছে।

উইকিলিকসের কল্যাণে প্রকাশিত ডকুমেন্ট কেনিয়ার রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন রাখতে সাহায্য করে। তবে উইকিলিকস সবচেয়ে বিখ্যাত তাদের ইরাক ভিডিও লগের জন্য। এই ভিডিওতে দেখা যায় জুলাই ১২, ২০০৭ এ দুটো অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে প্রায় এক ডজন ইরাকী সিভিলিয়ান এবং সঙ্গে দুজন বালককে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই ভিডিওটি প্রকাশের পর আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে রীতিমত হৈচৈ পড়ে যায়। ভিডিওটি নীচে দেয়া হল।

জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জের একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় টেড থেকে। জুলাই ২০১০ এর নেয়া সাক্ষাৎকারটিতে জুলিয়ান জানান, অনাচারে ভরা পৃথিবীর শান্তি রক্ষার জন্যই উইকিলিকসের জন্ম। জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জের সাক্ষাৎকারটি নীচে দেয়া হল।

অতি সম্প্রতি উইকিলিকস থেকে আমেরিকার অভ্যন্তরীন তথ্যের বিশাল বন্যা প্রকাশ করতে শুরু করে। এই তথ্যের মধ্যে পাকিস্থানের সাথে নিউক্লিয়ার ভারসাম্যতা রক্ষা, আরব নেতাদের কাছ থেকে ইরান আক্রমণের জন্য অনুরোধ ইত্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাইনীজ সরকার কিভাবে গুগলকে আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা করেছে তার বিস্তারিত। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার অবশ্যম্ভাবী পতনের পর কোরিয়ার একীভুত করনের পরিকল্পনা; ইরানের নিউক্লিয়ার শক্তি বর্ধন ঠেকানোর ব্যাপারে সৌদি আরবের বাদশাহের ফোন ইত্যাদিও রয়েছে।

দেখা যাচ্ছে আমেরিকার তথ্য ভান্ডার হলেও ইস্যুটা বিশ্ব জুড়ে। কেননা এতে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু দেশ।

উইকিলিকস বেশকিছুদিন ধরে এই তথ্য প্রকাশের কথা বলে আসলে দেখা যায় তাদের সার্ভারে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অভ সার্ভিস এটাক আসতে থাকে। এই ইন্টারনেট ভিত্তিক আক্রমণে সার্ভারের কাছে ক্রমাগত হিট আসতে থাকে এবং সার্ভার এই ভার বইতে না পেরে ক্র্যাশ করে। তাছাড়া জুলিয়ানের উপর বিভিন্ন ধরণের হুমকি এবং রাজনৈতিক আক্রমণ অব্যাহত থাকে।

এই অবস্থায় উইকিলিকস তাদের ডকুমেন্টের একটা বড় অংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় পাঠিয়ে দেয়। তার থেকে নিউইয়র্ক টাইমস একটা অংশ প্রকাশ করে এখানে এবং গার্ডিয়ান প্রকাশ করে এখানে। এছাড়া নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়ার লগস সেকশনটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

উইকিলিকস ওয়েবসাইটটি এখনও অ্যাকসেসিবল। আমেরিকাও বিষয়টাকে একটু হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্য কথা হল ভেতরের কথা গুলো বেরিয়ে পড়লে অনেকগুলো দেশের মধ্যে সর্ম্পক খারাপ হবে। ইরানের কাছে খুব শক্তিশালী নিউক্লিয়ার ওয়েপন আছে এমন খবর বেরোনোর পর ইরান ইতিমধ্যেই বলে বসেছে যে এটা আমেরিকারই একটা চাল। এছাড়া আরও বিভিন্ন দেশ নড়ে চড়ে বসছে এটা শুনে। এমতাবস্থায় উইকিলিকসকে আর শান্তি কামী সংগঠন বলা বরং বেশ শক্তই মনে হচ্ছে।

এখন আপনার কি মনে হয়? উইকিলিকস কি সত্যিই শান্তিকামী একটি সংগঠন? নাকি শুধুই দৃষ্টি আর্কষণের জন্য একটি লোকের আপ্রাণ চেষ্টা?

দেখা যাক, উইকিলিকসের পর পৃথিবীর অবস্থা কি দাঁড়ায়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমেরিকা যে কখন কোন উদ্দেশ্যে কী করছে তা বুঝে ওঠাটা বেশ কঠিন। তাই ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে উইকিলিকস সত্যিই শান্তিকামী কিনা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
অল্পসল্প...কবিতা-গল্প...

ইসানুর এর ছবি

তথ্য যখন আম জনতার হাতে যায়, তখন কোন সরকার/ক্ষমতাবানরা খুশি হতে পারে না।

দৃষ্টি আর্কষণের জন্য হোক বা অন্য যে কোন কারনে হোক, তথ্য উন্মুক্ত করার এই প্রয়াসের জন্য উইকিলিকস ও জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে বিপ্লবী শুভেচ্ছা।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

বেশ নতুন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে বিষয়টার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। পরিশেষে এটা একটা দার্শনিক প্রশ্নের কাছাকাছি চলে যায়: গোপন রাজনীতি ভালো না স্বচ্ছ রাজনীতি?

উইকিলিকস বোঝা যাচ্ছে উন্মুক্ত রাজনৈতিক তথ্যের পক্ষে।

The broader principles on which our work is based are the defence of freedom of speech and media publishing, the improvement of our common historical record and the support of the rights of all people to create new history. We derive these principles from the Universal Declaration of Human Rights. In particular, Article 19 inspires the work of our journalists and other volunteers. It states that everyone has the right to freedom of opinion and expression; this right includes freedom to hold opinions without interference and to seek, receive and impart information and ideas through any media and regardless of frontiers. We agree, and we seek to uphold this and the other Articles of the Declaration.

http://wikileaks.org/media/about.html

এই দর্শনের পক্ষে যে পয়েন্টগুলো বলা চলে: সরকারসমূহ যদি পৃথিবীর মানুষের কল্যাণে হয়ে থাকে, তার রাজনীতিতে তথ্য গোপনের প্রয়োজন হতে পারে না। আবার তথ্য গোপন করে যে রাজনীতি, সেটা গণ-কল্যাণমুখী কিনা যাচাইয়ের উপায় নেই। কারণ সেটা গোপন। ফলে সে গোপন রাজনীতির জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকে না।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার ব্যাখ্যাটির জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু সরকার কেন? সরকারের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? একটি দেশ থাকলে দেশের ভিতরে এবং বাইরে একদল লোক থাকবে একটা মতবাদে পক্ষে, একদল বিপক্ষে এবং একদল কোন দিকেই না। এই যে বিভাজনটার কেন্দ্রস্থলে সরকার। এখন এই বিভাজন মেটাতে হয় বলেই কিছু জিনিস গোপন রাখা প্রয়োজন।

কিন্তু গোপন বলেই কতখানি গোপন রাখা দরকার আর কতখানি গোপন রাখ হচ্ছে সেটার ধারণা জনসাধারণের থাকেনা। উইকিলিকস তাই খানিকটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ।

অথচ একেবার সব কিছু প্রকাশ করাটা ঠিক একই কারণে যুক্তি যুক্ত নয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

স্পর্শ এর ছবি

মতবাদে পক্ষে, একদল বিপক্ষে এবং একদল কোন দিকেই না।

মতবাদ-ফতবাদ এসব কোনো কথা না। যেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে লাখে লাখে। সেখানে অবশ্যই সব প্রকাশ হওয়া উচিত।

যে বিশ্বে বিনা উস্কানিতে লাখলাখ মানুষকে কীটপতঙ্গের চেয়েও নিম্নমানের জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। সে বিশ্বে 'তথ্য' গোপন রেখে শান্তি বজায় রাখার চিন্তাটা একটি ভ্রান্ত ধারমা।

প্রাসঙ্গিক এই ভিডিওটা দেখেন এটার আরেকটা অংশও পাবেন।

এখানে আডমিরাল মাইল মুলেন এর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একজন ভিউয়ার মন্তব্য করেছিলেন-

‎"How DARE ADM. Mike M. even speak about the damage to foreign relations. The question you have to ask is that if the US in its current form DESERVES those relations! If the US has done horrible and deplorable acts that would damage its foreign relations than it deserves NONE! We can't turn a blind eye to these fucking criminals in army uniforms."

আরেকটি মন্তব্য -

The reports detail 109,032 deaths in Iraq, comprised of 66,081 'civilians'; 23,984 'enemy' (those labeled as insurgents); 15,196 'host nation' (Iraqi government forces) and 3,771 'friendly' (coalition forces). The majority of the deaths (66,000, over 60%) of these are civilian deaths.That is 31 civilians dying every day during the six year period.

এগুলো প্রকাশ হঊয়া উচিত। শুধু এসব তথ্যই না। এসব লাশও এনে আমাদের চোখের সামনে ফেলা উচিত।

আপনার কী মনে হয়? এগুলো প্রকাশ না হলে বন্ধ হবে?

চলতেই থাকবে।

প্রকাশ হলে তো অন্তত কিছু মানুষ চিন্তা করছে এগুলো নিয়ে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

দারুণ!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এ বিষয়ে এই মন্তব্যের সাথে আমি সাধারণভাবে একমত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ড়্যাশন্যাল খাটে না। আমি সময় পেলে নীচের মন্তব্যে সেই সেনারিওটা বলব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নীলকান্ত এর ছবি

অথচ একেবার সব কিছু প্রকাশ করাটা ঠিক একই কারণে যুক্তি যুক্ত নয়।

সহমত। কেননা এমন অনেক তথ্য থাকে যা প্রকাশ করা, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচার, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয়ে যেকোন তথ্য উন্মোচনকে সাধুবাদ জানাই।

আমি মেঘের দলে আছি, আমি ঘাসের দলে আছি


অলস সময়

শামীম এর ছবি

প্রেম ও যুদ্ধের (+আত্মরক্ষার কৌশলের) ব্যাপারে গোপনীয়তা দরকার আছে। কিন্তু, অত্যাচার, শোষন, ডবল স্ট্যান্ডার্ড, এবং ক্লিকবাজির কলকাঠি উন্মুক্ত হওয়া উচিত।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দ্রোহী এর ছবি

রাজনীতির ভেতর পলিটিক্স ঢুকে গেলে কোনকিছু আর শান্তিকামী থাকে না। উইকিলিকসের শান্তিকামী হবার চাইতে জরুরী বিষয় হচ্ছে তাদের পদক্ষেপগুলো বিশ্বমানবতার পক্ষে যায় কিনা।

আমি অনলাইনে কল অফ ডিউটি, কিলজোন মাল্টিপ্লেয়ার খেলি। কোল্যাটেরাল মার্ডারের ভিডিওটির দৃশ্য অতি পরিচিত আমার কাছে। কিন্তু সত্যিকারের মানুষ মারার দৃশ্যটা কেন জানি এখনও সহ্য হয় না।

মন খারাপ


কাকস্য পরিবেদনা

দুর্দান্ত এর ছবি

আমি স্বচ্ছতার পক্ষে।

যে তথ্যগুলো আজকে বেরিয়ে পড়ে অশান্তির সৃষ্টি করছে বলে মনে হচ্ছে, তারা গোপন থেকে তার চাইতেও বড় অশান্তি তৈরী করতে পারে। আসলে যারা এসব গোপন কথার পাহাড়ে চড়ে যারা দুনিয়ার খবরদারি করে, সেগুলো ফাস হয়ে যাচ্ছে বলে তাদেরই যত সমস্যা হচ্ছে।

তবে যেসব তথ্য পাকাপোক্ত এবং একপেশে বলে পারপেয়ে যাওয়ার উপায় নেই, সেগুলো যখন ফাঁস হয়ে পড়ছে তখন, সেসব বিষয়ে সহিংসতা বাড়ানোর মত বোকা সৌদি আরব, ইরান বা আমেরিকায় (উদাহরন স্বরূপ) আছে বলে মনে হয়না। এই হিসাবে, উইকি লিঙ্কস মিডিয়ার উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে সত্যি, কিন্তু মাঠের উত্তাপ মনে হয় কিছুটা প্রশমিতই হবে।

আজকে তথ্য ফাঁস করে দেয়ার একছত্রতা উইকিলিক্সের, কিন্তু আগামীতে সেখানো প্রতিযোগীতা আসবে। এতে করে রাজনীতিতে গোপনীয়তা রক্ষায় কড়াকড়ি বাড়বে, বাড়বে ই-সন্ত্রাস। সেখান থেকেও কিছু অনভিপ্রেত অশান্তি আসতে পারে।

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

হতে পারে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা! তবে সত্যি কথা বলে কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে ক্ষতি কী? প্রকাশিত খবরগুলো একপেশে কিনা সেটা যাচাইয়ে আগ্রহী আমি। এখন পর্যন্ত উইকিলিক্সের তথ্যগুলো আমেরিকার জন্যে নেতীবাচক, এই সুত্রে রাজনৈতীক খেলায় না হোক, রাজনৈতীক বিশ্লেষক বা জনগনের চিন্তা ভাবনায়ও যদি একটা প্রভাবক হতে পারে, তাতে অকল্যাণ কিছু নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

চিরস্থায়ী অশান্তির চেয়ে সাময়িক অশান্তি কি ভাল নয়? উইকিলিকস এর তো কোন রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য দেখা যাচ্ছে না, আর উন্মুক্ত তথ্যপ্রবাহের এই যুগে তথ্য গোপন তো একধরণের অপরাধ।

কামরুল হাসান রাঙা

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

আপনি যদি প্রাসাদ-রাজনীতির সুবিধাভোগী বা অংশীদার হন, তাহলে উইকিলিক্স খুবই খারাপ কাজ করছে। আর যদি তা না হন, তাহলে বলতেই হবে ওরা খুব ভালো কাজ করছে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনকে কিছু জানতে পারলাম এই পোস্টের বদৌলতে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ইরাকের ঐ ভিডিওটা দেখার পর থেকেই উইকিলিকস এর বিরাট ভক্ত, আমার মতে এরকম জিনিস সবার জানা উচিত।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

স্বাধীন এর ছবি

উইকিলিক্সের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য মুর্শেদ ভাইকে ধন্যবাদ। আরো খুশি হতাম যদি এই বিষয়ে উনার নিজের কিছু বিশ্লেষণ থাকতো।

আমার অভিমত তথ্য সবার কাছেই উম্মুক্ত থাকতে হবে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতার জন্য। তাই উইকিলিক্স যেটা করছে, হোক তার ব্যক্তিগত প্রচার বা যে কারণেই হোক, তাকে আমি সব সময় সাধুবাদ জানাবো। আমি আমার গণতন্ত্রের ইতিবৃত্ত বইটি অনুবাদ হতে উক্ত বইয়ের লেখকের কিছু কথা এখানে আবার তুলে ধরছিঃ

অনেকেই মনে করি শাসন পরিচলনার জন্য প্রয়োজন যোগ্য ব্যক্তির । কিন্তু ক্ষমতায় আরোহীরা সাধারণ জনগণের চেয়ে অধিকতর বোঝদার সেটা নয় বরং তাঁরা সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি তথ্য পেয়ে থাকেন। যদি জনগণের কাছে সকল তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করা যায় তবে জনগণও সঠিক ভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারতো। তাই তথ্যের বিকল্প ব্যবস্থার উপর লেখক জোর দিচ্ছেন এবং অভিবাবকদের উপর নির্ভিরতা কমিয়ে জনগণের উপর নির্ভরতা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন।

আমার মতে উইকিলিক্স, উইকিপিডিয়া, খান একাডেমি, ইউটিউব, ফেইসবুক, ব্লগ, এগুলোই এখন সভ্যতার চাবিকাঠি। এখন মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের কোন এজেন্ডা বাস্তাবায়ন করতে পারবে না। যেটির প্রতিফলন আমরা দেখি বিগত ১/১১ তে। জলপাই বাহিনী এখন আর আগের মত সরাসরি সামনে আসতে পারবে না, কারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন এবং বাক-স্বাধীন। তাই আমাদের প্রয়োজন মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং এই কাজটিই করতে পারে ব্লগ, পত্রিকা, ইউটিউব, ফেইসবুক, উইকিলিক্স।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেট'স বিগিন উইথ ব্রেকিং ডাউন দ্যা গর্ভনমেন্ট। আদ্যিকালের সরকার চিন্তা করি। ধরি একটা গোত্র আছে যার গোত্র প্রধান হচ্ছেন 'ঝা'। এখন গোত্রে দুজন লোক আছে একজন, 'হাবা', আরেকজন 'গোবা'। হাবা আর গোবা একে অপরের শত্রু। দেখতেই পারে না। কয়দিন পর পর হাবা এসে ঝা কে বলে গোবা আমার নামে উল্টা পাল্টা কথা বলছে, গোবারে দুইটা থাবড়া দেন। পরেরদিন গোবা এসে বলে হাবা আমারে মারার জন্য ইট পাথর জড়ো করছে ওরে কানমলা দেন। ঝা করে কি, দুজনের কথা শোনে মাথা ঠান্ডা করে। তারপর তাদের একরকম বুঝ দিয়ে ফেরত পাঠায়।

এখন এই যে হাবা গোবার অভিযোগগুলো এইগুলো যদি এদের কেউ জানতে পারে কিংবা অন্যগোত্রের কেউ জানতে পারে তাহলে বিপদ। কেননা তখন তাদের কলহ ঠেকানোর কোনো উপায় নাই। অন্যগোত্র এই কলহের সুযোগ নিয়ে আক্রমন করে বসতে পারে। তাই এই তথ্য গুলো গোপন রাখাই বেস্ট বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঝা।

এখন একই রকম সেনারিও দেখা যাচ্ছে উইকিলিকসের ক্ষেত্রে। সৌদি আরবের বাদশাহ ইরানকে ঝাড়ি দেয়ার জন্য আমেরিকাকে অনুরোধ করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজিকে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা 'নেংটা রাজনীতিবিদ' বলে। এইরকম অজস্র তথ্য সেখানে। এইধরনের তথ্য শুধু শুধু দুটো দেশের মধ্যে সর্ম্পক তিক্ত করবে।

ডোন্ট গেট মি রং। আমি সবসময় তথ্য উন্মুক্ত করার পক্ষেই থাকবো। স্পর্শ যে সেনারিও দেখিয়েছে সেটা আসলেই অ্যাপিলিং এবং ভাল। কিন্তু তাই বলে কিছু তথ্য যদি চুকলি কাটার বুড়ির মত সবার কানে পৌছে দেয়া হয় তাহলে তেমন কোনো লাভ দেখতে পাইনা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দিগন্ত এর ছবি

হাবা আর গোবার ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য, সেটা নিকোলাস সারকোজি আর সৌদি বাদশাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে মুশকিল। এদের জানা উচিত (এবং আমার ধারণা জানেনও) যে আড়ালে এদের নামে অনেকেই অনেক কিছু বলেন - সেটা দেশের হোক বা বিদেশের। এই সারকোজির কথা বলেন - ফ্রান্সে ওনার নামে এইরকম কথা এমনিই প্রচলিত - গণতান্ত্রিক কাদা-ছোঁড়াছুঁড়িতে এরা অভ্যস্ত। তাছাড়া ফরাসী ডিপ্লোম্যাটরা বুশ বা ওবামা সম্পর্কে কি বলেন সেটাও সারকোজির অজানা নয়, তাই দেশে দেশে সম্পর্ক খারাপ হবার সম্ভাবনা কম। তবে মিডিয়াবাজী চলবে এ নিয়ে, এটা বটেই।

সৌদি বাদশাহ ইরান সম্পর্কে কি মতামত পোষণ করেন তা অজানা নয় কারও (ইরাক-ইরান যুদ্ধে সরাসরি ইরাককে সমর্থন, ১৯৮৭ সালে শ'তিনেক ইরানী হজযাত্রীদের গুলি করে মেরে ফেলা ... আরো অনেক)। খবরটা উইকিলিকস মারফৎ এলে আলাদা কি হয় বুঝি না, এমনকি সৌদি মুখপাত্রও এ নিয়ে বিশেষ কোনো উচ্চবাচ্য করেন নি - অস্বীকারও না। এখনও অবধি কোনো অজানা তথ্য তেমনভাবে প্রকাশ পায় নি উইকিলিকস মারফৎ - যা প্রকাশ পেয়েছে তা হল যা জানতাম তার সমর্থনে প্রমাণ। সুতরাং নতুন করে কোনো বৈরীতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার ধারণা নেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সময় যতো যাবে, তথ্য ততোই উন্মুক্ত হবে। তথ্য যতোই উন্মুক্ত হবে, ক্ষমতাসীনদের আকাম ততোই কমবে। যে তথ্য লোক সমাজে প্রকাশ করা যাবে না, সে তথ্য যাতে সৃষ্টি না হয়, মানুষ সেইদিকেই যেতে থাকবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এতো মনে হয় আদর্শ সমাজের কথা বলছেন। আদর্শ সমাজে ধর্ম থাকবে না তবু মানুষ ভালো কাজ করবে, নিষেধাজ্ঞা থাকবে না তবু মানুষ রেপন্সেবলি মাদক সেবন করবে... এরকম সমাজ কি আদৌ আসবে কখনো?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আদর্শ জীবন ব্যবস্থার জন্যই চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা না করলে তো আসবে না। উইকিলিক হয়তো সেই চেষ্টারই একটা অংশ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জি.এম.তানিম এর ছবি

বিশ্বরাজাদের ফুটো খুঁজে বের করায় বেচারা এখন যৌন অপরাধী
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সেনেটর জো লিবার ম্যানের চাপে পড়ে উইকিলিকসের হোস্টিং প্রোভাইডার তাদের সার্ভার থেকে উইকিলিকসকে বের করে দেয়। এরপর উইকিলিকস সুইস একটি ওয়েব সার্ভিসে তাদের সাইটটি হোস্ট করে।

পরে wikileaks.org ডোমেইনটিও ছিনিয়ে নেয়া হয়। wikileaks.ch এ আপাতত রেজিষ্টার করা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকা থেকে এই দুটোর কোনোটাই একসেসিবল না।

সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে সরাসরি আইপি 213.251.145.96 ব্যবহার করে অ্যাকসেস করা যাচ্ছে।

হায়রে ফ্রিডম অভ স্পিচের দেশ আমেরিকা! ভালই খেল দেখাইলি।

বিস্তারিত এখানে

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কৌস্তুভ এর ছবি

ডেম-শাসিত আমেরিকাও চিনের পথে গেলে কিংকর্তব্য?

জি.এম.তানিম এর ছবি

ডেম আর রিপ বাহিরে কেবল...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ফরিদ এর ছবি

পলরে ভালই লাগে মাঝে মদ্যি

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু একটা কথাই বলব, ঘরের কথা পরের জানতে নেই, পরকে জানাতেও নেই।

তবে এক ঘর যখন আরেক ঘরকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করছে, তার বেলা? প্রশ্ন থেকেই যায়।

কর্ণ
auto

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।