মনের পশু কি মরছে ?

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: শুক্র, ২১/১২/২০০৭ - ১০:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চারিদিকে শুরু হয়েছে পশু হত্যার উৎসব। আমি শুনতে পাচ্ছি কী পৈশাচিক উল্লাস ও উন্মাদনায় আবালবৃদ্ধবণিতা পশু হত্যায় মেতে উঠেছে। শুনতে পাচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে সোরগোল উঠছে , রোল উঠছে, হৈহৈ-রৈরৈ বোল উঠছে । পশুকে কাবু করতে পারার উত্তেজনা বা আনন্দে, বাগে না আনতে পারার ক্ষোভ বা হতাশার নানা শব্দও কানে আসছে। আর আসছে অসহায় পশুর রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠনালী থেকে ঘরঘর আওয়াজ, তীব্র আর্তস্বর। আমি শুনতে পাচ্ছি মাঝে মাঝে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সমবেত কণ্ঠের গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠা ।জানালার ফাঁক দিয়ে মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছে একদল । আলখাল্লা পরা, হাতে রক্তাক্ত উদ্যত ছোরা (না তরবারী ?) হাতে একদল মানুষের ঘনঘন ছুটাছুটি- তাদের আলখাল্লাও রক্তে রঞ্জিত যেন মধ্যযুগীয় কোন যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক। যেন সারা পৃথিবীটাকে সে রক্তে ভাসিয়ে দেবে, রক্তে রক্তে ভরে যাবে দেশটা, রক্তস্নানে শুচি হবে ধরা। যেন তার হত্যার আনন্দের সাথে আল্লাহ নিজে শরীক হয়েছেন। যেন আরো খুন আরো হত্যা আরো রক্তের নেশায় তার হাত নিশপিশ করছে। তার বা তাদের এই ব্যস্ততা আমার চেতনায় গুহাবাসী মানুষের চিত্রকল্পের সাথে বর্বর যুগের মানুষের চিত্রকল্প একাকার করে দেয়।
সকালে ঈদের জামাতে খুদবার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি তবে আমি নিশ্চিত যে, তাতে সিডর-দুর্গতদের দুর্দশা লাঘবের কোন প্রসঙ্গ ছিল না। বরঞ্চ কোরবানীর পশুর চামড়া পাড়ার বখাটে ছেলেদের কাছে বিক্রি না করে মাদ্রাসার ছেলেদের কাছে বিক্রি করার নসিহত করলেন ইমাম। কারণ বখাটে ছেলেরা সেই টাকায় নেশা করে, পাপ কাজ করে। আহা কী নসিহত, কী বয়ান, কী উপদেশ !!! কেউ কেউ মাথা ঝুকিয়ে সায়ও দেয়!!! যেন মহা এক সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছেন তিনি। ভেবেছিলাম এত বড় জমায়েতে ইমাম একবার হলেও সিডরআক্রান্ত মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্যের কথা তুলবেন, ভেবেছিলাম তিনি কোরবানীর চামড়ার মূল্য ত্রাণ হিসেবে দান করতে বলবেন, তাতে যে কোরবানীর চেয়ে বেশি সওয়াব হবে তা বলবেন। কারণ কিছু মানুষ তো আছে যারা সওয়াব গুনে দান করে, প্রয়োজন বা মানবতার নিরিখে নয়। তাতে ইমাম করলেনই না বরং তার আগে ঈদের কোলাকুলি করার নানা ত্বরিকা সম্পর্কে হাদিস-কোরানের মাসলা মাসায়েল বর্ণনা করলেন ইমাম - ইহা ধর্মীয় রীতিতে কতখানি বিধিমত, কতটুকু ডানে, ক’বার, ঠিক কোনস্থানে কোলাকুলি রীতিসিদ্ধ তার বর্ণনাও শুনলাম। আমি অবাক, বিমূঢ় হয়ে শুনছিলাম এসব অর্থহীন বকবকানি। বরঞ্চ চার্চের গায়ে ঝোলানো সেই ব্যানারটির আবেদনই ছিল আমার কাছে বেশি যাতে লেখা ছিল- “ সিডর দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোই সকল ধর্মের চেতনা।”

এই লেখা লিখতে লিখতে চারিদিকে পশু হত্যা সম্পন্ন হয়েছে-এবার চলবে আদিম মানুষের মত সমবেত আয়োজনে মৃতপশুর অঙ্গচ্ছেদ ও মাংশকর্তন এবং অতঃপর তা ( রান্না করে ) ভক্ষণ । পার্থক্য হল, আদিম মানুষ জীবনধারণের প্রয়োজনে, ক্ষুধা নিবারণের জন্য তা করতো। আর এ যুগের মানুষ সুমার্জিত সভ্যতার মোড়কে কেবল সামান্য পারলৌকিক সুখভোগের আশায় তা করে।

কে যেন লিখেছিল - বনের পশুরে নয় মনের পশুরে কর জবাই/ বাঁচুক পশু বাঁচুক সবাই। মুসলমানের কুরবানীর আসল তাৎপর্য তো তা-ই। বনের পশুকে হত্যা করে যদি মনের পশু কে হত্যা করা যেত । তাহলে পৃথিবীটা হত মহামানবের মিলনমেলা বা মানুষ হয়ে যেত ফেরেশতা।

সারাবিশ্বে আল্লাহর নামে কোটি কোটি পশু জবাই হয়ে যাচ্ছে , মনের পশু কি মরছে ?


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এমন এক পাশবিক, বর্বর 'পশুবধযজ্ঞ' মনের পশু মরতে সাহায্য তো করেই না, বরং তাকে উৎসাহিত করে, দান করে নবজীবন। স্রেফ তথাকথিত উৎসবের নামে একদিনে এতো পশু হত্যা করে পূণ্যলাভ কি সম্ভব?

কবে মানুষ ধর্মের ওপরে স্থান দেবে মানবিকতাকে?

লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ঈদের কয়েকদিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম প্রায় একই প্রসঙ্গে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শামীম এর ছবি

জাঝা
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

হিমু এর ছবি

চমৎকার একটি পোস্ট দিয়ে শুরু হলো সকালটা। ধন্যবাদ লেখককে।

কামনা করি সবার মনে শুভবোধ জাগ্রত হোক। প্রিয় কোন কিছু ত্যাগ যদি করতে হয়, তা হোক দেশের গরীব, দুস্থ মানুষের কল্যাণে। বাংলাদেশের মানুষগুলি ভালো থাকুক।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বিপ্রতীপ এর ছবি

আপনার আগের লেখাটিও ভালো লেগেছিল, এবারেরটাও ভালো লাগলো... আমি এক কথায় মুগ্ধ !
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…

রেজওয়ান এর ছবি

প্রবাস জীবনের এই একটি বিষয় আমার ভাল লাগে। প্রকাশ্যে পশুকে মারা হয়না। এমন নৃশংসতাও নেই। ডকুমেন্টরীতে দেখলাম বিশাল অস্ট্রেলিয়ান সাইজের গরুকে জবাইয়ের জন্যে একজনই যথেষ্ট। গরুটিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে মাথায় গুলি বাস শেষ। পরে ক্রেনের সাহায্যে ঝুলিয়ে পেট ফেড়ে ডাক্তারের পরীক্ষা তারপর মেশিনই করে সব।

আগে কোরবানীর ঈদ আসলেই ছুতো খুঁজতাম কিভাবে পালিয়ে থাকা যায়, কোরবানী যদি না দেখতে হয়। কিন্তু পালাবে কোথায়? সর্বত্রই এমন হত্যাযজ্ঞ।

আমরা সবচেয়ে দামী জিনিষ ত্যাগের ব্যাপারটি এখনও বুঝলাম না। ১৪০০ বছর আগে পোষা পশুই ছিল বেদুঈনদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আমাদের মানষিকতা এতশত বছরেও আগায়নি। আমরা দাড়ি, কমা সহ ্সেটিই নকল করতে ব্যাস্ত । হায়।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

হিমু এর ছবি

মালয়েশিয়াতে নাকি গবাদি পশু (বা কুরবানির উপযোগী পশু) সংখ্যায় অল্প। তাই ওরা নাকি কিছু প্রতীকী কুরবানি দেয়, যেমন মহল্লার পক্ষ থেকে একটি গরু। অবশ্য এর সত্যাসত্য জানি না, মাহাথির মুহাম্মদের একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম।

আমরা বাংলাদেশীরা আশ্চর্যরকমের স্বার্থপর ও ফুটাঙ্গিকুশল জাতি। লক্ষ টাকা খরচ করে উট কেনা হয়, নিজের চেয়ে উঁচু গরু কেনা হয়, সেগুলি জবাই করে গরুর নাড়িভুঁড়িগুগোবর নির্বিকারচিত্তে পাবলিকের রাস্তার ওপর ফেলে দেয়া হয়, অথচ কুরবানির মূল সুরের সাথে কণ্ঠ মেলানোর বিন্দুমাত্র তাগিদ নেই। নিজের প্রিয় কোন জিনিস ত্যাগের স্পৃহাই বোধহয় এখন আর কারো মধ্যে নেই, তাই হাট থেকে গরু কিনে এনে ঈশ্বরের চোখে ধূলা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়।

বড় শহরগুলিতে মাহাথিরের বক্তব্যমতো প্রতীকী কুরবানি শুরু করা উচিত। সমস্ত অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে একটি গরু। যে যার সামর্থ্যমতো চাঁদা দেবেন। কুরবানির মাংস নিজে খেয়ে, অপরকে খাইয়ে-বিলিয়ে সেদিনের মধ্যে ঝামেলা শেষ করে ফেলা। এতে করে ঝুটঝামেলা কমে। কুরবানির গরু প্রায় সবই আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে, এই উৎসব মূলত তাদের গোবণিকদের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

রেজওয়ান ভাই বোধহয় অনেক আগে নিজের দু'টি গাড়ি থাকলে একটি বিক্রি করে দিয়ে কুরবানির প্রস্তাব করেছিলেন। এমন চর্চাও খারাপ না। নিজের বারোটা মোবাইল সেট আছে, একটা দান করে দেয়া হলো একজন দুঃস্থ মানুষকে, যে সেটা দিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাগিব এর ছবি

তবে, উন্নত বিশ্বের সর্বত্র প্রতিদিন বার্গার বানানোর জন্য যেই পরিমাণ গরু নিধন করা হয়, তার তুলনায় বাংলাদেশে কোরবানীর পশুর সংখ্যা রীতিমত নস্যি। ২০০৫ সালের হিসাবে প্রতিবছর মাথাপিছু কেবল গরুর গোস্ত খায় মার্কিনীরা ৬৭ পাউন্ড করে (http://www.ers.usda.gov/Publications/LDP/Oct05/LDPM13502/ )। কাজেই ৩০ কোটি মার্কিনীর দেশে কত সহস্র গরু নিধন হয়, তা বলাই বাহুল্য।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হিমু এর ছবি

খাওয়ার জন্য গরু বা ছাগল নিধন সব দেশেই হচ্ছে, কিন্তু তা একটি নির্দিষ্ট হারে। একদিন কয়েক লক্ষ গরুছাগল রাস্তাঘাটে নিশ্চয়ই নিধন করা হয় না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাগিব এর ছবি

রাস্তাঘাটে করাটা আমাদের অভ্যাস মাত্র। একই ঘটনা আড়ালে করলেই তো পালটে যাবে না, তাই না?

আর একই দিনে কয়েক মিলিয়ন প্রাণী হত্যার perfect উদাহরণ অবশ্যই দেয়া যায়, সেটা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় থ্যাংক্স গিভিং। এই দিনে কয়েক মিলিয়ন Turkey পাখি গব গব করে খাওয়া হয়, এবং পুরাপুরি কোরবানীর মতোই প্রতি পরিবারে একটি করে অন্তত এই পাখি রোস্ট করে খায়। এরা যদি এক দিনের উসিলায় কয়েক মিলিয়ন টার্কি খেয়ে চলতে পারে দিব্যি সভ্য জাতি হিসাবে, আমাদের কোরবানীতে কী সমস্যা তা আমি বুঝতে পারছি না। টার্কি মারা হচ্ছে কসাইখানাতে আড়ালে করে, এটাই যা তফাৎ। রক্ত দেখতে না পারাটা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার, কিন্তু বিশেষ পরব উপলক্ষ্যে এক দিনে লাখ লাখ প্রাণী হত্যা কেবল মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।

আচ্ছা, একটু অন্য উদাহরণ দেই। খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা ক্রিসমাস উদযাপনের জন্য ঘরে একটি ক্রিসমাস ট্রি রাখেন। এই জন্য সারা বিশ্বে কোটি কোটি গাছ নিধন করা হয়। এই গাছ গুলো বেচে থাকলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারতো। গাছ কিনতে গিয়ে অনেক অপচয়ও হচ্ছে কেবল ধর্মের (আসলে তাও না ... বরং কেবল রীতিনীতি) খাতিরে। এই টাকাটা বাঁচিয়ে লাখ লাখ লোকের অন্ন সংস্থান সম্ভব। তাই ক্রিসমাস ট্রির মতো অসভ্যতা দেখে কি আমরা আজ থেকে শিউরে উঠবো? ক্রিসমাস ট্রির নামে তাজা গাছ কেটে ঘরের মধ্যে সাজিয়ে রাখার নারকীয় উৎসবের নিন্দা জানাবো? (স্যরি হিমু, একটু নাটকীয়তা করে বসলাম। আসলে দেশে বসে কোরবানী ঈদ পেয়ে সেই উপলক্ষ্যে খাওয়া দাওয়াটা কম হয়নিতো, তাই চামে আছি হাসি )।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হিমু এর ছবি

টার্কি খাওয়ার ব্যাপারেও আমার আপত্তি বহাল। কলম্বাসের দলবল আর কিছু না পেয়ে টার্কি মেরে আমেরিন্ডিয়ানদের সাথে ভাগেযোগে খেয়েছিলো দেখে আমেরিকার লোকজন বংশপরম্পরায় এই একই কাজ করে যাবে, এ-ও এক ধরনের বৃথা চর্চা। যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাঙ্কস গিভিঙে টার্কি যদি রাস্তাঘাটে জবাই করা হতো, আমার মতে একই রকমের অসুস্থ দৃশ্যের অবতারণা ঘটতো। ওদের টার্কিও সম্ভবত নিজস্ব উৎপাদন ছাড়াও আমদানি করা হয়।

আমার আপত্তি প্রত্যক্ষ দিবালোকে একটি প্রাণীকে জবাই করার দৃশ্যটি সবাই মিলে উপভোগ করাতে, এবং যেখানে দশজন মিলে একটি প্রাণী মেরে খেলে সমস্যা হয় না সেখানে একজনই দশটা মেরে খাওয়াতে।

মুসলমানদের উদাহরণই কিন্তু শুরুতে দিয়েছি, মালয়ের মুসলিমদের। কুরবানি ঈদ তারাও পালন করে। মালয়েশিয়ায় বা ইন্দোনেশিয়ায় কুরবানি ঈদের দৃশ্য কেমন, সেখানে বসবাসরত সচলরা আমাদের জানাতে পারেন।

আজকে দেশে যদি নির্দিষ্ট জায়গায় নিরিবিলিতে গরু জবাই হয়, যদি রাস্তাঘাটে রক্তের গন্ধে গা গুলিয়ে না আসে, আমিও আপত্তি করার কিছু খুঁজে পাবো না।

জাতি হিসেবে আমরা অন্য কোন জাতির চেয়ে বেশি অসভ্য নই, অসভ্যতায় অন্যদের সাথে মোটামুটি সমান সারিতেই আছি। দৃশ্যত সভ্য অন্য জাতির লোকজন রাস্তাঘাটে জবাই করা বন্ধ করেছে অনেক বছর ধরে, আমরা এই উদাহরণটা অনুসরণ করতে পারি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাগিব এর ছবি

এই কমেন্টে সহমত ... প্রকাশ্যে না করে নির্দিষ্ট স্থানে করে পরিষ্কার রাখাটা ভালো হতো। আমার ধারণা, কোরবানী নিজের চোখে দেখে করার রেওয়াজটা যাচাই করে নেয়ার সুবিধার্থে বা ঠিক ঠাক মত হচ্ছে কি না, তার জন্য। তবে হয়তো অন্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে।

আর কোরবানীর নামে লাখ টাকার উট/দুম্বা, বিশাল গরু - এসবের প্রতিযোগিতারও আমি বিরোধী। একাই ৫টা গরু দেয়া, মাংশের লোভে কোরবানী দেয়া গরীবদের এক তৃতীয়াংশ দিতে হবে সেকথা ভুলে - এর সবই মানুষের নৈতিক সমস্যা। তাই বলে ধর্মীয় ঐতিহ্যের হাজার হাজার বছরের এই প্রথাটি রাতারাতি নৃশংস বা অসভ্য হয়ে গেলো, সেকথা মানতে আমি নারাজ। অসভ্যতা হলো আমাদের লোভ, আমাদের show off করার মানসিকতা।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হিমু এর ছবি

বোধহয় মানুষের নৈতিক সমস্যাটিকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছি। প্রথাপালনে আপত্তি করেছি বলে চোখে পড়ছে না কোথাও, প্রথাপালনের পরিসীমা নিয়ে বলেছি শুধু। আর প্রথাগুলির চেহারা তো তার চর্চাতেই গড়ে ওঠে। চর্চা অসভ্য হয়ে উঠেছে অনেকাংশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাগিব এর ছবি

সহমত। প্রথা পালন যখন ভোগ বিলাসের মচ্ছবে পরিণত হয়, তখন সেটা আর প্রথা পালন থাকেনা।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

নিঝুম এর ছবি

সকালে ঈদের জামাতে খুদবার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি তবে আমি নিশ্চিত যে, তাতে সিডর-দুর্গতদের দুর্দশা লাঘবের কোন প্রসঙ্গ ছিল না। বরঞ্চ কোরবানীর পশুর চামড়া পাড়ার বখাটে ছেলেদের কাছে বিক্রি না করে মাদ্রাসার ছেলেদের কাছে বিক্রি করার নসিহত করলেন ইমাম। কারণ বখাটে ছেলেরা সেই টাকায় নেশা করে, পাপ কাজ করে। আহা কী নসিহত, কী বয়ান, কী উপদেশ !!! কেউ কেউ মাথা ঝুকিয়ে সায়ও দেয়!!! যেন মহা এক সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছেন তিনি। ভেবেছিলাম এত বড় জমায়েতে ইমাম একবার হলেও সিডরআক্রান্ত মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্যের কথা তুলবেন, ভেবেছিলাম তিনি কোরবানীর চামড়ার মূল্য ত্রাণ হিসেবে দান করতে বলবেন, তাতে যে কোরবানীর চেয়ে বেশি সওয়াব হবে তা বলবেন। কারণ কিছু মানুষ তো আছে যারা সওয়াব গুনে দান করে, প্রয়োজন বা মানবতার নিরিখে নয়। তাতে ইমাম করলেনই না বরং তার আগে ঈদের কোলাকুলি করার নানা ত্বরিকা সম্পর্কে হাদিস-কোরানের মাসলা মাসায়েল বর্ণনা করলেন ইমাম - ইহা ধর্মীয় রীতিতে কতখানি বিধিমত, কতটুকু ডানে, ক’বার, ঠিক কোনস্থানে কোলাকুলি রীতিসিদ্ধ তার বর্ণনাও শুনলাম। আমি অবাক, বিমূঢ় হয়ে শুনছিলাম এসব অর্থহীন বকবকানি।

দারুণ!!!!দারুন!!! শুধু এই লাইন গুলার জন্য হইলেও আপনি
BOSS

লাল সালাম কমরেড!!!
---------------------------------------------------------
জায়গায় খাইয়া, জায়গায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এই কথাটা দেশে কারো বলার অবস্থা নেই আজকে। বললেই তিনি হবেন মুরতাদ নাহলে আরো ভয়াবহ কিছু।

মানবতা আর ধর্ম যে এভাবে মুখোমুখি দাঁড়াবে কে জানতো?

...খোদা যে ধর্ম দিলেন আমি তা দিয়ে তাঁরে পাইনা, আমি যে ধর্মে তাঁরে পাই সেটা তিনি আমায় দিলেন না.:!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সারাবিশ্বে আল্লাহর নামে কোটি কোটি পশু জবাই হয়ে যাচ্ছে , মনের পশু কি মরছে ?
আপনার লেখার অনেক অংশের সাথে দ্বিমত আছে। কিন্তু এই অংশটার সাথে একমত। শেষের লাইনেই আমি লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেলাম।

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখা ও অনেকগুলা মন্তব্যের সাথে আংশিক সহমত, পুরোপুরি নয়।
লেখার বর্ণনাগুণে কুরবানী ব্যপারটা মোটামুটি গা শিউরানো একটা চেহারা পেয়েছে। ছোটবেলায় আমিও কুরবানী দেখতে যেতে চাইতাম না, নিজের ইচ্ছে গুরুত্ব পাওয়া শুরু হবার পর থেকে একেবারেই কখনো যাই নি। কিন্তু সব মিলিয়ে আমার কাছে সেটা পশু হত্যার উৎসব বলে মনে হয় নি। যেমনটা এখানে লেখা হয়েছে, হৈ হৈ রৈ রৈ বোল ওঠা বা সোরগোল ওঠা, এসবই কষ্টকল্পনা মনে হয়েছে। এমনকি লেখার এক পর্যায়ে রক্তের ধারার বা ছুরি হাতে ছুটে যাওয়া মানুষের বর্ণনাটাকেও আবেগের বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। ব্র্যাকেটে যেখানে তরবারী লেখা, সেটা পড়ে হাসি চলে এলো আসলে। মাহবুবুল হক চেয়েছেন খুব নৃশংস একটা ছবি আমাদের দেখাতে, সেটা তিনি 'যেমন করেই হোক' দেখাতে পেরেছেন।
বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে কুরবানী দেয়া হয়, বর্জ্য পরিস্কার করা হয় না, এইসব নগর অব্যবস্থাপনার উদাহরণ হতে পারে, কিন্তু তার সাথে পশু হত্যার উল্লাসের কি লেনদেন, এটা একটু ঘোলাটে হয়ে আছে।
লেখার শেষের এই কথাটি ভালো লেগেছে, বনের পশুর সাথে মনের পশুকে হত্যা করতে পারলে আসলেই খুব ভাল হতো।

আর রাগিব ভাইয়ের তথ্য রিপিট করে বলি, ঠিক এইরকম একটি লেখা প্রতিদিন পৃথিবীতে কোটিখানেক মুরগী-র উদ্দেশ্যে দুঃখ করে লেখা যায়। কেন উঠে পড়ে এই একটি দিনের পেছনেই লাগা, সেটা একটু অবাক লাগে। নাকি মুরগী পশু নয়, অথবা সেটাকে হত্যায় কোন নৃশংসতা নেই?
আর এইভাবে একদিনে এত পশু জবাইয়ের ফলে পশুসমাজের বৃহৎ কোন ক্ষতি হয় বলেও আমি মনে করি না। মুসলিম পাবলিকেরা নিয়মিত মাংস খায়। একই পরিমাণ পশুর মাংস ওরা হয়তো একমাস ধরে জবাই করে করে খেতো। তা না করে একদিনে জবাই করছে, এর ফলে হয়তো আগামী এক মাস আর জবাইয়ের প্রয়োজন পড়ছে না। তাহলে পরিমাণের কোন রকমফের হলো কি?

আমার তো ধারণা গরু মুরগী অথবা যে কোন কিছুর মাংস খাওয়াটাই একটা নৃশংসতা। সব বাদ দিয়ে আমাদের নিরামিশাষী হয়ে যাওয়া উচিত।
আর সেটা যদি না পারি, তাহলে মুরগীর রান চিবাতে চিবাতে গরুর জন্যে দুঃখ না করাই ভালো।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

দ্বিমত পোষণ করি। কুরবানির সময় প্রকাশ্যে যেভাবে একটি জীবিত প্রাণীকে জবাই করা হয়, সেটাই মনের ওপর যথেষ্ঠ চাপ ফেলে। কোটি কোটি মুরগি চোখের আড়ালে বা লক্ষ লক্ষ গরু কসাইখানায় জবাই হচ্ছে, হবে, সেটি নিয়ন্ত্রণ হয় বাজারের স্বাভাবিক আচরণ দিয়ে। কিন্তু প্রকাশ্যে মানুষের চোখের সামনে দেশজুড়ে এই জবাইযজ্ঞ সমর্থন করতে পারি না।

গরুসমাজের ক্ষতি না, বরং মনুষ্যসমাজের ক্ষতি এই রক্তপাতের দৃশ্য "উপভোগ করার সংস্কৃতি"র মধ্যে বেড়ে উঠলে।

একমাসের খাবারের সংস্থান একদিনে যোগাড়ের মধ্যে হয়তো দোষের কিছু নেই, কিন্তু আমদানি করে গরু জবাই দেয়ার মধ্যেও গুণের কিছু দেখি না। আরবে চারণভূমির অভাবে অতিরিক্ত পশু জবাই করে খেয়ে ফেলাটা উৎসবের পাশাপাশি পশুচারণে ভারসাম্যরক্ষার দিকটিও সামলাতো অতীতে, কিন্তু কেউ সীমানা পার করিয়ে পশু আমদানি করে কুরবানি দিচ্ছে, এমন নজিরও মনে হয় নেই।

কুরবানির ঈদ হচ্ছে, হবেও, কিন্তু তার পরিসীমাটুকু নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী হোক, এ-ই আমার বক্তব্য।


হাঁটুপানির জলদস্যু

s-s এর ছবি

জনাব কনফুসিয়াস, দ্বিমত প্রকাশ করছি। লেখকের পশুহত্যার বর্ণনা আমার ছোটবেলায় দেখা কুরবানীর নৃশংসতার সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে,তখনও ধর্ম সংক্রান্ত জ্ঞান উন্মেষ হয়নি আমার। কিন্তু নির্মমতার প্রথম পাঠ দেখেছি গরু হত্যার রিচুয়ালেই,কুরবানীর কোলাকুলিতে নয়। আপনার বক্তব্যের স্পিরিটের সাথে কিছুটা একমত,কিন্তু সকলে ভেজিটেরিয়ান হওয়াটা যেহেতু বাস্তবতা নয়,তাই মনে করি যে,মুরগী হত্যা বন্ধ করতে পারবো না বলে গরু হত্যাও ঠিক আছে,এই যুক্তি দুর্বল। সকল প্রানীকে বাঁচিয়ে রাখলে ফুড চেইনে আমি থাকবোনা, কিন্তু ধর্মের নামে অপ্রয়োজনীয় পশুহত্যা বন্ধ করার প্রতিবাদ মানেই ভন্ডামি,এই দৃষ্টিভঙ্গীও এক্সট্রিম। যেটুকু পারি,সেটুকু করবো, নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই।
যতটুকু হয়, একটি অপ্রয়োজনীয় প্রাণ হরণ রোখাটাও তো অনেক বড়!

কনফুসিয়াস এর ছবি

s-s,
নীচে আমার একটা মন্তব্য আছে, হিমু ভাইকে উদ্দেশ্য করে লেখা, ওটা পড়লে আমার কথাটা আরো পরিষ্কার হবে আশা করি।
তবে আপনার মন্তব্যে আমি একটু বেকুব বনে গেলাম, ফুড চেইনের কোথাও কি গরু নেই নাকি? আর এই লেখার বর্ণনার সাথে মণি রত্নমের বোম্বে সিনেমার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছাড়া বাস্তব কোন কিছুর মিল আছে বলে মনে করি না।
আর ধর্মের নামে করলেও সেগুলোতো ফেলে দেয়া হচ্ছে না, খাওয়া এবং বিতরণই করা হচ্ছে। তাহলে সেটা অপ্রয়োজনীয় হলো কোথায়? কেমন হিপোক্রেসী শোনাচ্ছে!
অপ্রয়োজনীয় প্রাণ হত্যার বিপক্ষে আমিও আছি। কিন্তু সব দোষ নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপাতে আমি রাজি নই।
ধন্যবাদ।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

s-s এর ছবি

(সরি, আপনাকে একটা বড় জবাব লিখেছিলাম সেটা কিভাবে নাই হয়ে গেলো মন খারাপ, আবার লিখছি, তবে ছোট্ট করে :

১। হ্যাঁ , পড়লাম, কিছুটা পরিস্কার হলো, ধন্যবাদ,তবে সবটা নয়। কেন নয়, নীচে বলি।

২।ফুড চেইনে গরু তো অবশ্যই আছে, তার ওপরেও আমি আপনি আছি। সব প্রাণী উদ্ভিদ বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তো আমি আপনি মারা যাবো, তাই কাউকে না কাউকে তো মারতেই হবে। তাই যখন যতটা পারা যায়, অপ্রয়োজনে তাদের মারা বন্ধ করি আসুন।
৩। আপনার এবং আমার দেখা বাস্তব অবশ্যই ভিন্ন তাহলে। আমার দেখা বাস্তবের সাথে খুব ই মিল আছে। আপনার দেখা বাস্তবের সাথে মিল নেই তার মানে এটি বাস্তবে কখনো ঘটেনি, বা ঘটতে পারেনা এমন সরলীকরণে আপত্তি, বম্বে সিনেমাটাও বাস্তবের অনেক কুৎসিত ক্ষতকে খুব নির্মম ভাবে তুলে ধরে ধাক্কা দেবার মতো করেই তৈরী।
৪। হিপোক্র্যাসি ধর্মের নামে একদিনে দশ হাজার পশু হত্যা করে গরীব মানুষগুলোকে খেতে বাধ্য করায়, হিপোক্র্যাসি তাদের মাথার ওপরে ছাদের ব্যবস্থা না করে পচনশীল (যেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা এ মুহুর্তে সিডর ভিকটিম দের নেই) গরুর মাংস দিয়ে তাদেরকে"উৎসব" পালনে বাধ্য করার রুচিহীনতায় ( যেহেতু ধর্ম বলেছে অতএব এই নাও মাংস খাও), এবং আরো হিপোক্র্যাসি তাদের প্রায়োরিটিগুলোকে না দেখে আমাদের সুবিধাবাদের উৎসাহে তাদের মাংস বিতরণে। সুপেয় পানি নেই, মাথার ওপর ছাদ নেই, পরণের কাপড় নেই, এ মুহুর্তে তিনদিনে লাখ লাখ গরু মেরে সিডর এর মরা গবাদি পশুর লিস্টে আরো নাম যোগ করাটাই হিপোক্র্যাসি, এতে না আছে ধর্ম,না আছে মানবতা।
৪। সব দোষ, আমাদের, ধর্মের নয়, জীবনাচারণের, যেভাবে সুবিধাবাদীর মতো ধর্মের বর্মের আড়ালে থাকি আমরা , তাদের।

তানভীর এর ছবি

প্রিয় s-s,

বাঙ্গালী সন্তান স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করে গেছেন গাছেরও প্রাণ আছে। গরু-ছাগল তো তাদের অসুবিধার কথা চিৎকার করে জানান দিতে পারে, অবলা শাক-সব্জীগুলো বোবা কান্না ছাড়া কিছুই করতে পারে না। ভেজিটেরিয়ান হয়ে এত এত যে শাক-সব্জী, লতা-গুল্মের প্রাণ হরণ করছেন তার কি হবে? ব্যাপারটা কেমন একচোখা হয়ে গেল না!

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

s-s এর ছবি

মোটেও না ভাই। এটা হলো, আমি একটা বন্ধ করতে পারবো না দেখে কোনো কিছুই বন্ধ করতে চেষ্টা না করা। অথবা, সব কিছুই খাবোনা এমন গোঁ ধরে থাকা, দু'টোই এক্সট্রিম, আমার বক্তব্য হলো, যতটুকু পারি ততটুকুই করবো, সবটুকু না পারলেও। প্লীজ , লেখককে দেয়া আমার মন্তব্যটি পড়ুন, হয়তো পরিস্কার হবে।
শুভাশীষ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিন্তু ধর্মের নামে অপ্রয়োজনীয় পশুহত্যা বন্ধ করার প্রতিবাদ মানেই ভন্ডামি,এই দৃষ্টিভঙ্গীও এক্সট্রিম। যেটুকু পারি,সেটুকু করবো, নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই। যতটুকু হয়, একটি অপ্রয়োজনীয় প্রাণ হরণ রোখাটাও তো অনেক বড়!

আপনি কীভাবে ব্যাপারটা দেখছেন তার সাথে আমারা ভাবনার ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে লেখার সাথে আমি একমত। ধর্মীয় রীতির কথা ধরলে বলতে হবে ১ লাখ টাকা দামের গরুর কোরবানীর কোনই প্রয়োজনীয়তা নেই। গরুর ক্ষেত্রে সাত ভাগের একভাগ আদায় করলেই কোরবানীর ওয়াজিব পালন হবে, বাকীটা হবে নফল এবাদতের মত। বলা ভুল হবেনা যে অনেকেই আছেন যারা নামাজের মত ফরজ কাজ বাদ দিয়ে বিশাল বিশাল কোরবানীর মত নফলের দিকে ঝুকে পড়েন। এটা একটা বিশাল অপচয়ও বটে।

s-s এর ছবি

শ্রদ্ধাস্পদেষু লেখক:
সুচিন্তিত লেখার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতাসহ ঐকমত্য প্রকাশ করছি। কুরবানী ঈদের মতো প্রাণের এমন বিপুল অর্থহীন অপচয় পৃথিবীতে কমই ঘটে। আমাদের পক্ষে বিশাল কোনো বদল ঘটানো সম্ভব না হলেও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ছোট্ট বদলগুলো ঘটানোর চেষ্টা করতে পারি,আমি যেমন গত ছ'বছর যাবত এই উৎসবটি পালন করা বন্ধ করেছি রেড মীট খাওয়া বন্ধের মাধ্যমে,যদিও আমি কোনো কোনো রেড মীট এ আ্যলার্জিক,আবার কোনোটাতে নই।পশুহত্যা বন্ধ না করা গেলেও আমি আমার প্রতিবাদের অংশটুকু বজায় রেখেছি আমার রসনাসংযমে। শেষপর্যন্ত,আমাদের জীবনাচারণই মূল নিয়ামক আমাদের ত্যাগের এবং সংযমের,ধর্ম নয়।ধর্মাশ্রয়ী যে কোন উৎসবই ত্যাগ করা শ্রেষ্ঠ উপায়, প্রবাসে বসবাসে তা কতকটা সোজাও বটে,কিন্তু মূল হলো আপনার জীবনাচারণ বদলানো,প্রতিদিনের।আমি এভাবে ভাবি। কখনো সময় পেলে আপনি চিন্তা করে দেখলে খুশী হবো।

আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো ঈদ উৎসবের।

কনফুসিয়াস এর ছবি

হিমু ভাই,
নিজেদের সামর্থ্যের পরিসীমা মেনে চলার সাথে আমারও দ্বিমত নাই। কিন্তু আপনি বললেন চোখের আড়ালে যেগুলো হয়, বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, তাহলে আড়ালে হলেই সেটা আর নৃশংসতা হয় না?
আসল কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে যেভাবে ব্যপারটা হচ্ছে, সেটা অবশ্যই অনুচিত একটা প্রক্রিয়া। আমরা সেটাকে শোধরাবার জন্যে নতুন কোন ব্যবস্থা নিতে পারি, যেন এর সুফলটাই আসে, কুফল নয়, সেইজন্যে উদ্যোগ নিতে পারি। কিন্তু শুধু এই দিনটারেই বর্বতায় উদাহরণ হিসেবে দেখা, বাকি সব দিনে হত্যা করা আদরের শামিল, এই ব্যপারটাই আমি সমর্থন করি না।
আমি আবারো একই কথা বলবো, আমি মনে করি মাংস খাওয়াটাই একরকম নৃশংসতা, কারণ সেটা আমরা করছি প্রাণীহত্যা করে। যদি প্রাণীহত্যা বন্ধ করতে না পারি, তাহলে দিন অনুযায়ী নৃশংসতা পরিমাপ করাটা আমার পক্ষে মানায় না।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

প্রিয় কনফু,

যে কোন হত্যাই নৃশংসতা। কোন দ্বিমত নাই এ ব্যাপারে। কিন্তু নৃশংসতারও স্তরায়ন করে নিয়েছি আমরা, আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে। নৃশংস আর নৃশংসতর, এভাবে দেখা যেতে পারে দু'টি ঘটনাকে। আজকে পেটের তাগিদে (নিরামিষাশী হওয়া মানুষের শরীরের জন্যই একটু কঠিন, কয়েক লক্ষ বছরের অভ্যাসে আমাদের অন্ত্র উভভোজী কাঠামোতে তৈরি) আমি অনেক কিসিমের মাংসই খাচ্ছি, কিন্তু রক্তপাতের সাথে অভ্যস্ত হচ্ছি না। আমার এবং আমাদের প্রয়োজনে সমাজে কসাই বলে একটি পেশা তৈরি হয়ে গেছে, যাদের কাজ পশু হত্যা করে কেটেকুটে বিক্রি করা।

চোখের সামনে একটা পশুকে জবাই হতে দেখার বীভৎস অভিজ্ঞতা রীতিমতো মানুষের মনের ওপর চাপ ফেলে, এ আমি জানি। আমি নিজে এখনও মুরগি জবাই করতে পারি না, যদিও মুরগি খাই মহানন্দে। গরুর মাংস না খেলে মনে হয় সপ্তাহটা মাটি গেলো, কিন্তু একটা গরুকে পাকড়ে ফেলে জবাই করা সহ্য করতে পারি না।

এ কারণেই আমি সামর্থ্যের পরিসীমার কথা বলি। আমাদের দেশে গবাদি পশু মানুষের তুলনায় কম, শুধু একটি উৎসবে মানুষের অমিতাচারের শিকার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সংখ্যক পশু মেরে ফেলার আমি অর্থ দেখি না। দশটি গরুর বদলে একটি গরু কুরবানি দিলে সমস্যা কোথায়? আল্লাহ কি গরুর মাংসের কেজি ধরে সোয়াব বিলি করবেন? নাকি তিনি বিচার করবেন আমার উদ্দেশ্য, আমার আয়ের পন্থা, কুরবানির মাংস আমি ন্যায্য হারে দুঃস্থদের মধ্যে বন্টন করছি কি না, সেটা? এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সেটাকে জবাই করার কি মানে হয়, যেখানে এই টাকা দিয়ে একটি গরু আর না জানে কতগুলি মানুষের জীবন বাঁচানো যায়?

বাংলাদেশে নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তের কুরবানির চর্চা নিয়েও বলার কিছু নাই, তারা সামর্থ্যের মধ্যেই যা করার করেন, কিন্তু আমার আপত্তি কুরবানি নিয়ে বাড়াবাড়িতে। সারা মহল্লা জুড়ে থিক থিক করবে রক্ত, চর্বিমাখা কাদা, ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে একটা ছটফট করতে থাকা গরু বা ছাগলকে জবাই করা হবে, এ দৃশ্য সমর্থন করতে পারি না, দুঃখিত। আমার শৈশবে আমাদের পরিবারে খাসি কুরবানি দেয়া হতো, দুইতিন দিন খাসাটি আমার তত্ত্বাবধানেই থাকতো, আমি জীবনে প্রথমবার খাসি জবাই দেখে সেদিন কিছু খেতে পারিনি। এই বর্বরতা চোখের আড়ালে করলেও বর্বরতা। কিন্তু চোখের সামনে করে সেটাকে উৎসবের প্যান্টালুন পরানোটা আরো বড় বর্বরতা বলে মনে করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কনফুসিয়াস এর ছবি

হিমু ভাই,
ঠিকাছে।
ঘটনা হচ্ছে আমি নিজেও কুরবানীর দৃশ্য হজম করতে পারি না। এমনকি মুরগীও না। এইসব থেকে তফাত আছি জ্ঞান হবার পর থেকেই।
আমার শুধু আপত্তি ছিলো কেবল কুরবানীর দিনটারেই কাঠগড়ায় দাড় করানো নিয়া। এই ব্যপারটা কেমন সিজোনাল হয়ে পড়ছে, অথবা আরো পার্ফেক্ট শব্দ হতে পারে 'হুজুগে'। এখানেই আমার আপত্তি, যেই প্র্যাকটিসটা আমি করবো, বা আমি যা কিছুতে বিশ্বাস করবো জীবনের সব কিছুতেই তা করবো। বেছে বেছে সুবিধা অনুযায়ী সেগুলো ক্যাটাগরাইজ করাটাই আমার ভালো লাগে না।
আপনার বক্তব্য পুরোপুরি বুঝেছি, ধন্যবাদ।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আরশাদ রহমান এর ছবি

মাসুম, পশু কোরবানি বা জবাই বা হত্যা নিয়া আমার সমস্যা নাই। এক প্রাণী আরেক প্রাণীরে খায় এইটাই প্রকৃতির নিয়ম। গরু ছাগল শূকর মারা এবং খওয়া যদি নির্মম হয় তবে মাছ মুরগী আর গাছ পালা মারা এবং খাওয়াও নির্মম। আমি সব সময় মাছ শাক সবজি বেশি পছন্দ করি কিন্তু জীবন্ত মাছটারে কিভাবে বঠি দিয়া মাথাটা আলাদা করা হয় তা নিয়া গভীর ভাবে ভাবলে ঐ গরু হত্যার চেয়ে আলাদা কিছু মনে করিনা। এই পৃথিবীতে যদি মানুষের চেয়ে উন্নত কোন প্রজাতি থাকতো তাহলে দেখতি আমার যেমন মাছে পোনা সখ করে খাই অনকে তেমনি মানব শিশু মজা করে খাইতো। দৃষ্টিভঙ্গির উপরে ভাল লাগা খারাপ লাগা নির্ভর করে। ভাবলে দেখবি ডিম দুধও খাইতে খারাপ লাগবো। আমরা মানুষ হিসাবে অন্য প্রজাতির চেয়ে আলাদা বলে আমাদের অনেক কিছুতেই খারাপ লাগে। বাস্তবতা হচ্ছে কিছু না কিছু খাইতে হবেই আর আমাদের ভাবনা শুধু আমাদেরকে নিয়াই। মানুষ প্রজাতির ভালো মন্দ আমরা না ভেবে অনেক সময় অসহায় মানুষকে আমারা নিজেদের প্রাজাতির ভাবিনা ।শুধু সিডরে আক্রান্ত মানুষ না অন্য সব অসহায় মানুষের কথা আমরা না ভাবলে আমরা আরা আলাদা কিসে? কিন্তু বাস্তবত হচ্ছে বেঁচে থাকা জন্য খাওয়া দরকার আর সেই খাওয়ার ধরণ আলাদা হলেও শেষ পর্যন্ত একই জিনিষ। খুদবা যে পড়ে তাদের কাছে আমি তেমন কিছু আশাও করিনা। সারা জীবন একই জিনিস দেখে আসছি।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিন্তু চোখের সামনে করে সেটাকে উৎসবের প্যান্টালুন পরানোটা আরো বড় বর্বরতা বলে মনে করি।

এটাই আসল সমস্যা। আমরা কোরবানীর আসল মাহাত্ন যে ত্যাগ-- তা ভুলে গিয়ে কে কার চেয়ে দামী ও বড় কোরবানীটা দিতে পারি সেই দৌড়ে লিপ্ত হই। পশু জবাইকে এই সমাজে সত্যিই একটা উৎসবের রূপ দিয়ে দেয়া হয়েছে।

ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ (ধর্মে আসলে কী বলা হয়েছে তা বুঝাতে)। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আর ধর্ম থেকে দূরে রাখার প্রচেস্টা প্রচারের মধ্যে আমি কোন গুনগত পার্থক্য দেখিনা। ধর্মের বাণী আমাদের কাছে পৌঁছে অনেক হাত ঘুরে; তার জন্য ধর্মকে যেকোন প্রকারে দায়ী করার প্রচেষ্টা জ্ঞানীর কাজ হতে পারেনা। "ধর্ম যার যার রাস্ট্র আমার" অথবা "যার ধর্ম যার কাছে"-- ইত্যাদি কথার সাথে অনেক সময়ই আমাদের লেখা ও বক্তব্য বেশ বেমানান হয়ে যায়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

এটা নিয়ে ইতোমধ্যে এতো মন্তব্য করা হয়ে গেছে যে আবার কিছু লিখবো কি লিখবো না দোলাচলে ভুগছিলাম, তারপর ভাবলাম - অধিকন্তু ন দোষায়। অনেক কিছুই শুধু দেখতে দেখতে আমাদের গা সওয়া হয়ে যায় - যেমন কোরবাণীর দৃশ্য, যেমন ঢাকার বাইরে পিকনিক এ গেলে ছোট ছোট বাচ্চাদের খাবারের সময় এসে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যেমন হাসপাতালের মেঝেয় শুয়ে চিকিৎসার অভাবে কাতরাতে থাকা গরীব মানুষ...... এবং আরো অনেক কিছু। কিন্তু এখন আংশিক প্রবাসে থাকার কারণে (না দেখতে দেখতে) আর আংশিক বয়সের সাথে সাথে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর কারণে অনেক কিছু নতুন করে দেখি। ধর্মের নামে/কারণে / বিশ্বাসে একদিনে এতোগুলো পশু হত্যার আসলেই কি কোন দরকার আছে? জিনিষটা একটু প্রতীকি ভাবেও তো করা যায় যদি করতেই হয়? যতো চেষ্টাই করা হোক না কেন এই বিপুল পরিমাণ পশুমাংসের অপচয় রোধ করা কি সম্ভব? আমাদের মত একটা ট্রপিক্যাল দেশে ফ্রীজ ছাড়া গরীব মানুষ গুলো কিভাবে তাদের পাওয়া মাংস অনেক দিন ধরে খেতে পারবে- যেখানে আবার বেশীরভাগের ই রান্না করার সামর্থ্যই নেই। নিজের ধর্ম বিশ্বাস আর সমর্থ্যের গন্ডী টাকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে কাজ করলে মনে হয় খারাপ হয় না।

আর একটা কথা না বলে পারছি না - যদিও বক্তব্যটা আমার খুব ই ভালো লেগেছে কিন্তু লেখকের বর্ণনা আমার কাছেও একটু অতি নাটকীয় মনে হয়েছে (আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী)। আর হ্যা কোথায় সিডর কোথায় কি, শুধু খালি ফালতু অপ্রয়োজনীয় নসিহত আর নসিহত। ধর্মের ওপর মানুষ আস্থা হারাবে না তো কি।

তানভীর এর ছবি

বনের পশু আর গৃহপালিত বা খামারে প্রতিপালিত পশুর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আমি নিজেও একজন কনজারভেশনিস্ট। সংরক্ষণবাদী হিসেবে আমিও বনের পশু-পাখী হত্যা সমর্থন করি না। কিন্তু বনের একটা কুমিরকে মেরে ফেললে প্রকৃতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়, সেই একই কুমিরকে খামারে তুলে এনে আরো ১০০ টা কুমির জন্ম দিয়ে যদি একদিনেই মেরে ভক্ষণ করা হয়; প্রকৃতিতে তার প্রভাব শূণ্য। ইসলাম ধর্মে শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীর মাংস খাওয়া যায়, যার বেশীরভাগই গৃহপালিত। আজকে এর গুরুত্বটা অনুধাবণ করা একটু কঠিন, কিন্তু প্রায় ১৫০০ বছর আগে যখন ফার্মিং আজকের মত এতটা ডেভেলপড ছিল না, বনের প্রাণীকে রক্ষা করার কথা কেউ যখন চিন্তাও করে নি, ইসলাম তার ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমেই বনের বাঘ-কুমির-সিংহ এসব প্রাণীকে রক্ষা করেছে। গরু-ছাগল-উট-ভেড়া ইত্যাদি যেসব প্রাণী কোরবানী দেয়া হয় সবই তো গৃহ/খামারে প্রতিপালিত। সংজ্ঞাটাও একটু দেখি এখানে। যেসব প্রাণী তাদের খাদ্যের জন্য আপনার উপর বা মানুষের উপর নির্ভরশীল, তাদেরকেই বলা হয় গৃহ/খামার পালিত। আর যে সব প্রাণী প্রকৃতি থেকেই খাবার খুঁজে নেয় তাদের বলা হয় বন্য প্রাণী বা wildanimal. একটা বন্য প্রাণী হত্যা করা হলে প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়, কারণ প্রকৃতির খাদ্য শৃংখলে তার প্রভাব পড়ে। অপরদিকে লাখ লাখ গৃহপালিত প্রাণী জবাই করা হলে তার প্রভাব প্রকৃতিতে নেই বললেই চলে।

জবাইয়ে নৃশংসতার ব্যাপারে আমিও একমত। কিন্তু এর সাথে ধর্মের সম্পর্ক কোথায়? ইসলাম কি বলেছে মানুষের চোখের সামনে বা ছোট ছোট বাচচাদের চোখের সামনে রক্ত ছিটিয়ে জবাই করতে হবে? আমরা তো যুক্তরাষ্ট্রে শরীয়ত মেনেই slaughter house-এ কোরবানী দেই। বাংলাদেশে এরকম নির্দিষ্ট স্থান/ঘর ঠিক করে নিভৃতে জবাই কার্য সম্পাদন করতে অসুবিধা কোথায়? এটা কি ধর্মের সীমাবদ্ধতা নাকি আমাদের লোক দেখানো মানসিকতার প্রভাব যেটা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে? ঠিক তেমনি আজ বাংলাদেশের মসজিদে মসজিদে যারা খুতবা দেয় বা ফতোয়া দেয় তারা তো অল্পশিক্ষিত, প্রায় মূর্খ লোকজন। একজন শিক্ষিত বা উচচ শিক্ষিত লোকের তাদের কাছে ভাল খুতবা আশা করাটাই বাতুলতা মাত্র। সেই আমরাই যখন আবার তাদের দৃষ্টিভংগী দিয়ে ধর্মকে ব্যাখা করি, আমার কাছে সেটা খুবই হাস্যকর ঠেকে।

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সেই আমরাই যখন আবার তাদের দৃষ্টিভংগী দিয়ে ধর্মকে ব্যাখা করি, আমার কাছে সেটা খুবই হাস্যকর ঠেকে।
উত্তম জাঝা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লেখা এবং মন্তব্যগুলো বেশ ভাল লেগেছে। খুবই সুলিখিত ও সুচিন্তিত সবই। আমি আলাদা করে নিজের মত বলছি না। সবারই কিছু না কিছুর সাথে একমত, আবার কিছু না কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষন করি আমি।

যাক গে, আসল কথা বলি। একবার গ্রামে একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "পশুর বদলে যদি একটা মানুষ কোরবানি দিতে বলা হত, তাহলেও কি এরকম উল্লাসের সাথেই তাকেও জবাই করা হত?"

মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ বলেই অনুবাদ করেছিলাম।

শামীম এর ছবি

আমার মনে হয় ধর্মের অনেকগুলো রীতিই সিম্বলিক।

সবচেয়ে প্রিয় পশুর জান হরণ করা হল কোরবানী ... আর এটা ঈদ=আনন্দ। প্রিয় পশুকে বধ করা আনন্দের হয় কিভাবে? আমাদেরকে কি তবে অনুভুতিশূন্য হয়ে যেতে বলা হচ্ছে?..... তা তো হতে পারে না।

তাহলে সম্পুরক প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সবচেয়ে প্রিয় পশু কোনটা ??------.... সেটা আমাদের ভেতরকার পশুত্ব। লোভ, ক্রোধ, জিঘাংসা ইত্যাদিকে অনেকেই পশুপ্রবৃত্তি বলে থাকেন (পশুরা কি আসলেই এমন!!)। এই অবাধ্য, ভয়ংকর কিন্তু আমাদের অতি প্রিয় পশুটাকে বশ করে পোষ মানিয়ে তারপর ত্যাগ করতে হবে। কোরবানীর মধ্য দিয়ে সেই প্রিয় পশুটাকে কোরবানী করার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। আর এই পশুস্বত্বাটাকে বধ করতে পারলে সেটা আনন্দের কারণ হবে - এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং ধর্ম থেকে শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে যা আমাদেরকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা যেভাবে এই রীতিটা পালন করছি তাতে সেই শিক্ষা/বক্তব্যটা কি সকলের কাছে পৌছাচ্ছে?

লেখকের ব্যবহৃত শিরোনামটা (মনের পশু) খুবই অর্থবহ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মাহবুবুল হক এর ছবি

লেখার বর্ণনাগুণে কুরবানী ব্যপারটা মোটামুটি গা শিউরানো একটা চেহারা পেয়েছে। ছোটবেলায় আমিও কুরবানী দেখতে যেতে চাইতাম না, নিজের ইচ্ছে গুরুত্ব পাওয়া শুরু হবার পর থেকে একেবারেই কখনো যাই নি। কিন্তু সব মিলিয়ে আমার কাছে সেটা পশু হত্যার উৎসব বলে মনে হয় নি। যেমনটা এখানে লেখা হয়েছে, হৈ হৈ রৈ রৈ বোল ওঠা বা সোরগোল ওঠা, এসবই কষ্টকল্পনা মনে হয়েছে। এমনকি লেখার এক পর্যায়ে রক্তের ধারার বা ছুরি হাতে ছুটে যাওয়া মানুষের বর্ণনাটাকেও আবেগের বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। ব্র্যাকেটে যেখানে তরবারী লেখা, সেটা পড়ে হাসি চলে এলো আসলে। মাহবুবুল হক চেয়েছেন খুব নৃশংস একটা ছবি আমাদের দেখাতে, সেটা তিনি 'যেমন করেই হোক' দেখাতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের রাস্তায় কুরবানীর দৃশ্য যা আমি তাই লিখেছি । আর লেখাটা যখন লিখছি তখন বাহিরে কুরবানীর আয়োজন চলছে । সারা গা রক্তাক্ত করে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে (প্রধানত) মাদ্রাসার ছাত্রদের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও যে কষ্ট কল্পনা বা আবেগের বাড়াবাড়ি নয় তা বাংলাদেশের মানুষ জানে, ত্রিশ বছর ধরে এ দৃশ্যের তো রকমফের দেখলাম না। যারা জবাই করেন তারা অবশ্য এজন্য টাকা পান (দাবি করেন না কিন্তু না দিলে নাখোশ হন, তলোয়ারের মূল্য বাবদ খরচ হিসেবে সেটা তারা নেন) ।

স্যাক্রিফাইস একটা প্রাচীন ধর্মীয় প্রথা । সেটা ইসলামসহ আধুনিক ধর্মগুলো নানা ভাবে মানুষের জন্য কল্যাণকর পন্থায় গ্রহণ করেছে। আমরা কি সেটাকে আরও যুগোপোযোগী পরিশীলিত ও সহনীয় মাত্রায় পালন করতে পারি না ? প্রতীকী কুরবানীর ধারনাটা কিন্তু চমত্কার । কিন্তু ধর্মীয় বিধানদাতারা কতটা উপযুক্ত মনে করেন সেটাই বিবেচ্য।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।