তাইওয়ানের রূপকথা

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৫/২০০৯ - ৫:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চন্দ্র-সূর্য হ্রদের কাহিনী

অনেক কাল আগের কথা। সে সময়ে শাও নামের এক উপজাতি তাইওয়ানের মধ্যাঞ্চলে পাহাড়ী এলাকায় বস বাস করত। উপজাতির লোকজন ভুট্টা, টারো, ধান ইত্যাদির আবাদ করত। মাঝে মাঝে তারা মাছ ধরতে বা শিকার করতেও যেত। তাদের জীবন ছিল বেশ নির্ঝঞ্ঝাট , শান্তিময়।

কোন এক রোদে ঝলমল সকালে, শাও লোকজন যখন মনোযোগ দিয়ে ক্ষেতে-খামারে কাজ করছিল , তখন হ ঠাৎ করে গগনবিদারী শব্দে আকাশ-বাতাস প্রচন্ড ভাবে কেপে ওঠে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে সবাই চিৎকার করে বলে -
" হায় কি সর্বনাশ! সূর্যটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল!!"
তারা বিশ্বাস করতে পারছিলনা যে তাদের চোখের সামনে থেকে এত শক্তিশালী আর উজ্জ্বল সূর্যটা এভাবে ঊধাও হয়ে যেতে পারে। চারদিকে অন্ধকারের ঘনঘটা নেমে এল, উপায়ান্তর না দেখে তারা এক অপরের সাহায্যে ধীরে ধীরে নিজ নিজ বাড়ীতে চলে আসল।

সৌভাগ্যবশত সে রাতে আকাশে চাঁদ উঠল। চাঁদের আলোর সাহায্যে লোকজন ঘর-গৃহস্থালির টুকটাক কাজ করতে শুরু করে। হঠাৎকরে আরেকটা প্রচন্ড শব্দে সবকিছু কেপে উঠল, ঘর-বাড়ি সব ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সবাই অসহায়ভাবে কেঁদে ওঠে-
" হায়! চাঁদটাও হারিয়ে গেল! আমরা এখন কি ভাবে বাঁচব?"
সবাই সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু বুঝতে পারলনা কিসের অভিশাপে তাদের ভাগ্যে এমন দুর্ভোগ নেমে আসল।

সেইদিন থেকে আকাশে চাঁদ বা সূর্য কোনটাই আর দেখা দিলনা। অন্ধকারে ছেয়ে গেল সমস্ত পৃথিবী। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেল, মাছেরা হারিয়ে গেল আরো গভীর পানিতে, কলি থেকে ফুল আর ফুটলনা, গবাদিপশুগুলো কেমন প্রানহীন হয়ে গেল। সবাই চিন্তা করে সূর্য ছাড়া তারা কিভাব বাঁচবে, কিন্তু ভেবে চিন্তে কোন রাস্তা বের হয়না।

ওখানকার এক নতুন দম্পতি, দাচেং আর শুইশি চিয়ে ভুট্টা চাষ করে জীবন ধারন করত। সূর্য উধাও হয়ে যাওয়ায় তাদের সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেল। একদিন শুইশি চিয়ে তার স্বামীকে বলল-
" যদি সূর্য আর কোন দিন দেখা না দেয়, তাহলে গ্রামের সবাই না খেতে পেয়ে মরে যাবে। আমাদের একটা উপায় বের করা দরকার।"
দাচেং সম্মতি জানিয়ে বলে- " আমার ধারনা সূর্য কোন এক গভীর উপত্যকার নীচে আটকে পড়েছে। চলো আমার সেটা খুজে বের করি।"

পরদিন তারা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সূর্যের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে। তাদের দু'জনের হাতেই একটি করে মশাল ছিল। আসীম সাহসের সাথে তারা অনেক পাহাড়, জঙ্গল, নদী পাড়ি দেয়। একটার পর একটা মশালও জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সূর্য বা চাঁদের দেখা মেলেনা। সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার চাদরে ঢাকা।
অবশেষে তারা একদিন বিশাল এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে পড়ে। শুইশিচিয়ে দূরে কোথাও হাল্কা একটু আলোর আভা দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ওঠে-
"ঐ যে দেখ! হ্রদের মধ্য থেকে কিসের যেন আলো বেরিয়ে আসছে। আমার মনে হয় চাঁদ আর সূর্য ওখানেই লুকিয়ে আছে।"
দাচেং উত্তেজিত হয়ে উঠল, সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে-
" ঠিক বলেছ! আমারো তাই ধারনা। পেয়েছি! আমরা চাঁদ-সূর্য দু'টোকেই খুজে পেয়েছি!"

তারা দৌড়ে হ্রদের ধারে চলে গেল, গিয়ে যা দেখল তাতে তাদের চোখ ছানাবড়া। ভয়ংকর দুইটা ড্রাগন দু'টো আগুনের বল নিয়ে লোফালুফি করে খেলছে, আর সেই খেলনা গুলোই হল চাঁদ আর সূর্য।
" এখন বুঝতে পারছি চাঁদ-সূর্য কিভাবে উধাও হল। এই ড্রাগনগুলো তাদের খেলনা বানাতে তাদের চুরি করেছে।"- দু'জনে একসাথে বলে উঠল। দাচেং আর শুইশিচিয়ে খুব রেগে গেল, তারা ইচ্ছা চাঁদ-সূর্যকে উদ্ধার করে আকাশে ফিরিয়ে দেয়া কিন্তু ড্রাগনের ভয়ে তারা হ্রদের বেশী কাছে যেতে পারছিলনা। তারা বড় একটা পাথরের উপরে বসে ভাবতে লাগল কিন্তু কোন বুদ্ধি খুজে পেলনা।

হঠাৎ তারা যে পাথরটির উপর বসে ছিল সেটার নীচ থেকে সাদা ধোঁয়া বেরোতে লাগল। দাচেং সমস্ত শক্তি জড়ো করে ধাক্কা দিয়ে পাথরটি সরিয়ে তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা একটি গুহামুখ আবিষ্কার করে। গুহার অনেক ভেতর থেকে ধোয়া বেরোচ্ছিল, শুইশিচিয়ের মনে হল গুহার মধ্যে কেউ বাস করে। তারা ভেতরে গিয়ে রহস্যের সমাধান করতে সিদ্ধান্ত নিল। আঁকাবাকা গুহাপথে তারা চলতে থাকে, চারপাশ স্যাঁতসেতে, অন্ধকার যেন আরো ঘনিয়ে আসে । এক পর্যায়ে তারা লাল একটা আগুনের কুন্ড দেখতে পায়। ধোঁয়া এখান থেকেই আসছে। চারদিকে তাকিয়ে তারা বুঝতে পারে যে এটি একটি রান্না ঘর, ঘরের এক কোনে সাদা চুলের এক বৃদ্ধা রান্না করছেন।
শুইশিচিয়ে নরম ভাবে প্রশ্ন করে; " কেমন আছেন ?"
বৃদ্ধা খুব আশ্চর্য হয়ে ধীরে ধীরে মাথা উঠিয়ে আগন্তুকদের দেখে,-
" তোমরা আবার কোত্থেকে এলে? আমি কত বছর কোন মানুষ দেখিনা। অনেক বছর আগে এই বদমাশ ড্রাগনগুলো আমাকে ধরে নিয়ে এসে এখানে বন্দী করে। সেই থেকে আমার আর মুক্তি নেই, তার উপর প্রতিদিন আমাকে ওদের রান্না করে খাওয়াতে হয়।"

দু'জনে এবার তাদের আসার ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে বৃদ্ধা মাথা নাড়ায়-" এই ড্রাগনগুলো খুব ভয়ংকর, তোমরা এদের লড়াইয়ে হারাতে পারবেনা।"
কিন্তু দমে না গিয়ে তারা জানায় যে করেই হোক তারা চন্দ্র-সূর্যকে উদ্ধার করেই ছাড়বে । তাদের সংকল্পে বৃদ্ধাও সাহসী হয়ে ওঠেন। একটু ভেবে বলেন -
" একটা উপায় বোধ হয় আছে। আমি একবার ওদের বলতে শুনেছি যে আলি পর্বতের নীচে লুকানো স্বর্ণের কাঁচি আর আর কুড়াল যদি কেউ ওদের গায়ে ছুড়ে দেয় তাহলে দু'জনেই কেটে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। তোমরা যদি ঐ পর্বতের নীচ থেকে ওগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসতে তাহলে হয়তো লড়াইয়ে ড্রাগন দু'টোকে হারাতে পারবে।"
দাচেং সাহসের বৃদ্ধাকে অভয় দেয়-" আমরা যে করেই হোক ঐ স্বর্ণের কাঁচি আর কুড়াল খুজে বের করবই, তারপর ড্রাগনগুলোকে মেরে চন্দ্র-সূর্য আর তোমাকে উদ্ধার করব।"

তরুন দম্পতি অনেকদিন পথ চলে আলি পর্বতের পাদদেশে এসে হাজির হয়। তারপর সব ভুলে পর্বতের মাটি খুড়তে শুরু করে। দিন যায়, রাত যায়, আলি পর্বত বিশাল এক গর্তে পরিনত হয়, হঠাৎ মাটির নীচে তারা দু'টো সোনালী কিছু দেখতে পায়।
" ওগুলো নিশ্চয়ই সেই স্বর্ণের কাঁচি আর কুড়াল!"- তারা আনন্দে চেচিয়ে ওঠে।

যাদুকরী কাঁচি আর কুড়াল নিয়ে তারা তখনই হ্রদের দিকে যাত্রা শুরু করে। পাহাড়-জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে তারা যখন হ্রদের কাছে পৌছায় ড্রাগনদু"টো তখনও তাদের 'অগ্নি-গোলক' নিয়ে খেলছিল। দাচেং প্রথমে স্বর্ণের কাঁচিটি হ্রদের পানিতে ছুড়ে ফেলে, ওটা গিয়ে পড়ে একটা ড্রাগনের গায়ে আর সাথে সাথেই সেটা টুকরা টুকরা হয়ে যায়। সমস্ত হ্রদের পানি রক্তে লাল হয়ে ওঠে। শুইশিচিয়ে সোনালী কুড়ালটি ছুড়ে মারে অন্য ড্রাগনটির গায়ে, বিকট চিৎকার করে সেটিও ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। খেলা বন্ধ হয়, চন্দ্র-সূর্য হ্রদের পানিতে ভাসতে থাকে।

ড্রাগনগুলোকে মেরে ফেলার পর তারা গিয়ে সেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু সমস্যার শেষ হয়না, চাঁদ আর সূর্যকে কিভাবে আবার আকাশে ফেরৎপাঠাবে এটা নিয়ে তারা অনেক ভেবেও কোন রাস্তা বের করতে পারেনা। তখন বৃদ্ধা তাদের জানান যে তারা যদি ড্রাগনের চোখ খেতে পারে তাহলে মুহূর্তেই অনেক লম্বা-চওড়া আর শক্তিশালী হয়ে যাবে, তখন আকাশের চাঁদ-সূর্য যায়গামত বসিয়ে দিতে আর কোন সমস্যা হবেনা।

একথা শুনে তারা দু'জনেই হ্রদে ঝাপিয়ে পড়ে ড্রাগনের চোখ খুলে এনে খেয়ে ফেলে। সাথে সাথেই তারা দু'জনেই ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠতে শুরু করে । বড় হতে হতে তারা পাহাড়ের মত বিশাল হয়ে যায়। তখন দু'জনে মিলে একসঙ্গে সূর্যকে ধরে আকাশের দিকে জোড়ে ছুড়ে দেয়। সূর্য উড়তে উড়তে আকাশের মাঝে গিয়ে থেমে যায়, তারপর আবার মাটিতে ফিরে আসে। তারা বার বার চেষ্টা করে কিন্তু একই ব্যাপার ঘটে। বৃদ্ধা সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান হ্রদের পাড়ে যে পাম গাছ গুলো আছে ওগুলো দিয়ে সূর্যকে ধরে আকাশে তুলে দিতে, তাহলেই সূর্য তার কক্ষপথ ফিরে পাবে। তারা তাই করে। দুই গাছের মাঝে সূর্যকে আটকে মাঝা আকাশে তুলে ধরে রাখে সারা দিন, সূর্য আস্তে আস্তে তার পুরোনো কক্ষপথে অভ্যস্ত হয়ে উঠে নিজে নিজে চলতে শুরু করে। রাত নেমে যাওয়ার পর তারা চাঁদকেও একই পদ্ধতিতে আকাশে ফেরৎ পাঠায়।

পৃথিবী আবার আলোয় ঝল মলে হয়ে ওঠে। ক্ষেতে ফসল ফলে, গাছে ফুল ফোটে, মানুষের মুখে হাসি ফিরে আসে। সুর্যাস্তের পর আকাশে চাঁদ ওঠে, মানুষ চাঁদের আলোয় পথ চলে।

কিন্তু দাচেং আর শুইশিচিয়ে আশংকা করে যে হয়তো আবার অন্য কোন ড্রাগন এভাবে চন্দ্র-সূর্যকে আবার চুরি করতে পারে, তাই তারা ড্রাগন হ্রদের পাশে দিন রাত পাহারা দিতে থাকে। অনেক বছর পরে তাদের বিশাল দেহ দু'টি পর্বতে পরিনত হয়। সে দু'টোর নাম আজ দাচেং পর্বত আর শুইশি পর্বত। আর সেই হ্রদটিকে বলা হয় ' চন্দ্র-সুর্য্য হ্রদ' ।

বিঃদ্রঃ সেই তরুন দম্পতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে প্রতিবছর চন্দ্র-সূর্য হ্রদের পাড়ে বিশেষ নাচের আয়োজন করা হয়। নাচুইন্যা বুড়া-বুড়ি আছেন কারা কারা, ঢোলের বাড়ি পড়তে আছে, আইস্যা পরেন মিয়ারা!


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিভিন্ন জাতির উপকথা-রূপকথা পড়ার অভ্যাস এবং সংগ্রহ করার শখ আমার অনেক পুরোনো। অনেক দেশ-জাতির উপকথা পড়া হলেও তাইওয়ানের উপকথা প্রথম পড়া হল আপনার সৌজন্যে। অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশ্য তাইওয়ানের এই উপকথার সাথে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের অন্ততঃ দুইটি উপকথার মিল আছে বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে। একটা চুয়াঙ জাতির, আরেকটা সম্ভবতঃ কুয়াঙসির। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। বিশেষতঃ ফুজিয়ানের সাথে তাইওয়ানের মিল ব্যাপক বলেই জানি।

এই প্রচেষ্টাটি চালিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করছি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ ষষ্ঠ পান্ডব। আপনি ঠিকই বলেছেন তাইওয়ানের উপকথার সাথে চৈনিক উপকথার ব্যাপক মিল আছে। যদিও চাইনিজ লোকজন এদেশে আসে অনেক পরে, সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে, আরব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জাহাজের ব্যবহার ভালোমত বোঝার পর। আর ফুচিয়ানের সাথে তাইওয়ানের মিল একেবারে গলায় গলায়, তাইওয়ানিজ ভাষার ( ম্যান্ডারিন না) উৎপত্তি হয় ফুচিয়ান প্রদেশেই।
আবারো ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য। আমারো ইচ্ছা আছে এটা চালিয়ে যাওয়ার।

মূলত পাঠক এর ছবি

এইবারে রহস্যটা বুঝলাম।
মামুন হক = মা - মুন - হক

এই জন্যই মা দিবসের লেখাটা অতো খাসা হয়েছিলো, আর মুন লেক নিয়েও জমালেন।

এইবার কি নিজের হক চাইতে প্রতিবাদ মিছিলের গল্প আসছে? হাসি

মামুন হক এর ছবি

বেড়ে বলেচো দাদা!
তুমি অতি পুণ্যবান, ধার্ম্মিক মানুষ, বারো মাসে তের পার্ব্বণ করিয়া থাক , সত্য ও পরোপকার তোমার ব্রত, তুমি যাহা বলিবে তাহাই সই!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

প্রতিটা রূপকথাই অসাধারন অনুভূতির জন্ম দেয়, আবার শিশু হতে মঞ্চায়।

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ শাহেনশাহ, আমি একমত আপনার সাথে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চমৎকার রূপকথা আর অনুবাদ

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ লীলেন ভাই।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

বেড়ে লিকেচিস! কিন্তু তোর স্বভাবজাত রসিকতার ঢঙটা পেলাম না। খুব সিরিয়াস হয়ে রূপকথা লিখছিলি বুঝি? চোখ টিপি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মৃদুল ভাইয়ের সঙ্গে সহমত।
লেখাটা অবশ্যই ভালো হয়েছে কিন্তু আপনার অন্য লেখার মতো হয় নাই। বলা হয় নাই, আমি কিন্তু এখনও রূপকথার ভক্ত। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মামুন হক এর ছবি

দুই অতি প্রিয় ভ্রাতাকেই বলি, এইটা লিখতে গিয়ে কতবার যে আঙ্গুল কামড়াইছি তার ইয়াত্তা নাই, মানে ফাইজলামি করার দুর্দমনীয় অভিপ্রায়কে দমিয়ে রাখতে। পুরা কিচ্ছাটা নিয়াই জমজমাট একটা কমেডি লেখা যেত। কেন লিখলাম না? শোন তাইলে-
আরো অনেক দেশের মত এইদেশের আদিবাসীরাও অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছে, প্রথমে অনুপ্রবেশকারী চাইনিজ, তারপর তাদের মাটিকে উপনিবেশ বানানো পর্তুগীজ, পরবর্তীতে দখলদার জাপানিজ এবং সবশেষে মেইনল্যান্ড থেকে বিতাড়িত চাইনিজদের দ্বারা। আদিবাসীদের অনেক গোত্রই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর কিছু নাম মাত্র টিকে আছে।
এই গল্পটি যে উপজাতির তারা এটিকে ধর্মগ্রন্থের মত সম্মান করে , আর এর স্বকীয়তা রক্ষার ব্যাপারে বেশ সংবেদনশীল। প্রতিবছর তারা এই রূপকথার পাত্র-পাত্রীর প্রতি ভালোবাসা জানাতে আর তাদের ত্যাগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চন্দ্র-সূর্য হ্রদের পাড়ে বিশাল উৎসবের আয়োজন করে।
তাদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাতেই আমি এই গল্পটায় ইচ্ছা করেই কোন ঠাট্টা রসিকতা করিনি। যেভাবে শুনেছি বা পড়েছি ঠিক সে ভাবেই লিখেছি।
কি এখন বোঝা গেল?

তুলিরেখা এর ছবি

মামুনের লেখায় সবচেয়ে ধার পাই যখন উনি বৈঠকী মেজাজে গল্প বলার মতন করে কোনো লেখা লেখেন। অতি চমত্‌কার রসিক গল্পকথকের ভঙ্গী! অনাসক্ত অনুরাগীর ভঙ্গী! খুব বিরল এই গুণ! পরশুরাম, আতর্থী আর মুজতবা আলির লেখায় এই মেজাজ পেয়েছি।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মামুন হক এর ছবি

তুলিরেখা এভাবে লজ্জা দিতে আছে?
তবে কথা ঠিক আমি যখন ঠাট্টার ছলে কিছু লিখি তখন আমি নিজেও লিখে বেশ মজা পাই। আমি কোথায় যেন পড়লাম আপনি কিছুদিন লিখবেননা, শীতনিদ্রা বা পার্টি টাইম তা বুঝি নাই, আমি ভাবলাম প্রিয় রূপকথা বলিয়ের অনুপস্থিতির সুযোগে গ্যাপ বুঝে একটা স্কয়ার কাট মারি। এখনতো কট বিহাইন্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরৎযাচ্ছি হাসি

সালাহউদদীন তপু [অতিথি] এর ছবি

রূপকথা- সব বয়সের শ্রোতাকে সব সময় কাছে টানে।
মামুন হক- সব বয়সের পাঠককে সব সময় কাছে টানে।
মামুন হকের রূপকথা- ভাললাগায় ভুলিয়ে গেল, আমার রূপকথার ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করে দিয়ে গেল।
ধন্যবাদ আরো একটি অসাধারণ লেখা উপহার দেয়ার জন্য।

সালাহউদদীন তপু

মামুন হক এর ছবি

ধন্যবাদ তপু। আপনার অণুগল্পগুলো খুব ভালো হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় আপনার বড় পরিসরে লেখারো ক্ষমতা আছে, একটু ভেবে দেখবেন?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চন্দ্র-সূর্য হ্রদের পানিতে ভাসতে থাকে।...
ভেজা সূর্য আর ভেজা চাঁদের কথা কল্পনা করতে বেশ মজা লাগছে তো। দেঁতো হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুস্তাফিজ এর ছবি

প্রতিবছর চন্দ্র-সূর্য হ্রদের পাড়ে বিশেষ নাচের আয়োজন করা হয় বলেছেন, কিন্তু সময়টা কখন?

...........................
Every Picture Tells a Story

মামুন হক এর ছবি

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে। আগে শুধু নাচ-গান-মেলা এসব হত , ইদানীং কয়েক বছর ধরে বিয়াফক আতশবাজি পোড়ানোও চলছে। খুবি চমৎকার একটা রঙ্গীলা উৎসব ছবি তোলার জন্য। সময়-সুযোগ বেড়াতে আসার দাওয়াত রইল মুস্তাফিজ ভাই।

auto

তানবীরা এর ছবি

পঞ্চ তারকায় সজ্জিত করলাম এই দম্পতি কে। ধর্মের মিথ থেকে এইগুলা বেটার। চা পান পর্বের এখনো শ্যাষ হয় নাই ?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

আনিস মাহমুদ এর ছবি

অসাধারণ!

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমি এখনো কার্টুন পছন্দ করি, এখনো ছোটদের বই পড়তে পছন্দ করি, এখনো রূপকথা পছন্দ করি।

এই রূপকথাটাও খুবই পছন্দ হলো, মামুন ভাই। খুবই দুর্দান্ত লিখসেন।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ভালো লাগলো খুব।
সাথে পয়-পরিচয় দিলে আরো ভালো লাগবে।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

সাইফ এর ছবি

বস, আজকে আমার ৩২০০ মাইল ট্রিপ শেষে বাসায় ফিরলাম, ফিরেই আপনার এই চমৎকার লেখাটি পড়লাম, আসাধারন বললেও কম বলা হয়, আপনার প্রতিটা লেখাই ভিন্নধর্মী। পারেন কিভাবে, আল্লাহই জানে, আমার না জানলেও চলবে, আপনে চালা্য় জান। মামুন ভাই জিন্দাবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।