কাক - [চতুর্থ কিস্তি]

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি
লিখেছেন মানিক চন্দ্র দাস [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৯/০৮/২০১০ - ৭:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[প্রথম কিস্তি]
[দ্বিতীয় কিস্তি]
[তৃতীয় কিস্তি]

০৯


সেদিন রাতে রহমান সাহেব আবারও স্বপ্ন দেখলেন। আবারো সেই কাক। এবার কাক দেখতে কাকের মতোই। তবে আকারে মানুষের সমান। মানুষের মতো কথা বলছে তার সাথে।

“স্যার কি খুব সমস্যায় আছেন?”
“আপনি কে?”
“আমি স্যার কর্ভাস ইন্ডিকাস। কাক। কাকের বৈজ্ঞানিক নাম কর্ভাস ইন্ডিকাস।”
“আমার অফিসে কি করছেন? ঢোকার অনুমতি পেলেন কোথায়? সোবহান...এই সোবহান...”
“চিৎকার করছেন কেন স্যার? সোবহানকে ডেকে কোন লাভ নেই। সোবহান নেই এখানে। আর আমি আপনার অফিসে ঢুকিনি। এটা আপনার অফিস না। আপনিই আমার এলাকায় এসেছেন।”

রহমান সাহেব তার চারপাশে তাকালেন। আশেপাশে প্রচুর ময়লা দেখা যাচ্ছে। ময়লার মাঝখানে তার চেয়ার টেবিল বসানো। স্বপ্নে দৃশ্যটিকে রহমান সাহেবের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলোনা। তিনি চুপচাপ বসে রইলেন।

“বলুন কি বলবেন।”
“স্যার কি খুব সমস্যায় আছেন?”
“হ্যাঁ আছি।”
“কি ঝামেলা স্যার?”
“বললে আপনি কি সমাধান করতে পারবেন?”
“বলেই দেখুন স্যার। পারতেও পারি।”
“কাক করবে আমার অফিসের সমস্যার সমাধান। ভালো বলেছেন। এখন আসুন। অন্য কোন সময় কথা বলা যাবে। হাতে অনেক কাজ।”
“স্যার আপনার হাতে তো কোন কাজ নেই। আপন আছেন আমার সাথে। ডাষ্টবিনে বসে আছেন।”
“তাইতো। মনে ছিলোনা।”
“স্যার সমস্যাটা বলুন।”
“ফাইলের একটা হিসেব মিলছেনা। আসলে ঠিক হিসেব না। ডেটাবেইজে সবই আছে, কিন্তু হার্ড কপি নেই। কয়েকটা রসিদ পাওয়া যাচ্ছেনা। আমাদের হেড একাউন্টেন্ট কালাম সাহেব বিষয়টি নিয়ে অনেক খাটাখাটুনি করছেন। আমিও বের করার চেষ্টা করছি।”
“কেন পারছেন না স্যার? অফিসের কর্মচারীদের পেছনে আপনি না লোক লাগিয়ে রেখেছেন? তারা কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা?”
“লোক লেগে থাকে অফিসের বাইরে। ভেতরের কাজ তো আর তারা দেখেনা। এখানে টাকার অঙ্কটা অনেক। টাকাটা কেউ সরায়নি। স্রেফ একটা রিসিপ্ট পাওয়া যাচ্ছেনা। ওটা ছাড়া ফাইলের প্রেজেন্টেশনে যাওয়া যাবেনা। রিসিপ্ট এর মূল কপি প্রয়োজন। কে যে সরিয়েছে সেটাই বুঝতে পারছিনা।”
“স্যার, মূল কপিটা আপনার অফিসেই আছে। এই রিসিপ্ট নিশ্চয়ই এক পাতার কিছু না। হারানোর সম্ভাবনাও তাই খুবই কম। কেউ না সরালে তো এই জিনিষ গায়েব হয়ে যাবেনা। তাই না স্যার?”
“তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।”
“এমন কি হতে পারেনা যে কয়েকজন মিলে বুদ্ধি করে রিসিপ্টটা উধাও করে ফেললো। আপনাকে ঝামেলায় ফেলার ইচ্ছে তো কারো না কারো থাকতেই পারে, তাই না?”
“তা পারে। আমার চেয়ারের দিকে অনেকেরই চোখ আছে। আমার জুনিয়রের চোখ সবচে বেশি। আপনি কি সামাদ সাহেবের কথা বলছেন?”
“জ্বী স্যার। আপনি ধরতে পেরেছেন। সমস্যা নিয়ে আপনি শুধু কালাম সাহেবের সাথে কথা বললেন। সামাদ সাহেব কে কিছু বললেন না। উনি তো আপনার জুনিয়র। অফিসে আপনার সব কথা জুনিয়র হিসেবে তারই জানার কথা,তাই না? এটা তো একরকম উদাসীনতা। এই উদাসীনতা আপনি অনেকদিন ধরেই দেখাচ্ছেন। তাই না? ”
“ঠিক উদাসীনতা...”
“জ্বী স্যার, উদাসীনতা। আপনি অস্বীকার করবেন না । সামাদ সাহেব আপনার পোষ্টের জুনিয়র। তার বুদ্ধি, বিবেচনা কি আপনার কাছাকাছি হবার কথা না?”
“তা ঠিক। উনি ধীরে ধীরে এই পোষ্টে উঠে এসেছেন। যোগ্যতা তার অবশ্যই আছে।”
“তারপরেও আপনি তাকে উপেক্ষা করেছেন স্বেচ্ছায়। কারনটা কি স্যার? সামাদ সাহেবের সাথে একসময় আপনার স্ত্রীর একটা সম্পর্ক ছিলো। কারনটা কি তাই?”
“চুপ করুন। আপনার অনেক সাহস কর্ভাস সাহেব। আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রীর নামে বাজে কথা বলছেন।”
“স্যার, আমরা কেউ কারো সামনে দাঁড়িয়ে নেই। আমরা দুজনেই বসে আছি ডাষ্টবিনে। আর একটা মানুষের সাথে আরএকটা মানুষের সম্পর্ক থাকতেই পারে। সেটা বলার মধ্যে বাজে বিষয় কি আছে?”
“চুপ, একদম চুপ।”
“স্যার, রসিদটা কোথায় আছে জানতে চাইলেন না?”
“চুপ করুন। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা।”
“রসিদটা আছে সামাদ সাহেবের কমোড ফ্লাশের ভেতর। তার ফ্লাশ নষ্ট হয়েছে গত মাসে। সেটা আর ঠিক করা হয়নি। আপনাদের মতো ঝকঝকে একটা অফিসে একজন অফিসারের কমোড ফ্লাশ এক মাস ধরে নষ্ট কিন্তু তা ঠিক করা হয়নি, বিষয়টা কেমন না?”
“এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব ষ্টোর কীপারের আর কেয়ারটেকারের। আমার না।”
“তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।”

স্বপ্নের এই পর্যায়ে রহমান সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কুমকুম তাকে ধাক্কা দিচ্ছে।

“সকাল নয়টা বাজে। উঠবেনা?”

চোখ মেলে প্রথমে রহমান সাহেব কিছু বুঝতে পারলেন না। এক দৃষ্টিতে সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই মানুষটা কে? পরিচিত মনে হচ্ছে কি? মুখ এরকম ধবধবে সাদা কেন? মানুষ তো নাকি? রহমান সাহেব আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন।

“কি চিনতে পারছোনা নাকি? মুখে উপটান মাখা তাই ভুতের মতো লাগছে। ওঠো তো বাবা।”

খুব দ্রুত তৈরী হয়ে নিলেন রহমান সাহেব। মাথায় স্বপ্নের কথাবার্তা ঘুরছে।

১০


রহমান সাহেব ঠিক সকাল দশটায় অফিসে ঢুকলেন। রুমে ঢুকেই ডেকে পাঠালেন সামাদ সাহেবকে।

“কেমন আছেন সামাদ সাহেব?”
“ভালো আছি স্যার। আপনি কেমন আছেন?”
“যেমন রেখেছেন।”
“ঠিক বুঝলাম না স্যার।” সামাদ সাহেবের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
“মানুষের শরীরে মাথাটাকেই সবচে বড় ধরা হয়, তাই না?”
“জ্বী স্যার।”
“শরীরে অন্যকোথাও সমস্যা হলে মাথাটুকু কি আলাদা করে ভালো থাকে?”
“না স্যার।” সামাদ সাহেবের কোঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। রহমান সাহেব ঠিক কি বলতে চাইছেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
“সামাদ সাহেব, অফিস অনেকটা মানুষের শরীরের মত। সবার উপরে যে থাকে সে হচ্ছে অফিসের মাথা। আর বাকী ষ্টাফরা হচ্ছে শরীরের বাকী অংশ। ষ্টাফরা যদি কেউ ভালো না থাকে তাহলে কি অফিসের মাথার ভালো থাকা সম্ভব?”
“বোধহয় না স্যার।”
“কয়েকদিন ধরে আপনার টয়লেটের ফ্লাশ নষ্ট । কেয়ারটেকার কে খবর দেননি ?”
“দিয়েছি স্যার। এখনো নাকি ষ্টোর থেকে টুলস ডিসপ্যাচ হয়নি। তাই ফ্লাশ ঠিক করা হয়নি।”
“পরে আর খোঁজ নিয়েছিলেন ?”
“না স্যার।”
“চলুন ষ্টোরে খোঁজ নিয়ে আসি।”
“না না স্যার, ঠিক আছে। আমিই খোঁজ নেবো।”
“অসুবিধা নেই। আমার জুনিয়রের একটা সমস্যা হয়েছে আর আমি দেখবোনা? অবশ্যই দেখবো। চলুন।”

অফিসের ষ্টোর থেকে টুলস সহ মিস্ত্রীকে নিয়ে সামাদ সাহেবের রুমে গেলেন রহমান সাহেব। সাথে সামাদ সাহেব।

১১


ফ্লাশের পাশে সামাদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। আব্দুর রহমান সাহেব তার পাশে। মিস্ত্রী কানাইলাল ফ্লাশের কভার খুললো।

রহমান সাহেব ঘামছেন। স্বপ্নের কথায় তিনি সামাদ সাহেবের ফ্লাশের সামনে দাঁড়িয়ে। অবশ্য এই কথা কেউ জানেনা। তাই আলাদা করে কারো কিছু ভাবার অবকাশ নেই। কিছু পাওয়া না গেলেও কোন সমস্যা নেই। বড় স্যারের যে সব কিছুতেই খুব তীক্ষ্ণ নজর আছে, তাই সবাই ধরে নেবে।
কিছু কি পাওয়া যাবে? রসিদটা পাবার আশা নিয়েই কি তিনি এখানে এসেছেন? কাক সম্পর্কিত অদ্ভুত স্বপ্নটিকে তিনি কেন বিশ্বাস করছেন? ঘটনাটা কী? মনে মনে রহমান সাহেব ভাবছেন ।

সামাদ সাহেবও ঘামছেন। বেশ কয়েকবার রুমাল বের করে তিনি মুখের ঘাম মুছেছেন।

ফ্লাশের ভেতর পানি নেই। চেইনে মরিচা পড়ে মাঝখান থেকে ছিঁড়ে গেছে। পানির লাইন বন্ধ করা । কানাইলাল ভেতর থেকে পলিথিন মোড়ানো একটা প্যাকেট বের করে নিয়ে এলো।

কানাইলালের চোখে বিস্ময়। রুমে এতো জায়গা থাকতে এই প্যাকেট ফ্লাশের ভেতর কেন? সবাই কি একসাথে পাগল হয়ে যাচ্ছে? বড় সাহেব এসেছেন ফ্লাশ ঠিক করা দেখতে, সামাদ সাহেব কাগজ রেখেছেন ফ্লাশের ভেতর।

“প্যাকেটটা দাও কানাই।” রহমান সাহেব হাত বাড়িয়ে প্যাকেট নিলেন। বুকের উপর একটা অনিশ্চয়তার পাথর ছিলো। সেটা নেমে গেছে। তার বদলে হচ্ছে অস্বস্তি। এই অস্বস্তির কারন আপাতত তিনি ধরতে পারছেন না। সামাদ সাহেবের মুখ থেকে রক্ত নেমে গেছে। তার হাত-পা কাঁপছে। রহমান সাহেব প্যাকেট খুলে বেশ মনোযোগ দিয়ে প্রথম পাতা পড়লেন।

“কাজ শেষ কানাই ?”
“হ স্যার। শ্যাষ।”
“ঠিক আছে। তুমি যাও।”

রহমান সাহেবও সামাদ সাহেবের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সোজা ঢুকলেন নিজের রুমে। কিছুক্ষণ পরেই সামাদ সাহেবকে তিনি নিজের রুমে ডেকে নিলেন।

“সামাদ সাহেব, বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের একটা হিসেবে গড়মিল হচ্ছিলো। বিষয়টি কি আপনি জানেন?”
“জানি স্যার।”
“বসুন সামাদ সাহেব। আমরা বসে বসে কথা বলি।”
“জ্বী স্যার।”

সামাদ সাহেবের হাত-পায়ের কাঁপুনি বেড়েছে। এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে বসেও তিনি ঘামছেন। এক একবার মনে হচ্ছে মাথা ঘোরাচ্ছে। মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেমন হয়? তাতে অন্তত সব কিছু আরো পরে ঘটতো। একটু সময় অন্তত সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ডাক্তার এসে তাকে দেখে যেতো অথবা তাকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হতো।

“সামাদ সাহেব আপনার কমোড ফ্লাশে যে কাগজ পাওয়া গেছে তাতে আমাদের এখানকার বাৎসরিক মোট খরচের একটা অংশের তথ্য আছে। পড়ে দেখবেন?”
“নাহ।” সামাদ সাহেবের গলা খুব ক্লান্ত শোনালো।
“কাগজে কি আছে তাতো আপনি জানেন তাইনা?”

চুপ করে রইলেন সামাদ সাহেব। কথা বলে আসলে কোন লাভ নেই। যা ঘটেছে তা তিনি খুব ঠান্ডা মাথাতেই করেছেন। কাগজগুলো অফিসেই রাখাটাই ভুলটা হয়েছে । শুধু ভুল না, বিরাট ভুল।

“আপনাকে পুলিশে দেবো। অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর শাস্তি আপনি পাবেন। তবে আপনার শাস্তি যেন কম হয় সেই ব্যবস্থা আমি করতে পারি। আগে বলুন আপনার সাথে কে কে ছিলো?”

প্রাণখোলা হাসি দিলেন সামাদ সাহেব। তিনি বললেন, “রহমান সাহেব, আপনি কর্মচারীদের পেছনে লোক লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন। আবার আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন আমার সাথে কে কে ছিলো। কেমন হাস্যকর হয়ে গেলো না কথাটা?” এতক্ষণ সামাদ সাহেবের ভেতর অনিশ্চয়তার আতঙ্ক ছিলো। অনিশ্চয়তাটুকু কেটে গেছে। তিনি জানেন, তার গন্তব্য থানা। এখন তার আর সামনে বসে থাকা মানুষটিকে পরোয়া করার দরকার নেই।

“প্রশ্নটা হাস্যকর নাকি? হবে হয়তো। যাকগে, বলুন কে কে ছিলো আপনার সাথে?”
“কেউ ছিলোনা।”
“সত্যি বলছেন সামাদ সাহেব?”
“সত্যি-মিথ্যে এই মুহুর্তে অবান্তর একটা বিষয় রহমান সাহেব।”
“আপনার এই অবস্থার জন্য আপনিই দায়ী থাকলেন সামাদ সাহেব। একটা সুযোগ আপনার হাতে ছিলো। ব্যবহার করলেন না।”
“প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার জন্য দায়ী । এটা নতুন কিছু না। সুযোগ দেবার জন্য ধন্যবাদ।”

১২


বিচিত্র একটা অনুভূতি নিয়ে রহমান সাহেব বাসায় ফিরলেন। মনের ভেতর কিসের যেন খচখচানি। সামাদকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মামলা হবার কথা। সামাদ নিজের পক্ষে উকিল দেবে তো ?

খাবার টেবিলে কুমকুম গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে আছে। বাচ্চারা কেউ টেবিলে নেই। সন্ধ্যা বেলাতেই ঘুম। তারা সারাদিন স্কুলের পিকনিকে ছিলো।

“সামাদের খবর শুনেছো?”
“হুমম।”
“কে বললো?”
“সামাদই ফোন করেছিলো থানা থেকে।”
“ওর সাথে তোমার যোগাযোগ আছে?”
“ছিলোনা। আজ অনেকদিন পর হলো।”
“কি বললো সামাদ? ”
“তেমন কিছু না।”

কুমকুম এরপর একদম চুপ। রহমান সাহেবও কথা বাড়ালেন না। চাপাচাপি করে কুমকুমের কাছ থেকে কোন কথা বের করা যাবেনা। এই তথ্য রহমান সাহেব খুব ভালো কররে জানেন। একটা দীর্ঘশ্বাষ ফেলে টেবিল থেকে ঊঠে গেলেন তিনি। খাওয়া পড়ে রইলো টেবিলে।

তার মন খুব খারাপ হলো। আচ্ছা, সামাদ কুমকুমকে কেন ফোন করলো? কাজটা করে তার কোন লাভ কি হয়েছে?

------
[চলবে]


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এ পর্বও ভাল লাগল। সামান্য ঘটনা কিন্তু বর্ণনার জন্যই পড়তে আরাম হচ্ছে। মনে হচ্ছে কার উপন্যাস যেন পড়ছি চোখ টিপি

পাতি কাকের বৈজ্ঞানিক নাম কর্ভাস স্প্লেনডেন্স Corvus splendens জানতাম। অবশ্য কাকের মুখ থেকে যেহেতু এসেছে, ভুল হতেই পারে।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় প্রকৃতিপ্রেমিক,
আমি দুঃখিত। ভুল হয়ে গেছে। তাও বলছি, corvus indicus খুব সম্ভবত আমি পড়েছিলাম। সেটা বোধহয় দাঁড় কাকের বৈজ্ঞানিক নাম। আমি ঠিক করে নেবো। এবারের মতো আশা করছি ক্ষমা করবেন। লেখা পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
মানিক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহা আপনি এত সিরিয়াসলি নিবেন তা বুঝতে পারিনি। ক্ষমা-টমার কথা কী যে বলছেন এগুলো, ধুরো হাসি

আমি এটুকু নিশ্চিত যে দাঁড়কাকের বৈজ্ঞানিক নামে ইনডিকাস নেই। কর্ভাস 'গণ'-এর এই তালিকাতেও ইনডিকাস দিয়ে কোন প্রজাতি নেই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- 'ইন্ডিকাস' মনে হয় গরু। মনে আছে, বন্ধুকে গালি দিতাম 'বস ইন্ডিকাস' বলে। মাঝে মাঝে শুধু 'বস' বলেও। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বস ইন্ডিকাস গরুর বৈজ্ঞানিক নাম তবে ইন্ডিকাস মানে আমি যা বুঝি তা হলো ভারতীয়। আরো অনেক কিছু যা ভারতে বা এই উপমহাদেশে পাওয়া গিয়েছে তাদের নামের শেষে অংশ অর্থাৎ প্রজাতি অংশটি ইন্ডিকা বা ইন্ডিকাস। আন্দাজে মারলাম আরকি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এমনিতে গল্পটা আকর্ষণীয়। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ-হুমায়ুন আহমেদ লাগছে পড়তে। অত্যন্ত ওভার ইউজড বলে গল্প বলার এই ভঙ্গীটা একটু অস্বস্তি জাগায়। তাছাড়া বেশ মজার। বাকী পর্বের আশায় থাকলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

মাহবুব ভাই,
আমি হুমায়ুনের বই খুব বেশি পড়েছি। তাই বোধহয় তাঁর লেখার ছাপ এই নগন্য লেখাতেও চলে এসেছে। আপনার গল্প মজা লাগছে জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
------------------------------------মানিক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি হুমায়ুনের বই খুব বেশি পড়েছি। তাই বোধহয় তাঁর লেখার ছাপ এই নগন্য লেখাতেও চলে এসেছে।

মানিক দা, আপনি যথেষ্ঠ ভালো লেখেন। কিন্তু আমি মাহবুব ভাইয়ের সাথে একমত। হুমায়ুন আহমেদ তার অসাধারণ একটা স্টাইল অপঃব্যবহারের মাধ্যমে বিরক্তিকর পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আপনি আপনার মতো করে লিখুন দাদা।

একটা প্রশ্ন করিঃ
দুটো গানের সিডি, একই দাম, একই রকম প্রচ্ছদ, এমনকি মিউজিক কম্পোজিশনও একই রকম। একটা কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া আ অন্যটা হচ্ছে কুমার বিশ্বজিতের মতো করে গাওয়া। পয়সা দিয়ে আপনি কোনটা কিনবেন?

রাতঃস্মরণীয়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দুটো গানের সিডি, একই দাম, একই রকম প্রচ্ছদ, এমনকি মিউজিক কম্পোজিশনও একই রকম। একটা কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া আ অন্যটা হচ্ছে কুমার বিশ্বজিতের মতো করে গাওয়া। পয়সা দিয়ে আপনি কোনটা কিনবেন

এতো কঠোরভাবে না বললেও চলত। হাসি

স্টাইলটা ওভারইউজড হলেও মানিক অন্ধের মত সেটা ফলো করেননি। গল্পের বুনন এবং গতি দুটোই আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মাহবুব ভাই, মানিকদার লেখার বুনন এবং গতি নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি শুধু আতংকিত যে মানিকদার এতো ভালো লেখা হুমায়ুনীয় ফ্লেভারে ভেসে না যায়। আমার মনে হয়েছে তার উপস্থাপনা যথেষ্ঠ হুমায়ুনীয়। আর আমরা যারা হুমায়ুনাতঙ্কে থাকি আমার চাইনা মানিকদার মতো একজন লেখক অপরের ছায়া বয়ে বেড়াক।

আপনাকে ধন্যবাদ।

রাতঃস্মরণীয়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমরা যারা হুমায়ুনাতঙ্কে থাকি

"হুমায়ুনাতঙ্কে" থাকেন কেন? লেখার স্টাইলটা সহজপাচ্য, গতিশীল। শুধুমাত্র ওভারইউজড না হলে "লেখার স্টাইলে" আমি তেমন খারাপ কিছু দেখি না। তাছাড়া চমৎকার একটা গল্পের কাঠামোটা বর্ণিত হয়েছে একটা সহজপাচ্য স্টাইলে। সুতরাং এতটা "আতংকিত" হবারও কিছু নেই। লেট আস বি অপটিমিস্টিক। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মাহবুব এবং রাতঃস্মরণীয় ভাইদের মন্তব্যের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাইছি যে মানিক ভাই, এনাদের মন্তব্য পড়ে যেন আপনার লেখার ফ্লো কমে না যায়। আপনি আপনার মত লিখুন। সেটা যদি কারো মতো হয়ে যায় তো কী আর করা হাসি

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ভাইগো, আপনেরা যেইরম সিরিয়াস কথা কইতাছেন তাতে ডরে তো হাত-পা ঠান্ডা হইয়া যাইতেছে। কি করুম ভাই? সামনে তো আমার জন্যে সিদ্ধ ডিম ছাড়া কিছু দেখতাছিনা। কেন যে ডাক্তার হইয়া লেখালেখি করতে আইছিলাম!!!!!!!!! এখন দেখি পিছনে সিদ্ধ ডিম নিয়া গম্ভীর মুখে রোগী দেখতে হইবো। ভাই, আমি মাফ চাই গো।
তয় ভাই আমি অধম একটা কথা কইতে চাই। আমি দুইটা ধুনফুন গল্পও প্রসব করছিলাম। সেইগুলা এই সচলেই আছে। একটার নাম "সাদাকালো", আরেকটা হইলো "আকাশ-জানালা"। ঐ ধুনফুন দুইটা আপনাগো কেমন লাগছিল জানিনা। এই উপন্যাসটা পরাবাস্তব কিসিমের। বড়। লিখতে গিয়া কি যে হইছে আমি জানিনা। আমার যা ভুলত্রুটি হয়, নিজগুনে ক্ষমা দিয়েন।
পিপি দা,
আমার জন্য দোয়া রাইখেন। আল্লাহ ভরসা।
-----------------------------------------------------------মানিক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার সাথে আমার কোন পরিচয় নাই। আপনার লেখাও আগে আমি কখনো পড়িনি। সে অর্থে আমি ধরে নিচ্ছি আপনি অনলাইনে লেখালেখিতে নতুন। আর ব্লগে (বা অনলাইনে) লেখালেখির একটা বিপদ হলো এখানে সবাই কিন্তু মন্তব্য করবে। একদিকে প্রশংসা যেমন পেতে পারেন, তেমনি সমালোচনাও শুনতে হবে। অর্থাৎ মানসিকভাবে আপনাকে প্রস্তত থাকতে হবে সবকিছুর জন্য।

তাই অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে যে পরামর্শ দিতে চাই তার মর্মার্থ হলো সমালোচনাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে, আর সমালোচককে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতে। আমার মতো যারা বেশী প্রশংসা করে তাদের চেয়ে সমালোচকের সমালোচনা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

সচলায়তন কিন্তু এমনই। এখানে কেউ আপনাকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা যেমন করবে তেমনি কেউ করবে কঠোর সমালোচনা। এমনকি আমি আজ আপনার লেখায় যেমন ভালো ভালো করছি, সেই আমিই কিন্তু আপনার অন্য কোন লেখায় কড়া সমালোচনা করতে পারি।

আপনার লেখা ভালো লাগে বলেই বললাম। তাছাড়া নতুনদের সুপরামর্শ(!) দেয়াও আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। আর ফ্রি উপদেশ দেয়ার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন? চোখ টিপি

আশা করি কী করতে হবে বুঝতে পারছেন-- লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

পিপিদা,
ধন্যবাদ আপনার উৎসাহের জন্য। দোয়া রাখবেন। চলুক তাহলে লেখালেখি। ভালো থাকবেন।
--------------------------------------------------------মানিক

অস্থির চিত্ত [অতিথি] এর ছবি

লেখাটা মজা লাগছে। নিতান্তই ছাগল বিধায় আমি আগে চতুর্থ পর্বটা পড়লাম...মন খারাপ পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম হাসি

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

শুরুটা হোক না হুমায়ুন আহমেদের মত, প্রথম উপন্যাসটা যদিও বা হুমায়ুন আহমেদ ষ্টাইলে হচ্ছে তাতেই বা ক্ষতি কি, (অবশ্য যদি এটা প্রথম দিকের লেখা হয়ে থাকে) একটা সময় আসবে যখন আপনি আপনার নিজস্ব ষ্টাইল ঠিক করে নেবেন। আসলে আমার মনে হয় আমাদের সব লিখিয়েদের মধ্যেই কারো না কারো কোন না কোন লেখকের ছাপ থেকেই যায়, তবে সেটা খুব প্রকট না হলেই হলো.

পিপিদা আর বাকি সবার মতই আমি বলবো লেখা থামাবেন না। শুধু মাত্র ধৈর্য্য ধরে লেখার মত মানসিকতা যদি থাকতো তাহলে আমি এখানে এই ব্লগেই অনেককে জানি যারা সত্যিকারের উপন্যাসিক হয়ে উঠতেন। আপনি শুধু লিখে যান ... থামলে হবে না

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

দেবোত্তম দা,
ধন্যবাদ আপনার উৎসাহের জন্য। ভালো থাকবেন।

Arif Khan এর ছবি

মজা পাচ্ছি...।তবে...লেখা শেষে মন্তব্য,আলোচনা,সমালোচনায়...একটূ অন্য দিকে চলে যাচ্ছি।আমার মনে হয়,আমাদের অধিকাংশ লেখকের লেখায় বিদেশি কোন না কোন লেখকের ছাপ চলে আসে,যদি আমরা খুজতে চেষঠা করি।এই ছাপ টা অনেকে ধরেন না বা ধরার চেষঠা করে্ন না বা ধরতে পারেন না।যে ভাবেই ভাবি,লেখা টা মজ়া পাচ্ছি মানিক ...চালিয়ে যাবি আশা করছি...
আরিফ ভাই

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

আরিফ ভাই,
লেখা পড়ার জন্য এবং উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।-------------------------------------------মানিক

মেহদী হাসান খান এর ছবি

হুমায়ুনাতংকের ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি এবং বিরক্তিকর লাগল।

লেখককে সচেতন করে দেয়াই যদি উদ্দেশ্য হয়, সেটা কি এই সিরিজের প্রথম থেকেই অনেকবার করা হয়নি? এরপর তাকে যথেষ্ট সময় না দিয়ে এখন পাঠক যদি কুমার বিশ্বজিতের সিডি বাজারে ছাড়া শুরু করেন, তাতে নিরুৎসাহীত করা ছাড়া আর কাজের কাজ কী হবে সেটাই বুঝতে পারছি না।

@মানিকদা,
ব্লগ থেকে অনেক লেখকের ফ্রাস্টেশান শুরু হয়, আবার ব্লগ থেকেই অনেকে আক্রান্ত হয় "আমি কী হনু রে" সিন্ড্রমে। পাঠকের সমালোচনা অথবা প্রশংসা নিজের মত করে ব্যালান্স করে নেয়ার দায়িত্বটা তাই আপনারই। আপনি লিখে যান আপনার মত। লেখায় নিজস্বতা সময় মত চলে আসবে। আপনাকে চিনি দেখেই এটা জোর গলায় বলতে পারি।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় মেহদী,
উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। কথাটা কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছে। তোর মতো স্বপ্নবাজ মানুষের সাথে শুকনো ধন্যবাদটা ঠিক যায়না। তোর জন্যে ভেজা ধন্যবাদ। লেখার বাকীটাও দেবো সময় মতো। দোয়া রাখিস।
------------------------------------------------------------মানিক

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ুনাতংকের ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি এবং বিরক্তিকর লাগল।

ভাই মেহদী হাসান খান, আপনার বিরক্তির কারণ হওয়ার জন্যে আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আর ব্যাক্তিগতভাবে আমি সচলায়তনে নতুন তাই মানিকদাকে আগে একথা বলার সূযোগ আমার ছিলোনা। মানিকদাকে নিরুৎসাহিত করার মতো কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এসব কথা বলিনি কারণ এতে আমার কোনও লাভ নেই। আমি বলতে চেয়েছি মানিক দা তার লেখায় নিজস্বতা আনুন।

আমি মানিকদার লেখা নিয়মিত পড়ে যাবো তবে এরপর থেকে মন্তব্য করার বেলায় চেষ্টা করবো সচেতন থাকতে। আমি চাইনা আমার কোনও মন্তব্য তার জন্যে নিরুৎসাহের সৃষ্টি করুক।

আপনাকে ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন।

রাতঃস্মরণীয়

হলুদ-মডু এর ছবি

বাক্যাংশ কোট করতে উল্লেখিত অংশের শুরুতে [×quote] এবং শেষে [×/quote] ব্যবহার করুন (× চিহ্নটি মুছে)। আপনি শুধু শেষে [×/quote] ব্যবহার করছেন।

ধন্যবাদ।

বইখাতা এর ছবি

স্টাইল যার মতোই হোক, পড়তে ভাল লাগছে। লিখতে থাকুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।